‘প্রাণদন্ডপ্রাপ্ত আসামীরা অধিকাংশই খুব গরীব' : অনুপ সেনগুপ্তের সাথে সাক্ষাৎকারে উত্তম সেনগুপ্ত, অনুবাদঃ দময়ন্তী
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ | ২১৮১ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
মৃত্যুদন্ড সম্পর্কিত গবেষণা প্রকল্প (ডেথ পেনাল্টি রিসার্চ প্রজেক্ট) সম্পন্ন করতে সময় লেগেছে প্রায় ১৬ মাস, ৩০ লাখ টাকা, নেওয়া হয়েছে ৪০০ সাক্ষাৎকার। এই প্রকল্পের অধিকর্তা, দিল্লীর ন্যাশনাল ল' ইউনিভার্সিটির অ্যাসিসটেন্ট প্রফেসার অনুপ সুরেন্দ্রনাথের সাথে কথা বলেছেন উত্তম সেনগুপ্ত, তারই কিছু অংশ।
শিক্ষকদিবস – কিছু অ-সুখস্মৃতি : দময়ন্তী
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭ | ১৩১৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ৬
ক্লাস সিক্সের ঘরটা মস্ত বড় হল্, প্রায় ৭০ জন ছাত্রী অনায়াসে ধরে যায়, কিন্তু অত ছাত্রী তো হয় না এই স্কুলের সিক্সে| ফাইভে উঠে যারা পরীক্ষা দিয়ে অন্য কোনও স্কুলে চান্স পায়, তারা সবাই চলে যায়| যারা ফেল করে থেকে যায়, তাদের সাথে সাধনাদির প্রাথমিক বিভাগ থেকে আসা মেয়েরা আর কোনও স্কুলে ক্লাস সিক্সে কেউ তিনবার ফেল করলে যখন সেখান থেকে টিসি দিয়ে দেয়, তারা তখন এখানে এসে সিক্সে ভর্তি হয়| অন্য সব স্কুলেই নিয়ম হল একই ক্লাসে তিনব্ছরের বেশী থাকতে দেওয়া হয় না, তৃতীয়বারেও ফেল করলে টিসি দেওয়া হয়| ভাগাড়পাড়া স্কুলে অবশ্য এমন নিয়ম নেই, যতবার খুশী ফেল করে থাকা যায় এখানে| শুধু তিনবারের বেশী হয়ে গেলে সারা বছরের মাইনে ২৪ টাকার জায়গায় ৩৬ টাকা হয়ে যায়| এই হলঘরে বড়সড় পাঁচটা জানলা, মোটা মোটা লোহার শিক লম্বালম্বি বসানো| দুটো শিকের মধ্যের ফাঁক দিয়ে একটা রোগা মেয়ে দিব্বি গলে বেরিয়ে যেতে পারে| ক্লাসের পাশেই একটা কচুব্ন| আসলে ওটাও একটা মস্ত মাঠ, তবে শুধু মাঝ্খানে অনেকটা অংশ পরিস্কার আর পশ্চিম, উত্তর আর দক্ষিণে কচুবনে ভর্তি, পূবদিকে আমাদের স্কুলের মাঠ| দুপুরে ছেলেদের স্কুলের ছেলেরা নাকি দুটো মাঠজুড়েই খেলে| পশ্চিমের কচুবন ঘেঁষে একটা মস্তবড় শিমূলগাছ, এপ্রিল মাসভর লাল টকটকে ফুলে ভরে থাকে| কিন্তু নীচে পড়ে থাকা শিমূলফুলগুলো খেয়াল করলে দেখা যায় কেমন বিশ্রীমত দেখতে, উঁচুতে যখন ফুটে থাকে শুধু লাল টকটকে পাপড়ি দেখা যায়, তাই সুন্দর দেখায়, মাটিতে খসে পড়লে আসল রূপটা দেখা যায়| ক্লাসের পেছনে পাকা রাস্তা, রিকশা, সাইকেল চলে অনবরত| লোকজন বাজার করে ফেরে, ডোরাকাটা নাইলনের ব্যাগের মুখ দিয়ে উঁকি মারে কচুর লতি কি মুলোশাকের ডগা, ডেইলি প্যাসেঞ্জাররা উর্ধশ্বাসে দৌড়ায় ট্রেন ধরতে| রাস্তাটার পাশেই সেই যে সেই পুকুরটা, ক্লাস থ্রীয়ের জানলা দিয়ে যাকে দেখতাম| সোমবার সকালে এই পেছনের জানলা দিয়েই আমরা নজর রাখতাম রেখাদি আসছেন কিনা| রেখাদি আমাদের ক্লাসটিচার, সোমবারে কলকাতা থেকে আসেন তাই ট্রেন থেকে নেমে এদিক দিয়ে আসতে দেখা যায়, অন্যদিন বাড়ী থেকে আসেন, সে এদিক দিয়ে দেখা যায় না| ওঁকে আসতে দেখলেই আমরা লক্ষ্মী শান্ত হয়ে বই নিয়ে বসে যাই| উনি এসে ক্লাসে গন্ডগোল হতে দেখলে এলোপাথাড়ি বেত চালান, অনেকটা পুলিশের লাঠিচার্জ করার কায়দায়, কারুর চোখে লাগল কি নাকে ঢুকে গেল সেসব খেয়ালও করেন না|
সিজনস অব বিট্রেয়াল – তৃতীয় পর্ব : দময়ন্তী
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক | ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৭ | ১৪১৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ২০
রাইটার্সের সামান্য কেরাণী প্রমদাকান্ত, বড় দুই মেয়ের বিয়ের ভাবনাতেই কাহিল হয়ে থাকেন, আবার একটা মেয়ে৷ একটাও কি পাশে দাঁড়াবার মত কেউ জন্মাতে নেই! আর এই তো দেশের অবস্থা! যখন তখন স্বদেশী আন্দোলনের ঢেউ আছড়ে পড়ছে! আরে তোরা পারবি ঐ শক্তিশালী ইংরেজদের সাথে? আর সত্যি তো ইংরেজরা না দেখলে এই দেশটার কি হাল ছিল সে তো জানাই আছে৷ এইসব ভাবনার মধ্যে মানদার চাঁছাছোলা গলা ভেসে আসে ‘অ রুনু মায়ের কাছে একটু বোস দিকি, আমি খুকীটারে একটু পোস্কার করে নিই’৷ জলের স্পর্শে নবজাতিকা তীক্ষ্ণকন্ঠে কেঁদে ওঠে আর মানদার গজগজ চলতে থাকে ‘থাক থাক আর কাঁদে না – ঐ তো মেয়ের ঢিপি – তার আবার অত আদিখ্যেতা কিসের’? সাড়ে ছ বছরের রুনু ঠিক বুঝে যায় এই বোনটা একেবারেই অবাঞ্ছিত৷ ৩ বছরের ঝুনু অতশত বোঝে না, বোনকে দেখতে চায়, হাত বাড়াতে যায় – মানদার ঝঙ্কারে ভয় পেয়ে সেও বোধহয় নিজের মত করে বুঝেই যায় যে বোনটা এমনকি তার চেয়েও বেশিঅনাকাঙ্খিত৷ সরলাবালার জ্ঞান আছে কিনা বোঝা যায় না, চুপচাপ পড়ে থাকেন৷শুধু অনিলাবালা বলতে থাকেন ভগবান যা দেন তাই হাত পেতে নিতে হয়৷ অশ্রদ্ধা করতে নেই৷ তবে বাড়িতে জামাই আছে, তাই গলা তেমন চড়ে না৷
সিজনস অব বিট্রেয়াল - প্রথম পর্ব : দময়ন্তী
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক | ১৪ মে ২০১৭ | ১৩৪৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৭
এইসময় তো বাবার ব্যাঙ্কে অনেক কাজ থাকে, চেয়ার থেকে ওঠার সময়ই থাকে না , এইসময় হঠাৎ বাবা বাড়ী এল কেন --- এইসব ভাবতে ভাবতেই যুঁইয়ের স্নান সারা হয়, গোয়ালঘরের পাশ দিয়ে ঘুরে অন্দরের ঘরে এসে ঢুকে চুল আঁচড়ায়, কাজল দিয়ে কপালে একটা টিপ পরে ছোট্ট – আধা অন্ধকার ঘরের দেরাজ আয়নায় নিজেকে দেখে একবার এপাশ ফিরে, একবার ওপাশ ফিরে। মা ঘরে ঢোকে বাচ্চুকে কোলে নিয়ে, ওকে দেখেই চাপা গলায় একবার বাইরের বৈঠকখানার ভেতরদিকের দাওয়ায় আসতে বলে। যুঁই ভারী অবাক হয়, বাইরের লোক থাকলে বৈঠকখানার দিকে ওর যাওয়া মানা তো, মা’কে প্রশ্ন করার সাহস ওর নেই, যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই মা’র চোখ পড়ে ওর কপালের টিপের দিকে, চাপা গলায় প্রায় ধমকে মা ওকে টিপটা মুছে বাইরে যেতে বলে। যুঁইয়ের চোখে জল আসে – কোথাও তো একটু বাইরে যায় না কতদিন হল, ইস্কুলে যাওয়াও বন্ধ, বাড়ীর মধ্যে একটা ছোট্ট মুসুর দানার মত টিপ – তাও মুছতে হবে! মা ততক্ষণে অধৈর্য্য হয়ে এগিয়ে এসে নিজের আঁচল দিয়ে ঘষে ঘষে মুছে দেয় টিপটা – একটু পিছিয়ে গিয়ে দেখে নেয় কপালে টিপের কোনও চিহ্ন থেকে গেল কিনা – বাচ্চু হাত বাড়ায় যুঁইয়ের কোলে আসবে – মা হাত টেনে নিয়ে শক্ত করে বাচ্চুকে কোলে চেপে ধরে হাঁটা দেয়। যুঁই কেমন আবছামত বুঝতে পারে কোথাও একটা কিছু গোলমাল হয়েছে, বড় গোলমাল।
সিজনস অব বিট্রেয়াল – পঞ্চম পর্ব : দময়ন্তী
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক | ২৯ নভেম্বর ২০১৭ | ১৪৭৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৮
তিনভাইবোনে মা’কে নিয়ে বাজিতপুরের দিকে রওনা হয়ে গেল। মা বিশেষ হাঁটতে পারছেন না, গরুর গাড়িতে যুঁই রইল সঙ্গে যদি হঠাৎ খারাপ লাগে শরীর। যোগেশ এককথায় আকরম আলির প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছেন, দেশ ছাড়ার কথা তিনি ভাবতেও পারেন না। তাঁর অনাগত সন্তানকেও তিনি তাঁর পিতৃপুরুষের দেশেই বড় করে তুলতে চান। তবে মনীশের সিদ্ধান্তে তিনি বাধা হবেন না, আলিসাহেব ও তাঁর ভাইকে লোক দিয়ে জঙ্গলবাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছেন। সেইদিনই মীর্জাপুর স্ট্রীটের মেসবাড়ির বাসিন্দারা কিছু বেশী উত্তেজিত ছিলেন; কাগজে বেরিয়েছে উত্তরপ্রদেশের অযোধ্যায় মসজিদের ভিতরে রামলালার মূর্তি পাওয়া গেছে -- গোবিন্দগোপাল জোরে জোরে বলেন দেখেছ ‘নাথুরাম গডসের লোকেরা বহুদিন ধরেই বলে আসছিল ওইটা আসলে অযোধ্যায় দশরথের প্রাসাদ ছিল, দেখলে তো তোমরা। ব্যাটা বাবর ধ্বংস করেছিল’ ননী ফুট কাটে ‘হ্যাঁ কৌশল্যার আঁতুড় ছিল ওখানে’। মহা ঝামেলা বেধে যায়। কেউ বলে বাবর নয় ঔরঙ্গজেব মন্দির ধ্বংস করে মসজিদ বানিয়েছিল, কেউ বলে না বাবর। এর মধ্যেই ম্যানেজারবাবু এসে বলে যান আজকে আর রাজাবাজারের দিকে না যাওয়াই ভাল বলা তো যায় না ---। সুহাস মনে মনে ভাবে এই খবরগুলো নিশ্চয়ই পূর্ব পাকিস্তানে পৌঁছায় নি, হে মা ঠনঠনে কালী এসব খবর যেন ওদিকে না পৌঁছায় ......
