এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  আলোচনা  ইতিহাস

  • মোজেস ও একেশ্বরবাদ অন্তিম পর্ব 

    হীরেন সিংহরায় লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | ইতিহাস | ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪ | ৯০০ বার পঠিত | রেটিং ৫ (৩ জন)


  • মোজেস ও একেশ্বরবাদ

    শেষ পর্ব ৪

    মার্চ ১৯৩৮ ।

    নাৎসি জার্মানির সঙ্গে  অস্ট্রিয়ার একীকরণ ( আনশ্লুস ) সম্পূর্ণ হলে ফ্রয়েডের নিরাপত্তার কথা ভেবে চিন্তিত হয়ে অনুগত শিষ্য আরনেসট জোনস ১৯৩৮ সালের চৌঠা জুন যখন তাঁকে ভিয়েনা স্টেশনে সুইজারল্যান্ডের ট্রেনে তুলে দেন , ফ্রয়েডের ফোলিও ব্যাগে ছিল তাঁর শেষ লেখা -  মোজেস ও একেশ্বরবাদের অন্তিম পর্বের অসম্পূর্ণ পাণ্ডুলিপি।  

    বারনারড শ নাকি কোথাও বলেছিলেন তিনশো বছর বাঁচলে তবে মানুষ কিছু পৃথিবীতে কিছু মূল্যবান অবদান রেখে যেতে পারে ( ফ্রয়েড এই উদ্ধৃতির সূত্র জানান নি, আমিও পাই নি  )।  ফ্রয়েডের মতে বয়েস নয়, মানুষের সৃষ্টি শক্তিই  সেটা স্থির করতে পারে এবং সেই শক্তি তখন তিনি ক্রমশ হারিয়ে ফেলছেন বলে তাঁর মনে হয়েছে। এই সঙ্গে তিনি সাম্প্রতিক ঘটনাবলীর উল্লেখ করেছেন  – সোভিয়েত ইউনিয়ন দলিত পীড়িত  মানুষকে অন্ন বস্ত্রের সংস্থান করে দিয়েছে , যেমনটা করেছে নাৎসি জার্মানি কিন্তু এই দুই দেশের  কোথাও মানুষের মুক্ত চিন্তার স্থান নেই । অন্যদিকে ক্যাথলিক চার্চ চিরদিন কৃষ্টি বিরোধী , তাঁরা কখনোই চান না মানুষ সত্যের অনুসন্ধান করুক । কট্টর ক্যাথলিক দেশ অস্ট্রিয়া এবং শহর ভিয়েনায় নয়,  মোজেস ও একেশ্বরবাদের শেষ পর্ব  তিনি লিখতে শুরু করলেন জুন মাসে , লন্ডন হ্যাম্পস্টেডের বাড়িতে বসে, যা তাঁর জীবদ্দশায় প্রকাশিত হবে না। ২৩শে সেপ্টেম্বর ১৯৩৯ তিনি পৃথিবী থেকে বিদায় নেবেন।

    মোজেস তাঁর সহচরদের ইখনাতনের একেশ্বরবাদে দীক্ষা দেবার সময়ে ঘোষণা করেছিলেন তাঁরা সকলেই ঈশ্বরের নির্বাচিত মানুষ ( চোজেন পিপল)।  প্রকৃত প্রস্তাবে ঈশ্বর নন, মোজেস নিজেই এই নির্বাচনের কাজটি করেছিলেন ;  ঈশ্বর সিনাই পর্বতের নিরালায় বাস করেন , তাঁর পক্ষে পথে ঘাটে ঘুরে প্রিয়জন বাছাই করার প্রশ্নই ওঠে না। মানুষ তার পছন্দের ঈশ্বরকে খুঁজে নেয়, তাঁর পূজো করে।  কিন্তু সিনাইয়ের পাদদেশে সমবেত জনতা যে ঈশ্বরের পছন্দের মানুষ এই জবরদস্ত মিথটি টিকে গেলো চিরতরে।  

    আগের পর্বে আমরা দেখেছি ঈশ্বরের সঙ্গে মোজেসের সাক্ষাৎ সিনাইতে হয় নি।  সিনাই আগ্নেয়গিরি নয়,  তাই ক্রুদ্ধ হলে ঈশ্বর সেখানে ধুন্রজাল বা প্রস্তর বৃষ্টি করতে পারেন না,  যার উল্লেখ আছে হিব্রু বাইবেলে।  পরবর্তী কালের ইহুদি ঐতিহাসিকরাও সেটি মানেন । যে পাহাড়ে মোজেস ঐশ্বরিক আদেশ পেলেন সেটি আজকের সৌদি আরবের কাদেশ অঞ্চল সেখানে আছে আগ্নেয়গিরি।  কাদেশ পৌঁছে মোজেসের দলবল আরও দেখলেন সেখানে তাঁদের কিছু জাত ভাই বাস করেন।

    এঁরা কারা ?  

    কানানে অন্নের অকুলান হলে খাদ্য বস্ত্রের সন্ধানে পিতা আব্রাহামের পুরো গুষ্টি পাসপোর্ট ভিসা ছাড়াই একসঙ্গে মিশরে ঢুকে পড়েন নি , তাঁদের কিছু অংশ এদিক ওদিকে গেছেন। হিব্রু  বাইবেলে আমরা পেয়েছি ইহুদির বারো উপজাতি এবং তাঁদের হারিয়ে যাওয়ার গল্প । তাহলে  সিনাই পাহাড়ের পাদদেশে উপস্থিত মোজেসের অনুগামী জনতাই কেবলমাত্র আদি ইহুদি, ঈশ্বরের অরিজিনাল পছন্দের মানুষ – এ  মন্তব্য আপাত বিরোধী । ফ্রয়েডের ভাষ্য অনুযায়ী মোজেস বাহিনী কাদেশে যে  জাতির  সাক্ষাৎ পেলেন তাঁরা বালিমের পূজক। হিব্রু  বাইবেলে বালিম শব্দের উল্লেখ আছে অনেক বার । বা’ল অর্থ প্রভু;  (হিব্রুতে বহুবচনে ইম যোগ হয়,  যেমন কিবুতস থেকে কিবুতসিম ) । তাঁদের মূল  দেবতার নাম ইহাভে (জেহোভা ), তিনি সদা প্রসন্ন করুণাময় পরম পিতা । মিশর থেকে আসা মানুষেরা যে ঈশ্বরকে জেনেছেন তাঁর কোন কায়া নেই , তিনি যখন তখন রেগে যান , শাপ দেন , ইনি এলোহিম। ইয়াহভের সঙ্গে ঠিক মেলে না।  ফ্রয়েডের  মতে মিশর থেকে আসা এলোহিম এবং কাদেশের ইহাভে কালক্রমে এক দেহে লীন হলেন, তাঁদের প্রসন্ন আশীর্বাদে  জনতা ভাই ভাই হয়ে গিয়ে হানা দিলেন প্রতিশ্রুত কানান ভূমিতে । তবে সেখানে পৌঁছুনোর আগেই মোজেসের মৃত্যু হবে।

