আমরা এই তথাকথিত ভদ্রলোকেরা যেমন কেন্দাডি পাহাড়টার মাথায় একটা শিবের মন্দির গড়ে তার নাম সিদ্ধেশ্বর পাহাড় করে দিয়েছি তেমনি জাদুগুড়া কিংবা জাদুগড়াকে জাদুগোড়া করে দিয়েছি। এক সময় এই জাদুগুড়া ছিল বন্য হাতিদের আদি বাসস্থান। হাতিদের বাসস্থান অর্থেই জায়গাটার নাম জাদুগুড়া। এই জাদুগুড়া আসলে ঝাড়খণ্ডের যাকে বলে সোনার খনি। আমরা যখন কলকাতার দিক থেকে ঝাড়খণ্ডে প্রবেশ করছি তখন বহড়াগুড়ার কাছাকাছি এলাকা থেকে প্রথমে বাঁহাতি তারপর ডানহাতি দুটি পাহাড়শ্রেণী দেখতে পাই। আসলে এই গোটাটাই দলমা পাহাড়শ্রেণী বা দলমা রেঞ্জের অন্তর্ভুক্ত। ঝাড়খন্ড প্রবেশের মুখটায় এই দলমা যেন অনেকটা হাঁ করে আমাদের প্রবেশের জায়গা করে দিচ্ছে। ধলভূমগড় থেকে আমরা সেই হাঁ-এর ভেতর ঢুকে যাচ্ছি। ঘাটশিলা থেকে গালুডি হয়ে জামসেদপুর আমরা সেই হাঁ-এর ভেতরেই থাকছি। ডানদিকের ঠোঁটটা উঁচু হয়ে উঁচু উঁচু পাহাড়গুলোকে ধরে রেখেছে আর বাঁদিকের পাহাড়গুলো নিচের ঠোঁটের মতই একটু ঝুলে পড়া। আমাদের এতক্ষন বর্ণিত এলাকাগুলি যার মধ্যে এই জাদুগুড়াও রয়েছে তা ওই নিচের অংশে। এই অংশটি নিচু কিন্তু সর্বাধিক খনি সমৃদ্ধ আর জাদুগুড়াকে ঘিরেই রয়েছে সেই সব একের পর এক খনি। ঝাড়খণ্ডের সমৃদ্ধশালী খনিজ ভান্ডার। এই খনিজ সম্পদকে ঘিরেই এখানে মানুষজনের বাড়বাড়ন্ত হতে লাগল। বন্য হাতিরা তখন সরে গেল উত্তরের উঁচু পাহাড়ে, দলমার উতুঙ্গু শিখরে আরও গভীরতর জঙ্গলে।
এটাও যেমন একটা ট্রাজেডি তেমন আরও একটা ট্র্যাজেডি আছে। গুনগুন আমাদের যে কথাটা বলেছিল সেই হাই রেডিয়েশনের কথাটা অনেকাংশেই সত্যি। সরকার একথা যদিও স্বীকার করেনা কিন্তু বহু প্রতিষ্ঠান দাবি করে আসছে ভটিন এবং নারোয়া পাহাড় থেকে উত্তোলিত ইউরেনিয়াম শোধনের পর যে বর্জ্য 'টেইলিং পন্ডে' সংরক্ষিত হয় তার মাশুল দিতে হচ্ছে এলাকার সাধারণ মানুষকে। তাঁদের মধ্যে বিভিন্ন শারীরিক প্রতিক্রিয়া দেখা দিচ্ছে এমনটা দাবি করা হয়। সরকার অস্বীকার করলেও ইউরেনিয়াম বিচ্ছুরনের প্রভাবকে অস্বীকার করব কী করে? সব মিলিয়ে এটাই জাদুগুড়ার ট্রাজেডি।
যাইহোক আদার ব্যাপারী জাহাজের ব্যাপারে নাক গলাই কেন? বেড়ানোর কথাই বলি, দুপুর দুটো পনের নাগাদ নারোয়া ছেড়েছিলাম ঘটাশিলার ফুলডুংরি মোড়ে পৌঁছালম প্রায় তিনটা। পেটে ছুঁচোর লম্বা দৌড় শুরু হয়েছে। অতদুপুরে হোটেলে খাবার খুঁজে পেতে একসা হতে হল। এদিক ওদিক খানিকটা তেল পুড়ল গাড়ির। অবশেষে হোটেল মিলল। যে যার মত রুটি, ভাত ইত্যাদি খেয়ে নিলাম। গাড়িতে আমরা প্রায় ১৫ লিটার জল