এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  আলোচনা  বই

  • দুষ্টু মেয়ের খোঁজে

    দময়ন্তী
    আলোচনা | বই | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০০৭ | ১৮৭২ বার পঠিত
  • "বাংলা শিশুসাহিত্যের ছোটোমেয়েরা", লেখক শিবাজী বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রকাশক গাঙচিল।

    নেহাৎ ঘটনাচক্রে বইটি প্রকাশ হবার দিন দুই আগেই হাতে আসে। চমৎকার প্রচ্ছদ ও মুদ্রণ পারিপাট্য। তখনও "অপ্রকাশিত" হওয়ায় বইটির প্রতি একটা কৌতুহল জাগেই , আরো বেশী হয় নামটি দেখে। কালো ও হলুদ প্রচ্ছদে হলুদ রঙে অর্ধবৃত্তাকারে লেখা "যখনই ঘুম ভেঙে যায় তখনই দেখি জেগে আছি"। রুমু বলেছিল না? হ্যাঁ রুমুই তো বলেছিল। মনে পড়ে যায় রুমুর মত আরো সব ছোটো ছোটো মেয়েদের কথা। দুর্গা, রাণু, আলি-ভুলি, মিচকিদের কথা।

    বইটিতে দুটি প্রবন্ধ। প্রথমটি, "ঠাকুরমার ঝুলি অতীত না ভবিষ্যপুরাণ", আনন্দবাজার পত্রিকায় ফেব্রুয়ারী ২০০৭ এ রবিবাসরীয়তে প্রকাশিত। দ্বিতীয়টি "বাংলা শিশুসাহিত্যের ছোটো মেয়েরা", মূলত: এই আলোচনার বিষয়।

    বাংলাসাহিত্যে "শিশুসাহিত্য" নামক ধারাটির প্রচলন হয় ঔপনিবেশিক শাসনের সময় থেকে। বয়সে ভারী প্রাচীন হওয়া সত্ত্বেও ঔপনিবেশিক শাসনের কালেই আবার শৈশবগ্রস্ত হয় ভারত। শিল্পবিপ্লবের ফলভোগী ইংরেজ পদে পদে শোনায় ভারতে এই নেই, ঐ নেই। শুরু হয় ইংরাজী শিক্ষার প্রচলন, তৈরী হয় ছাপাখানা। মুখে বলা, কানে শোনা ছেলেভুলানো ছড়ায়, ভাগবৎপূরাণপ্রসূত,ভক্তিকাব্য লালিত ননীচোরা বালগোপালের দুষ্টুমির গল্পে শৈশব, কৈশোরকে ভুলিয়ে রাখা আর সম্ভব নয়। নতুন শৈশব গড়ার কাজে বাংলা সাহিত্য সহায়তা করেছে সেই ঊনবিংশ শতকের মাঝখান থেকেই। বাঙালী মধ্যবিত্ত সমাজে আধুনিকতার ইচ্ছা যে সকল সংস্কারের মধ্য দিয়ে সাকার হয়েছে, তার অধিকাংশই ছিল নারীদের সমস্যা কেন্দ্রিক। সতীদাহ রদ, বিধবাবিবাহ প্রচলন, সহবাস সম্মতির আইন, বাল্যবিবাহরোধ তারই অঙ্গ। তাহলে কি আশা করা যায় না যে, সমাজের যে অংশে পূর্ণবয়স্ক নারীর জন্য একটা স্পেস তৈরী করা হচ্ছে, অন্তত তৈরী করার চেষ্টা হচ্ছে, সেখানে বালিকার শৈশবকে গড়ে তুলতে চালিত করতে, বালিকাদের শৈশবকাল বিষয়ক ব্রাহ্মণ্য সংস্কারে আঘাত হানতে সৃষ্ট হবে কিছু কাহিনী, যাতে বালিকারাই থাকবে অঘটনঘটনপটীয়সীর ভূমিকায়?

