এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  আলোচনা  বিবিধ

  • মাতৃত্ব যখন ফাঁস

    দময়ন্তী লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | বিবিধ | ১৭ মার্চ ২০১৭ | ৯৯৬ বার পঠিত
  • "আইটিওলা" শব্দটাও তখনও প্রচলিত হয় নি। আমরা নিজেদের প্রোগ্রামার/ডেভেলপার, টেস্টার এইসবই বলতাম। সেটা আমার প্রথম প্রোগ্রামারের চাকরি ছিল কলকাতার একটা মাঝারিগোছের কোম্পানিতে। তো, কোম্পানিটা মাঝারিগোছের হলেও সেই ৯৯-২০০০ সাল নাগাদ কলকাতায় সফটওয়্যার কোম্পানি হিসেবে মোটামুটি গুরুত্বপূর্ণ ছিল। সেক্টর-৫ এ যে হাতেগোণা কটি কোম্পানি তখন বর্তমান এটি তার অন্যতম পুরানো একটি। তা এখানে একসময় লোকের তুলনায় বসার জায়গা এতই কম ছিল যে কর্মীরা দুই তিন শিফটে কাজ করত। আমার শিফট তখন ছিল সকাল সাতটা থেকে দুপুর দুটো। এই শিফটে আমার সাথে কাজ করত ঝুমকি। হ্যাঁ এটাই ওর অফিশিয়াল নাম ছিল। কেমন ডাকনামের মত শুনতে না?

    ঝুমকি বোধহয় সল্ট লেকে বা তার খুব কাছেই কোথাও থাকত, অফিসে পৌঁছে যেত সকাল সাড়ে ছটা নাগাদ। আর মেশিন টেশিন অন করে মেল দেখেই টুক করে বেরিয়ে যেত। সল্ট লেকেই কোথাও একটা ওর কোনও এক বন্ধুর নাকি বুটিক ছিল। কলকাতায় তখন 'বুটিক' ব্যপারটা সবে আসছে, খুব একটা অলি গলিতে চোখে পড়ে না, শুধু খবরের কাগজে বা পাক্ষিক সানন্দায় পয়লা বৈশাখ দুর্গাপুজা ইত্যাদির আগে বুটিকদের নাম ঠিকানা আর প্রদর্শনীর দিন তারিখ বের হয়। আমি, আমার পরিমন্ডলের লোকেরা জানি বুটিকের কাপড় জামা 'ভয়ানক দামী' হয়। তা সে হেন বুটিকের মালকিন ঝুমকির বন্ধু এই খবরে আমরা ওকে একটু সমীহই করতাম। সমীহ করার আরো কারণ হল ঝুমকি প্রায় প্রত্যেক সপ্তাহেই সেখান থেকে কিছু না কিছু নতুন ড্রেস বানিয়ে আনত। এখানে ড্রেস বলতে সালোয়ার/চুড়িদার কামিজ বুঝতে হবে। তখনও কলকাতার অফিসে টফিসে ওয়েস্টার্ন ফ্রক টাইপের ড্রেস প্রচলিত ছিল না। ঐ কোম্পানিতে বা সমজাতীয় কোম্পানিগুলিতে আমরা যারা চাকরি করতাম, সকলেই তখন মোটামুটি সচ্ছল বলা চলে। জামাকাপড় আমরাও নিতান্ত অপ্রয়োজনেও প্রচুরই কিনতাম। সেই আমাদের কাছেও ঝুমকির প্রতি সপ্তাহে তিনটি কি চারটি বহুমূল্য পোষাক বানানো কিঞ্চিৎ বাহুল্যই মনে হত।