নিয়েছিলাম। সেটা এখন শেষের মুখে। এবার গন্তব্য বুরুডি। এখানে বলে রাখা ভালো, যদি কেউ চান তবে জাতীয় সড়কের গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকা ফুলডুংরি টিলায় চড়তে পারেন। এখান থেকে শুয়ে থাকা সুবর্ণরেখা নদী সহ পুরো ঘাটশিলা শহরটা দেখা যায়, মায় গালুডি ড্যাম অবধি। আমরা আর উঠলাম না, নারোয়া থেকে ফেরার পথে যে বৃষ্টিটা একটু ধরে এসেছিল তা এখনও ধরাই আছে বটে কিন্তু ঈশানে ঘনিয়ে আসছে আরও একটা মেঘ। মনে হচ্ছে এখুনি ঘাড়ে এসে পড়বে। সুতরাং আর দেরি না করে রওনা দিলাম বুরুডির পথে। পাহাড়ে চড়ার একটা প্ল্যান আমার ছকাই আছে সেটা কারুরই কাছে ভাঙলামনা। ফুলডুংরি থেকে জাতীয় সড়কের রিলিফ রোড ধরে একটু এগিয়ে কাশিদা থেকে গাড়ি বাঁয়ে মুড়ল। ঝিলমিল গুগল ট্র্যাকিংয়ে চোখ রেখে জানালো যে হোটেলটায় আমরা খেলাম সেই 'ধাবা রেন বাসেরা'র গা দিয়েই বুরুডি যাওয়ার একটা রাস্তা ছিল কিন্তু আমরা কাশিদার মোড় থেকেই বাঁয়ে মোড় নিলাম। মহালিডি আর চেংগজোড়া পেরিয়ে পূর্ণাপানির কাছে সেই রাস্তাটা আমাদের রাস্তায় মিশে গেল। ধনওয়ানী পেরিয়ে বুরুডি পৌঁছানো অবধি মাথার ওপর মস্ত মেঘটা আমাদের সঙ্গে সঙ্গেই চলল, ভারী না হলেও সে কিন্তু মাঝে মধ্যেই জল ঝরাচ্ছিল। কিন্তু আশ্চর্য ঠিক ভিতরগড় বা বুরুডি ঢোকার মুখে মেঘটা ফেটে সরে গেল! এই রাস্তাটা মাত্র বাইশ তেইশ মিনিটের হওয়া উচিৎ ছিল কিন্তু বৃষ্টি আর সেই গাড়িটা আমাদের ডোবালো সাড়ে সাত কিলোমিটারের রাস্তা খেয়ে নিল প্রায় ৪০ মিনিট। বুরুডি লেকের কাছে এসেও জোর ধাক্কা খেলাম! সার সার দিয়ে সুদৃশ্য টেন্ট টাঙিয়ে, চেয়ার টেবিল বিছিয়ে লেকের পাড়েই লাঞ্চ, টিফিন আর ডিনারের মস্ত আয়োজন। অন্ততঃ গোটা দশেক টেন্ট। কমল হোটেল, গণেশ হোটেল, কুর্মি এন্ড কুর্বি চিকেন, নায়েক হোটেল, মুরাহির ক্যাফেটেরিয়া, গণপতি রেস্টুরেন্ট। দেখে শুনে রুষতি হায় হায় করে উঠলেন, "ইস্, এখানেই তো খেতে পারতাম আমরা! কী সুন্দর গুলি মুরগীর ঝোল দিয়ে ভাত খাওয়া যেত!" খড়গপুর ছাড়িয়ে গুপ্তমনির যে ধাবায় আমরা খেয়েছিলাম সেই ধাবার খাটিয়ার নীচে বেশ কয়েকটা দেশি মোরগ দেখেছিলাম। বললে ওরা রান্না করে দেয়, ২২০টাকা প্লেট, ৬ পিস! সেই থেকে গুলি মুরগি যেন পেয়ে বসেছে ওঁকে। কিন্তু এখন আমাদের কিছু করার নেই। 'ধাবা রেন বাসেরা'র তন্দুরি রোটি, চিকেন, মিক্সড ভেজ আর চায়ে আমাদের পেট ঠাসা। তাছাড়া বছর ২০ আগে আমি যখন বুরুডি এসেছিলাম তখন এখানে মাথা খুঁড়েও খাবার জায়গা পাইনি। এখানে যে এত খাবার জায়গা গজিয়েছে জানব কী করে?
