এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  আলোচনা  বিবিধ

  • রাজনীতি ও যৌনকর্মী

    প্রতিভা সরকার লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | বিবিধ | ১৩ মে ২০১৯ | ৩০০৮ বার পঠিত | রেটিং ৫ (২ জন)


  • এবার মে দিবসে মসজিদ বাড়ি স্ট্রিট থেকে শ্রদ্ধানন্দ পার্ক অব্দি দুর্বার মহিলা সমণ্বয় কমিটির ট্যাবলো সহযোগে বিরাট মিছিল এবং তারপর পার্কের সামনে প্রকাশ্য রাজপথে যৌনকর্মীদের আইপিটিএর বিখ্যাত গণসংগীতের সঙ্গে নাচ, আবৃত্তি এবং শ্রমিকের অধিকার দাবী করে বক্তৃতা মহানগরকে চমকে দিয়েছে। মানুষের মনে অনেক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। এই প্রচেষ্টা এবং দাবীকে স্বাগত জানিয়েছেন প্রচুর মানুষ। যারা ভ্রু কুঁচকেছেন তাদের মনেও অনেক প্রশ্ন। তার মধ্যে মুখ্য হচ্ছে, যৌনকর্মীকে সত্যিই শ্রমিকের মর্যাদা দেওয়া যায় কিনা। আইনী অধিকার পেলে তার পরিণাম কী হবে। সমাজের পক্ষে এইসব পদক্ষেপের ফলাফল শুভ হবে কি? আর গৌণ প্রশ্নের মধ্যে যেটি সবচেয়ে মাথা উঁচু করে থাকে সেটি হলো, এইসব পদক্ষেপের কারণে পেশাটিকে রোমান্টিসাইজ করা হচ্ছে কি না আর এই পেশা গ্রহণে তা পরোক্ষ উৎসাহ যোগাবে কি না।

    গৌণ দিয়ে শুরু করে মুখ্যে পৌঁছবার চেষ্টা করা যেতে পারে। আদিম এই পেশাটিতে ঠেলে দেবার পেছনে যদিও দারিদ্র, বিশ্বাসঘাতকতা, ঘর বাঁধবার দুস্তর স্বপ্ন, যা মরিয়াও মরে না-- এইগুলি এবং হিউম্যান ট্রাফিকিং প্রায় একশ পার্সেন্ট দায়ী, তবু কাঁচা পয়সার প্রাবল্য একটা বড় ব্যাপার। অনেক মেয়েই সেই লোভ কাটিয়ে উঠতে পারেনা। আর পুনর্বাসনের নামে তার সামনে যেসব প্রকল্প রাখা হয়, সেগুলোর অবস্থা অতি করুণ। দিনে দশ বার ঘন্টা সেলাই মেশিন চালিয়ে বা বিড়ি বেঁধে সে মাসিক যা ইনকাম করবে সোনাগাছিতে একদিনে তার বহুগুণ বেশি করবে। এই খানে ছোট্ট একটি তথ্য। একজন জনপ্রিয় যৌনকর্মী দিনে গড়ে প্রায় কুড়ি জন খদ্দেরের সন্তুষ্টি বিধান করে। এদের প্রায় প্রত্যেকের টাকায় তার আত্মীয় স্বজন প্রতিপালিত হয়। যেন সব লেডি দস্যু রত্নাকরের জীবনকাহিনী। পাপের ভাগ নয়, টাকার ভাগ চাই।
    পুনর্বাসনকে যারা সর্বরোগহর বলে মনে করেন তাদের জন্য আরো তথ্য। যৌনকর্মীর জীবন লাঞ্ছনাময়, কিন্তু আপেক্ষিক স্বাধীনতায় পরিপূর্ণ। নিজেকে ধ্বস্ত করে সে ইচ্ছেমত উপার্জন করতে পারে এবং সেই উপার্জন ইচ্ছামত খরচ করতে পারে, যা আজও অনেক চাকুরীরতা গৃহকন্যা, গৃহবধূর অধরা। সেই স্বাধীনতা হারিয়ে একটা পরাধীন নিস্তরঙ্গ জীবন তার পক্ষে কতটা কাম্য সে খতিয়ান নেওয়া হয়না। পুনর্বাসিত জীবনেও যৌন লাঞ্ছনা খুব সাধারণ ব্যাপার। একবার লাইনের মেয়ে জানলে প্রত্যাবর্তনকামীর আর উপায় নেই, প্রায় সবাই সুযোগ নিতে চাইবে। যে আত্মঘাতী জীবন সে পরিত্যাগ করতে চেয়েছে তার পারিশ্রমিকহীন পুনরাবৃত্তি তার কিরকম লাগতে পারে ! মুক্তির পিপাসা তাকে বদ্ধজলাতে ফিরিয়ে আনলে সে তো তা প্রত্যাখ্যান করবেই।

    তবে টাকা এবং স্ফূর্তির কারণে পেশাকে রোমান্টিসাইজ যৌনকর্মী নিজেও করে না। আড়কাঠি এবং উপভোক্তা ছাড়া এ পেশাকে রঙিন স্বপ্নের বুদবুদে আর কেউই বোধহয় সাজায় না। শরীরী উন্মাদনা দুদিনেই জুড়িয়ে যায়, পড়ে থাকে মেশিনের মতো অনুভূতিহীন একটি নারীদেহ যে স্বতঃস্ফূর্ত সাড়া দিতে অপারগ। কিন্তু টাকার বিনিময়ে সেটিকে নিয়ে যা খুশি করবার অধিকার জন্মায় উপভোক্তার। কতো যে বিকৃতি, কতো যে অনাচারের শিকার সেই মরা শরীর ! চড়া নেশা, অজস্র ব্যথা মরার পিল এবং এন্টি ডিপ্রেস্যান্টের ব্যবহার ছাড়া এ পেশায় টেঁকা যায় না। এছাড়া দুর্বার এবং আপনে আপের মতো এন জি ও দের নিরন্তর কাজের ফলে নানা ভয়ংকর রোগে আক্রান্ত হয়ে পচে মরবার ঝুঁকি যে কতো এটা এখন এ মহল্লায় সবাই জানে। ফলে শুরুতে ভোগলালসা যদি থেকেও থাকে, খুব শিগগির তার ফলাফল সামনে আসে এবং যৌনকর্মী নিজের কাজকে রোমান্টিসাইজ করা থেকে বিরত থাকতে বাধ্য হয়। কিন্তু আদতেই কি সত্যি অনুভূতিহীন এইসব মেয়েরা?

