এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  আলোচনা  স্বাস্থ্য  বুলবুলভাজা

  • কোভিড ভ্যাক্সিন, ফাইজার মৃত্যু, তারপরেও কিছু কথা

    বিষাণ বসু
    আলোচনা | স্বাস্থ্য | ১৭ জানুয়ারি ২০২১ | ৭২৮৮ বার পঠিত | রেটিং ৪.৩ (৩ জন)
  • রুণু সাদা না রুণু কালোর মতই এখন নতুন প্রশ্ন ভ্যাক্সিন কালো না ভালো! নরওয়েতে সদ্য মারা গিয়েছেন বেশ কিছু মানুষ, ফাইজারের টিকা দেবার পরে। অতিমারী আর তার পরবর্তী পৃথিবী এখন নানা ভাবে বিভাজিত স্বাস্থ্য প্রশ্নে। কিন্তু টিকা? তার কী হবে? সমস্ত প্রতিষেধক টিকার প্রতিই যদি আস্থা উঠে যায় মানুষের, এ দেশে, তাহলে?

    শুরুতেই বলে রাখা যাক, বর্তমান লেখকের দৃঢ় বিশ্বাস, কোভিড-১৯ নামক একটি অতিমারী পৃথিবী জুড়ে ঘটেছে, ঘটছেও - ভয়াবহতা কিছু হ্রাস পেলেও, অতিমারী পুরোপুরি থেমে যায়নি। এই অতিমারী শুধুই মেডিকেল-ফার্মা ইন্ডাস্ট্রি বা কর্পোরেট লবির ছড়ানো গুজব নয় - এই অতিমারী অতীতের বিভিন্ন অতিমারী, যেমন ধরুন স্প্যানিশ ফ্লু, তাদের মতোই ঘোর বাস্তব। এবং এই অসুখে যাঁরা মারা গিয়েছেন, তাঁরা এমনিই মারা যেতেন, এমন নয় - কোভিড-১৯ না এলে, তাঁরা দিব্যি আরো দু-দশ বছর, কমপক্ষে, চালিয়ে যেতে পারতেন। অতএব, যাঁরা এই অতিমারীকে প্ল্যান্ডেমিক বলছেন, মাফ করবেন, আমি তাঁদের সঙ্গে সহমত নই।

    এরই পাশাপাশি এটুকুও বলে রাখা যাক, অতিমারীর গুরুত্ব স্বীকার করলেও, অগ্রপশ্চাৎ বিবেচনা না করে, ন্যূনতম সামাজিক সুরক্ষার কথা না ভেবে এদেশে যেভাবে "অতিমারী মোকাবিলা" করা হয়েছে, আমি সেই চরমপন্থী পদক্ষেপের অনেকাংশেই সমর্থক নই - অন্তত, যে পদক্ষেপে কোভিড-মৃত্যু ঠেকানোর যুক্তিতে সমাজের এক বড় অংশের অনাহারে মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়েছে, তার সমর্থক তো নইই।

    মূল প্রসঙ্গে আসা যাক। অতিমারীর সাধারণ কিছু ধর্ম থাকে। তার অন্যতম, সময়ের সঙ্গে জীবাণু তার মারণক্ষমতা হারায়। জীবদেহে প্রবেশ না করলে, ভাইরাস সেই অর্থে জীবন্ত হতে পারে না। কেননা, ভাইরাস একটি নিউক্লিক অ্যাসিড (ডিএনএ কিম্বা আরএনএ) মাত্র - বাইরে একখানা কোষ প্রাচীর। জীবন্ত কোষে প্রবেশ করার মুহূর্তে জীর্ণ বস্ত্র পরিত্যাগ করার মতো করেই সে কোষ প্রাচীর বাইরে ছেড়ে রেখে শুধুমাত্র নিউক্লিক অ্যাসিডটুকু কোষে প্রবেশ করে - কোষের নিজস্ব নিউক্লিক অ্যাসিডের সঙ্গে মিলে সংখ্যাবৃদ্ধি ঘটাতে থাকে। সংক্রমণ বলতে এই।

    স্বাভাবিকভাবেই, বিবর্তনের সাধারণ নিয়ম মেনে, ভাইরাল জিনোম-এরও (নিউক্লিক অ্যাসিড) লক্ষ্য, ঠিক কেমনভাবে সবচেয়ে দক্ষতার সঙ্গে জিনোমটিকে টিকিয়ে রাখা যায় - পরবর্তী প্রজন্মে জিনের সংবাহন নিশ্চিত করা যায়। হয়ত নিউক্লিক অ্যাসিডের বিন্যাসে সামান্য অদলবদল আনা গেল, যার ফলে আরো দীর্ঘমেয়াদে টিকে থাকার উপযুক্ত হয়ে ওঠা গেল - যাকে বলে মিউটেশন। অথবা, বদল ঘটল আরো প্রাথমিক কোনো স্তরে। মোদ্দা কথা, যে জীবকোষের বাঁচামরার সঙ্গে ভাইরাসের নিউক্লিক অ্যাসিডের সংখ্যাবৃদ্ধি তথা ভাইরাসের অস্তিত্ব নির্ভরশীল, তাকে পটাপট মেরে ফেললে ভাইরাসের টিকে থাকার স্বার্থ দীর্ঘমেয়াদে রক্ষিত হওয়ার সম্ভাবনা কম। কাজেই, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ভাইরাস নিজের সংক্রমণ-ক্ষমতা বা কর্মদক্ষতা বাড়িয়ে ফেলতে পারে, কিন্তু সাধারণত তার মারণক্ষমতা হ্রাস পায়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অনেক অতিমারী এমন স্বাভাবিক নিয়মেই নিয়ন্ত্রিত হয়ে গিয়েছে - কোভিড-১৯-এর ক্ষেত্রে, সম্ভবত, এমনটিই ঘটছে।

    ইতিহাস বলে, কোনো অতিমারীই টিকা দিয়ে নিয়ন্ত্রিত হয়নি। অতিমারী থেমেছে অনেকাংশে নিজের নিয়মে - এবং, অবশ্যই, অংশত, জনস্বাস্থ্যের বিবিধ কার্যকরী পদক্ষেপের সুবাদে। এর সঙ্গে মৃত্যুহার নিয়ন্ত্রণে কাজে লেগেছে চিকিৎসা এবং শুশ্রূষা। কিন্তু, মাথায় রাখা যাক, ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি সবক্ষেত্রে হয় না। বিশেষত, এর আগের বড়সড় অতিমারীর ঘটনা একশ বছর আগেকার - চিকিৎসা বিজ্ঞান তখন হামাগুড়ির পর্যায় পার হয়ে সদ্য টলমলে পায়ে হাঁটতে শিখেছে। বিজ্ঞানের বাকি সব শাখার তুলনায়, গত সত্তর-আশি বছরে, চিকিৎসা বিজ্ঞানের অগ্রগতি চমকপ্রদ। অতএব, এই দফার অতিমারী নিয়ন্ত্রণে যে নতুন চিকিৎসাপদ্ধতি এবং টিকার গুরুত্ব আরো বেশি করে সামনে আসবে, তা এককথায় অনিবার্য।

    চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতির পাশাপাশি সমধিক গুরুত্বপূর্ণ গত অর্ধশতকে চিকিৎসা ভাবনার বদল। বা আরো নিখুঁত করে বলতে চাইলে, চিকিৎসা-অর্থনীতির বাঁকবদল। চিকিৎসা তো বটেই, তার চাইতেও বেশি করে চিকিৎসা বিজ্ঞানের গবেষণা এখন ব্যক্তি তথা কর্পোরেট পুঁজির নিয়ন্ত্রণাধীন। চিকিৎসার সুফলের পাশাপাশি সমান, অথবা বেশি, গুরুত্বপূর্ণ, চিকিৎসা থেকে লব্ধ মুনাফা। আর ডিজ্যাস্টার ক্যাপিটালিজম-এর সাধারণ ধর্ম মেনেই, অতিমারীর মত বড়সড় ডিজ্যাস্টার বড়সড় লাভের মওকাও বটে।

    অতএব, অতিমারী কালে নতুন নতুন ওষুধ বাজারে এসেছে - চটজলদি ছাড়পত্রও মিলেছে - এবং কোম্পানি কয়েকশো কোটি টাকা লাভ গুণে নেওয়ার পরে জানা গিয়েছে, ওষুধগুলো তেমন কাজের নয়। ব্যাপারটা হয়ত খুবই শকিং, কিন্তু একেবারেই বিস্ময়কর নয়।

    এই দফার সুযোগ বলতে ভ্যাক্সিন। কর্পোরেট পুঁজি শাসিত গবেষণাকে যা-ই গালমন্দ করা হোক না কেন, তার দক্ষতা বা এফিশিয়েন্সি নিয়ে প্রশ্নের অবকাশ নেই। আগেকার দিনে একখানা টিকা বাজারে আসতে সময় লেগে যেত কয়েক দশক - কদিন আগেও সময়টা কমপক্ষে আট-দশ বছর - বায়োটেকনোলজি এবং চিকিৎসা বিজ্ঞানের চমকপ্রদ অগ্রগতির সুবাদে সেই সময় কমে দাঁড়াল কয়েক মাসে। কিন্তু, সমস্যা এই, বীজের প্রকৃতিতে উদ্ভাবন ঘটিয়ে ফলনে চমকপ্রদ উন্নতি সম্ভব হলেও, হাজার উন্নতির পরেও, ধান থেকে চারা গজিয়ে সেই চারা থেকে নতুন ফসল রাতারাতি ওঠানো যায় না - তার জন্যে সময় দিতে হয়, সময় প্রকৃতির নিয়ম মেনেই। ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের ব্যাপারটাও তেমনই।

    গবেষণাগারের টিকা বাস্তব জগতে আমজনতার মধ্যে কতখানি কার্যকর, তার ঝুঁকি বা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াই বা কেমন, এসব জানার কোনো শর্টকাট উপায় আবিষ্কৃত হয়নি - একমাত্র পথ, সময়সাপেক্ষ ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল। কোভিডের বিরুদ্ধে প্রায় যুদ্ধকালীন তৎপরতায় একাধিক কোম্পানি একাধিক পথে একাধিক টিকা আবিষ্কার করে ফেললেও, সময়সাপেক্ষ বিশদ ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের পথে যাওয়ার ধৈর্য্য দেখানো হল না।

    মেনে নেওয়া যাক, প্রেম ও যুদ্ধে কোনো কিছুই অনুচিত নয়৷ এই বিশ্বব্যাপী অতিমারী পৃথিবীতে যে অর্থনৈতিক সঙ্কট ডেকে এনেছে, সেই অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে, এই অতিমারীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে এটুকু তাড়াহুড়ো অনুচিত নয়। কিন্তু, বিপরীতে একথাও সত্য, আর্থিক মন্দা বলতে যেটা, তার মূল শিকার আমজনতা। এদেশের কথাই ধরুন, এই অতিমারীকালে আমরা পেয়েছি নতুন নতুন বিলিয়নিয়ার - উপরের দিকের লোকজন কতটুকুই বা মন্দার শিকার!!! সেদিক থেকে দেখলে, আমার আগের কথাটাকে বদলে নিয়ে কেউ যদি বলেন, ওই প্রেম আর যুদ্ধের কথাটা ঠিকই - কিন্তু, এক্ষেত্রে তাড়াহুড়োর কারণটা প্রেম, কর্পোরেট-প্রেম, কর্পোরেট মুনাফা-প্রেম - অনুচিতকে অগ্রাহ্য করার আসল যুক্তি সেটাই - এমন যুক্তিকে খুব উড়িয়ে দেওয়া যাবে কি??

    কিন্তু, আমরা এখনই সেই আলোচনায় ঢুকব না। একটি বহুজাতিক ওষুধ কোম্পানির কর্ণধার তাড়াহুড়ো করে এমন ভ্যাক্সিন দেওয়াকে জেনোসাইডের তুল্য বলে দাগিয়ে দিয়ে জানিয়েছেন, এই জন্যেই তাঁরা নাকি কোভিড ভ্যাক্সিন নিয়ে এগোতে চাননি। কর্পোরেট কর্তাদের বিবেক, নীতিবোধ ও বৃহত্তর স্বার্থের জন্যে দুশ্চিন্তা নিয়ে পূর্বতন অভিজ্ঞতার সুবাদে ধরেই নেওয়া যাক, এ শুধুই আঙুরফল টকের গল্প - নিজেরা আনতে পারেননি, তাই হিংসের চোটে এসব বলছেন। পাশাপাশি একথা মনে করিয়ে দেওয়া যাক, ট্রায়াল একেবারেই হয়নি এমন নয় - এদেশে যে দুটি ভ্যাক্সিন দেওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে, তার একটির তিন ধাপের ক্লিনিকাল ট্রায়ালের তথ্য প্রথম সারির জার্নালে প্রকাশিত - তাড়াহুড়ো করে হলেও, সে ভ্যাক্সিনের কার্যকারিতা ও নিরাপত্তা পরীক্ষিত। আরেকটি টিকার সব দফার ট্রায়াল সম্পূর্ণ হয়েছে কিনা, সেসব নিয়ে কিছু পদ্ধতিগত এবং যুক্তিসঙ্গত প্রশ্ন থাকলেও, ট্রায়াল থেকে যেটুকু জানা গিয়েছে, তা থেকে সে টিকার প্রয়োগ বিপজ্জনক, এমন সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর কারণ নেই।

    উল্লেখ করে রাখা যাক, এই রাজ্যে যে কোভিশিল্ড ভ্যাক্সিনের প্রয়োগ হচ্ছে, তার মূল অণুটি ব্রিটেন এবং ব্রাজিলে পরীক্ষিত - সে পরীক্ষা নিয়ে সংশয় নেই। এদেশে সেই মূল অণুটির কপি বা প্রতিরূপ অণু তৈরি করে ব্যবহৃত হচ্ছে। সেই কপিটি নতুন ট্রায়ালের মধ্যে দিয়ে না গেলেও, মূলের সঙ্গে ফলাফল ভিন্ন হওয়ার সম্ভাবনা কম। অতিমারী পরিস্থিতিতে জরুরি ভিত্তিতে ছাড়পত্র দেওয়ার এটুকু ত্রুটি মারাত্মক কিছু ঘটনা নয় - বিভিন্ন দেশেই এমন পথে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে ও হচ্ছে।