যদিও গুলি মুরগীর ঝোল খাওয়ার ইচ্ছাটা শুধু যে রুষতিরই এমনটা নয়। পূর্ণাপানি পেরিয়ে যে সঙ্কীর্ণ রাস্তায় আমাদের গাড়িটা পাক খেল তার পাশের ক্ষেতে চরে বেড়াচ্ছিল বেশ কয়েকটা মোরগ। রিয়ান বলছিল, 'দাদা, একটাকে ধরে ফেলুন তো!' গ্রাম বলেই নয়, এখানে মোরগ যেন সর্বত্রই। 'ধাবা রেন বাসেরা'র আগে আমরা প্রথম যে হোটেলটায় খেতে নেমেছিলাম জাতীয় সড়কের গা ঘেঁষে সেই হোটেলটাও যথেষ্ট অভিজাত বলেই মনে হয়েছিল। হোটেলটার নাম সম্ভবতঃ 'ধোসা ধাবা', খাবার পাইনি বটে কিন্তু তার চত্বরে ঘুরে বেড়াচ্ছিল বেশ কয়েকটা মোরগ। এখানকার মোরগ গুলো একটু অদ্ভুত, লেজ গুলো নিচের দিকে নামানো। রুষতি বললেন, বন মোরগের জাত। না, বন মোরগ এখানে মেলেনা। আমি জানি তার রহস্য, দু'দশক আগে সে মোরগ আমাকে খাইয়েছিলেন গোপীনাথ মাহাত। দলমার ওপারে কাঁকড়াঝোরের গোপীনাথ মাহাত আজ বেঁচে থাকলে নিশ্চিত তাঁর মাহাত হোটেলে রুষতি, রিয়ানদের বনমোরগ খাওয়াতে পারতাম। কিন্ত সে কথা এখন থাক।
বুরুডি ছুঁলাম পাক্কা বিকাল পাঁচটায়। ওপরে মেঘের চাদর থাকলেও দিনের আলো পাওয়া গেল যথেষ্ট। গাড়ি থেকে তরতরিয়ে নিচের দিকে নামলাম। হঠাৎ দেখলাম শতদল নেই। এই ক'দিন বৃষ্টি হলেও আদতে চলতি মরসুমে সবমিলিয়ে বৃষ্টির পরিমান যথেষ্ট কম। হ্রদের ভেতর জলের পরিমান ১০ ভাগের এক ভাগ। যাঁরা জানেন তাঁরা জানেন যে এটি একটি কৃত্তিম হ্রদ। সামনের দিকটা বুরুডি, পেছনে বাঘমুড়ি। সেই বাঘমুড়ি পাহাড়ের তলদেশে হ্রদটা। বাঘমুড়ি পাহাড়টা যেন দুহাত আঁকড় করে হ্রদটাকে ধরে রেখেছে। একসময় জমা হওয়া জলরাশি বাঘমুড়ির সেই আঁকড় করা দুটি হাতের ডান হাতটির তলা দিয়ে গলে গিয়ে বুরুডিকে পাক খেয়ে নিচে নামত। কিন্তু সেই সঙ্কীর্ণ জায়গাটি বর্তমানে বেঁধে ফেলা হয়েছে কংক্রিটের মস্ত একটা বাঁধ তৈরি করে। কাজটা করা হয়েছিল ইংরেজ আমলে। প্রায় ৫০ ফুট উঁচুতে হ্রদের জল উঠলে সেই জল গড়িয়ে নামে বুরুডির গা বেয়ে। এছাড়া একটি মাত্র স্লুইস গেট রয়েছে যেখান থেকে প্রয়োজন মত চাষের জন্য জল ছাড়া যায়। শতদলকে শেষ অবধি পাওয়া গেল। বুরুডির ডানদিক ঘেঁষে কেঁদডাঙ্গার গা ঘেঁষে হ্রদে নেমে আসছিল সে। হাতে স্নাইফারের মতই ক্যামেরা, ক্লিক ক্লিক শব্দ উঠছিল। তার ক্যামেরায় ধরা পড়ল এক শীর্ণ কীর্ণ কায়া। ট্যুরিষ্টদের ছায়া এড়িয়ে অতি সন্তর্পণে বঁড়শি এড়ে বসে রয়েছে সে। ছিপের চেয়েও যেন রোগা
সেই বৃদ্ধের চেহারা। সারা বিশ্ব নিয়ে যেন কোনও মাথা ব্যাথাই নেই তার। তাবৎ আগ্রহ তার ফাৎনার দিকে। সেদিকেই এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সে। আমার মনে পড়ে গেল বানোয়ারি লাল পাটোয়ারীর কথা। লবটুলিয়া বইহারের ইজারাদারের কর্মচারী সত্যচরনকে কী এরই কাছ থেকে মাছ জোগাড় করে দিত পাটোয়ারী?