    ২ - স্বাধীনতা আন্দোলন ও যৌনকর্মীর রাজনৈতিক চেতনা।

    বিপ্লবী সতীশ চন্দ্র বসুর লেখায় জানা যায় ১৯০৭ সালে চিৎপুরের কিছু যৌনকর্মী বিপ্লবী যুবকদের আপ্রাণ সাহায্য করেছিলেন। যুগান্তরের বিরুদ্ধে মামলা চলাকালীন ব্রিটিশের আজ্ঞাবহ পুলিশ সূর্যাস্তের পর সভা নিষিদ্ধ করে। কিন্তু অনুশীলন সমিতির দামাল ছেলেদের আটকাবে কে ! সরকারি নির্দেশ উড়িয়ে দিয়ে তারা বিডন স্কোয়ারে সভা ডাকলেন। ব্রহ্মবান্ধব উপাধ্যায়ের বক্তব্যে সরকারবিরোধী লাভাবর্ষণ পুলিশের সইল না। তারা লাঠি চালানো চালু করল। পালটা আক্রমণে গিয়ে জনতা ইট পাথর ছুঁড়তে লাগলো। এমন সময় দেখা গেল এক অচিন্তনীয় দৃশ্য। মহল্লার বাড়িগুলির ছাদ থেকে যৌনকর্মীরা সমানে পুলিশের ওপর ইট ছুঁড়ছেন। আসন্ন গোলমালের আশঙ্কায় তারা হয়তো ছাদে ইটপাথর জড়ো করে রেখেছিলেন এবং কাদের ওপর তা ছোঁড়া হবে তাও ঠিক করা ছিল। আশ্চর্য কী, ১৯২১সালে এরাই দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জনের সঙ্গে সভা করে অসহযোগ আন্দোলনের সাহায্যার্থে সোনাগাছি অঞ্চলে ব্যাপক অর্থসংগ্রহ করেন।

    মানদা দেবীর (কাল্পনিক চরিত্র কিনা সঠিক জানা যায়নি ) শিক্ষিতা পতিতার আত্মচরিতে এই ব্যাপারটি বিস্তারিত বলা আছে। ১৩২৮ সালের শ্রাবণ সংখ্যা প্রবাসীতেও এই ঘটনার উল্লেখ আছে। যদিও প্রবাসী এই প্রচেষ্টাকে ঘৃণ্য মনে করতো এবং সমাজপতির দৃষ্টিকোণ থেকে এই ঘটনার বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। তাদের মতে বেশ্যাদের এই রাজনৈতিক ও সামাজিক ক্রিয়াকলাপ সমাজকে কতো নীচে টেনে নামাবে তা প্রমাণ করতে প্রবাসী ছিল মরীয়া। 'পাপ ব্যবসায়ে নিযুক্ত নারীকুলে'র যে কোন শুভ প্রচেষ্টাকেই কালিমালিপ্ত করার চক্রান্ত আজও কেমন বলবৎ সে প্রসঙ্গে পরে আসছি। তার আগে আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়ের প্রসঙ্গটি ব্যক্ত করি।

    ১৯২২ সালে উত্তরবঙ্গের বিধ্বংসী বন্যার মোকাবিলায় কলকাতায় আচার্যের সভাপতিত্বে বেঙ্গল রিলিফ সোসাইটি সংগঠনটি কাজ করতে শুরু করে। এর সদস্য পদ অলংকৃত করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ, দেশবন্ধু, আশুতোষ মুখোপাধ্যায়, ডাঃ নীলরতন সরকার ও আরো জ্যোতিষ্করা। আশ্চর্য নয় যে অল্প কিছুদিনের মধ্যেই এই কমিটি লাখ টাকারও বেশি সংগ্রহ করতে পেরেছিল। যৌনকর্মীদের তাতে প্রচুর অবদান ছিল, মাসিক বসুমতীতে এ কথা স্বীকার করে নেওয়া হয়। আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র জন্মশতবার্ষিকী পূর্তি স্মারক গ্রন্থে রতনমণি চট্টোপাধ্যায় একটি মর্মস্পর্শী ঘটনার বিবরণ দেন। রাজাবাজার বিজ্ঞান কলেজে আচার্যের সঙ্গে দেখা করতে এলো যৌনকর্মীরা। তাদের সঙ্গে টাকাপয়সা এবং কাপড়চোপড়ের বোঝা। এসো এসো, মা লক্ষ্মীরা -- আচার্যের মুখনিঃসৃত এই সাদর স্নেহসম্বোধনে সমাজপরিত্যক্তাদের মনে কী কৃতজ্ঞতার লহর উঠেছিল তা সহজেই অনুমেয়।