    আরেকটি কথা বলে নেওয়া যাক, ফাইজারের বায়োটেকনোলজি-জাত ভ্যাক্সিন এদেশে এখনও আসেনি। সে ভ্যাক্সিনে নরওয়েতে তেইশ জন মারা গিয়েছেন। সকলেই ভ্যাক্সিনের কারণেই মারা গিয়েছেন কিনা, তা এখনও স্পষ্ট নয় - তবু, ধরেই নেওয়া যাক, এঁদের মৃত্যুর কারণ ওই টিকা। এই ভ্যাক্সিন সম্পূর্ণ নতুন পদ্ধতির এম-আরএনএ ভ্যাক্সিন - পৃথিবীতে প্রথম। আগামী দিনে এই পথেই হয়ত আসবে অজস্র সংক্রামক ব্যাধি প্রতিরোধী টিকা।

    চিকিৎসা বিজ্ঞানের ইতিহাস ঘেঁটে দেখুন, যেকোনো শুরুতে বিস্তর বিপত্তি থাকে। এই টিকাই বা ব্যতিক্রম হবে কেন! তেইশজন মানুষের প্রাণ খুব খুবই মূল্যবান - কিন্তু, মাথায় রাখা যাক, এই তেইশজনের মধ্যে সবচাইতে কমবয়সী মানুষটির বয়স আশির বেশি, কয়েকজন নব্বই-ঊর্ধ্ব। ভ্যাক্সিনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া খুব মারাত্মক কিছু ছিল না - জ্বর, সর্দি-কাশি, পেটখারাপ - সেগুলিই এঁদের ক্ষেত্রে, হয়ত বয়সের কারণেই, প্রাণঘাতী হয়ে দাঁড়িয়েছিল।

    যাঁরা ভাবছেন, ক্লিনিকাল ট্রায়ালে তাড়াহুড়ো করে ভ্যাক্সিন বাজারে আনার সুবাদেই এঁদের প্রাণ গেল, তাঁদের মনে করাই, ট্রায়ালে এত বেশি বয়সের মানুষদের সচরাচর নেওয়া হয় না। ঠিক এজন্যই পোস্ট-মার্কেটিং তথ্য সংগ্রহের গুরুত্ব এতখানি। হাজার ট্রায়ালের শেষেও বাজারে আসার পরে, যেকোনো নতুন ওষুধ বা টিকার নতুন ও অপ্রত্যাশিত পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার দেখা মিলতেই পারে - এবং (এখনও পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুসারে) এক্ষেত্রে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলো অপ্রত্যাশিত ছিল না, কিন্তু সেই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার অভিঘাতটি ছিল হিসেবের বাইরে।

    কিন্তু, আবারও বলি, এই টিকা এ দেশে দেওয়া হচ্ছে না। এবং অন্তত এই রাজ্যে যে টিকা দেওয়া হচ্ছে, সেই কোভিশিল্ড যে নিরাপদ, সে নিয়ে সংশয়ের কারণ তেমন নেই।

    তবু, অনস্বীকার্য, সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে। একদিকে টিকা বিষয়ে স্পষ্ট ও স্বচ্ছ বার্তার অভাব - আরেকদিকে সেই স্বাধীনতা দিবসের মধ্যেই টিকা দেওয়ার ঘোষণা থেকেই টিকা নিয়ে কিছুটা যেন তাড়াহুড়ো করা হল, সেই গোলমেলে বার্তা - দুইয়ে মিলে সংশয়ের জায়গাটা তৈরি হয়ে গেল। সংশয়ের চেয়েও বড় কথা - সংশয়ের অনুভব। টিকার মতো একটি বড় প্রকল্পের ক্ষেত্রে, যে প্রকল্প কিনা প্রয়োগ করা হবে দেশের নাগরিকদের একটা বড় অংশের ক্ষেত্রে, সেক্ষেত্রে জনমানসে ভ্যাক্সিন বিষয়ে ভাবনা, বা পাব্লিক পার্সেপশন, খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই সংশয়ানুভব নিয়ে প্রকল্প আদৌ সফল হতে পারবে তো?

    টিকাকরণ শুরুই হচ্ছে চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীদের দিয়ে - তাঁদের অনেকের মধ্যেই টিকার নিরাপত্তা নিয়ে বিস্তর সংশয় - চিকিৎসা জগতের বাইরের লোকজন কীভাবে নেবেন এই কর্মসূচি?

    সংশয় কাটানোর ব্যাপারে সরকার আরেকটু সক্রিয় হতেই পারতেন। ধরুন, একেবারে শুরুতেই যদি দেশ ও রাজ্যের শীর্ষ নেতা-মন্ত্রীরা টিকা নিতেন, একটা মস্ত সদর্থক বার্তা যেতে পারত। ভোটদানে অংশগ্রহণ বাড়াতে যেমন করে সেলিব্রিটিরা ভোট দিয়ে হাতে কালির দাগ নিয়ে হাসিমুখে ক্যামেরার সামনে দাঁড়ান, এক্ষেত্রেও তেমন ব্যবস্থা করা যেতেই পারত। মোদ্দা কথা, পাব্লিক পার্সেপশনে টিকার গ্রহণযোগ্যতা বাড়ানোর ব্যাপারে আরো বেশি উদ্যোগী হওয়া জরুরি ছিল।

    এবং, আরো বিপজ্জনক, এই প্রকাশ্য উদ্যোগের অভাব টিকা নিয়ে সংশয়, তথা সংশয়ানুভব, আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। এমনকি, অসুখের বিরুদ্ধে টিকা দেওয়ার ব্যাপারে চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীদের যে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে - তাতে তাঁরা সম্মানিত বোধ করার পরিবর্তে অনেকেই নিজেদের গিনিপিগ মনে করছেন - এমনটি কোনও জনস্বাস্থ্য-কর্মসূচির পক্ষে অনুকূল পরিবেশ নয়।

    টিকা নিয়ে দ্বিতীয় কথাটা হল, যে কোনও টিকার কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকবেই। আগেকার এইচওয়ানএনওয়ান ভাইরাসের টিকার ক্ষেত্রে প্রতি দশ লক্ষ মানুষের মধ্যে জটিল পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিলেন পনের-কুড়িজন (বিভিন্ন দেশে হিসেব বিভিন্ন রকম)। এক্ষেত্রে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় হ্রস্বায়িত ক্লিনিকাল ট্রায়াল-লব্ধ তথ্যের ভিত্তিতে বাজারে আসা টিকার ক্ষেত্রে সংখ্যাটা বাড়তেও পারে। বাড়াবাড়ি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার শিকার যদি কেউ হন, তাঁর চিকিৎসা এবং ক্ষতিপূরণের দায় কে নেবেন? আন্তর্জাতিক মঞ্চে বহুজাতিক ওষুধ কোম্পানির লবি খুবই সক্রিয় - বিভিন্ন দেশে রীতিমত আইন রয়েছে, টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ক্ষতিপূরণের দায় কোম্পানির নয় - এক্ষেত্রেও ক্ষতিপূরণ কোম্পানি দেবে না। তাহলে কে দেবে? দেশের সরকার এতদিকে এত খরচা করতে পারেন, অন্তত এক্ষেত্রে বিপদ-আপদ ঘটলে সমস্ত দায়িত্ব সরকার নিচ্ছেন - এটুকু ঘোষণা আস্থা বহুগুণ বাড়িয়ে দিতে পারত। দুর্ভাগ্য, প্রায় বিপরীত বার্তাই সরকারি উপরমহল থেকে এসেছে।

    অতএব, ভ্যাক্সিন নিয়ে সংশয় সব মহলে এবং সব পর্যায়ে। সে সংশয় লাঘবের কোনো সিরিয়াস সরকারি প্রয়াস, এখনও পর্যন্ত, দেখা যায়নি।

    আর এখানেই সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তার জায়গা। কোভিড ভ্যাক্সিন নিয়ে এই সংশয়, বৃহত্তর ক্ষেত্রে ভ্যাক্সিন নিয়েই সংশয় ডেকে আনবে না তো? সৌভাগ্যের বিষয়, পশ্চিমদেশের পথ ধরে এদেশে এখনও অবধি অ্যান্টি-ভ্যাক্সার লবি, যাঁরা কিনা যেকোনো টিকাকরণের বিরুদ্ধে, তাঁরা তেমন কল্কে পান না।

    ভ্যাক্সিনের বিরুদ্ধে এদেশে যেটুকু বিরোধিতা, তা পুরোপুরিই কুসংস্কারজনিত - এবং সে বিরোধিতা খুব বিস্তৃত নয়।

    অ্যান্টি-ভ্যাক্সার আন্দোলনের বিলাসিতা পশ্চিমের উন্নত দেশে মানায় - ওদেশে শিশুদের সংক্রামক ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কম - আক্রান্ত হলে বিনা চিকিৎসায় বা অপুষ্টির চোটে প্রাণ হারানোর ভয় কম। এ দেশে প্রতি বছর কয়েক লক্ষ শিশুর প্রাণ যায় সংক্রামক রোগব্যাধিতে - অতিমারী ও লকডাউনের চোটে সার্বিক টিকাকরণ প্রকল্প এমনিতেই যথেষ্ট ক্ষতিগ্রস্ত, সে ক্ষতির অভিঘাতের সম্পূর্ণ হিসেবনিকেশ এখনও করা সম্ভব হয়নি - এরপর যদি টিকা বিষয়েই সংশয়ের কারণে সর্বপ্রকার ভ্যাক্সিন নেওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ কমে, তাহলে তার বিপদ সুদূরপ্রসারী।

    কোভিড ভ্যাক্সিন নিয়ে সংশয়ের কারণে যদি যাবতীয় ভ্যাক্সিন নিয়েই সংশয়ের বাতাবরণ তৈরি হয়ে যায়, তাহলে প্রতি বছর ভ্যাক্সিন দ্বারা প্রতিরোধযোগ্য অসুখে শিশুমৃত্যুর সংখ্যাটা কোভিডে মৃত্যুর সংখ্যার কয়েকগুণ দাঁড়াতে পারে।

    কোভিড টিকা নিয়ে যে সংশয়, সেই সংশয় দূর করার জন্যে সরকারের অনেক বেশি সক্রিয়তা জরুরি। জরুরি এখনই। জরুরি শুধু কোভিড-টিকার সাফল্যের জন্যেই নয়, বৃহত্তর জনস্বাস্থ্যের স্বার্থে। এককথায়, জরুরি - জনস্বার্থে।

    বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে অনেকেই অভিযোগ করে থাকেন, এই আমলে, যেকোনো কাজেকর্মে প্রকল্পের কার্যকারিতা কিম্বা তার পেছনের সদিচ্ছার চাইতে বহুগুণ গুরুত্ব পায় সে নিয়ে প্রচার - জনমানসে তা নিয়ে হাইপ সৃষ্টি। প্রধানমন্ত্রী যতটা সময় সংসদে থাকেন, তার চাইতে বেশি সময় ব্যয় করেন মন কি বাত প্রকাশে৷ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীও বিধানসভার তুলনায় জনসভার মাধ্যমে সরকার চালানোয় স্বচ্ছন্দ। আক্ষেপ এখানেই, কোভিড টিকার মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়ে জনমানসের সংশয়ানুভব দূর করার ব্যাপারে, তাঁরা সঠিক উদ্যোগটুকু দেখিয়ে উঠতে পারলেন না। নাকি, তেমন উদ্যোগের প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্বটাই ধরতে পারলেন না!


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • আলোচনা | ১৭ জানুয়ারি ২০২১ | ৭২৮৮ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • পাতা :
  • অরিন | ১৭ জানুয়ারি ২০২১ ০৪:৫২101777
  • লেখাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং অতি প্রয়োজনীয় একটি বিষয়ের দিকে আলোকপাত করেছে। তবে মনে হয় লেখকের কয়েকটি বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরী ছিল।


    যেখানে লিখেছেন,"ইতিহাস বলে, কোনো অতিমারীই টিকা দিয়ে নিয়ন্ত্রিত হয়নি। অতিমারী থেমেছে অনেকাংশে নিজের নিয়মে - এবং, অবশ্যই, অংশত, জনস্বাস্থ্যের বিবিধ কার্যকরী পদক্ষেপের সুবাদে। এর সঙ্গে মৃত্যুহার নিয়ন্ত্রণে কাজে লেগেছে চিকিৎসা এবং শুশ্রূষা।"


    এই দাবী, যেটা পড়ে মনে হচ্ছে টিকার ভূমিকা গৌণ, এটি অসত্য | লেখক এই দাবী করতে চাইছেন কিনা স্পষ্ট নয়। প্রথমত টিকা দিয়ে কোন অতিমারী এখনো অবধি নিয়ন্ত্রণ যে করা যায়নি তার কারণ এই নয় যে টিকা দিয়ে অতিমারী নিয়ন্ত্রণ করা "যায় না" বলে, তার কারণ অতিমারীর নিয়ন্ত্রণে অতিমারী চলাকালীন টিকা আবিষ্কার করে জনসমাজে এযাবৎ প্রয়োগ করা হয়নি, তাই | কারণ ১৯১৮ সালে, যখন স্প্যানিশ ফ্লু আমেরিকায় (এবং অন্যত্র) প্রবল আকার ধারণ করেছিল,তখন মার্কিন বৈজ্ঞানিক এবং গবেষকরা একাধিক ভ্যাকসিন বার করেছিলেন বটে কিন্তু ভাইরাস এবং ভাইরাস জনিত মহামারী এবং তাকে প্রতিরোধ করার ধারণা তখন তাঁদের হয়নি, সে ধারণা হবে ১৯৩০ এর দশকে। তবে এটাও বলতে হয় যে সেই মহামারীতে মানুষের মৃত্যু হয়েছিল "সেকেন্ডারি bacterial infection" জনিত কারণে, সরাসরি ভাইরাস সংক্রমণে ততটা নয়। হয়ত ভ্যাকসিন প্রয়োগ করলে secondary bacterial infection জনিত মৃত্যু রোধ করা সম্ভব ছিল, অন্তত কয়েকজন বৈজ্ঞানিকের মতে (https://www.ncbi.nlm.nih.gov/books/NBK80161/)  | 


