দুজন চা শ্রমিককে গুলি করে হত্যা করে, চাঁদমনি চা বাগান উপড়ে ফেলে দিয়ে, দেড় দশক আগে যে সিটি সেন্টার শপিং মল তৈরি হয়েছিল, তার সামনে সার বেঁধে বসে আছেন চা শ্রমিকরা। পুলিশ আটকে দিয়েছে তাঁদের। বিহার আর নেপাল সীমান্তের দিকে ছড়িয়ে থাকা তরাই অঞ্চলের চা বাগান থেকে মিছিল করে আসছিলেন তাঁরা। উত্তরকন্যার দিকে। 7 আগস্ট 2018। তরাই থেকে, পাহাড় থেকে, ডুয়ার্স থেকে শিলিগুড়ির দিকে হেঁটে আসা এরকম বহু মিছিলকে পুলিশ এভাবেই জায়গায় জায়গায় আটকেছে। তবু মিছিল বেরোচ্ছে নিরন্তর। বাগানে বাগানে মোতায়েন হয়েছে পুলিশ। আর যে মিটিংয়ের দিকে যাওয়ার লক্ষ্যে শ্রমিকরা দল বেঁধে হেঁটেছেন, সংশয়-বিভ্রান্তি বাড়াতে সেই মিটিংয়ের স্থান তিনবার বদল করা হয়েছে কয়েক ঘন্টার মধ্যে। তার আশপাশের এক কিলোমিটার রাস্তা ঘিরে দেওয়া হয়েছিল পুলিশ কর্ডন দিয়ে।
“চায়ের মিনিমাম ওয়েজটা যেন কত? সেটাও দ্যায় না?”— প্রশ্নটা প্রায়ই শুনি। চা বাগান অঞ্চল থেকে দুরে, কলকাতা কিংবা অন্য বহু জায়গায় প্রশ্নটা এভাবেই আসে। এমনকি শ্রমিক অধিকার নিয়ে কাজ করা মানুষদের থেকেও।
না, চা শিল্পে মিনিমাম ওয়েজ নেই এখন!
অন্য বহু শিল্পে যেমন হয়, মিনিমাম ওয়েজ অর্থাৎ ন্যূনতম মজুরি সরকার নির্ধারণ করে দেয়, সেরকমটা এখনও হয়নি পশ্চিমবঙ্গ (এবং আসামের) চা শ্রমিকদের ক্ষেত্রে। তিন বছর অন্তর মালিকপক্ষ-শ্রমিকপক্ষ-সরকারপক্ষের ত্রিপাক্ষিক দরকষাকষি দিয়েই নির্ধারিত হয়ে এসেছে চা শ্রমিকদের মজুরি। এই অন্তহীন অনিশ্চয়তারই অবসান চান চা শ্রমিকরা। তাই ন্যূনতম মজুরি চালুর দাবিতে আন্দোলন গড়ে ওঠে গত ২০১৪ সাল থেকে।
প্রায় গোটা দার্জিলিং পাহাড় আর তরাই, কালিম্পং পাহাড়ের কিছু অংশ, জলপাইগুড়ি আর আলিপুরদুয়ার জেলার বিস্তীর্ণ ডুয়ার্স অঞ্চল জুড়ে ছড়িয়ে থাকা বিশাল বিশাল ২৭৮টা টি এস্টেটের প্রায় সাড়ে চার লাখ চা শ্রমিক (এবং আরো অগুনতি ‘নয়া’ বাগানের অসংখ্য শ্রমিকও) উৎসুক চোখে তাকিয়ে ছিলেন সরকারি সিদ্ধান্তের দিকে। বহু বছরের টালবাহানার পর গত ৬ আগস্ট ঘোষণার কথা ছিল এই মিনিমাম ওয়েজের পরিমাণ।
এবং বলাই বাহুল্য, এই শ্রমিকদের সরকার নিরাশ করেছে।
রাজ্যের লেবার সেক্রেটারির উপস্থিতিতে সেই মিটিংয়ে আসা ১৭২ টাকার প্রস্তাবটা জোরের সাথে ফিরিয়ে দেন বর্তমান আন্দোলনের নেতৃত্বকারী জয়েন্ট ফোরামের প্রতিনিধিরা। এবং ধর্ণায় বসেন। গভীর রাতে ফের গ্রেপ্তার করার পুলিশি হুমকির সাথে সরকারি প্রতিশ্রুতি আসে যে আবার মিটিং বসবে পরের দিন। ধর্ণা প্রত্যাহৃত হয়। কিন্তু ততক্ষণে গোটা চা-অঞ্চল জুড়ে খবর ছড়িয়ে পড়ে যে উত্তরকন্যায় দুরমুশ হচ্ছে শ্রমিকদের আশা-আকাঙ্ক্ষা। তাই তরাই-ডুয়ার্স জুড়ে চলবে তিনদিন বাগান স্ট্রাইক আর পাহাড়ে আটকানো হবে মেড-টি সাপ্লাই।