    এসবই শ্রুতি কাহিনি।
     
    লোকমুখে প্রচলিত গল্প লিপিবদ্ধ হয়েছে খ্রিস্টপূর্ব ১০০০ সাল নাগাদ,  ইহুদি  বাইবেলের প্রথম চারটে খণ্ডে  অর্থাৎ  জেনেসিস ( বেরেশিত )  একসোডাস (শেমত )  লেভিটিকুস (ভায়কিরা )  নাম্বারস (বামিদ বার) । লেখা হয় মোজেসের মৃত্যুর অন্তত তিনশো বছর বাদে। তারও তিনশো বছর বাদে দয়তেরোনমি   ( দেভারিম ) বা তোরার পঞ্চম খণ্ড লেখা হলো , সেখানে প্রথম পাওয়া যায় ইয়াভে ও এলোহিম এই দুই ঈশ্বরের  স্বতন্ত্র উপস্থিতির সংবাদ । তারও কয়েকশ বছর পরে  এজরা ও  নেহেমিয়া ইহুদি ধর্মের নিয়ম নীতি লিপিবিদ্ধ করেন যাকে বলা যায়  ইহুদি  পুরোহিত দর্পণ  ( প্রিসটলি কোড , তোরাত কোহানিম )। সেখানে দুই আপাত বিরোধী, একাধিক দেব দেবতা সহ কাদেশের ইয়াভে ( J)  এবং মিশরের, মোজেসের কায়াহীন এলোহিম ( E) কে কোনো  মন্ত্রবলে মিশিয়ে দেওয়া হলো । শুধু তাই নয় , মোজেসের প্রখর একেশ্বরবাদকে এজরা , নেহেমিয়া সিনেমাটিক কায়দায় একটি  ফ্ল্যাশব্যাকে   ( জার্মানে ফোরগেশিখটে , ইংরেজিতে বলা যায় সিকোয়েলের উলটো,  প্রিকোয়েল)  নিয়ে গেলেন যেখানে আদি পুরুষ ( পাত্রিয়ারক ) আব্রাহাম, তস্য  পুত্র আইজাক (ইতসাক/ইশাক) ), তস্য পুত্র জেকব ( ইয়াকব/ইয়াকুব  ) সকলেই যেন ইয়াহভের সঙ্গে সেই আদি চুক্তিতে - অরিজিনাল কভেনানট -   স্বাক্ষর করেছেন! সেরেফ  খাগের কলমের জোরে মোজেস হাজার বছর আগের মঞ্চে পূর্ণ মহিমায় দেখা দিলেন !  যেন কোনো টাইম মেশিনে চড়ে আদি শঙ্কর, চৈতন্য দেব, স্বামী বিবেকানন্দ , কবির এক আখড়ায় বসে লিখলেন হিন্দু দর্পণ!     

    মোজেসকে  যারা হত্যা করলেন তাঁরা আবার তাঁকেই গুরু মানলেন কেন?

    মানব ইতিহাসের সূচনায় আমরা দেখি শক্তিমান দলনেতাকে যিনি গোরু ভেড়ার পাল, সকল নারীর একছত্র অধীশ্বর । ক্রমশ তাঁর একনায়কত্বের বিরুদ্ধে জাগে  প্রতিবাদ, ঈর্ষার আগুন।  একদিন নেতার সন্তান বর্গ তাঁকে হত্যা করে জায়গির,  নারী সহ সকল সম্পত্তির অধিকারী হতে চেয়েছেন । এই পিতৃহত্যা সেই আদিম পাপ -অরিজিনাল সিন । টোটেম অ্যানড ট্যাবু বইয়েতে ফ্রয়েড বলেছেন এখান থেকেই আইনের এবং নৈতিকতার সূত্রপাত । আইন বলে ‘  মৃত পিতার সমস্ত সম্পদ কোন এক ভাইয়ের প্রাপ্য হতে পারে না ‘ । নৈতিকতা বলে, ‘ পিতৃহত্যা অপরাধ’ –(  ফ্রয়েডিয় সাইকো অ্যানালিসিস – এর বিস্তারিত ব্যাখ্যা বর্ণনা আছে )।

    ফ্রয়েডের মতে আপন অনুগামীদের হাতে মোজেসের হত্যা – প্যাট্রিসাইড -সেই আদিম পাপ,  ইহুদিকে দিয়েছে এক কেন্দ্রীয় সামগ্রিক অপরাধবোধ যেটি প্রাথমিকভাবে সুপ্ত ছিল । অন্যদিকে ঈশ্বরের পছন্দের মানুষ বলে খ্যাত হওয়ার বোঝাটা সহজ হয় নি , পদে পদে ইহুদি চেষ্টা করেছে  নিজেদের একটি বিশেষ পর্যায়ে উন্নীত করতে , বিদ্যায় , বুদ্ধিতে , সংস্কৃতিতে এক উচ্চাসনে অধিষ্ঠিত হতে । যে কোন সমাজে , যে কোন পাড়ায় , দেশে,  মহাদেশে বুদ্ধিদীপ্ত মানুষ আমরা দেখি , সেটাই স্বাভাবিক । কিন্তু ইহুদি নামক সমন্বিত গোষ্ঠীর প্রয়াস তাকে এমন একটা উচ্চস্তরে নিয়ে যায় , সেখানে সবাই অঙ্কে একশোর মধ্যে একশো পান, সকলেই আইনস্টাইন না হোক, গোল্ডম্যান হতে পারে ।  অ্যাডভান্সড ইনটেলেচুয়ালিটি তাঁদের ট্রেড মার্ক।

    ঈশ্বরের কোন মূর্তি, খোদাই করা চেহারা নেই । তাঁর কোন বাল্যকাহিনি নেই, ননী চুরি , কংস বধ , কোন বীর গাথা,  উপকথা রূপকথা কিছুই নেই । ঈশ্বরের মহিমার কল্প কাহিনিতে সময় নষ্ট না করে ইহুদি আধ্যাত্মিক চিন্তা করে।

    ইহুদি ধর্ম কথা  তোরার পাঁচটি গ্রন্থে লিখিত , সযত্নে সুরক্ষিত ছিল মন্দিরের গর্ভগৃহে।  ৭০ সালে দ্বিতীয় মন্দির ধ্বংসের পর থেকে সকল ধর্ম পুস্তকের রক্ষা করা আরও জরুরি হয়ে পড়ে । তোরা থাকত  মন্দিরে , সেখানেই পাঠ , শ্রবণ , পশু বলি , পূজো আচ্চা হতো । সিনাগগ , ইয়েশিভার কোন অস্তিত্ব ছিল না।   রোমান প্রশাসক টিটুসের সৈন্য ইহুদি মন্দির ভেঙ্গে দিলে রাব্বি ইওখানান বেন সাক্কাই ধর্মগুরুদের কাছে অনুরোধ জানালেন এবং সম্মতিও  পেলেন জেরুসালেমের নিকটবর্তী ইয়াবনে ( একদা প্যালেস্টিনিয়ান , তাদের বিতাড়নের পরে বর্তমানে ইসরায়েলি শহর ইয়াভনে ) একটি তোরা পাঠ ও চর্চার স্কুল , মিদ্রাস ( আরবিতে  মাদ্রাসা ) খোলার । সেই সময় থেকে ইহুদি ধর্ম পুস্তক ও পাঠের সম্পূর্ণ বিকেন্দ্রীকরণ হলো । এবার  ব্যাখ্যা করতে পারেন শিক্ষিত রাব্বি,  তিনি কোন প্রচারক , গুরু বা ধর্ম যাজক নন, বড়জোর পাঠ ভবনের শিক্ষক মাত্র। সেদিন থেকেই ক্যানটারবেরি , ভ্যাটিকানের মতো ইহুদির কোন কেন্দ্রীয় অথরিটি নেই,  প্রতিটি সিনাগগ সম্পূর্ণ স্বাধীন।ক্যাথলিক পুরুতের মতো স্থানীয় রাব্বির কোন রিপোরটিং লাইন নেই।

