এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  বাকিসব  মোচ্ছব

  • একটি পাকা চাকুরির গল্প

    জয়ন্তী অধিকারী লেখকের গ্রাহক হোন
    বাকিসব | মোচ্ছব | ০১ জানুয়ারি ২০২০ | ৬৭৩৭ বার পঠিত | রেটিং ৪.৮ (৪ জন)
  • দেশভাগের পর কুমুর ঠাকুর্দা, বিপত্নীক মহেন্দ্রচন্দ্র দাশগুপ্ত পাঁচটি ছেলেমেয়ে নিয়ে ঢাকা বিক্রমপুরের পৈতৃক বাড়ি, তৎসংলগ্ন অন্য স্থাবর সম্পত্তি ইত্যাদির মায়া ত্যাগ করে ভারী ব্যাজার মুখে এপারে এসে উপস্থিত হলেন।

    ছেলেমেয়েরা তখন ছোট নেই কেউ, বড় দুই ছেলে চাকরিতে ঢুকে গেছে। মহেন্দ্রচন্দ্র ঢাকা মেডিকেল কলেজের অধ্যাপক ছিলেন, অত্যন্ত খ্যাতনামা ডাক্তারও ছিলেন, শোনা যায়। খুবই আশ্চর্য কোন উপায়ে তিনি ট্রেনের একটি রিজার্‌ভড কামরা জোগাড় করেন এবং অস্থাবর সমস্ত সম্পত্তি - বিশাল পালঙ্ক থেকে বাথরুমের মগটি পর্যন্ত সযত্নে নিয়ে আসেন।

    দেশ ছেড়ে আসার পর বিভিন্ন পর্যায়ে তিনি মানিকতলা, মেদিনীপুর, খন্যান ও রাজাভাতখাওয়াতে জমি কেনেন, দু একটি জায়গায় বাড়ি তোলাও শুরু হয়, কিন্তু শেষ পযন্ত প্রত্যেকটিই বাতিল করে কোন্নগরে বাড়ি করা হয়। স্টেশনের কাছে প্রচুর খালি জমি থাকা সত্বেও তিনি বাড়ি করেন দশ মাইল মত ভেতরে। (তবে দশ মাইলটা মনে হয় কথার কথা। কুমুর কাকারা বলতেন “স্টেশনের কাছে এত এত জমি পইড়া আসিল, বাবায় বাড়ি করল গিয়া দশ মাইল ভিতরে, নবগ্রাম কলোনীতে।” বলা বাহুল্য এইসব সমালোচনা হত, দাদুর কানের আওতার বাইরে, কলকাতা বা কৃষ্ণনগরে বসে, তাও সভয়ে চাদ্দিক একবার দেখে নিয়ে)।

    কোন চাপারাগে বা অভিমানে তিনিই জানেন, ডাক্তারি সম্পূর্ণ ছেড়ে দেন।

    কিন্তু এই গল্পটি তাঁর গল্প নয়।

    এটি মনে হয় একটি পাতকুয়োর গল্প।

    দাশগুপ্ত বাড়িতে বসবাসের ঘরের অংশ পুরো জায়গার তুলনায় বেশ কম ছিল। নেহাৎ না থাকলে খারাপ দেখায়, তাই বিশাল জমির এক কোণে পাঁচ ছটি ঘর ও রান্নাঘরের একটি ইউনিট রাখা হয়েছিল। বাকি  অংশে নাম জানা ও না জানা অসংখ্য গাছপালা, জিমির (কুকুরের) ঘর, ভুটকির (ছাগলের) ঘর, ধ্যানের ঘর, মহেন্দ্রচন্দ্রর বন্ধুদের নিয়ে বসার জন্য গোলমত ছাউনি, স্নানের ঘর, আজকালের ভাষায় ওয়াশরুম দুটি ও তৎসংলগ্ন একটি বেশ বড় বাঁধানো, গভীর পাতকুয়ো। আশা করি নবীন পাঠকপাঠিকা পাতকুয়ো কাকে বলে জানেন, না জানলে গুগল মাসিকে জিগান। 