    এরপর যে প্যানডেমিক, প্রথম সার্স প্যানডেমিক (২০০২) সেখানেও "সময়মত" ভ্যাকসিন  তৈরী করা যায়নি, কিছুটা নিজের নিয়মে থেমেছে। কাজেই কি হত বলা যায়না, তার মানে অবশ্য এই নয় যে টিকা দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা যেত না।  সেদিক থেকে দেখলে এই প্যানডেমিক আমাদের জ্ঞানত একমাত্র এবং প্রথম প্যানডেমিক যেখানে প্যানডেমিক চলাকালীন ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হচ্ছে | যদিও প্যানডেমিক নিয়ন্ত্রণের অন্যান্য ব্যাপারগুলোও থাকছে, তাহলেও এই ভ্যাকসিনের একটি অন্যতম লক্ষ্য, অন্তত জনস্বাস্থ্য বিদদের পরিপ্রেক্ষিত থেকে, যত দ্রুত সম্ভব হার্ড ইমিউনিটি অর্জন করা, সেক্ষেত্রে ইনফেকশনটিকে দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে | 


    আরেকটি, "কিন্তু, আবারও বলি, এই টিকা এ দেশে দেওয়া হচ্ছে না। এবং অন্তত এই রাজ্যে যে টিকা দেওয়া হচ্ছে, সেই কোভিশিল্ড যে নিরাপদ, সে নিয়ে সংশয়ের কারণ তেমন নেই।" এর সঙ্গে  আপনার পাঠকদের আরেকটু জানাতে পারতেন যে দু'ধরণের টিকাই মোটামুটি নিরাপদ | নরওয়েতে ২৩ জন মানুষ মারা গেছেন ঠিক-ই , কিন্তু তাঁদের সকলেরই বয়স ৮০'র ওপরে এবং নরওয়ে সরকার এই নিয়ে বিশদে তদন্ত শুরু করেছেন | এ কথাটিও উল্লেখ্য যে এই যে mRNA vaccine, এ কিন্তু অন্তত থিওরিটিকালি নিরাপদ , এবং প্রয়োজনে অতি দ্রুত পরিবর্তন ও প্রচুর পরিমাণে তৈরী করা সম্ভব , যেটা inactivated vaccine এর একটি প্রতিবন্ধকতা |


    পরিশেষে, ২০২১ এর গোড়ায় আরেকটি অশনিসংকেত: নতুন কিছু ভাইরাসের ভ্যারিয়ান্ট আসছে যেখান থেকে অতি দ্রুত সংক্রমণ ছড়াতে পারে, এবং সবচেয়ে বিপদের শংকা যে এদের মধ্যে কয়েকটি প্রচলিত antibody response এড়িয়ে যেতে সক্ষম। সেক্ষেত্রে ভ্যাকসিন নিলে প্রকৃতপক্ষে কতটা কাজে দেবে কেউ জানি না, তবুও টিকা আপাতত নেওয়াই যুক্তিযুক্ত | 

  • Bishan Basu | ১৭ জানুয়ারি ২০২১ ০৮:৪৩101779
  • আপনার কথা পুরোপুরিই ঠিক। আমার লেখায় ওই জায়গাটা স্পষ্ট হয়নি।


    যেটা বলতে চেয়েছি, টিকা সময়মত পাওয়া গেলে এবং প্রয়োগ করা গেলে সে অবশ্যই অতিমারী নিয়ন্ত্রণে কার্যকরী - এর আগে অতিমারীর সময়ে টীকা আবিষ্কৃত হয়নি, তাই সেভাবে সরাসরি অতিমারী নিয়ন্ত্রণে কাজে আসতে পারেনি, পরবর্তী অতিমারী ঠেকাতে কাজে এসেছে। এই প্রথম অতিমারীর মধ্যেই টীকা এসেছে - অতএব, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তার ব্যবহারের জন্যে সকলেই ব্যস্ত, যুক্তিযুক্ত কারণেই ব্যস্ত - সেটাকে সদর্থক চোখেই দেখা উচিত।


    ইন ফ্যাক্ট, সঙ্কট থেকে বেরিয়ে আসার সেরা পথ, সম্ভবত, ফাইজার ও মডার্নার ভ্যাক্সিনই। কিন্তু, আপাতত নরওয়ের ঘটনার পরে সেকথা মানুষকে বিশ্বাস করানো চাপ। এই mRNA ভ্যাক্সিনে মৃতের বয়সের বিন্যাস, সম্ভাব্য কারণ ইত্যাদি নিয়ে কথা তো এই লেখাতেই রয়েছে।


    অনেক অনেএএক ধন্যবাদ, এমন যত্ন নিয়ে পড়ে মতামত জানানোর জন্য। কৃতজ্ঞতা ও ভালোবাসা রইল।

  • বেশ কিছু প্রশ্ন | 2402:3a80:a9c:5d19:a530:c730:c68a:***:*** | ১৭ জানুয়ারি ২০২১ ০৮:৪৯101780
  • লেখাটিও ভ্যাকসিনের মতই বেশ তাড়াহুড়ো করে নামানো এবং বেশ অসম্পূর্ণ মনে হল।  যে প্রশ্নগুলি সব থেকে বেশি উঠছে,সেগুলিই এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। 


    যেমন, ভারতের মত দেশে যেখানে গত এক দেড় মাস ধরে এমনিই কেস খুবই কমে যাচ্ছে  প্রায় কোনরকম রেস্ট্রিকশন ছাড়াই। পালাপার্বণ উৎসব নির্বাচনী প্রচার লোকাল ট্রেন বাস , দোকান বাজার, নিয়মিত ফ্লাইট সব মিলিয়ে ভীড়ভাট্টা ঠেসাঠেসি মোটেই কম কিছু নয় ,তাও কমছে সেখানে কমার কারণ কী মনে হয়? টেস্ট খুব কম হচ্ছে এমনও সেভাবে নয়,পজিটিভিটি রেটই কমছে  মৃত্যুও অনেক কম,এটি সেভাবে আন্ডাররিপোর্ট তো হবেনা সেনিয়ে কোন মিডিয়াও কিছু বলছে না। এছাড়াও বহু বড়সড় এবং স্থানীয় লেভেলে করা সেরোসার্ভে কয়েক মাস আগেই দেখিয়েছে বেশ কিছু স্থানে ৫০-৬০%বা তার থেকেও বেশি লোকের শরীরে প্রতিরোধী আন্টিবডি এসে গেছে।  হার্ড ইমিউনিটি সেসব স্থানে এসে গেছে কিনা নইলে কেন কেস বাড়ছেনা উলটে কমছে, সেনিয়ে কোন আলোকপাত হলনা. এটা কিন্তু এখন মোটামুটি স্বীকৃত ,যে স্থানীয় হার্ড ইমিউনিটিই কেস ডিপের কারণ, এবিষয়ে অনেকেই বলেছেন। (Localised herd immunity young population behind dip in India’s COVID count - The Week)তো এসব জায়গায় ভ্যাক্সিন  দেওয়ার  আর অর্থ আছে কিনা সেইনিয়ে বড়সড় বিতর্কের অবকাশ আছে,যা এই লেখায় এলে ভাল হত।  ন্যাচারাল ইনফেকশনের ইমিউনিটি বহুক্ষেত্রেই আট মাসের বেশি সময় ধরেও পাওয়া যাচ্ছে, তার থেকে ভ্যাক্সিন জনিত ইমিউনিটি বেটার হবে কিনা  আর প্রয়োজন আছে কিনা।


       ভ্যাক্সিনের ট্রায়াল কিন্তু বেছেবেছে তাঁদের উপর হয়েছিল,যাঁদের শরীরে এই আন্টিবডি নেই।   থাকলে,তারপরে ভ্যাক্সিন দেওয়ার কী প্রভাব,সেতো দেখাই হয়নি,এদিকে ভ্যাক্সিন পাবেন তাঁদের বড় অংশ।   সেটা কি এই অবস্থয়  রিসোর্সের অপচয়ও নয় ?এছাড়া সেই হাইপার ইমিউনিটির প্রয়োজন আছে কিনা,পেলে কী ফল হতে পারে,সেই নয়ে  বিজ্ঞানীমহল সংশয়ে  সেকথা এ লেখাতে এলই না।   এই সাজেশনও এসেছে,IgG আছে কিনা পরীক্ষা করে ভ্যাকসিন দেওয়ার।  খুবই শস্তায় এই পরীক্ষাও সম্ভব। আর তাতে অনেক অপ্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে না দিয়ে যাঁদের দরকার,তাঁরা আরো আগে পেতে পারেন।  অন্তত এই বিকল্প স্ট্রাটেজির কস্ট বেনিফিট বিশ্লেষণ প্রয়োজনীয় ছিল।


    এছাড়াও নরওয়ের মৃত্যু নিয়ে প্রশ্ন থাকছে, ৮০-৯০ বছরের ব্যক্তিদের উপর ট্রায়াল হয়েছিল কী ?হলে কী ফলাফল ? নরওয়ের মত একটি অতিস্বল্প জনসংখ্যার দেশে,যেখানে কোভিডে মৃত্যুই যথেষ্ট কম,সেখানে ২৩ জনের মৃত্যু নেহাত কম নয়।  আরো কত আসতে পারে এখনো জানা নেই। 


    দেশে প্রশ্ন কোভিশিল্ড নিয়ে সেভাবে ওঠেনি ( ওই   কম ডোজে বেশি কার্যকারিতা সংক্রান্ত বড়সড় একটি প্রশ্ন, এবং কোন  ডোজ শেষ অব্দি দেওয়া হচ্ছে সেই নিয়ে সংশয় আছে অবশ্য)  ,উঠেছে কোভ্যাক্সিন নিয়ে,কারণ তার তৃতীয় ফেজের ট্রায়াল এখনো চলছে,ফলাফলআসেনি।  মার্চে আসবে জানানো হয়েছে।  প্রেস রিলিজে খুব স্পষ্টভাবে বলা হয়েছিল,কোভ্যাক্সিনের অনুমোদন এমার্জেন্সি কেসে হবে,যদি  নতুন স্ট্রেন আসে,যেখানে অন্য ভ্যাক্সিনের কার্যকারিতা পরীক্ষিত নয়। হলেও 'ট্রায়াল ' মোডে হবে।  যেখানে এই টার্মগুলি স্পষ্ট করার দাবি নিয়েই এত বিতর্ক , সেখানে দুইদিন আগে হঠাতই জানানো হল,দেশের প্রথম পর্যায়ের টিকাদানে কোভ্যাক্সিনও থাকবে।   যা ডোজ সরকার কিনেছে,তার এক তৃতীয়াংশ কোভ্যাক্সিন !! এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের টিকা নেওয়ার ব্যাপারে কোন চয়েজই থাকবেনা !   ডাঃ বসু নিজে স্বাস্থ্যকর্মী হয়ে  এনিয়ে প্রশ্ন তুললেন না দেখে অবাক লাগল। দিল্লির আর এম এল হাসপাতাল সহ অনেক জায়গায় ডাক্তাররাই কোভ্যাক্সিন নিতে অস্বীকার করেছেন।    এতো হয়ত পশ্চিমবংগের স্বাস্থ্য বিভাগের চাপ যে এই রাজ্যে কোভিশিল্ড এসেছে,  স্বাস্থ্যকর্মীদের ভাগ্য ভাল যে কোভ্যাক্সিন নিতে হবেনা।   হতেই পারে সেটি নিরাপদ এবং কার্যকরী ,অন্যদের থেকে বেশিও হতে পারে,কিন্তু সেই ফল তো এখনো জানা যায়নি,আর জানার আগে নিতে ভয় পাওয়া না না চাওয়া অমূলক কিছুই নয়।    


    যেখানে কোভিশিল্ড যথেষ্ট মাত্রায় ছিল আর দামও কম, আর ট্রায়াল মোডে এমার্জেন্সি ছাড়া কোভ্যাক্সিন দেওয়া হবেনা জানানোর পর ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে এই ঘোষণা নিয়ে বিতর্ক স্ক্রোলের প্রতিবেদনে খুব ভাল ধরা পড়েছে  গুরুর প্রবন্ধে সেসবকিছ্ররই  প্রায় অনুপস্থিতি বেশ হতাশ করল। 


    Why is India buying an untested vaccine when a cheaper option with better safety data is available? (scroll.in)

  • বিষাণ বসু | 2409:4060:e92:308d:8245:c4b7:45fe:***:*** | ১৭ জানুয়ারি ২০২১ ০৯:০৫101781
  • প্রথমত, কেস কতখানি কমেছে বলা মুশকিল - অন্তত এই রাজ্যে, পুজোর পর থেকে প্রায় সরকারি নির্দেশেই টেস্টের সংখ্যা অর্ধেক বা তারও কম হয়ে দাঁড়িয়েছে। এবং টেস্ট যেটুকু হচ্ছে, সেও কাদের মধ্যে কেমন করে হচ্ছে, খোঁজ নিলেই জানা যাবে।


    তবে virulence অনেকটাই কমেছে - কেননা, টেস্ট হোক বা না হোক, গুরুতর অসুস্থ মানুষের সংখ্যা কমেছে।


    ঠিক এই পরিস্থিতিতেই সেকেন্ড ওয়েভ এসেছে পশ্চিমে। সেটা যদি ঠেকানো যায়, ভ্যাক্সিনের গুরুত্ব সেখানেই। 


    প্রায়োগিক অংশে, এই রাজ্যের কথা নিয়েই আলোচনা মুখ্যত। কোভ্যাক্সিন নিয়ে সেকারণেই কথা বাড়াই নি। সরকার কোভ্যাক্সিন কেন কিনলেন, সেই আলোচনা বাড়াতে থাকলে রাফাল বিমান অব্দিও চলে যাওয়া যায়। একটু নজর করে পড়লেই বুঝতেন, এই লেখার উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য ভিন্ন - একটা হোলসাম ফিল আনার লক্ষ্য লেখকের ছিল না। নরওয়েত্ব ভ্যাক্সিন নিয়ে দুর্বিপাক এবং ট্রায়ালে বয়স্ক মানুষ ইনক্লুড হয়েছিল কিনা, সেকথা লেখার মধ্যেই রয়েছে। পড়া শেষ করার আগেই কমেন্ট পেয়ে যাওয়ার কারণে, তাড়াহুড়ায়, হয়ত খেয়াল করেন নি।


     এনিওয়ে, আপনাকে হতাশ করার জন্য যারপরনাই দুঃখিত। 

  • Aniruddha Kar | 146.196.***.*** | ১৭ জানুয়ারি ২০২১ ০৯:৪৭101782
  • বিষাণের বিশ্লেষণ বেস আকর্ষণীয়। উ ২৪ প ননকোভিদ হাসপাতাল প্রাথমিক ভাবে চিহ্নিত এটার কারন কি ?