মাতৃত্ব যখন ফাঁস : দময়ন্তী
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১৭ মার্চ ২০১৭ | ৯৯৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৮
আমাদের দেশে এখনও তেমন পর্যাপ্ত সমীক্ষা হয় নি এই নিয়ে। সন্তানের প্রতি অত্যধিক কেয়ার ও অত্যধিক প্রত্যাশা যে সন্তানের গলায়ই ফাঁস হয়ে চেপে বসে এর বেশ কটি উদাহরণ আমার কাছের পরিচিত ও আত্মীয়মহলেই দেখা।এঁদের কেউ কেউ নিজের পড়াশোনা, গান, কেরিয়ার সব ছেড়ে সন্তানের সাথে সর্বদা লেগে থাকেন, প্রতিটি ক্রিয়াকর্মের পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসেব নেন এবং প্রত্যাশামাফিক না হলেই অনর্থ বাধান। কেউ বা আবার তেমন কিছু ছাড়েন নি, মানে প্রথম থেকেই নিজের জন্য তেমন কোনও ভুবন গড়ার চেষ্টাই করেন নি, সন্তান ও তার/তাদের ভবিষ্যতই তাঁর নিজস্ব ভুবন ধরে নিয়েছেন। এইবার সন্তান যত বড় হতে থাকে ততই তার ওপরে এই আকাশচুম্বী প্রত্যাশার বিরূপ প্রতিক্রিয়া হতে থাকে।
সিজনস অব বিট্রেয়াল – দ্বিতীয় পর্ব : দময়ন্তী
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক | ১২ জুলাই ২০১৭ | ৩১৫৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩২
তিনতলার ঘরে মস্ত বড় পালঙ্কের এক কোনায় বসে যুঁই আপনমনে সরু সরু দুটো কাঁটা আর খুব শক্ত আর সরু একলাছি সুতো দিয়ে নক্সা বুনছিল; একে বলে কুরুশের কাজ, নতুন শিখেছে ও নমিতা, ছোটমাসীমার দেওরের মেয়ের কাছে, বেশ দিব্বি ছোট ছোট কয়েকটা কাপডিশ বসাবার নকশাদার ঢাকনি বানিয়েও ফেলেছে। পুর্ববঙ্গে থাকতে ওরা জানত শুধু উলবোনা, চটের আসন বোনা আর টুকটাক রুমালে সুতো দিয়ে নকশা করা। ছোটমাসীমার নিজের চারটিই ছেলে কিন্তু তাঁর দেওর ভাসুরদের বেশ ক’টি মেয়ে, সকলের সাথেই যুঁইয়ের বেশ ভাব হয়ে গেছে এই কয়দিনে। মাঝে একবার খবর পেয়ে সাঁতরাগাছি থেকে সেজমাসীমা তাঁর বড়ছেলেকে নিয়ে এসে দেখে গেছেন যুঁইকে। কিন্তু তাঁকে কেমন অচেনা লাগে ওর, কিরকম অদ্ভুত ভাষায় কথা বলেন উনি। ছোটমাসীমাদের ভাষাও যুঁইদের থেকে খানিকটা আলাদা, কিন্তু তাও অনেকটাই মিল আছে, কিন্তু সেজমাসীমার ভাষা, উচ্চারণ সব কেমন আলাদা হয়ে গেছে। সেজমাসীমা আসবেন তাই দিদিমণিও এসেছিলেন খড়দা থেকে। দিদিমণি বলেন ‘তুই অ্যাক্করে এদেশী হইয়া গেছস শেফালী, তর কথাবার্তা আর আমরার দ্যাশের নাই’ সেজমাসীমা দিব্বি হেসে কেমন করে বলেন ‘যা বোলোচো মা। অ্যাগদম তোমার জামাইয়ের ভাষায় কতা কইচি।’
সিজনস অব বিট্রেয়াল – চতুর্থ পর্ব : দময়ন্তী
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক | ১০ অক্টোবর ২০১৭ | ১৩২৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ১১
আমরা আখের খেতে লুকিয়ে ছিলাম ওরা আমার কাকাকে মারল, আমার মামাকে জিন্দা জ্বালিয়ে দিল আমি আখ জড়িয়ে পড়ে ছিলাম ওরা ভাবল আমি মরে গেছি, ওরা বহেনা জমনাকে উঠিয়ে নিয়ে গেল --- বাদমে হমনে ভাগা--- ভাগতা হুয়া এক বুডঢা দাদাজি’নে মুঝে কান্ধোমে ব্যায়ঠাকে রফুজি ক্যাম্প রাখকে আয়া। বলে আর কাঁদে – কাঁদে আর বলে একই কথা ঘুরেফিরে আর শক্ত করে ধরে থাকে কোমরের কাছে প্যান্টটাকে। অমরিন্দরের চোখ আরো তীক্ষ্ণ হয় – প্যান্ট উনি খোলাবেনই। এবার ঘোমটার মধ্য থেকেই সরলার ঈষৎ কঠিন কণ্ঠ শোনা যায়। অমরিন্দরের উপস্থিতিতে মাথার ঘোমটা নেমে এসেছে থুতনি পর্যন্ত, তিনি সিংজিকে বাড়ি যেতে বলেন। ছেলেটিকে দিয়ে তিনি খাবার শর্তে কাজ করিয়েছেন, এই ভর দুপুরবেলা সে তাঁর অতিথি, তাকে না খাইয়ে তিনি কোথাও যেতে দেবেন না। আর ছেলেটি বাচ্চা হলেও ছেলে বটে, চার চারটি মেয়ের সামনে তার প্যান্ট খোলার মত অসভ্য ব্যপার তাঁর বাড়ির চৌহদ্দিতে তিনি হতে দেবেন না। থমকে যান সিংজি, কী যেন বলতে গিয়েও শেষ পর্যন্ত নত হয়ে অভিবাদন করে বেরিয়ে যান তিনি। সরলা এগিয়ে গিয়ে সদর দরজা বন্ধ করে হুড়কোটা তুলে দেন। জামুকে হাত ধারে বসিয়ে দেন থালার সামনে --- ছেলেটা সব সাপটে মেখে নেয় একসাথে --- খায় গবগবিয়ে --- যেন কত দিন মাস খায় নি বুঝি বা।
সিজনস অব বিট্রেয়াল – ষষ্ঠ পর্ব : দময়ন্তী
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক | ১০ এপ্রিল ২০১৮ | ২৩৪৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ৭
জামু ছেলেটা খায় খুব তৃপ্তি করে, যাই দেন সব চেটেপুটে খেয়ে নেয় শুধু মাছটা ছাড়া। মাছ দিলে কেমন যেন খিমচে খিমচে মাছ ছাড়ায় কাঁটা থেকে, খেয়াল করে দেখলে ওর অস্বাচ্ছন্দ্য নজরে পড়ে বৈকী। তা হিন্দী কথা যারা বলে, তারা অনেকেই মাছটাছ মোটে খায় না জানেন সরলা। কিন্তু এ ছেলে ঠিক নিরামিষাশি তো নয়। একদিন মাংস হয়েছিল, ইতস্তত করে জিগ্যেস করেছিলেন মাংস খাবে কিনা? শুনে মুখটা খুশিতে ঝলমলিয়ে উঠেছিল, খেয়েওছিল ভারী তৃপ্তি করে। মাংস খায় যখন নিশ্চিন্তেই মাছ দিয়েছিলেন সরলা। হয়ত ওদের কানপুরে মাছ পাওয়া যেত না, তাই খেতে শেখে নি ভাবেন আর চেষ্টা করেন ডাল তরকারি বেশি করে দিতে। মাছটা নাহয় আর দেবেন না ওকে, ভাবতে নিজের কাছেই মাথা হেঁট হয়ে যায় তবু না ভেবে পারেন না – ছেলেটা মাছ না খেলেও একটু সাশ্রয় হয় বৈকি। বাড়ির কথা কিছুই বলতে চায় না ছেলে, জিগ্যেস করলেই ওর চোখ মুখ কাঁদোকাঁদো হয়ে যায় আর খুব অস্থির হয়ে ওঠে, একদিন না খেয়েই দৌড়ে চলে গেছিল, তারপর থেকে খুব সাবধানে ওর সাথে গল্প করেন। ঝুনু টুনুকেও বলে দিয়েছেন বাড়ির কথা জিগ্যেস না করতে। তা বাদে কতশত গল্পও যে জানে ছেলে! দিল্লীতে থাকার সময় রোজ নাকি সকালে উঠে স্টেশানে চলে যেত, সেখানে গিয়ে ট্রেনে উঠে জায়গা রাখত। পাকিস্তান থেকে আসা ট্রেন ফিরতি যাবার জন্য ছাড়ত অনেক পরে – ততক্ষণ জামুরা দলবেঁধে উঠে জায়গা দখল করে বসে থাকত। পরে পাকিস্তানযাত্রী সব ‘রহিস আদমী’রা এলে তাদের কাছে পাঁচ টাকা করে নিয়ে সিট বিক্রি করে দিত।
সিজনস অব বিট্রেয়াল – সপ্তম পর্ব : দময়ন্তী
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১২ জুন ২০১৮ | ১৭০১ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৯
দেশ স্বাধীন হয়ে আলাদা হল তার আগে থেকে মারপিট কাটাকাটির খবর আসছে, হরিবাবু, নীরদবাবুরা সব বলল ‘জাউল্যা, যুগী, মাইশ্যরার কুনো ডর নাই। হেগরে ত এমনেও লাগব। ডর হইল আমরার।‘ তা প্রথম অনেকদিন, এই গেলবছর অবধি চরণ নির্বিবাদেই ছিল, চার পুরুষের জেলে তারা। জমা নেওয়া ভাগের পুকুর আছে একটা, নরশুন্দাতেও মাছ ধরে কিছু, সেই বিক্রি করেই দিব্বি চলছিল। কিন্তু এই বছরের গোড়ার দিক থেকে নানারকম খবরে ভয়ে ভয়েই থাকে খানিকটা। অন্য কোথায় সব ইন্ডিয়া থেকে আসা নতুন লোকেরা এখানকার মুসলমানদের সাথে মিশে নাকি হিন্দু জেলেদের জমা নেওয়া পুকুরে আর মাছ ধরতে দিচ্ছে না, মারধোর করে তাড়িয়ে দিচ্ছে। সত্যি মিথ্যে জানে না, খালি চুপচাপ নিজের কাজ করে যায়, বুঝে উঠতে পারে না কোথায় যাবে? ইন্ডিয়ায় তো ওদের কেউ নেই। কী করেই বা যাবে? সেখানে গিয়ে দুটো ভাতের যোগাড় হবে কী করে?