    সামাজিক, রাজনৈতিক কাজে এই মহিলাদের অংশগ্রহণ তখনও প্রবল সমালোচনা ডেকে এনেছিল, এখনো তাই। তবে তাতে যে এরা বাধাপ্রাপ্ত হননি, মে দিনের মিছিল তাইই বলে। তারকেশ্বর মোহান্তবিরোধী আন্দোলন, দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জনের মরদেহ নিয়ে মিছিল ইত্যাদিতে যারা অংশগ্রহণ করেছিলেন আজকের লড়াকু মেয়েরা তাদেরই উত্তরসূরি।
    এই সেদিনের ঘটনা। বামফ্রন্ট রাজত্বেও দুর্গাচরণ মিত্তির স্ট্রিটের মেয়েরা রাজনৈতিক মিটিং শেষে কর্মীদের প্রসারিত বস্ত্রখন্ডে স্বতঃস্ফূর্তভাবে টাকা পয়সার সঙ্গে স্বর্ণালঙ্কারও দান করে বসতেন। বাধ্য হয়ে পার্টি থেকে গয়না গ্রহণ নিষিদ্ধ করা হয়।

    এই লেখা শেষ হবার আগেই ইমেইলে দুর্বারের নিমন্ত্রণ পত্র এলো। আগামী ১৩ই মে মৌলালী যুবকেন্দ্রে দুর্বার মহিলা সমন্বয় কমিটির উদ্যোগে মানবাধিকার কর্মীদের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে কনভেনশন। দেশ জুড়ে গরীব আদিবাসী দলিত জনজাতি এবং উপজাতি মানুষের ওপর অন্যায় অত্যাচার ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে লড়াইতেও এরা আছেন। বোঝা যাচ্ছে রাজনৈতিক চেতনার প্রবহমানতায় কোন ছেদ পড়েনি। স্বাধীন দেশে কুশাসকের কাজকাম নিয়েও এরা সচেতন।

    কমিউনিস্ট ইস্তেহারের নীতিসমূহের জয়লাভ করার ব্যাপারে মার্কস ছিলেন নিশ্চিত এবং এই ব্যাপারে তার একান্ত নির্ভরতা ছিল শ্রমিক শ্রেণীর বুদ্ধিগত বিকাশের ওপর, যা নিশ্চিত ভাবে উঠে আসবে মিলিত লড়াই ও আলোচনা থেকে। যৌনকর্মী শ্রমিকের মর্যাদা পায়নি এখনো, কিন্তু তার বুদ্ধিগত বিকাশের পথটি সুগম হয়েছে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আলোচনা ও লড়াইয়ের ফলেই।

    ৩ - দাবীটি বহুমাত্রিক

    আইনি স্বীকৃতির দাবীটি বহুমাত্রিক। এটি বিশাল একটি দ্বৈততা যে যে পুরুষকে যৌনকর্মী পরিষেবা দেয়, সন্তুষ্টি বিধান করে, সেই পুরুষই তার লাঞ্ছনার মূল উৎস। ছলনাময় পিতৃতন্ত্রের বিরুদ্ধে তার মরীয়া জেহাদের একটি প্রকাশ হলো আইনি স্বীকৃতির লড়াই, একথার চমৎকার ব্যাখ্যা ক্যাথরিন এ ম্যাকিনন দিয়েছেন তাঁর বাটারফ্লাই পলিটিক্সের ল'জ পাওয়ার শীর্ষক অনুচ্ছেদে। তাঁর মতে আইন ও ক্ষমতা সবসময় হাত ধরাধরি করে চলে। আইন রচিত হয় ক্ষমতাবানেদের দ্বারা, বলেও ক্ষমতার কথা। আইনি অধিকার থাকা অর্থ সেই ক্ষমতার ছিটেফোঁটা হলেও ভাগ পাওয়া।
    আইনি ক্ষেত্রেও নারী ঐতিহাসিক ভাবে বঞ্চিত, আগ্রাসিত। ঐতিহাসিক ভাবে তাকে ভোটাধিকার বঞ্চিত করে রাখা হয়েছিল বহুকাল, এখনও আয়ের সমতা এবং বাঁচার জন্য প্রয়োজনীয় সমান সুযোগ সুবিধে তার অধরা। কন্যাভ্রূণ হত্যার কথা মনে রাখলে প্রতীতি জন্মাবে যে ভূমিষ্ঠ হবার আগে থেকেই সে চরম বঞ্চনার শিকার। সবচেয়ে কঠিন আর সবচেয়ে নোংরা কাজটির বরাদ্দ থাকে তার জন্যই। নারী যেন সর্বদা বেওয়ারিশ এবং অন্য কারো হাতের পুতুল, তাই তার শারীরিক লাঞ্ছনা ঘটতে পারে যখনতখন। লাঞ্ছনাকারী হতে পারে নিজের পরমাত্মীয় বা একেবারে অপরিচিত রাস্তার মানুষ। শরীর তার, কিন্তু জন্ম দেবার চয়েস প্রায়শই তার নয়। পরিষেবা এবং সমাজ বাঁচাবার নামে ঝুঁঝকো অন্ধকারে তাকে রাস্তার ধারে রোজ কিনতে পাওয়া যায়।