  • Aniruddha Kar | 146.196.***.*** | ১৭ জানুয়ারি ২০২১ ০৯:৪৭101783
  • বিষাণের বিশ্লেষণ বেস আকর্ষণীয়। উ ২৪ প ননকোভিদ হাসপাতাল প্রাথমিক ভাবে চিহ্নিত এটার কারন কি ?

  • বিষাণ বসু | 2409:4060:e92:308d:8245:c4b7:45fe:***:*** | ১৭ জানুয়ারি ২০২১ ১০:২৭101785
  • আমার তো সে বিষয়ে, স্যার, খুব একটা ধারণা নেই। ইন ফ্যাক্ট, ব্যাপারটা জানিই না।


    বিশদে বলুন, প্লীজ।

  • পারমিতা | 1.23.***.*** | ১৭ জানুয়ারি ২০২১ ১০:৪৮101787
  • টিকাকরণ হলে অনেক ক্ষতি হবে বলছেন অনেকে ,যেকোনো ওষুধেরও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে তখন সেই ওষুধটি বাদ দিতে পারেনা কেউই।

  • চৈতালী চট্টোপাধ্যায় | 2401:4900:4e40:69b1:7e2f:9107:b13f:***:*** | ১৭ জানুয়ারি ২০২১ ১২:১৫101789
  • এই সময়ের প্রেক্ষিতে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ লেখা।কোভিড-টিকা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় আমাদের মনে।সে ছায়া যে কেটেছে এমন বলি না, কিন্তু কিছু প্রশ্নের উত্তর মিলল তো বটেই!

  • অরিন | ১৭ জানুয়ারি ২০২১ ১৪:১৮101792
  • @বিষাণবাবু, আপনাকে ধন্যবাদ, কমেন্টের জন্য এবং বিশেষ করে পাঠকদের সঙ্গে এমন ধৈর্য ধরে সংযোগ রক্ষা করার ও উত্তর দেবার জন্য |


    যিনি লিখেছেন,


    "যেমন, ভারতের মত দেশে যেখানে গত এক দেড় মাস ধরে এমনিই কেস খুবই কমে যাচ্ছে  প্রায় কোনরকম রেস্ট্রিকশন ছাড়াই। পালাপার্বণ উৎসব নির্বাচনী প্রচার লোকাল ট্রেন বাস , দোকান বাজার, নিয়মিত ফ্লাইট সব মিলিয়ে ভীড়ভাট্টা ঠেসাঠেসি মোটেই কম কিছু নয় ,তাও কমছে সেখানে কমার কারণ কী মনে হয়?


    ...


    এটা কিন্তু এখন মোটামুটি স্বীকৃত ,যে স্থানীয় হার্ড ইমিউনিটিই কেস ডিপের কারণ, এবিষয়ে অনেকেই বলেছেন। (Localised herd immunity young population behind dip in India’s COVID count - The Week)তো এসব জায়গায় ভ্যাক্সিন  দেওয়ার  আর অর্থ আছে কিনা সেইনিয়ে বড়সড় বিতর্কের অবকাশ আছে,যা এই লেখায় এলে ভাল হত। "


    হার্ড  ইমিউনিটি এই ধরণের ইনফেকশনে ভ্যাকসিন ব্যতীত অর্জন করা প্রায় অসম্ভব, ভারতের যা লোকসংখ্যা বিশেষ করে, অন্তত জনস্বাস্থ্য তাই বলে। ভারতের ক্ষেত্রে বিষাণবাবু দেখলাম লিখেছেন, টেস্ট যতটা হওয়া উচিৎ এবং যেভাবে হওয়া উচিৎ, তাই নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন। এই ব্যাপারটি শুরু থেকেই ছিল, কাজেই ভারতে ঠিক কতটা কমেছে, কতটা Asymptomatic infection এই ব্যাপারগুলো কিন্তু স্পষ্ট নয়। 


    এতৎসত্ত্বেও ধরা যাক সত্যি সত্যি  ইনফেকশন রেট কমে থাকে, সেটা  কি উপায়ে সম্ভব হল যদি না হার্ড ইমিউনিটি না হয়ে থাকে? ভারতের ডাটা থেকে দেখা যাচ্ছে সেপ্টেমবার মাসের শেষের দিকে ভারতে পিক ইনফেকশন পৌঁছেছিল (ছবিটা দেখুন, এটি WHO'র ডাটা) | সাধারণত  যেভাবে প্যানডেমিকের মডেলিং করা হয়, এবং যেভাবে লকডাউনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, তাতে কখন ইনফেকশন পিক ("চূড়ান্ত অবস্থায়") পৌঁছবে সেই সময়টিকে ধরা হয়। তার কারণ, লক-ডাউন বা মানুষে মানুষে যোগাযোগ যদি পিক অবস্থায় পৌঁছনোর পর কমিয়ে ফেলা যায়, তখন, যাকে বলে effective reproduction number, R_e, সেটি ১ এর নীচে চলে আসে, এবং কালক্রমে ইনফেকশনের হার কমতে থাকে। এতে করে হার্ড ইমিউনিটি না হলেও সংক্রমণ কমতে থাকবে |  ভারতে যখন প্রথম লকডাউন করা হয়েছিল, তখন ভারতে ইনফেকশন চূড়ান্ত অবস্থায় পৌঁছয় নি। অথচ, ভারতে দীর্ঘকাল ধরে নানান ধরণের "লকডাউন" পরিস্থিতি তৈরী করা ছিল। সেপ্টেমবার/অক্টোবরের শেষে চূড়ান্ত ইনফেকশন রেট পৌঁছন চলাকালীন যদি সীমিত যোগাযোগ হয়ে থাকে, তাহলে এই যে ক্রমান্বয়ে ইনফেকশন কমতে দেখছেন, তার একটা ব্যাখ্যা পাওয়া যাচ্ছে, যদিও লোকালাইজড হার্ড ইমিউনিটি না হলেও কমবে, এমনকি, কমতে থাকার পরে যদি মানুষে মানুষে পুনরায় যোগাযোগ স্থাপিত হয়, তাতেও কম হতে পারে, যদি না নতুন ধরনের ইনফেকশন শুরু হয়, যেটা হয়ত ভারতের ক্ষেত্রে হয়নি |  


    এবার serosurveillance এর  একটি সমস্যা স্যামপ্লিং বায়াস, অর্থাৎ এমনভাবে antibody মাপার জন্য লোক শনাক্ত করা হয়ে থাকতে পারে যে অঞ্চলে ইতিপূর্বে সংক্রমণ হয়েছে সেখানে সমীক্ষা করা হল, ফলে এমন বহু লোককে পাওয়া যাবে যাঁদের Asymptomatic বা সেরকম ভাবে বোধগম্য অসুখ বেরোয়নি, কিন্তু সংক্রমণ হয়েছ। এঁদের একেকটি জায়গায় যদি ক্লাসটারিং হয় এবং সেখানে সমীক্ষা করা হয়, তাহলে সেই জায়গাটিতে Antibody % বেশী হতে পারে, তার মানে কিন্তু জনসমষ্টিতে সাধারণভাবে ওই ধরণের ইমিউনিটি নাও থাকতে পারে | এই বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে |  


    এই অবস্থায় ভ্যাকসিনেশনের কি যুক্তি আছে?  আছে, কারণ এখনো বহু মানুষ কিন্তু আক্রান্ত হন নি, কাজেই তাঁদের প্রতিষেধক দেবার একটি যৌক্তিকতা রযেছে বইকি | 


    যদিও যাঁদের ইতিপূর্বে সংক্রমণ হয়েছে তাঁদের ইমিউনাইজ করলে কতটা কাজে দেবে তার অবশ্য কোন নিশ্চয়তা নেই | কাজেই যাঁরা ভ্যাকসিনেশনের দায়িত্বে রয়েছেন, তাঁদের এইদিকগুলো ভেবে দেখার ব্যাপার আছে অবশ্যই | 


  • অরিন | ১৭ জানুয়ারি ২০২১ ১৪:১৮101791
  • @বিষাণবাবু, আপনাকে ধন্যবাদ, কমেন্টের জন্য এবং বিশেষ করে পাঠকদের সঙ্গে এমন ধৈর্য ধরে সংযোগ রক্ষা করার ও উত্তর দেবার জন্য |


    যিনি লিখেছেন,


    "যেমন, ভারতের মত দেশে যেখানে গত এক দেড় মাস ধরে এমনিই কেস খুবই কমে যাচ্ছে  প্রায় কোনরকম রেস্ট্রিকশন ছাড়াই। পালাপার্বণ উৎসব নির্বাচনী প্রচার লোকাল ট্রেন বাস , দোকান বাজার, নিয়মিত ফ্লাইট সব মিলিয়ে ভীড়ভাট্টা ঠেসাঠেসি মোটেই কম কিছু নয় ,তাও কমছে সেখানে কমার কারণ কী মনে হয়?


    ...


    এটা কিন্তু এখন মোটামুটি স্বীকৃত ,যে স্থানীয় হার্ড ইমিউনিটিই কেস ডিপের কারণ, এবিষয়ে অনেকেই বলেছেন। (Localised herd immunity young population behind dip in India’s COVID count - The Week)তো এসব জায়গায় ভ্যাক্সিন  দেওয়ার  আর অর্থ আছে কিনা সেইনিয়ে বড়সড় বিতর্কের অবকাশ আছে,যা এই লেখায় এলে ভাল হত। "


    হার্ড  ইমিউনিটি এই ধরণের ইনফেকশনে ভ্যাকসিন ব্যতীত অর্জন করা প্রায় অসম্ভব, ভারতের যা লোকসংখ্যা বিশেষ করে, অন্তত জনস্বাস্থ্য তাই বলে। ভারতের ক্ষেত্রে বিষাণবাবু দেখলাম লিখেছেন, টেস্ট যতটা হওয়া উচিৎ এবং যেভাবে হওয়া উচিৎ, তাই নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন। এই ব্যাপারটি শুরু থেকেই ছিল, কাজেই ভারতে ঠিক কতটা কমেছে, কতটা Asymptomatic infection এই ব্যাপারগুলো কিন্তু স্পষ্ট নয়। 


    এতৎসত্ত্বেও ধরা যাক সত্যি সত্যি  ইনফেকশন রেট কমে থাকে, সেটা  কি উপায়ে সম্ভব হল যদি না হার্ড ইমিউনিটি না হয়ে থাকে? ভারতের ডাটা থেকে দেখা যাচ্ছে সেপ্টেমবার মাসের শেষের দিকে ভারতে পিক ইনফেকশন পৌঁছেছিল (ছবিটা দেখুন, এটি WHO'র ডাটা) | সাধারণত  যেভাবে প্যানডেমিকের মডেলিং করা হয়, এবং যেভাবে লকডাউনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, তাতে কখন ইনফেকশন পিক ("চূড়ান্ত অবস্থায়") পৌঁছবে সেই সময়টিকে ধরা হয়। তার কারণ, লক-ডাউন বা মানুষে মানুষে যোগাযোগ যদি পিক অবস্থায় পৌঁছনোর পর কমিয়ে ফেলা যায়, তখন, যাকে বলে effective reproduction number, R_e, সেটি ১ এর নীচে চলে আসে, এবং কালক্রমে ইনফেকশনের হার কমতে থাকে। এতে করে হার্ড ইমিউনিটি না হলেও সংক্রমণ কমতে থাকবে |  ভারতে যখন প্রথম লকডাউন করা হয়েছিল, তখন ভারতে ইনফেকশন চূড়ান্ত অবস্থায় পৌঁছয় নি। অথচ, ভারতে দীর্ঘকাল ধরে নানান ধরণের "লকডাউন" পরিস্থিতি তৈরী করা ছিল। সেপ্টেমবার/অক্টোবরের শেষে চূড়ান্ত ইনফেকশন রেট পৌঁছন চলাকালীন যদি সীমিত যোগাযোগ হয়ে থাকে, তাহলে এই যে ক্রমান্বয়ে ইনফেকশন কমতে দেখছেন, তার একটা ব্যাখ্যা পাওয়া যাচ্ছে, যদিও লোকালাইজড হার্ড ইমিউনিটি না হলেও কমবে, এমনকি, কমতে থাকার পরে যদি মানুষে মানুষে পুনরায় যোগাযোগ স্থাপিত হয়, তাতেও কম হতে পারে, যদি না নতুন ধরনের ইনফেকশন শুরু হয়, যেটা হয়ত ভারতের ক্ষেত্রে হয়নি |  


    এবার serosurveillance এর  একটি সমস্যা স্যামপ্লিং বায়াস, অর্থাৎ এমনভাবে antibody মাপার জন্য লোক শনাক্ত করা হয়ে থাকতে পারে যে অঞ্চলে ইতিপূর্বে সংক্রমণ হয়েছে সেখানে সমীক্ষা করা হল, ফলে এমন বহু লোককে পাওয়া যাবে যাঁদের Asymptomatic বা সেরকম ভাবে বোধগম্য অসুখ বেরোয়নি, কিন্তু সংক্রমণ হয়েছ। এঁদের একেকটি জায়গায় যদি ক্লাসটারিং হয় এবং সেখানে সমীক্ষা করা হয়, তাহলে সেই জায়গাটিতে Antibody % বেশী হতে পারে, তার মানে কিন্তু জনসমষ্টিতে সাধারণভাবে ওই ধরণের ইমিউনিটি নাও থাকতে পারে | এই বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে |  


    এই অবস্থায় ভ্যাকসিনেশনের কি যুক্তি আছে?  আছে, কারণ এখনো বহু মানুষ কিন্তু আক্রান্ত হন নি, কাজেই তাঁদের প্রতিষেধক দেবার একটি যৌক্তিকতা রযেছে বইকি | 


    যদিও যাঁদের ইতিপূর্বে সংক্রমণ হয়েছে তাঁদের ইমিউনাইজ করলে কতটা কাজে দেবে তার অবশ্য কোন নিশ্চয়তা নেই | কাজেই যাঁরা ভ্যাকসিনেশনের দায়িত্বে রয়েছেন, তাঁদের এইদিকগুলো ভেবে দেখার ব্যাপার আছে অবশ্যই | 