    আচ্ছা, ভাল কথা পড়ল মনে (অতিনবীন সব পাঠকপাঠিকাদের গল্প বলা কুমু হেন প্রবীণার পক্ষে যে কি মুশকিল! এই গল্পটা শুনেছেন আশা করি, ননদ ও বৌদি নদীতে স্নান করতে গেছে, সুন্দরী ননদকে কুমির খপ করে ধরে জলের নীচে নিয়ে গেল। ততসুন্দরীনয়, সামান্য ভুলোমনা বৌটি ঘরে এসে নির্বিকার ভাবে সবাইকে ভাত, পোনা মাছের ঝোল, আমড়ার চাটনি বেড়ে দিল, নিজেও খেল। তারপর, হঠাৎ মনে পড়াতে তাড়াতাড়ি করে গিয়ে শাশুড়িকে জানাল, “ভাল কথা পড়ল মনে আঁচাতে আঁচাতে, ঠাকুরঝিকে নিয়ে গেল নাচাতে নাচাতে”), এই গল্পে কুমু ও তার ভাইও আছে। বাবার বদলির চাকরি হওয়াতে এরা বাবার সঙ্গে জলপাইগুড়ি, বহরমপুর, কৃ্ষ্ণনগর ইত্যাদি বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে থাকত আর পুজোর, গরমের, বড়দিনের এবং  দাদুর অসুখের (মহেন্দ্রচন্দ্রের সামান্য জ্বর হলেও তাঁর তিন ছেলের আপিস থেকে দশ দিন ছুটি নিয়ে বাড়িতে থাকা, দুই বিবাহিতা মেয়ের শ্বশুরবাড়ি থেকে এসে অন্তত পাঁচ দিন বাবাকে দেখাশোনা করা বাধ্যতামূলক ছিল) ছুটিতে কোন্নগরে এসে হাজির হত। বলতে কী, কোন্নগরেই এরা বছরের বেশির ভাগ সময় থাকত। একমাত্র বংশদন্ড হওয়ার জন্য কুমুর ভাই অর্চিস্মান বা অর্চি যে কী অসম্ভব আহ্লাদী ছিল, তা না দেখলে বিশ্বাস করা শক্ত ছিল। কুমু আর  দশটা বাচ্চার মতই বনে বাদাড়ে ঘুরত, গোল্লাছুট, এক্কাদোক্কা, ‌নাম পাতাপাতি, কুমিরডাঙা এইসব খেলত, টিকটিকি ছাড়া অন্য সব পোকামাকড় ধরে বা না ধরে মন দিয়ে দেখত, ব্রতচারী নাচত, খাদ্য অখাদ্য যতরকম ফল পাওয়া যায় পেড়ে খেত, পড়েটড়ে গিয়ে উঠে পড়ত নিজেই, কেটেছড়ে গেলে গাঁদা পাতা চিবিয়ে লাগিয়ে নিত। এমন কী খুব গোপনে রিকশাওলা, বাঁদরনাচওলা, বাসনওয়ালী, শিল কাটানেওলা - এদের সঙ্গে একটু গল্পগাছা করেও নিত। কিন্তু পাঁচ বছরের অর্চি থাকত মা, কাকা্‌, পিসী দাদু, মোহন (কুকুর, ছাগলদের কেয়ারটেকার কাম মালি কাম বাবাকাকাদের ফিজিওথেরাপিস্ট কাম দাদুর আপ্তসহায়ক কাম আরো হাজার কাজের কাজী) ইত্যাদিদের কোলে, কোলে। মাটিতে পা রাখতে ওকে কমই দেখা যেত, আর অত আতুপুতু করার জন্যই হয়ত বেচারা খুব ঘন ঘন জ্বরে ভুগত। 

    কুমুর একটি অতি প্রিয় খেলা ছিল, পাতকুয়োর দেয়াল ধরে ঝুঁকে অনেক অনেক নীচের জলে নিজের মুখ দেখা, ছোট্ট পাথর ছুড়ে  মুখের ছায়া ভেঙে দেওয়া, একটু পরে জলবৃত্ত শান্ত হয়ে গেলে আবার টলটলে অনন্ত কুয়োর জলে মুখ দেখা। আজ্ঞে হ্যাঁ, সেই সময় মোবাইল, ভিডিওগেম ইত্যাদি  অনেক কিছু ছিল না, কিন্তু ছোটরা নিজেরাই এইরকম নানা খেলা তৈরী করে নিয়ে মহানন্দে জীবন কাটাত। 

    তা, কুমু নিজের মনেই থাকত, কেউ বিশেষ ভ্রূক্ষেপ করত না তার দিকে, মাঝেমধ্যে এত ঢ্যাঙা ও ট্যালা মেয়ের শ্বশুরবাড়ি গিয়ে কি দুর্গতি হবে সেই বিষয়ক কিছু অতি মুখরোচক আলোচনা ছাড়া। কিন্তু পুজোর ছুটির মধ্যে একদিন কুমুর মাথায় পোকা নড়েচড়ে উঠল। শেষ আশ্বিনের ঠান্ডাতেই সোয়েটার, মোজা, মাফলার ও টুপি পরিহিত, দাদুর কোলে টুমটুম হয়ে বসে থাকা ভাইকে কুমু জিজ্ঞেস করে বসল,
    “ভাই, ভাই, কুয়োর জলে মুখের ছায়া দেখেছিস কোনদিন?” 