    তা এরকমই এক সকালে ঝুমকি দেখি বেরিয়ে না গিয়ে অফিসের মধ্যেই এদিক ওদিক ঘুরে বেড়াচ্ছে। একবার ক্যান্টিনে গেল, একবার এসে যে নতুন বিল্ডিং তৈরী হচ্ছে সেদিকটায় গিয়ে একা একা দাঁড়িয়ে রইল। মেয়েদের মধ্যে এত সকালে আমি ছাড়া আর কেউ আসে না। আমি ক্যান্টিন থেকে এককাপ কফি নিয়ে বাইরের খোলা জায়গায় দাঁড়িয়ে আস্তে আস্তে চুমুক দিচ্ছি তখন দেখি চুপচাপ এসে আমার পাশে দাঁড়াল। ভদ্রতাসুচক দুই একটা কথা বললাম, কেমন অন্যমনস্কভাবে খানিক উত্তর দিল খানিক দিল না। তারপর হঠাৎ নিজে থেকেই বলল 'আজ আমার মেয়ের মুখেভাত'।

    আমি ভেতরে ভেতরে বেশ চমকালাম। এই রোগাপাতলা নিতান্ত বাচ্চাগোছের মেয়েটার আবার একটা মেয়েও আছে! মুখে বললাম 'আচ্ছা'!? ভাবলাম হয়ত একেবারেই ছুটি নেই তাই এসেছে অফিসে। এরপর নিজে থেকেই ও বলল ওর শ্বশুরবাড়ি বর্ধমান, ওর বর তন্ময় কোনও চাকরি বাকরি করে না, করার দরকার নেই, বর্ধমানে ওদের পৈত্ৃক চালকলের ব্যবসা থেকে যা আয় হয় তাতে চাকরি করার কোনও প্রয়োজনই নেই। ওরা একইসাথে ইন্জিনিয়ারিং পড়ত, সেখান থেকেই সম্পর্ক ও বিয়ে। ওর মেয়েটাকে রাজকন্যার মত যত্নে রাখে ওর শ্বশুরবাড়ি, কিন্তু বর্ধমানে থাকলে ঝুমকির চাকরি ছাড়তে হয়, তাই ও তন্ময় আর মেয়েকে নিয়ে সল্ট লেকেই থাকে। আমি আদৌ শুনছি কিনা তার তোয়াক্কা না করেই ঝুমকি একটানা বলে যাচ্ছিল। ঝুমকি যতক্ষণ কথা বলোছিল আমি চুপ করে ওকে লক্ষ করছিলাম। অদ্ভুত এক বিপন্নভাব লেগে ছিল ওর চোখেমুখে, যেন ভীষণ চাইছে সবাই দেখুক ও কত ভাল আছে, কত বড়লোক ওর শ্বশুরবাড়ি, কত যত্নে রাখে ওকে তন্ময় - আর তার মধ্যে দিয়ে বারেবারে বেরিয়ে আসছে মাতৃত্বের ফাঁসে বন্দী হয়ে যাওয়া এক তরুণী, যে হয়ত এখনও যখন তখন হুট করে এদিক ওদিক বেড়াতে চলে যেতে চায়, রাতভোর গানের আসর শুনতে বসে যেতে চায় - কিন্তু বাড়িতে বাচ্চা আছে ভেবে যাকে ঠিক সময়ে গুটি গুটি পায়ে বাড়ি ফিরতে হয় - বাড়িই ফিরতে হয়। বারেবারেই বলছিল ওর মেয়ের মুখেভাত অনুষ্ঠানে বর্ধমান থেকে ওর শ্বশুর বাড়ির প্রচুর আত্মীয়স্বজন, বাপের বাড়ির দিক থেকে কত লোকজন এসেছেন, তন্ময় কেমন তাঁদের সবার দেখাশোনা করছে -- ওর আসলে সেখানে থাকারই কোনও দরকার নেই। হয়ত সত্যিই নেই, কিন্তু সেটাও যে ওর খুব ভাল লাগছে তাও তেমন মনে হল না। নিজের মেয়ের মুখেভাতে উপস্থিত থাকতে না পারার কষ্ট আর উপস্থিত থাকতে বাধ্য না হওয়ার স্বস্তি দুইই ওর চোখেমুখে অপর্যাপ্ত লেগেছিল সেদিন।

