
এবড়োখেবড়ো লেখকের গ্রাহক হোনএই মাসের ৪ তারিখ। ভারতীয় সংবাদপত্রগুলোতে এই প্রথম দিল্লিতে হিংসার পাশাপাশি প্রকাশিত হল এই খবর — ‘বিশ্বের ৭০টিরও বেশি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে নোভেল করোনাভাইরাস। মৃত ৩২৪৮, আক্রান্ত অন্তত ৯২ হাজার জন মানুষ’। সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে সৌদি আরব মক্কায় হজযাত্রা বন্ধ করল। ইতালি, ফ্রান্স, জার্মানি তো বটেই; তত দিনে রোগ ছড়িয়ে পড়েছে ইরান, অস্ট্রেলিয়া, আমেরিকা এমনকি স্কটল্যান্ড-ইংল্যান্ডেও। এই সময়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিরক্ষা দফতরের এক আধিকারিক ইতালি থেকে ব্রাসেলসে ফিরে আক্রান্ত হলেন এই ভাইরাসে। ফলস্বরূপ ইইউ-র সঙ্গে বৈঠক বাতিল করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তত দিনে দেশে আক্রান্ত হয়েছেন ৩০ জন। কেবলমাত্র ছোট্ট রাজ্য সিকিম বিদেশি পর্যটকদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করল।
দেশের বাকি সমস্ত জায়গায় জীবন চলতে লাগল তার নিজস্ব চিরাচরিত ছন্দে। কোনও আন্তর্জাতিক উড়ান বন্ধ তো হলই না, এমনকি অন্তর্দেশীয় উড়ানগুলোও প্রতিদিন উগড়ে দিতে থাকল অসংখ্য যাত্রী। এর মধ্যে সাড়ম্বরে পালিত হল দোলপূর্ণিমা। নবদ্বীপের গঙ্গার ওপারে মায়াপুরে সেই উপলক্ষে হাজির হলেন অগণিত বিদেশি ভক্ত। কোনও হেলদোল তখনও চোখে পড়েনি। অথচ তত দিনে প্রশাসনিক অপদার্থতা আর গয়ংগচ্ছ মনোভাবের কারণে নিজেদের অজান্তেই এ দেশে অতিমারিকে আহ্বান জানিয়েছি আমরা।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) অতিমারি ঘোষণা করার পরে রাষ্ট্রের টনক নড়ল বটে, কিন্তু প্রশাসনিক অপদার্থতা আর গয়ংগচ্ছ মনোভাবের কোনও পরিবর্তন হল না। বিমানবন্দরগুলোতে নাম কা ওয়াস্তে থার্মাল স্ক্রিনিং চালু করা এবং বিদেশ প্রত্যাগত মানুষগুলোকে কোয়ারান্টাইনে থাকার কথা বলেই গুরুদায়িত্ব সারা হল। কেবলমাত্র বিমানবন্দরগুলোতে (আন্তর্জাতিক ও অন্তর্দেশীয়) যথাযথ পরীক্ষার ব্যবস্থা করা এবং রোগের উপসর্গ ধরা পড়ুক বা না পড়ুক – বাধ্যতামূলক কোয়ারান্টাইনের প্রশাসনিক নির্দেশ দেওয়া গেলেই রোগ প্রতিরোধের ক্ষেত্রে উল্লেখজনক ভূমিকা নেওয়া যেত। কিন্তু এ দেশে বড়লোকদের কাছে সেই বঙ্কিমি আমল থেকেই আইন তামাশা মাত্র। ফলে ‘আইন’ নামক বজ্র আঁটুনির ফস্কা গেরো দিয়ে পালাতে সক্ষম হলেন বহু ‘শিক্ষিত’ মানুষ। এবং এঁরাই নিজ দায়িত্বে রোগটাকে দেশ জুড়ে ছড়িয়ে দিলেন।