    এই অত্যন্ত নির্দোষ প্রশ্নটির যে প্রতিক্রিয়া হল, তা্কে কুমু কেন, যে কোন সুস্থবুদ্ধি মানুষেরই ধারণার অতীত বলা যায়।

    দাদু ভীষণ আতঙ্কে প্রায় আর্ত্তনাদ করে উঠলেন, “আমি আগেই জানি, এই লক্ষ্মীছাড়া মাইয়া একদিন দুধের পোলাডারে কুয়ায় ফেইল্যা দিব।” অর্চি বিকট আওয়াজে কান্না শুরু করার জন্য সর্বদা প্রস্তুত থাকত, সে কিছু না বুঝলেও ঘরবাড়ি মাথায় করে কেঁদে উঠল। কাকারা, মোহন যে যেখানে ছিলেন দৌড়ে এলেন, মোহন জানাল - কুমু দিনে অন্তত পঁচিশবার কুয়োতে ঝুঁকে পড়ে, আর হাসি হাসি মুখে গান করে। শুনে দাদুর মনে কুমুর দুরভিসন্ধির বিষয়ে আর কোন সন্দেহ রইল না। মা হাঁপাতে হাঁপাতে এসে ছেলেকে কোলে নিতে চাইলেও দাদু দিলেন না, বরং আরেকটু শক্ত করে বংশতিলককে জড়িয়ে ধরে রইলেন, হাঁসফাঁস হয়ে অর্চির কান্না আরও উঁচু স্কেলে চড়ে গেল। মা অগত্যা কুমুর ডান কানটি বেশ করে পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে সিঙ্গারার শেপ বানিয়ে, একটি  বিশাল থাপ্পড় সবে তুলেছেন, এমন সময় সেই ভয়ংকর চ্যাঁচামেচির মধ্যে একমাত্র বরফশীতল মাথারস মানুষ  ছোটকাকা এসে কুমুকে কোলে তুলে নিলেন।

    সরলমতি পাঠিকা ভাবতে পারেন, ভাইঝির প্রতি স্নেহবশত কাকা তাকে কোলে নিয়েছেন - তিষ্ঠ, এই কঠিন পৃথিবীকে চিনতে আপনার এখনো বিলম্ব আছে। কোলে নেওয়ার উদ্দেশ্য হল, বাঁশবনে নামিয়ে দিয়ে আসা। কুমুদের কাঁঠালবাগান যখানে শেষ হয়েছে, তার অনতিদূরে একটি বাঁশবন ছিল, সেখানে বাঁশগাছ ছাড়াও প্রচুর শেয়ালকাঁটা, বনকচু, জংলী লতা ইত্যাদি ছিল, ছিল কাঠবেড়ালীর দল, শেয়াল, গিরগিটি, দু একটা সাপ (ইয়ে সাপটাপ কুমু দেখে নি, কিন্তু সাপ ছাড়া বাঁশবন ঠিক মানাচ্ছে না)। চারপাশের পনেরো কুড়িটি বাড়ির বাচ্চারা দুষ্টুমি করলেই, তাকে তুলে ঐ বনে নামিয়ে দিয়ে আসা একটি স্ট্যান্ডার্ড পানিশমেন্ট ছিল। কোন ঢিপির ওপর বসিয়ে দিয়ে, থাক এইখানে, কেউ নিতে আসবে না, খবরদার বাড়ি আসবি না, এইসব বলে কাকা বা বাবা বা অন্য কেউ গটগট হেঁটে ফিরে যেতেন। অপরাধীরা অবশ্য এই শাস্তি বেশ পছন্দই করত, দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বকুনি, কানমলা, ‌থাপ্পড় ইত্যাদি হজম করার চেয়ে এ অনেক ভাল। তারা কিছুক্ষণ মাটিতে ঝরে থাকা অজস্র বাঁশপাতার ওপর খচমচ করে হেঁটে বেড়াত, মাটির ওপর রোদে ছায়ায় কেমন আলপনা তৈরি হচ্ছে, কাঠবেড়ালী দের ছুটোছুটি, পাখিদের ওড়াউড়ি  এইসব দেখত, তারপর আশপাশের কোন বাড়িতে ঢুকে পড়ে সেখানে লূডো, ক্যারাম, এক্কাদোক্কা বা অন্য যে খেলা চলছে তাতে জুড়ে যেত। ভাত বা জলখাবারের সময় বসে পড়ত, একটা বাড়তি বাচ্চাকে কেউ খেয়ালও করত না, সন্ধে হলে নির্বিকার মুখে ঘরে ফিরত। কুমু একটা বাড়ি দেখে রেখেছিল, সেখানে প্রচুর বা্ঁধানো শিশুসাথী, দেব সাহিত্য কুটিরের পূজাবার্ষিকী আলোর ফুলকি, অপরূপা, আজব বই ইত্যাদি ইতিউতি ছড়ানো থাকত, যতক্ষণ খুশি, যেখানে খুশি পা ছড়িয়ে বসে বই পড়া চলত, ঐ বাড়ির ঠাম্মা বা অন্য কেউ কিছুই বলতেন না। কাকার ঝাঁকড়া চুলভরতি মাথাটি মিলিয়ে যাওয়া মাত্র কুমু একদৌড়ে সেই বাড়ি চলে যেত।