    এইজন্য ক্ষমতা সর্বদাই পুংলিঙ্গ। আর ক্ষমতাহীনতা আর সাধারণ নারী আজও সমার্থক। অর্ধেক আকাশকে এই অসাম্য গেলানো হয় তারই সুরক্ষা ও সম্ভ্রমের নামে। এ কথা ঠিক যে আইন প্রণয়ন করে এ সমস্যা মিটবে না। বরং আইনের নামে এই বঞ্চনা টিঁকিয়ে রাখাই রেওয়াজ। আইনের সাহায্য নিয়েই অনেক দেশে পর্নোগ্রাফি তৈরি হয়, যেখানে নারীর ভূমিকা মনুষ্যত্বের চরম অবমাননা, মেয়েদের গর্ভের অধিকার দেওয়া হয়না, এবোরশন করলে মৃত্যুদণ্ড অব্দি জায়েজ করা হয়, গার্হস্থ হিংসার অস্তিত্ব অস্বীকার করা হয় বিবাহ দেবতার সৃষ্টি এই যুক্তিতে। আইনের প্রশ্রয়ে এইসব অসাম্য যখন শুধু টিঁকেই থাকে না, তার আরো রমরমা হতে থাকে তখন আইনী ব্যবস্থাকে পিতৃতন্ত্রের চাল বলেই মনে হবে, আইনকে ক্ষমতার মদগর্বী ভাষা। এই পক্ষপাতপূর্ণ আইনি ব্যবস্থার মধ্যে আইনের বাধা জয় করেই একজন যৌনকর্মী আইনি অধিকার, এক্ষেত্রে শ্রমিকের মর্যাদা পেতে পারে। তাই তার বহুমাত্রিক লড়াইটি বহু ব্যঞ্জনার জন্ম দেয়।

    ৪ - যৌনকর্মীরা কি শ্রমিকের অধিকার পাবার যোগ্য?

    শ্রমিক উৎপাদন প্রক্রিয়ার সঙ্গে ওতোপ্রোতভাবে জড়িত থেকে শ্রমশক্তি ব্যয় করে উদ্বৃত্ত মূল্য তৈরি করে। মালিক সেই উদ্বৃত্ত চুরি করে শ্রমিককে শোষণ করে। এটি নিও লিবেরালিজমের কালে রমরমিয়ে এসে পড়া সার্ভিস সেক্টরের ক্ষেত্রেও প্রোযোজ্য। শ্রমচুরি চালু না থাকলে বিপুল লাভের হালফ্যাশনের শপিং মলগুলিতে বারো ঘন্টা এক ঠ্যাঙে দাঁড় করিয়ে রেখে চার থেকে ছ' হাজার মাইনে দেওয়া যায় না সেলসম্যান ও গার্ডদের। যৌনকর্মীরাও এই সার্ভিস সেক্টরের অন্তর্ভুক্ত। এবং তাদের শোষণ বহুমুখী, রাষ্ট্রপোষিতও বটে। খদ্দের থেকে শুরু করে বাড়িউলি মাসী, রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলার ধারকবাহকরা তাকে নিংড়ে নেবার জন্য একপায়ে খাড়া। তার আধার কার্ড, প্যান কার্ড, ভোটার কার্ড, ট্যাক্স দেবার দায়, সবই থাকবে, কিন্তু সাধারণ নাগরিকের অধিকার থেকে সে সদাবঞ্চিত। এই শোষণ ও বঞ্চনা কমাবার জন্য রাষ্টের ভূমিকা খুব গুরুত্ববহ। ক্ল্যাসিকাল মার্ক্সিজমের ধারণা অনুযায়ী রাষ্ট্র যৌনকর্মীর সমস্ত দায়ভার গ্রহণ করতে বাধ্য। ফলে তার পেশার গুরুত্ব থাকবে না। কালে তা অবলুপ্ত হবে। কিন্তু বাস্তব হল এই যে মানব সভ্যতার চাকা হাজার হাজার বছর ধরে গড়িয়ে গেলেও এই সমস্যার কোন সমাধান দেখা যায়নি। বরং এক বিপুল মানবীগোষ্ঠীর কপালে কলঙ্ক ও শোষণের রঙ গাঢ়তর হয়েছে। যতদিন অব্দি না আদর্শ সমাজ ও রাষ্ট্র গঠিত হয়, ততদিন কি তাকে এই দুর্বিষহ জীবনযাত্রা বহন করতে হবে ? নাকি শ্রমিক বলে স্বীকার করে নিয়ে রাষ্ট্রিক দায়িত্ব বৃদ্ধি করবার দায় নেওয়া হবে ? পুলিশি অত্যাচারমুক্ত জীবন, ছুটি ও ভাতার সাম্য, অবসরকালীন সুযোগসুবিধে কি তার প্রাপ্য হতে পারে না ? যে সামাজিক স্বীকৃতির কাঙাল সে, তার প্রথম ধাপ তার পেশার সঙগায়ণ। সে যৌনশ্রমিক। অনেকের মতে তার দেওয়া পরিষেবা নাকি সমাজের স্বাস্থ্য ঠিক রাখবার পক্ষে জরুরী। কিন্তু তাতে করে শোষণ ও বঞ্চনায় ভরপুর পেশাটির ঝুঁকি কমে না। তার ঘাড়ে ঠ্যাং রেখে শ্রমের উদবৃত্ত আত্মসাতে কেউ কম যায় না। এইসবেরই বিরুদ্ধতায় সংগঠিত হয়েছিল এবারের মে- দিনের মহামিছিল।

    তবে একথা ঠিক, পৃথিবীর যে যে দেশে এ পেশার পূর্ণ আইনি স্বীকৃতি আছে, সেখানেও সামাজিক স্বীকৃতি বা সুরক্ষার ব্যাপারটি খুব স্পষ্ট নয়। শারীরিক হিংসা আর আত্ম-অবমাননার যুগলবন্দী যে পেশায় তাকে কি সত্যি আর পাঁচটা পেশার সঙ্গে এক করে দেখা সম্ভব? তবু প্রত্যেক মানুষ বাঁচে তার আত্মপরিচয়ে। যে পরিচয়ে তাকে পঙ্কবদ্ধ জীব হিসেবে আরো মাটিতে মিশে যেতে হবে, অথচ সেই সমাজেই তার পেশার দোসররা মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকবে, সেই সামাজিক পরিচয়কে খানিক সহনীয়, কিছুটা মর্যাদামন্ডিত করে তোলবার এই লড়াই সমীহ আদায় না করে ছাড়ে না।

