এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  অন্যান্য  নেট-ঠেক-কড়চা

  • দু নৌকায় পা - পুনশ্চঃ

    সমরেশ মুখার্জী লেখকের গ্রাহক হোন
    অন্যান্য | নেট-ঠেক-কড়চা | ২২ ডিসেম্বর ২০২৩ | ৬১৯ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)
  • গুরুর ডিজিটাল পাতায় লেখার ওপর virtual interaction হিসেবে অচেনা কিছু পাঠকের সুচিন্তিত মতামত, প্রাসঙ্গিক অনুরণন, এসব‌ই হাত পাকাতে চাওয়া লেখকের প্রাপ্তি। সমালোচনা‌ শালী‌নতার গণ্ডির মধ‍্যে থাকলে আরো ভালো লাগে। উপরোক্ত লেখা‌র ওপর তেমন কিছু পাঠ মতামতের প্রেক্ষিতে আমার ভাবনা বিশদে ব‍্যক্ত করতে গিয়ে দীর্ঘ হয়ে গেল। তাই দেখে কমেন্ট হিসেবে পোষ্ট না করে পুনশ্চঃ হিসেবে পোষ্ট করছি।
     

    সম্পূর্ণ ভিন্ন আঙ্গিকে‌র দুটি পর্বের এই লেখাটি একসাথে পাঠিয়েছিলাম একটি ওয়েবজিন আয়োজিত গল্প প্রতিযোগিতা‌য়। তাতে একটি‌ই পুরস্কার ছিল - প্রথম পুরস্কার - আর্থিক সাম্মানিক পাঁচ হাজার টাকা। লেখাটি পুরস্কার পায়নি। তবে সম্পাদক‌মণ্ডলী জানিয়েছিলেন ঐ প্রতিযোগিতা‌র জন‍্য পাওয়া বেশ কিছু লেখার মধ‍্যে তারা তাদের ভালো লাগা পঁচিশ‌টি লেখা ক্রমান্বয়ে প্রকাশ করবেন। পঞ্চম পর্বে প্রকাশিত হয় ‘দু নৌকায় পা’। আমার কাছে সেটাও একটা স্বীকৃতি।
     
    গুরুতে নানা জায়গায় পলিটিশিয়ানের মন্তব্য পড়ে মনে হয়েছে তিনি প্রকৃত ইন্টেলেকচুয়াল এবং ভদ্রজন। যেমন lcm বা অরিন। তাই পার্থবাবুর “আমেরিকা স্বপ্ন‌পুরী না হত‍্যাপুরী”  লেখা‌র ওপর অনেকে যখন ছ‍্যা ছ‍্যা করেছেন “পল্টিদা” বারংবার বলেছেন - পার্থবাবুর লেখা‌র ধরণ আমার‌ও অপছন্দ তবে মন্তব্যে গালাগালি কাম‍্য নয়। 
     
    ওনার তির্যক রসবোধ‌ও  অসামান্য। যেমন, আমার একটি রম‍্যরচনা ‘দুয়ারে কুকুর’ লেখা‌য় ছিল এক মিষ্টি স্বভাবের দোকানী মিস ক‍্যারলের কথা। তিনি তাঁর দোকানের বাইরে একটি গামলা রেখে দিতেন। তাতে রাতে এসে একটি পথকুকুর কুণ্ডুলি পাকিয়ে শুয়ে থাকতো। শোয়ার ভঙ্গি‌টা মিষ্টি লাগতে একটা ছবি তুলে ঐ লেখা‌র শেষে রেখেছি‌লাম - ‘গামলায় কুকুর’ ক‍্যাপশন দিয়ে।
     
    পলিটিশিয়ান মন্তব্য করলেন - “আশা করব কোন নাগাল্যান্ডবাসী এই পোস্ট পড়বেন না। নইলে গামলায় কুকুর দেখে মাথায় অন্য আইডিয়া এলে সমূহ বিপদ।” এমন অপূর্ব রম‍্যরসময় মন্তব্য থেকে সাধারণ লেখকের সাথে বাক্সের বাইরে ভাবতে সক্ষম ধীমান পাঠকের ভাবনা‌চিন্তার স্তরের তফাৎ সূচীত হয়ে যায়। দু নৌকায় পা দ্বিতীয় পর্বের ওপর ওনার মন্তব্য‌ও সেই লেভেলের তফাতের সূচক।
    রঞ্জনদা‌র ছত্তিশগড়ের প্রেক্ষাপটে ‘কন‍্যাকুমারী’ গল্পে আমার striking লেগেছিল গুপ্তা হোটেলে‌র হেল্পার বালকটির কথা। মালিকের গাজোয়ারী করা ষণ্ডা ছেলেটিকে একগাল হেসে সে বলে — আমার মাকে করবি তো? চল, আমাদের বাড়ি চল। দেখি, তোর খ্যামতা! মনে হয়েছিল এমন ম‍্যাচুওরিটি বালকটি পেল কী করে?  এতো গুরুতে লিখতে গেলে ট্রোলিং উপেক্ষা করতে লেখকের অবশ‍্য প্রয়োজনীয়?
     