    তা এই পাতকুয়োকান্ডের দিনও নিয়ম মত ক্লাস ফোরে পড়া কুমু কাকার কোলে ঝুলতে ঝুলতে বাঁশবনে ঢিপির ওপর পৌঁছে গেল। কাকা অদৃশ্য হওয়া মাত্র কুমু সেই বইবাড়ির দিকে  ছুটতে যাচ্ছিল, কিন্তু তার আগেই রাস্তায় এক অদৃষ্টপুর্ব দৃশ্য দেখে সে বিস্ময়ে স্থাণু হয়ে গেল।

    “গ্রে এ এ এ ট পামেলা সারকাস, গ্রে এ এ এ ট পামেলা সারকাস-----”  রিকশায় বসে মুখে মাইক ধরে খুব হাসি হাসি মুখে এইরকম বলতে বলতে সিড়িঙ্গে রোগা কিন্তু এই মোটা গোঁপওলা একটা কাকু  যাচ্ছে। তার লাল নীল বেগুনী সবুজ হলুদ খয়েরী জামাটা দেখে কুমু মোহিত না হয়ে পারল না, হ্যাঁ ,জামা হবে এইরকম। তার বাবা কাকাদের  সাদা নীল ছাই ইত্যাদি  বিচ্ছিরি রঙের ওগুলো আবার জামা নাকি? কাকুর পাশে জায়গা থাকলেও দুটো প্যাংলা মত ছেলে রিকশার পেছনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে চলেছে, কাকুর জামার ঘাড়ের কাছে একতাড়া পাতলা কাগজ গোঁজা, সেই কাগজ থেকে একটা দুটো টেনে টেনে নিচ্ছে আর রাস্তার লোকদের হাতে দিচ্ছে। কখনো ছেলে দুটো লাফিয়ে নেমে কাকুর বাঁ হাতে ধরা লাল  টিনের আঠা দিয়ে ঐ কাগজ গাছের গায়ে বা দেয়ালে সেঁটে  দিচ্ছে। 

    মুগ্ধ কুমু রিকশার সঙ্গে সঙ্গে চলল। কিছুটা যাওয়ার পর  কাকুর গোঁপটি হঠাৎ একটু ঝুলে গেল, আর মাইকে যা শোনা গেল, তা এইরকম -
    “গ্রে এ এ এ ট পামেলা সার্কাস, আসুন আসুন, সদলবলে আসুন, দেখুন বাঘ সিংহ, ইয়ে বানর, ঘোড়া, হাতি ইয়ে কুকুরের আশ্চর্য খেলা-আ-আ, মিস কমলার আগুনে ঝাঁপ, ধুত্তেরি গোঁপের নিকুচি করেছে, এই পেরেক, দেখতে পাস না নাকি?”

    পেরেক নামের ভীষণ রোগা ছেলেটা অমনি হাত বাড়িয়ে গোঁপটি  ঠিক করে বসিয়ে দিয়ে, কুমুর দিকে তাকিয়ে এক কান থেকে অন্য কান পর্যন্ত হাসল। 

    কিছুক্ষণ পর কুমু আবিষ্কার করল, সে রিকশায় মাইককাকুর পাশে বসে আঠার টিন ধরে আছে, গোঁপটি ঠিক করে বসিয়ে রাখার ডিউটিও তার হয়ে গেছে। 

    রাস্তার নেড়ি কুকুরের পাল, হাপ্প্যান্ট টানাটানি করা খালি গা ছেলের দল, সর্দিনাকে ছিঁচকাঁদুনি দুটো মেয়ে, দাশগুপ্তবাড়ির মাইয়াকে সার্কাসের লোকদের রিকশায় বসে থাকতে দেখে এত্তখানি হাঁ করা রাঙাদিদা ও অন্য এক দিদা, দুজন পাগল, গামছা পরিহিত কিছু লোক যাদের সর্বদাই পুকুরের দিকে যেতে দেখা যায়, এদের পার হয়ে রিকশা এক মাঠের সামনে এসে থামল।