    এতোখানি অসহনীয় অসাম্যের বিরুদ্ধে এই অসম লড়াইতে আপনি কাদের পাশে থাকবেন, সে ঠিক করবার দায় আপনারই।


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • আলোচনা | ১৩ মে ২০১৯ | ৩০০৮ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • প্রতিভা | ***:*** | ১৫ মে ২০১৯ ০১:২৩78589
  • একটা খটকা। আমার পাতাতেই ২৫ শেয়ার রয়েছে। এখানে ০ দেখাচ্ছে কেন !
  • pinaki | ***:*** | ১৫ মে ২০১৯ ০৪:৫৮78590
  • এই ফেবুর শেয়ারিং প্লাগইনটায় গণ্ডগোল আছে মনে হয়।
  • pi | ***:*** | ১৫ মে ২০১৯ ০৫:৫৯78591
  • আরে অমিও অনেকবার শেয়ার করেও ০ দেখাচ্ছিল, এখন আবার ১৫০!!
    অন্য লেখাতেও দেখেছি, হঠত করে ০ বা আগের থেকে কম। পঠিততেও তাই, কমে যায় দুমদাম!
    মামুকে বহুবার বলেছি!!
  • তন্বী হালদার | ***:*** | ১৫ মে ২০১৯ ০৬:২১78592
  • পুরোটাই মন দিয়ে পড়লাম। আমি যৌন পেশাকে শ্রম এর মর্যাদা দেওয়ার থেকে আইন করে বন্ধ করে পূর্ন বাসন করাটা জরুরি আমার মত
  • অর্জুন অভিষেক | ***:*** | ১৫ মে ২০১৯ ০৮:২৩78593
  • কাল পড়ব । খুব ইন্টারেস্টিং তথ্যমূলক লেখা মনে হচ্ছে।
  • Ishan | ***:*** | ১৫ মে ২০১৯ ০৯:০৫78594
  • কী গন্ডগোল ধরে ফেলেছি। কিন্তু বোঝানো মুশকিল। আপাতত এইটায় ক্লিক করলেই শেয়ার সংখ্যা দেখতে পাবেন।
    http://www.guruchandali.com/default/2019/05/13/1557737739539.html