    ঐ গল্পেই উপোসের দিন সন্ধ্যায় দুটি ‘সেম বোট ব্রাদার্স’-এর মদ‍্যপান বা “ঘরে ফিরে আলুসেদ্ধ ভাত আর একটা ডিমের বড়া খেয়ে শুয়ে পড়ি” - পড়েও খটকা লাগেনি - উপোসের দিন ডিম? L&Tতে চাকরি করার সময় একটি কন্সট্রাকশন প্রোজেক্টে ক্লায়েন্ট বিলিংয়ের দায়িত্বে থাকার সময় FIDIC Contract Document, clause by clause,  line by line পড়েছি। দুটি ক্ষেত্রে grey areas in-between lines উপলব্ধি করে ঐ খাতে যে  Extra Cilam করেছি‌লাম অনেক আর্গুমেন্ট করে‌ও PWD তা বাতিল করতে পারেনি। কর্মজীবন থেকে সরে এসেছি সাড়ে সাত বছর আগে তবু কখনো প্রয়োজন হলে খুঁটিয়ে দেখা‌র অভ‍্যাস পুরোপুরি চলে যায়নি। তাই এক্ষেত্রে কিছু মন্তব্য compilation করে লিখতে পারছি। 

    তবে সচরাচর আমি প্রুফ রীডারের মতো শ‍্যেনদৃষ্টিতে গল্প, উপন্যাস পড়তে পারি না। প্রবন্ধ হলে একটু খুঁটিয়ে পড়ি। সাধারণ মেধার পাঠক, তাই লক্ষ‍্য ছেড়ে উপলক্ষ‍্য পানে‌ও নজর বেশী যায় না। একটা ইডিয়ম‌ও কখনো সখনো মনে পড়ে - Don’t miss the forest for the tree. কেকে একবার ভাটের পাতায় আমার মন্তব্যের ওপর শার্লক হোমস‌কে কোট করে লিখেছেন - “দেখেছি কিন্তু অবজার্ভ করিনি” - কিছু ক্ষেত্রে আমার নজর‌ও তেমন। কখনো বা নজরে পড়লেও তা ‘গুরুত্বপূর্ণ বা প্রণিধানযোগ্য বিচ‍্যূতি’  না হলে তা নিয়ে মন্তব‍্য করা অপ্রয়োজনীয় মনে হয়। বক্রোক্তিমূলক‌ভাবে মন্তব্য করতে তো একদমই ইচ্ছা হয় না। 
     
    তবে চতুর্ভূজ ক‍্যাঁক করে চেপে ধরতে মনে হয়েছে, হ‍্যাঁ, এরকুল পোয়ারোর মতো নজর বটে। কিন্তু চতুর্ভূজের দৃষ্টিতে ধরা পড়া অসংলগ্ন‌তা আমায় দাগ কাটেনি। মনে হয়েছে এক্ষেত্রে মদ‍্যপান বা ডিমভাত কোন সন্ধ্যায় খাওয়া হচ্ছে সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। মনে হয়েছে কি নিরামিষ জীবন! নিজেকে ঐ জায়গায় কল্পনা করে অনুভব করতে চেয়েছি - অমন নিস্তরঙ্গ জীবন আমার কেমন লাগতো? তার‌পরে আলোচনা ঘুরে গেল খাওয়াদা‌ওয়া এবং উপোস সংক্রান্ত প্রসঙ্গে। তা দেখে এক পাঠক বললো - “গল্প ছেড়ে উপোস নিয়ে পড়লো।” 

    সৈকত, পাই, ইন্দ্রানী, কেকে, দময়ন্তী, র২হ (হুতো), যদুবাবু, প‍্যালারাম, পলিটিশিয়ান, রঞ্জনদা, কিশোর‌দা, অরিন, lcm  ইত্যাদি গুরুর সুধীজন‌ যারা - যাদের অনেকেই হয়তো গুরুর শৈশবকাল থেকে এই ফোরামে‌র সাথে যুক্ত - এনাদের কাউকে‌ই আমি ব‍্যক্তি‌গত‌স্তরে চিনি না। এনারা আমার কাছে উদ্ভাসিত হয়েছেন তাদের লেখা বা মন্তব্যের মাধ‍্যমে। তাতে মনে হয়েছে, এই যে কজনের উল্লেখ করলাম (সংখ‍্যাটি নির্দেশক মাত্র - সম্পূর্ণ নয়) তারা প্রত‍্যেকে‌ই অত‍্যন্ত বুদ্ধি‌মান / বুদ্ধি‌মতী এবং পরিশীলিত রুচির। বিশেষ করে ইন্দ্রানী। 
     
     
    আমার একটি লেখায় একটি ব‌ইয়ের প্রথম প্রকাশিত সাল লিখেছি‌লাম ১৯৮২, সঠিক তথ‍্য ১৯৬৯. ইন্দ্রানী ১৯৮২ টা নিশ্চিত ভুলে জেনেও মন্তব্য করেছিলেন - কিছু মনে করবেন না। একটি তথ্য ভুল মনে হচ্ছে। সূর্য কাঁদলে সোনা ১৯৬৯ এ প্রকাশিত। আমি লিখেছি‌লাম - এতে মনে করার কিছু নেই। মনযোগী পাঠিকা হিসেবে আপনি একটা তথ‍্যগত ভুল দেখিয়েছেন। আমি সেটা সংশোধন করে দিচ্ছি। তাহলে আমি যে ব‌ই‌টা  কিনেছি‌লাম সেটা ছিল ১৯৮২ মূদ্রণ। ধন্যবাদ।
     