রিয়ান দু'মাস আগেই আরন্যক পড়েছে। তার স্মৃতিতে ঝকঝক করছে লবটুলিয়া বইহার। জাদুগুড়া থেকে বুরুডি সে যেন লাবটুলিয়াকে খুঁজে বেড়াচ্ছিল। আমার ঠিক পেছনেই বসেছিল সে। রাস্তার দুধারে লাগানো নতুন আম জাম কাঁঠালের চারায় সে পাচ্ছিল যুগলপ্রসাদের ছবি। চেংজোড়ার ক্ষেতের পাশে বৃষ্টির মধ্যেও এক বৃদ্ধ গরু চড়াচ্ছিলেন। রিয়ান বলে উঠল, ওই দেখুন দাদা দবরু পান্না! আমি হেসে উঠলাম। ধনওয়ানীতে আমাদের রাস্তা পেরিয়ে গেল দুটি মস্ত মোষ, রিয়ান যেন আপন মনে বলে উঠলো, টাঁড় বাড়ো !' আরন্যক স্রষ্ঠা যাদের বলেছেন, বুনো মহিষের দেবতা। সবমিলয়ে আমার, সাগরিকার সবারই মনে বোধহয় সংক্রমিত হয়ে গেছে লবটুলিয়া। শতদলের তোলা ছবির সেই রোগা লিকলিকে বৃদ্ধও যেন লবটুলিয়া বইহারের কোনও হত দরিদ্র প্রজা। এ এলাকায় প্রায় সব কিছুর এলাকার পাশেই একটা করে ডি থাকে। যার অর্থ ডিহি বা উঁচু জায়গা। সেই অর্থে বুরুডি হল দেবতাদের ডিহি বা বাসস্থান। সাঁওতালি ভাষায় বুরু অর্থ দেবতা। ওঁদের সবচেয়ে বড় দেবতা মারাংবুরু। শুনে রিয়ান বলল, ঠিক বলেছেন দাদা, বুরুডি হল সেই হ্রদ যেখানে দেবতারা চান করতে আসে। আমি বুঝলাম রিয়ান সরস্বতী কুণ্ডীর কথা বলছে। যেখানে মায়াবিনী বনদেবীরা গভীর রাত্রে জ্যোৎস্নারাতে হ্রদের জলে জলকেলি করতে নামে। মোহনপুরা রিজার্ভ ফরেস্টের আমিন রঘুবর প্রসাদ সত্যচরনকে সরস্বতী কুণ্ডীর ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলেছিল, 'ওটা আসলে মায়ার কুণ্ডী, ওখানে রাত্রে হুরী-পরীরা নামে; জ্যোৎস্নারাত্রে তারা কাপড় খুলে রাখে ডাঙায় ঐ সব পাথরের উপর, রেখে জলে নামে। সে-সময় যে তাদের দেখতে পায়, তাকে ভুলিয়ে জলে নামিয়ে ডুবিয়ে মারে।' আমার সব কিছু যেন গুলিয়ে যাচ্ছিল। রুষতি এরই মধ্যে বুরুডি ড্যামের স্লুইসগেটের সামনের উঁচু পৈঠাটায় উঠে দাঁড়িয়েছেন। পৈঠাটা বিপজ্জনক ভাবে ড্যামের নিচে ঝুলে রয়েছে। ওর যেন খেয়াল নেই ওদিকে। বুরুডির সৌন্দর্য ভুলিয়ে দিয়েছে বিপদের কথা। হলুদ ডোরাকাটা বাঘের সৌন্দর্য্যে বিমোহিত মযুরী যেমন তারই দিকে