এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ধারাবাহিক  উপন্যাস

  • ওইখানে যেয়ো নাকো তুমি(রহস্য উপন্যাস)ঃ পর্ব ১০

    Ranjan Roy লেখকের গ্রাহক হোন
    ধারাবাহিক | উপন্যাস | ১৩ জুলাই ২০২২ | ১৫৮৯ বার পঠিত | রেটিং ৫ (২ জন)

  • বিক্রম
           দন্তেওয়াড়া থেকে খানিকটা দূরে ইন্দ্রাবতী নদী। এই নদী উড়িষ্যায় জন্মেছে কিন্তু ছত্তিশগড়ে পূব থেকে পশ্চিমে আড়াআড়ি গিয়ে মহারাষ্ট্র সীমান্তে দক্ষিণে মুখ ঘুরিয়ে ভদ্রকালী গ্রামের কাছে গোদাবরীতে মিশেছে। 
           এই নদী পেরিয়ে ঘন জঙ্গল ছাড়িয়ে  এগিয়ে গেলে শবরী নদীর কাছে সুকমা জেলার সদর। এটি আগে দন্তেওয়াড়ার মহকুমা ছিল, এখন রাস্তাঘাট তৈরি হয়ে দন্তেওয়াড়ার সঙ্গে একটা অংশের নিয়মিত যোগাযোগ বেড়ে যাওয়ায় আলাদা প্রশাসনিক জেলা হয়েছে। তাই আলাদা  জেলা কলেক্টোরেট, আলাদা সুপারিন্টেন্ডেন্ট অফ পুলিশ।
         
          এই অঞ্চলকে সরকার বলে লাল করিডোরের শক্ত ঘাঁটি এলাকা। এখানে প্রায় দশ হাজার ফৌজ রয়েছে বলে আমাদের কাছে খবর আছে।
    কিন্তু নদীর এপারে আমাদের রাজত্ব। সুকমা থেকে মাত্র তিন কিলো মিটার দূরে  মহাদেব ডোংরি গ্রাম। সেই গাঁয়ের তিনশো বছরের প্রাচীন শিবমন্দির—এখানেই আপাততঃ আমার আশ্রয়। এখানে আমি সম্পূর্ণ নিরাপদ। 
     
         সুকমা এসপি অফিসের বাহিনী  দিনেরাতে সতর্কভাবে চলাফেরা করে। এস ও পি (স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রটোকল) মেনে চলে।
    আজ রাত্তিরে ওরা যাবে পনের কিলোমিটার উত্তরে। খবর পেয়েছে সেখানে নাকি ঘন জঙ্গলে একটি ট্রেনিং ক্যাম্পের কস্তিত্ব টের পাওয়া গেছে।
         আমি জানি, আজ কী হবে। সারারাত চিরুনি তল্লাশি চালিয়ে ভোর চারটে নাগাদ নিজেদের ক্যাম্পে ফিরে আসবে ক্লান্ত হয়ে খিস্তি করতে করতে।
    কেননা ওই ‘বিশ্বস্ত সূত্রে’ পাওয়া খবরটি ডাহা গুল। আমিই ঠিক চ্যানেলে ওদের ক্যাম্পে পৌঁছে দিয়েছি। যাতে ওরা এই গাঁয়ের দিকে না এসে  অন্য দিকে ব্যস্ত থাকে।
        এই মন্দিরের পুজারী আমাদের লোক। চারপাশের গাঁয়ের ভেতরের খবর সামরিক বাহিনীর চলাচল, সব ভক্তদের মুখে উনি আগেভাগে পেয়ে যান।
     