    উৎপল দেবনাথ‌কে‌ও আমি ব‍্যক্তি‌গত‌ভাবে চিনি না। কিন্তু ও দিল্৯ ব‌ইমেলার পোস্টার বানায়, কলকাতা ব‌ইমেলায় প্রকাশিত‌ব‍্য ব‌ইয়ের তথ‍্য দেয়, গুরুতে প্রকাশিত ব‌ইগুলির সচিত্র ক‍্যাটালগ বানাচ্ছে এসব দেখেশুনে মনে হয়েছে ও ব‌ইপত্তর বিষয়ে এক নিবেদিত‌প্রাণ মানুষ। এমন আবেগ, স্বেচ্ছাশ্রম নির্ভর ফোরামে‌র ক্ষেত্রে উৎপলের মতো কিছু মানুষ না থাকলে, সবাই‌ লেখক হলেও মুশকিল। ভাটে কলকাতা ব‌ইমেলায় প্রকাশিত‌ব‍্য ব‌ইগুলির ওপর উৎপল একটু বিশদে পুস্তক পরিচয় দিচ্ছি‌ল। তাতে ইন্দ্রানী‌র ‘হরিণের কাছাকাছি’ ব‌ইয়ের পরিচিতি দিতে গিয়ে ও শঙ্খ ঘোষের একটি উদ্ধৃতির উল্লেখ করেছিল। প্রেক্ষিতটা সঠিক হয়নি। ইন্দ্রানী সেটা ধরিয়ে দিলেন। উৎপল বললো, ঠিক আছে ইন্দ্রাণী দি, আমি ঠিক করে নেব। কিন্তু হেহে মন্তব্য করলো - (১৩/১২-১৫:২০) “টুকলি করতে  গেলে ওরম একটু হয়।” 
     
     
    আমার দেখে খুব খারাপ লেগেছিল। মনে হয়েছিল বাঙালি কবে থেকে এমন অসংবেদনশীল হয়ে গেল? পরে ইন্দ্রানী লিখলেন - “ভুল তো হয়‍‌ই মানুষের। এরকম করে কেন বলছেন? ভুল একটা হয়েছে। শুধরে নিলেই হবে।” উৎপল কিন্তু কোনো জবাব দেয়নি। আমি মনে মনে সেদিন ওর বাকসংযমকে কুর্নিশ করেছি‌লাম। আমি কোথাও একবার লিখেছি‌লাম - Dignity, Grace, Good Manners, Sensitivity এহেন মানবিক গুণগুলি বাজারে কিনতে পাওয়া যায়না - these are not saleable commodities - এগুলি অর্জন করতে হয়।
     
    ‘দু নৌকায় পা’ প্রথম পর্বে কিছু পাঠকের উপহাস‌সূচক মন্তব্য প্রসঙ্গে রঞ্জনদা লিখেছি‌লেন - ‘এব্যাপারে দময়ন্তীর আমাকে দেয়া পরামর্শটি প্রণিধানযোগ্য। 'রঞ্জনদা, লেখা পাবলিক ফোরামে পেশ করার পর সেটা আর আপনার সম্পত্তি নয়, বরং আপনার। যে কমেন্ট ট্রোলিং  মনে হচ্ছে তার জবাব  দিয়ে সময় নষ্ট না করে নিজের লেখা লিখে যান"। এবারেও সাত মিনিটের মধ‍্যে চতুর্ভুজ স‍্যাটাক করে ধরলেন - "... ফোরামে পেশ করার পর সেটা আর আপনার সম্পত্তি নয়, বরং আপনার।" কঠিন বাইক্য :( 

    রঞ্জনদা দেড়ঘন্টা পর জানালেন - “ঠিক। ওটা হবে -  "বরং পাঠক সাধারণের"। ধন্যবাদ চতুর্ভুজ! তবে রঞ্জনদা‌র একটু অসংলগ্ন‌ভাবে লেখা দময়ন্তীর বক্তব্য, চতুর্ভূজ পয়েন্ট আউট করার আগেই, আমি কিন্তু, AI নয়, আমার সামান্য NI দিয়েই সঠিক বুঝেছি। ওটা নতুন কোনো কথা‌ও নয়, আগেও শুনেছি, বিশেষ করে বিমূর্ত কবি‌তার ক্ষেত্রে - সেটি যতক্ষণ কবি‌র খাতায় থাকে, ততক্ষণই তার একান্ত ব‍্যক্তি‌গত অনুভব - প্রকাশ হয়ে গেলে - বারোয়ারি। তখন তা নিয়ে পাঠক এমন কিছু ভাবতে পারে যা কবি‌ নিজেও ভাবে নি। 

    এসব দেখে সত‍্যজিতের ‘পুরস্কার’ গল্পের কথা মনে পড়ে গেল। তাঁর ভার্সন‌ই সংক্ষেপে উল্লেখ করি - “অন‍্যমনস্ক এক চিত্রশিল্পী। শিল্পের ব্যাপারে তার ব্যক্তিগত পছন্দ, সে রিয়্যালিজম বা বাস্তবতার অনুরাগী। প্রকৃতিকে ভেঙেচুরে বিকৃত করে দেখানোই তো আধুনিক শিল্পের রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে, কিন্তু তার সৌন্দর্যবোধ তাতে পীড়িত হয়। শিল্পে যা স্যারিয়ালিজম বা অধিবাস্তববাদ বলে চলছে, তা তার ভীতি উদ্রেক করে। তা ছাড়া, রেখা আর আকৃতি নিয়ে ওই যেসব পাগলামির খেলা, যার নাম দেওয়া হয়েছে 'অ্যাবস্ট্রাকশন' বা বিমূর্ত শিল্প, ওটা তার মনে আদৌ কোনও সাড়া জাগায় না। এইরকম একটা ছবি দেখে মনে হয়েছিল, কাঁচা হাতে কেউ নিআনডারথাল বা পুরোপলীয় যুগের এমন এক আদি মানবীর ছবি এঁকেছে, যার সম্ভবত গোদ হয়ে পা ফুলে গেছে, গলাটা জিরাফের মতো লম্বা। অথচ সেই ছবির নাম  'আদর্শ নারী'। ভাবা যায়? তার মনে হয়েছিল, এর চেয়ে অদ্ভুত রসিকতা আর কিছুই হতে পারে না।”

