২০২১ সালের বয়স মাত্র ১৫ দিন। এর মধ্যেই ভোটের বাজার গরম, করোনায় নিত্যদিনের বাজার আক্রান্ত হলেও ভোটের বাজারে কেউ পিছিয়ে নেই। সংসদীয় রাজনৈতিক দল তো বটেই, সরাসরি ভোটে অংশগ্রহণ না-করা প্রচুর গোষ্ঠী এখন মাঠে নেমেছে। অনেকে প্রকাশ্যে কোনও রাজনৈতিক দলকে ভোট না-দিতে মঞ্চ তৈরি করেছে, আবার কেউ কেউ জনদাবির সপক্ষে রাস্তায় নেমেছে।
ভোটে জনতার রায় নিয়েই সরকার গঠিত হয়, তারপর মানুষের নানা সমস্যা মেটাতে সেই নির্বাচিত সরকার কাজ করে, কিন্তু সেই ধারা অনেকটাই পালটে গিয়ে বর্তমানে জনতাকেই ছুড়ে ফেলে দিচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলি, এমনটাই অভিযোগ যাদবপুর ৮-বি বাস স্ট্যান্ডে গড়ে ওঠা দুদিনের ধর্নামঞ্চের, যার নাম ‘জনতাপক্ষ’। ১৪ ও ১৫ই জানুয়ারি চলা এই ধর্নামঞ্চের প্রথমদিন ছিল ‘প্রতীকী অনশন’ ও দ্বিতীয় দিন ‘সমাজ-সাংস্কৃতিক জমায়েত’।
"গণ আন্দোলনের অনুপস্থিতিতে সামাজিক ভিত্তিগুলি ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে যাবে, মানুষ আর কথা বলবে না, তার উপর যা চাপিয়ে দেওয়া হবে, তাই-ই গ্রহণ করে নিয়ে চলবে দিনের পর দিন। ভারতে বর্তমানে এই অবস্থা-ই শুরু হয়েছে। কিন্তু গণআন্দোলনের ক্ষেত্রে যে রাজনৈতিক দল সবচেয়ে কম বাধা দেবে, সেই রাজনৈতিক দলকেই ভোট দিয়ে জিতিয়ে আনা উচিতে, তাতে গণতন্ত্র সুরক্ষিত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।”- বলছিলেন শ্রীরামপুর থেকে আসা বছর ৩০-এর যুবক অম্লান হাজরা, যিনি ‘জনতাপক্ষ’র অন্যতম উদ্যোক্তাও বটে। তিনি আরও বলছেন, “জনতা মানে যেন মানুষ নয়! ভোটার। মিডিয়া থেকে নেতা সবাই বলছে 'ভোটব্যাংক'। মুসলমান ভোটব্যাংক, উদ্বাস্তু ভোটব্যাংক, রাজবংশী ভোটব্যাংক, দলিত ভোটব্যাংক, আদিবাসী ভোটব্যাংক। এতে যে মানুষকে অপমান করা হয়, এই বোধটা চলে গেছে! অথচ অন্য সব পক্ষেরও আগে গণতন্ত্রের আসল শক্তি হিসেবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পক্ষ হবার কথা ছিল এই সাধারণ জনগণের। জনতাপক্ষের।”
১৪ জানুয়ারি ‘জনতাপক্ষ’ পালন করেছে প্রতীকী অনশন, সেখানে প্রায় ৫০জন ছাত্র-ছাত্রী যারা বাংলার নানা জায়গায় পড়াশোনা করছে, অংশগ্রহণ করেছে। সকাল থেকেই পড়ুয়া ও অন্যান্য পেশার লোকজনও ভিড় করেছেন ৮-বি বাসস্ট্যান্ড চত্বরে। হাতে ছিল ফেস্টুন, দেওয়ালে দেওয়ালে ছিল দাবিসনদের ফ্লেক্স। কোনও রাজনৈতিক মঞ্চের পতাকা