এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  আলোচনা  বিবিধ

  • চলতা রহে - চলতা রহে

    Samaresh Mukherjee লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | বিবিধ | ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ৫৬৬ বার পঠিত
  • প্রাইভেট প্রোজেক্ট ছাড়া, ভারতে অধিকাংশ সরকারি প্রকল্প‌‌‌ই সময় ও মূল‍্যবৃদ্ধি জনিত কারণে ধুঁকতে থাকে। জীবন, সমাজ, প্রকৃতি - এহেন সবকিছু‌র মধ‍্যে‌ই থাকে কিছু উল্লেখযোগ্য ব‍্যতিক্রম। প্রকল্প রূপায়ণের ক্ষেত্রে যেমন কোঙ্কন রেল, দিল্লী মেট্রো ইত্যাদি।
     
    ভারতে নির্ধারিত সময়ে প্রকল্প সম্পূর্ণ না করতে না পারার ঘটনা অজস্র। উদাহরণ হিসেবে ধরা যাক কলকাতার‌ই দুটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের কথা। প্রথমটি, মেট্রো‌রেল। বর্তমান মেট্রো-ভাবনার বহু আগে - ১৯২০ সালে - গঙ্গার তলা দিয়ে টানেল করে বাগমারী থেকে সালকিয়া (১০.৪কিমি) অবধি মেট্রো রেল নির্মাণের প্রথম পরিকল্পনা করেছিল তদানীন্তন ব্রিটিশ সরকার। করতেই পারে, কারণ ১৮৯০ সালে পৃথিবীর প্রথম টিউব রেল চালানো‌র রেকর্ড লন্ডন মেট্রোর। তবে সালকিয়া মেট্রোর পরিকল্পনা অর্থের অভাবে বাতিল হোলো। তখন সেই মেট্রোর নির্মাণকাল ধার্য হয়েছিল ৫ বছর। শুরু হলে হয়তো হয়েও যেতো, কারণ তার বিশ বছরের মাথায় হয়েছিল আর একটি অতি চ‍্যালেঞ্জিং কাজ - হাওড়া ব্রীজের নির্মাণ। 
     
    দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরিস্থিতি, জাপানি বিমান হামলার আশাংকা, তদানন্তীন যন্ত্রপাতি ও নির্মাণ প্রকৌশলের সীমাবদ্ধতা, সহজে নাটবোল্ট আঁটার বদলে গোটা সেতু‌তে সময়সাপেক্ষ পদ্ধতিতে কয়েক লাখ ফিল্ড রিভেট মারা। এতদসত্ত্বেও ১৯৩৬ থেকে ৪২ - মাত্র ছ বছরে সম্পূর্ণ হোলো হাওড়া ব্রীজের নির্মাণ! বর্তমান প্রেক্ষিতে‌ও এই উন্নতমানে‌র  সেতুটির নির্মাণে দেশের অদুর অতীতের রেকর্ড অনুযায়ী হয়তো বিশ বছরের বেশি লাগবে। কেন?
      