    ঈশ্বরের পছন্দের মানুষ হবার মূল্য দিতে হয় ইহুদিকে- প্রতিদিন প্রত্যেক  পরিস্থিতিতে তাকে প্রমাণ করতে হয় সে আলাদা, সে পাঁচ জনের একজন নয়, সে একেবারে পঞ্চম।  ঈশ্বরের নির্বাচিত মানুষ, তার ধর্ম আচরণ , ঈশ্বর বন্দনা পদ্ধতি অন্য সকলের থেকে স্বতন্ত্র ।ফ্রয়েড বলেন– ইহুদি নিজের সম্বন্ধে উচ্চ ধারণা পোষণ করে , অন্য সকলের চেয়ে নিজেকে উন্নত মানুষ বলে মনে করে,  ইহুদির ধর্ম আচরণ প্রথা অন্যদের চেয়ে আলাদা সেটা  লোকের চোখে যেন আঙ্গুল দিয়ে সে দেখিয়ে দিতে চায় – (যেমন নিজে বহু বার দেখেছি শুনেছি সাবাথের দিনে ঘাসে ওপর হাঁটা নিষিদ্ধ, বৃষ্টি পড়লে ছাতা খোলা যাবে না , তাকের ওপরে রাখা চিঠি নামিয়ে আমার হাতে দিতে পারে না ভাড়াটে ইতশাক  )  । তারা যে দেশেই বাস করুক না কেন, তারা যে আলাদা সেটা বারংবার প্রমাণ করা ইহুদি বিশেষ জরুরি মনে করে।  

    এখান থেকেই জন্ম নেয় ইহুদি চরিত্রের বিচিত্র বৈশিষ্ট্য – তার অহংকার । একদিন যারা খাদ্যের , বাসস্থানের সন্ধানে একদিকে ওদিকে ফ্যা ফ্যা করে ঘুরেছে, সেই ইহুদিকে মোজেস  দিলেন আত্মবিশ্বাস , মনে রেখো তোমরা স্বতন্ত্র মানুষ, স্বয়ং ভগবানের চেলা।  প্রতি পদক্ষেপে ইহুদি  সেই আপ্তবাক্যটি স্মরণ করে – তারা উচ্চস্তরের মানুষ। যে দেশেই তারা বাস করুক না  কেন, প্রতিবেশীদের সঙ্গে মেলামেশা করবে  ততটুকুই যা একান্ত আবশ্যিক;  সেই মেলা মেশা হবে  সীমিত  (অ্যাসিমিলেশন নৈব নৈব চ ) ইহুদি অন্যের ঈর্ষার কারণ , সেটাই  তাদের বিজয় ।

    এখানে সম সাময়িক গ্রিক সভ্যতার সঙ্গে তুলনা করতে গিয়ে ফ্রয়েড বলেন  গ্রিকরা তাদের শ্রেষ্ঠত্বের বহু প্রমাণ দিয়েছে, উচ্চ বিদ্যা চর্চার সঙ্গে সঙ্গে করেছে দেহ চর্চা , অ্যাথলেটিসিজম তারমধ্যে  বিশেষ স্থান পেয়েছে। ফ্রয়েড বিস্মিত বোধ করেছেন – হেলেনিক যুগে গ্রিকদের দেখেও  ইহুদি কখনো শরীর চর্চা , খেলাধুলায় মনোনিবেশ করে নি , তারা যে সেরা মানুষ সেটার প্রমাণ দিয়েছে অন্যত্র - আধ্যাত্মিকতায়, বিদ্যায়। 

    আত্মবিশ্বাস পোষণের ও প্রদর্শনের অধিকার আছে সকলের; বিভিন্ন  জাতি বা দেশের  মধ্যে নিজেকে বড়ো মনে করার মানসিকতার কিছু কমতি নেই । তফাৎ এই যে, ইহুদির আত্মবিশ্বাস কোন দেশের সীমানায়  বা কোন পতাকার তলায় সীমাবদ্ধ নয়; তাদের কোন দেশ বা পতাকা নেই (ফ্রয়েড ইসরায়েল সৃষ্টির ন বছর আগে মারা গেছেন)।  মোজেস এই আত্মবিশ্বাস,  এই অহংকারকে  ইহুদির  ধর্মীয় চিন্তার ভেতরে প্রোথিত করে দিয়ে গেছেন। জন্মে অবধি ইহুদি জানে সে বিশিষ্ট , সেরা মানুষ, সত্যকে একমাত্র তাঁরাই চেনেন, জানেন, সাবাথের দিন ঈশ্বরের সঙ্গে তাঁদের ওঠা বসা।   ইহুদির সঙ্গে অন্য জাতি ও জনতার পারস্পরিক সম্পর্ক নির্ধারিত হয়েছে এই শ্রেষ্ঠত্বের দাবির ভিত্তিতে;, তাঁরা নিজেদের এক মহা উন্নত শ্রেণির মানুষ মনে করেন, যা তাঁদের দেয় অহংকার । ইতিহাস থেকে ফ্রয়েড দেখান  খ্রিস্ট ধর্ম প্রতিষ্ঠার আগে, হেলেনিক যুগে খ্রিস্ট হত্যার কলঙ্ক যখন তাঁদের গায়ে লাগে নি , সেটা ইউরোপে প্রায় অজ্ঞাত ছিল- তখনও  তাঁরা ঠিক এই আচরণ করেছিলেন, যেমন আজ করে থাকেন , অন্য জাতির মানুষ যেন কুষ্ঠরোগী! ইহুদি এটাও ভাবেন তাঁরা ঈশ্বরের প্রিয়পাত্র বলেই  বিশ্ব শুদ্ধু মানুষ তাঁদের ঈর্ষা করেন। 

    আমরা আগের পর্বে দেখেছি এরনসট সেলিন তাঁর ইহুদি ইতিহাস চর্চা এবং ইসরায়েলি পুরাতত্ব গবেষণা দ্বারা সাব্যস্ত করেছেন মোজেস ইহুদিদের হাতে প্রাণ দিয়েছিলেন , গোয়েথে তাঁর  মরুভূমিতে ইসরায়েল (Israel in der Wüste, 1814 )  গ্রন্থে বিশেষ কোন রিসার্চ ছাড়াই এই মত প্রকাশ করেছেন ।
    বিলম্বে হলেও পিতৃ হত্যার পাপস্খলনের সুযোগ দেওয়ার জন্যই ঈশ্বর একদিন তাঁদেরই মধ্যে থেকে ধর্ম প্রচারকের বেশে এক মুক্তিদাতা ও পরিত্রাতাকে ধরাধামে পাঠালেন ;  যিনি ক্রুশে প্রাণ দিলেন সেই যিশু তো ইহুদি সন্তান ! জুডিয়ার কিছু মানুষ তাঁকে ঈশ্বরের সন্তান এবং প্রতিশ্রুত মেসিয়া জ্ঞানে সম্মান  করলেন।  প্রকৃত প্রস্তাবে যিশু নামক এক মানুষের  মহত্ত্ব কি  ক্রিস্টিয়ান বাইবেলের গসপেলের ওপরে আধারিত না  তাঁর নাটকীয় মৃত্যুর কারণে সেটা আমরা কি জানি ? তারসুস ( আজকের তুরস্কের মেরসিন প্রদেশের শহর ) হতে আগত রোমান ইহুদি পল – পরে সেন্ট পল –যিশুকে সাক্ষাৎ দেখেন নি কিন্তু  আজকের গিরজেয় যে বন্দনা পদ্ধতি দেখা যায় সেটি যিশু অথবা তাঁর শিষ্য  নয়, একান্ত পলের  মস্তিষ্ক প্রসূত ।