    (আমি কোনো ম্যাজিক করিনি, এটাই লেখার লিংক। ফেবু থেকে ক্লিক করে এলে দেখবেন অন্য লিংক দেখাচ্ছে। সেটাই সব্বোনাশের কারণ)
  • debu | ***:*** | ১৫ মে ২০১৯ ১১:৩৭78595
  • যৌন পেশা কোনো দিন ও বন্ধ করা যাবেনা। হাজার হাজার বছরের পেশা , এক দিনে আইন করে বন্ধ কর যায়্না।
    গূগলে দেখে নিন it is legal in many counties
    if you stop it then rate of divorce , sex crime and rape will increase
  • | ***:*** | ১৫ মে ২০১৯ ১১:৪৪78596
  • প্রতিডাদি , রাজনীতি তে অংশগ্রহণ পার্ট টা নিয়ে আলাদা করেও লিখতে পারেন।, আর মে দিবসের ছবি?
  • কল্লোল | ***:*** | ১৬ মে ২০১৯ ০১:২২78597
  • এটা বহু পুরোনো তর্ক। সম্ভবতঃ ১৯৯৮/৯৯ থেকে কথাটা উঠেছিলো, যখন প্রথমবার বেশ্যা বা পতিতা বা দেহপোজীবীর বদলে যৌনকর্মী কথাটা চালু করা হয়, দুর্বারের উদ্যোগে। সেবারই প্রথম কলেজ স্কোয়ার থেকে ধর্মতলা অবধি মে দিবসের মিছিল হয় শ্রমিকের অধিকারের দাবীতে। সেবারই প্রথম তৃতীয় লিঙ্গের মানুষেরাও সেই মিছিলে শামিল হয়েছিলেন। যৌন কর্মীরা পরিসেবাকর্মী, সেই অর্থে শ্রমিক। এই যুক্তিটাও - মূলত দারিদ্র্য জনিত কারণে বা পরিস্থিতির শিকার হয়ে এঁরা এই পেশা বেছে নেন - বহু আগেই খন্ডিত। কে হায় হৃদয় খুঁড়ে সাফাই কর্মী হতে ভালোবাসে? কিংবা ডাস্টবিন কুড়ানি কি বাবুর বাড়ির কাজের লোক? কোন যৌনকর্মী কি তার মেয়েকে নিজের পেশায় আনতে চায়? না, চায় না। কিন্তু একই প্রশ্ন একজন রাজমিস্ত্রির যোগানদার বা মুদি দোকানের কর্মচারীকে জিজ্ঞাসা করুন - একই উত্তর পাবেন। তাই, যৌনকর্ম একটি পেশা, এবং যৌনকর্মীরা পরিসেবা শ্রমিক।
  • বিপ্লব রহমান | ***:*** | ১৬ মে ২০১৯ ০২:০৬78598
  • কল্লোল দা যথার্থই বলেছেন, পরিষেবা অর্থে যৌনকর্মীরা শ্রমিক। আইনী স্বীকৃতির পাশাপাশি তাদের পুনর্বাসন জরুরি।
  • কল্লোল | ***:*** | ১৬ মে ২০১৯ ০৪:১০78599
  • যৌনকর্মীদের পুনর্বাসন নিয়ে খুব ঝামেলা। আমি এমন একটা টিমে ছিলাম যারা এই বিষয়টা নিয়ে যৌনকর্মীদের সাথে মত বিনিময় করছিলো। সেটাও ৯৮৭/৯৯ সাল।
    এঁরা বলছেন যে, ওঁরা বেশীরভাগই হয় নিরক্ষর বা খুবই স্বল্প শিক্ষিত (ক্লাস ৩/৪, বড়জোর ৮/৯)। অনেকেরই বয়স ৩০এর উপর। এই অবস্থায় নতুন পেশায় যাওয়াটা চাপের। যৌনকর্মী হিসাবে এঁদের গড় মাসিক আয় ৩/৪ থেকে ৭/৮হাজার টাকা(৯৮/৯৯ সালের কথা)। এই টাকায় এঁদের সংসার - হ্যাঁ - সংসার চালাতে হয়। সংসার মানে ছেলে-মেয়ে, অনেক ক্ষেত্রেই ছেলে-মেয়ে-বর, আরও অনেক ক্ষেত্রে ছেলে-মেয়ে-বাবা-মা-ভাই-বোন।
    এমন কোন জীবীকা যাতে এঁরা এঁদের বর্তমান আয়ের সমান বা বেশী রোজগার করতে পারেন ভেবে ওঠা বেশ ঝামেলার (ওনাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা/বয়স ইঃ ধরে নিয়ে)।
    সেটা না হলে এঁদের উপর নির্ভরশীল মানুষেরা বিপদে পড়ে যাবেন, ও মেয়েরা আবার এই পেশাতেই চলে আসবেন। সেটা ওঁরা চান না। ন্য সব হতদরিদ্র মানুষদের মতো ওঁরাও চান ওঁদের পরবর্তী প্রজন্ম ভালো চাকরী করুক, ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার হোক।
  • Soumya Sahin | ***:*** | ১৬ মে ২০১৯ ০৪:১০78600
  • প্রতিভাদি,
    এই লেখাটার মূল প্রতিপাদ্য যদি হয় যৌনকর্মীদের শ্রমিকের অধিকার দেওয়া, তাহলে আমি দ্বিমত পোষণ করব।
    তুমি খুব স্পষ্ট ভাষাতেই লিখেছ যে মূলত দারিদ্র্য জনিত কারণে বা পরিস্থিতির শিকার হয়ে এঁরা এই পেশা বেছে নেন। Desperate times necessitate desperate decision makings. কিন্তু সেক্ষেত্রে তাদের পেশা বেছে নেওয়ার অধিকার দেওয়ার মাধ্যমে ফ্রী চয়েসের প্রাথমিক পূর্বশর্ত লঙ্ঘিত হচ্ছে। কারণ তাদের চয়েস টা আদৌ ফ্রী নয়, বরং exercised under extreme coercion.
    সেক্ষেত্রে প্রশ্ন উঠতে পারে যৌনপেশা বন্ধ করার উপায় কি হতে পারে।
    আমার উত্তর হলো উপভোক্তাকে ধর্ষণ আইনের আওতায় আনতে হবে। কারণ যৌন পেশায় ক্রেতা এবং বিক্রেতার মধ্যে মারাত্মকভাবে পাওয়ার ডিফারেন্টিয়াল এক্সিস্ট করে। তাই আপাত দৃষ্টিতে যৌনকর্মীটি কনসেন্ট দিচ্ছে মনে হলেও আদতে সেটা তার অসহায়তা। এই কনসেন্টের কোনো মূল্য থাকা উচিত নয় আইনের চোখে। সর্বোপরি, যৌনব্যবসায় জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তির ক্ষেত্রে এক্সট্রিম জুডিসিয়াল এক্টিভিসম প্রয়োজন।
    একবার যৌনতার সংগঠিত বাজারটা ভেঙ্গে দিতে পারলে তবেই এই যুদ্ধ জেতা সম্ভব।
  • Soumya Sahin | ***:*** | ১৬ মে ২০১৯ ০৪:১৭78601
  • যৌনতার বাজারটা ভয়ঙ্করভাবে exploitative, এই প্রাথমিক পয়েন্টে একমত হলে উপভোক্তাকে ধর্ষণের অপরাধে criminalize করা downright legitimate। কারণ সে কনসেন্ট কিনছে, আর সম্মতি কোনো দ্রব্য নয়। This tantamount to abuse of market power.
    এই আইন চালু হলে যে ডেটরেন্ট ফ্যাক্টর তৈরি হবে তাতে করে বাজারটাই আর থাকবে না।

    রাজমিস্ত্রির কাজ আর যৌনকর্মীর কাজ এক নয় - রাজমিস্ত্রির কাজে শ্রম কেনা হয় আর যৌনকর্মীর ক্ষেত্রে কনসেন্ট বা সম্মতি - অতএব it qualifies for rape.