    এই কেন'র উত্তর খুঁজতে ফিরে আসা যাক কলকাতার বর্তমান মেট্রোর ইতিহাসে। ১৯৭১ সালে সোভিয়েত ও জার্মান যৌথ উদ্যোগে দু বছরের মেহনতে তৈরি হোলো তিনটি করিডরের MTP বা Metropolitan Transport Project নামক একটি মাস্টার প্ল‍্যান। তাতে ছিল এক, দমদম - টালিগঞ্জ, দুই, গঙ্গার তলা দিয়ে রামরাজাতলা - বিধাননগর এবং তিন, দক্ষিনেশ্বর - জোকা, কুল মিলাকে প্রায় ৯৮কিমির মেট্রো রেল নির্মাণের পরিকল্পনা। 
    লক্ষ‍্যমাত্রা ছিল ১৯৭২ এ শুরু হয়ে ১৯৯১ - মানে ১৯ বছরে শেষ হবে তিনটি করিডর। তবে বিদেশী পরিকল্পনা‌কারদের একটা ভুল হয়েছিল। তাঁরা ভারতীয় রেল বিশেষজ্ঞ‌দের নিয়ে প্রকল্প সমাপনের লক্ষ‍্যমাত্রা ধার্য করার সময় তাঁদের দেশের ঐতিহ্য অনুসরণ করেছিলেন। পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকায় ভারতীয়‌ বিশেষজ্ঞরা‌ও ভেবেছিলেন তা সম্ভব।
    কিন্তু ভারতে স্বাধীনতার পর অঙ্কুরিত হয়েছে নতুন ঐতিহ্য - যা ক্রমে মহীরুহ‌র আকার নেবে। তার ওপর প্রকল্প রূপায়ণের স্থানটিও 'রঙ্গে ভরা বঙ্গদেশে'। তাই ১৯৭৭ সালে সর্বহারাদের মুখ‍্যমন্ত্রী হয়েই বিলেতফেরৎ ব‍্যারিষ্টার মশাই এই প্রকল্পের জন‍্য কেন্দ্র রাজ‍্য মৌ অনুযায়ী রাজ‍্যের প্রদেয় অর্থ বরাদ্দ ক‍রতে অসম্মত হলেন। সর্বদা টিপটপ পোষাক পরিহিত সেই জ‍্যোতির্ময় কমরেড (এবং তাঁর দলের অদম‍্য ক‍্যাডারবাহিনী) পশ্চিমবঙ্গকে WASTE BENGAL রূপান্তরেও ছিলেন বদ্ধপরিকর। পার্টির নির্দেশে প্রধানমন্ত্রী‌র গদি‌তে না বসার আত্মত‍্যাগ‌ তাঁর কাছে মনে হয়েছিল পার্টির 'ঐতিহাসিক ভুল' সিদ্ধান্ত। তবে সাড়ে ২৩ বছরের সুনেতৃত্বে আত্মঘাতী জঙ্গি ট্রেড ইউনিয়ন‌বাজীতে পার্টি‌র বঙ্গের বামফ্রন্ট সরকারের যথেচ্ছ মদতের ফলে একের পর এক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। কম্পিউটার চালুতে ব‍্যাপক বাধা সৃষ্টি তো অচিন্তনীয় ভূল - কারণ আজ সেই ক‍্যাডারকুল বা তাদের উত্তরসূরীরা হাতে যে মুঠোফোন নিয়ে ঘুরছে সেগুলোর কর্মক্ষমতা পামটপ কম্পিউটারের সমতুল্য। অষ্টম শ্রেণী থেকে প্রাথমিক ইংরেজি শিক্ষা‌র শুরু করায় কয়েকটি প্রজন্ম ঐ খাতে শুরুতেই পিছিয়ে রয়ে গেছে। তালিকা করতে থাকলে খুঁজে পাওয়া যাবে সর্বহারার সরকারের এহেন নানা 'ঐতিহাসিক ভুল'।
      
    শুরুতে মেট্রোর বাজেট ছিল ৪৫০ কোটি টাকা। তখন জাপান নাকি প্রস্তাব দিয়েছিল ১০০০ কোটি টাকায় তারা দমদম থেকে টালিগঞ্জ - পুরো পথটি‌ই টানেলিং করে শেষ করে দেবে ৫ বছরে। Cut & Cover প্রক্রিয়া‌য় নির্মাণের ফলে মাটির তলায় অসংখ্য জরুরি পরিষেবা (Drinking water, Ganges water, Sewer, Electric, Telephone, Gas ইত‍্যাদি লাইন) সরানো বা বাঁচানো, বাড়ি‌তে ফাটল, যান চলাচল ব‍্যহত, শহরবাসী‌র জীবন, জীবিকা (বহু দোকান, রেস্টুরেন্ট লাটে উঠে গেছে তখন) দূর্বিষহ হয়েছে। জাপানি পদ্ধতিতে এহেন অনেক হ‍্যাপা এড়ানো যেতো। কিন্তু 'চোর পালালে বুদ্ধি বাড়ে' গোত্রের দেশজ বিশেষজ্ঞদের তখন সেই খরচ বেশি মনে হয়েছিল। 
       
    ফলে শুধু ১৬.৪৫ কিমির প্রথম করিডর‌টি‌ সম্পূর্ণ করতে‌ই লাগ‍লো ২৩ বছর - গ্ৰীণপ্লাই প্লাইউডের সেই ক্রিয়েটিভ কোর্টরুম এ্যাডের মতো - ৩৮ বছর ধরে জজ 'অর্ডার অর্ডার' করে টেবিলে হাতুড়ি ঠুকে গেলেন - মুজরিম জীবনদাস থেকে ভকিলসাব / ম‍্যাডাম - সবাই বুড়ো / বুড়ি হয়ে গেলেন - বিচারপতি বদলে গেলেন, কিন্তু হাতুড়ির বাড়ি খাওয়া বিচারকের গ্ৰীণপ্লাইয়ের টেবিল - 'চলতা রহে, চলতা রহে'। 
     