সিজনস অব বিট্রেয়াল – অষ্টম পর্ব : দময়ন্তী
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১০ আগস্ট ২০১৮ | ১৭১৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৫
রমেশ একটু চিন্তায় পড়ে যান, এখন পূর্ব পাকিস্তান যাওয়া মানেই বিপদের আশঙ্কা পদে পদে। অমলা বা পারুকে সঙ্গে নেবার প্রশ্নই নেই, অমরকেও না নেওয়াই উচিৎ। তাঁর যদি কিছু হয়েই যায় পথে তবে অন্তত বাকীরা বেঁচে থাকবে। কিন্তু তাঁরও কি যাওয়াটা উচিৎ? আর উচিৎ হলেও আদৌ সম্ভব হবে কি? অথচ যোগেশ একা ঐ দেশে ছোট্ট শিশুটার মুখে প্রথম ভাত তুলে দেবে আর বংশের মধ্যে সবার বয়োজ্যষ্ঠ তিনি, তাঁরই তো এই অনুষ্ঠান করার কথা --- আর তিনিই দূরদেশে চুপচাপ বসে থাকবেন। অমলা বোঝেন রমেশের মনে দ্বন্দ্ব চলছে, বলেন ঐ দূর বিদেশে মেজ ঠাকুরপো একলা একলা কি যে করছে! রমেশ কেমন চমকে ওঠেন ‘বিদেশ!?’ কোনটা বিদেশ আর কোনটাই বা স্বদেশ তাঁদের আজ? ময়মনসিংহ তাঁদের উর্দ্ধতন তিন কি চার পুরুষের জন্মভূমি, তাঁদের ও। পৈত্রিক উত্তরাধিকার যা কিছু, সবই ময়মনসিংহে, যা আজ ‘বিদেশ’ হয়ত বা ‘শত্রুদেশ’ও। আর এই কলকাতা শহর, এখানে তো বাসাবাড়ি।
মেয়েলি ছুটিছাটা : দময়ন্তী
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২৫ মার্চ ২০১৮ | ১৪২৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৫
অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমজীবি মহিলারা এই ছুটি পাবেন না –প্রথমদিকে এই যুক্তির ব্যবহার দেখে একটু হাসি পেলেও পরে এর বহুল ব্যবহার দেখে মনে হল নাঃ এই নিয়েও দুই কথা বলা দরকার। হ্যাঁ একদম ঠিক কথা, অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমজীবি মহিলারা এফওপি লিভ পাবেন না। ঠিক যেমন তাঁরা আসলে কোনওরকম ‘লিভ’ই পান না, ‘সিক-লিভ’ বা ‘মেটার্নিটি লিভ’ও নয়, তেমনি এটাও পাবেনই না ধরেই নেওয়া যায়। তেমন অসুস্থ হলে সবজিওয়ালিমাসি বাজারে বসতে পারেন না, বিকল্প কেউ বসবার না থাকলে তাঁর অনুপস্থিতি আসলে তাঁর বেরোজগারি হয়ে দাঁড়ায়। একই কথা প্রযোজ্য দিনমজুর, ইটভাঁটার কর্মী ইত্যাদিদের জন্যও। পরিচারিকাদের অবস্থা তুলনামূলকভাবে একটু ভাল। তাঁরা ছোটখাট অসুস্থতায় সবেতন ছুটি পান অধিকাংশ ক্ষেত্রেই, তবে সন্তানধারণকালে যতদিন পারেন কাজ করেন এবং যখন পারেন না, চেষ্টা করেন পরিচিত কাউকে কাজটি দিয়ে যেতে যাতে ফিরে এসে আবার পাওয়া যায়। প্রসবকালীন ছুটির পয়সা খুব কমক্ষেত্রেই পান। আমার পরিচিত গৃহকর্মসহায়িকাদের মধ্যে (সংখ্যাটি একশোর উপর) মাত্র ৪ জন এই সুবিধা তাঁদের নিয়োগকারি গৃহ থেকে পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন। সত্যি বলতে কি অনেক বাড়িতে একটু বয়স্ক কিম্বা নিতান্ত অল্পবয়সী পরিচারিকার খোঁজ করা হয়, যাতে দুম করে সহায়িকাটি প্রসবকালীন ছুটি চেয়ে না বসেন। অসুস্থতাও যদি দীর্ঘকালীন এবং/অথবা খরচসাপেক্ষ হয়, পরিচারিকার কাজটি যাবার সমূহ সম্ভাবনা থাকে। কারণ এখানেও ‘আনপেইড লিভ’ বলে কিছু হয় টয় না। একজন পরিচারিকার আর্থারাইটিস বা চোখে ছানি পড়লে তাকে বিদায় করে আরেকজনকে রেখে নেওয়া হয়।
তা এগুলো তো আমাদের সব সুযোগসুবিধার সাথেই দিব্বি সহাবস্থান করছে। কিছুক্ষেত্রে এমনকি অফিসে কর্মরত মহিলাটি নিজের গৃহকর্মসহায়িকাটির কাছে বছরের ৩৬৫ দিনই উপস্থিতি আশা করেন উইকডেজে তিনি বেরিয়ে যান এবং ছুটির দিনগুলি তাঁর একমাত্র বিশ্রামের সময় বলে। তো এই অসঙ্গতিগুলি চোখের সামনে দেখলেও আমরা কখনো ভদ্রতার খাতিরে, কখনো বা অন্যের ব্যপারে মাথা না গলানোর সুশিক্ষায় বিশেষ কিছু বলি না। তাহলে অফিসে কর্মরত মহিলাটি যদি এফওপি লিভ পান এবং তাঁর পরিচারিকাটি না পান, তাহলে খুব নতুন কিছু বৈষম্যের সৃষ্টি হবে না। বরং অসংগঠিত ক্ষেত্রের দাবিদাওয়া আদায়ের ক্ষেত্রে এই দাবিটিও জুড়ে নেওয়া যায়, নেওয়া উচিৎ।
সিজনস অব বিট্রেয়াল – নবম পর্ব : দময়ন্তী
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক | ০৬ অক্টোবর ২০১৮ | ২১৪২ বার পঠিত | মন্তব্য : ২০
জামুকে দেখলে টুনুর মনে হয় ইতিহাস বইয়ের খানিক টুকরো যেন হেঁটে চলে বেড়াচ্ছে। কতরকম অজানা সব গল্প যে বলে। সরলা নেমে দেখেন ছেলে বেশ পরিস্কার শার্ট প্যান্ট পরে ভব্যিযুক্ত হয়ে এসেছে। খাবার বেড়ে সামনে বসে কথা বলতে বলতে খেয়াল করলেন এও আজ একটু অন্যমনস্ক। হুঁ, হাঞ্জি আর ঘাড় নেড়েই কাজ চালাচ্ছে। ওর হিন্দিবাংলা মেশানো তড়বড়ে কথা আজ নেই। খেয়ে হাত মুখ ধুয়ে, থালা গেলাস মেজে ধুয়ে রেখে কিছু কাজ আছে কিনা জিগ্যেস করে তারপর ইতস্তত ভাবে জানায় ওর একটা আর্জি আছে মা’জির কাছে। ঢোলা শার্টের পকেটে হাত গলিয়ে তুলে আনে একটা কাগজে মোড়া পাতলা কি যেন। ঐ জিনিষটা সে সরলার কাছে রেখে যেতে চায়, ওর থাকার কোন ঠিক নেই, এটা আরেকজনের জিম্মা করা জিনিষ, চুরি হয়ে গেলে উপরওলার কাছে অপরাধী হয়ে যাবে জামু। সরলা বলেন যার জিনিষ তাকেই দিয়ে দিলে তো হয়। জামু নাকি জানেই না সে মানুষ কোথায়। আবার ওর মুখ থমথমে হয়ে যায়, চোখদুটো কেমন অচেনা।
অহৈতুকী : দময়ন্তী
বুলবুলভাজা | গপ্পো | ২৭ অক্টোবর ২০১৮ | ২২৩৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ২৫
মঙ্গলার ওদিকে এক গোঁ কিছুতেই পণ দিয়ে বিয়ে করবে না সে। এই নিয়ে কম অশান্তি হয় নি মা বাপের সাথে। এমন এক পাত্রের মাকে মঙ্গলা বলে ফেলেছিল ‘আপনারা শহরে গিয়ে মন্দিরের সামনে আঁচল পেতে বসতে পারেন তো, শুনেছি দিনে পাঁচ ছয় হাজার রোজগার হয়। ও দুই তিন মাস বসলেই আপনার বেশ ক লাখ ...’ কথা শেষ করতে পারে নি, মায়ের ঠাস সপাটে নামে মঙ্গলার গালে। ছোট বোনটাকে ধরে সামলায় নিজেকে, শান্ত পায়ে গিয়ে মাছমাংস কোটার বঁটিটা আর একগাছা নারকেল দড়ি এনে মায়ের সামনে ধরে বলে ‘হাত পা বেঁধে গলা কাটো আমার, নাতো পণ দিলে আমি তোমাদেরই কেটে ফেলব হয়ত।’
উচ্ছেদ ও নয়াবসতের ছত্তিরিশ কাহন : দময়ন্তী
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০৬ জানুয়ারি ২০১৪ | ৯৪০ বার পঠিত | মন্তব্য : ৯
নিজের খুন হওয়ার পিছনে পাখির যে একেবারে কোনও অবদান নেই, এমনটা কিন্তু বলা যাবে না| খুনের মত এতবড় একটা বেআইনি কাজে সেও যে ইন্ধন যুগিয়েছিল তার খবর পাওয়া যাবে রাজারহাট এলাকায় বৌ-ঝিদের এককাট্টা করে সে-ই যে প্রথম জমি বাঁচানোর আন্দোলন গড়ে তোলার চেষ্টা করেছিল সেই বিবরণ খুঁজে কিম্বা খুঁড়ে বের করতে পারলে| তার প্রায় হিস্টিরিয়াগ্রস্ত হাত পা ছোঁড়া, এক দালালকে একসময় ঝাঁটাপেটা করার ইতিবৃত্ত জন্ম দিতে পারে নি কোনও বড়্সড় আন্দোলনের| তাই পাখি হঠাৎ লাশ হয়ে যেতে তার সোয়ামি বালু সর্দার ছাড়া আর কেউ তেমন নড়েচড়ে বসে নি| আর বসে নি বলেই অঞ্চলের বা পার্টির কেউ ভাবেই নি 'প্রোমোটার হটাও, পার্টি বাঁচাও' শ্লোগানের মধ্যে এই পাখি বৃত্তান্তটি ঢুকে পড়বে| এমনিতে বালুর অভিযোগ থানায় জমা হওয়ার পরও কেটে যাওয়ার কথা অনেক দিনরাত, আসামী ফেরার এবং কোর্টের ডেট বছরে, দুবছরে একবার করে পড়তে পড়তে আসামীটির একসময় ৬৩ বা ৭৭ বছর বয়সে সিরোসিস অব লিভার বা উচ্চরক্তচাপজনিত কারণে নির্বিঘ্নে মারা যাওয়ার কথা, কিন্তু বৃত্তান্তটির এমন সরল হওয়ার পথে বাধ সাধল ননী সাহা| রিয়েল এস্টেট ব্যবসায় তার ঘোর প্রতিদ্বন্দী এবং পার্টির 'ভদ্র লবির নেতা'কে নাস্তানাবুদ করতেই ননীর নাকটি তেরচা করে ঢোকে পাখি উপাখ্যানে|
