এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ধারাবাহিক  উপন্যাস

  • লা পত্নী ভ্যানতাড়া – সারসংক্ষেপ 

    রানা সরকার লেখকের গ্রাহক হোন
    ধারাবাহিক | উপন্যাস | ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | ১৪০ বার পঠিত


  • প্রণয় বছর আটত্রিশের একজন যুবক। বাড়ি কলকাতার শিশুমঙ্গল হাসপাতালের কাছে। ছোটবেলা থেকেই সে ছিল দুরন্ত আর নানান পেটের অসুখে ভুগত; আর সঙ্গে ছিল হাঁপানি। আর তার এই দুরন্তপনায় অতিষ্ঠ হয়ে প্রণয়ের মা আবার ছেলেকে কব্জায় রাখবার জন্য পাড়ার একে ওকে দিয়ে ভয় দেখাতো প্রণয়কে। আর এই ভয় থেকে গিয়েছিল প্রণয়ের অবচেতনে।

    সে কলকাতার রাস্তা পেরোতে ভয় পেত; কারুর সঙ্গে ঠিক কী কথা বলতে হবে বা ব্যাঙ্ক বা পোস্ট অফিস বা হাসপাতালে গিয়ে ভেবলে যেত। পরে যদিও অ্যাকাউন্টেন্সি নিয়ে পাশ করে করত একটা মামুলি চাকরি।
     
    প্রণয়ের মা-বাবা মারা গেছেন প্রায় বছর পনেরো হল। মা মারা যাওয়ার সময় সেও অসুস্থ হয়ে ভর্তি ছিল হাসপাতালে। দিদি প্রমিতা ভালোবেসে বিয়ে করে অত্যাচারিত হয়ে সেই যে ফিরে এসেছিল বাপের বাড়িতে, আর ফিরে যায় নি। তখন যেন তাদের পরিবারের ওপর দিয়ে একটা ঘূর্নিঝড় গেছিল বয়ে।

    প্রণয়দের বাড়িটা এজমালি বাড়ি; বেশ পুরনো আর ছিল শরীকী ঝামেলা । তার এই অসুস্থতা আর দারিদ্রতার জন্য বেশ কয়েকটি মেয়ের কাছে হাফসোল খেয়েছিল প্রণয়। তারপরে আয় বাড়াতে গিয়ে পড়েছিল সারদা, রোজভ্যালি থেকে শুরু করে আরও বেশ কিছু প্রতারকদের পাল্লায়। ফলে তার অর্থনৈতিক অবস্থাও ধীরে ধীরে গেছিল খারাপ হয়ে।
      
    এখন যে মেয়েটির সঙ্গে তার অ্যাফেয়ার চলছে সে প্রণয়ের মায়ের মতো খুব পজেসিভ; নাম সীমান্তি। কিন্তু সেও বলে দিয়েছে যে রোজগার বাড়াতে না পারলে সেও অন্য দিকে চলে যাবে।

    ফলে এই দীর্ঘ সংগ্রাম, প্রতারণা, নষ্টামি, অপদস্ত হওয়া ইত্যাদি নানান মানসিক টানাপোড়েনে ক’দিন ধরে প্রণয়ের এক অদ্ভুত রোগ দেখা দিয়েছে শরীরে। ডাক্তারের কাছে যাওয়ার পর ডাক্তার বলেছে যে তার আই.বি.এস. হয়েছে। এখন সে তার পটি প্রায় ধরে রাখতে পারে না। দুমদাম যেখানে সেখানে বাসে, মেট্রোতে, রাস্তায় প্যান্টে হয়ে যায়। কলকাতার প্রায় হেন সুলভ নেই যেখানে প্রণয় পটি করে নি।

    সেইরকমই একদিন লেক মল থেকে আড্ডা মেরে সীমান্তির কাছ থেকে আল্টিমেটাম পেয়ে যখন প্রণয় বাড়ি ফিরছিল, তখন তার খুব পটি পেয়ে যায়। সে তাড়াতাড়ি কাছের একটা অন্ধকার জায়গা দেখে বসে পড়ে। জায়গাটা একটা পার্কের ধারে। সেখানে মশার কামড় খেতে খেতে আর পটি করতে করতে হঠাৎ তার দুজন লোকের কথা কানে আসে; একজন মহিলা কণ্ঠ আর একজন পুরুষ কণ্ঠ।