  • বিষাণ বসু | 2409:4060:e92:308d:8245:c4b7:45fe:***:*** | ১৭ জানুয়ারি ২০২১ ১৪:৪৬101794
  • @অরিনবাবু, অনেক ভালোবাসা। ধন্যবাদ আপনারই প্রাপ্য, কেননা আপনি যে অবজার্ভেশনগুলো দিচ্ছেন, সেগুলো লেখাটার চাইতে বেশী গুরুত্বপূর্ণ।


    এদেশে সেরোসার্ভেল্যান্সের আরেকটা বড় সমস্যা, সাধারণত সুস্থসবল এবং সচল লোকজনের মধ্যে থেকে স্যাম্পল কালেকশন করে ফেলা হয় - ঘরবন্দী মানুষ এবং রক্ষণশীল পরিবারের মহিলারা বাদ পড়ে যান। কাজেই, এমনকি যে পাড়ায় সংক্রমণ ছড়ায়নি, সেখানেও যাঁরা রাস্তাঘাটে ঘোরেন, তাঁদের থেকেই স্যাম্পল নেওয়ার ফলে অ্যান্টিবডি শতাংশের হিসেবে বেশী মনে হওয়ার সম্ভাবনা। 


     বড় স্কেলে ভ্যাক্সিনেশনের শেষে হার্ড ইমিউনিটি তৈরী হলে তার সুফল সকলেই পাবেন। এমনকি যাঁরা ঘোরতর ভ্যাক্সিন-বিরোধী, তাঁরাও।


    সেদিক থেকে better safe than sorry থিওরি মেনে ভ্যাক্সিন দিয়ে রাখাই ভালো। সাফল্যের বা ব্যর্থতার অব্জেকটিভ কোনো হিসেব পাওয়া মুশকিল। সেকেন্ড পিক ও তজ্জনিত হয়রানি যদি ঠেকানো যায়, সেটাই খুব বড় পাওয়া।

  • dc | 2405:201:e010:502b:fcbe:5bf9:42c3:***:*** | ১৭ জানুয়ারি ২০২১ ১৫:০৪101796
  • ভ্যাক্সিনেশান ড্রাইভের তো অবশ্যই দরকার আছে। লং টার্ম ইমিউনিটোর জন্য ভ্যাক্সিন নেওয়া দরকার (যদিও এক্ষেত্রে যেসব ভ্যাক্সিন এমার্জেন্সি হিসেবে ব্যবহার করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে, সেগুলো ক বছর বা মাসের জন্য ইমিউনিটি দিতে পারে সেটা এখনও পরিষ্কার না)। 


    তবে আমার মনে হয় কোভ্যাক্সিন এর অনুমতি দেওয়াতে কিছুটা কনফিউশান তৈরি হয়েছে। কারন এই ভ্যাক্সিনটির এখনও ফেজ ৩ পরীক্ষা চলছে, কাজেই এফিকেসি ডেটা এখনও হাতে আসে নি। আমি নিজে যেমন, কোভ্যাক্সিন নিতে কখনোই রাজি হবো না, কোভিশিল্ডের জন্য অপেক্ষা করবো। আর ফাইজার বা মডার্নার ভ্যাক্সিন ব্যবহার করারও অনুমতি দেওয়া উচিত, কারন ওগুলোর এফিকেসি রেট কোভিশিল্ডের থেকে বেশী দেখা গেছে। আমাকে যদি চয়েজ দেওয়া হয় তাহলে ফাইজার বা মডার্নার জন্য অপেক্ষা করবো। 

  • Dulal dey | 2402:3a80:a6f:cd88:ca78:9ab7:1b67:***:*** | ১৭ জানুয়ারি ২০২১ ১৫:২২101798
  • বিষয়ের বস্তু নিষ্ঠ আলোচনা  বেশ  ভালোই  লাগলো I 

  • আরো প্রশ্ন | 2402:3a80:a8f:b468:0:52:eb74:***:*** | ১৭ জানুয়ারি ২০২১ ১৭:৫৪101801
  • সেপ্টেম্বর অক্টোবরে ভারতে কীরকম সীমিত যোগাযোগ ছিল?  ওই সময় থেকেই বরং সব আরো বেশি খুলে দেওয়া হতে থাকে।  লকডাউন জুন থেকেই উঠে গেছে। ডোমেস্টিক ফ্লাইট চালু হয়ে গেছে সেপ্টেম্বরের আগে থেকেই। লোকাল ট্রেন চালু হয়ে গেছে অক্টোবর নভেম্বরে।  স্কুল কলেজ বাদ দিলে প্রায় পুরোই নর্মাল পরিস্থিতি গত দুই তিনমাস ধরেই। রাস্তাঘাটে একটু বেরলেই বুঝবেন। তা স্তত্বেও কেস কমা কীকরে ব্যাখ্যা করবেন?  একের পর এক সেরোসার্ভেতে গত দুই তিন মাস ধরেই ৫০-৬০% পজিটিভ পাওয়াকে কী বলবেন?  আর টেস্ট বাস্রব পরিস্থিতির চেয়ে কম তো বটেই, সেজন্যই যা ইনফেকশন রিপোর্ট হচ্ছে, বাস্তবে তার চেয়ে অনেক অনেক বেশি, সেরোসার্ভেলেন্সে সেই  অনেক অনেক বেশি লোকের মধ্যেই তাই IgG পাওয়া যাচ্ছে।  ভারতে আসিম্পটোমেটিক ইনফেকশন খুবই বেশি হয়েছে, ছড়িয়েছে। 


    আর বিষাণবাবুর পুরো লেখা, টাইটেল থেকে শুরু করে বিষয়ের সিংহভাগ যেখানে ভারতকে নিয়ে, সেখানে কোভ্যাক্সিন বিতর্কে না ঢোকার যুক্তিটি বিশেষ ধোপে টিঁকছেনা। লোকের  ভ্যাক্সিন নিয়ে এত সমস্যা নেই,  সমস্যা মূলত কোভ্যাক্সিন নিয়ে সেফটি এফিকেসি র ডাটা না আসা সংক্রান্ত বিতর্ক থেকে। নইলে ভ্যাক্সিন নিয়ে সচেতনতা বাড়ানোর প্রোগ্রাম ট্রোগ্রাম কম হচ্ছেনা, বহু বহু লোকে ভ্যাকসিন নেওয়ার জন্য মুখিয়েই।  এই বিতর্কের ফলে ঘেঁটে গেছে, ভয় পাচ্ছে।  সেটা ইন জেনেরাল ভ্যাকসিন ভীতি নয়, এর ফলে অন্যান্য রুটিন ইমুইনাইজেশনে ভীতি জন্মাচ্ছে, এমনও নয়।


    ও, বেশি বয়স্ক লোকেরা ট্রায়ালে ছিলেন না,  সেটাই পয়েন্ট। যদি ওই ভ্যাক্সিন নিয়ে নানা বিতর্ক প্রথম থেকে ফলো করে থাকেন,  দেখবেন, এই প্রশ্ন প্রথম থেকেই তোলা হয়েছিল, যে এজ গ্রুপ, বা কোমরবিডিটি গ্রুপ কোভিডে সবচেয়ে বেশি আফেক্টেড, তাদের বেশিরভাগই ট্রায়ালে এক্সক্লুডেড ছিলেন,  তাঁদের উপর ভ্যাক্লসিনের প্রভাব মী হতে পারে, এই প্রশ্ন প্রথম থেকেই ছিল আর সেই আশংকাই সত্যি হল, নরওয়েতে। তবে এটিও দেখার, এই এক জিনিস অন্যত্র হয় কিনা। ইউ এস এ,  ইউরোপের অন্যত্রও এই এক গ্রুপ তো ভ্যাকসিন পাচ্ছে! 


    ইন্ডিয়াতে মূল প্যানিক ছড়িয়েছে ইন্দোরে মৃত্যুর কেস থেকে। তার আগে কোভিশিল্ডের কেসটি নিয়েও।  সেই ব্যক্তিকে তো সিরাম ইন্সটিটিউট বিশাল ল সুটের ভয় দেখিয়ে চুপ করিয়ে দিল। এগুলি নিয়ে কথা হলে ভাল হয়।


    কাল্পকেও কোলকাতায় কোন এক নার্সের পোস্ট ভ্যাকসিনেশন অসুস্থতার খবর ভাইরাল, সেসব নিয়ে কথা হলেও ভাল।

  • আরো প্রশ্ন | 2402:3a80:a8f:b468:0:52:eb74:***:*** | ১৭ জানুয়ারি ২০২১ ১৮:১৬101803
  • ইজরায়েলেও বেশ কিছুজনের ফেস প্যারালিসিস, ইউকের মত, ফাইজার ভ্যাকসিন নিয়ে।


    তবে ভারতে যদি ক্ষতি করে থাকে, তাহলে এগুলো করছে। এই ডিউ প্রসেস না মানা।


    দ্য হিন্দুর রিপোর্ট।

    During a press conference on January 10 and even earlier to other media outlets, the Covaxin trial participants alleged that they were ignorant of what they were signing up for. If true, it amounts to the consent nowhere close to being a truly informed one. According to them, no efforts were apparently taken to explain and inform them of the pros and cons of taking part in the trial, nor were they told that they would either get a vaccine candidate or a placebo. Instead, they were misled by the trial site to think they were getting a COVID-19 vaccine for free. The participants were not made aware of their rights to free medical care in case of any adverse events. They were not given any time or option to discuss with the family before signing the consent form, either. As documents show, at least in a few instances, the consent was taken after vaccination, which amounts to a serious violation. They also alleged that they were not given a copy of the consent form and other documents to prove their participation.

    Following the October 2013 Supreme Court order, the Indian regulator had in 2019 made mandatory an audio-video recording of the informed consent process of each vulnerable individual participant before conducting clinical trials. And a written consent from the participant had to necessarily be taken before the audio-video recording of the informed consent process. Since many of the 700-odd participants are illiterate, an impartial witness should have been present during the entire informed consent process to append his/her signatures to the consent form. There is no evidence that this was followed, based on what the participants said during the press conference.

    In the Covaxin trial in Bhopal, over a dozen of the 700 adults from three-four communities living close to the hospital have told the media that they were lured with monetary benefits of ₹750. Luring people to participate in clinical trials by offering money is unethical.

    However, the company in a press release states that a decision was taken to reimburse all participants at the rate of ₹750 for each study visit. The company claims the reimbursement amount was approved by every institutional ethics committee at the study sites, and is not an inducement.

    Coronavirus | New challenges for COVID-19 vaccine trials in India

    While reimbursement for actuals, such as lost wages and cost of transportation to the trial site, is permissible, it amounts to inducement when a payment of ₹750 is openly announced; during the press conference, the participants highlighted the payment announcement. It is unclear if the institutional ethics committee even approved street announcements to be made inviting people to the trial. Whether a site can advertise and even the content of such promotional material need prior approval from the institutional ethics committee.

    Follow-up and care

    While free medical care in case of any adverse event is a right of each trial participant, there have been at least a few documented instances of violation. In other cases, the participants, unaware that they were part of a clinical trial and hence entitled to free medical attention, had sought care from private practitioners. With at least some participants not possessing their own mobile phones, medical follow-up over phone, even if there was one, was not actually possible.

    Coronavirus | India and the race for vaccine development

    If the HPV vaccine trial was investigated by a Parliamentary Standing Committee, such an independent investigation becomes all the more necessary as the ICMR is the co-sponsor of the trial.

    One of the participants at the Peoples College of Medical Sciences & Research Centre died on December 21. While Bharat Biotech claims that all due processes were followed following this development, it is unclear why no information about the death of the trial participant, who belongs to a tribe, was made public by the Indian regulator. In the case of serious adverse events following injection with AstraZeneca’s COVID-19 vaccine in a trial outside India, the information was made public, and the trial was halted at all sites while an investigation was under way. The Serum Institute was also ordered to halt the trial by the Indian regulator pending investigation.

    Coronavirus | Covishield vaccine volunteer sues Serum Institute of India, Oxford Group over ‘adverse reaction’

  • Prativa Sarker | ১৭ জানুয়ারি ২০২১ ২০:০৪101804
  • সোশ্যাল মিডিয়ায় এন্টি ভ্যাক্সিন মতামত প্রচুর চোখে পড়ছে। সেই ব্যাকগ্রাউন্ডে এ-ই লেখাটা জরুরি।  অনেককে পাঠালাম। 

  • বিষাণ বসু | 2409:4060:38a:cbdd:997a:5c34:929e:***:*** | ১৭ জানুয়ারি ২০২১ ২০:১৩101805
  • একের পর এক সেরো সার্ভেতে ৫০-৬০% পজিটিভ কোথায় পাওয়া গেল, জানতে পারলে ভালো লাগত। সেই সার্ভে কাদের মধ্যে কীভাবে করা হয়েছে, তার মেথডলজি কি এমন নিখুঁত করে খুঁটিয়ে দেখেছেন? 