এর মধ্যে কেটে গেছে প্রায় ১৫টা দিন। এই বারে রাষ্ট্রের স্বাস্থ্যব্যবস্থার হাঁড়ির হাল প্রকট হল। জিডিপি-র মাত্র ১% যে দেশে স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ, তাতে অবশ্য এই হাল হওয়াই প্রত্যাশিত! দেখা গেল রোগ পরীক্ষার খরচ মাত্র (!) ৫ হাজার টাকা যদিও সেই রোগনির্ণয়ের পরিকাঠামো বা প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম দেশের প্রায় কোত্থাও নেই। এদিকে সেই সরঞ্জাম প্রস্তুত রাখার কোনও প্রস্তুতিই রাষ্ট্র নেয়নি, এমনকি মাস্ক কিংবা হ্যান্ড স্যানিটাইজারের মতো অত্যাবশ্যক সরঞ্জামও অপ্রতুল। চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যব্যবস্থার সঙ্গে সম্পর্কিত সরকারি কর্মীরা অহোরাত্র পরিশ্রম করলেও বোঝা গেল তাঁদের হাল ‘একা কুম্ভ রক্ষা করে নকল বুঁদিগড়’-এর মতো।
সুতরাং এই পরিস্থিতিকে সামাল দিতে যে কঠোর বিকল্পের পরিশ্রম নেই তা মালুম হল প্রধানমন্ত্রীর। ২২ মার্চ কঠোর বিকল্পের নমুনা হিসেবে তিনি ডাক দিলেন ‘জনতা কার্ফু’-র। পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়ার আগে দেশবাসী কতটা প্রস্তুত তারই মহড়া নিলেন যেন। দেশের মানুষ তাঁকে বঞ্চিত করলেন না। অক্ষরে অক্ষরে তাঁর নির্দেশ পালন করে নিজেদের স্বেচ্ছাবন্দী করলেন তাঁরা, কারণ তাঁদের মাথায় তত দিনে গেঁথে দেওয়া গেছে সেই বিখ্যাত আশ্বাসবার্তা — ‘মোদী হ্যায় তো মুমকিন হ্যায়’। আর তাঁর শিষ্যসামন্তদের কেউ একে বললেন ‘শনির প্রকোপ’, কেউ বললেন বিকেল পাঁচটার পরে থালা আর ঘন্টা বাজালেই বেচারা করোনা পালানোর পথ পাবে না!
এই বারে হাতের আস্তিনে লুকিয়ে রাখা তাস বের করলেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। মাত্র ৪ ঘন্টার প্রস্তুতির সুযোগটুকু দিয়ে আগামী ৩ সপ্তাহের জন্য দেশ জুড়ে লকডাউন ঘোষণা করলেন। কেবলমাত্র লকডাউন করলে করোনার প্রকোপ কমবে? না। রোগ সংক্রমণ কমানো যাবে? না। আক্রান্ত মানুষদের চিকিৎসার সুবিধা হবে? প্রশ্নই নেই কারণ উপযুক্ত পরিকাঠামোই নেই। মানুষের সুরাহা হবে? না। তাহলে কেন লকডাউন? খুবই সহজ, শিবঠাকুরের আপন দেশে আইনকানুন সর্বনেশে।
মানুষ পাগলের মতো অত্যাবশ্যকীয় জিনিস কিনতে রাস্তায় বেরিয়েছে। ধাকাধাক্কি করে, মারামরি করে সে কেবলমাত্র নিজের প্রয়োজনীয় (কোনও কোনও ক্ষেত্রে অপ্রয়োজনীয়ও) মালপত্র মজুত করতে মরিয়া। এই কষ্টকর মুহূর্তে আরও একবার প্রকট মানুষের স্বার্থপরতা আর আত্মকেন্দ্রিকতা। কাঙ্ক্ষিত সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং-এরও দফারফা। এর মধ্যেই দোকানে-দোকানে মাল বাড়ন্ত কারণ গণপরিবহনেরও দফারফা। আর যেসব মানুষ প্রান্তিক, দরিদ্র, দিন-আনি-দিন-খাই তাঁদের কথাটুকু ভাবাও হচ্ছে না। ভিখিরির আবার পছন্দ!