সোয়াইন ফ্লুয়ের এপিসেন্টার থেকে : দময়ন্তী
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১৬ আগস্ট ২০০৯ | ৮৯৭ বার পঠিত
পুণেতে সোয়াইন ফ্লু "আসছে-আসছে' , "এই এসে গেল' চলছে সেই মে' মাস থেকে। ৫ই মে সকালের কাগজ খুলে আমরা জানলাম যে এয়ারপোর্টে অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছে, বিদেশ থেকে আগত যাত্রীদের সম্পর্কে। আন্তর্জাতিক বিমানের যাত্রীদের নেমে একটা বড়সড় প্রশ্নপত্রের সব প্রশ্নের উত্তর দিতে হচ্ছে, তারপর মেডিক্যাল অফিসাররা সেই উত্তর খতিয়ে দেখে যাত্রীদের ছাড়ছেন এয়ারপোর্ট থেকে। সাথে ছবি ছিল, সমস্ত পুলিশকর্মী ও স্বাস্থ্যকর্মীদের নাকে মুখে রুমাল বাঁধা তিনকোণা করে। একই খবরের নীচের দিকে ছিল ভোপালের কাছে জলনাতে একসাথে ২০টি শুয়োর মারা গেছে, কিছু বাচ্চা শুয়োর খুব অসুস্থ। স্বাস্থ্যদপ্তর তাদের ওপর কড়া নজর রাখছেন। খবরটা অধিকাংশ লোক খেয়াল করে পড়েনই নি। যাঁরা পড়েছিলেন, তাঁরাও কেউ তেমন গুরুত্ব দেন নি। গোটা মে মাসটা এরকমই চলে গেল তা-না-না-না করে। জুনও প্রায় যাই যাই, তখনই হ্ঠাৎ প্রথম সোয়াইন ফ্লু আক্রান্তের খোঁজ পাওয়া গেল।
কর্পোরেট ফেমিনিজম – শিষ্ট মেয়ে নির্মাণ প্রকল্প : দময়ন্তী
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১৭ মার্চ ২০২০ | ২৫২৮ বার পঠিত | মন্তব্য : ৫
শেরিল স্যান্ডবার্গ, ‘লিন ইন’ এর প্রবক্তা, কর্পোরেট জগতে বেশ জনপ্রিয়। শেরিলের অনেকগুলি প্রস্তাবের মধ্যে একটা হল মেয়েদের পেশাগত ক্ষেত্রে এগোতে হবে একরোখাভাবে, তার জন্য তথাকথিত ‘মেয়েলি’ অসুবিধেগুলিকে বেশী গুরুত্ব দিলে হবে না। বরং একদল মেয়ে একে অপরকে পরামর্শ দিয়ে সাহায্য করবে এবং যৌথভাবে এগিয়ে যাবে নেতৃত্বের দিকে। এছাড়াও আরো কিছু আছে, এই লেখায় সেগুলো বাদ থাক। তা এমনিতে ধারণা হিসেবে এটি শুনতে বেশ ভাল। সত্যিই ত, আমাদের দেশে লোকে যেখানে কথায় কথায় বলে ‘মেয়েরাই মেয়েদের শত্রু’, সেখানে একদল মেয়ে একে অপরের সাথে পরামর্শ করে এগোবে সেই ধারণাটা এঁদের কাছে, এমনকি যাঁরা নিজেদের উদার মনে করেন, তাঁদের কাছেও খুবই আকর্ষণীয়। আবার লোকের আরো ধারণা হল যে মেয়েরা সাধারণত নির্ভরশীল এবং সমস্যাসঙ্কুল পরিস্থিতিতে নিজে নিজে সিদ্ধান্ত নিয়ে কাজ করতে স্বচ্ছন্দ বোধ করে না। কাজেই মেয়েরা যদি সমস্যায় পড়লে কারও মুখাপেক্ষী না হয়ে, নিজেদের মধ্যে পরামর্শ করে সমস্যা সমাধান করে ফ্যালে, এগিয়ে যায় তার থেকে ভাল আর কি হতে পারে?
করোনার দিনলিপি - বিষাক্ত বসন্তদিনে : দময়ন্তী
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২৫ মার্চ ২০২০ | ৩৪৫১ বার পঠিত | মন্তব্য : ৮
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের রিপোর্ট থেকে জানতে পারছি পুণে শহরে সুরক্ষাকর্মী সরবরাহের জন্য কমবেশী ৯০০ সংস্থা আছে, সুরক্ষাকর্মীর সংখ্যা ৫০,০০০ এর মত। এঁদের অনেকেই আসেন মারাঠাওয়াড়া, লাতুর, বিহার আর ছত্তিশগড়ের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে। পুণেতে সংক্রমণের সংখ্যা বাড়ার খবরে ভয়ের চোটে এঁদের অনেকের বাড়ি থেকে বারবার ফোন আসছে ফেরত যেতে বলে। এঁরা যাচ্ছেনও। ওই খবর অনুযায়ীই কিছু সংস্থা অতিরিক্ত বেতন কবুল করেও কর্মী ধরে রাখতে পারছে না। বলাবাহুল্য সুরক্ষাকর্মীদের নিজেদের সুরক্ষার বন্দোবস্ত বিশেষ নেই। যাঁদের অনবরত লোকের ব্যাগ, ল্যাপটপ, আইডি কার্ড হাতে নিয়ে দেখতে হয়, খাতায় লিখে সই করিয়ে নিতে হয় আগন্তুকের, তাঁদের বরাদ্দ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই স্বচ্ছভারত অভিযানের বেঁচে যাওয়া কিছু ফিনফিনে পাতলা মাস্ক, আর কোথাও কোথাও একটি শেষ হতে বসা হ্যান্ড স্যানিটাইজারের বোতল। অতএব ভয় দ্রুত গ্রাস করছে তাঁদের।
দুষ্কালের পদধ্বনি : দময়ন্তী
বুলবুলভাজা | গপ্পো | ১৯ জুন ২০২০ | ৩২৮১ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৩
ফোনটা হাতে নিয়ে বসার ঘরে বসে ফেসবুক, খবরের সাইট খোলে রুখু। আসামের ডিটেনশান ক্যাম্পে আটক মহিলাদের নিয়ে একটা প্রতিবেদন। পাহারাদার, কর্তাব্যক্তিদের ধর্ষণ তো সাধারণ ব্যপার সেখানে। পড়তে পড়তে রুখুর হাত পা অবশ হয়ে আসে, পশ্চিমবঙ্গেও রাজারহাট আর বনগাঁয় ডিটেনশান সেন্টারের জন্য জমি নেওয়া হচ্ছে। আচ্ছা রুখুকে ধরলে তো ভিনরাজ্য থেকে ধরে আনতে হবে। তাহলে সেখানকার জেলেই রাখবে? আর সুমুকে ধরলে? মা’কে কে দেখবে তখন?
বছরশেষের মস্তি : দময়ন্তী
বুলবুলভাজা | কূটকচালি | ২০ এপ্রিল ২০০৭ | ৯৮৪ বার পঠিত
দেওয়ালীর হইহুল্লোড় শেষ হতে না হতেই, "মস্ত্' পাবলিক বছরশেষের মস্তির যোগাড়যন্তর শুরু করে দেয়। প্লেনের টিকিট, হোটেল বুকিং, পার্টির খবরাখবর; হ্যাপা কি কম নাকি! আর "আজকাল সস্তার টিকিট পেয়ে যত অ্যারাগ্যারা লোকও প্লেনে চাপে মশাই"। আগে থেকে ভাল ডীল দেখে বুক না না করলে, শেষে একগাদা গচ্চা যাবে। কটা ছুটি বাঁচল বছরশেষে নেবার জন্য, কটা সামনের বছরে ক্যারী ফরোয়ার্ড করানো যাবে, কটা সিকলীভ, কটা ক্যাজুয়াল, কার সাথে কাকে নেওয়া যাবে; এইসব হিসাবনিকাশও পাশাপাশি কষে ফেলতে হয়।
উপাসনা ও অন্তিমকাজের আউটসোর্সিং : দময়ন্তী
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২৪ মে ২০০৬ | ৭২৯ বার পঠিত
আউটসোর্সিং শুনলেই ফস্ করে মনে হয় আই.টি. বা আরো গোদা ভাষায় বললে কম্পিউটারের কথা। গির্জা বললেই পাদরী অথবা "মাস" এর কথা, আর মৃত্যু মানেই কফিন-কবর কিম্বা দাহকার্য্য। তো, আউটসোর্সিং এর সাথে কম্পিউটার ব্যবহার করে করা কাজকম্ম এমনভাবে জড়িয়ে গেছে যে, হঠাৎ মাস-সার্ভিস বা ফিউনেরাল সার্ভিস আউটসোর্স হচ্ছে শুনলে কিরকম একটা ব্যোমকে যাওয়া ভাব হয়।
যুগাড় বনাম বুলডোজার : দময়ন্তী
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১৫ জুলাই ২০০৬ | ৭১৮ বার পঠিত
দিল্লীতে বহু অসম্ভবকে সম্ভব করা যায় যে বস্তুটির সাহায্যে, চলতি ভাষায় তার নাম "যুগাড়"। পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান, বিহার থেকে লোকজন স্রেফ এই "যুগাড়"এর ভরসায় চলে আসে দিল্লীতে। এসে শুরু করে যে কোন রকম একটা ব্যবসা। হতে পারে কোন দোকান, কিম্বা সাইবার কাফে, অথবা ট্রাভেল এজেন্সি। রেসিডেন্শিয়াল এরিয়ায় গড়ে ওঠে পরপর দোকান। জমজমাট হয়ে ওঠে এলাকা। কিন্তু রেসিডেন্শিয়াল এরিয়ায় রাস্তার পাশে পাশে দোকান হওয়া বে-আইনী। তাতে কি, "যুগাড়" আছে না! "যুগাড়" জানেন না?