৭ তারিখ সকাল থেকে শুরু হয়ে গেল সেই স্ট্রাইক আর পাতা আটকানো। বাগানে বাগানে। ৮ তারিখ আরো বাড়লো সেই ঢেউ। ৯ তারিখ, তৃতীয় দিনেও চলল সেই আন্দোলনের ঢেউ। এরপর পরশু, ১৩ তারিখের জন্য প্রতীক্ষা। ৬ তারিখের মিটিংয়ে লেবার সেক্রেটারি আবার ২০ তারিখ মিটিং হবে জানিয়ে একতরফাভাবে মিটিং ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন। কিন্তু আন্দোলনের চাপে দিন এগিয়ে এনে ১৩ তারিখ নির্ণায়ক মিটিং হবে জানিয়েছে সরকার। আপাততঃ তারই প্রতীক্ষা।
কত হবে মিনিমাম ওয়েজ? শ্রমিকরা কত চাইছেন? অনেকে জিজ্ঞেস করছেন।
দেশে একটা ন্যূনতম মজুরি আইন ১৯৪৮ বলে বস্তু আছে। বাংলা ও আসামের চা শিল্প তার বাইরে ছিল। কেরালা, তামিলনাড়ুর চা বাগানে অবশ্য আগেই চালু হয়েছে মিনিমাম ওয়েজ। চা বাগানের মজুরি এতদিন পর্যন্ত নির্ধারিত হত কালেক্টিভ বার্গেনিং প্রক্রিয়ায়। মূলতঃ প্ল্যান্টেশন লেবার এক্ট ১৯৫১ আর পশ্চিমবঙ্গ প্ল্যান্টেশন লেবার রুলস ১৯৫৫ দ্বারা নির্ধারিত হয় চা শিল্পের চলা। মজুরির দুটো ভাগ সেখান থেকেই এসেছে-- একটা নগদ মজুরি আর একটা ফ্রিঞ্জ বেনিফিট। বিস্তীর্ণ ও দুর্গম চা বাগানগুলোতে পয়সা দিলেই সব পাওয়া যাবে না বলে রেশন, মেডিকেল দেওয়া, ঘর মেরামতি, ছাতা, জুতো, কম্বল, জ্বালানি কাঠ প্রদান অথবা তার জন্য পয়সা, ক্রেশের সুবিধা ইত্যাদি দেওয়া হয় ওই ফ্রিঞ্জ বেনিফিটের আওতায়। যদিও এই সুবিধাগুলো দেওয়ার প্রক্রিয়া সাধারণভাবে ক্রমশঃ কমে এসেছে, কোনো কোনো বাগানে তো শূন্যয় এসে ঠেকেছে সেই হিসাব। শ্রমিকদের বাকির খাতায় জমছে সেসব। সরকার সব জানে। ২০১৩ তে তাদেরই তৈরি করা রিপোর্টে রয়েছে এর সবচেয়ে বিস্তারিত খতিয়ান। তবু কোনো ব্যবস্থা নেয় না তারা। পিএফ, গ্র্যাচুটি জমা না দেওয়াটাও বহু মালিকের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। বাগানের রাস্তাঘাট মেরামতের দায়িত্ব মালিকের হলেও একশো দিনের কাজের ঘাড়ে ফেলে দেওয়া হয়েছে তাও। রেশন দেওয়ার ব্যবস্থাটা মালিকরা ঝেড়ে ফেলে দিয়েছে খাদ্য সুরক্ষা আইন আসার পর, ২০১৬ থেকে। অথচ ওই রেশনটা তো মজুরির অংশ! নানা টালবাহানার পর দু বছর বাদে সদ্য ওই বাগানের দেয় রেশনের সমপরিমাণ পয়সা দেওয়ার কথা হয়। কিন্তু দেওয়া শুরু হল নিতান্তই কম, ৯ টাকা করে। সরকারি হিসেবেই এর পরিমাণ ২৬ টাকা প্রতিদিন বলে আগে জানানো হয়েছিল। আর তার ওপর ২০১৬-র ফেব্রুয়ারি থেকে ২০১৮-র এপ্রিল পর্যন্ত এই রেশনের টাকাটা হারিয়েই গেল।