    মাঠে “দ্যা গ্রেট পামেলা সার্কাসের” তাঁবু পড়েছে, তাঁবুর পেছনে তেরপল ছাওয়া বেশ অনেকটা জায়গা। সেখানে সার্কাসের মেয়ে পুরুষ সকলে যে যার কাজ করছে - কেউ চুল আঁচড়াচ্ছে, কেউ ছোট একখানা আয়না ধরে সযত্নে সত্যিকার গোঁপের সেবা করছে, কেউ পাহাড়প্রমাণ আলুর খোসা ছাড়াচ্ছে, কেউ আহ্লাদী চেহারার বেড়ালের গলা চুলকে দিচ্ছে, কেউ ভারি মন দিয়ে ঝলমলে পোশাকে রিপু করছে। দূরে দুএকটি ঘোড়া, টুপিপরা বাঁদর ও খাঁচার মধ্যে একটি ভারি বিষণ্ন শীর্ণকায় নির্জীব ভালুকও দেখা গেল। মোটের ওপর, বালিকা কুমু সমস্ত পরিবেশটিতে সার্কাস সার্কাস গন্ধের চেয়ে একটি বৃহৎ পরিবারের পিকনিকদিনের মজার গন্ধই অনেক বেশি পেল (কিন্তু তা সত্ত্বেও চার পাঁচ বছর পর প্রকাশিত লীলা মজুমদারের “মাকু” পড়ে এই পামেলা সার্কাসের অবিকল  ছবি কুমুর মনে ভেসে উঠেছিল, সারাজীবন মনখারাপ হওয়ামাত্রই মাকু, আর পড়লেই মনের অ্যালবামে সেই শরৎসকালের উজ্জ্বল ছবি)।  

    কুমুকে সকলে মিলে একটি ছোট টেবিলের সামনে নিয়ে গেল, তার সামনে “OFICE” লেখা একটি কাগজ সাঁটা  রয়েছে। আর একটি ততমজবুতনয়  চেয়ারে সাবধানে বসে একজন ভারিক্কী চেহারার লোক মন দিয়ে সবুজ রঙের বড় রেজিস্টারে, খস খস খস খস করে কি সব লিখে যাচ্ছেন, যেমনটি ইশকুলের আপিসে বসা কাকুরা করে থাকেন।

    কুমুকে দেখে তিনি একদিকে সুতো দিয়ে  বাঁধা চশমা খুলে রেখে অবাক হয়ে চেয়ে রইলেন। দেখাদেখি বাকি সকলেও গোল্লা গোল্লা চোখে ছোট্ট কুমুর নীল জামায় কুট্টি কুট্টি গোলাপ, কানে রূপোর ফুল, ঝামর ঝামর চুলে দুটি অর্ধেক খোলা বিনুনী, বড় বড়  সরল চোখ - এইসব দেখতে লাগল। 

    এত মনোযোগে অস্বস্তি বোধ করে কুমু জানাল, ”আমি কুমু,কুমু দাশগুপ্ত।”
    “কোথায় থাকো, মা? ইশকুলে পড়ো?”
    “আমি মা না, আমি ছোট ত। কৃষ্ণনগরে থাকি, কৃষ্ণনগর রাষ্ট্রীয় বালিকা বিদ্যালয়ে পড়ি, ফোর এ সেকশন, রোল নং ছয়।”
    “তা এই কোন্নগরে এলে কি করে?”
    “এখানে দাদু, মেজকাকু, ছোটকাকু, মোহন, জিমি, ভুটকি এরা সব থাকে কিনা, ইয়ে থাকেন। তাই আমাদের খালি খালি আসতে হয়।”
    “বড়বাবু, এ আগটা বাঁশবনের ধারে এগলাটি দাঁড়িয়ে ছিল ত, আমাদের রিশকার সঙ্গে সঙ্গে এসতে নাগল। তারপর পল্টু দাদার গোঁপ খুলে খুলে যাচ্চিল দেখে রিশকাতে চেপে বসল আর গোঁপ এঁটে এঁটে দিতে লাগল, অনেকবার দিয়েচে। অকে পয়সা দিও।” পেরেক বলল।

    সংসার অভিজ্ঞ বড়বাবু ততক্ষণে ব্যাপারটা বুঝে গেছেন, তিনি বললেন, “আচ্ছা, আগে ভাত খাও মা, তারপর দেখচি।”