    শিল্পী অনেক খেঁটে আঁকলেন প্রতিযোগিতা‌র জন‍্য একটি রিয়‍্যালিস্টিক ছবি - দ‍্য সমন‍্যাবুলিস্ট বা স্বপনচারিণী। বিষয় লেডি ম‍্যাকবেথ ঘুমের মধ‍্যে হাঁটছেন। কিন্তু অন‍্যমনস্ক‌তার জন‍্য ডাকে পাঠিয়ে‌ দিলেন ছবিটির বদলে সেই কাগজখানা, ছবিতে যে-যে রঙ ব্যবহার করবে, তার মিশেল ঠিক করবার আগে যার উপরে সে তার তুলি দিয়ে হরেক রঙের ছোপ লাগিয়েছিল।  কিন্তু সেবার ঐ কাগজটি‌ই সেরা বিমূর্ত চিত্রের প্রথম পুরস্কার পেল - শিরোনাম - দ‍্য সমন‍্যাবুলিস্ট।
     
    আমার লেখা‌র বিষয় এবং লেখ‍্যশেলী হালকা চালের। সিনেমা‌য় সিরিয়াস ঘটনা‌প্রবাহের মাঝে কেষ্ট মুখার্জী‌ বা অনুপ কুমারের কমিক রিলিফ গোছের। গুরুতে অনেক প্রকৃত জ্ঞানী, অভিজ্ঞ, দক্ষ লেখক আছেন। তাদের লেখা পড়ে ঋদ্ধ হ‌ই। যেমন হীরেনদা‌র লেখা, শিবাংশুবাবুর “কালী এক অনার্য ওডিসি” বা রঞ্জনদার “অদ্বৈত বেদান্ত বা মায়াবাদঃ শংকরাচার্যের যুক্তিগ্রাহ্যতা” ইত্যাদি। অমন বিষয়ে লেখার মতো পড়াশোনার ব‍্যপ্তি বা ভাবনার গভীর‌তা আমার নেই। তবু কিছু ভাবনা, অভিজ্ঞতা অচেনা পাঠকজনের সাথে শেয়ার ক‍রতে ইচ্ছা হয়। পরিচিতির দায় নেই বলে উন্মুক্ত মন্তব্য পাওয়া যায়। তাছাড়া আমার মতো কিছু খেলো লেখক না থাকলে তো এই ফোরামে‌র নামকরণের সার্থকতা‌ই থাকে না। 
     
    পাঁচ বছর ধরে গু৯তে অন‍্যের লেখা পড়ার জন‍্য ঢুঁ মারলেও হপা তে লিখতে শুরু করি ২৭.৯.২৩ থেকে। তার একমাসের মধ‍্যে ২৬.১০ গুরুচণ্ডা‌৯ থেকে মেল পেলাম -  শারদ সংখ্যা‌র জন্য লেখা পাঠাবেন? আমার কাছে এটা একটা স্বীকৃতি স্বরূপ। তাই লিখলাম – এতো আনন্দের কথা। একটা লেখা পাঠাচ্ছি। পছন্দ হলে রাখবেন। না হলে, জানালে, অন‍্য লেখা পাঠাবো। পাঠালাম “পলায়নবাদীর সঞ্জীবনী বটিকা।” আলোচনা-বিবিধ শ্রেণী‌তে ১৬.১১ তে সেটা বেরোতেই এক পাঠক পত্রপাঠ লিখলে‌ন -  “রসিকতা‌র প্রয়াস খেলো মনে হলো”। অর্থাৎ ঐ লেখা‌য় ওটাই ওনার মূল প্রতিপাদ‍্য বলে মনে হয়েছে। অথচ ২৬.১১ মোহাম্মদ কাজী মামুন লিখলেন - দারুণ লেগেছে পড়তে। আমি লিখলাম, লেখাটি‌র ওপর একজন ১ এবং দুজন ৫ রেটিং দিয়েছেন। এসব থেকে‌ই TASTE DIFFERS প্রবচন‌টির যথার্থ‌তা অনুভূত হয়। 

    গুরুতে এ গপ্পো‌টা দুটো পর্বে আলাদা‌ভাবে পোষ্টানো ছিল একটা এক্সপেরিমেন্ট কারণ আমি প্রায় নিশ্চিত ছিলাম প্রথম পর্বটি পড়ে কেউ‌ই দ্বিতীয় পর্বটি অনুমান‌ করতে পারবে না। আগে জনা দশেক বন্ধুমহলে  যখন এটা পাঠিয়েছিলাম - কেউ আন্দাজ করতে পারেনি। গুরুতে একমাত্র দীমু প্রথম পর্ব পড়ে আশাংকা করেছি‌লেন দ্বিতীয় পর্বে রসভঙ্গ হবে। তবে সেটা তিনি প্রথম পর্বে জানাননি। 
     