১. প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ প্রকল্পের আওতায় এত দিন ৮০ কোটি মানুষ প্রতি মাসে বিনামূল্যে ৫ কেজি চাল অথবা গম পেতেন। আগামী তিন মাস অতিরিক্ত আরও ৫ কেজি চাল অথবা গম দেওয়া হবে তাঁদের। দেওয়া হবে অতিরিক্ত ১ কেজি ডালও। তার মানে এ বাবদ আগামী তিন মাসে সরকারের অতিরিক্ত খরচ (৮০ কোটিX ৫ কেজিX ৩ মাসX ৩০ টাকা + ৮০ কোটিX ১ কেজিX ৩ মাসX ৮০ টাকা) = (৩৬ হাজার + ১৯ হাজার ২০০) কোটি টাকা = ৫৫ হাজার কোটি টাকা প্রায়।
২. জরুরি পরিস্থিতিতে কেউ চাইলে নিজের কর্মচারী প্রভিডেন্ট ফান্ডের ৭৫ শতাংশ অথবা তিন মাসের বেতন (যে অঙ্ক কম হবে), তা আগাম তুলতে পারবেন। এই টাকা কর্মচারীর নিজের টাকা। তিনি যদি তা তুলে নিতে বাধ্য হন, তাহলে সরকারের সুদ বাবদ খরচ কমবে। এখানে সরকারের নিজস্ব দেয় কিছুই নেই।
৩. যে সমস্ত সংস্থার কর্মীসংখ্যা ১০০-র কম এবং সংস্থার ৯০ শতাংশ কর্মীর বেতন ১৫ হাজারের কম, তাদের হয়ে কর্মচারী প্রভিডেন্ট ফান্ডে ২৪ শতাংশ টাকাই জমা দেবে কেন্দ্র। অর্থাৎ নিয়োগকর্তা এবং কর্মী, দু’পক্ষের হয়েই কেন্দ্র টাকা দেবে। যদিও এ টাকা পরবর্তীকালে সংস্থার থেকে কেটে নেওয়া হবে কি না, সে সম্পর্কে স্পষ্ট কিছু জানানো হয়নি। দ্বিতীয়ত যেখানে এই সংস্থাগুলোতে কর্মচারী ছাঁটাই চলছে জোরকদমে, সেখানে এই সুবিধার আওতায় কতজন আসবেন এবং সে বাবদ সরকারের ব্যয়ের পরিমাণ আদৌ স্পষ্ট নয়।
৪. প্রধানমন্ত্রী উজ্জ্বলা যোজনার আওতায় আগামী তিন মাসের জন্য বিপিএল পরিবারগুলিকে বিনামূল্য রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডার দেওয়া হবে। যেহেতু এই পরিবারগুলোতে আগামী তিন মাসে সর্বোচ্চ ২টি গ্যাস সিলিন্ডার লাগতে পারে, তাই এ বাবদ খরচ হতে পারে ৮ কোটিX ২টি সিলিন্ডারX ৫০০ টাকা = ৮ হাজার কোটি টাকা।
৫. জনধন অ্যাকাউন্ট রয়েছে যে মহিলাদের, তাঁদের আগামী তিন মাসের জন্য ৫০০ টাকা করে দেওয়া হবে। এতে ২০ কোটি মহিলা উপকৃত হবেন। এ বাবদ খরচ হবে ২০ কোটিX ৩ মাসX ৫০০ টাকা = ৩০ হাজার কোটি টাকা
৬. ষাটোর্ধ্ব ব্যক্তি, বিধবা এবং প্রতিবন্ধিদের অতিরিক্ত ১০০০ টাকা করে দেওয়া হবে প্রতিমাসে। দু’দফার কিস্তিতে এই টাকা মিলবে। এই সংখ্যাটা কত তা অর্থমন্ত্রী বলেননি, যেমন বলেননি সে বাবদ কত খরচ হতে পারে।
৭. ১০০ দিনের কাজের আওতায় শ্রমিকদের পারিশ্রমিক বাড়িয়ে ২০২ টাকা করে দেওয়া হবে। আইন মেনে এই প্রকল্পে প্রতি বছর এপ্রিল মাস থেকে শ্রমিকদের মজুরি বাড়ানো হয় ৷ কাজেই এ বাবদে সরকারের অতিরিক্ত খরচ নেই।
৮. প্রধানমন্ত্রী কৃষি যোজনার আওতায় বছরে ৬ হাজার টাকা করে পান কৃষকরা। বর্তমান পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহেই তা থেকে কৃষকদের অ্যাকাউন্টে ২ হাজার টাকা করে জমা পড়বে। এই যোজনায় কৃষকরা বছরে যে ৬ হাজার টাকা পেতেন সেটাই পাবেন। কেবল তার মধ্যে ২ হাজার টাকা অগ্রিম দেওয়া হবে ৷ কাজেই এ বাবদেও সরকারের অতিরিক্ত খরচ নেই।
৯. আক্রান্ত এবং জরুরি পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত ডাক্তার নার্সদের জন্য আগামী তিন মাস মাথাপিছু ৫০ লক্ষ টাকার বিমা। আক্রান্ত হলে তবেই এই বিমা প্রযোজ্য হবে, অন্যথায় নয়। কাজেই এ বাবদে সরকারের খরচ খুব একটা হবে না কেবল প্রিমিয়ামটুকু দেওয়া ছাড়া।
তাহলে দেখা যাচ্ছে আগামী তিন মাসে করোনা মোকাবিলায় সরকারের সম্ভাব্য খরচ হতে পারে (৫৫ হাজার+ ৩০ হাজার+ ৮ হাজার) কোটি টাকা বা ৯৩ হাজার কোটি টাকা। যদি অন্যান্য খাতে সম্ভাব্য ব্যয় আরও ৭ হাজার কোটি টাকা হয় তবে বাকি ৭০ হাজার কোটি টাকা কোথায়?