    ইহুদির ঈশ্বর নিরাকার। ক্রিস্টিয়ানিটি বিশ্বাস করে এক ঈশ্বরে কিন্তু পল যে ভজনালয় স্থাপনা করলেন সেটি মোজেসের কঠোর একেশ্বরবাদ মানে  কি? সেখানে তৎকালীন নানান ধর্মের রীতি, ধুঁয়ো দেওয়া, ঘণ্টি বাজানো, দেওয়ালে ঝুলন্ত  ক্রুশবিদ্ধ ঈশ্বর সন্তান যিশু, মাতৃ রূপিণী দেবী মাদার মেরি, বারো জন ঈশ্বর প্রেরিত (অ্যাপোসল ) সন্তের মূর্তি,  ,মিরাকলের চিত্র  ইত্যাদি নানান কল্প ও রূপকথায় গিরজে  ছয়লাপ।  ভ্যাটিকানের সিম্বলিজম ব্যাখ্যা করাটা লাভজনক ব্যবসায়ে পরিণত হয়েছে, ড্যান ব্রাউনরা করে কম্মে খাচ্ছেন।   ক্রিস্টিয়ানিটির মন্দিরে সাজানো এই অমর চিত্র কথা সিরিজ দেখে ফ্রয়েড বললেন, এ  যেন ইখনাতনের অবসানের পরে তাঁর একেশ্বরবাদ সরিয়ে দিয়ে মিশরের বহু দেব দেবীর পূজারী পুরোহিতদের বিজয়,মন্দির পুনর্দখল । 

    ইহুদি যে চোজেন পিপল সেটা পুনর্বার সাব্যস্ত করার একটা মস্ত মউকা ছিল ইহুদির সামনে;  তাঁরা  যদি যিশুকে ঈশ্বরের দূত বলে মেনে নিতেন তাহলে বাকি মানব জনতা সমস্বরে বলতো , বটে বাবু , তোমরা ঠিকই বলতে, আমাদের ত্রাণ করতে যিনি অবতীর্ণ হলেন তিনিও তোমাদেরই লোক !

    সেটা অবশ্যই হলো না , তাঁরা যে ঈশ্বর দ্বারা নির্বাচিত সেটি প্রমাণ করার দ্বিতীয় সুযোগটি ইহুদি হারালেন , পরিত্রাতাকে চিনতে পারলেন না । যিশুকে প্রত্যাখ্যান করে ইহুদি অন্যের ঘৃণা কুড়োলেন ।

    জার্মান জাতির নেতারা এক দিন এক পতাকার তলায় দাঁড়িয়ে দুনিয়াকে এত্তেলা পাঠিয়েছিলেন  - আমরা  উইবার মেনশ, সুপার মেন  !  বাকিরা সংশয় , সন্দেহ প্রকট করেন , কেউ বা পরিহাস করেন । ইহুদিকে সে কথা জোর গলায় জানাতে হয় না, হিব্রু বাইবেলে তো লেখাই  আছে তারা ঈশ্বরের বাছাই  করা মানুষ,  তা সে ইহুদি আর্জেন্টিনায় থাকুক আর ইথিওপিয়াতেই থাকুক।

    মোজেস দিয়েছিলেন  পিতৃ ভিত্তিক ধর্ম , হত্যার পরে তাঁর পুনরুত্থান যিশু।  তিনিও নিহত হলেন, এবার সর্ব সমক্ষে। ক্রিস্টিয়ান হোলি কমিউনিয়নে থাকে রুটি ( ব্রেড) – যিশুর দেহের প্রতীক, ওয়াইন অথবা ফলের রস – ক্রুশে যিশুর প্রাণত্যাগ, রক্তপাতের প্রতীক। ক্রিস্টিয়ানিটিতে ঈশ্বরের পুত্র পেলেন প্রাধান্য । ভজনালয়ে পিতার স্থান হল পুত্রের পরে ।  

    উপসংহার

    ফারাও ইখনাতনের মৃত্যুর পরে মিশরের মন্দিরের পুরোহিতরা তাঁর একেশ্বরবাদকে আস্তাকুঁড়ে  নিক্ষেপ করলে পরে মিশরীয় রাজকুমার, সামরিক কমান্ডার ও গোশেন প্রদেশের গভর্নর মোজেস ইখনাতনের শিক্ষাকে বাঁচিয়ে রাখার অঙ্গীকার করেছিলেন । মিশরে সে ধর্ম চর্চা বা প্রচার বিপদজনক ; তাকে বাঁচিয়ে রাখতে তিনি খুঁজে  নিলেন জুডিয়া থেকে আসা কিছু পরিযায়ী শ্রমিককে , তাঁদের দীক্ষা দিলেন একেশ্বরবাদে , নিয়ে গেলেন কানানের দিকে । এই যাত্রায় যোগ দিলেন জুডিয়ার আরও কিছু মানুষ , যারা  সঠিক একেশ্বরবাদী ছিলেন না । মোজেসের অনুগামীদের পক্ষে তাঁর কঠোর একেশ্বরবাদ এবং মিলিটারি শাসন  মেনে নেওয়া  কঠিন হয়ে উঠলে তাঁরা মোজেসকে হত্যা করেন কিন্তু একদিন  তাঁর এলোহিম এবং জুডিয়াতে প্রচলিত ইহাভেহ শেষ পর্যন্ত এক হয়ে গেলেন । পিতৃ হত্যার সুপ্ত অনুতাপ বোধ থেকে আসে মোজেস দ্বারা  প্রচলিত ধর্মের প্রতি আস্থার প্রকাশ -এখানে জার্মান কবি ফ্রিডরিখ শিলারের  গ্রিসের  দেব দেবীতে  (Die Götter Griechenlandes,1788 ) থেকে  ফ্রয়েড দুটি লাইন উদ্ধৃত করেছেন

    যা কিছু বেঁচে থাকে চিরন্তন সঙ্গীতে
    তাকে প্রথমত ডুবে যেতে হয় অতল গভীরে

    এমনি করে  কেটে যায় অনেক বছর । কালে কালে জুডিয়ার আরও মানুষ একত্র হলেন;  রক্ত সংমিশ্রণ হলো । এই সকল মানুষকে, ইহুদিকে এক সূত্রে বেঁধে রাখল তাঁদের আধ্যাত্মিকতা এবং  আবেগ- মোজেসের ধর্ম ইহুদিকে দিলো এক অনন্য মহিমা মণ্ডিত ঈশ্বর, তাঁরা ঈশ্বরের নির্বাচিত,  আর সেই কারণেই নিরন্তর চলে ইহুদির সেই শ্রেষ্ঠতায় পৌঁছুনোর সাধনা ( আজকের ভাষায় সার্চ  অফ এক্সেলেন্স)।
     