    এরপর তো কেটে গেল কতশত দিন মাস, খান দশবারো বছরও, ঘুরে ফেললাম পৃথিবীর বেশ খানিকটা। আর এই দশ বারো বছরে পৃথিবীটা যেন হ্যাঁচকাটানে এগিয়েও গেল অনেকখানি। এর মধ্যেই সেদিন কাগজে দেখলাম মায়েদের মধ্যে বাড়ছে মানসিক রোগ। 'মায়েদের মধ্যে'? মানুষের মধ্যে বা এমনকি মেয়েদের মধ্যেও নয় একেবারে মায়েদের মধ্যে!? খবর পড়ে জানলাম বেশ কিছু মা 'মাতৃত্ব' নামক বোঝাটির চাপে প্রায় পাগল হতে বসেছেন। কেউ কেউ ডাক্তারের দ্বারস্থ হয়েছেন, আর কেউ হয়ত সন্তানটি সহই মৃত্যুর দিকে হেঁটে গেছেন। কী ভয়ংকর কথা। যে শিশুটি হয়ত হতে পারত অজস্র আনন্দের উৎস, সে শুধুই হয়ে দাঁড়াল তার মায়ের চরম বিপন্নতার কারণ। আবার তাকে কোথায় কার কাছে রেখে যাবেন এই হতাশায় মা তাকেও নিয়ে গেলেন মৃত্যুর দিকে। এঁরা অনেকেই সম্ভবতঃ 'পোস্ট পার্টাম ডিপ্রেশান' শব্দগুচ্ছর নামও শোনেন নি। আর আমাদের দেশে "মাতৃত্ব" আর্কিটাইপ সম্পর্কে যে অসম্ভব প্রত্যাশা গোটা সমাজ চাপিয়ে দেয় মেয়েটির মাথায় তার থেকে বেরোবার রাস্তাও অনেকেই খুঁজে পান না। একটা মেয়ে একেবারে ছোট থেকে শুনে আসে 'মা হওয়া কি মুখের কথা!' তা মুখের কথা নয় তো বটেই  প্রচুর শারীরিক মানসিক প্রস্তুতি ও ধকলের ব্যপার  জড়িত পুরো 'মা হওয়া' প্রসেসটার সাথেই। মজা হল 'মুখের কথা' যে নয় এটা যতই বলা হোক না কার্যক্ষেত্রে অনেকসময় স্রেফ মুখের কথার ওপরে নির্ভর ও ভরসা করেই 'মা' হয়ে যেতে হয় অনেককে।  সন্তানধারণকালীন যে শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যেতে হয় একজন মেয়েকে তার জন্য প্রস্তুত করার সুযোগ ও শিক্ষা এমনকি মধ্যবিত্ত বা উচ্চমধ্যবিত্ত বাড়িগুলোতেও  যথেষ্ট সীমিত। অমুক কোরো না বা তমুক জায়গায় যেও না জাতীয় বিধিনিষেধ যেমন সহজে শুনিয়ে দেওয়া হয় তেমনভাবে কিন্তু একটি অতি ছোট প্রাণ জীবনে চলে এলে  জীবনযাপনে কী কী পরিবর্তন আসতে পারে, নিজের চেহারা সহসা পরিবর্তিত হয়ে গেলে নিজের মনে তার কী ছাপ পড়তে পারে; এই ব্যপারগুলো বোঝানো হয় না। উপরন্তু যে হাসিখুশী তরুণীটি এইগুলি একা একা বুঝতে না পেরে, সামলাতে না পেরে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে তাকে কখনও ঠাট্টা, কখনও রীতিমত তিরস্কার, কিছু ক্ষেত্রে অত্যাচারও করা হয়ে থাকে।  ফলতঃ মাতৃত্ব কখনও ফাঁস হয়ে বসে মেয়েটির গলায়।