    প্রথম দফা‌র মেট্রো‌র খরচ‌ ছাড়ালো দু হাজার কোটি। অর্থাৎ দেশজ পন্থা‌য় খরচ ও সময় - জাপানি পন্থা‌র থেকে দ্বিগুণ ও চতুর্গুণ হয়ে গেল। অবশ‍্য সেটা‌‌ই প্রত‍্যাশিত, কারণ রম‍্যসমাস অনুযায়ী বিশেষজ্ঞ‌র অর্থ‌ই হ‌ইতেছে - 'বিশেষ রূপে অজ্ঞ যাঁহারা'। 
      
    দ্বিতীয়‌ উদাহরণ, দ্বিতীয় হুগলী সেতু। History repeats itself প্রবাদের উৎপত্তি ভারতে কিনা জানা নেই তবে তা পালনের পীঠস্থান যেন হয়ে দাঁড়িয়ে‌ছে স্বাধীনোত্তর ভারতবর্ষ। সেতুর পরিকল্পনা‌কার এবার‌‌ও জার্মান ও ব্রিটিশ সংস্থা। তবে ক্লায়েন্ট ভারতীয় - কলকাতা বন্দর কর্তৃপক্ষ। (রম‍্যসমাস অনুযায়ী) পোর্ট কমিশনার্সের বিশেষজ্ঞ‌রা জানালেন সেতুর তলা দিয়ে সমূদ্রগামী বড় জাহাজ যাবে। সেই মত জলতল থেকে ব্রীজ ডেক উঁচু রাখতে হবে। যদিও সে জাহাজ বেশি দূর যেতে পারবে না, কারণ মাত্র ৩.৭ কিমি উত্তরে‌ই আছে ১৯৪৩ সালে চালু হ‌ওয়া হাওড়া ব্রীজ।
     
    চিরায়ত ফর্মূলা‌য় (পাঁঠা যখন তোমার দাওয়ায়, চালাও খাঁড়া মুড়ো ল‍্যাজায়) বিদেশী ডিজাইনার‌ও করে দিলেন উড়ন খটোলার মতো এক সেতুর ডিজাইন। ফলে নদীর দু পারেই এ্যাপ্রোচ রোডের লে‌আউট হয়ে গেল বিস্তৃত। ঘনবসতিপূর্ণ হাওড়া‌য় সেই এ্যাপ্রোচ বানাতে বহু বাড়িঘর ভাঙার প্রয়োজন পড়লো।  অনেকে মামলা করে আদালতের স্টে অর্ডার পেল। ফলে বহু দেরী হোলো সেই এ্যাপ্রোচ নির্মাণ সম্পূর্ণ হতে।। শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী কর্তৃক শিলান‍্যাসের (১৯৭২) 'মাত্র' ২০ বছর পর সেই সেতুর উদ্বোধন হোলো ১৯৯২ সালে শ্রীযুক্ত নরসিংহ রাওয়ের জমানায়।
       