    এই প্রসঙ্গে মুষ্টিমেয় কজন বন্ধু মহলে আমি কিছুদিন যে Digital Game খেলে‌ছি তার উল্লেখ করি। খেলা‌টির নাম দিয়েছিলাম - LBO বা Look Beyond Obvious. অন‍্য কেউ কোথাও এই খেলা খেলে থাকলেও তা আমার অজানা। খেলার প্রকরণ এবং নামকরণ আমার‌ই উদ্ভাবিত। একটা ছবি পাঠিয়ে জানতে চাইতাম, আপাতভাবে এতে যা দেখা যাচ্ছে - ছবিটি দেখে ‘তা ছাড়া আর কী মনে হচ্ছে জানা‌ও’। ছবিগুলো আমার তোলা বাস্তব দৃশ‍্য। শরৎ সংখ্যা‌য় লেখাগুলোর ওপরে পাইয়ের দেওয়া ছবিগুলোর মতো বিমূর্ত আঙ্গিকে‌র নয় - সোজা সাপটা ছবি। 
     
    একদা আনন্দ‌মেলায় তপন দাশ অদ্ভুত এ্যাঙ্গেল থেকে বা ম‍্যাক্রো ভিউতে কোনো বস্তুর ছোট্ট অংশ দেখিয়ে প্রশ্ন করতেন - বলো তো এটা কী? বা ইদানিং হোয়াতে আসে - Only genious observer can find it in less than 10 sec - এই বলে অসংখ্য লাল টালির ঘরের ছবির মাঝে কোথাও একটা লুক্কায়িত বিড়ালের মুখ খুঁজে বার ক‍রতে বলে। দুটি ক্ষেত্রে‌ই ব‍্যাপার‌টা close ended মানে নির্দিষ্ট একটা কিছু বলতে হয়। LBO Game তা নয়। এটি  open ended - এতে কোনো নির্দিষ্ট বা ভুল ঠিক জবাব নেই। একটি ছিল খবরে কাগজে প্রকাশিত একটি আর্টিকলে এক বলিউড নায়িকা‌র ছবি। আর্টিকলে‌র শিরোনাম ও নায়িকা‌র মুখটি বাদ দিয়েছিলাম, যাতে কেউ চিনতে না পারে। প্রতিটি ক্ষেত্রে, ঐ ছবিটি‌র ক্ষেত্রে আমার নিজের LBO ভাবনা (যা অনেক সময় বিশদে হয়ে যেতো) লিখে একটা PW Protected Word ফাইল হিসেবে আগেই পাঠিয়ে দিতাম যাতে কেউ না ভাবে আমার ভাবনা অন‍্যের ভাবনার দ্বারা প্রভাবিত।
     
    অতঃপর সবার ভাবনা পেয়ে, compilation করে, একটা Word ফাইলে কপি পেষ্ট করে সেটা অংশগ্রহণ‌কারীদের পাঠাতাম। তাতে তাদের কোডনেম দিতাম যাতে কেউ কাউকে চিনতে না পারে। ছবিটা তোলার সময় কোনো একটা LBO স্ফূলিঙ্গ মাথায় এসেছি‌ল বলেই সেটা পাঠানো। এবার দেখা‌র কথা - একটি ছবি নানা পার্সপেক্টিভ থেকে দেখে দর্শকদের কতো বিভিন্ন রকমের extrapolated resonance বা প্রলম্বিত অনুরণন হতে পারে  - সেটা‌ই ছিল এই খেলার বৈশিষ্ট্য এবং মজা। কেউ কেউ যা আপাতদৃষ্ট সেটা‌‌ই ব‍্যাখ‍্যা করতো। তখন আবার বলতে হোতো - এর বাইরে কিছু মনে হচ্ছে কিনা জানাতে। তেমন দুটো LBO ছবি উদাহরণ হিসেবে রাখছি।
     


     
    ‘দু নৌকায় পা’ লেখা পড়ে যদি দীমু প্রথম পর্বে‌ই জানি‌য়ে দিতেন দ্বিতীয় পর্বে কী জাতীয় রসভঙ্গতা তিনি আশাংকা করছেন এবং তা যদি মিলে যেতো - তাহলে তাকে আভূমি কুর্নিশ করতুম। শরৎ সংখ্যা‌য় কেকের তিন পর্বের ‘‘ব্ল‍্যাক আউট ডাইনিং” লেখা‌য় স্টার্টার থেকে ডেজার্ট অবধি যেমন ধারাবাহিকতা ছিল তা যে ‘দু নৌকায় পা’ লেখা‌য় দ্বিতীয় পর্বে থাকবেনা বরং অপ্রত্যাশিত ছন্দপতন হবে তা আমি জানতাম‌। দেখা‌র ছিল, যাদের প্রথম পর্ব পড়ে ভালো লেগেছিল, দ্বিতীয় পর্বে ছন্দপতন কীভাবে নেন। তাই প্রথম পর্বের কিছু মন্তব্যের ওপর প্রতিমন্তব‍্য করলেও দ্বিতীয় পর্বের মন্তব্যের ওপর আমি এতোদিন চুপ করে ছিলাম। 
     