    অথচ আমাদের সমাজে সমগ্রভাবে মেয়েদের মৃত্যুকামনার ঐতিহ্য বর্তমান। প্রায় সর্বত্র পতির পরে জন্মেও পতির আগে মারা যাওয়াই পত্নীর চরম সৌভাগ্যের প্রকাশ। সমাজের মনে ব্যপ্ত এই মৃত্যুকামনা থেকেই ব্রতকথায় আসে এই ধরণের বাক্য "স্বামীর কোলে দিয়ে ছেলে/মরণ যেন হয় গঙ্গাজলে"। এইসব ব্রতপার্বণ বা এই সামগ্রিক মৃত্যুকামনার বিরুদ্ধে এমনিতে তেমন কিছু লেখাপত্তর আমাদের চোখে পড়ে না। মূলত: এই ভাবনা থেকেই লেখক অনুসন্ধান করতে চেয়েছেন বাংলা শিশুসাহিতের ব্যতিক্রমী মেয়েদের, যারা শিশুকন্ঠে জোরালো প্রশ্ন তুলবে বা অভিযোগ জানাবে।

    শিশুসাহিত্যে শান্তশিষ্ট, শাসন মানা, সমাজের আকাঙ্খিত কাঠামোয় খাপে খাপে বসানোর মত বালকদের পাশে পাশেই আমরা দেখি বাড়ী পালানো, শাসন মানতে না চাওয়া অথবা এমনিই পথের ডাকে পথে বেরোন উদাসী বালকদের। রাখালরা থাকে গোপালদের পাশেই। তারাপদ, সুকুমার, কাঞ্চন, ভোম্বোলদের আমরা পাই, পাই কি সমধর্মী কোন মেয়েদের?

    মনে আছে ননুর কথা? সেই যে ননু - যে খেলতে খেলতে আপনমনে বকর বকর করে যায়; যেই না জিগ্যেস করা "কার সাথে কথা বলছিস রে?" অমনি উত্তর "আলি ভুলির সঙ্গে"। খাবার সময় বেপাত্তা ননু; অনেক পরে এলে যেই না ধমক "কোথায় ছিলি"? ননুর নির্বিকার উত্তর "আলি ভুলির দেশে"। তার মা জ্যেঠিমার চিন্তার অন্ত নেই এ মেয়েকে নিয়ে। "আলি ভুলির দেশ" ভোলাতে ননুকে কঠোর শাস্তি দেন তার মা। খেতে বসে কখনও বা ননু হাতে ভাতের গ্রাস নিয়ে উদাস হয়ে যায়। অভিভাবকদের দুশ্চিন্তার শেষ থাকে না। কোন্‌ বেয়াড়া সৃষ্টিছাড়া বন্ধুদের পাল্লায় পড়ল মেয়ে! কারা তারা? কারা ননুকে কেবলই সংসার সীমানার বাইরে আলিয়ে ভুলিয়ে নিয়ে যায়? এই গল্পটি সুখলতা রাওয়ের যে গল্প সংকলনের অন্তর্গত, তার শেষ গল্পেও আলি ভুলির আবির্ভাব ঘটে। সেখানে তাদের বন্ধু হিসেবে পায় "খোকাবাবু" নামের বালক, সেও তাদের দেশে যায়। অথচ অভিভাবকদের প্রতিক্রিয়ায় আকাশ পাতাল তফাৎ। খোকাবাবু আলি ভুলির দেশে গিয়েই বুঝতে শেখে "দুর্ভিক্ষ" শব্দের অর্থ, আর তাতে তার অভিভাবকরা খুশীই হন। আলি ভুলির দেশ এমনই এক আরশিনগর, বড়রা যার ঠিকানা পায় না --- কিন্তু খোকা যদি নেহাৎ যায়ই সেথায়, তো যাক না; ননু যেন না যায়। আবার লীলা মজুমদারের মণিমালাকেও তার ঠাকুমা মানা করেন আলি ভুলির সাথে মিশতে। মণিমালা ঠিক লেখকের নিজের তাগিদে লেখা নয়। লেখক জানিয়েছেন বেতারকেন্দ্রের কর্তাদের ফরমাশে উদ্ভুত হয়েছিল "ঠাকুমার চিঠি"। শিক্ষিত মধ্যবিত্ত বাঙালী পরিবারের মেয়েদের ১০,১১ থেকে ২০,২২ বছর বয়স পর্যন্ত যে সব সাধারণ, ব্যবহারিক সমস্যার মুখোমুখী হতে হয়, সেইসব "নিতান্ত ঘরোয়া" সমস্যা নিয়ে আলোচনা ও উপদেশ সমূহই চিঠির আকারে সৃষ্টি করেন, ঠাকুমা ও তাঁর নাতনী মণিমালার কথোপকথনের মাধ্যমে। এখানেও মণিমালাকে গড়েপিটে নেবার যে প্রকল্প ঠাকুমার, তাতে সু দৃষ্টান্তের সাথে কূ দৃষ্টান্তও আছে। মণিমালার বন্ধু আলি ভুলি এসেছে সেই কূ দৃষ্টান্তের উদাহরণ হয়েই। আলি ভুলিকে দুই "মোটাসোটা গিন্নী" হয়ে যেতে দেখে মণিমালা কি একটু হতাশ হয়? ঠাকুমা যে খুশী হন, তা তাঁর লেখাতেই স্পষ্ট ফুটে ওঠে। তবুও মনে করাতে ভোলেন না যে এবারে যেন সে আলি ভুলিকে এক্কেবারে ভুলে যায়। তার মানে আলি ভুলির স্মৃতিটাও পরিত্যাজ্য! কেন?