    যে সেরোসার্ভে হয়েছে, তার নির্ণয়পদ্ধতির কতখানি কোভিড-১৯ স্পেসিফিক - কেননা, করোনাভাইরাস ব্যাপারটা, আপনি নিশ্চিত জানেন, একেবারেই কমন ভাইরাস - এবং কোভিড-১৯ স্পেসিফিক অ্যান্টিবডি ডিটেকশনের ব্যবস্থা না হলে শুধু করোনাভাইরাস বিরোধী IgG Antibody খোঁজা হলে তার মানে থাকে না।


    পদ্ধতিগত ত্রুটির কথা বলছেন, খুবই ভালো কথা। কোভ্যাক্সিনের তথ্য প্রকাশ্যে কেন এলো না, ভ্যালিড প্রশ্ন। কিন্তু, কোভিশিল্ডের ডেটা ল্যানসেটের মাপের জার্নালে প্রকাশিত - কোনোকিছুই ছাপার আগে যারা খবরের কাগজের চাইতে একটু বেশী খুঁটিয়ে দেখে নেয়। খবরের কাগজের রেফারেন্স ছেড়ে একটু-আধটু জার্নাল থেকে রেফারেন্স দিলে ভালো হয়। ওই যেমন বললেন, ফাইজার টিকার ক্ষেত্রে এই প্রশ্ন শুরু থেকেই উঠছিল ইত্যাদি ইত্যাদি - রেফারেন্স দেবেন, প্লীজ? নাহলে পুরোটাই নার্সদিদি অসুস্থ হয়ে সঙ্কটজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তির গল্পে দাঁড়িয়ে যেতে পারে। আপনি জ্ঞানীগুণী মানুষ, রিসোর্সফুলও বটেন। এবিপি আনন্দের মতো মহান সংবাদমাধ্যমের বাইরেও আপনার যাচাই করার ক্ষমতা রয়েছে। এক্স্যাক্টলি কী হয়েছেন, জেনে নেবেন। আর নিজের তত্ত্বে অটল থাকতে চাইলে আরেকটু ইনসাইডার ইনফো দিয়ে রাখি - যাকে বলতে পারেন, স্কুপ - গতকাল একটি মেডিকেল কলেজে জনাচারেক স্বাস্থ্যকর্মী ইঞ্জেকশন নেওয়ার সময় অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলেন। জাস্ট ইঞ্জেকশন নেওয়ার আগেই। কুলোকে বলছে, স্রেফ টেনশন থেকেই। কিন্তু গুণীজনেরা খুুুবই বিচলিত

  • অরিন | ১৮ জানুয়ারি ২০২১ ০০:৪৮101809
  • ধন্যবাদ বিষাণ |


    "আরো প্রশ্ন" নামক পাঠকের প্রশ্ন:" সেপ্টেম্বর অক্টোবরে ভারতে কীরকম সীমিত যোগাযোগ ছিল?  ওই সময় থেকেই বরং সব আরো বেশি খুলে দেওয়া হতে থাকে।  লকডাউন জুন থেকেই উঠে গেছে। ডোমেস্টিক ফ্লাইট চালু হয়ে গেছে সেপ্টেম্বরের আগে থেকেই। লোকাল ট্রেন চালু হয়ে গেছে অক্টোবর নভেম্বরে।  স্কুল কলেজ বাদ দিলে প্রায় পুরোই নর্মাল পরিস্থিতি গত দুই তিনমাস ধরেই। রাস্তাঘাটে একটু বেরলেই বুঝবেন। তা স্তত্বেও কেস কমা কীকরে ব্যাখ্যা করবেন?  একের পর এক সেরোসার্ভেতে গত দুই তিন মাস ধরেই ৫০-৬০% পজিটিভ পাওয়াকে কী বলবেন? "


    বিষাণ সেরোসারভেলেনসের এবং ভ্যাকসিনের দুটি বিষয় স্পষ্ট করে লিখেছেন |


    লকডাউন এবং কেস কমার বিষয়টি নিয়ে দু-একটি কথা। ইনফেকশন যখন মহামারীর আকার ধারণ করে, তখন তার একটা গতিপ্রকৃতি থাকে, যাতে সে প্রথমে উর্দ্ধমুখী হতে থাকে, তারপর কেস সংখ্যা পড়তে থাকে (যদি না নতুন করে ইনফেকশন শুরু হয়, সেই ব্যাপারটা ওয়েভ ), অঙ্কের নিয়মে ইনফেকশন বাড়ে কমে, হারড ইমিউনিটি না হলেও | এবার সে কতটা বাড়বে, কি হারে বাড়বে, কবে সে পিক অবস্থায় পৌঁছবে, সেই ব্যাপারগুলো নির্ধারণ করতে গেলে মডেলিং এর প্রয়োজন হয়, ও নানারকম মডেল আছে (deterministi, stochastic, network) যেখানে সংক্রমণের ধাঁচটি কিরকম হতে পারে তাই নিয়ে দেখা হয় | মোটামুটি সব মডেলেই R_0 (আর নট), এবং R_e (effective reproduction number) এর মাপযোক করা থাকে, যার অর্থ জীবাণুটি কি ভাবে একজন থেকে কতজনের মধ্যে ছড়াচ্ছে এবং তার কি গতিপ্রকৃতি হতে পারে তার একটি হদিশ থাকে। সেই মডেলিং সাহায্য করে জনস্বাস্থ্যে কি ধরণের নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তার ভিত্তিতে সাধারণত ধরে নেয়া হয় যে ইনফেকশন যখন পিক অবস্থায় পৌঁছয়, জোরদার লকডাউন যদি সেই সময় থেকে অবলম্বন করা যায়, ইনফেকশন দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আসে, তার জন্য হার্ড ইমিউনিটি (অর্থাৎ ১ - ১/R_0)% মানুষের সংক্রমণ হবার প্রয়োজন পড়ে না। বিশেষ করে করোনাভাইরাসের মত অসুখের ক্ষেত্রে যে কোন ধরণের মানুষে মানুষে সংযোগ কমিয়ে ফেলতে পারলেই কাজ হবে। ভারত সরকার সম্ভবত এই পরিপ্রেক্ষিত থেকে এপ্রিল থেকে জুন অবধি পর্যায়ক্রমে "লকডাউন" চালিয়েছেন, যদিও যখন শুরু হয়েছিল তখন ভারতে অন্তত কোনমতেই ইনফেকশন পিক অবস্থায় পোঁছয়নি। হলে দেখতে আগস্টের মধ্যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসত। 


    যাইহোক, ভারতে এপ্রিল থেকে  জুন পর্যন্ত "লকডাউন" ছিল, এবং তারপর বিভিন্ন ফেসে "আনলক" নামে একটি প্রক্রিয়া হয়েছে, আপনি সেপ্টেমবারে যে কার্ভটি দেখছেন তাতে বোঝা যাচ্ছে সেপটেমবার বা অকটোবারে ইনফেকশন পিক অবস্থায় পৌঁছেছিল, এবং তার পর থেকে কমতে শুরু করে | এগুলো এপিডেমিকের স্বাভাবিক অঙ্কের নিয়ম মেনে হয়েছে, এর পূর্ববর্তী লকডাউনের প্রভাবে ইনফেকশনের সংখ্যা যতটা হতে পারত, ততটা হয় নি। তবে WHO কার্ভ দেখলে একটা ব্যাপার স্পষ্ট যে অক্টোবর থেকে জীবন একেবারে সম্পূর্ণ স্বাভাবিক মনে হয় না হয়েছে, সেক্ষেত্রে এই ধরণের কার্ভ দেখা যেত না, আবার একটি দেশজোড়া ওয়েভ দেখতেন। 


    এটা  কিন্তু হার্ড ইমিউনিটির ব্যাপার নয় | 


    হার্ড ইমিউনিটিতে মহামারী প্রায় সঙ্গে সঙ্গে শূন্যে নেমে আসত। সেটা কিন্তু হয়নি।


    সেটি একমাত্র সার্বিক ভাবে ভ্যাকসিনেশন হলে সম্ভব |


    যার জন্য এখনো ভ্যাকসিনেশন প্রাসঙ্গিক। 

  • কোনটি সঠিক? | 2402:3a80:a92:be4b:0:4c:a908:***:*** | ১৯ জানুয়ারি ২০২১ ০০:০৪101842

  • 'যাঁরা ভাবছেন, ক্লিনিকাল ট্রায়ালে তাড়াহুড়ো করে ভ্যাক্সিন বাজারে আনার সুবাদেই এঁদের প্রাণ গেল, তাঁদের মনে করাই, ট্রায়ালে এত বেশি বয়সের মানুষদের সচরাচর নেওয়া হয় না।'


    কিন্তু এই যে বলেছিল,  ফাইজারের ট্রায়ালের প্রায় অর্ধেক ছিল ৬৫-৮৫ বছর বয়সীদের মধ্যে? 

  • অরিন | ১৯ জানুয়ারি ২০২১ ০১:৫৪101843
  • যিনি লিখেছেন,"কিন্তু এই যে বলেছিল,  ফাইজারের ট্রায়ালের প্রায় অর্ধেক ছিল ৬৫-৮৫ বছর বয়সীদের মধ্যে? ",


    এই যে ট্রায়াল সেটি নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অফ মেডিসিন এ বেরিয়েছে, সেইটা পড়লে বুঝতে পারবেন যে ট্রায়াল টি ১৬ বছরের উর্ধে যারা তাদের নিয়ে করা হয়েছিল ।


    URL : https://www.nejm.org/doi/full/10.1056/NEJMoa2034577


    উদ্ধৃতি:


    "Here, we report safety and efficacy findings from the phase 2/3 part of a global phase 1/2/3 trial evaluating the safety, immunogenicity, and efficacy of 30 μg of BNT162b2 in preventing Covid-19 in persons 16 years of age or older. This data set and these trial results are the basis for an application for emergency use authorization. Collection of phase 2/3 data on vaccine immunogenicity and the durability of the immune response to immunization is ongoing, and those data are not reported here."


    এটা  যে ফাইজারের ট্রায়াল, সেটাও জানানো আছে:


    "Pfizer was responsible for the design and conduct of the trial, data collection, data analysis, data interpretation, and the writing of the manuscript. BioNTech was the sponsor of the trial, manufactured the BNT162b2 clinical trial material, and contributed to the interpretation of the data and the writing of the manuscript. "


    এবার আসা যাক বয়েসের হিসেবে যেটা আপনার বক্তব্য, নিচের ছবিটি দেখুন, এটি ট্রায়াল এর রিপোর্ট যেটা নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অফ মেডিসিন এ বেরিয়েছে,সেখান থেকে নেয়া:



    ৪২.৩%যদি ৫৫বছরের ওপরে হয়,তাহলে ৬৫-৮০বছরের মানুষ কখনোই ৫০%এর অধিক হতে পারে না,তাই না?আরো প্রমান, ৫০%শতাংশতম মানুষের বয়েস (মিডিয়ান)যদি ৫২ বছর হয়,তাহলে ৬৫-৮০বছরের হিসেব টি  মিলছে কি?


    এবার আপনি কোন সূত্র থেকে জেনেছেন "এই যে বলেছিলো",করা বলেছিলো ,একটু জানাবেন অনুগ্রহ করে? 

  • কোনটি সঠিক? | 2402:3a80:aac:c3ff:0:68:237d:***:*** | ১৯ জানুয়ারি ২০২১ ০৬:০২101844
  • ৫৬-৮৫ বছরের মধ্যে ৪২% পার্টিসিপান্ট আছেন মানে বেশী বয়স্কদের উপর ট্রায়াল হয়নি?  এই এজ গ্রুপের ব্রেকাপ্ কত,  ভ্যাক্সিন নেওয়া যে ৮ জনের কোভিড হয়েছিল, তাঁদের মধ্যে এই এক গ্রুপে কত, সেই ব্রেকাপ নেই বলে প্রশ্ন উঠেছিল। 


    https://www.bbc.com/news/health-54986208


     যাহোক, রবিবারের এই মৃত্যুর তদন্ত আশা করি ঠিকঠাকভাবে হবে।


    https://m.timesofindia.com/india/beneficiary-dies-doctors-dont-relate-it-to-vaccine-side-effects-yet/amp_articleshow/80320441.cms


     এর আগে মধ্যপ্রদেশের মৃত্যুর কেস নিয়ে, বাকি বিতর্ক নিয়ে কে সঠিক বলছেন মনে হ্য়?  এগুলি কি আলোচনাতে আসাই উচিত নয় মনে হয়? 


    https://science.thewire.in/health/peoples-hospital-bhopal-covaxin-clinical-trials-exploitation-ethics-ground-report/


    হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাসের ইন্ডিয়া ট্রায়ালে অন্ধ্রের অতগুলি মেয়ের মৃত্যু নিয়ে কে সঠিক ছিল মনে হয়? 


    এগুলির কোনটাই কিন্তু পশ্চিমের ভ্যাক্সিন বিরোধিতার কো্ণ থেকে অন্ধ অবৈজ্ঞানিক বিরোধিতা নয়। 

  • বিষাণ বসু | 2409:4060:11e:3f63:85b3:6eb7:560a:***:*** | ১৯ জানুয়ারি ২০২১ ০৮:০১101845
  • @অরিন, বোঝানোর চেষ্টা করে করে লাভ নেই। তথ্য থেকে সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর পরিবর্তে অনেকেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে তারপর তথ্য হাতড়ান। বিভিন্ন ছদ্মনামের আড়ালে লড়লেও, পাব্ললিকটিকে অনুমান করা যায়।


    কোনো ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালেই, শুরুতে, এক্সট্রিম এজ গ্রুপ মেজরলি ইনক্লুডেড হয় না - যদি না সেই ওষুধটি স্পেসিফিকালি সেই গ্রুপের জন্যেই তৈরী হয়ে থাকে। কেননা, এক্সট্রিম এজ-এ মেটাবলিজম ও বায়োলজি কিঞ্চিৎ আলাদা হয়ে থাকে। প্লাস ট্রায়াল পপুলেশনের পঞ্চাশ শতাংশ যদি এক্সট্রিম এজ গ্রুপের হয়, তাহলে সেই ট্রায়ালের ডেটা জেনারেল পাব্লিকের ক্ষেত্রে কতখানি প্রযোজ্য, সে নিয়েও প্রশ্ন উঠতে পারে।


    তবে, ওই যে বললাম, তর্ক করে লাভ নেই। উনি এইচপিভি ভ্যাক্সিন অব্দি চলে গিয়েছেন, এরপর পোলিও ভ্যাক্সিন, তারপর থ্যালিডোমাইড। বোঝানোর চেষ্টা মানে সময় নষ্ট।


    মুশকিল এই, ভক্তিবাদী ও "যুক্তিবাদী", উভয়পক্ষই বিশ্বাসে মিলায়ে কৃষ্ণ তত্ত্বে সমান বিশ্বাসী - ভালোর মধ্যে, প্রথম পক্ষ খামখা সেই বিশ্বাসের পক্ষে এঁড়ে তক্কোটুকু জোড়েন না। 


    ক্লিনিকাল ট্রায়ালের ভালোমন্দ নিয়ে তর্ক (অবশ্যই তর্কের অনেক অবকাশ থাকে) করতে গেলে তো ট্রায়াল মেথডলজি ব্যাপারটা বুঝতে হবে - ট্রায়ালের প্রকাশিত রিপোর্ট, এমনকি মূল ট্রায়ালটা পড়ে দেখতে হবে। মিডিয়া পরিবেশিত তথ্য দিয়ে যে এই ধরণের ডিসকাশন হয় না, এটুকু আইডিয়াও যাঁর নেই - তাঁকে বোঝানো মুশকিল।

  • dc | 2405:201:e010:5847:a9bb:e263:4129:***:*** | ১৯ জানুয়ারি ২০২১ ১১:৪৪101849
  • ভ্যাক্সিনেশান ড্রাইভ শুরু হওয়ার পর কোভ্যাক্সিন এর ঝুলি থেকে বেড়াল, আরে নানা চেতাবণী বেরলো। 


    https://www.ndtv.com/india-news/coronavirus-vaccine-who-shouldnt-take-covaxin-shot-bharat-biotechs-fact-sheet-2354544?pfrom=home-ndtv_topscroll


    The document says in an underlined para that the "clinical efficacy of Covaxin is yet to be established and it is still being studied in Phase 3 clinical trial. Hence, it is important to appreciate that receiving the vaccine does not mean that other precautions related to Covid-19 need not be followed."