    এ তো গেল একটা দিক। আর একটা দিক হল মা হওয়া যে 'মুখের কথা' নয় এ কথা অনবরত শুনতে শুনতে  মেয়েটিও ক্রমশ  দূরে যেতে থাকেন তাঁর শখসাধ, নিজস্ব ভুবন থেকে। বহুক্ষেত্রে উপযুক্ত সাপোর্ট সিস্টেমের অভাব তাঁকে বাধ্য করে সর্বত্র থেকে গুটিয়ে আসতে। ইন্দ্রা নুইর গল্প ঘুরিয়ে ফিরিয়ে শুনিয়ে যাওয়া হয় আর মেয়েদেরই একটা বড় অংশ সেটাকে অনবরত জাস্টিফাই করে চলে। যত যাইই কর না কেন বাপু দিনের শেষে তুমি যে 'মা' সেটিই তোমার সবচেয়ে বড় অর্জন এই  কথাটিই সবদিক থেকে বোঝাবার চেষ্টা চলে। ঝুমকিদের তাই 'অফিসে  একদম ছুটি নেই' অজুহাতে পালিয়ে থাকতে হয়। হ্যাঁ তখন ঝুমকির লিভ ব্যালেন্স ছিল,  ও সেদিন দুই শিফট কাজ করে বাড়ি গেছে সেটা কিছু পরে জেনেছিলাম।  ঝুমকি তো তাও নিজের  নিশ্বাস ফেলবার জায়গাটুকু খুঁজে নিয়েছিল, যে মায়েরা সেটুকুও না পেয়ে মৃত্যুকেই বেছে নেন, কিম্বা সন্তানসহ মৃত্যু বেছে নেন  তাঁদের অসহায়তার কথা ভাবলেও নিজেরই অসহায় লাগে।

    পোস্ট পার্টাম ডিপ্রেশান নিয়ে আমাদের দেশে কিরকম সহায়তা পাওয়া যায়, কতদূর সচেতনতা আছে আমি জানি না। পরিচিত মহলে আদৌ দেখি নি। ডিপ্রেশান  অসুখটিকেই মোটা দাগে 'মানসিক রোগ' বলে চিহ্নিত করে সামাজিক একঘরে করে রাখার প্রবণতা কিম্বা "যত্ত ঢং" বলে তাচ্ছিল্যভরে উড়িয়ে দেওয়ার প্রবণতাই যেখানে প্রবল, সেখানে সন্তানজন্ম পরবর্তী ডিপ্রেশানকে হয়ত পুরোপুরি ট্যাবু বলেই ধরা হবে।  আমার ফেসবুক ওয়ালে এই নিয়ে ছোট একটি পোস্ট দেওয়ায় বন্ধুদের সাথে আলোচনায় দুটো ইন্টারেস্টিং  পয়েন্ট পাই। আত্রেয়ী দেখায় গার্ডিয়ানে প্রকাশিত এক মায়ের কথা, যিনি মা হয়েই বুঝতে পেরেছিলেন তাঁর নিজেরই ভাষায় I made a mistake। কিন্তু তাঁর সে কথা শুনতে প্রায় কেউ রাজী নয়।  তিনি তাঁর মেয়েটিকে খুবই ভালোবাসেন, মেয়ের বড় হয়ে ওঠাও যথেষ্ট উপভোগ করেছেন, কিন্তু একজন মায়ের কাছ থেকে তিনি মা হয়ে ভুল করেছেন এই কথাটা শুনতে প্রায় কেউ রাজী থাকে না। তাঁর মেয়ের সাথেও তিনি এই নিয়ে আলোচনা করেছেন।  মজা হল তিনি মুখ খোলার পর অ্যানোনিমাস ফোরামে অনেক মেয়েই জানায় 'মাতৃত্ব' ব্যপারটা তারাও মোটেই উপভোগ করছে না।  প্রথম বিশ্বের ব্যক্তির অধিকার ও যথেষ্ট শারীরিক ও মানসিক সাপোর্ট সত্ত্বেও যদি  মেয়েরা অ্যানোনিমাস না হয়ে এই নিয়ে মুখ খুলতে না পারে, তাহলে ভারতের অবস্থা সহজেই অনুমেয়।অন্য আরেকটা পয়েন্ট যেটা বন্ধুদের আলোচনায় উঠে এসেছিল সেটা হল বাচ্চাদের সমস্যার পেছনে মায়েদের ডিপ্রেশান বা আন্ডারকেয়ার অথবা ওভারকেয়ার এবং তার পেছনে আসা অত্যধিক প্রত্যাশার চাপকে কারণ মনে করছেন মনস্তাত্বিকগণ। 