    মহিলা কণ্ঠ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, “আর কতদিন যে অপেক্ষা করতে হবে সোনা? আমি যে দিনকে দিন বুড়িয়ে যাচ্ছি”।
    পুরুষ কণ্ঠঃ Be patient Honey. আমার নাম আকাশ রায়চৌধুরী। বি.এম.ডবলু. গাড়িটা কি এমনি এমনি কিনেছি? We will go for a long drive. তবে তার আগে বৌকে সরাতে হবে”।

    বৌকে সরাতে হবে শুনেই সজাগ হল প্রণয়ের কান। ভাবল বৌকে সরাবে মানে? খুন করবে নাকি? সে কান আরও সজাগ করল। মন দিয়ে শুনতে থাকল ওদের বাকি কথাবার্তা।
    মহিলা কণ্ঠঃ সাবধানে কিন্তু খুনটা করতে হবে সোনা। তুমি তো আবার ল্যাদোস টাইপের।
    পুরুষ কণ্ঠঃ আরে, Don’t worry জান। সুপারি দেওয়া আছে। হয় এই মাসের মধ্যেই, নয়তো আমি নিজেই ওকে খতম করব।

    উঠতে গিয়েও উঠতে পারল না প্রণয়। আরও একটু হবে। ওদিকে মানুষ দুটো পার্কের আলোছায়ার মধ্যে দিয়ে হাত ধরাধরি করে গেটের দিকে গেল এগিয়ে ।    

    যদিও পটির বেগ আর পেছন মুছতে সময় লেগে যাওয়ায় ওদের পেছনে ধাওয়া করতে দেরী হয়ে গেল প্রণয়ের, তবুও কিন্তু তার কানে বাজতে থাকল দুটো কথা – এক, আকাশ রায়চৌধুরি আর দুই, বি.এম.ডবলু. গাড়ি।

    প্রণয়দের পাশের বাড়িতেই থাকে বৈদেহী। বৈদেহী তখন রবীন্দ্রভারতী থেকে মাস্টার্স করছে। পরদিন প্রণয় ওকে গিয়ে খুলে বলল সব কথা। বৈদেহীকে আগে প্রণয় পড়াতো। ফলে সেও তার প্রাক্তন স্যারের সব কথা শুনে দারুণ চেগে গেল। ওরা ঠিক করল যে লালবাজারে বৈদেহীর মামা মিঃ দাসের কাছে গিয়ে সব খুলে বলবে। তার help চাইবে।  

    লালবাজারে যাওয়ার পর সেখানেও ল্যান্ট্রিন করতে গিয়ে সেই পার্কে শোনা মহিলা আর পুরুষ কণ্ঠের সেই কথাগুলোই আবার শুনতে পেল প্রণয়। কিন্তু এখানেও পটির বেগ থাকায় আবারও বেরোতে দেরী হয়ে গেল আর তার ফলে কারা যে এই কথাগুলো লালবাজারেও বলল সেটা সে জানতে পারল না।

    এদিকে ওদের কাছ থেকে সব শুনে মিঃ দাস প্রণয়ের মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি সন্দিহান হলেন। কিন্তু ভাগ্নির চাপে পড়ে ওদেরকে জোগাড় করে দিলেন চারজনের ল্যান্ড লাইন নাম্বার যাদের নাম আকাশ রায়চৌধুরী আর যাদের বি.এম.ডবলু. গাড়ি আছে।

    এবার ওরা দুজন প্রণয়ের এক বন্ধুর থেকে মোবাইল নিয়ে ফোন করল সেই চারজনের বউদের। প্রণয় বলল যে সে ‘লা পত্নী ভ্যানতাড়া’ কাগজ থেকে বলছে। সে তাদের সাবধান করে দিচ্ছে যে খুব সম্প্রতি তারা কেউ একজন খুন হবেন।

    ফলে শুরু হয়ে গেল একটা খেলা; একটা তোলপাড়। একটা ওলটপালট।   

    প্রণয় আর বৈদেহী কি আদৌ খুনটা আটকাতে পারবে? নাকি এটা প্রণয়ের একটা মানসিক সমস্যা? আর সেই সমস্যার ফলেই কি প্রণয়ের আডিও হ্যালুসিনেশন হয়? নাকি, অন্য কোনও নতুন রহস্যে ওরা পড়বে জড়িয়ে?

    জানতে গেলে পড়তেই হবে ‘লা পত্নী ভ্যানতাড়া’।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ধারাবাহিক | ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | ১৪০ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ঠিক অথবা ভুল মতামত দিন