    যারা মন্তব্য করেছেন, তাদের কেউ‌ই দ্বিতীয় পর্বের ছন্দ‌পতনটি মেনে নিতে পারেন নি। কেবল ফরিদা প্রথম পর্বে বলেছেন - দ্বিতীয় পর্বে যাই থাকুক, সেটা যদি না‌ও আসে, তাহলেও প্রথম পর্বটি নিজেই স্বয়ংসম্পূর্ণ। 
    কথা হচ্ছে, সমাজে এবং ব‍্যক্তিজীবনে কী ধারাবাহিকতায় ছেদ, প্রত‍্যাশার অপমৃত্যু, অপ্রত্যাশিত ছন্দপতন এসব ঘটে না? বহু প্রত‍্যাশিত  ‘অচ্ছে দিন’ এসেছে কিনা বুঝি না। জীবনে বিভিন্ন সময়ে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন বা প্রয়োজনে দু (বা তিন, বা চার) নৌকায় সজ্ঞানে পা দিয়ে কী লোকে চলে না? উৎপল দত্ত কিছু বাণিজ্যিক বলিউড ছবিতে স্টিরিওটাইপ ভাঁড়ামি বা ভিলেনের রোল করেছেন স্রেফ পয়সার জন‍্য যাতে থিয়েটার দলটি চালাতে পারে‌ন। হয়তো মামাবাবুর সৃজনশীল সৃষ্টির তাগিদ ছিল কিন্তু বাণিজ্যিক সিরিয়াল বানাতে গিয়ে সেই ইচ্ছা‌র অপমৃত্যু হয়েছে। তাই তিনি সলিলকে সাবধান করে দেন - দু নৌকায় পা রেখে চলা সহজ নয়। 
     
    জীবনে প্রিয় বান্ধবী‌র সাথে সম্পর্ক প্রথাগত পরিণতি না পেলেও দুটো অধ‍্যায় তো আলাদা‌ভাবে রাখা‌ যেতে‌ই পারে। যেমন আমি রাখতে পেরেছি - আঙুরফল টক জাতীয় ভাবনা ছাড়াই। সৌন্দর্যে ও স্বভাবে অত‍্যন্ত আকর্ষণীয়া প্রথম প্রিয় বান্ধবী‌ - আট বছর মেলামেশা‌র পর আমার‌ই আলাপ করিয়ে দেওয়া এক বন্ধু‌কে বিয়ে করে আমেরিকা চলে গেল। তখন ভেতরটা কিছু‌দিনের জন‍্য ফাঁকা হয়ে গেছিলো। তবে মেনে নিয়ে‌ছি। কারণ আমি তাকে ধরে রাখতে চাইনি। আর কখনো খোঁজ‌ও করিনি। ওর বিয়ের ছাব্বিশ বছর পর সে ডিজিট‍্যালি খোঁজ পেয়ে যোগাযোগ করতে আবার সহজ‌ভাবে নিয়ে‌ছি। 
     
    তবে সুলভ হ‌ওয়া সত্ত্বেও কখনো হোয়া ভিডিও চ‍্যাট করিনি। এর মাঝে সে অনেকবার ভারতে এলেও দেখা করা‌র তাগিদ অনুভব করিনি। মনে হয়েছে যেসব মধুময় দিন চলে গেছে তা স্মৃতি‌র বাক্সে থাকা‌ই ভালো - now no point trying to walk down the memory lanes. অডিও চ‍্যাট হয়েছে মাত্র কয়েকবার। দশবছর ধরে মূলতঃ মাঝেমধ্যে ভার্চুয়াল টেক্সট চ‍্যাট হয়েছে। আমার লেখা পাঠা‌ই। ওর পড়তে ভালো লাগে। ব‍্যস এটুকুই। কোনো উন্মাদনা, হাহাকার, তিক্ততা নেই। সাবলীল‌ভাবে হালকা রসিকতা করি। 
     
    বর্তমানে বৌমণি ও  আমাদের একমাত্র পুত্রসন্তানের সাথে আমার পারিবারিক জীবন‌ খুব আনন্দ‌ময়। কোনো অতৃপ্তির কাঁটা নেই তাতে। সেই বান্ধবী বৌমণি‌র দুর সম্পর্কে‌র আত্মীয়া। বিয়ের আগে‌ পূর্বরাগ পর্বে বান্ধবী‌র কথা বৌমণি‌কে বলেছিলাম। আমাদের বিয়ের তেইশ বছর পর সেই বান্ধবী ভার্চুয়ালি যোগাযোগ করতে, তাও বৌমণি‌কে জানি‌য়ে বলেছিলাম, তোমার সাথে বিয়ের পর আমার জীবন কেটেছে আনন্দে কিন্তু ও আমার অতীতের এক সুন্দর অধ‍্যায় যখন তুমি ছিলেনা আমার জীবনে। তোমার জীবনে এমন আন্তরিক প্রাকবৈবাহিক সম্পর্ক ছিল না। তবু আশা করি তুমি বুঝবে এই দুটি অধ‍্যায় আমি আলাদাভাবে রাখতে পারি কোনো আপাতবিরোধী‌তা ছাড়া‌ই। বুদ্ধি‌মতী বৌমণি বোঝে বিবাহিত জীবনে‌ও কখনো স্পেসের প্রয়োজন হয়। বান্ধবী‌কে নিয়ে তার সাথে আর কোনো আলোচনা হয় নি। 
     
    সুনীলের ‘স্বপ্ন লজ্জা‌হীন’ লেখায়, দুই প্রিয় বন্ধু সুনীল ও হেমন্ত দুজনেই মনীষাকে খুব ভালো‌বাসে কিন্তু দুজনেই ওরা একে অপরকে মনীষাকে বিয়ে করতে বলছে। তার একটা কারণ, সুনীলের ধারণা‌য়, বিয়ের পর স্বামী বা স্ত্রী অচিরেই আটপৌরে হয়ে যায় কিন্তু না পাওয়া প্রেমিক বা প্রেমিকা‌র অভিঘাত স্মৃতি‌তে থেকে যায় আজীবন। 
     