    একটু একটু খিদে পাচ্চে বটে, কুমু পেরেক হাতুড়ির (পেরেকের পাশের ছেলেটির নাম) পাশে গিয়ে বসল। সবাই ততক্ষণে লাইন করে বসেছে, আর ছোটমাসির মত দেখতে কিন্তু আরেকটু মোটা একজন মাসি সকলের সামনে ঝকঝকে কলাপাতা দিয়ে যাচ্ছেন। ইনিও বেশ হাসিখুশি, এদের এই ব্যাপারটা কুমুর বড্ডই পছন্দ হল। “আসন কই”, কুমুর প্রশ্নের জবাবে তিনি ভারি মিষ্টি হেসে হেসে বললেন, “আমরা ত ঘাসে বসেই খাই মামণি, দেখো না কেমন সবুজ গালচের মত ঘাস, এমন আসন আর পাব কোথা?”

    গরম গরম লাল চালের ভাত, তার পাশে এতখা্নি করে মিষ্টি কুমড়োর তরকারি। সবাই হাপুস হুপুস করে খেতে শুরু করল। কুমু চুপ করে বসে আছে দেখে বড়বাবু নিজে উঠে এলেন, “কী হল গো মা, কুমড়ো খাও না বুঝি?”
    কুমুকে একটু বিভ্রান্ত দেখায়, “আগে ঘি নুন দিয়ে চার গাল খাব না?”
    কুমুদের বাড়ির নিয়ম হল প্রথমে ঘি নুন দিয়ে ভাত মেখে আলু বা অন্য কোন ভাজা দিয়ে বা শুধুই একটু ভাত খেতে হবে। ভুলে প্রথমেই তরকারি বা ডাল দিয়ে ভাত মেখে ফেলে কুমু এত কানমলা খেয়েছে, যে তার মত ট্যালারও এই নিয়ম ভোলা সম্ভব ছিল না।
    বড়বাবু অবশ্য লজ্জা পান, “আমরা গরীব মানুষ গো মা, এতজনের জন্য ঘি পাব কই। তুমি না হয় আজ কুমড়োর তরকারি দিয়েই খাও।”
    গরম গরম টক মিষ্টি কুমড়োর তরকারি, ছোলা আর কাঁচা লঙ্কা দেওয়া, কাঁচা সরষের তেল ছড়ানো। রান্নায় ঝাল নেই প্রায়,‌ অনেকে লংকা মেখে নিচ্ছে। কুমু একথালা ভাত এই অমৃত দিয়েই খেয়ে ফেল্ল। তারপর পাতে পড়তে লাগল চারাপোনার ঝোল, অন্যরা আগ্রহ করে ঝোল নিল, কুমু অনেক ইতস্তত করে, সাহসে ভর করে আস্তে আস্তে বলেই দিল,
    “মাছ খাব না, ভালবাসি না একটুও।”
    “ঠিক আছে, ভাল না লাগলে খেও না সোনা।” 

    কিমাশ্চর্যম, এমন সব মানু্ষও পৃথিবীতে আছে! 

    কিন্তু আশ্চর্য হওয়ার আরও বাকি ছিল, মাছের ঝোল দিয়ে ভাত খেতে খেতে হাতুড়ি হঠাৎ উঠে দাঁড়িয়ে পরম আনন্দিত গলায় ঘোষণা দিল, 
    “পাইখানা পেয়েছে।” 

    কুমু আশ্চর্য হয়ে দেখল,কারো কোন হেলদোল নাই, পেরেক একটু মুচকি হাসল কেবল। হাতুড়ি লাফিয়ে উঠে অনতিদূরে ঝুলন্ত একটি গামছা টেনে নিয়ে কোন একদিকে চলে গেল, আর মিনিট দশেকপর হাসিমুখে ফিরে এসে খাওয়া কন্টিনিউ করে যেতে লাগল। 

    বলা বাহুল্য, কুমুর বিস্ময়ের শেষ রইল না। পেটরোগা হওয়ার কারণে অনুরূপ অবস্থায় তাকে অনেক বারই পড়তে হয়েছে। প্রথম কয়েক মিনিট ব্যাপারটি ভুলে যাবার ব্যর্থ চেষ্টার পর কাঁচুমাচু মুখে আসন ছেড়ে উঠে দাঁড়ানো মাত্র সকলে ঘটনা বুঝে যেত এবং সারাদিন আদাড়ে পাদাড়ে ঘোরা ও যা তা খাবার অভ্যাসের কারণেই যে এত পেটের গোলমাল, এই বিষয়ে মোহন সহ উপস্থিত প্রত্যেকে পালা করে দুতিন মিনিটের ভাষণ দিত, দাদুর জন্য অবশ্য পাঁচ মিনিট সময় ধার্য ছিল। এর পর মা বা বাসনমাসী এক হাতে কুমুর নড়া ধরে টেনে নিয়ে যেত, ভয়ঙ্কর টিকটিকি অধ্যুষিত পায়খানা থেকে ভয়ে আধখানা হয়ে অপরাধী মুখে ফিরে আসার পর চান করে, কাচা জামাকাপড় পরে বারান্দা বা সিঁড়িতে বসে বসে কুমু শালিকচড়াই দেখত। একটু পরে মা এক গ্লাস অখাদ্য দুধ আর বিস্বাদ মিষ্টি ধরিয়ে দিয়ে যেতেন, কিন্তু ফিরে গিয়ে খেতে বসার কোন সীন ছিল না।