    ইউরোপীয় সমাজে , যে কোন দেশে ইহুদি সংখ্যালঘু  কিন্তু অপ্রিয় কেন?  তার কারণ খুঁজেছেন ফ্রয়েড । ক্রিস্টিয়ানরা তাদের প্রভুকে হত্যার অপরাধে ইহুদিকে দোষী সাব্যস্ত করার অনেক আগেই দেখা গেছে  স্থানীয় জনতা ইহুদি বিরোধী – উদাহরণ: কলোন শহরে ইহুদিরা এসেছেন রোমানদের সঙ্গে । ইউরোপের খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করতে অনেক দেরি, সেখানে কেউ যিশুর নাম পর্যন্ত শোনেন নি , প্রভুকে মেরে ফেলার জন্য ইহুদি দায়ী এ অভিযোগ  ওঠে নি। ( আরমেনিয়া ৩০০ সালে, আয়ারল্যান্ড ৪০০ সালে প্রথম সে ধর্ম গ্রহণ করে)  তাঁরা যেখানেই  সংখ্যা লঘু সেখানেই কি সর্বদা নিজেদের নির্যাতিত মনে করেছেন ? ইহুদির দুটি চারিত্রিক  বৈশিষ্ট্যকে  ফ্রয়েড নির্দ্বিধায় ক্ষমার অযোগ্য মনে করেন ;

    এক: যে সমাজেই তাঁরা বাস করুন না কেন, ইহুদি নিজেকে  আলাদা রাখেন ।  তাঁরা তো কোন দূর প্রাচ্যের , ইউরোপের কাছে অচেনা মনুষ্যজাতির সদস্য নন? তাঁরা ব্লনড চুল নীল চোখের নরডিক না হতে পারেন , কিন্তু ইহুদি ভূমধ্যসাগরীয় উপকূলের এক দেশের মানুষ । তাহলে এই “ আমরা আলাদা, আমরা অন্য শ্রেণির মানুষ “ এই কথাটা বারবার বলেন কেন ? কেন মিলে মিশে থাকেন  না ?

    দুই: হাজার বছরের সকল নির্যাতন অত্যাচার পোগরম তাঁদের সামুহিক বিনাশ করতে পারে নি । সেটা তাঁদের চরিত্রকে  দেয় নি কোন বিনয় বা  নম্রতা , দিয়েছে  আরেক অহংকার :আমাদের বিনাশ নেই।  

    মোজেস ইহুদিদের পরমপিতা , তিনি এঁদের গড়েছেন ; ইহুদি জীবন মোজেসের কৃতজ্ঞতা পাশে আবদ্ধ । মোজেসের মতাদর্শ মেনে ,  ঈশ্বরের পছন্দের মানুষ হবার  সার্টিফিকেট সহ  ইহুদি হবার অহংকারের ফলে  তাঁরা  যেখানেই বাস করেছেন , আপন স্বতন্ত্রতার ঝাণ্ডা উড়িয়ে , আপন গোঁড়ামিকে একমাত্র সত্য জেনে কোন সমাজেই জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন নি , কখনো হবেন না।

    হলোকস্টের  চুল্লি  জ্বলে উঠবে তিন বছর বাদে।

    পরিশেষে আমার কিছু  কথা

    ফ্রয়েডকে নিয়ে এমনিতেই বিতর্কের কোন শেষ নেই , তবে আবার কেন জল ঘোলা করা  ? তাই একটি ব্যক্তিগত কৈফিয়ত দেওয়ার প্রয়োজন আছে বলে মনে করি।

    দু বছরের একটু বেশি  আগে গুরুচণ্ডালীতে ধারাবাহিক ভাবে আমার ইহুদি রসিকতা যখন প্রকাশিত হচ্ছিল, সেটি পড়ে আমেরিকার একটি শহরের  রামকৃষ্ণ মিশন আমাকে এক অনুরোধ জানান – ইহুদি রসিকতা বইতে  যেমন কথাচ্ছলে ইহুদি জীবন , ধর্ম, রীতি নীতির সঙ্গে পরিচয় করানোর কাজ করে চলেছিলাম, ঠিক তেমন ভাবে কি ইহুদি ধর্ম শিক্ষার কয়েকটি মডিউল বানিয়ে দিতে পারি ? তাঁরা মিশনে নানান ধর্মের সঙ্গে আপামর জনতার , যাকে বলে লে ম্যান , তাদের পরিচয় করিয়ে থাকেন , ক্লাসরুম স্টাইলে । বিশ্বের প্রধান ধর্মগুলির মূল বাণীর  সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য ব্রিটেনের স্কুলে আবশ্যিক ধর্মশিক্ষার ক্লাস হয় ( রিলিজিয়াস এডুকেশন )।  বরানগরের স্কুলে  হতো না । ইহুদি রসিকতা লেখা সময়ে এবং পরে জুডাইজমের  মডিউল তৈরি করার সময়ে যেমন জেনেছি, শিখেছি অনেক ,  তেমনি আমার মনে কিছু  প্রশ্ন  জেগেছিল :

    আব্রাহাম ইহুদির আদি পিতা, ঈশ্বরের আদেশে নতুন বাসস্থান হেবরন  অবধি পৌঁছুলেন , ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করার জন্য টেম্পল মাউনটে আপন পুত্র  আইসাককে বলি  দিতে প্রস্তুত হলেন ( হিব্রু পেশাত, বিশ্বাসের পরীক্ষা )।  কিন্তু তাঁর ধর্মাচরণের বিধি কি ছিল ? আব্রাহামের অনেক বছর বাদে, মোজেসের দশ আদেশ পাওয়ার আগে পর্যন্ত ইহুদির ধর্ম আচরণের রেওয়াজ কি ছিল?  হিব্রু বাইবেলে যার উল্লেখ আছে, টেন কমান্ডমেনটস ছবিতে সিনাই পাহাড়ের নিচে যাদের সোনার বাছুর পুজো করতে দেখেছি , তাঁরাও তো আব্রাহামের  বংশধর !

    জানতাম এক দল মানুষ সিনাই  পাহাড়ের নিচে মোজেসের বাণী শুনে ইহুদি হলো , পৃথিবীতে এমন ঘটনা নাকি আগে বা পরে কখনো ঘটেনি । এর সত্যতা মেনে নেওয়া শক্ত । আমরা জানি তাঁদের লম্বা নাক নিয়ে যতোই ঠাট্টা চালু থাকুক  না কেন, ইহুদি কোন বিশেষ জাতি নয় , তাঁদের  নানা বর্ণ,  চেহারা । ইসরায়েলে ইথিওপিয়ান , ভারতীয় ইহুদির সঙ্গে পরিচয় হয়েছে । এঁদের  পূর্ব পুরুষ কি সিনাই পাহাড়ের পাদদেশে ছিলেন যেদিন মোজেস দশ আদেশ পাঠ করছিলেন ? তা নিশ্চয় নয়, কালে কালে এই ধর্ম প্রসারিত প্রচারিত হয়েছে, সেটা কি ধর্মান্তকরণের বলে ?  রোড টু দামাস্কাস, সলের (পরে পল)  ধর্মান্তকরণের ফেবল  আমাদের জানা, কিন্তু জুডাইজমে কনভার্শনের গল্প কোথায়?

    মোজেসকে ইহুদিরা হত্যা করেছিলেন কিনা সেটি তর্ক সাপেক্ষ কিন্তু হিব্রু বাইবেল এটা তো মানে যে নিতান্ত সুস্থ দেহের একজন বলশালী নেতা  কানানের দুয়োর অবধি এসে অকস্মাৎ মারা গেলেন – বিয়নড রিজনেবল ডাউট ?