শিক্ষা আনে চেতনা : দময়ন্তী
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২০ নভেম্বর ২০০৬ | ৭২৯ বার পঠিত
ক্লাসে ছবি আঁকতে দিয়ে শিক্ষিকা চলে যান নিজের কাজে, বলে যান আঁকা শেষ না হলে যেন বাড়ী না যায়। ক্লাস ওয়ানের সরল শিশু ছুটির ঘন্টা পড়ে যাবার পরও আঁকা শেষ না হওয়ায় বসে বসে আঁকতেই থাকে। শেষ হওয়ার পর দেখে কেউ কোথায়ও নেই, সব্বাই দরজায় তালা দিয়ে চলে গিয়েছে। একজন ছাত্রী মুক্তির জন্য এমনকি দোতলা থেকে লাফিয়ে পড়তেও প্রস্তুত ছিল, কারণ দোতলা থেকে লাফ দেবার ভয়াবহতা তার অজানা। ঠিক যেমন অজানা, দিদিমনি আঁকা শেষ না হলে উঠতে বারণ করলেও ওটা আসলে কথার কথা, ছুটির ঘন্টা বাজলে বাড়ী যেতে হয়।
রাস্তাঘাটের কথা : দময়ন্তী
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০০৭ | ৭৬৬ বার পঠিত
রাস্তা বাঁধে পাহাড় আর সমুদ্রকে, জঙ্গল আর জনপদকে। রাস্তায় রাস্তায় কাটাকুটি খেলা হয় দেশে দেশে। বাড়ীর সামনের রাস্তাকে জিজ্ঞাসা করি তুমি কোত্থেকে আসছ গো? সে বলে তাও জান না, ঐ তো ন্যাশনাল হাইওয়ে আট থেকে। আট আবার এসেছে হয়ত বা সাত থেকে কিম্বা অন্য কোন হাইওয়ে থেকে। সব মানুষের মতই সব রাস্তারও গুরুত্ব সমান নয়। হাইওয়েরা জাতে কুলীন। তাদের দেখভালের জন্য সদাসতর্ক একদল লোক। ন্যাশনাল হাইওয়ে, ইয়ানে কি "জাতীয় সড়ক"। তা বলে জাতীয় সড়করাও যে সব্বাই সমান গুরুত্বপূর্ণ, তা কিন্তু নয়। হাঁটতে চলতে রাস্তা লাগে, রিক্শা, সাইকেল চলতে রাস্তা লাগে, গাড়ী চলতেও রাস্তা লাগে। যে রাস্তায় রিকশা চলে আর যে রাস্তায় অক্টোভিয়া চলে, এরা কখনও একরকম নয়।
দিল্লী মেট্রো - একটি সাফল্যের কাহিনী : দময়ন্তী
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১৭ জুন ২০০৭ | ৮২৫ বার পঠিত
আমরা পশ্চিমবঙ্গবাসীরা অনেকেই কলকাতার "মেট্রো সংস্কৃতি'র সাথে পরিচিত। ঝকঝকে তকতকে ট্রেন, ঝকঝকে স্টেশন, পরিচ্ছন্ন সাবওয়ে, ট্রেনে ওঠার জন্য সুশৃঙ্খল কিউ ইত্যাদি, যা অনুপস্থিত হাওড়া, শিয়ালদা ও অন্যান্য সাবার্বান স্টেশনে। অন্যান্য রেলওয়ে স্টেশান মানেই যেন বিশৃঙ্খলার সংজ্ঞা। অথচ একই উপভোক্তারা মেট্রোয় উঠতে গেলে অনেকটাই শৃঙ্খলার পরিচয় দেন। কলকাতা মেট্রো, ভারতে প্রথম, চালু হয় ১৯৮৪র অক্টোবর মাসে। তবে পনেরো কুড়ি বছর আগের সেইসব সোনালী দিন আর নেই।
কন্যা তোর, জীবনভোর... : দময়ন্তী
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০২ সেপ্টেম্বর ২০০৭ | ৭৭৬ বার পঠিত
মনে আছে সেই ছবিটা? সেই যে দুই হাত জড়ো করা, দুচোখ দিয়ে জল পড়ছে, প্রাণভিক্ষা চাইছেন, আমাদের কাছে যিনি গুজরাট দাঙ্গার মুখ বলে পরিচিত। কুতুবউদ্দিন আনসারি -- যাঁর ছবি সর্বভারতীয় মিডিয়ায় তুমুল প্রচারিত হওয়ার সাথে সাথে এই খবরও প্রচারিত হয়েছে যে পশ্চিমবঙ্গে তাঁকে ডেকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ সরকার এতে সরাসরি জড়িত না হলেও, প্রধানত: যে রাজনৈতিক দলটি সরকার চালান তাঁদের বহু হোমরাচোমরা ব্যক্তিই এই পূনর্বাসনের প্রক্রিয়াটির সাথে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন।
নফর কুন্ডুর উত্তরাধিকারীরা : দময়ন্তী
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১৮ নভেম্বর ২০০৭ | ৭৬৬ বার পঠিত
পশ্চিমবঙ্গ যখন আসন্ন দুর্গাপূজা, নাছোড়বান্দা নিম্নচাপ ও রিজওয়ানুরের অস্বাভাবিক মৃত্যু নিয়ে নাজেহাল, দিল্লী ও সংলগ্ন অঞ্চল যখন নবরাত্রির প্রস্তুতিপর্বে ব্যস্ত, মহারাষ্ট যখন গণেশ উৎসব শেষ করে দেওয়ালির প্রস্তুতির আগে কদিন জিরিয়ে নিচ্ছে, ঠিক সেই সময়, ১২ই অক্টোবর একটি সংবাদপত্রে পুণে মিউনিসিপালিটি সম্পর্কে এমন একটা খবর বেরোয়, যা সাধারণত আমরা জানতে বা পড়তে খুব একটা আগ্রহ বোধ করিনা। খবরে প্রকাশ পুণে মিউনিসিপালিটির চতুর্থ শ্রেণীর সাফাইকর্মীদের মৃত্যুহার গত ২ বছরে অস্বাভাবিক বেশী। তাই বলে কেউ ভাববেন না যেন যে তার আগে কম ছিল, তা নয়, দুই বছর হল এই মৃত্যুগুলি নথিভুক্ত করা হচ্ছে। খবর অনুযায়ী ২০০৫এর অক্টোবর থেকে ২০০৭ এর সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট ২২৭ জনের মৃত্যু হয়েছে।
মালানা :: হিমাচলের সাংগ্রি-লা : দময়ন্তী
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ৩১ ডিসেম্বর ২০০৭ | ১২৩৮ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
শেষ হতে চলেছে ২০০৭, এক রক্তাক্ত বছর। সাদ্দামের ফাঁসির ভিডিও আর নিঠারীর নালা থেকে পাওয়া শিশুদের হাড়গোড় দিয়ে শুরু হয়েহিল এই বছরটি। জ্যান্ত পুড়িয়ে মারা তাপসী মালিকের আংরা হয়ে যাওয়া ছবিটাও তখনও বেশ টাটকা। তারপর শুধুই রক্ত আর লাশের মিছিল, ভালবেসে বিয়ে করে লাশ হয়ে যাওয়া, বিস্ফোরণে ছিন্নবিচ্ছিন্ন, মানবদেহের টুকরো; মক্কা মসজিদ থেকে সমঝোতা এক্সপ্রেস, মইনুদ্দিন চিস্তির দরগা থেকে চাট সেন্টার ---- এবং নন্দীগ্রাম, এবং নন্দীগ্রাম, এবং নন্দীগ্রাম।
আন্ধার বাতাস হেথা : দময়ন্তী
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১৬ মার্চ ২০০৮ | ৮২৩ বার পঠিত
মান ও হুঁশ দুইই যাহার আছে তাহাকেই মানুষ বলে -- এরূপই প্রচলিত ধারণা। কিন্তু যাহার হুঁশ নাই, তাহার কি মান থাকিতে পারে? অথবা যাহার মান নাই তাহার হুঁশ? না: এইবিষয়ে তেমন নির্দিষ্ট কিছুই প্রচলিত নাই। তবে প্রায়শ:ই দেখা যায় হুঁশ না থাকিলে মানও থাকে না। "হুঁশ না থাকিলে' -- বাক্যবন্ধটির বহুবিধ অর্থ হইতে পারে; কিন্তু আমরা ইহার একটি সংকীর্ণ অর্থই এক্ষণে লইব। হুঁশ নাই অর্থাৎ বেহুঁশ, যাহাকে "পাগল' বলিয়াও উল্লেখ করা যাইতে পারে। "বেহুঁশ'গণ সর্ব্বদাই "পাগল' হন না, কিন্তু আগেই বলিয়াছি, অধিক কথনে কাজ নাই, আমরা একটি সঙ্কীর্ণ অর্থই গ্রহণ করিব।
ধারাভির ইতিকথা (পর্ব - ১) : দময়ন্তী
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২২ জুন ২০০৮ | ৭৬১ বার পঠিত
এশিয়ার বৃহত্তম বস্তি - ধারাভি।
মুম্বাইয়ের যে কোন অপরাধমূলক কাজকর্ম্মে ভদ্রসমাজের আঙুল ওঠে যে দিকে তা হল - ধারাভি।
সেন্ট্রাল রেলওয়েজ আর ওয়েস্টার্ন রেলওয়েজের রেললাইনের মাঝামাঝি হৃদয় আকৃতির এক বিশাল ভূখন্ড - ধারাভি। এর তিন কোণায় মুম্বাইয়ের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ স্টেশান, মাহিম, মাতুঙ্গা আর সিওন। ১৭৫ হেক্টর জমির ওপরে গড়ে ওঠা ধারাভি বস্তিকে অনায়াসে ভারতবর্ষের একটি ক্ষুদ্র রেপ্লিকা বলা যায়। এখানে প্রায় সব ভাষাভাষি ও প্রায় সবরকম পেশার দশ লাখ লোক বাস করে। দশ লাখ, সংখ্যাটি সরকারী। বেসরকারী হিসাবে কত, তা কেউ অনুমান করারও চেষ্টা করে না।
তালিবান জুজুর কবলে ভারত : এম কে ভদ্রকুমার : অনুবাদ - দময়ন্তী
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১৪ জুলাই ২০০৮ | ১২৮৯ বার পঠিত
গত ৭ই জুলাই কাবুলের ভারতীয় দূতাবাসে বীভৎস আক্রমণ, এক নজিরবিহীন ঘটনা। আশির দশকের সিভিল ওয়ারের অন্ধকারাচ্ছন্ন সময়, কিম্বা ২০০১ থেকে শুরু হওয়া যুদ্ধের সময়ও কাবুলে ভারতীয় দূতাবাস অথবা অন্যান্য কোনও দূতাবাসও কখনও এরকম হিংস্রভাবে আক্রান্ত হয় নি। এই আত্মঘাতী হানায় মৃত্যু হয়েছে ৪১ জনের, আহত ১৪০। মৃতদের মধ্যে আছেন ভারতের ডিফেন্স অ্যাটাশে ব্রিগেডিয়ার আর ডি মেহ্তা, কূটনীতিক ভেঙ্কটেশ্বর রাও এবং দুজন ভারতীয় প্যারামিলিটারী গার্ড।