    শিবাজী এই মণিমালা বইটির বিশ্লেষণ বড় সুন্দর করেছেন। মণির বিভিন্ন বয়সের প্রশ্নের উত্তরে যে সব উত্তর তার ঠাকুমা দিয়েছেন, তার মধ্যে কেমনভাবে আধুনিক উদারমনস্ক চিন্তার ফাঁকে ফাঁকে ঢুকে এসেছে আদ্যিকালের ব্রাহ্মণ্য সংস্কার, চতুরাশ্রমের ধারণা। খোলা হাওয়া ঢুকছে ঠিকই, কিন্তু ঘরের বাসী হাওয়ার পুরোটাই যে বেরিয়ে যায় নি, তা দেখিয়েছেন চমৎকারভাবে। যে খটকাটা থেকেই গেল, সেটা হল, যেহেতু "মণিমালা" বইটি ঠিক স্বেচ্ছায় নয়, বরং অনুরোধে লেখা, কাজেই এই চতুরাশ্রমের ধারণা লেখকের নিজস্ব, নাকি এগুলিও অনুরোধেই গুঁজে দেওয়া!

    আসুন পাঠক, এইবার একটু বাংলা প্রাইমারের দিকে তাকাই। সর্বাধিক প্রচলিত ও জনপ্রিয় বই, "বর্ণপরিচয়"এ কোন বালিকার উল্লেখ নেই। সেখানে গোপাল, রাখাল, ভূবন, নবীনদেরই দেখা যায়। ১৮৫৫ সালে প্রথম প্রকাশিত হয় "বর্ণপরিচয়", ১৮৪৯ সালে বেথুন স্কুল প্রতিষ্ঠার সময় মদনমোহন তর্কালঙ্কার প্রণীত "শিশুশিক্ষা ১" প্রকাশিত হয় "বিশেষত: বালিকাগণের শিক্ষা সংসাধন করিবার আশয়ে"। এই বইটিতে মাত্র একটি রচনায় দুই বোনের সাক্ষাৎ পাওয়া যায়। তারা দুজনেই খুব ভালো মেয়ে, লক্ষ্মী মেয়ে; নাম তাদের সামা ঘোষাল ও বামা ঘোষাল। ৯ই মার্চ ১৮৫৮য় মদনমোহনের মৃত্যুর পর "শিশুশিক্ষা"র প্রকাশক সংস্থা "সংস্কৃতযন্ত্র" ও সেই সাথে "শিশুশিক্ষা"র স্বত্ত্বাধিকারী হন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। এরপরে "শিশুশিক্ষা"য় প্রচুর পরিবর্তন করা হয়। ১৮৬০ সালে প্রকাশিত সংস্করণে সবচেয়ে তাজ্জব করে দেওয়া পরিবর্তন দুটি। এক, সামা ঘোষাল ও বামা ঘোষাল নামের বোনদুটি লিঙ্গ পাল্টে হয়ে যায় রাম ঘোষাল ও শ্যাম ঘোষাল নামের দুই ভাই। দুই, ঋজুপাঠের শিরোনাম "সুশীল বালকবালিকা সকলকে সমান ভাল বাসে" পাল্টে "সুশীল বালক সকলকে সমান ভাল বাসে" হয়ে যাওয়া। কিন্তু কেন এই পরিবর্তন? লেখক তার কোন উত্তর দেন নি। উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছেন কিনা, তাও পরিস্কার নয়।