    আমাদের দেশে এখনও তেমন পর্যাপ্ত সমীক্ষা হয় নি এই নিয়ে। সন্তানের প্রতি অত্যধিক কেয়ার ও  অত্যধিক প্রত্যাশা যে সন্তানের গলায়ই ফাঁস হয়ে চেপে বসে এর বেশ কটি উদাহরণ আমার কাছের পরিচিত ও  আত্মীয়মহলেই দেখা।এঁদের কেউ কেউ নিজের পড়াশোনা, গান, কেরিয়ার সব ছেড়ে সন্তানের সাথে সর্বদা লেগে থাকেন, প্রতিটি ক্রিয়াকর্মের পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসেব নেন এবং প্রত্যাশামাফিক না হলেই অনর্থ বাধান। কেউ বা আবার তেমন কিছু ছাড়েন নি, মানে প্রথম থেকেই নিজের জন্য তেমন কোনও ভুবন গড়ার চেষ্টাই করেন নি, সন্তান ও তার/তাদের ভবিষ্যতই তাঁর নিজস্ব ভুবন ধরে নিয়েছেন। এইবার সন্তান যত বড় হতে থাকে ততই তার ওপরে এই আকাশচুম্বী প্রত্যাশার বিরূপ প্রতিক্রিয়া হতে থাকে। এরকম এক পরিচিতা, প্রায় আত্মীয়াই বলা চলে,   তাঁর সন্তানকে বলতেন 'তোর জন্য আমি আমার সমস্ত জীবন শেষ করে দিলাম  আর তুই?" সেই সন্তান মোটামুটি রকম একটা চাকরি যোগাড় করে মা'কে বলেছে "সারা জীবন বলে গেলে 'জীবন শেষ করে দিলে'  সত্যি যদি তুমি মরে যেতে  আমার জীবনটা অনেক বেটার হত"। কথাগুলি বলার সময় আমার সেই পরিচিতার গলার অতল শূন্যতা আমাকে অবশ করে দেয়। আমি তাঁকে মনে করাতে পারি না সন্তানটি ছোট ছিল সময় তার দাদু, ওঁর শ্বশুর যখন শিশুটিকে অন্য শিশুদের মিশতে দিতে খেলতে যেতে দিতে বলতেন উনি তখন কত রাগ করতেন। এখন  তো আর কিছুই ফিরবে না।

    আর শুধু  ডিপ্রেশানই নয়,এমনিই সুস্থ হাসিখুশি  বন্ধুবান্ধব বা পরিচিত অনেক মেয়েকেই দেখি একলা একলা বা স্রেফ নিজের বন্ধুদের সাথে খুব একটা কোথাও বেড়াতে টেড়াতে যায় না। এদের দেখি আর  আর আমার খালি ঝুমকির কথা মনে পড়ে। ঝুমকি তো পরে ১৬ মাসের মেয়েকে রেখে বেলজিয়াম গেছিল, নিজের মত ঘুরে বেড়িয়ে চাকরি করেছে, পরে তন্ময় আর মেয়েকেও নিয়ে গেছিল কয়েক মাসের জন্য। কিন্তু এখন যারা একেবারে সরে যাচ্ছেন কেরিয়ার ছেড়ে বা নিজের শখসাধ নিজস্ব  কিছুটা সময় সম্পূর্ণ ছেড়ে দিয়ে সমস্ত সময়টুকু সন্তাদের পেছনে দিয়ে দিচ্ছেন নিজের জন্য একটুও স্পেস না রেখে স-সন্তান যখন বড় হয়ে নিজের ভুবন গড়ে নেবে তখন এরা নিজেদের বেঁচে থাকার জন্য যথেষ্ট কারণ, নিজস্ব পরিচয়টুকু খুঁজে পাবেন তো? 