সুরক্ষাচক্র, এবং / অথবা মুঠোয় পেষার গল্প : দময়ন্তী
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২৬ অক্টোবর ২০০৮ | ৭৪৯ বার পঠিত
বছর তিনেক আগে আমার বন্ধু গোপাল, গুরগাঁও থেকে বাড়ী বদলে দিল্লী চলে গেল -- কারণ গুরগাঁওতে ওর বাড়ীটি অতিরিক্ত সুরক্ষিত হওয়ায় ওর নাকি খুব অসুবিধে হত। গুরগাঁওতে অফিসের কাছে একটা বাড়ীতে থাকত। থাকত মানে, ওর নামে ভাড়া নেওয়া ছিল, কখনও সখনও খুব রাত হলে সেখানে গিয়ে ঘুমোত। সেখান থেকে দেড়ঘন্টা যাতায়াতের দূরত্বে দিল্লী গেল এক বছর পূর্ণ না হতেই। আমরা খুব অবাক হয়েছিলাম। "সুরক্ষা' কারো অপছন্দ হতে পারে কিভাবে, তা ঠিক বুঝে উঠতে না পেরে ওকেই জিজ্ঞাসা করায় ও বিস্তারিত ব্যাখ্যা করে। সে কথায় পরে আসছি।
থোড় বড়ি খাড়া : দময়ন্তী
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বই | ০৪ আগস্ট ২০০৬ | ১১২১ বার পঠিত
১৯৯৫ সালের বইমেলায়, নির্ঝঞ্ঝাটে বই দেখার জন্য একটি অপেক্ষাকৃত ফাঁকা দোকানের সন্ধানে ঘুরতে ঘুরতে "থীমা"তে যে বইটির প্রচ্ছদ দেখে থমকে দাঁড়িয়েছিলাম, তার নাম "থোড় বড়ি খাড়া"। লেখক কল্যানী দত্ত। কমলা রঙের হার্ড কভারে সাদাকালো ছবি আঁকা, ১৩১ পৃষ্ঠার কৃশকায় বইটির প্রতিটি পাতায় যত্নের ছাপ। প্রচ্ছদ ও অলঙ্করণ পূর্ণেন্দু পত্রী। এমন নয়নশোভন বই বাঙ্লায় খুব যে বেশী দেখা যায় তা নয়।
চক্রাতা : দময়ন্তী ও রঙ্গন
বুলবুলভাজা | ভ্রমণ | ০৬ জুন ২০০৭ | ১২৫৫ বার পঠিত
আসলে ঠিক ছিল "লা কোয়েন্টা" প্রোজেক্টের অমিতাভদের সাথে জিম করবেট ন্যাশনাল পার্কে যাব ২০০৬ এর ২৬শে জানুয়ারীর ছুটিটায়। তাই ২৭শে শুক্রবার, ছুটিও নিয়ে রেখেছিলাম। ২৩ তারিখ অমিতাভ বলল ওদের গ্রুপের একজনের স্ত্রী অসুস্থ হয়ে পড়েছেন, তাই ওরা কেউই যাচ্ছে না। যা: তাহলে কি হবে? আমার তো মাথার চুল থেকে পায়ের নখ পর্যন্ত তৈরী হয়ে আছে যাবে বলে। কি করা যায়? শুরু করলাম খোঁজখবর। কিন্তু খুব বেশী সুবিধা হল না। অত কম নোটিশে জিম করবেট ব্যবস্থা করা, তাও একলা একলা, প্রায় অসম্ভব।
দ্য ওল্ড গ্রিংগো : দময়ন্তী
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বই | ২৬ মে ২০০৭ | ৭৯৩ বার পঠিত
গ্রিংগো - স্প্যানিশ ও পর্তুগীজ ভাষায় ব্যবহৃত এই শব্দটি আমেরিকান হেরিটেজ ডিক্সনারীর মতে একটি অফেনসিভ স্ল্যাং। লাতিন আমেরিকার বহু দেশে "বিদেশী' ,প্রধানত: আমেরিকার লোক, এছাড়াও কানাডা, ইউ কে বা অস্ট্রেলিয়ার নন-হিস্প্যানিক লোককে বোঝাতে শব্দটি ব্যবহৃত হয়। তবে শব্দটি "অফেনসিভ স্ল্যাং' কিনা, তা অনেকটাই ব্যবহারের ওপর নির্ভর করে। মেক্সিকোতে (এবং আরো অন্য জায়গায়ও) অনেকসময়ই সাধারণভাবে বিদেশী অর্থে ব্যবহার হয়।
কিছু প্রান্তবাসীর কথা, তাঁদের নিজের ভাষায় : দময়ন্তী
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বই | ০৫ আগস্ট ২০০৭ | ৭৬৩ বার পঠিত
"লালবাতির নীল পরিরা' -- কৃষ্ণা দত্ত -- আনন্দ পাবলিশার্স।
"আলো-আঁধারি' -- বেবী হালদার -- রোশনাই প্রকাশন।
মানবীবিদ্যার পাঠে আগ্রহীরা এই বই দুটি নেড়েচেড়ে দেখতে পারেন। দুটি বইয়েরই আখ্যানভাগ গড়ে উঠেছে প্রান্তবাসী নারীদের জীবনযাপন, তাদের হাসিকান্না, সংগ্রাম, দৈনন্দিন খুঁটিনাটি নিয়ে। একটিতে সুপ্রতিষ্ঠিত লেখিকা বারনারীদের কথা তুলে ধরেছেন তাদের ভাষায়। আরেকটিতে প্রান্তবাসী লেখিকা স্বয়ং জানাচ্ছেন তাঁর গল্প।
দুষ্টু মেয়ের খোঁজে : দময়ন্তী
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বই | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০০৭ | ১৮৯৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ৯
"বাংলা শিশুসাহিত্যের ছোটোমেয়েরা", লেখক শিবাজী বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রকাশক গাঙচিল।
নেহাৎ ঘটনাচক্রে বইটি প্রকাশ হবার দিন দুই আগেই হাতে আসে। চমৎকার প্রচ্ছদ ও মুদ্রণ পারিপাট্য। তখনও "অপ্রকাশিত" হওয়ায় বইটির প্রতি একটা কৌতুহল জাগেই , আরো বেশী হয় নামটি দেখে। কালো ও হলুদ প্রচ্ছদে হলুদ রঙে অর্ধবৃত্তাকারে লেখা "যখনই ঘুম ভেঙে যায় তখনই দেখি জেগে আছি"। রুমু বলেছিল না? হ্যাঁ রুমুই তো বলেছিল। মনে পড়ে যায় রুমুর মত আরো সব ছোটো ছোটো মেয়েদের কথা। দুর্গা, রাণু, আলি-ভুলি, মিচকিদের কথা।
সেই মেয়েটা ভেলভেলেটা : দময়ন্তী
বুলবুলভাজা | গপ্পো | ১৭ জানুয়ারি ২০০৬ | ১৩৫২ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
নিনি দৌড়াচ্ছে, নিনি দৌড়াচ্ছে, খুব দৌড়াচ্ছে স্কুলের মাঠে। সামনেই স্পোর্ট্স। ওর খুব ইচ্ছে রিলে রেসে নাম দেয়, খুব একটা ভাল দৌড়াতে পারে না বলে বাকীরা ওকে রাখতে চাইছে না। তা দিদিমনি বলেছেন ও যদি সবিতা আর রিমার সাথে সমানে সমানে দৌড়াতে পারে তবেই ওকে নাম দিতে দেবেন।
সেই মেয়েটা ভেলভেলেটা (শেষ পর্ব) : দময়ন্তী
বুলবুলভাজা | গপ্পো | ০১ মার্চ ২০০৬ | ৯৪৩ বার পঠিত
সেই মেয়েটা ------ ভেলভেলেটা ...... চলতে থাকে ...... চলতে থাকে ...... চলতে থাকে ...... চলতেই থাকে ..... চলতেই থাকে। পথ শেষ হয় না, ঠ্যাঙাড়ে হীরু রায়ের বটতলা পেরিয়ে, সোনাডাঙার মাঠ ছাড়িয়ে, ইছামতি পেরিয়ে,পদ্মফুলে ভরা মধুখালি বিলের পাশ দিয়ে,বেত্রবতীর খেয়ায় পাড়ি দিয়ে পথ যে চলে এসেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে দেশ ছেড়ে বিদেশের দিকে, সূর্য্যোদয় ছেড়ে সূর্যাস্তের দিকে, জানার গন্ডি এড়িয়ে অপরিচয়ের উদ্দেশে
তিমিরের বেদীতে উৎসব : দময়ন্তী
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : উৎসব | ৩১ অক্টোবর ২০২০ | ৩৮৬৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৪
মারাঠীতে নাকুশা মানে নাকি অবাঞ্ছিত বা অপয়া, বিনীতা বলেছিল। নাকুশার মা তখন ওদের ঘর ঝাড়ুপোছা আর বাসন সাফ করত। তারপর তো মা’টা মরেই গেল আর নাক্কিকে এলাকার এক কর্পোরেটার লাগিয়ে দিল পাহাড় পাতলা করার কাজে। চুপচাপ গিয়ে রাস্তা থেকে একটু উপরে উঠে মাটি কেটে কেটে জমা করবে আর হপ্তায় একদিন কর্পোরেটারের গাড়ি এসে নিয়ে যাবে জমা করা মাটি। এমনি করে করে পাহাড়টা যখন রোগা হয়ে যাবে, বেঁটে হয়ে যাবে, পাহাড় বলে আর চেনা যাবে না, তখন কর্পোরেটার এসে সেখানে মস্ত আলিশান সব বাড়ি বানিয়ে ফেলবে। নাক্কিয়া তদ্দিনে বড়সড় হয়ে সেই সব বাড়িতে কামওয়ালি বাঈ হয়ে কাজে লেগে যেতে পারবে, চাই কি বিয়ে শাদিও হয়ে যেতে পারে।
সিজনস অব বিট্রেয়াল : দময়ন্তী
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : নববর্ষ | ১৫ এপ্রিল ২০২১ | ১৮৯৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
জামাই আয়েশ করে হেলান দিয়ে বসে বলে ‘যাক এলাকা থেকে প্রায় সবকটাকে ভাগানো গেছে। শয়তানের ছাওয়ালগুলো, পুড়িয়ে মারতে পারলে শান্তি হত!‘ প্রমদা ঠিক না খেয়াল করেই বলেন ‘হ্যাঁ যত গুন্ডা সব জেল থেকে ছেড়ে দিয়েছে মনে হয়।‘ জামাই উত্তেজিত হয়ে ওঠেন, ‘না না আপনি জানেন না বাবা এই শেখের ব্যাটারা শয়তানের ছাওয়াল সব, আমাদের কটা ছিঁচকে চোরের সাধ্য কি ওদের মত হিংস্র জানোয়ার হয়? দ্যাখেননি ওদের দেশে ওরা কী করছে? যাক দূর হয়ে যাক ওরা নিজেদের জায়গায়।‘ প্রমদা থতিয়ে যান – জামাইরা তো আজ পঁচিশ ত্রিশ বচ্ছর হাওড়াতেই থিতু, তাঁর জানা মতে ওদের তো কিছু ক্ষতি হয় নি!