    "শিশুশিক্ষা"র ১৯ বছর পর ১৮৬৮ তে প্রকাশিত হয় কামিনীসুন্দরী দেবী রচিত "বামাবোধিকা" প্রথম ভাগ। এতে গোপাল ও রাখালের তূল্য দুই চরিত্র বরদা ও সারদা। বরদা "স্বাভাবিক ধীরা, সর্বদা সভয়া"। সারদা ঠিক তার উলটো, ব্যঙ্গে, কটুভাষে সে পারদর্শিনী। "সকল বালিকারই বরদার মত হওয়া উচিত, সারদার মত হওয়া উচিত নয়"। একেবারে বর্ণপরিচয়ের প্রতিধ্বনি শুনতে পাচ্ছি বলে মনে হচ্ছে না? হ্যাঁ এইপর্যন্ত তাইই মনে হচ্ছে বটে; কিন্তু বরদা-সারদা কে ঠিক গোপাল-রাখালের স্ত্রীলিঙ্গানুবাদ বলা গেল না। কারণ বাড়ুজ্যেদের রাজলক্ষ্মীর মা মুখুয্যেদের মেয়েদের বোঝান -- স্বামী ভিন্ন মেয়েমানুষের গতি নেই; আজকালকার ছেলেরা লেখাপড়ায় ভারী পন্ডিত, ইংরেজী পড়ে ভারী সুসভ্য হয়েছে, অতএব তাদের মনোমত হতে গেলে ভালো করে লেখাপড়া করতেই হবে। তখনও পর্যন্ত মেয়েদের লেখাপড়া ব্যাপারটি স্রেফ বিবাহের পূর্বশর্ত, চাকরি বাকরি বা ব্যক্তিগত কোন বাসনা পূরণের জন্য নয়।

    চলুন পাঠক আবার লীলা মজুমদারের লেখার দিকে একটু তাকাই। টং লিংএর চাঁদ ঠিক সুবোধ বালক নয়। তার ভাঙা দর্পণে ফোটে বড়দের বেঢপ, ত্যাবড়ানো, ব্যাঁকাচোরা, বদখত মূর্তি। চাঁদ যা যা করতে চায়, কিন্তু পারে না -- সেই সবই পারে বিশু। উপন্যাসের শেষে চাঁদের সেই স্বীকারোক্তি - "আমি তাদের বানিয়েছিলাম। আমার গায়ে জোর ছিল না, বন্ধু ছিল না, ভয় লাগত, একলা লাগত, তাই তাদের বানিয়েছিলাম"। লীলা মজুমদারের আরেকটা জুড়িহীন গল্প, "গনশার চিঠি"র বালকটি বিশ্বস্তসুত্রে জানতে পেরেছে ওর মামাবাড়ীর দেশের মাস্টারমশায়ের ইস্কুলে বছরের শুরুর দিকে প্রচুর ছেলে থাকে, কিন্তু বছরের শেষের দিকে মাত্র গুটিকয় টিমটিম করে। এদিকে আবার মাস্টারমশায়ের ছাগলসংখ্যা সেইসময়ই খুব বৃদ্ধি পায়। ছাত্র যত কমে, ছাগল তত বাড়ে -- এদিকে যদিও ইস্কুলের কথা কিছুই এখনও ঠিক হয় নি, তবু গনশা উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠে সম্ভবত: সে এগোচ্ছে কোন এক খোঁয়াড় টোয়াড়ের দিকেই। বিপ্রতীপে কোন বালিকাকে দেখি না আমরা, এইভাবে চাঁদের মত, গনশার মত প্রখর সমালোচনা করতে। রবীন্দ্রনাথের "সে"র পুপেদিদি তার দাদামশায়কে সরাসরি অভিযোগই করেছিল যে তিনি যদিও পুপেদিদিকে সঙ্গে নিয়ে মেতেছেন অসম্ভব সব কান্ডকারখানায়, তবুও তাঁর আসল পক্ষপাত কিন্তু সুকুমারের ওপরেই। দাদামশাই তৎক্ষণাত মেনে নেন এই অভিযোগ, স্বীকার করেন সুকুমারের সঙ্গেই তাঁর "মনের মিল বেশী"; বলেন "তার একমাত্র কারণ ও ছিল ছেলে, আমিও ছেলে হয়েই জন্মেছিলুম একদিন"। পুপে অবশ্য জিগ্যেস করে না ছেলে হয়ে জন্মেও লেখকদের তো কই পূর্ণবয়স্ক নারীদের কথা অনুভব করতে কোন সমস্যা হয় না, তবে বালিকাদের সাথেই কেন কেউ একাত্ম হতে পারেন না? বাংলা সাহিত্যে অসমসাহসী, ব্যতিক্রমী নারীচরিত্র প্রচুর, কিন্তু অসমসাহসী বালিকা?