ভাবুন, ভাবা প্র্যাকটিস করুন।
ন্যাড়া | ২৭ মার্চ ২০২০ ০৮:১৬91805
এবড়োখেবড়ো | ২৭ মার্চ ২০২০ ১২:৫৫91808পাই, প্রিমিয়াম তো সবার জন্য সমান হবে না। বয়স অনুযায়ী তার তারতম্য হবে। তাঁদের সংখ্যা সারা দেশে মাত্র ২২ লক্ষ।
৩ সম্পর্কে কত খরচ সেটা নির্দিষ্ট করে অর্থমন্ত্রী বলেননি।
৬-এর ক্ষেত্রে খরচ হবে ৩ কোটিX১০০০ টাকা = ৩ হাজার কোটি টাকা।
সে ভাবে হিসেব কষলে সব মিলিয়ে ৭ হাজার টাকা না হলেও আরও ৫-৭ হাজার কোটি অতিরিক্ত হতেই পারে।
কিন্তু খেয়াল করলে দেখবেন ১ এবং ৪-এ যথেষ্ট বেশি বরাদ্দের হিসেব দিয়েছি। সরকার নিশ্চয়ই ৩০ টাকা কেজি দরে চাল আর ৮০ টাকা কেজি দরে ডাল কেনেনি। কাজেই ওখান থেকেই সেই ৫-৭ হাজার কোটি টাকা ম্যানেজ হয়ে যাবে।
২ আরও লাভবান সরকারের পক্ষে। তার দায়ভার সে এই সুযোগে ছেঁটে ফেলবে।
ফলে সব মিলিয়ে ওই ৭০ হাজার কোটি টাকার ঘাপলা থেকেই যাচ্ছে।
ন্যাড়া, আমি অঙ্কে চিরকালই কাঁচা। তবুও ওই আর কি অক্ষমের প্রচেষ্টা। আপনি এখানে বিকল্প হিসেবটি পেশ করলে একবার দেখে নেওয়া যেত কেমন অঙ্ক কষায় আপনার মশিপ পাশ করিয়ে দিত।
এবড়োখেবড়ো | ২৯ মার্চ ২০২০ ০১:০৬91851আমি না হয় অঙ্কে গাড্ডু পেয়েছি চিরকাল, কিন্তু আজ দেখি আনন্দবাজারও একই কথা বলছে ওই ৭০ হাজার কোটি টাকার ঘাপলা নিয়ে। ক্ষীইই কাণ্ড!
সম্বিৎ | ২৯ মার্চ ২০২০ ০৩:৪৭91853
এবড়োখেবড়ো | 162.158.***.*** | ২৯ মার্চ ২০২০ ১২:২৮91870সম্বিৎ, আগে আপনার প্রশ্নের উত্তর দিই।
২. প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকার প্রি-পেমেন্ট করতে গেলে সরকারকে ধার করতে হবে কেন? সরকার সে টাকা নিশ্চিন্তে নানা বন্ডে জমা রাখে, বদলে সুদ পায়। সেই সুদের একাংশ সে কর্মচারীকে দিয়ে থাকে। দ্বিতীয়ত এ টাকা নন-রিফান্ডেবল বা অ-ফেরতযোগ্য নয়। ফলে আজ হোক বা কাল কর্মচারীকে সে টাকা ফের শোধ করতে হবে সুদ-সহ। তাহলে তো সরকারের ঘরে ফের সুদ আসবে। এ বাবদ সরকারের টাকাটা খরচ হচ্ছে কীভাবে?