ইসমাইলের পাঁঠার দোকান : দময়ন্তী
বুলবুলভাজা | গপ্পো | ২১ মে ২০২১ | ৪৪৯২ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৯
মেয়েমদ্দ বাচ্চারা পালাতে চাইছিল। ওরা মেয়েদের টেনে নিয়ে যাচ্ছিল, বাচ্চাদের আগুনে ছুঁড়ে দিচ্ছিল আর মরদদের মাথায় বাড়ি। বলতে বলতে সুরজ কাঁপছিল, গোঙাচ্ছিল। ইসমাইল ওকে জল খাওয়ায়, জিগ্যেস করে লুটেরারা কোন ধ্বনি দেয় নি? সুরজ কেমন চুপ হয়ে যায়, খুব আস্তে বলে ‘আল্লা হু আকবর’ তারপর বাতাসের স্বরে ফিসফিস করে বলে ‘আমি দেখেছি ওদের অনেকের কপালে কমলা টিকা ছিল, লিডারের হাতে প্রধান নৌকরজির ফোটু ছিল’। ইসমাইল ঝাঁকি দিয়ে সোজা হয়ে বসে সুরজের মুখ চেপে ধরে ‘চুপ চুপ। খবরদার এইসব এখানে আর কাউকে বলবি না, আমার জানও চলে যাবে।
একটা পুজো -- দুইটা পুজো : দময়ন্তী
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : পুজো ২০০৬ | ০১ অক্টোবর ২০০৬ | ১১৪৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ৭
কড়ে আঙুলে গুনে গেঁথে রাখি কয়টা পুজো দেখলাম। স্কুলে সব্বাই জিগ্যেস করবে তো "কটা ঠাকুর দেখলি রে"? অথচ, কোনোবারই সংখ্যা দশ ছাড়ায় না। অথচ, অন্যেরা কত কত ঠাকুর দেখে। চারদিনই দেখে। কলকাতায় থাকতাম সময়ে তো একদিন বাবা নিয়ে বেরোত। তাও প্রায় দিনেদিনেই। সন্ধ্যের পর থেকে তো বাবা যাবে 'বনফুলে'। বিজয়ার দিন বাবা নিয়ে যেত আউট্রাম ঘাটে, আর অল্প একটু অন্ধকার হতেই ফেরত। সেখানেও মাত্র ২-৩ টে ঠাকুরই দেখা হত। অত তাড়াতাড়ি শুধু বাড়ীর ঠাকুরই দুই একখান আসে তো।
উপমহাদেশের ইতিহাসের বৃহত্তর বাঁকগুলি মোড় নেওয়ার আখ্যান : দময়ন্তী
বুলবুলভাজা | পড়াবই : কাঁটাতার | ২২ আগস্ট ২০২১ | ৩১১৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
হায়দারের উপন্যাসের পাঠক-মাত্রেই জানেন, অজস্র চরিত্র ও দ্রুতগামী ঘটনাক্রমের সাথে তাল রাখতে গেলে পাঠককে সদা সতর্ক থাকতে হয়। সমাজের বিভিন্ন স্তরের, বিভিন্ন ধর্মের মানুষ, তাদের সামাজিক অবস্থা, বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক স্তরগুলির মধ্যে মিথষ্ক্রিয়া – এমন অনায়াস বয়ানে বুনে চলেন, যেন এক মহানদী – যাতে এসে মিশছে শাখানদীরা, বেরিয়ে যাচ্ছে উপনদীরা, আবার ঘুরে এসে হয়ত মিশছে মূল নদীতে। এই বিভিন্ন ধর্ম, সংস্কৃতি, ভাষা ও সামাজিক স্তরের চরিত্রগুলো এত নিখুঁত বিস্তারিত – তাদের প্রায় রক্ত-মাংসের মানুষের মতই অনুভব করা যায়। এই উপন্যাসে রসবোধ আর দুঃখ হাত ধরাধরি করে চলে। এক প্যারাগ্রাফ পড়ে হেসে ফেলতে না ফেলতেই, পরের প্যারাগ্রাফ প্রায় বিধ্বস্ত করে দেয়। অথচ কোথাও একটুও তাল কাটে না, একটুও আরোপিত মনে হয় না।
সরকারি আইনের গলিঘুঁজিতে এক জেদি অসম সাহসিনী : দময়ন্তী
বুলবুলভাজা | পড়াবই : প্রথম পাঠ | ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২১ | ৩৩৩৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৫
অন্য সবাই বসার ঘরে গল্পে ব্যস্ত, তিনি এদিক ওদিক ঘুরতে ঘুরতে খিড়কির দরজার দিকে গিয়ে দেখেন বেশ কজন অঙ্গনওয়াড়ি মহিলাকর্মী বসে হাপুস নয়নে কাঁদছেন। জানা গেল দুইমাস ভাতা পান নি, উপরন্তু আজকের খাওয়া দাওয়া হয়েছে তাঁদেরই থেকে সংগ্রহ করা চাঁদার টাকায়। লজ্জায় দুঃখে কোনমতে নিজের ব্যাগে যেটুকু যা টাকা ছিল বের করে ভাগ করে দেন ওঁদের মধ্যে। পরবর্তীতে অবসর নেওয়া পর্যন্ত আতিথেয়তার ভার নিজেই বহন করেছেন, আর কখনো চাঁদা সংগ্রহ করতে দেন নি মিটিঙের নামে। সেই আই এ এস অফিসার, প্রখ্যাত লেখক ও দক্ষ প্রশাসক অনিতা অগ্নিহোত্রী, পড়ছিলাম তাঁর কর্মজীবনের স্মৃতিকথা ‘রোদ বাতাসের পথ’।
রানার ছুটেছে তাই : দময়ন্তী
বুলবুলভাজা | গপ্পো | ১৫ অক্টোবর ২০২১ | ৬১৮১ বার পঠিত | মন্তব্য : ৪১
স্পিডে যেতে যেতে হঠাৎ খেয়াল করে, পরের সিগনালের চৌমাথার বেশ একটু আগে ওই বাসটা সাইড নিচ্ছে। আরে আরে, এখানে স্টপ নেই তো, বাস দাঁড়াচ্ছে কেন? স্পিড কমিয়ে ব্রেকটা ছোঁয় গিরীশ। ওদিকে বাসে উঠেই শীতল টের পায়, দু’পায়ের ফাঁকে গরম স্রোত নেমে আসছে কোনোকিছুর তোয়াক্কা না করে। ‘আরে আরে মুতনা হ্যায় তো টয়লেট কিঁউ নেহি গ্যয়ে? বদতমিজ আওরত তু ঝল্লি হ্যায় কা?’ কন্ডাকটারের কর্কশ চিৎকারে সারা বাসের লোক ঘুরে ওকে দেখতে থাকে। কয়েকজন হেসে ওঠে, এক মহিলা এসে পিঠে খোঁচা মেরে বাস থেকে নেমে যেতে বলে। বাসের বেশিরভাগ লোক সায় দিয়ে গলা মেলায়। বাস ততক্ষণে পরের সিগনালে। কে যেন জলের বোতল খুলে জল ছুঁড়ে দেয় গায়ে, বাসের মধ্যে হুরডা পার্টি শুরু হয়ে যায়। হেল্পার দুই থাবড়া মেরে বাস থামিয়ে ওকে হাত ধরে টেনে নামিয়ে দেয়। ওকে নামিয়ে দিয়ে হোঃ হোঃ করে হাসতে হাসতে বাসটা চলে যায়।
কাঁটাতারে ছিঁড়ে যাওয়া জীবনের কাহিনি : দময়ন্তী
বুলবুলভাজা | পড়াবই : বাংলাদেশের হৃদয় হতে | ২৩ জানুয়ারি ২০২২ | ২১২০ বার পঠিত
ছোট ছেলে নিজের জীবন নিজেই গড়ে নেয়, মুক্তিযূদ্ধের নয় মাসের বেশ খানিকটা সময় ভারতে থাকলেও কলকাতায় যাবার কথা ভুলেও ভাবে নি। তীব্র অভিমানেই হয়ত বা ‘কলকাতা’ নামই তার মুখে কেউ শোনে নি কোনোদিন। কিন্তু তারই বড় ছেলে বাবা জ্যাঠা ঠাকুর্দার অতীত বাসস্থান খুঁজতে স্বাধীন বাংলাদেশ থেকে ঘুরেফিরে আসেন প্রতি বছর। আমিও চিনি এমন এক মহিলাকে, যিনি জন্মভূমি থেকে উচ্ছিন্ন হবার তীব্র অভিমানে কোনোদিন আর সেখানে যেতে চান নি, জানতে চান নি সেখানকার কোনো খবর। এই ছেঁড়া দেশের এপার ওপারের গল্পগুলোয় কি মিল কি মিল!