দেখা যায় নি। এই মঞ্চের আরও এক উদ্যোক্তা, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের ছাত্রী কাজরী মজুমদার বলছেন, “কোন ইস্যুতে কী কী দিক বিচার করে জনতা ভোট দেবে তা ঠিক করার দায়িত্ব কিন্তু বড় বড় টিভি চ্যানেলের আর খবরের কাগজগুলোর নয়। মানুষ নিজে ঠিক করবেন তাঁরা কোথায় ভোট দেবেন। তা ঠিক করার দায়িত্ব রাজনৈতিক দলগুলির-ও উচিৎ নয়, তা ঠিক করবেন মূলত সাধারণ মানুষ। এই আয়োজনের মধ্য দিয়ে গিয়ে আমরা সাধারণ মানুষের কাছে একটি স্পষ্ট বার্তা পাঠাতে পারব যে জনতাই সবার আগে।”
ছাত্রছাত্রী ও যুবক-যুবতীরাই এই মঞ্চের মূল উদ্যোক্তা, সঙ্গে বেশ কিছু শিক্ষক-গবেষক-সরকারি/বেসরকারি কর্মচারীদের দেখা গিয়েছিল সেখানে। তবে তাঁদের বক্তব্য অনুসারে সামাজিকভাবে গভীর বৈষম্যের শিকার হতে হয় যাঁদের-- অর্থাৎ, দলিত, আদিবাসী, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়, নিপীড়িত জাতিসত্তা, নারী ও 'অন্য যৌনতাভুক্ত' সাধারণ মানুষ রয়েছেন এই উদ্যোগে। সাধারণ মানুষের পাশাপাশি চলচ্চিত্র পরিচালক প্রদীপ্ত ভট্টাচার্য, সঙ্গীত শিল্পী মৌসুমী ভৌমিককে এই মঞ্চের সমর্থনে সংহতি জানাতে দেখা গেল।
১৫ জানুয়ারি দিনভর চলেছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। গান-নাটক-আবৃত্তি উপস্থাপিত হয়েছে। যার দায়িত্ব ছিল বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন ও ব্যক্তিবর্গের উপর।
ত্রিপুরা থেকে পড়াশোনার সূত্রে বাংলায় এসে এই মঞ্চে অনশনে বসেছেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস-কমের ছাত্রী কুসুমিতা চক্রবর্ত্তী। তিনি বললেন, “২০১৮ সালে ত্রিপুরায় বিজেপি সরকার ২৫ বছরের বাম সরকারকে হারিয়ে ক্ষমতায় এসেছিল বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি দিয়ে, কিন্তু সে সব পালন করছে না এখন। ১০৩২৩ জন শিক্ষক চাকরি হারিয়ে খোলা আকাশের নীচে ধর্নামঞ্চ বানিয়ে প্রতিবাদ করছেন ১ মাস হয়ে গেল, কিন্তু সরকারের কোনও হেলদোল নেই। তখন মানুষ পক্ষ বেছে নিতে গিয়ে ভুল করেছে। যার মাশুল এখন দিতে হচ্ছে। বাংলাতে এই বছরে ভোট, কিন্তু ভোট না দিতে পারলেও একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে সাধারণ মানুষের কাছে সঠিক পক্ষ তুলে ধরতে আজকে এই অনশন মঞ্চে এসেছি এবং ভবিষ্যতে এই মঞ্চের হয়ে অন্যান্য জায়গাতেও যাবো। আমরা চাই জনতা আমাদের মঞ্চকে ব্যবহার করে নিজেদের কথাগুলো বলুন।”