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • আলোচনা | ১৭ মার্চ ২০১৭ | ৯৯৬ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • ইন্দ্রাণী সেনগুপ্ত | ***:*** | ১৭ মার্চ ২০১৭ ০৭:৫৭82564
  • সন্তান যবে থেকে হাঁটতে শিখবে, কথা বলতে শিখবে তবে থেকে তাকে আলাদা মানুষ হিসেবে ধরা উচিত। তার ইচ্ছে-অনিচ্ছে, আগ্রহ-অনাগ্রহ, তার মতামত ইত্যাদি ইত্যাদি সমস্ত কিছুর গুরুত্ব দিতে হবে। যেহেতু সে খুব ছোটো তাকে ঠিক/ভুল ইত্যাদি বিষয়গুলোতে গাইড করতে হবে কিন্তু সিদ্ধান্ত তাকে নিজেকে নিতে দিতে হবে। তবে এর জন্যে সবার আগে দরকার নিজের স্বাধীন মানসিকতার। নিজে স্বাধীন না হতে পারলে সন্তানকে একজন স্বাধীন মানুষ হিসেবে ভাবা মুশকিল।
  • | ***:*** | ১৮ মার্চ ২০১৭ ০১:৫৩82565
  • ইন্দ্রাণী, আপনার সাথে খুব একমত। শুধু জানতে চাই ঠিক কীভাবে গাইড করে নিজের সিদ্ধান্ত নিজে নেবার জায়গায় পৌঁছে দেওয়া যাবে?
  • Ekak | ***:*** | ১৮ মার্চ ২০১৭ ০২:১৮82566
  • আমি যবে থেকে হাঁটতে শিখেছি , প্রথম কাজ ছিল সমস্ত ছোট সাইজের জিনিস দোতলার জানলা দিয়ে নীচে ফেলে দেওয়া । একটু বড় সাইজের জিনিস ঠেলে ঠেলে স্থান পরিবর্তন করানো । জলের কুঁজোর ভেতর ব্যবহৃত মোজা ঢুকিয়ে দেওয়া । ঘুমন্ত মানুষের হাঁ মুখে নুন দিয়ে দেওয়া । গ্রামের বাড়িতে আখার মধ্যে পটকা গুঁজে রাখা ।চৌবাচ্চা দেখলেই বেয়ে উঠে ভেতরে নাবা । ইত্যাদি । এগুলো সব ওই দু-তিন বছরে । মায়ের কাছে শুনেছি ।

    মূল লেখা প্রসঙ্গে : পোস্ট পারতাম ডিপ্রেশন এর অবতারণা ভাল্লাগ্লো । কদিন আগেই একটি ডকুমেন্টারি দেখছিলুম । আমেরিকার ঘটনা । এক মহিলা পিপি র শিকার হয়ে তাঁর সবকটি সন্তান কে খুন করেন । আমাদের দেশে এখনো সচেতনতা তৈরী হয়নি। একবার বাচ্চা হয়ে গেলে সবকিছুই বাচ্চাকেন্দ্রিক । ওভারঅল মানসিক অসুখের সচেতনতা বলেই কিছু নেই । একদল আছেন যাঁরা মানসিক অসুখ মানে পাগল বোঝেন । আরেকদল আছে যাঁরা সোশ্যাল মিডিয়াতে স্টাটাস দেন যে "ডিপ্রেশন " হয়েছে । অথচ ক্লিনিক্যাল ডিপ্রেশন এর জন্যে ডাক্তার দেখান না । নিজেই বুঝে যান । অদ্ভুত আনব্যালান্সড সমাজ ।
  • Atoz | ***:*** | ১৮ মার্চ ২০১৭ ০২:২০82567