    লাস্ট আইটেম ছিল, কাঁচা তেঁতুলের টক, যে জিনিস দিয়ে মোহন কুমুকে দেখিয়ে দেখিয়ে ভাত খেত। সেই নিষিদ্ধ স্বর্গীয় জিনিস চাটতে চাটতে কুমু একটি অতি প্রয়োজনীয় ডিসিশন নিয়ে ফেল্ল। 
    “জেঠু, আমি তোমার সার্কাসে থাকব, বাড়ি যাব না।”
    “সে কি কথা, মা জননী, বাড়ির লোকজন কত খুঁজবে, কত কাঁদবে।”
    “কেউ খুঁজবে না, ভাই কে নিয়ে থাকবে ওরা। আমি এখানেই থাকি? তোমার কত কাজ করে দেব।”
    “কি কাজ করে দেবে গো ছোট্ট মা?”
    “আমি, আমি ইংলিশ, বাংলা সব জানি তো। তোমাদের সব চিঠি লিখে দেব। তারপর গিয়ে তোমার টাকাপয়সার হিসেব কষে দেব, আমি কাকাদের বাজারের হিসেব করতে দেকেচি ত, আর পনেরোর ঘর পর্যন্ত নামতা জানি। সব জানোয়ারদের নাম দেব, লিখে রাখব খাতায়। আর একটু বড় হই, অই ঘোড়া চড়ার খেলাও শিখে নেব। তোমার খাতায় আমার নাম লিখে নাও না, জে্ঠু। তোমার সব পাকাচুল তুলে দেব, অ জ্যেঠু গো।”
    “আচ্ছা, আচ্ছা, অত করে আর বলতে হবে না মাগো, এই দেখো খাতার নতুন পাতায় লিখছি তোমার নাম।”


    নাম - কুমু দাশগুপ্ত
    ঠিকানা - কেয়ার অফ মহেন্দ্রচন্দ্র দাশগুপ্ত, নবগ্রাম কলোনী, সি ব্লক, পোঃআঃ বড় বহেড়া
    বয়েস - আট বৎসর দশ মাস
    চাকুরী - হিসাব রাখা, চিঠি লেখা, জানোয়ারদের নাম লিখিয়া রাখা ইত্যাদি। বড় হইলে খেলা শেখন।
    পাকা চাকুরী। যাবজ্জীবন করিবার চুক্তি হইল।
    নিয়োগের তারিখ -


    লেখাটি দেখেটেখে কুমু অতিশয় সন্তুষ্ট  হল।

    “মাগো, চোখ ত ছোট্ট হয়ে এসেছে, এইবার অই রিনিমিনির পাশে গিয়ে একটু শুয়ে পড়ো।”
    অবিকল লীলা মজুমদারের সোনাটিয়ার গলায় কুমু বলে, “কাজ করব না? তুমি আমার ওপরওলা না?” 
    “আহা, কাজ তো আর পাইলে যাচচে না, একটু ঘুমিয়ে নিলে আর কি এমন ক্ষেতি হয়ে যাবে!” 

    কুমুর ঘুম ভাঙে পাড়ার হিন্দিঠাকুমার কাঁধে ঝুলন্ত অবস্থায়, নিজের বাড়ির গেটের কাছে। যতখানি লম্বা, ততখানি চওড়া, দুধে আলতা রঙ এই ঠাকুমা প্রবল প্রতাপ, ব্যক্তিত্ব, গায়ের জোর, রান্নার হাত ইত্যাদির জন্য বিখ্যাত ছিলেন। সেই যুগে তিনি রোজ বিকেলে গ্রামের রাস্তায়  হাঁটতে বেরোতেন। কৌতুহল বশে সার্কাসের  তাঁবু দেখতে এলে বড়বাবু তাঁকে ডেকে এনে পড়ন্ত রোদে, যমজ রিনিমিনির মাঝখানে, পামেলা সার্কাসের একটি বড় ছবি গায়ে দিয়ে গভীর ঘুমন্ত  কুমুকে দেখান। তিনি গ্রামের কোন বয়ষ্ক মানুষকে ডাকতেই যাচ্ছিলেন। 