শুধুমাত্র ভোট নয়, ‘জনতাপক্ষ’ মোট ২২টি দাবিসনদ নিয়েও রাস্তায় নেমেছে। হাওড়া থেকে আসা পেশায় শিক্ষক সৌরভ, যিনি নিজের পদবী বললেন প্রকৃতিবাদী, তাঁর কথায়, “জনতাপক্ষ কোনও রাজনৈতিক মঞ্চ নয়, আমরা ভোটে লড়তে যাচ্ছি না এবং নির্দিষ্ট কোনও দলকে সমর্থন-ও জানাচ্ছি না। কিন্তু জনতাকে তাঁদের পক্ষ বুঝে নিতে সাহায্য করাই আমাদের মূল লক্ষ। আপাতত কলকাতায় শুরু হলেও আমরা ধীরে ধীরে তা গ্রামে ও শহরতলিতে পৌঁছে দেব, যাতে করে সাধারণ মানুষ এই বিষয়ে আরও সচেতন হয় এবং নিজের অবস্থান বুঝতে পারে।”
মঞ্চের মোট ২২টি দাবি। এর মধ্যে রয়েছে, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের বেসরকারিকরণ বন্ধ করতে অবিলম্বে আইন প্রণয়ন, স্বাস্থ্য ও শিক্ষাখাতে বরাদ্দবৃদ্ধির মত দাবি। দাবি তোলা হয়েছে, ১০০ দিনের কাজকে ন্যূনতম ২৫০ দিনের কাজে রূপান্তরিত করারও। রয়েছে নাগরিকত্ব আইন বাতিলের দাবিও।
সদ্য শুরু হওয়া এই মঞ্চের ভাবনাটি একেবারেই ভিন্ন রকম। ভবিষ্যতে তাঁদের কাজকর্মের পরিধি কতদূর এবং কোথায় বিস্তার লাভ করে, সেদিকে তাকিয়ে থাকাই যায়, অন্তত কিছুকাল।
গুরুচণ্ডালিও যদি ভাবছে 'বাংলা পক্ষ' নয়, জনতা পক্ষই বিকল্প, তবে ভালো অগ্রগমণ!
খুব ভালো উদ্যোগ !!আরো ।.আরো... অনেক ভাবা জরুরি ।...এটা ও ভাবা দরকার যে বর্তমান পরিস্থিতি তে আদৌ এই পচে যাওয়া ৭৪ বছরের তথাকথিত গণতন্ত্র কি আর চলবে ???মনেহয় না !!!!না !! না !!রন্ধ্রে রন্ধ্রে পাপ ঢুকেগেছে !!!চারটে খুঁটি তেই ঘুণ ধরা ।..পলেস্তারা করে লাভ ??? তাই একটা শেষ যুদ্ধ দরকার ।...অনেক হয়েছে ধাপ্পা বাজি ।...ডান ।..বাম ।.মধ্য ।..রাম ।..সব চেখে দেখেছে ভারতের জনতা !!!চলুন না সেই যুদ্ধ টা আরম্ভ করি !! গুণী জন ।...বুদ্ধিজীবী ।..ন্যায় বাগিশ রা বলবেন ।..""ওরে সময় হয় নি ।..যাসনে ।..অকালে প্রাণ যাবে ।..""কিন্তু অকালে তো অনেক প্রাণ গেলো ।..যাচ্ছে ।..যাবে ।...রেল লাইনেই মরে যাচ্ছে ।..হাসপাতালে মরছে ।..ধান খেতে সতীত্ত হারিয়ে মরছে।... অকারণে গুলি খেয়ে মরছে ।।আর যারা প্রানে মরছে না ।..শিরদাঁড়া বন্ধক দিয়ে মরে বেঁচে আছে ।..মৃত্যু কে তাহলে ভয় কেন ??? একটা ফ্যাসিস্ট শক্তি ।..হিটলার কেও লজ্যা দেবে ।..দাপিয়ে বেড়াচ্ছে নির্লজ্যের মতো ।...সহ্য করতে হবে ???না !!!!
আশা করি এটি জনগণের শ্রেনী সচেতনতা ও রাজনৈতিক সচেতনতাও বাড়াবে।