    মনে করুন আশাপূর্ণা দেবীর "কি করে বুঝবো"র বুকুর কথা। যে বলেছিল ""নিজেরাই তো হাজার বার করে বল "সবসময় সত্যি কথা বলবি"; কি করে বুঝবো আসলে কি বলতে হবে?" কোন বালিকাকে কি আমরা বলতে শুনেছি এমন কথা? বালিকারা কি এই "কি করে বুঝবো আসলে কি বলতে হবে"র সমস্যায় ভোগে না? আশাপূর্ণা দেবীর "যেমন না বাড়ি"র মিচকি অবশ্য সতেজে বলেছিল "মেয়ে মেয়ে করবি না দাদা! মেয়েরা বুঝি কিছু পারে না?" মিচকিই সকলের দিকে অভিযোগের তর্জনী উঁচিয়ে বলেছিল "কি করে দেখানো যাবে শুনি? মেয়েদের কেউ সঙ্গে নেয়? নিলে দেখিয়ে দিতো"। অ্যাডভেঞ্চারের গল্পেও বালকদেরই দেখা যায়। এক এবং একমাত্র ব্যতিক্রম প্রভাবতী দেবীর "কৃষ্ণা সিরিজ"।

    লেখক "প্রথম প্রতিশ্রুতি"র সত্যবতীর কথা উল্লেখ করেন নি তাঁর আলোচনায়, সম্ভবত: শিশুসাহিত্যের মধ্যেই আলোচনাকে সীমাবদ্ধ রাখতে চেয়েছেন বলেই। বালিকা সত্যবতী কিন্তু যথেষ্টই ব্যতিক্রমী চরিত্র। কি জানি কেন বুদ্ধদেব গুহর "তিতির" বা মতি নন্দীর "কলাবতী"ও অনুপস্থিত। এমনকি আরো কিছুদিন আগের "গন্ডাল"¤রাও আসেনি। অথচ বইটিতে কোথায়ও উল্লেখ নেই কত সাল পর্যন্ত প্রকাশিত বাংলা সাহিত্য নিয়ে তিনি আলোচনা করছেন। তাই মালু, বুলু, কলাবতীদের অনুপস্থিতি বেশ চোখে লাগল। কোথায়ও কোথায়ও লেখক যেন নিজের লেখার স্টাইলে নিজেই মজেছেন। অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রশ্ন তুলেছেন; কিন্তু তার উত্তর খোঁজার চেষ্টা সেভাবে নজরে পড়ে না। আরো কিছু উদাহরণসহ সমাজের মনে বালিকামন গঠনের যে কাঠামোটি আছে তার বিস্তৃত আলোচনা করলে বইটি সমৃদ্ধ হত। বাংলা সাহিত্যে ব্যতিক্রমী নারীচরিত্রের অভাব না থাকলেও ব্যতিক্রমী বালিকা কেন প্রায় অনুপস্থিত, এই অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক প্রশ্নটি নিয়ে আরেকটু নাড়াচাড়া করতে পারতেন।

    তবুও বইটি আমাদের মনে করায় "যখনই ঘুম ভেঙ্গে যায়, তখনই দেখি জেগে আছি"। এটিও লেখকের বড় কম কৃতিত্ব নয়।

    সেপ্টেম্বর ২৩, ২০০৭
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • আলোচনা | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০০৭ | ১৮৭২ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কৌশিক ঘোষ | ০৫ ডিসেম্বর ২০২১ ২৩:২১501783
  • তেরো বছরেরও বেশি পড়ে বই নিয়ে এ আলোচনা চোখে পড়লো। মূল বইটা খুঁজলে কি পাবার সম্ভাবনা আছে ? দ-এর কি মনে হয় ?
     