মায়াবী অনাবিল কথকতা : দময়ন্তী
বুলবুলভাজা | পড়াবই : প্রথম পাঠ | ১৭ এপ্রিল ২০২২ | ২৮৪২ বার পঠিত | মন্তব্য : ৫
লক ডাউন ও বইমেলা মিলিয়ে শক্তি দত্তরায়ের দুইখানা বই প্রকাশিত হয়েছে খবর পেয়ে একটু চেষ্টা করে দুটিই সংগ্রহ করা গেল। বইদুটি হল ‘পিরবতীর নাকছাবি ও অন্যান্য’ প্রকাশক নান্দীমুখ প্রকাশনী এবং '৪৬ হরিগঙ্গা বসাক রোড' প্রকাশক গুরুচন্ডা৯। প্রথম বইটি হার্ড বাউন্ড, চোদ্দটি ছোট গল্প নিয়ে। অধিকাংশ দুই কি তিন পাতার ক্ষীণতনু গল্প, দুই একটি সাত কি আট পাতার। গল্পগুলি একবসায় পড়ে ফেলা যায় বটে, কিন্তু তারপর এক একটি গল্পের গুরুভার চেপে বসে মনের উপরে, হাঁসফাঁস লাগে যেন। রয়েসয়ে পড়লেই ভাল হতো মনে হয়।
হৈমবতীর আমগাছ : দময়ন্তী
বুলবুলভাজা | গপ্পো | ০৬ মে ২০২২ | ৩০২২ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৭
বাবা যেদিন ফিরল খবর আনল হিন্দুরাও মুসুলমানেদের পালটা মেরেছে, ওদের মতই পিটিয়ে পুড়িয়ে মেরে দিয়েছে। বলতে বলতে বাবার চোখ জ্বলজ্বল করে মোটা গোঁফ থিরথিরিয়ে নাচে, টুলির মনে হয় তাহলে কি হিন্দুরাও মেয়েদের পেলেই ... আর ভাবতে পারে না, আবার শক্ত কাঠ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। মা এসে দুই গালে ঠোনা মেরে বলে ‘এই এক ন্যাকাষষ্ঠী মেয়ে দ্যাখ না দ্যাখ ভিরমি যাচ্ছে।’ দুদিন পরে ওরা বামুনহাটে চলে গেল, নাকি সেখানে মুসুলমানেরা সব প্রজা, কত্তাদাদার জুতোর নীচেই থাকে সব। ওদের রেখে বাবা আর কাকামণি আবার ফিরে এসেছিল, কলকাতায় অনেকদিন পর্যন্ত সমানেই গন্ডগোল চলেছে এদিক সেদিক।
পাগলামির ভাগ বাটওয়াড়া : দময়ন্তী
বুলবুলভাজা | পড়াবই : প্রথম পাঠ | ১৭ জুলাই ২০২২ | ১৯১৮ বার পঠিত | মন্তব্য : ৬
ডঃ অনিরুদ্ধ কালা, পেশায় মনোরোগ বিশেষজ্ঞ পারিবারিক ও কর্মসূত্রে খুব কাছ থেকে দেখেছেন দেশভাগের শিকারদের। দেখেছেন দেশভাগ কী গভীর ক্ষত রেখে গেছে মনোরোগীদের মধ্যে। ডঃ কালা মাতৃগর্ভে সীমান্ত পেরিয়েছিলেন, স্বাধীনতার কয়েক মাস পরে জন্ম তাঁর, বড় হওয়া ‘রিফিউজি বাচ্চা’ হিসেবে। ছোটবেলায় দাঙ্গা সম্পর্কে জিগ্যেস করলে তাঁর মায়ের বাঁধা উত্তর ছিল ‘আমাদের গ্রামে ওসব হয় নি, অন্য গ্রামে হয়েছে’। এলাকার অন্য বাচ্চাদের মায়েরাও একই কথা বলতেন তাদের। ঐতিহাসিক পার্থ চ্যাটার্জি যাকে বলেছেন একটু সরে সরে বলা। বড় হয়ে বুঝেছেন এ আসলে ভয়াবহ আতঙ্ক ও মানসিক আঘাত থেকে বাচ্চাদের এবং নিজেদেরও সরিয়ে রাখার জন্য বলা।
বেশরম : দময়ন্তী
বুলবুলভাজা | গপ্পো | ০৮ মার্চ ২০২৩ | ২৬০৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ২৭
তা এই বাড়ির কোনকিছুই ওর নিজস্ব মনে হয় না, হয়ও নি কোনোদিন। আর শুধু বাড়ির কেন, এই পৃথিবীতে কোথায়ও কি ওর নিজস্ব কিছু আছে আদৌ! চাকরিটা বাবার জন্য শুরু করতে হয়েছিল, বিয়ের পরেও ছাড়তে পারে নি রমেনের জন্য। দাদার জন্যই লাইব্রেরীর চাকরি করেও পূর্বাঞ্চল সাংস্কৃতিক সঙ্ঘের হয়ে গণসঙ্গীত গেয়ে নাটক করে বেড়াতে পেরেছে। সেইটুকুই ছিল ওর নিজের আনন্দে বাঁচা। বাবা মায়ের সামনে ঢাল হয়ে দাঁড়াতো দাদা। সেই দাদাটাও অমন করে চলে গিয়ে পম্পাকে একেবারে শূন্য করে দিয়ে গেল। সেই যে ওর বুকের মধ্যে একটা আস্ত মরুভূমি ঢুকে গেল, সে কেবলই জ্বালিয়ে পুড়িয়ে একটু একটু করে প্রাণরস শুষে নিয়ে ওকে এমন তব্দাধরা কাঠের পুতুল বানিয়ে দিল। ফুলশয্যার রাত থেকে রমেন হিসহিস করে বলত ‘দ্রৌপদী! দ্রৌপদী এসছে আমার ঘাড়ে!’ পম্পাকে ব্যবহার করত ঠিক বাথরুমের মত। ওই করেই দুই ছেলে হল দেড় বছরের তফাতে।
রহস্যময় তিব্বতের পথে পথে : দময়ন্তী
বুলবুলভাজা | পড়াবই : বই কথা কও | ২১ মে ২০২৩ | ২৬৭৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ১২
এতক্ষণ যা লিখলাম সে নিতান্ত ভূমিকা মাত্র। আসল যাত্রাপথের বিবরণ চমকপ্রদ, রোমহর্ষক। সবচেয়ে বড় কথা হল সেই পৃথিবী, পৃথিবীকে আবিষ্কারের সেই বিস্ময় আমরা ফেলে এসেছি বহু বছর আগে, এখন আর চাইলেও সেরকম যাত্রা করা সম্ভব নয়। পদে পদে প্রাকৃতিক বাধা বিপত্তি, চৈনিক প্রহরা সে যাত্রাকে করে তুলেছিল রোমহর্ষক, বিপদসংকুল। ঋতু হিসেবে তখন গ্রীষ্মের শুরু হলেও অধিকাংশ জায়গায় বরফ তখনো গলে নি, রাতে তাপমাত্রা নেমে যায় হিমাঙ্কের অনেকটা নীচে। এই অবস্থায় অধিকাংশ যাত্রাপথ লেখক কাটিয়েছেন জুতো এমনকি মোজা ছাড়া। অনেকদূর এগিয়ে তবে এক তিব্বতি যাযাবর দলের থেকে তিব্বতি উলের মোজা কেনেন, আরো পরে প্রায় লাসা পৌঁছিয়ে কেনেন জুতো। আস্তে আস্তে অভ্যাস করেন নুন মাখন মেশানো চা খাওয়া, সম্পূর্ণ অন্ধকারে পাহাড়ি পথে হাঁটা আর কোনও প্ররোচনাতেই মুখ না খোলা, মৌনী হয়ে থাকা।
বিজয়নগর অথবা জয়পরাজয়ের কাহিনি : দময়ন্তী
বুলবুলভাজা | পড়াবই : বই পছন্দসই | ৩১ জুলাই ২০২৩ | ১৬৬৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ১০
এই বই লেখা শেষ করে প্রকাশকের কাছে জমা দেবার সময় রুশদি অবশ্য জানতেন না এর বেশ কিছু মাস পরে তাঁকেও এক ধর্মান্ধের আক্রমণে একটি চোখ হারাতে হবে। এই বইয়ের সবচেয়ে আকর্ষণীয় লেগেছে আমার এর লিঙ্গ রাজনীতির পরিব্যাপ্তি। পম্পা কম্পনার সৃষ্ট রাজ্যে মেয়েরা প্রচলিত সামাজিক নিয়মে লিঙ্গ নির্ধারিত ভূমিকায় বাঁধা নয়, তারা কবি কিম্বা শ্রমিক, শিল্পী কিম্বা উকীল, চিকিৎসক কিম্বা যোদ্ধা বেছে নিতে পারে যে কোন পেশা তাদের ইচ্ছেমত। সিংহাসনে মেয়েদের উত্তরাধিকারের চেষ্টা করতে গিয়েই সর্বস্ব খুইয়ে প্রাণ হাতে করে অজ্ঞাতবাসে যেতে হয় নিজের তিন মেয়েকে নিয়ে, তবু সেই সমানাধিকারের স্বপ্ন ছাড়ে না সে।
বনসৃজনের টুকিটাকি : দময়ন্তী
বুলবুলভাজা | আলোচনা : পরিবেশ | ২৯ আগস্ট ২০২৩ | ১৮৬৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ১১
প্রতিবছর গরম বেড়ে উঠলেই মানুষজন ব্যস্ত হয়ে পড়েন ‘চলো গাছ লাগাই, এক্ষুণি লাগাই’ করে। আমাদের বাঙালবাড়ির ভাষায় যাকে বলে লোকে একেবারে ‘উসুইল্যা উঠে’।
তা গাছ লাগানো খুবই ভাল উদ্যোগ। তবে পরিবেশ রক্ষায়, পরিবেশের উন্নতিকল্পে গাছ লাগাতে হলে দীর্ঘস্থায়ী পরিকল্পনার মাধ্যমে বনসৃজন করা প্রয়োজন। আমি যে সংস্থায় কাজ করি তাদের সিএসআর প্রোগ্রামের সূত্রে ২০১৬ থেকে কোভিড লক ডাউনের আগে পর্যন্ত পুণে ও পুণের আশেপাশে এবং আহমদনগর জেলায় এরকম বনসৃজন প্রকল্পের সাথে যুক্ত ছিলাম। এই সময় আমরা প্রায় ১৮ হাজার গাছ লাগিয়েছি, এলাকা ভেদে যার ৭০-৭৫ শতাংশ বাঁচিয়ে রাখতে পারা গেছে। সেই অভিজ্ঞতা থেকেই কয়েকটা কথা বলি।
প্ল্যাস্টিকে মোড়া জীবন : দময়ন্তী
বুলবুলভাজা | আলোচনা : পরিবেশ | ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ১৫৮০ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৯
প্রতিবছর গরম পড়লেই মানুষের খেয়াল হয় এবারের গরমটা যেন আগের বছরের থেকে অনেকটাই বেশি। তারপরেই চারিদিকে 'গাছ লাগান পরিবেশ বাঁচান"এর ধুম পড়ে যায়। খুব বেশি বৃষ্টি হলে বা বিশেষ শীত না পড়লে, নভেম্বর ডিসেম্বরে পাখা চালাতে হলেও পরিবেশের কথা খেয়াল হয় মানুষের। ভারতের প্রায় সবকটা মেট্রোসিটিতে ভারী বৃষ্টি ত বটেই এমনকি স্বাভাবিক বৃষ্টি হলেও রাস্তায় জল জমে শহর অচল হয়ে যায় অন্তত তিন চারদিনের জন্য। জল জমে থাকার একটা কারণ যেমন অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও ছোটবড় জলাজমির বিলুপ্তি, তেমনি আর একটা অন্যতম প্রধান কারণ হল নর্দমা ও পয়ঃপ্রণালীগুলো জঞ্জালের ভারে বুজে আটকে যাওয়া। এই জঞ্জালের অধিকাংশই বিভিন্ন ধরণের প্ল্যাস্টিক বর্জ্য। আজ বরং প্ল্যাস্টিক নিয়ে বলি। রাস্তায় ঘাটে, যে কোনও পর্যটনকেন্দ্রে বড় ছোট যে কোনও গাছের গোড়ার দিকে লক্ষ করে দেখেছেন? দেখবেন নানারকম প্ল্যাস্টিকের মোড়ক, বোতল ইত্যাদি ছড়িয়ে রয়েছে। দীঘার সমুদ্রতীর থেকে সিটঙের কমলালেবুর বন পর্যন্ত সর্বত্র ছড়িয়ে আছে প্ল্যাস্টিক জঞ্জাল।
টুনিমুনির জীবন : দময়ন্তী
বুলবুলভাজা | গপ্পো | ১৮ এপ্রিল ২০২৪ | ১৬৭৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৬
‘আমি কক্ষনো অন্য কারুর জন্য কাঁদি নি জানো। যতবারই কেঁদেছি তা কেবল নিজের জন্য, নিজের না পাওয়া, ক্ষোভ, দুঃখ থেকে চোখে জল এসেছে। বাবা মা মারা যাওয়ার পরেও না, দাদা বৌদি সম্পর্ক কেটে চলে যাওয়ার পরেও না।‘ প্রায় একদমে বলে ফেলে একটু থমকে যায় ও, আঁচল ঘুরিয়ে এনে মুখটা মোছে। মাঝারি হাইটের গাঁট্টাগোট্টা মেয়েটির নাম দেওয়া যাক ‘আমি’।
... ... ‘তুমি যেমন অন্যের জন্যে কাঁদো নি কখনো আমার ঠিক তার উলটো। আমি নিজের লোকদের জন্য মাসের পর মাস কেঁদেছি, পাড়ার লোক যাদের রোজ দেখি তাদের কারুর কিছু হলেও কেঁদেছি। এমনকি কাগজে, টিভিতে কোথাও আগুন লেগে, জলে ডুবে, বিল্ডিং ভেঙে, ঝড়ে বন্যায় মানুষ মারা যাবার খবরেও হাউ হাউ করে কেঁদেছি। সেই থেকেই আমার নাম হয়ে গেছে খোলাকল। ... ... লম্বা চওড়া খেলোয়াড়ি ধরণের চেহারার মেয়েটির নাম দেওয়া যাক ‘তুমি’। ... ... সে মুখে একটা মিচকে হাসি ঝুলিয়ে চুপচাপ দেখছিল এদের। আমি বা তুমি কেউ কোন কথা বলছে না দেখে আস্তে করে গলা খাঁকারি দিল।