         আজ রাত্তিরে আমার এখানে একটা গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক ছিল যে! এসেছে অবুঝমাড় এলাকার কম্যান্ডার ভীমা এবং বীজাপুর রিজিয়নের গায়ত্রী মণ্ডাবী। ভীমা এনেছে সেন্ট্রাল কমিটি থেকে আমার জন্যে নির্দেশ। আর বীজাপুরের কম্যান্ডার গায়ত্রী মণ্ডাবীর দায়িত্ব ওই এলাকায় একটা বড় অ্যামবুশ করিয়ে পুলিশের নজর সুকমা থেকে সরিয়ে দেওয়া। তাই  ওদের সেফটির কথা ভেবে আমার এই স্ট্র্যাটেজিক চাল।
     
             অবশ্য এটাই যথেষ্ট নয়। সারারাত শবরী নদীর পার থেকে আমার এই মহাদেব ডোংরি গ্রাম পর্য্যন্ত ঘিরে দু’তিন ভাগে ঘন জংগলে লুকিয়ে পাহারা দেবে সাতজন স্কাউট। সন্দেহজনক ফোর্স মুভমেন্ট দেখলে একটি বুনো প্যাঁচা ডেকে উঠবে। সেই ডাক শুনে একটু দূর থেকে ডাক দেবে কোন কোটরী হরিণ। তাতে সাড়া দেবে কোন রাতজাগা ময়ুরী তার কর্কশ স্বরে।
             শেষ পর্যায়ে  একজন  রেডগার্ড দৌড়ে এসে আমাকে আগাম খবর দেবে।  এতে আমি পাঁচ মিনিটের মধ্যে তিন কিলোমিটার দূরে জঙ্গল ভেঙে এগিয়ে আসা বাহিনীর খবর পেয়ে যাব।

         এখন মে মাসের প্রথম সপ্তাহ। এই এলাকায় বর্ষা নামে একটু আগে। দক্ষিণ ভারতের মৌসুমী বায়ু কেরল ও অন্ধ্র হয়ে মহারাষ্ট্রের গা ঘেঁষে এই এলাকায় প্রতি বছর চটপট ঢুকে পড়ে। গত তিনদিন ধরে প্রি -মনসুনের একটানা বৃষ্টি হওয়ায় ইন্দ্রাবতী নদী এবং তার সহযোগী শংখিনী ও ডংকিনী নদীতে বান ডেকেছে। এই নদীগুলো এমন পাথুরে যে এতে নৌকো চলাচল মুশকিল।  
          চারদিন আগে ইন্দ্রাবতীতে বানের সময় নৌকো করে পেরোতে গিয়ে ডুবে গেছে কোবরা ব্যাটালিয়নের এক জোয়ান , পি রমেশ। গতকাল তার ফুলে ওঠা লাশ ভেসে উঠেছে ৮ কিলোমিটার দূরে।
     
            আবার সুকমা’র শবরী নদী, আসলে গোদাবরীর আরেক উপনদী, ও বর্ষায় ভয়ংকর। আবার কার্তিক মাস পড়তেই জল নেমে পার- হয়ে- যায় – গরু, পার- হয়- গাড়ি কেস। জল গোড়ালির ওপরে ওঠে না।
     
             বিলাসপুর থেকে মার্চ মাসে ফিরে আর অবুঝমাড় এলাকায় আমাদের মূল ঘাঁটিতে ঢুকতে পারি নি। এই সময় সামরিক বাহিনী বেশ সক্রিয় ছিল । কোণ্ডাগাঁও এলাকায় খোলা হয়েছে অ্যান্টি -গেরিলা ওয়ারফেয়ার প্রশিক্ষণ শিবির। 
             ওদের প্রয়োগের সময় হচ্ছে গোটা শীত  ও গ্রীষ্মকাল। ওরা এগিয়ে আসে অ্যান্টি ল্যান্ডমাইন ভেহিকল ওস্নিফার ডগ স্কোয়াড নিয়ে উদ্দেশ্য বুবি ট্র্যাপ ও ল্যান্ডমাইনের আগাম হদিশ পাওয়া । এদের পেছনে পেছনে আসে রাস্তা বানানোর ঠিকেদার, সঙ্গে পিচ গলানোর ও সিমেন্ট মেশানোর মেশিন।
     এটাকে ওরা বলে এরিয়া ডমিনেশন।
          