    অনুতাপ থেকেই কি সেই গুরুর শিক্ষা মাথায় তুলে নেওয়া হলো ?  শিলারের ভাষায় , কোন চিরন্তন সঙ্গীত প্রথমে গভীর জলে ডুবে যায় , তাকে আমরা হারিয়ে ফেলি,  পরে খুঁজে পেয়ে মাথায় করে রাখি ?

    কেন ক্রিস্টিয়ান হোলি কমিউনিয়নে রুটি ও লাল মদ , প্রভুর দেহ ও রক্ত – কীসের  প্রতীক ? গুরুহত্যার?

    নিরাকার একেশ্বরবাদের উত্তরসূরি ক্রিস্টিয়ান ধর্মে কেন এতো মূর্তি , ছবি, আচার আচরণ, প্রতীকের ছড়াছড়ি  ? অথচ পরবর্তী আব্রাহামিক ধর্ম, ইসলাম সে সব এমন ভাবে বর্জন করেছে যে ফ্রয়েড তাকে  জুডাইজমের সংক্ষিপ্ত সংস্করণ বলেছেন।

    মনে হয় আমার কৌতূহলের কিছু  উত্তর এবং তাঁর সঙ্গে ভাবনার খোরাক মোজেস ও একেশ্বরবাদ এই বইতে পেয়েছি।

    বিতর্ক স্বাস্থ্যকর এবং অবধারিত । সেটা চলতেই থাকুক।   
     
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • আলোচনা | ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪ | ৯০০ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Debanjan Banerjee | 103.4.***.*** | ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৯:৫৮540313
  • অসাধারণ লিখেছেন যথারীতি হিরেনদা। সময় নিয়ে অনুসন্ধান করে লেখাটি করেছেন। অনেক কিছু বলেছেন আরো অনেক কিছু বলবার অবকাশ রয়ে গেলো। বাঙালী পাঠক সমাজের তরফ থেকে শুধু ধন্যবাদই জানাতে পারি অত্যন্ত জটিল এবং বহুমাত্রিক একটি বিষয়কে পাঠককুলের সাথে খুব সহজভাবে পরিচয় করিয়ে দেবার জন্যে। আপনি পথিকৃৎ হলেন এই বিষয়টিতে।
  • Debanjan Banerjee | 103.4.***.*** | ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪ ২০:১২540314
  • "প্রতি পদক্ষেপে ইহুদি সেই আপ্তবাক্যটি স্মরণ করে – তারা উচ্চস্তরের মানুষ। যে দেশেই তারা বাস করুক না কেন, প্রতিবেশীদের সঙ্গে মেলামেশা করবে ততটুকুই যা একান্ত আবশ্যিক; সেই মেলা মেশা হবে সীমিত (অ্যাসিমিলেশন নৈব নৈব চ) ইহুদি অন্যের ঈর্ষার কারণ, সেটাই তাদের বিজয়। ....... তফাৎ এই যে, ইহুদির আত্মবিশ্বাস কোন দেশের সীমানায় বা কোন পতাকার তলায় সীমাবদ্ধ নয়; তাদের কোন দেশ বা পতাকা নেই (ফ্রয়েড ইসরায়েল সৃষ্টির ন বছর আগে মারা গেছেন)। মোজেস এই আত্মবিশ্বাস, এই অহংকারকে ইহুদির ধর্মীয় চিন্তার ভেতরে প্রোথিত করে দিয়ে গেছেন। জন্মে অবধি ইহুদি জানে সে বিশিষ্ট, সেরা মানুষ, সত্যকে একমাত্র তাঁরাই চেনেন, জানেন, সাবাথের দিন ঈশ্বরের সঙ্গে তাঁদের ওঠা বসা। ইহুদির সঙ্গে অন্য জাতি ও জনতার পারস্পরিক সম্পর্ক নির্ধারিত হয়েছে এই শ্রেষ্ঠত্বের দাবির ভিত্তিতে; তাঁরা নিজেদের এক মহা উন্নত শ্রেণির মানুষ মনে করেন, যা তাঁদের দেয় অহংকার। ইতিহাস থেকে ফ্রয়েড দেখান খ্রিস্ট ধর্ম প্রতিষ্ঠার আগে, হেলেনিক যুগে খ্রিস্ট হত্যার কলঙ্ক যখন তাঁদের গায়ে লাগে নি, সেটা ইউরোপে প্রায় অজ্ঞাত ছিল - তখনও তাঁরা ঠিক এই আচরণ করেছিলেন, যেমন আজ করে থাকেন, অন্য জাতির মানুষ যেন কুষ্ঠরোগী! "
    আচ্ছা তাহলে কি পরবর্তীকালের জার্মান অতিজাতীয়তাবাদ যা থেকে হলোকাস্ট আসবে বা আম্রিকান এক্সসেপশনালিজম যা থেকে নেটিভ আমেরিকান জেনোসাইডের জন্ম হবে, এই ইহুদী সুপ্রিমেসিস্ট মনোভাবেরই influence ? ইউরোপের অতিজাতীয়তাবাদ এবং তার ফলশ্রুতিতে আসা সাম্রাজ্যবাদী জেনোসাইড তাহলে কি ইহুদীর সঙ্গে মেলামেশা এবং তার ফলে ইহুদীদের থেকে আরো বড় ইহুদী হয়ে ওঠবার প্রয়াস মাত্র ? কি বলেন দাদা ?
  • Ranjan Roy | ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪ ২২:১৯540317
  • একেবারে অন্য মাত্রার লেখা, চিন্তার খোরাক জোগায়। আমি কয়েকজনের সঙ্গে শেয়ার করলাম।
  • হীরেন সিংহরায় | ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪ ০০:৪১540319
  • দেবাঞ্জন

    ফ্রয়েড বললেন মোজেসের শিক্ষা ইহুদিকে দিয়েছে তার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য - ঈশ্বরের পছন্দের মানুষ, সেরা মানুষ প্রত্যেক ইহুদি। সে চালিত হয়েছে সেই ভাবনায় – তারা সবার সেরা অর্থাৎ কেউ কেউ কবি নয়, সকলেই কবি! দুনিয়াতে অনেক সংখ্যালঘু জনতা নির্যাতিত হয়ে থাকে চামড়ার রঙ, ধর্ম, ভাষা ইত্যাদির কারণে যার কোনটাই ইউরোপীয় ইহুদির ক্ষেত্রে হয়তো খাটে। কিন্তু ফ্রয়েড হাজার বছরের সামগ্রিক ইউরোপীয় ইহুদি বিদ্বেষের মূলে পেয়েছেন তাদের আলাদা থাকার প্রবল বাসনা, শত অত্যাচারের মাঝেও তাঁরা বিনষ্ট হন নি অতএব নিজেদের অবিনশ্বর মনে করা, যে মনোভাবকে তিনি বলেছেন ক্ষমার অযোগ্য (unverzeihlich)।