    ঠিক যে যুক্তিতে নাবালিকা স্ত্রীর সাথে যৌন সংসর্গ qualifies for rape। কারণ সেক্ষেত্রে স্ত্রীর সম্মতি অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে "কেনা" হয়।
  • কল্লোল | ***:*** | ১৬ মে ২০১৯ ০৪:৩৫78602
  • সৌম্য।
    দারিদ্রের কারনে বাধ্য হয়ে অনেকেই অনেক পেশায় যেতে বাধ্য হয়। বাবুর রাড়ি কাজ, রাস্তায় ময়লা কুড়ানো, সাফাই কর্ম, পাড়ার মুদী দোকানের সহকারী, মোট বওয়া এরকম হাজারো কাজ আছে যা মানুষ বাই চয়েস করে না, বাধ্য হয়েই করে।
    "যৌনতার বাজারটা ভয়ঙ্করভাবে exploitative " - কোন শ্রম বাঅজর "ভয়ঙ্করভাবে exploitative" নয়?
    যৌন কর্মে গ্রাহক শুধু সম্মতি নয়, যৌন পরিসেবাও কেনেন। দুজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ পরষ্পরের সম্মতিতে যৌনতায় লিপ্ত হলে সেটা ধর্ষন কিভাবে হয়?
    আপনি বলবেন, সম্মতি দিতে "বাধ্য" হয়েছে। যে সাফাই কর্মীটি ম্যানহোলের ময়লায় ডুবে তা পরিষ্কার করেন তিনি কি আনন্দে সম্মতি দেন? তাহলে সেটাও কি ভয়ানক অত্যাচার ও যিনি করাচ্ছেন তার পক্ষে শাস্তিযোগ্য অপরাধ নয়?
  • শক্তি | ***:*** | ১৬ মে ২০১৯ ০৫:৪০78603
  • যৌনকর্মীদের শ্রমিকের মর্যাদা দেওয়ার প্রশ্নে জটিল বিতর্ক উঠবেই ।আত্মঘাতী পেশায় যাদের উপার্জন করতে হয় তাদের নিয়ে ভাবনা করার কাজে ও অনেক বাধা ।বর্তমান নিবন্ধ সেই দুস্তর পথের একটি সিঁড়ি ।বহু কৌণিক সমস্যা নিয়ে ভাবতে হবে ।
  • কল্লোল | ***:*** | ১৬ মে ২০১৯ ০৭:৩৮78604
  • অনেকে আইনী ব্যবস্থার কথা বলছেন। এইখানে আমি একমত নই। আইনী ব্যবস্থা দিয়ে যৌনপরিসেবার বাজার বন্ধ করা যাবে না - বেআইনীভাবে চলবেই। সমাজে মুক্তযৌনতা চালু হলে যৌনপরিসেবার বাজার উবে যাবে, কারন তখন যৌনপরিসেবা আর পণ্য থাকবে না। যতদিন তা না হচ্ছে ততদিন তুলনামূলক স্বচ্ছ থাকার জন্য এই পরিসেবাকে আইনী স্বীকৃতি দিতে হবে। আপনি আজকের সিনেমার টিকিটের দাম নিয়ে ভাবুন। সিনেমা হিট করলেই টিকিটের দাম বেড়ে যায়। এই ফ্লেক্সেবল দাম আইনী হয়ে যাওয়াতে সিনেমার টিকিট "ব্ল্যাক" করা বন্ধ হয়ে গেছে।
    যৌনপরিষেবার বাজার অতি পুরানো বিষয়। বিশেষ করে সমাজে যবে থেকে মোনোগ্যামী মান্যতা পেয়েছে, তবে থেকেই এই বাজারের উদ্ভব। মানুষ স্বাভাবিকভাবে পলিগ্যামিক। তাই এই চাহিদা থেকেই যাবে। এটা মুছে যেতে পারে মুক্তযৌনতার সমাজে।
  • কল্লোল | ***:*** | ১৬ মে ২০১৯ ০৭:৪১78605
  • কেউ কেউ বলছেন - যৌন ব্যবসাকে ইন্ডাস্ট্রি স্ট্যাটাস দিলে কায়েমী স্বার্থ জাঁকিয়ে বসবে।
    কায়েমী স্বার্থ!!! এখন এই প্রায় বেআইনী ব্যবস্থাতেই যে পরিমান কায়েমী স্বার্থ (পুলিশ, লোকাল রাজনীতি, পাচা চক্র ইঃ) সক্রিয়, সেটা কমানোর একটা উপায় আইনী স্বীকৃতি দেওয়া। তাছাড়া এঁরা সংগঠিত হলে কমবে, যেটা দুর্বার করছে। আর মুক্ত বা গুপ্ত যে কোন অর্থনীতিতেই এ বাজার থাকবে - কারন মুক্তযৌনতা নেই।
  • কল্লোল | ***:*** | ১৬ মে ২০১৯ ১১:৫৯78607
  • স্বাতী।
    অনেকেই মুক্তযৌনতাকে আলাদা একটা বিষয় হিসাবে ভাবছেন। তা তো হতে পারে না। একটা সমাজে নারী-পুরুষের বৈষম্য, অর্থনৈতিক বৈষম্য, জাতপাতের বৈষম্য থেকে যাবে আর একই সঙ্গে মুক্তযৌনতাও এসে যাবে - এটা তো হয় না।
    আমি যেটা বলতে চেয়েছি যে, আইন করে যৌনপরিসেবার বাজার বন্ধ করা যাবে না। তাতে বিপরীত ফল হবে। এখন মোটের উপর যে অবস্থা চলছে। বরং যৌনকর্মীরা শ্রমিকের স্বীকৃতি পেলে, যৌনকর্ম পরিসেবা হিসাবে আইনী স্বীকৃতি পেলে, গোটা প্রক্রিয়াটা অনেক বেশী স্বচ্ছ হয়ে উঠবে। তাতে কায়েমী স্বার্থ টলে যাবে, অপ্রাপ্তবয়স্ক নারী পাচার রোখা যাবে। এইডস ও অন্যান্য যৌনরোগ প্রতিহত করা যবে। যৌনকর্মীদের সন্তানদের সুস্থ জীবন দেওয়া যাবে।

    আর এই পরিসেবাকে চিরতরে মুছে দিতে গেলে - বৈষম্যগুলোকে দূর করতে হবে। তবেই মুক্তযৌনতা।
  • স্বাতী রায় | ***:*** | ১৬ মে ২০১৯ ১২:৫৬78606
  • মোটের উপর আমি কল্লোলের সঙ্গে একমত - শুধু একটা জিনিস বুঝলাম না । সমাজে মুক্তযৌনতা চালু হলে যৌনপরিসেবার বাজার উবে যাবে - এটা কি সত্যি? মানে আজকে যে বাবুটি এক শহর থেকে অন্য শহরে এসে কিছু মস্তি নেওয়ার জন্য মেয়ে খোঁজেন, মুক্তযৌনতা চালু হলে তিনি আর সেটা খুঁজবেন না? মুক্তযৌনতার সঙ্গে সঙ্গে কি ক্ষমতা-অসাম্য বা coercion এর অন্যান্য কারণগুলো লোপ পাবে বলে মনে করা হচ্ছে?
  • Ekak | ***:*** | ১৭ মে ২০১৯ ০৩:০৫78608
  • ফ্রী সীক্স এর ডেফিনিশন কী ?