গত ২০১৪-র মজুরি চুক্তিতে (যা ন্যূনতম মজুরি আন্দোলনের জেরে 2015তে স্বাক্ষরিত হয়েছিল) মজুরি প্রথম বছরে ১১২.৫০ টাকা এবং প্রতি বছর ১০ টাকা বাড়িয়ে সদ্য ১৩২.৫০ টাকা হয়েছিল। আর ঠিক হয়েছিল যে আর মজুরি চুক্তি হবে না, তত বদলে চালু করা হবে মিনিমাম ওয়েজ। ২০১৭ থেকে। তার জন্য ওই ২০১৫ তেই তৈরি হয়েছিল মিনিমাম ওয়েজ এডভাইসরি কমিটি। কিন্তু মালিকদের তোষামোদ করে চলা সরকার সেই কমিটিকেও যথারীতি প্রায় ঘুম পাড়িয়েই রেখেছিল। গত মার্চ মাসে হঠাৎ সরকারি ঘোষনা করে অন্তর্বর্তীকালীন মজুরি বৃদ্ধি করা হল, ১৫০ টাকা মজুরি হল, আর তার সাথে রেশনের ৯ টাকা জুড়ে হল দৈনিক ১৫৯ টাকা।
এক বছরের সম্ভাব্য মজুরি বৃদ্ধির এরিয়ার আর রেশনের খর্বিত টাকা ধরলে গোটা চা শ্রমিকদের অন্তত ৫০০ কোটি টাকা লুট করেছে মালিকরা। এই অন্তর্বর্তীকালীন মজুরীবৃদ্ধির নামকুড়ানো হঠাৎ ঘোষণার ফলে।
পশ্চিমবঙ্গ ও আসামের চা বাগানে মিনিমাম ওয়েজ নেই। প্রায় এখানকার মতই আসামেও মজুরি ছিল ১৩৭ টাকা। এখানে অন্তর্বর্তীকালীন মজুরি বৃদ্ধির পাশাপাশি কিছুদিন আগে ওখানেও হয় এরকম মজুরি বৃদ্ধি। তাতে সম্প্রতি মজুরি হয়েছে ১৬৭ টাকা। আগামী ১৪ই আগস্ট আসামের মুখ্যমন্ত্রী মিনিমাম ওয়েজের পরিমা্ণ ঘোষণা করবেন। না হলে ওখানেও স্ট্রাইকে যাবেন শ্রমিকরা বলে খবর। মিনিমাম ওয়েজ কমিটি আসামে চা শ্রমিকদের জন্য ৩৫১ টাকা সুপারিশের যে খবরটা শোনা গেছে, ওটা সমস্ত শিল্পের মিনিমাম ওয়েজ কমিটির সুপারিশ, যা মানার তোয়াক্কা ওখানে সরকারও করছে না, মালিকরা তো নয়ই। ওটা ধর্তব্যের মধ্যে না আনার মত একটা জিনিসে পরিণত হয়েছে আসামের মাটিতেও।
মালিকদেরই মিনিমাম ওয়েজ নিয়ে টালবাহানার অন্ত নেই। বাংলায় ও আসামে। বহু মালিকই এক। এখানে যে ফ্রিঞ্জ বেনিফিট বহুলাংশে দেওয়াই বন্ধ, সেটাকেই অজুহাত করে ওয়েজ কম রাখার কথা বলে ওরা। আর হাওয়ায় ভাসিয়ে রাখা হয় চা শিল্পে লোকসানের গল্প। টি বোর্ডের তথ্য লাগাতার দেখাচ্ছে যে লোকসান তো নেই-ই, বরং রপ্তানি-মুনাফা এবং চা উৎপাদনও বেড়েই চলেছে। দেশের বাজারে বেড়ে চলেছে চাহিদাও। অর্থনীতির সরল হিসেবেও এই লোকসানের গল্পটা টেকে না।