৮. প্রধানমন্ত্রী কৃষি যোজনার আওতায় থাকা কৃষকদের অ্যাকাউন্টে ২ হাজার টাকা করে জমা পড়বে। এখানেই বা ধারের প্রসঙ্গ আসছে কেন? এ টাকা বাজেটেই বরাদ্দ করা আছে। সরকার তার বাজেট বরাদ্দের টাকা ধার করে আর সেই কারণে সুদ দেয়? কেন? সরকারের নিজস্ব আয় নেই?
৭. ১০০ দিনের কাজের আওতায় শ্রমিকদের পারিশ্রমিক আগে ছিল ১৮২ টাকা, সেটা বেড়ে হবে ২০২ টাকা। অর্থমন্ত্রীর বয়ান অনুযায়ী এতে উপকৃত হবেন ৫ কোটি পরিবার। কিন্তু মজা হল, এ টাকাটাও বাজেটেই বরাদ্দ করা আছে।
১. করোনা-পূর্ব পরিস্থিতিতে চালের রিটেল প্রাইস ছিল ৩০ টাকা এবং ডালের ৮০টাকা। গমের দাম আরও কম। সরকার তো আর রিটেল প্রাইসে সে সব কেনে না। কাজেই ডিসট্রিবিউশনের জন্য সরকারের খরচ ওই টাকার মধ্যেই ধরা আছে। প্রসঙ্গত আমি তবুও সে বাবদ ৫৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয় দেখিয়েছি, প্রেমাংশু চৌধুরী দেখিয়েছেন আরও কম - ৪৫ হাজার কোটি টাকা।
৪. এবারে আসুন গ্যাস সিলিন্ডারে। প্রধানমন্ত্রী উজ্জ্বলা যোজনার আওতায় থাকা পরিবারগুলিতে গ্যাস সংযোগ দেওয়া হয় ৫ কেজি ও ১৪ কেজি সিলিন্ডারে। কাগজে-কলমে সংখ্যাটা ৮ কোটি হলেও অনেকেই নিয়মিত সিলিন্ডার নিতে পারেন না; অনেকের শুধু কানেকশনটাই আছে কারণ ওভেন কেনার সঙ্গতি নেই। শুধু সাবসিডির কথা বললে তো এই ব্যাপারগুলোকে এড়িয়ে যেতে হয়!
এর সঙ্গে প্যাকেজে আছে অসংখ্য বেকার ঘোষণা।
ক. ৬৩ লাখ স্বনির্ভর গোষ্ঠীকে দেওয়া হবে ২০ লাখ টাকা করে ঋণ। আগে ছিল ১০ লাখ টাকা। কিন্তু ঋণ, অনুদান নয়।
খ. নির্মাণ কর্মীদের জন্য কল্যাণ তহবিল থেকে ৩১ হাজার কোটি টাকা খরচের ঘোষণা। কিন্তু নির্মাণ সংস্থার থেকে সেস বাদ আদায় করা সেই টাকাও তহবিলেই ছিল। সুতরাং তার জন্যও কেন্দ্রের বাড়তি খরচ নেই।
এইবারে পাই যে খরচগুলোর উল্লেখ করেছেন সে সম্পর্কে আরও সংযোজন।
৩. ইপিএফ-এর ১২% দিতে সর্বোচ্চ খরচ ৫ হাজার কোটি টাকা।
৬. আগের মন্তব্যেই বলেছি এ বাবদ ব্যয় হবে ৩ হাজার কোটি টাকা।
৯. ২২ লাখ সরকারি স্বাস্থ্যকর্মীর বীমা ও চিকিৎসা বাবদ সর্বোচ্চ ১ হাজার কোটি টাকা।
সুতরাং মোট খরচ --- (১. ৫৫+৩. ৫+৪. ৮+৫. ৩০+ ৬. ৩+ ৯. ১) হাজার কোটি টাকা = ১ লাখ ২ হাজার কোটি টাকা
তাহলেও বাকি ৭০ হাজার কোটি টাকার হিসেব মিলছে না যে!