    উইথ কনসেন্ট ফ্রীলি যৌনতার অধিকার যদি হয়, তাহলে , পোস্ট ৩৭৭ ও পোস্ট এডাল্টারি ডিক্রিমিনালাইজেশন , ভারতে বর্ষ ফ্রী সীক্স থেকে জস্ট আর এক স্টেপ দূর।

    সেটা হল, ম্যারাইটাল রেপ কে ক্রিমিনালাইজ করা।

    তাই নয় কী ?
  • রঞ্জন | ***:*** | ১৭ মে ২০১৯ ০৫:২৫78609
  • ্স্বাতীর বক্তব্য ভাববার মত।
    আসলে সমস্যাটি বহুমাত্রিক। ক্ষমতা -অসাম্য আইনী মর্যাদা দিলেই লোপ পাবে না । কিন্তু পেশায় খানিকটা স্বছতা আসবে। ফলে শোষণ কিছুটা কমবে। স্বাস্থ্য ও বীমার ফলে সুরক্ষা বাড়বে। মজুরি খানিকটা নিয়ন্ত্রিত হবে। পুলিশ ও মস্তানদের হুড়ো এবং লুট অনেকটা কমবে।
    তবে আমার মনে হয় কল্লোল 'মুক্ত যৌনতা' কথাটি অন্য এবং ব্যাপক অর্থে বলেছে।
    আপনি যা বলছেন তা হল যৌনতার মুক্ত বাজার। বাবুর ঘুরে ঘুরে কেনাকাটি মস্তি।
    কিন্তু কল্লোল যে মুক্ত যৌনতার কথা বলছে তা মনে হয় -- দু'জন এডাল্ট মানুষের পারস্পরিক সহমতিতে সহবাসকে সমাজের অন্যায় না মনে করা, চোখ না রাঙানো ।
    তাহলে বাজারে গিয়ে যৌনতৃপ্তি খোঁজার ব্যাপারটা কমে যাবে। এবং এই পেশাগত বাজার ক্রমশঃ শুকিয়ে যাবে।
    যেমন মোবাইল এবং ইমেলের ফলে পোস্টকার্ড, টেলিগ্রাম উঠে গেছে।
    অবশ্যি কল্লোলই ভাল বলতে পারবেন আমি ওঁর কথা কতটা বুঝেছি।
  • PM | ***:*** | ২২ মে ২০১৯ ০৩:০৫78611
  • "সিনেমা হিট করলেই টিকিটের দাম বেড়ে যায়। এই ফ্লেক্সেবল দাম আইনী হয়ে যাওয়াতে সিনেমার টিকিট "ব্ল্যাক" করা বন্ধ হয়ে গেছে।"--- আগে ব্ল্যাক এর টাকা ডিস্ট্রিবিউট হতো অনেক লোকাল লোকের মাঝে। এখন আইনক্স এর মালিক নিজেই ব্ল্যাক করে --- আর সেই টাকা চলে যায় বম্বে
  • কল্লোল | ***:*** | ২২ মে ২০১৯ ১২:১৭78610
  • আমি মুক্তযৌনতা বলে যৌনতার মুক্তযৌনতা বাজার বোঝাই নি। মুক্তযৌনতা অত থে যৌনতার উপরে সামাজিক বিধিনিষেধ না থাকার কথা বুঝিয়েছি।
  • Malabika Roy | ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২২ ২০:০৮511662
  • মুক্ত যৌনতা যদি যৌন পরিসেবার বাজার বন্ধ করতে পারে তাহলে আমেরিকা আর ইউরোপ এর যে দেশ গুলিতে যৌনতার উপর সামাজিক খবরদারি নেই সেখানে কি যৌন পরিষেবার বাজার উঠে গেছে বা সংকুচিত হয়েছে ? পরিসংখ্যান কি বলে ?
  • Kuntala Lahiri-Dutt | ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১৭:২২511672
  • কি আশ্চর্যের ব্যাপার যে তিরিশ-চল্লিশ বছর ধরে আমরা একই আলোচনার মধ্যে আছি। 
    সত্যি কথা হোল এই যে বর্তমান কালে যৌন কর্ম আর সোনাগাছির ঘরে ঘরে বন্দি নেই। ভস্ম এই পঞ্চশরের ধুলো এখন আমাদের আশপাশের ঘরের আনাচ-কানাচে ছড়িয়ে পড়েছে। তার হরেক রকম রূপ। 
  • Jaydip | ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১৮:০১511674
  • আমার কাজের অনেক পুরোনো দিন মনে পড়ে গেল, কখনও মুখোমুখি গল্প করব। 
  • Falguni Mazumder | ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২২ ২২:১৩511680
  • পড়ে অনেক কিছু জানতে পারলাম। ধন্যবাদ আপনাকে
  • Falguni Mazumder | ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২২ ২২:১৪511681
  • দারুন লেগেছে
  • Falguni Mazumder | ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২২ ২২:১৬511682
  • সুন্দর  লাগল
     
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভ্যাবাচ্যাকা না খেয়ে মতামত দিন