আসলে চা শ্রমিকদের ওপর এক ধরনের মৌরসীপাট্টা চালিয়ে এসেছে মালিকরা। ব্রিটিশ মালিক থেকে তার পরের দেশি মালিক অব্যাহত থেকেছে সেই ট্র্যাডিশন। মাঝে মাঝে কিছু মরণপণ লড়াইয়ের মধ্যে দিয়ে ছিঁটেফোঁটা অধিকার জেতা গেছে, প্ল্যান্টেশন লেবার এক্টের মত। প্রথম যুগে চা শ্রমিকদের মজুরি স্থির করার সময়ই এই ঐতিহাসিক বঞ্চনা সরকারি সিলমোহর পেয়েছিল। যে কোনো শিল্পে মজুরি নির্ধারণের সময় শ্রমিক ও তার রোজগারের ওপর নির্ভরশীল পরিবার সদস্যদের হিসেব নেওয়া হয়। যেমন ন্যূনতম মজুরির ক্ষেত্রেও একজন রোজগেরের সাথে তিন জন নির্ভরশীল (পরিবারে দুজন প্রাপ্তবয়স্ককে দুই ইউনিট ও দুজন অপ্রাপ্তবয়স্ককে মোট এক ইউনিট ধরা হয়, অর্থাৎ মোট 3 ইউনিট) ধরা হয়। চা শিল্পের ক্ষেত্রে প্রথমবার মজুরি নির্ধারণের সময়ই এটাকে দেড় জন বলে ধরা হয়। যুক্তি দেওয়া হয় যে বাগানে পরিবারের দুজনেই কাজ করে, তাই রোজগারকে দুই দিয়ে ভাগ করতে হবে। তাই শুরু থেকেই চা শিল্পের মত একটা শ্রমনিবিড় শিল্প, যা ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম শ্রমিক নিযুক্তির ক্ষেত্র, সেখানে লক্ষ লক্ষ শ্রমিকের মজুরি তখন থেকেই কম নির্ধারিত হয়েছিল।
অথচ বাস্তবটা অন্য। আজকাল বাগানে পরিবারের একজনের বেশি স্থায়ী কাজ পান না। বাগানগুলোতে ক্রমশঃ বেড়েই চলেছে অস্থায়ী শ্রমিকের অনুপাত, যারা আইন অনুযায়ী প্রাপ্য সুবিধার কমই পান। সেখানে ওই দেড় জনের ইতিহাস বয়ে আসা চা শ্রমিকদের ঐতিহাসিক ভাবেই সুবিচার প্রয়োজন। মিনিমাম ওয়েজ তার ন্যূনতম দাবি।
দেশের আইন অনুযায়ী মিনিমাম ওয়েজের একটা কাঠামো আছে। মিনিমাম ওয়েজ এক্ট ১৯৪৮, পঞ্চদশ ভারতীয় শ্রম সম্মেলন ও পরবর্তীতে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ দ্বারা ন্যূনতম ৩ জনের পরিবার ধরে নিয়ে প্রত্যেকের জন্য দৈনিক ২৭০০ ক্যালোরি খাবার, বছরে ৭২ গজ কাপড়, মোটামুটিভাবে বাসস্থানের জন্য মোট মিনিমাম ওয়েজের ৫%, জ্বালানি-বিদ্যুৎ ও অন্যান্য খরচ বাবদ মিনিমাম ওয়েজের ২০%, শিশুদের শিক্ষা-চিকিৎসা-উৎসব-অনুষ্ঠান-বৃদ্ধাবস্থার সঞ্চয়ের জন্য ২৫%-- এই বিষয়গুলি জুড়ে মোট মিনিমাম ওয়েজ হিসেব হবে। বিগত ১৭ জুলাই প্রথমবার সরকারি প্রস্তাব পেশের সময় প্রথমতঃ উল্লিখিত ২৫%-এর উপাদানটি না জোড়ার প্রস্তাব আসে, যা স্পষ্টতই সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশের অবমাননা হবে। আন্দোলনের নেতৃত্বদায়ী জয়েন্ট ফোরাম ১৭২ এর প্রস্তাবের মুখে দাঁড়িয়ে শুধু ফুড কম্পোনেন্টের হিসাবটাই ২৩৯.