    তো বলার কথা এই যে, দু নৌকায় পা লেখা‌র দ্বিতীয় পর্বে‌র ছন্দপতন - কারণ ব‍্যাখ‍্যা করে জানানো সত্ত্বেও কেন সহজ‌ভাবে নে‌ওয়া গেল না? প্রেম - বিবাহ - অতঃপর সুখী দাম্পত্য জীবন কাটানো বা অসুখী দাম্পত্য জীবন বয়ে বেড়ানো নতুবা বিবাহবিচ্ছেদ। মানবজীবনের এই প্রচলিত ছকটির  ধারাবাহিকতা বা ছন্দপতন সর্বজনবিদিত। সেই ছন্দ‌পতন‌ও part of the game হিসেবে মানুষ মেনে নিতে পারে‌। তাই লিজ টেলর আটবার বিবাহ করেছেন। রিচার্ড বার্টনের সাথে হয়েছে পূনর্বিবাহ এবং পুনর্বিচ্ছেদ‌ও। রিচার্ডের সাথে দ্বিতীয় বিচ্ছেদের পরেও লিজের হয়েছে আরো দুবার বিবাহ এবং বিচ্ছেদ। On a lighter note -  লিজ আমার “দু নৌকায় পা” পড়লে হয়তো দ্বিতীয় পর্বের ছন্দপতন সহজভাবে নিতেন - কারণ তিনি তাতেই অভ‍্যস্থ ছিলেন যে। 
     
    তবে দ্বিতীয় পর্বে যাদের রসভঙ্গতা হয়েছে তার প্রেক্ষাপটে আর একটি কারণ থাকতে পারে। প্রথম পর্ব পড়ে মনে দানা বেঁধে ওঠা ম‍্যাজিক রিয়ালিজম, স‍্যূররিয়ালিয়াস্টিক আমেজ দ্বিতীয় পর্ব পড়ে ছানা কেটে যেতে তাদের হয়তো মনে হয়েছে লেখক তাদের অনুভূতি নিয়ে ছেলেখেলা করেছে। প্রথম পর্বটি আদৌ ওসব কিছু না, মামাবাবুর ফরমায়েশ অনুযায়ী সলিলের লেখা একটি Nonsensical prose অথচ আমরা কত কী ভেবে নিলাম, ধুস!
     
    Sapiosexual না হলে অধিকাংশ পুরুষ নারীর মৌখিক সৌন্দর্য, সুঠাম শরীর, সুডৌল বক্ষসম্পদে আকৃষ্ট হয়। ধরা যাক অফিসে তেমনি‌ই এক বছর পঁচিশের সুন্দরী, খাজুরাহো ভাস্কর্যের মতো সুতনুকা স্বপ্নার সাথে আলাপ হোলো শৌভিকের। পরিচয় গড়ালো অন্তরঙ্গতায়। বর্তমানে পাশ্চাত্য প্রভাবে প্রাকবৈবাহিক শারীরিক সম্পর্কে শুচিবায়ুগ্ৰস্থতা নেই। এক ছুটির সন্ধ্যায় ডিনার অন্তে শৌভিক গেল স্বপ্নার ফ্ল‍্যাটে রাত কাটাতে। শয‍্যায় অত‍্যন্ত আগ্ৰহে স্বপ্নার ঊর্ধাঙ্গে‌র পোশাক উন্মোচিত করে‌ই যেন বৈদ্যুতিক শক খেল শৌভিক। একি! স্বপ্নার সুঠাম শরীরে পোশাকের অন্তরালে যে বক্ষসম্পদ কল্পনা করে সে এতোদিন মুগ্ধ হয়েছে তা তো সদ‍্যকিশোরীসম! স্বপ্না‌ সেই দীনতা লুকোতে ব‍্যবহার করতো হেভি‌লি প‍্যাডেড ব্রা। আর তাতেই শৌভিক চকমা খেয়েছে। এখন হোলো স্বপ্ন‌ভঙ্গ। অথচ তাতে কী পোশাকে আবৃতা স্বপ্নাকে দেখে শৌভিকের আগে যা মনে হোতো বা এখন কেবলমাত্র বক্ষসম্পদে‌র দীনতা‌টুকুর জন‍্য‌ই কী স্বপ্নার সমগ্ৰ সত্তাটি মূল‍্যহীন হয়ে যায়? 
     
    আমার ভাবনায় দ্বিতীয় পর্ব‌টিই এই লেখার ক্ষেত্রে conclusive chapter তাই তারপর সেটাকে আর টেনে বাড়ানো আমার পক্ষে সম্ভব নয়। তবে কেউ যদি রিলে রেসের মতো এর পর তৃতীয় পর্ব  লিখে তার ধারণা‌য় লেখাটি‌র একটি কাঙ্ক্ষিত রূপ দিতে চান - আমার আপত্তি তো নেই‌ই বরং সাগ্ৰহে দেখবো - কী দাঁড়ায়। সেটা‌ও ঐ LBO Game জাতীয় একটা চিত্তাকর্ষক ব‍্যাপার হবে।
     