    এটা ধরে নেওয়া যেতে পারে তিনি যখন এই অধ্যায় লিখছেন, তিনি জেনেছেন ততদিনে জার্মানিতে ইহুদির জীবন বিপন্ন, তাদের দোকান, ব্যবসা বন্ধ, রাস্তায় ঘাটে তাঁদের পেটানো চলছে। সে খবর বিদেশের কিছু কিছু কাগজে ছাপা হচ্ছে। ক্রিস্টাল নাখট (সমস্ত সিনাগগ পোড়ানো, ৯ নভেম্বর ১৯৩৮), বৃহৎ মাত্রায় ইহুদি নিধনের কাজ (Final Solution/ Endlösung) শুরু হতে তিন বছর বাকি। মার্চ থেকে মে ১৯৩৮ সালের মধ্যে ভিয়েনায় খুঁজে খুঁজে ইহুদি নির্যাতন চলছে, সেটাও তাঁর অজ্ঞাত থাকার কথা নয়। কোথাও তিনি আসন্ন অশনির সঙ্কেত কি দেখেছিলেন? এ প্রসঙ্গ তিনি একবারও তোলেন নি এই বইতে। তাই সে অনুমান করা সঙ্গত হবে না।
  • Subhadeep Ghosh | ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪ ০১:৪০540321
  • চারটি পর্ব পাঠ করে সমৃদ্ধ হলাম। 
    অসামান্য প্রবন্ধ।
  • Ranjan Roy | ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৬:২৯540325
  • এটা কি চটি বই হতে পারে?
    অথবা, কোন বড় বইয়ের অংশ?
  • হীরেন সিংহরায় | ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪ ১১:০৩540331
  • রঞ্জন 
     
    হাজার দশেক শব্দ নিয়ে  চটি বই হতে পারে কি? তার চেয়ে বর্ম বৈঠকি আড্ডার দ্বিতীয় পর্বের মতন কোন বইয়ের অংশ। সেটা শিগগিরই লিখবো । 
  • অমিতাভ চক্রবর্ত্তী | ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৪:০২540346
  • বরাবরের মত, আরও একটি সুখপাঠ্য, তথ্য সমৃদ্ধ লেখা উপহার দিলেন আমাদের‌। আরও কয়েকবার এই লেখার পাঠে ফিরে আসার ইচ্ছে রাখি।
     
    একটা ফুটনোট নজরে আসে - উদ্গাতাদের,  অবস্থা বিশেষে অনুগামী কি বংশধর(দের), নিপাত ঘটিয়ে তারপর ফিরে তাঁদেরই পথে চলা,  ভজনা করা - প্রকৃয়াটি স্থান-কাল অতিক্রম করে পুনরাবৃত্ত হয়েছে (নাকি হয়ে চলেছে কোথাও না কোথাও)।
  • সত্যব্রত ঘোষ | 103.4.***.*** | ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৩:৩৩540368
  • খুবই তথ্য সমৃদ্ধ এবং উপভোগ্য লেখা। অনেক কিছু জানতে পারলাম। ঋদ্ধ হলাম। ধন্যবাদ, হীরেনদা।
  • Ahsan ullah | ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৯:০৫540374
  • আপনি যদি মুসার সহদোর ভাই হারুন কে নিয়ে গবেষণা করেন তাহলে ইহুদীদের আরো কিছু দিক চলে আসতে পারে। 
  • Ahsan ullah | ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৯:০৯540375
  • আপনার অন্যান্য লেখাগুলোর মতোই সুখপাঠ্য ও গবেষণা ধর্মী হয়েছে। 
  • হীরেন সিংহরায় | ০১ জানুয়ারি ২০২৫ ০১:২০540385
  • আহসান  সত‍্যব্রত অমিতাভ
     
    সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। তথ‍্যের ভার চাপিয়ে দিয়ে পাঠককে হারানোর আশঙ্কা জাগে মাঝে মাঝ! 
  • হীরেন সিংহরায় | ০১ জানুয়ারি ২০২৫ ০২:০৮540387
  • আহসান 
     
    সময় সুযোগ পেলে এই বিষয় নিয়ে কাজ করার ইচ্ছে আছে। তবে আর কটা দিন আছে কে জানে! 
    উমরে দরাজ মাংগ কে লায়ে থে চারদিন
    দো আরজু মে কট গয়ে 
    দো ইনতেজার মে 
  • ar | .***.*** | ০১ জানুয়ারি ২০২৫ ০৯:১৪540394
  • এই হারুণ আর Aaron কি একই ব্যক্তি? ইহুদী পুরোহিত বা কোহেন/কোহেনিম (?) সম্প্রদায় তো এই Aaronএর বংশধর। অনেকদিন আগে একটা নোভা ডকুতে দেখেছিলাম যে কোহেনিমদের ওয়াই ক্রোমোজোম নিয়ে বড় স্টাডি করে বিজ্ঞানীরা একটা কোহেনিম জেনেটিক মার্কার বা এক কথায় জিনগত বৈশিষ্ট্য আবিস্কার করেছেন। ইহুদীদের পুরোহিত ব্যাপারটা patrilineal descent, মানে বাবা থেকে ছেলে বা তার ছেলেই একমাত্র প্রিস্ট হতে পারতো। তাই সব কোহেনদেরই এই জিনগত বৈশিষ্ট্য আছে বা থাকতে হবে। এইভাবে জেনেটিক মার্কারের ভিত্তিতে বংশতালিকা তৈরী করতে গিয়ে দেখা গেছে যে সব কোহেনই আসলে এক আদি কোহেন বা high priest এর বংশধর। ইহুদী ইতিহাস অনুযায়ী এই high priest আর কেঊ নন, স্বয়ং Aaron। অ-ইহুদী এবং কোহেন বাদে বাকী ইহুদীদের মধ্যে এই মার্কারের ফ্রিকোয়েন্সি খুবই কম।
    মজার ব্যাপার হল, অ্যাফ্রিকার লেম্বা ট্রাইব বা সম্প্রদায়, যারা নিজেদের ইহুদী বলে পরিচয় দেয়, ইহুদী আচার বিচার খুব মেনে চলে, এমনকি নিজেদের সমাধিফলকে "ডেভিডের তারা" খোদাই করে, তাদের মধ্যেও (ছেলেদের) কোহেনিম মার্কার পাওয়া গেছে!!

    লেখককে এই অনবদ্য প্রবন্ধটির জন্য ধন্যবাদ জানাই।
  • | ০৩ জানুয়ারি ২০২৫ ১৭:২৫540465
  • অতি চমৎকার এই আলোকপাঠ।
  • হীরেন সিংহরায় | ০৪ জানুয়ারি ২০২৫ ১৭:৪৪540506
  • AR এবং দ

    পড়ার জন্য আপনাদের অনেক ধন্যবাদ জানাই।

    মোজেস ও একেশ্বরবাদ বইয়ের সাব প্লট অগুনতি। বিশেষ করে তৃতীয় অধ্যায়ে এসে ফ্রয়েড ইহুদি চরিত্রের সাইকোঅ্যানালিসিসে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন, ঐতিহাসিক ঘটনাবলির পুনরাবৃত্তি প্রচুর, তৎকালীন ইহুদি সমাজের প্রতিবাদের আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন এটিও মনে রাখতে হবে মুখের ভেতরে চোয়ালের ক্যান্সারে তিনি ভুগেছেন শেষ আঠার বছর। আমি কোনমতে মূল থ্রেডটি ধরে চলার চেষ্টা করেছি মাত্র; তিনি মোজেসের ভাই আরনকে (হারুন) হতদরিদ্র্য ইহুদি মহল্লার কোন যুবক নয়, মিশরীয় রাজ পরিবারের সদস্য হিসেবে দেখেছেন। মোজেস লাঠি হাতে কিছু পরিযায়ী শ্রমিকের লিডার সেজে বনবাসে যখন বেরুলেন, আরন (অর্থ পর্বত) সহ অনেক পারিষদ তাঁর সঙ্গ দিয়েছেন। শ্রী AR এর সঙ্গে আমি সম্পূর্ণ সহমত, লিভাইত বা পুরোহিত কুল (Cohen, Kohen থেকে বহুবচনে Kohanim) আরনের বংশধর মন্দির ভেঙ্গে গেলে পুরোহিতকুলের নিয়মিত পুজো আচ্চার পাঠ উঠে গেল বটে কিন্তু ইহুদি সমাজে কোহানিমদের বিশেষ স্থান রয়ে গেল। জশুয়া কোহেন নামের এক যুবককে আমার দফতরে কাজে নিযুক্ত করেছিলাম (ইহদি রসিকতা দ্রষ্টব্য); ইনটারভিউয়ের দিনে জিজ্ঞেস করার আগেই বলেছিল সে রিফর্ম জু, শনিবারে গাড়ি চালায়, টটেনহাম হটসপারের খেলা দেখতে যায়; পুরোহিতের চাকরিই যখন নেই, তখন নিয়মকানুন মানার কি প্রয়োজন ! সেই সঙ্গে জশ এটাও বলতে ভোলে নি, তার ইউরেশিয়ান স্ত্রী মেলিসা বিয়ের আগেই ইহুদি ধর্ম গ্রহণ করে, নইলে বিয়েটা হতো না।