  • প্রভাস চন্দ্র রায় | 2409:4060:31c:b370::e6f:***:*** | ১৯ জানুয়ারি ২০২১ ১৮:২৬101863
  • বিষাণ বসুর লেখাটা পড়লাম, বেশ মনযোগ দিয়েই পড়লাম। একইসঙ্গে বিভিন্ন মানুষের মন্তব্য। এই বিষয়ে আমার কোন স্পষ্ট ধারণা নেই, মতামত জানানোর মতো জ্ঞানও সীমিত। কেবল বিভিন্ন সময়ে পৃথিবীতে ভাইরাস আক্রমণের ইতিহাসটা জানি।


    আমার মতো সীমিত জ্ঞানের মানুষের কাছে এই আলোচনা বেশ আকর্ষণীয় বলে মনে হলো। 


    বিজ্ঞান, চিকিৎসা বিজ্ঞান এ ভাবেই এগিয়ে যাবে এই আশা রেখে বিষাণ এবং আলোচনায় অংশগ্রহণকারী সবাইকে ধন্যবাদ জানাই।

  • কেন বিতর্ক | 2402:3a80:a93:fe65:0:57:5cd2:***:*** | ২২ জানুয়ারি ২০২১ ০৭:২২101927
  •  প্যাপিলোমা ভাইরাস ভ্যক্সিন বিতর্কের সংগে কেউ থ্যলিমায়েড ইসুতে ভ্যাক্সিন বিরোধিতার তুলনা করলে সত্যিই আর কিছু বলার থাকেনা, বিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকেই।  থ্যালিময়েড নিয়ে প্রচুর ভুয়ো ডাটা গেছে, ভুল বিশ্লেষণ হয়েছে, পেপার রিট্রাক্ট হয়েছে। কিন্তু প্যপিলোমার কেস আদর্শগতভাবে ভ্যাক্সিন বিরোধিতার জায়গা থেকেই নয়, ট্রায়ালের সমস্যা নিয়ে, যা ভারতের মধ্যপ্রদেশের কোভিড ভ্যাক্সিন ট্রায়ালেও দেখা গেছে বলে রিপোর্ট হচ্ছে। wire scuence এর প্রতিবেদনটি ভাল করে পড়ুন।এই নিয়ে যাঁরা প্রশ্ন তুলছেন তাঁরাও বেশীরভাগ বিজ্ঞানীই।  প্যাপিলোমা ভ্যাক্সিন কেসে কারা দোষী বলে সাব্যস্ত হন, সেসব নিয়ে জেনেও এসব লিখছেন কিনা ভেবে অবাক হতে হচ্ছে। 

    ভ্যাক্সিন নিয়ে লেখায় কোভ্যাক্সিন বিতর্কের প্রায় অনুল্লেখ তাই অবাক করেছে। যেখানে লেখাটি দেশ নিয়ে সেখানে রাজ্যে তো কোভ্যাক্সিন আসেনি, সেই যুক্তি ধোপে টেঁকে না। আর রাজ্যে যেখানে কোভ্যাক্সিন আসার প্রবল সম্ভাবনা,  খুব শীঘ্রই আসতে চলেছেও, আর এবার স্বাস্থ্যকর্মীদের কোন চয়েজ থাকবেনা, কপালে কোভ্যাক্সিন থাকলে সেটিই নিতে হবে,  সে যতই এখন ক্লিনিকাল ট্রায়াল মোডে থাকুক না কেন, সেখানে এই প্রসঙ্গ বাদ দেওয়ার যৌক্তিকতা সত্যই বোধগমা নয়।

     

    অবাক হতে হচ্ছে, বিভিন্ন রাজ্য থেকে, কেন্দ্র থেকে, দেশের নানা ল্যাব থেকে সেরোসার্ভে হয়েছে, তাতে ৪০-৫০% বা তার বেশি আন্টিবডি পাওয়া গেছে, সেটি না জানা।  এর সব কিছু এখনি জার্নালে এসে গেছে,  এমন নয়, রিভিউয়ে আছে, আসবে, এমনও আছে।  লোকালাইজড হার্ড ইমিউনিটির কথা যাঁরা বলেছেন তাঁরা দেশের একেবারে প্রথম সারির ভাইরোলজিস্ট, ইমিউনোলজিস্ট,  ডঃ শাহিদ জামিল, সত্যজিত রথ প্রমুখ।  বিরোধিতা করতেই হবে মোডে না থাকলে এটাও দেখতে পেতেন,  স্থানীয়ভাবে বহু ক্ষেত্রে হার্ড ইমিইনিটি এসে গেছে বলার পরেও এঁদের মত ভ্যাক্সিন নেওয়া ভাল।  তার পিছনে কিছু কারণ দেখিয়েছেন তাঁরা। ডঃ রমানান লক্ষ্মীনারায়ণও।  দু'দিন আগে csir এর স্টাডি বেরিয়েছে, তাতেও অনেক বিজ্ঞানীর রেকোমেন্ডেশন হল, যেসব শহরে সেরোসার্ভেতে বেশিমাত্রায় আন্টিবডি পাওয়া যাচ্ছে, সেখানে পরে দিয়ে কম সেরোপজিটিভিটর শহরে আগে ভ্যাক্সিন দিতে।  কীভাবে কোথায় স্থানিক ভিত্তিতে অগ্রাধিকার দিলে বেশি ভাল হত (  সামনের সারির কর্মীদের অগ্রাধিকার বাদেও),  সেনিয়ে অবশ্যই আলোচনার অবকাশ আছে, বিশেষ করে ভারতের মত বিশাল মাত্রায় হেটেরোজেনেটির দেশে এক সাইজ সবকিছুতে ফিট করবেনা, দর্জি দিয়ে জামা বানানোই শ্রেয়।

     

    ভাল কথা, ফাইজার ভ্যাক্সিনেটেড পপুলেশনের মধ্যে ইজ্রায়েলে কতজন পজিটিভ এসেছে, ভ্যাক্সিনেশনের পরেও লকডাউন,  প্রথম ডোজ সেরকম এফেক্টিভ নয়, সেই নিয়ে বিবৃতি, ইজরায়েলের বিতর্ক দেখেছেন তো? 

    এসবে বিতর্কের উপস্থাপনা, এই নিয়ে আলোচনা চাওয়া  মানেই ভ্যাক্সিনের আদর্শগত বিরোধিতা,  এমনটি না ভাবলেই ভাল। 

     

    পুঃ  আরো একটি প্রশ্ন। একেবারেই আকাডেমিক প্রশ্ন। 

    কোভ্যাক্সিন এবং কোভিশিল্ড, বিশেষ করে প্রথমটি যে লম্বা তালিকা ধরিয়েছে, কারা কারা  প্যাপিলোমা ভাইরাস ভ্যক্সিন বিতর্কের সংগে কেউ থ্যলিমায়েড ইসুতে ভ্যাক্সিন বিরোধিতার তুলনা করলে সত্যিই আর কিছু বলার থাকেনা, বিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকেই।  থ্যালিময়েড নিয়ে প্রচুর ভুয়ো ডাটা গেছে, ভুল বিশ্লেষণ হয়েছে, পেপার রিট্রাক্ট হয়েছে। কিন্তু প্যপিলোমার কেস আদর্শগতভাবে ভ্যাক্সিন বিরোধিতার জায়গা থেকেই নয়, ট্রায়ালের সমস্যা নিয়ে, যা ভারতের মধ্যপ্রদেশের কোভিড ভ্যাক্সিন ট্রায়ালেও দেখা গেছে বলে রিপোর্ট হচ্ছে। wire scuence এর প্রতিবেদনটি ভাল করে পড়ুন।এই নিয়ে যাঁরা প্রশ্ন তুলছেন তাঁরাও বেশীরভাগ বিজ্ঞানীই।  প্যাপিলোমা ভ্যাক্সিন কেসে কারা দোষী বলে সাব্যস্ত হন, সেসব নিয়ে জেনেও এসব লিখছেন কিনা ভেবে অবাক হতে হচ্ছে। 

    ভ্যাক্সিন নিয়ে লেখায় কোভ্যাক্সিন বিতর্কের প্রায় অনুল্লেখ তাই অবাক করেছে। যেখানে লেখাটি দেশ নিয়ে সেখানে রাজ্যে তো কোভ্যাক্সিন আসেনি, সেই যুক্তি ধোপে টেঁকে না। আর রাজ্যে যেখানে কোভ্যাক্সিন আসার প্রবল সম্ভাবনা,  খুব শীঘ্রই আসতে চলেছেও, আর এবার স্বাস্থ্যকর্মীদের কোন চয়েজ থাকবেনা, কপালে কোভ্যাক্সিন থাকলে সেটিই নিতে হবে,  সে যতই এখন ক্লিনিকাল ট্রায়াল মোডে থাকুক না কেন, সেখানে এই প্রসঙ্গ বাদ দেওয়ার যৌক্তিকতা সত্যই বোধগমা নয়।

     

    অবাক হতে হচ্ছে, বিভিন্ন রাজ্য থেকে, কেন্দ্র থেকে, দেশের নানা ল্যাব থেকে সেরোসার্ভে হয়েছে, তাতে ৪০-৫০% বা তার বেশি আন্টিবডি পাওয়া গেছে, সেটি না জানা।  এর সব কিছু এখনি জার্নালে এসে গেছে,  এমন নয়, রিভিউয়ে আছে, আসবে, এমনও আছে।  লোকালাইজড হার্ড ইমিউনিটির কথা যাঁরা বলেছেন তাঁরা দেশের একেবারে প্রথম সারির ভাইরোলজিস্ট, ইমিউনোলজিস্ট,  ডঃ শাহিদ জামিল, সত্যজিত রথ প্রমুখ।  বিরোধিতা করতেই হবে মোডে না থাকলে এটাও দেখতে পেতেন,  স্থানীয়ভাবে বহু ক্ষেত্রে হার্ড ইমিইনিটি এসে গেছে বলার পরেও এঁদের মত ভ্যাক্সিন নেওয়া ভাল।  তার পিছনে কিছু কারণ দেখিয়েছেন তাঁরা। ডঃ রমানান লক্ষ্মীনারায়ণও।  দু'দিন আগে csir এর স্টাডি বেরিয়েছে, তাতেও অনেক বিজ্ঞানীর রেকোমেন্ডেশন হল, যেসব শহরে সেরোসার্ভেতে বেশিমাত্রায় আন্টিবডি পাওয়া যাচ্ছে, সেখানে পরে দিয়ে কম সেরোপজিটিভিটর শহরে আগে ভ্যাক্সিন দিতে।  কীভাবে কোথায় স্থানিক ভিত্তিতে অগ্রাধিকার দিলে বেশি ভাল হত (  সামনের সারির কর্মীদের অগ্রাধিকার বাদেও),  সেনিয়ে অবশ্যই আলোচনার অবকাশ আছে, বিশেষ করে ভারতের মত বিশাল মাত্রায় হেটেরোজেনেটির দেশে এক সাইজ সবকিছুতে ফিট করবেনা, দর্জি দিয়ে জামা বানানোই শ্রেয়।

     

    ভাল কথা, ফাইজার ভ্যাক্সিনেটেড পপুলেশনের মধ্যে ইজ্রায়েলে কতজন পজিটিভ এসেছে, ভ্যাক্সিনেশনের পরেও লকডাউন,  প্রথম ডোজ সেরকম এফেক্টিভ নয়, সেই নিয়ে বিবৃতি, ইজরায়েলের বিতর্ক দেখেছেন তো? 

    এসবে বিতর্কের উপস্থাপনা, এই নিয়ে আলোচনা চাওয়া  মানেই ভ্যাক্সিনের আদর্শগত বিরোধিতা,  এমনটি না ভাবলেই ভাল। 

     

    পুঃ  আরো একটি প্রশ্ন।

    কোভ্যাক্সিন এবংং কোভিশিল্ড, বিশেষ করে প্রথমটি যে লম্বা তালিকা ধরিয়েছে, কারা কারা ভ্যাক্সিন  নেবেন না, এরকম লম্বা তালিকা আর কোন কোন ভ্যাক্সিনেশনের জন্য ধরানো হয়?  আলার্জি বাদ দিয়ে।

       নেবেন না, এরকম লম্বা তালিকা আর কোন কোন ভ্যাক্সিনেশনের জন্য ধরানো হয়?  আলার্জি বাদ দিয়ে।

     

  • অরিন | ২২ জানুয়ারি ২০২১ ০৯:০৫101931
  • "লোকালাইজড হার্ড ইমিউনিটির কথা যাঁরা বলেছেন তাঁরা দেশের একেবারে প্রথম সারির ভাইরোলজিস্ট, ইমিউনোলজিস্ট,  ডঃ শাহিদ জামিল, সত্যজিত রথ প্রমুখ।  "


    কিছু মনে করবেন না, কোভিডের আমলে আজকাল সবাই এপিডেমিওলজি নিয়ে জ্ঞান দি়চ্ছেন, এঁরাই বা বাদ যান কেন? হার্ড ইমিউনিটি ব্যাপারটা আগেও একবার লিখেছি, আরেকবার বলতে হয় এটি কোনমতেই অনেকটা ভ্যাকসিনেশন না হলে শুধু ইনফেকশনের দৌলতে হওয়া সম্ভব নয়, আর লোকালাইজড হার্ড ইমিউনিটি বলে কিছু হয় না। আপনি তো বিষাণ বা আমার কথা পড়তে চান না, নীচের আর্টিকেলটা পড়ে দেখুন না হয়:


    https://science.thewire.in/the-sciences/covid-19-seroprevalence-survey-results-confidence-sampling-methods-bias/


    "ফাইজার ভ্যাক্সিনেটেড পপুলেশনের মধ্যে ইজ্রায়েলে কতজন পজিটিভ এসেছে, ভ্যাক্সিনেশনের পরেও লকডাউন,  প্রথম ডোজ সেরকম এফেক্টিভ নয়"