  • নিজেই "বুঝে" যান। ফ্যাশন ডিপ্রেশন। ঃ-)
  • Ekak | ***:*** | ১৮ মার্চ ২০১৭ ০২:৩৩82568
  • আমি ডাক্তার নোই । ফ্যাশন বলে জাজ করতেও চাইনা । একটাই কথা যে , ক্লিনিক্যাল ডিপ্রেশন তো ভয়ঙ্কর সিরিয়াস একটা ব্যাপার , সেটা ডাক্তার না দেখিয়ে কিভাবেই বা নিশ্চিত হন কিভাবেই বা "অমুক আমার ডিপ্রেশনের জন্যে দায়ী " বলে ক্যাঙ্গারু কোর্ট বসান ... সেভেরাল কেস দেখেছি সোশ্যাল মিডিয়াতে এই মর্মে । এটা দেখেই সন্দেহ হয় যে , আমরা যখন সচেতনতা বাড়ানোর কথা বলি সেটা কীভাবে সম্ভব ?
  • dc | ***:*** | ১৮ মার্চ ২০১৭ ০২:৩৪82569
  • আমিও নাকি ছোটবেলায় জিনিষ ফেলতে খুব ভালোবাসতাম। আমরা একটা দোতলা বাড়িতে ভাড়া থাকতাম, সেখানে নাকি যা কিছু হাতের কাছে পেতাম জানলা গলিয়ে বাইরে ফেলে দিতাম। মজা হলো, এখন আমরা যে ফ্ল্যাটে থাকি সেখানেও আমাদের পাশের ফ্ল্যাটে ঠিক ওরকমই একটি বদমাইস বাচ্চা অবতীর্ণ হয়েছেন। তিনি সবার ফ্ল্যাটে ঘুরে ঘুরে বেড়ান আর সব্বার জিনিস একান্ত আপন মনে করে নীচে ফেলে দেন।

    পোস্ট পারতাম ডিপ্রেশন নিয়ে প্রায় কিছুই জানতাম না, এই লেখাটা পড়ে জানলাম। "যিনি মা হয়েই বুঝতে পেরেছিলেন তাঁর নিজেরই ভাষায় I made a mistake" এখানটা পড়ে মনে হলো, এটার সাথে কি কোনভাবে post purchase cognitive dissonance এর যোগ থাকা সম্ভব?
  • Atoz | ***:*** | ১৮ মার্চ ২০১৭ ০২:৪১82570
  • সেটাই। সোশাল মিডিয়াতে এরকম প্রচুর চরিত্র দেখা যায়। বাঘ ও রাখাল এর গল্পের কেস দাঁড়িয়ে যায়। আসলে বিপদ যখন হল তখন আর কেউ বিশ্বাস করল না। কারণ আগে অনেকবার মিছিমিছি বাঘ বাঘ করেছে।
  • cm | ***:*** | ১৮ মার্চ ২০১৭ ০৬:০৫82571
  • ভেবে দেখলাম মাতৃত্ব নয়, দায়িত্ব হল ফাঁস। একই সাথে সকল মা বাবাকে কৃতজ্ঞতাও জানাই।
  • Arpita | ***:*** | ১৯ মার্চ ২০১৭ ০৯:২৮82572
  • লেখাটা খুবই প্রসঙ্গিক।।।এরকম লেখাগুলো এক্ত সচেতনতা গোড়ে তুলবে আশাকরি। আর কবে ।। মেয়েরা নিজেদেরকে আজো তো চিনলো না।।
  • T | ***:*** | ২১ মার্চ ২০১৭ ০৪:০৫82573
  • যে সমস্যা নিয়ে লিখেছ, যার আভাস পাওয়া যাচ্ছে লাস্ট প্যারাগ্রাফে সেরকম সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি ব্যক্তিগতভাবে। অন্য ভুবন ও পরিচয়টুকু যাতে হারিয়ে না যায় সেজন্য যতটা পারা যায় এফোর্ট দিই এবং সেটা দরকারী বলে মনে করি।