৮২ টাকা করার দাবি জানিয়েছে। এর সাথে কাপড়ের খরচ ও অন্যান্য বিধিবদ্ধ খরচগুলো জুড়তে হবে। এতে নেতৃত্বদায়ী ইউনিয়নগুলো কোনরকম ছাড় দিয়ে চুক্তি সম্পন্ন করলে তা একটা সম্ভাবনাময় আন্দোলনের অসম্পূর্ণ পরিণতি হবে। তরাই-ডুয়ার্স-পাহাড় জুড়ে চা শ্রমিকদের মিটিং-মিছিলে সোচ্চার কণ্ঠগুলো তাই জানান দিচ্ছে। স্ট্রাইক চলছে তরাই-ডুয়ার্সের বাগানগুলোয়। শাসকদলের ইউনিয়ন কোথাও কোথাও বিরোধিতা করে স্ট্রাইক করতে না দিলেও শ্রমিকদের বেশিরভাগই যে চলমান আন্দোলনে মন সমর্পণ করে আছেন, সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। পাহাড়েও তাই। পাহাড়ের শাসকদল রাজ্যের শাসকদলের সাথে সুর মিলিয়েছে। তফাৎ এটুকু যে তৃণমূলের ইউনিয়ন জয়েন্ট ফোরামে ছিল না, নেইও। কিন্তু পাহাড়ের শাসকদলের ইউনিয়ন জয়েন্ট ফোরাম ছাড়েনি, শুধু এই আন্দোলনে ফোরামের সাথে নেই। পাহাড়ের অন্য ইউনিয়নগুলো আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে ক্রমবর্ধমান শ্রমিক সমর্থন নিয়ে।
আন্দোলনটা শ্রমিকদের সক্রিয় করেছে, একসূত্রে বেঁধেছে-- এতে কোন সন্দেহ নেই। পাশাপাশি সক্রিয় সমর্থনে দাঁড়িয়েছে চা বাগান সংগ্রাম সমিতির মত সংগঠনও, যারা শ্রমিকদের পাশাপাশি সমাজের অন্যান্য অংশের মানুষদের, বুদ্ধিজীবী, অধ্যাপক, উকিল, সাংবাদিক, কবি সাহিত্যিক, ছাত্রযুবদেরও চা শ্রমিকদের পাশে দাঁড়ানোর কথা বলে। ওই সমগ্র অঞ্চল জুড়ে চা শ্রমিক একটা সামাজিক ইস্যুও বটে। তাই নানাভাবে সমাজের নানা অংশের মানুষ এই আন্দোলনের পাশে দাঁড়িয়েছেন এবং দাঁড়াচ্ছেন।
এটা ভালো লক্ষণ যে এবারের আন্দোলনে কলকাতা সহ আরো বহু বাইরের অঞ্চলের মানুষের সমর্থন পাওয়া যাচ্ছে। এই সমর্থনের প্রক্রিয়ায় যদি তাঁরা বুঝতে পারেন যে বন্ধ বাগান আর তাতে অনাহার মৃত্যুর বাইরেও চা বাগানের সমস্যাটা অনেক গভীর, তাহলে একটা কাজের কাজ হবে। মালিকদের ভয়াবহ মুনাফাখোরি নীতি, ফাটকাবাজ মালিকদের দৌরাত্ম্য আর তাতে সরকারের প্রচ্ছন্ন সমর্থন আর উদাসীনতাই যে মূলতঃ চা শিল্প আর শ্রমিকদের বিপর্যয়ের মূল কারণ, এই ভিত্তিটায় দাঁড়ানো দরকার। বন্ধ বাগান বা অনাহারে মৃত্যু সমস্যায় একটা সামান্য অংশ, ন্যূনতম মজুরি না দেওয়ার মত চা বাগানের সার্বজনীন সমস্যাগুলো ছড়িয়ে আছে কমবেশি সমস্ত বাগান জুড়ে।
ন্যূনতম মজুরির এই আন্দোলন বাকি সমস্যাগুলোকেও সামনে আনবে আর শ্রমিক অধিকারের আন্দোলনকে আরো প্রশস্ত করবে, এই আশাটুকু খুব বেশি কি ?