    "সেরকম" মানে কি বলতে চান আপনি বলতে পারবেন, তবে ফাইজার তাদের প্রোটোকল ডকুমেন্টে লিখেছে ৩৩ নম্বর পৃষ্ঠায়:


    "To evaluate the efficacy of prophylactic BNT162b2 against confirmed COVID-19 occurring from 7 days after the second dose in participants without evidence of infection before vaccination"


    (দেখুন: https://pfe-pfizercom-d8-prod.s3.amazonaws.com/2020-11/C4591001_Clinical_Protocol_Nov2020.pdf )


    ভ্যাকসিনেশন কাজ করল কি করল না, অন্তত ফাইজার যে ধরণের ভ্যাকসিন নিয়ে এসেছে তাকে বিচার করতে গেলে দুটি ডোজ এবং তারপর আরো সাত দিন কমপক্ষে অপেক্ষা করতেই হবে। 


    আপাতত আমি এই লেখাটিতে আর কোন মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকব | এক কথা বার বার করে লিখে পণ্ডশ্রম করার মানে হয় না।

  • কেন বিতর্ক | 2402:3a80:aa6:782e:0:5a:397d:***:*** | ২২ জানুয়ারি ২০২১ ০৯:৩২101933
  • একটু পড়ে নিন না।


    বিজ্ঞানীদেরই বক্তব্য। ফাইজার যা ডাটা প্রেজেন্ট করেছিল, তার থেকে কম এফেক্টিভ।  কোট করলাম। 


    https://www.theguardian.com/world/2021/jan/19/single-covid-vaccine-dose-in-israel-less-effective-than-we-hoped


    আর জুন মাসে বেরন কয়েকটা সেরোসার্ভে নিয়ে একটা লেখা দিলেন,  সেই wire science. এই তারপর কত গণ্ডা সেরোসার্ভে নিয়ে কী লেখা সেগুলি পড়লেন না। লোকালাইজড হার্ড ইমিউনিটিও সেখানেই প্রকাশিত। ডঃ শাহিদ জামিল, সত্যজিত রথ,  রমানন, এরা সব বানের জলে ভেসে আসা বিজ্ঞানী হলে আর কি বা বলে চলে, তবে কাজের,  পাবলিকেশনের প্রোফাইলই বলে দেবে যা বলার।


    আপনার ওই  পিক ইনফেকশনে লকডাউন করা উচিত, আর কেন কেস কমেছে বলে যা যা বললেন সেও বিশেষ বোঝা যায় নি, সার্কুলার লজিক।  আর অক্টোবর নভেম্বর কেন সেপ্টেম্বর থেকেই দেশে লোকজন বাইরে প্রচুর পরিমাণে বেরিয়েছেন। বাস চালু হয়ে গেছে সেই কবে, সেখানে ভীড় নিজের চোখে না দেখুন, ছবিতেও দেখেননি?  অক্টোবর নভেম্বর থেকে লোকাল ট্রেনের ভীড়ভাট্টা?  সেপ্টেম্বর অক্টোবরে নানা নির্বাচনে র‍্যালির ভীড়?  পুজোর কেনাকাটা ছেড়েই দিন। 

  • অরিন | ২২ জানুয়ারি ২০২১ ১১:৩০101934
  • আপনি নিজে গার্ডিয়ানের রিপোর্টটা পড়েছেন আশাকরি, যে জায়গাটায় লেখা আছে,


    "The issue of some vaccines being less effective after a single dose rather than two is well known, as well as the fact that protection is not immediate. While the first dose can take several weeks to promote an effective antibody response, the second dose can trigger different responses, supercharging the protection."


    সেই জন্যই ফাইজারের প্রোটোকলটার লিঙ্ক দিলাম, যদি না পড়ে থাকেন একটু পড়ে দেখুন! যদি কোন অংশ না বুঝতে পারেন, লিখুন, বুঝিয়ে দেব। আপনার লেখা পড়ে মনে হচ্ছে আপনি নিজের বিশ্বাসের সঙ্গে যেটা মিলল তাতেই শুধু ভরসা করেন| এতে করে যাঁরা আপনার মত করে ভাবেন না, তাঁদের পক্ষে আপনার সঙ্গে সুস্থ আলোচনার জায়গা খুব সীমিত| 


    বিশেষ করে বিজ্ঞানসংক্রান্ত বিষয়ে। বিজ্ঞানে এবং যে বিষয় তথ্যপ্রমাণ ভিত্তিক চিন্তাভাবনা করার বিষয়, সেখানে কোন বিখ্যাত ব্যক্তি কোথায় কি বলেছেন তার ভিত্তিতে কিছু  বিচার করা যায় না, কিছু আসে যায় না, বিজ্ঞানে ভক্তির এতটুকু জায়গা নেই |  আপনি যাদের নাম করেছেন তাঁরা নিশ্চয়ই মহাপণ্ডিত, কিন্তু তাই বলে এঁরা যা বলবেন তাই নির্দ্ধিয়ায় মেনে নিতে হবে এরকম কোন কথা নেই!


    হার্ড ইমিউনিটি কি জিনিস নিজে পড়ুন (আপনার লেখা থেকে একটা ব্যাপার বোঝা যাচ্ছে আপনি হার্ড ইমিউনিটি নিয়ে বিশেষজ্ঞদের কথা বেশী বিশ্বাস করেন, নিজে ব্যাপারটির চর্চার তুলনায়), নিজে বুঝুন! করোনাভাইরাসের কেসগুলো নিজে পর্যালোচনা করে দেখুন। একটি সার্ভেতে কতরকমের সমস্যা হতে পারে, নিজে বিচার বিবেচনা করে দেখুন। সার্ভে একটা জনসাধারণের মধ্যে সংখ্যাকে আন্দাজ করতে পারে মাত্র, তার বেশী কিছু নয়। সেখানে যদি এমন হয় যে বায়াসড স্যামপ্লিং এর প্রভূত সম্ভাবনা থাকে, তাহলে সার্ভের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবেই | সেক্ষেত্রে সার্ভের সংখ্যা মেনে নিলেও তার বেশী কিছু ধরে নেবার জায়গা থাকে না, বিশেষ করে যেখানে মোটামুটি বোঝা যাচ্ছে যে সারা ভারতে টেস্টিং প্রচুর বেড়ে থাকতে পারে, কিন্তু ভারতের যা জনসংখ্যা, গড় টেসটিং সেই হারে অত্যন্ত কম | সব মিলিয়ে ভেবে চিন্তে দেখুন, দেখবেন এরা যে পারসেনটেজ পেয়েছে তাতে কোন সন্দেহ নেই, কিন্তু তার মানে  এই নয় যে সেই সব সার্ভের ভিত্তিতে দেশের বিভিন্ন জায়গায় হার্ড ইমিউনিটি হয়েছে বলে ধরে নিতে হবে। 


    তাছাড়া, ভারতে কম বয়েসি মানুষের সংখ্যা বেশী, যাঁদের মধ্যে ইনফেকশন রেট স্বাভাবিকভাবেই ২০২০র স্ট্রেন অনুযায়ী কম, বহু মানুষ Asymptomatic, ফলে ভেতরে ভেতরে ইনফেকটেড হলেও যদি পরীক্ষা না করান, জানা যাবে না এনার আসলে কি অবস্থা, অতএব রিপোর্টে পাওয়া যাবে না, এছাড়াও  ইনফেকশন রেট সাময়িক অনেক কারণে কমে যেতে পারে, এমনকি কম টেসটিং এর জন্যেও হতে পারে, ভারতে এমনিতেই টেসটিং এর হার বেশী নয় | 


    লিঙ্ক: https://ourworldindata.org/coronavirus-testing


    এগুলো নিজে বিচার বিবেচনা করে দেখলে মনে হয় তথ্যমূলক আলোচনা করতে সুবিধে হবে!


    পিক রেট আর লকডাউন নিয়ে আমি এইটুকুই বলেছি যে লকডাউনের প্রশস্ত সময়  ইনফেকশন যখন চূড়ান্ত অবস্থায় পৌঁছেছে, অর্থাৎ এর পর স্বাভাবিক নিয়মে কমতে শুরু করেছে অথচ লকডাউন হয়নি তখনো, সেই সময়টিকে বেছে যদি লকডাউন করা যায়, তাহলে তার পরবর্তী সময়ে অসুখ কমার "হার" আরো দ্রুত হয়, তাতে দ্রুত ইনফেকশন কমে | কারণ লকডাউন করলে ধরে নেওয়া হয় সার্বিক লকডাউন হলে effective reproduction number 0.8 এর কাছাকাছি তৎক্ষণাৎ নেমে আসে। লকডাউন পিক রেট টিকে কমিয়ে ইনফেকশন কম হয়ে যাওয়াকে দ্রুত নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসার জন্য করা হয়। 


    এখন সেই ছক না মেনে লকডাউন করলেও ইনফেকশন কমবে, অন্তত ইনফেকশনের পিক যতটা হওয়া উচিৎ ততটা হবে না | ভারত বা চীনের মত জনবহুল দেশে সেইটা করা হয়েছে, তবে তারাও একটা সময়ের পরে কালক্রমে চূড়ান্ত  ইনফেকশন লেভেলে পৌঁছেছে | কমেছে, তারপর আবার নতুন ওয়েভ শুরু হয়েছে। ভারতের ক্ষেত্রে তাই নানান রকমের লকডাউন করার পর পিক ইনফেকশন পৌঁছেচে সেপটেমবর অকটোবরে, সে তো ভারতের পাঠানো ডাটা থেকে দেখাই যাচ্ছে | এর মধ্যে সারকুলার লজিকের কি হল? ব্যাপারটা হয়ত আপনার কাছে স্পষ্ট হয়নি, কিন্তু যেটা সারকুলার লজিক নয়, তাকে সারকুলার লজিক বলে দাগিয়ে দিচ্ছেন কেন? তাছাড়া এর সঙ্গে হার্ড ইমিউনিটির কোন সম্পর্ক নেই | ইনফেকশন নানা কারণে কমে, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কমেছে (পরে আবার বেড়েছে, বাড়তেও পারে), এসমস্ত কোন দেশেই হার্ড ইমিউনিটি কেউ অর্জন করে নি। 

  • বিষাণ বসু | 2409:4060:2e9e:1307:37a5:3505:e065:***:*** | ২৪ জানুয়ারি ২০২১ ১৩:২৭101998
  • আহা @অরিন, বললাম তো আগেই, উনি আগেই সিদ্ধান্তে পৌঁছে তারপর সিদ্ধান্তের সপক্ষে যুক্তি খুঁজছেন। কোভিড নিয়েই বা ম্যাচিওর ডেটা এসেছে কতটুকু? যেমন যেমন ডেটা এসেছে, সেই অনুসারে চিকিৎসা বদলেছে - এবং, এখন সেই অনুসারে যে চিকিৎসা চলছে, তাতে মৃত্যুহার অনেকখানিই কম। তার মানে তো এটা নয়, আগে ভুলভাল চিকিৎসা হচ্ছিল। বিজ্ঞানের নিয়মই এই। ডেটা আসবে - পরবর্তী পদক্ষেপ আরো মার্জিত হবে।


    ভ্যাক্সিনের ক্ষেত্রেও তা-ই। এগুলো অনেকাংশেই ইমার্জেন্সি বেসিসে পার্মিশন পেয়েছে। কাজেই, শুরুতে, যেসব ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদি ঝুঁকির সম্ভাবনা রয়েছে, যেমন শিশু-কিশোর, গর্ভবতী মা, কিম্বা যাঁরা স্তন্যপান করাচ্ছেন, তাঁদের বাদ রাখা হয়েছে। এর সাথে বাকি চালু ভ্যাক্সিন, যাদের লং টার্ম ডেটা রয়েছে, তাদের তুলনা করা যায় না। কেননা, চালু অতিমারীর মাঝে বসে লং টার্ম ডেটার জন্যে অপেক্ষা করার বিলাসিতা দেখানো মুশকিল।


    সেরো-সার্ভে কী মেথডে করা হয়েছে, কাদের মধ্যে এবং জনসংখ্যার ঠিক কীরকম রিপ্রেজেনটেটিভ স্যাম্পলিং, সে নিয়ে না জেনে মন্তব্য করাটাই অবান্তর। উনি সেই জার্নালে অপ্রকাশিত সেরো-সার্ভের পরে ভরসা রাখবেন, কিন্তু জার্নালে প্রকাশিত ভ্যাক্সিনের রিপোর্টকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে উড়িয়ে দেবেন!! এভাবে কোনো যুক্তিতর্ক হতে পারে নাকি? 


    কোভিডকালে বেশ কিছু নামজাদা মানুষই বিভ্রান্তিকর কথা বলেছেন। আবার অনেকক্ষেত্রে তাঁদের কথার কিয়দংশ খামচে উদ্ধৃত করায় বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে। এ তো নতুন কোনো ব্যাপার নয়। বড় মানুষ বা বড় বিজ্ঞানীরাও ভুলভাল বলে থাকেন। লিনাস পলিং অব্দি ভিটামিন সি অবসেশনের চোটে বিপরীত ট্রায়াল অগ্রাহ্য করে আর পছন্দসই ডেটা নিয়ে মেটা-বিশ্লেষণ করতে গিয়ে সারা বিশ্বে খোরাক হয়েছিলেন। বিজ্ঞান ব্যাপারটাই এমন। ধর্মগুরুদের মতো অকুণ্ঠ আনুগত্যের সম্মান বিজ্ঞানীদের প্রাপ্য নয়। কে বলছেন-এর চাইতে অনেক বড় ফ্যাক্টর, কী বলছেন তার পক্ষে প্রমাণ আছে কি নেই।


    কিন্তু, আগেই তো বললাম, এসবই যুক্তির কথা। যুক্তি থেকে সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া একটা প্রসেস - আর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে সপক্ষে যুক্তি খোঁজাও আরেক প্রসেস। দুইয়ের মিলমিশ হওয়া মুশকিল।


    @অরিন, আবারও ধন্যবাদ। কমেন্টগুলো থেকে অনেকখানি জানলাম। যাঁরা পড়বেন, তাঁরাও সমৃদ্ধ হবেন। যিনি বিভিন্ন নামে প্রশ্নগুলো তুললেন, তিনিও ধন্যবাদার্হ। এমন চমৎকার আলোচনা ওই প্রেক্ষিতের সুবাদেই সম্ভব হল।

  • পাতা :
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লুকিয়ে না থেকে প্রতিক্রিয়া দিন