    সকলের আগে দাশগুপ্তবাড়ির মাইয়াকে কাঁধে ফেলে ঠাকুমা, তারপর সার্কাসের বড়বাবু (মাঝে মাঝেই তিনি চোখ মুছছেন), করুণ মুখে পেরেক, বল্টু, হাতুড়ি, রিনিমিনি ইত্যাদিরা, তারপর এপাড়া ওপাড়ার খেলুড়ের দল, ‌“রাস্তা খালি করো” বলতে বলতে হারুপাগল, সবশেষে তিনটি নেড়িকুকুর - এই শোভাযাত্রা কুমুদের বাড়িতে এসে থামে, বড়বাবু নাক টানতে টানতে শেষবার কুমুর এলোমেলো চুলে হাত বুলিয়ে দেন ও তিন মিনিটের মধ্যে কুমু ফিরে আসে নিজের জালিম দুনিয়াতে। 

    - কতদিন বলেছি, বাড়ির চটি পরে বাইরে যাবে না।
    - এতবার বলতে হচ্ছে কেন, তেরোর প্রশ্নমালা আজ বিকেলের মধ্যে শেষ করবে।
    - “যেদিকে তাকাই সোনার আলোয় দেখি যে ছুটির ছবি”, ঐ ভাব সম্প্রসারণ লিখেচ আশা করি, দেখাও।
    - বিকেলের চুল বাঁধাটা কখন হবে, জানতে পারি? 

    স্বপ্নের মত আজও কুমুর মনে পড়ে, পৃ্থিবীর কোন এক কোণে, সবুজ মোটা খাতায় তার নাম লেখা আছে, যাবজ্জীবন চাকুরির আশ্বাস সহ।

    গল্পটা আসলে সেই না হওয়া অলীক চাকুরির গল্প।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • বাকিসব | ০১ জানুয়ারি ২০২০ | ৬৭৩৭ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • পাতা :
  • উজ্জ্বল | ৩০ আগস্ট ২০২০ ০০:০৬96775
  • আমার বয়স ষাট। লীলা মজুমদারের হাত ধরে মাঝে মাঝেই ফিরে যাই শৈশবে। খুঁজে খুঁজে পড়ি, মন ভালো হয়ে যায়, আবার বাঁচতে ইচ্ছে হয়। আপনি সেই ফেলে আসা ছোটবেলা থেকে হাত ধরে ঘুরিয়ে আনলেন, বড় ভালো লাগল। অশেষ ধন্যবাদ ও ভালোবাসা, আরো লিখুন।

  • Tim | 174.102.***.*** | ৩০ আগস্ট ২০২০ ০১:২৬96776
  • এই গল্পগুলো কি অসাধারণ সুন্দর লেখে কুমুদি! মন খারাপ হলেই পড়তে হবে এ লেখা।
  • Santanu Chatterjee | ১৪ মার্চ ২০২১ ১৬:২৪103643
  • আবার পড়লাম

  • Prativa Sarker | ২৪ মার্চ ২০২১ ১২:৪৯103998
  • আর কোথায় পাব এই অমল হাস্যরসের অনিন্দ্যসুন্দর লেখাগুলি !!! 

  • Seema Sinha | ২৫ মার্চ ২০২১ ১২:৪০104048
  • খুব ভাল 

  • manimoy sengupta | ২৬ মার্চ ২০২১ ১২:৪৭104105
  • একইসঙ্গে চোখে জল আসে আর মুখে হাসি আসে। বড্ড মনকেমনকরা ভালো।  

  • Ahmed Atif Abrar | ০৭ জুলাই ২০২১ ০০:৪৩495649
  • চমৎকার‌। কিনতে হচ্ছে কুমুদির রোমহর্ষক গল্পসমূহ।

  • b | 14.139.***.*** | ০৭ জুলাই ২০২১ ১৩:২৭495653
  • " পাতকুয়োর দেয়াল ধরে ঝুঁকে অনেক অনেক নীচের জলে নিজের মুখ দেখা, ছোট্ট পাথর ছুড়ে  মুখের ছায়া ভেঙে দেওয়া, একটু পরে জলবৃত্ত শান্ত হয়ে গেলে আবার টলটলে অনন্ত কুয়োর  জলে মুখ দেখা।"


    অনায়াস কবিতার লাইন। 

  • Nirmalya Nag | ০৭ জুলাই ২০২১ ১৪:১৭495654
  • খুব খুব খুব ভাল।  লীলা মজুমদারকে নতুন করে পাওয়া গেল।

  • পাতা :
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। খারাপ-ভাল প্রতিক্রিয়া দিন