            হেমন্তের পাতাঝরা শুরু হতেই ওরা সক্রিয় হয়। নিজেদের এরিয়া বাড়াতে থাকে। আমরা পেছনে হটি। আবার বর্ষা নামলেই ওরা সরে নদীর ওপারে।  আমরা এগোতে থাকি, আর এপারে কায়েম হয় আমাদের ডমিনেশন। যেন দুই পড়শি বাগানের বেড়া সরিয়ে জমির দখল নিচ্ছে।
           আমি মার্চের শেষে ঢুকে পড়েছি সুকমা এলাকায়। এখন মনে হচ্ছে আরও তিনটে মাস আমায় এখানেই আটকে থাকতে হবে।
     
            কৃষ্ণ পক্ষের কালো রাত। মহাদেব ডোংরি গাঁয়ের শিবমন্দিরের চাতালে ঘুমিয়ে আছে ওরা দু’জন-- অবুঝমাড় আমি জেগে আছি, দু’ঘন্টা কেটে গেলে ওদের একজনকে তুলে দিয়ে আমার শুয়ে পড়ার কথা। কিন্তু চারঘন্টা কেটে গেল। আমি কাউকেই ডাকি নি। ওরা ঘুমোক। ভোর বেলায় ওদের রওনা হতে হবে। তার আগে তুলে দিলেই হবে।
          একজন ফিরে যাবে সেন্ট্রাল কমিটির হেড কোয়ার্টার অবুঝমাড়ের ঘন পাহাড়ি এলাকায় । ওকে পেরিয়ে যেতে হবে ইন্দ্রাবতী নদী। গায়ত্রী যাবে পাশের জেলা  বীজাপুরে। এদের যেতে হবে ঘুর পথে, পাকদণ্ডী বেয়ে, জঙ্গল নদীনালা ঝোপঝাড়ের মধ্যে দিয়ে। নিজেদের ডেরায় পৌঁছে  গিয়ে পেটভরে ভাত খেয়ে ঘুমোতে পারবে পরশু রাতে, তার আগে নয়। আমার আর আজ রাতে ঘুম হবে না। আমি তো এখানেই আছি। ওরা চলে গেলে মহেশ কোরকু’র বাড়ির পেছনে গোয়াল ঘরের পাশের বিচালি রাখা কামরায় পাতা খাটিয়ায় আরামসে ঘুমোব।
     
          রাত্তিরে আমাদের তিনজনের মিটিং হয়ে গেছে। গড়চিরৌলী ম্যাসাকার নিয়ে আলাদা করে তদন্তের প্রস্তাব  সেন্ট্রাল কমিটির কাছে পৌঁছে যাবে। আমি জানিয়েছি বিলাসপুর ইউনিটেও পুলিশের লোক ঢুকেছে বলে আমার সন্দেহ। সেন্ট্রাল কমিটি আলাদা করে সেক্রেটারি সোনালী মিশ্রের সঙ্গে কথা বলুক।
       
          ভুল কোথায় হল?
     
          আমাদের মধ্যে কে বা কারা ভেতরে ভেতরে বদলে যাচ্ছে? বিলাসপুরের ওই কবি গোছের কমরেড, ‘বিদ্রোহী’ নামে কবিতা লেখে, সে হঠাৎ আমাকে ইউনিটের বৈঠকের মধ্যে চ্যালেঞ্জ করল?  এই সাহস কোথা থেকে পেল? নাকি ভয় পেয়েছে? কার থেকে? পুলিশের থেকে? সরকারের থেকে? বুকে জ্বালা ধরানো কবিতার আগুন নিভে গেছে? এত সহজে ? কী করে?
     