  • S | ***:*** | ২১ মার্চ ২০১৭ ০৯:৩১82574
  • হঠাত এই একই টপিকের উপরে অনেকগুলো টই একসাথে।
  • S | ***:*** | ২১ মার্চ ২০১৭ ০৯:৪৫82575
  • তুল্লাম।
  • pi | ***:*** | ২১ মার্চ ২০১৭ ১২:০৩82576
  • আরে এস। টই না তো। এবারে তো এই টপিকে চারটে বুলবুলভাজা বেরিয়েছে। এটা তারই একটা।
  • rani | ***:*** | ০৬ এপ্রিল ২০১৭ ০৫:০০82577
  • মাতৃত্ব নামক মধুর ফাঁসটি গলায় পড়ে উদয়াস্ত শুধু ছেলেমেয়ের কথা ভেবে , গুচ্ছের টিউশন ও কোচিঙের ফাঁসে তাদেরও আটকে ফেলে, সুচারু কোনো ক্যারিয়ার বিল্ডিঙের খাঁচাকলে ঢুকিয়ে দিয়ে তারপর অবশেষে হাঁফ ছেড়ে কি যেন ... কি যেন করবার ছিল ... কি ভাবে যে দিন চলে গেল ... অগত্যা হোয়াটস অ্যাপ আর ফেসবুকের কলিং বেল ... হয়তো এও আস্তে আস্তে হয়ে ওঠে একটি সুমধুর ফাঁস ...
  • অভিষিক্তা | ***:*** | ১১ এপ্রিল ২০১৭ ০১:৩২82578
  • মাতৃত্বের দায়িত্ব মানে একটা জীবনের দায়িত্ব। উৎকণ্ঠা হওয়া তো স্বাভাবিক। কিন্তু ঝুমকি কেন মেয়ের অন্নপ্রাশনে থাকল ননা এবং সেটার সাথে তার শপিং প্রীতির কোন সম্পর্ক আছে কিনা বুঝলাম না
  • অভিষিক্তা | ***:*** | ১১ এপ্রিল ২০১৭ ০১:৩২82579
  • মাতৃত্বের দায়িত্ব মানে একটা জীবনের দায়িত্ব। উৎকণ্ঠা হওয়া তো স্বাভাবিক। কিন্তু ঝুমকি কেন মেয়ের অন্নপ্রাশনে থাকল ননা এবং সেটার সাথে তার শপিং প্রীতির কোন সম্পর্ক আছে কিনা বুঝলাম না
  • অভিষিক্তা | ***:*** | ১১ এপ্রিল ২০১৭ ০১:৩২82580
  • মাতৃত্বের দায়িত্ব মানে একটা জীবনের দায়িত্ব। উৎকণ্ঠা হওয়া তো স্বাভাবিক। কিন্তু ঝুমকি কেন মেয়ের অন্নপ্রাশনে থাকল ননা এবং সেটার সাথে তার শপিং প্রীতির কোন সম্পর্ক আছে কিনা বুঝলাম না
  • অভিষিক্তা | ***:*** | ১১ এপ্রিল ২০১৭ ০১:৩২82581
  • মাতৃত্বের দায়িত্ব মানে একটা জীবনের দায়িত্ব। উৎকণ্ঠা হওয়া তো স্বাভাবিক। কিন্তু ঝুমকি কেন মেয়ের অন্নপ্রাশনে থাকল ননা এবং সেটার সাথে তার শপিং প্রীতির কোন সম্পর্ক আছে কিনা বুঝলাম না
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। হাত মক্সো করতে প্রতিক্রিয়া দিন