  • :-) | 103.76.***.*** | ০৫ ডিসেম্বর ২০২১ ২৩:৪৪501784
  • এ প্রশ্নটা গাঙচিলের অধীর বিশ্বাসকে করাটা বেশি যুক্তিযুক্ত ছিল না? 
  • কৌশিক ঘোষ | ০৫ ডিসেম্বর ২০২১ ২৩:৫১501785
  • ঠিক ঠিক। কিন্তু ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে গাংচিলের সাথে যোগাযোগ করা বেশ কঠিন। দ যেহেতু বইটা নিয়ে আলোচনা করেছেন, হয়তো কোনো সূত্র দিতে পারেন, হয়েও গেলো তেরো বছর, আশা নিয়ে প্রশ্নটা করেছি।
    প্রশ্নের পেছনে মূলসূত্র আজ সারাদিনের ভাটিয়া৯, দ-এর বর্তমান আলোচনার লিঙ্কও ওখান থেকে পাওয়া। লিঙ্ক অনুসরণ করে পৌঁছে বইটার অস্তিত্ব জানলাম।
    আপাতত অধীরভাবে বিশ্বাস করতে থাকি যে বইটা পড়ার সুযোগ পাবো।
  • | ০৮ ডিসেম্বর ২০২১ ১৪:২১501857
  • আরিব্বাস!!  এ তো প্রায় প্রাগৈতিহাসিক যুগের লেখা। যাই হোক বইটা আমি দে'জ থেকে তুলে নিয়েছিলাম। কেউ একজন স্যাম্পল কপি নিয়ে দিতে এসেছিলেন। তাঁ্র হাত থেকে প্রায় ছিনিয়ে নিয়েছিলাম। তো আপনি দে'জেই খোঁজ করতে পারেন। কিম্বা ধ্যানবিন্দুকে হোয়্যাস্যাপ করে রাখতে পারেন। বইটা পেলে ওঁরা পাঠিয়ে দেবেন। 
    ধ্যানবিন্দুর নম্বর চাইলে জানাবেন, দিয়ে দেব।
  • কৌশিক ঘোষ | ০৮ ডিসেম্বর ২০২১ ১৪:৩৪501859
  • ধ‍্যানবিন্দু কে ? ওও, ঐ বইয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত। সময় বার করে নাম্বারটা দিলে যোগাযোগের চেষ্টা করি।
  • | ০৮ ডিসেম্বর ২০২১ ১৪:৪৩501860
  • +91 97328 06896
  • | ০৮ ডিসেম্বর ২০২১ ১৪:৪৪501861
  • হোয়া করে রাখবেন ফোন নয়। 
  • :-) | 182.76.***.*** | ০৮ ডিসেম্বর ২০২১ ১৯:১১501874
  • ভৌগোলিক অবস্থানের কারণটা বোঝা গেল না।  ধ্যানবিন্দু,দে'জ কে ফোন করা গেলে গাংচিল এ করা যায় না? 
    গুগুলে গাংচিল বলে খুঁজলে এসব নাম্বার দিচ্ছে ওদের ফেসবুক পেজ থেকে ph-9432991530 / 9432407665 GANGCHIL
    ইংরিজিতে গাংচিল পাবলিশার দিয়ে খুঁজলে  094324 07665 এই নাম্বার দিচ্ছে। গুরুতে প্রশ্ন লেখার চেয়ে গুগুল করা কঠিন মনে হচ্ছে।
    প্রকাশকও তো হোম ডেলিভারি ইত্যাদি করে, কলেজস্ট্রীটেই বসে। অন্য কারো থেকে বইয়ের খবর পাওয়ার চেয়ে প্রকাশকই বেটার সোর্স নয়? পুরো সমস্যাটাই বোঝা গেল না। যাই হোক।
  • কৌশিক ঘোষ | ০৯ ডিসেম্বর ২০২১ ১৮:৪৩501904
  • বাপ‍রে ! 
    ভাগ‍্যিস আমার ফোন নাম্বার আপনার কাছে নেই। থাকলে শ্রাদ্ধ শান্তি করে ফেলতেন ফোনেই।
    অবশ্য কমই বা কি করলেন !
    কিন্তু দেখুন আমি গুগলের চেয়ে গু-ণ্ডা৯র ওপরে বেশি ভরসা রেখেছি। এবং আমার ভরসার মর্যাদা দিয়ে গু-ণ্ডা৯ গাংচিলের নাম্বার জোগাড় করে দিয়েছে, একটার জায়গায় দুটো। দে'জ-এর ধ‍্যানবিন্দু, তাঁর নাম্বারও খুঁজে দিয়েছে।
     
    দেশী গু-ণ্ডা৯ জিন্দাবাদ, জিন্দাবাদ। সাম্রাজ‍্যবাদের প্রতিভূ গুগল নিন্দাবাদ, নিন্দাবাদ।
     
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। মন শক্ত করে মতামত দিন