     
    বাস্তবে‌ও তেমন হয়েছে। ১৯৭০ সালের জুলাইয়ে লেখা শুরু করে সেপ্টেম্বরে অনন্ত‌লোকে যাত্রা‌র আগে শরদিন্দু তাঁর ব‍্যোমকেশ কাহিনী “বিশুপাল বধ” - শেষ করতে পারে‌ননি। আনন্দ পাবলিশার্স প্রকাশিত শরদিন্দু সমগ্ৰতে ওটি অসমাপ্ত শেষ ব‍্যোমকেশ কাহিনী হিসেবেই ছিল। নারায়ন সান‍্যাল ওটি শেষ ক‍রেন।  
     
    বিভাগ, উপবিভাগ নিয়ে ভাটে আলোচনা‌র সময় r2h একবার গুরুর প্ল‍্যাটফর্মটিকে লেখক পাঠক সমবায় গোছের মন্তব্য করেছি‌লেন। ট‌ইপত্তর বিভাগে লেখাগুলো‌ও তেমনি। কেউ একজন কোনো বিষয়ে  একবারে না লিখে কমেন্ট সেকশনে টুকরো টুকরো করে ধারাবাহিক‌ভাবে লেখেন। লেখা‌র মধ‍্যে‌ই - বাঃ, বেশ, চলুক, পড়ছি, তাপ্পর গোছের সংক্ষিপ্ত পাঠ মন্তব্যের সাথে বিশদে মন্তব্য‌ও আসে। তার ভিত্তিতে লেখক লেখা‌র কিছু কোর্স করেকশন‌ও করতে পারে‌ন।
     
    যেমন এবারের শরৎ সংখ্যা‌য় ”হাওয়া মোরগের জীবন” রচনার লেখক দীপাঞ্জন মুখোপাধ্যায় ঐ লেখা‌র ওপর কিছু পাঠ মন্তব্যের ওপর ভিত্তি করে ‘বার্তা’ চরিত্র‌টি নিয়ে আর একটু খেলিয়ে লেখা‌র সম্ভাবনা দেখেছেন। সে ইচ্ছা‌ও প্রকাশ করেছেন।
     
    পরিশেষে সব মন্তব্য‌কারীকে পুনরায় ধন্যবাদ জানাই। কারণ তাদের মন্তব্য আমার সীমিত জ্ঞান ও বোধবুদ্ধির পরিসরে‌ও নানা ভাবনার তরঙ্গ তোলে। তা বিচক্ষণ দৃষ্টিতে গ্ৰহণীয় না হলেও যা ভাবছি তা সুসংহত‌ভাবে লেখ‍্যমাধ‍্যমে প্রকাশ করতে পারা আমার কাছে মগজের ব‍্যায়াম সদৃশ। তার ফলে লেখ‍্য প্রকাশভঙ্গি‌তে বার্ধক্যজনিত মানসিক অসংলগ্ন‌তা যতদিন সম্ভব এড়িয়ে থাকা যায়।

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • অন্যান্য | ২২ ডিসেম্বর ২০২৩ | ৬১৯ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • পলিটিশিয়ান | 2603:8001:b102:14fa:7020:8a5d:37d8:***:*** | ২৩ ডিসেম্বর ২০২৩ ০০:২০527122
  • সমরেশবাবু, দাদা বলার প্রয়োজন নেই। 
     
    মেনে নিলাম এই লেখাটি দুই পর্বেই সম্পূর্ণ। কিন্তু গল্পের মৌতাত পেয়ে বসেছে। তৃতীয় পর্ব না হলেও একটা সিকোয়েল তো হতেই পারে। এই যেমন প্রথম প্রতিশ্রুতির সিকোয়েল সুবর্ণলতা, সেই রকম।
  • রঞ্জন রায় | 2402:e280:3d02:20a:890e:e2f7:8152:***:*** | ৩০ ডিসেম্বর ২০২৩ ২১:৪২527289
  • ধ্যেৎ, আপনি নিজের লেখা নিয়ে অনেক বেশি স্পর্শকাতর। 
    যাদের দ্বিতীয় পর্বের "ছন্দপতন" পছন্দ হয় নি তাঁরা মন্তব্য করেছেন।
    যাদের স্বাভাবিক মনে হয়েছে তাঁরা নীরব রয়েছেন। আবার যাঁদের পছন্দ হয় নি, অথচ এটা লেখকের ইচ্ছাকৃত বলে মনে হয়েছে তাঁরা মুচকি হেসে মুখ বন্ধ করেছেন।
     
    কিন্তু পলিটিশিয়ানের কথাটি প্রণিধানযোগ্য। দ্বিতীয় পর্বটি সার্থক হোক বা অসার্থক,-- এক সিকোয়েল কা বাত তো বনতা হ্যায়।
     
    আপনার এই দীর্ঘ মন্তব্যে আমার কিছু নগদ প্রাপ্তি হয়েছে।
     
    এক,
     সুনীলের একটি অন্যরকম গল্পের হদিশ। পড়ি নি, পড়ে ফেলব। ছত্তিশগড়ের গাঁয়ে গঞ্জে 34 বছর 
    থাকার সময় বাংলা বই পড়া হয় নি। এবার নিউ টাউনে লাইব্রেরির সদস্য হচ্ছি।
    দুই,
         প্রথম প্রেমিকার অমলিন স্মৃতি ও সুন্দর  ভারসাম্যবোধ।
    আপনি ভাগ্যবান, আমি  নই।
    আমি ওদের স্মৃতি বাঁচিয়ে রাখতে আমার দুই মেয়ে ও ভাইঝির ডাকনাম ওদের নামে রেখেছি।
    কপালে জুটেছে গিন্নি ও মেয়েদের গঞ্জনা!
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। না ঘাবড়ে মতামত দিন