এগিয়ে আসা খাদক বাঘের থেকে আসা বিপদ ভুলে যায়। রুষতি হ্রদের ছবি তুলছেন। ঠিক তখুনি বাঁদিকের পাহাড়টার মাথায় মেঘ ছিঁড়ে সূর্য উঁকি দিল। হঠাৎ আমার নজরে পড়ল বাঘমুড়ি পাহাড়টার ছায়া পড়েছে হ্রদের জলে। পাহাড় ও জলের ছায়া মিলে তৈরি হয়েছে একটা পুরুষ্টু ঠোঁট! ঝিলমিল আর রাগিনী হেঁটে যাচ্ছিল ডানদিক ঘেঁষে। রাগিনীকে দেখে মনে হল দোবরু পান্না বীরবর্দীর সূর্যবংশীয় কন্যা হেঁটে যাচ্ছে। গ্রীবা উঁচু করে উঁচু করে বুরুডির ভিতর গড়ে পেরিয়ে যাচ্ছে রাজকন্যা ভানুমতি। বিভূতিভূষণ এই অঞ্চলকে নিয়েই আরন্যক লিখেছিলেন কিনা জানার প্রয়োজন মনে করিনা। আমি যেখানে দোবরু পান্না, ভানুমতি, যুগলপ্রসাদ আর টাঁড়বাড়োকে খুঁজে পাই সেই আমার আরন্যক, সেই আমার লাবটুলিয়া বইহার। তাছাড়া লাবটুলিয়া থেকে দোবরু পান্নার রাজত্বে যাওয়ার পথে বিভূতিভূষন এক জায়গায় বলছেন, "দুইটি বন্য গ্রাম ছাড়াইয়া আসিয়াছি-একটার নাম কুলপাল, একটার নাম বুরুডি!"
বুরুডি ছাড়তে সন্ধ্যা ছ'টা বাজল। আবার আকাশে মেঘ ভেঙে পড়ার উপক্রম। বন্ধু আশিস মিশ্র বলেছিলেন, বুরুডির কোল বেয়ে পেছন দিকের একটা গ্রামে গিয়েছিলেন বন্ধুদের সাথে। পথটা আমার চেনা। ওই রাস্তায় সাত কিলোমিটার গেলেই ধারা জলপ্রপাত। অসাধারন সেই দৃশ্য, বিশেষ করে বর্ষাকালে। কিন্তু এই দুর্যোগ আর এই সময়ে সেই পথে যাওয়া চলেনা। অন্তত দু কিলোমিটার পথ ট্রেকিং করতে হবে কিন্তু বাকী পাঁচ কিলোমিটার পথও এই গাড়ি নিয়ে যাওয়া যাবেনা। এ যাত্রায় আমার আফসোস বর্ষায় ধারা প্রপাত দেখা হবেনা। সাগরিকা বিপাশাদের গুলি মুরগির ঝোল খাওয়া ছাড়াও অবশ্য আরও কিছু আফসোস যে থেকে যাচ্ছে তা বুঝতে পারলাম পরের দিন। তার অন্যতম হল পাথরের গহনা কেনা হলনা। ধারাগিরি জলপ্রপাত অধরা রেখেই আমরা হোটেলে ফিরছি, শুরুর দিনের যাত্রা শেষ করে এই প্রথম হোটেলে যাব আমরা। সেই পথেই বরং বলে নেওয়া যাক আমার কুড়ি বছর আগের ধারা জলপ্রপাত ও বুরুডি দর্শনের কাহিনী। যাঁরা বাংলা থেকে সরাসরি বুরুডি আসতে চান তাঁদের জন্য এই রুটটাও যথেষ্ট মনোরমের।
ক্রমশ...