    উও কিসসা ফির কভি।

    রঞ্জন রায়ের প্ররোচনার কারণে ফ্রয়েড উপাখ্যান বই মেলায় বেরুচ্ছে নাম - ‘ফ্রয়েডের চোখে মোজেস‘- তিনি কি আদৌ ইহুদি ছিলেন ?
  • Kuntala | ০৫ জানুয়ারি ২০২৫ ১১:২৩540516
  • ইহুদীদের exclusionism -এর সংগে সাক্ষাৎ হয় 1987 সালে, আমেরিকায় থাকাকালীন।
    আমার সহকর্মী উরি ফেলাডম্যানের বাড়িতে ডিনার খাওয়ার নিমন্ত্রণ ছিল। বেশ খেলাম। খাওয়ার শেষে ধন্যবাদ দিয়ে যখন জিজ্ঞেস করলাম, 'তাহলে আমার বাড়িতে কবে আসছো?', উনি জবাব দিল, 'আমি তো অন্যের বাড়িতে খাই না!'
    বয়েসটা অল্প ছিল, খুব ধাক্কা লেগেছিল, এখনও ভুলতে পারি নি। 
    ফ্রয়েড সাহেব খুব স্পষ্ট কথাই বলেছেন মনে হচ্ছে।
    আর 1948, বা যে এথনিক ক্লেনসিঙ  তখন থেকে চলছে ইজরায়েলে, তারও একটা ব্যাখ্যা পাওয়া যাচ্ছে।
    আপনার লেখা সব সময়েই ভালো লাগে, এটিও তাই।
  • হীরেন সিংহরায় | ০৯ জানুয়ারি ২০২৫ ১৪:৪৪540561
  • দুই দশক ইহুদি পাড়ায় বাস করে আমার অভিজ্ঞতা একই। তারা সবার হতে স্বতন্ত্র । এই স্বাতন্ত্র্য কে ফ্রয়েড ক্ষমার অযোগ্য ( unverzeihlich)  বলেছেন । 
  • PRABIRJIT SARKAR | ০৯ জানুয়ারি ২০২৫ ১৮:২২540562
  • ভারতে বাঙালি কিছুটা ইহুদিদের মত। উন্নাসিক। পুরী থেকে বাংলার ট্রেন ধরেই উড়িয়া দের নিন্দা শুরু করে। পাটনায় আসছিলাম গয়া থেকে। ট্রেনে স্থানীয় লোকজন বাঙালি শুনেই অনুযোগ করল তোমরা আমাদের মেড়ো বলে ঘৃণা কর।
  • হীরেন সিংহরায় | ০৯ জানুয়ারি ২০২৫ ২৩:২১540563
  • প্রবীর জিত

    অবজ্ঞা করার  দৃষ্টান্ত  হয়তো ঠিক খাটে না।

    তাবৎ ইহুদি ঈশ্বর দ্বারা নির্বাচিত সেটা হিব্রু বাইবেলে লেখা আছে ( মানে বেদের মতন) এবং কোশার কাশরুত মিলিয়ে তাদের  জীবন যাত্রার প্রথা  দুনিয়ার সবার থেকে আলাদা – ইহুদি এই সত্য (!) জন্মে থেকেই জানে , মোজেস এটি ধর্মগ্রন্থে গেঁথে দিয়ে গেছেন।  কুন্তলা যখন ফেলডমানকে বাড়িতে আসতে বলেন, ফেলডমান উত্তর দিলেন , আমি বাইরে কোথাও খাই না।  এটি কিন্তু ইহুদির স্ট্যান্ডার্ড উত্তর। আমাদের ব্যাঙ্কের উকিল জনাথান সলোমন (ইহুদি রসিকতায় তার গল্প বলেছি )  লাঞ্চে নিমন্ত্রিত হলে বাড়ি থেকে নিজের খাবার এনে আমাদের সঙ্গে টেবিলে বসত , কফিটা অবিশ্যি খেতো সবার সঙ্গে।

    আমিষ নিরামিষ হেঁসেল,  ছোঁয়া ছুয়ির  বাহানা  আমাদের সমাজে আছে কিন্তু সেটা অপশনাল , যার যেমন ইচ্ছে , কোন কেতাবে লেখা নেই । অহংকারী বাঙালি উড়ো মেড়ো বলতেই পারে , সেটা অপশনাল , সব বাঙালি তা বলে না।  কিন্তু ইহুদির কেতাবে যে লেখা আছে শনিবার তাক থেকে একটা চিঠি তুলে আমার হাতে দেওয়া যাবে না, গাড়ির অ্যালার্মের বোতাম টেপা যাবে না, এক ফ্রিজে দুগ্ধজাত ও আমিশ  খাদ্য রাখা যাবে না ( আমার প্রথম ইসরায়েল ভ্রমণে তেল আভিভ হিলটনের মিনিবারে লেখা দেখে অবাক হয়েছিলাম ) বাড়িতে যদি খেতে  বলেন সে কি করে জানবে আপনি দই ও কষা মাংস এক ফ্রিজে  রাখবেন না ?  

    ইহুদি যে আমাদের সবার থেকে আলাদা! ফ্রয়েড সেটা চোখে  আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়েছেন।
     
  • প্রশ্ন  | 173.62.***.*** | ১০ জানুয়ারি ২০২৫ ০৮:৪৪540565
  • ইহুদি কি তবে খুবই ধর্মশীল জাত?
  • হীরেন সিংহরায় | ১২ জানুয়ারি ২০২৫ ২৩:৪২540626
  • ধর্ম আচরন শুধু পাল পার্বণে নয়, প্রতি দিনের সকল আচরনে। ইহুদি পাড়ায় বাস করে তাই দেখেছি । আরেকটা কথা - পরিবার পিছু পাঁচের চেয়ে কম সন্তান  সন্ততি দেখি নি, বেশির ভাগ সাতটি । ব্যতিক্রম আছে যেমন রিফরম ইহুদি । আর হ‍্যাঁ - জেরুসালেম ও তেল আভিভের মধ‍্যে আচরনের তফাৎ আছে । লন্ডনের গোলডারস গ্রিন এ নিউ ইয়রকের ব্রুকলিনের তফাৎ দেখি নি ( প্রসংঙ্গত দুনিয়ার মধ‍্যে সবচেয়ে বেশি ইদিশ বলা হয় ব্রুকলিনে)॥ 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ঝপাঝপ মতামত দিন