    ব্রিটিশ পরিকল্পনা‌কারীরা ১৮৮০ সালেই অনুমান করেছিলেন অমন জাহাজ সুদূর ভবিষ্যতে‌ও খিদিরপুরের পর বড়বাজার অবধি‌ও আসবে না। ফলে তাঁরা হাওড়া সেতুর ডিজাইনে কেবল ছোট জলযানে‌র জন‍্য জোয়ারের সময়ে তীরের কাছে জলতল থেকে সেতুর তলদেশের নূন‍্যতম ক্লীয়ার গ‍্যাপ রেখেছিলেন ২৯ ফুট। উচ্চ‌তা কম রাখায় খরচ ও সময় দুটোই বেঁচেছিল। বিদ‍্যাসাগর সেতুর ক্ষেত্রে তা হোলো ৮৫ ফুট! হাওড়া ব্রীজ ঐ উচ্চতা‌য় বানালে তার এ্যাপ্রোচ পূবে হাওড়া ময়দান ও পশ্চিমে বড়বাজার ছাড়িয়ে হয়তো চিৎপুরে চলে যেতো। 
    এখন মাঝগঙ্গায় লঞ্চ থেকে বিদ‍্যাসাগর সেতুতে গাড়ি চলতে দেখলে আমার 'থ্রী ইডিয়টস' সিনেমা‌য় আমির-করীনার সেই 'জুবি ডুবি' গানের শেষ দৃশ‍্য চোখে ভাসে - যখন তারা কল্পনায় এক চাঁদ ছোঁয়া সাঁকো দিয়ে যুগলে নেমে আসে।
    ৭২ সালে বিদ‍্যাসাগর সেতুর শিলান‍্যাসের ৩১ মাস বাদেই ২৫শে জুন ১৯৭৫ ঘোষিত হোলো জরুরী অবস্থা। জনশ্রুতি এ ব‍্যাপারে ইন্দিরা‌কে জরুরী পরামর্শ দিয়েছিলেন তখন বঙ্গে নকশাল আন্দোলন গুঁড়ি‌য়ে দিতে বদ্ধ‌পরিকর সিদ্ধার্থ শংকর রায়। তা যে আবার ২১ মাস বাদে তুলে নিতে হবে তা হয়তো ভাবেননি ইন্দিরা। কুলদীপ নায়ারের স্মৃতিচারণ অনুযায়ী সেই সময়ে বকলমে দেশ চালানো সঞ্জয় গান্ধী চেয়েছিলেন আগামী তিরিশ বছর দেশে নির্বাচনের কোনো প্রয়োজন‌ই নেই। ফলে সেতু নির্মাণের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজ‌ও জরুরী ভিত্তিতে চালু হোলো না। বরং তৎপরতা বাড়লো তার থেকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজের - ইন্দিরা সরকারের একনায়কতান্ত্রিক মনোভাব, জরুরী অবস্থা‌র প্রতিবাদ, সমালোচনার জন‍্য বিশিষ্ট মানুষের ধরপাকড়। বরুণ সেনগুপ্ত, গৌরকিশোর ঘোষ, জ‍্যোতির্ময় দত্ত, কুলদীপ নায়ার, জয়প্রকাশ নারায়নের  মতো সাংবাদিক‌, জননেতা‌দের পুরে দেওয়া হোলো জেলে। মে ১৯৭৬ নাগাদ সারা দেশে প্রায় সাত হাজার সাংবাদিকদের জেলে পাঠানো হয়েছিল যার মধ‍্যে অনেক স্থানীয়, ছোটখাটো পত্রিকা‌ও ছিল। অবশ‍্য সেই ট্রাডিশন এখন‌ও "চলতা রহে" , কোনো বিশেষ 'অবস্থা' ঘোষণা ছাড়াই, স্বাভাবিক অবস্থায়, অস্বাভাবিক প্রক্রিয়ায়। 
     
    সেতুর শিলান‍্যাসের পর 'শুধু সাতটি বছর' ধরে একগুচ্ছ কাকেশ্বর কুচকুচে সম্মিলিতভাবে সেই শিলায় বসে পশ্চাৎ-কুলকুচি করে গেল। কাজের কাজ কিছু‌ই হোলো না। কাজ শুরু হোলো ৭৯ সালে, জরুরী অবস্থা‌র অন্তে, ইন্দিরার পরাজয়ের পর। সেই ১৯৭২ সালেই ফারাক্কা ব‍্যারেজ নির্মাণ সমাপ্তি‌র ফলে কলকাতা‌য় গঙ্গার নাব‍্যতা কমে যাওয়ার সূত্রপাত দেখা দিয়েছিল। ফলে সেতু নির্মাণের শুরুর কালেই সমূদ্রগামী বড় জাহাজ খিদিরপুরে‌ বেশি আসতো না। অধিকাংশ বড় জাহাজ এসে ভিড়তো ১৯৬৭ তে সম্পন্ন হলদিয়া‌ বন্দরে।
     
    তৈরী হ‌ওয়ার পর আকাশ‌ছোঁয়া বিদ‍্যাসাগর সেতুর তলা দিয়ে এখন যায় টাগে টানা গাদাবোট। সম্মিলিত উদ‍্যোগে সার্বিক অপদার্থতার একটি ফসলের সাথে তাঁর নাম জুড়ে দেওয়া‌য় দুর অতীতে ঈশ্বরগতিপ্রাপ্ত এক বাস্তববাদী পণ্ডিতের আত্মাও হয়তো ক্ষুদ্ধ। স্ট্রান্ড রোডের পাশে যে জেটিতে জাহাজ ভিড়বে বলে সেতু অতো উঁচু করা হয়েছিল তা ভাঙা পড়েছে। পাশ দিয়ে এখন চলে চক্ররেল। জাহাজ আসেনা। তার বদলে জলে ভাসে Floatel, ভাসমান বিলাসবহুল হোটেল। দেনা‌র দায়ে সেটি‌ও নাম লিখিয়েছে দেউলিয়া খাতায়। অত‌এব অবিমৃষ‍্যকারী‌তার চক্র সম্পূর্ণ হোলো।
      
    দ্বিতীয় হুগলী সেতু (২০.০৫.১৯৭২) এবং কলকাতা মেট্রো (২৯.১২.১৯৭২) - এই দুই গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের‌ই শিলান‍্যাস করেছিলেন ইন্দিরা গান্ধী। ৩১শে অক্টোবর ১৯৮৪ তে তাঁর অকাল প্রয়াণের এক সপ্তাহ আগে ভবানীপুর থেকে এসপ্ল‍্যানেড, মাত্র ৩.৪ কিমি পথে, চালু হয়েছিল ভারতের প্রথম মেট্রোরেল। পৃথিবীর মেট্রোর ইতিহাসে সেও এক অনন্য রেকর্ড। কারণ শুরু ও শেষের ইয়ার্ড সহ মাঝে বহু কাজ বাকি থাকা সত্ত্বেও মাঝ মধ‍্যিখানে ২০% ট্র‍্যাকে বিশাল ক্রেনে করে কোচ নামিয়ে চার কোচের খামচা মারা মেট্রো চালানো‌র এমন অকল্পনীয় পরিকল্পনা ভারতে ছাড়া সম্ভব নয়। এ যেন পায়ে  জুতো মোজার বদলে হাওয়াই চপ্পল, পরনে নেই ট্রাউজার‌-কোট, মাথাতে‌ও নেই ট্রিলবি হ‍্যাট - তবু আছে বারমুডার সাথে স‍্যান্ডো গেঞ্জী‌‌র ওপরে গলায় নেকটাই। 
     
    কেন্দ্র-রাজ‍্য বা আমরা-ওরা কোঁদল দেখে এ রাজ‍্যবাসী অভ‍্যস্থ। তবে অর্থ ও রেল - দুটি‌ই কেন্দ্রীয় সংস্থা - তবু তাদের সদিচ্ছা বা সমন্বয়ে‌র অভাব অথবা অজানা কোনো কারণে তারাতলা মোড়ের কাছে জোকা-বিবাদী বাগ মেট্রোর কাজ বন্ধ ছিল বহুদিন। কারণ মেট্রোর কাজের জন‍্য মিন্টের সামনের কিছু জমির প্রয়োজন ছিল। অবশেষে সে বিবাদ মিটলো - মিন্টের নতুন কম্পাউন্ড ওয়াল পিছে হঠলো। আবার এলে বিপত্তি। যখন জোর কদমে কাজ চলছে - 4.9.18 ভেঙে পড়লো মাঝেরহাট ব্রীজ। 
     
    গিরিশ পার্কের কাছে 31.3.16তে নির্মিয়মান বিবেকানন্দ রোড ফ্লাইওভারের 150 মিটার অংশ কেন ভেঙে পড়েছিল - 11.8.16 তারিখের IIT খড়্গ‌পুরের বিশেষজ্ঞ কমিটির রিপোর্টে তা জানা গেছে - Multiple faults in Design - construction - Supervision. সেখানে তখন কোনো মেট্রো নির্মাণকাজ চলছিল না। তবু পুজোর আগে মাঝেরহাট সেতু ভেঙে পড়তে - চাপান উতোরের চিরাচরিত খেলায় - বলা হোলো হয়তো মেট্রোর কর্মজনিত ভাইব্রেশনে‌ই ঐ ফ্লাইওভার ভেঙেছে। যদিও 2010 এর রিপোর্টে জানা গেছি‌ল ঐ সেতুর রক্ষণাবেক্ষণে অবহেলা আছে। তবু, হয়তো বিশেষ নির্দেশে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা মেট্রো এ্যাঙ্গেল নিয়ে ভেবেছিলেন। ঐ অংশে মেট্রোর কাজ কিছুদিন বন্ধ র‌ইলো।
        
    জোকা থেকে বিবাদী বাগ পথে হয়তো জমি সংক্রান্ত আরো একটা গিঁট পড়তে পারে - প্রতিরক্ষা দপ্তরের সাথে। এই সমস্ত জট ছাড়িয়ে,  বিবাদ মিটিয়ে যেদিন জোকা - বিবাদী বাগ মেট্রো চালু হবে সেদিন তাতে আমার নাতি বা নাতনি চাপতে পারলেই আমি খুশি।
     
    জয় হো! মেরা ভারত মহান!!
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • আলোচনা | ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ৫৬৬ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। হাত মক্সো করতে প্রতিক্রিয়া দিন