          আমাদের আর ভয় পাচ্ছে না? নাকি পুলিশকে বেশি ভয় পাচ্ছে? কমঃ সোনালীকে এগুলো দেখতে হবে। লক্ষণ ভাল নয়। 
           আমাকে এখন সমতলের এলাকা ছেড়ে বস্তারের এই পাহাড়ী বনজঙ্গলের এলাকাতেই কিছুদিন থাকতে হবে। মাঝে মধ্যে বীজাপুর এলাকায় সরে যেতে পারি। কমঃ মণ্ডাবীর এলাকা এখনও অপেক্ষাকৃত নিরাপদ।  
            একেক সময় ক্লান্ত লাগে। সেই কবে থেকে দৌড়তে শুরু করেছি, দৌড়েই চলেছি।
     
     
             স্কুলে পড়া ছেলেটা বিকেলের দিকে রোজ পার্কসার্কাস পাড়ায় আসে। ও শুধু  একটা দোতলা বাড়ির উল্টোদিকের ফুটপাথে দাঁড়ায়। এমনভাবে সামনের রাস্তায় ক্রিকেট খেলতে থাকা বড় ছেলেদের দিকে তাকায় যেন ওর খেলাটা খুব ইন্টারেস্টিং লাগছে। আসলে ও মন দিয়ে শুনছে দোতলা থেকে ভেসে আসা গানের সুর। জানে এই সময় কেকা গলা সাধে, তারপর গানের অভ্যাস করে।
     
              ও স্কুলের ফাংশানে একবার ওর গান শুনেছিলঃ “হ্যাদে গো নন্দরাণী , আমাদের শ্যামকে ছেড়ে দাও”।
    কেকার ‘ছেড়ে দাও’ উচ্চারণে ওর বুকের মধ্যে মুচড়ে উঠেছিল। বুঝেছিল ওই মেয়েটির গান না শুনে ওর উপায় নেই।
     
              কিন্তু ছোটরা বড় নিষ্ঠুর হয়। 
             বেপাড়ার ছেলে এসে এখানে গান শুনবে এটা অনেকের বরদাস্ত হল না। ওকে দেখা মাত্র কয়েকজন তাড়া করতে শুরু করে। ও ভয় পেয়ে দৌড়ে পালায়। অন্যেরা বুঝে না বুঝে শিকার ধরার আনন্দে ‘ধর ধর’ চেঁচিয়ে তাড়া করা শিকারীর দলটাকে ভারী করে।
     
    -কেন এমনি কর তোমরা? ঠিক যেন পাড়ার খেঁকি কুকুরের মত?
    ব্যস, এত আস্পদ্দা! পাড়ায় এসে আমাদের কুত্তা বলল!
     
             হই-হট্টগোলে বিরক্ত হয়ে ওপর থেকে কেকার বাবা নেমে এলেন। কী হচ্ছে এখানে? মেয়েটার ক্লাস চলছে, তোমাদের কোন জ্ঞান-গম্যি নেই?
    ছেলেগুলো প্রথমে থতমত খেয়ে তারপর চটপট সামলে নিল। 
            একজন বলল—কাকু, এই বেপাড়ার ছেলেটা অতি বদ। রোজ এইসময় এখানে এসে আপনাদের বাড়ির দিকে হাঁ করে তাকিয়ে থাকে। আজ আমরা আপত্তি করেছি তো  আপনার মেয়ে কেকার নামে আজে বাজে কথা বলছিল।
     
            সেদিন ও বুঝে গেছল যে শিকার হয়ে সারাজীবন থাকলে চলবে না। ওকে শিকারী হতে হবে।
    শুরু হল ওর শিকারী হয়ে ওঠার সাধনা।  ওকে আর নিজের পাড়ায় দেখা যেত না। কেননা ও  গুরুর সন্ধান পেয়েছে ভবানীপুরের নন্দন রোডে।
     
             গলির মধ্যে একটা একতলা ছোট্ট ঘর, নীচু হয়ে ঢুকতে হয়। দেয়াল ঘেঁষে মাটিতে পাতা বিছানা। তাতে গেঞ্জি গায়ে লুঙ্গি পরা ভদ্রলোকের পাশে দুটো ক্রাচ রাখা। ওঁর একটা পায়ের পাতা নেই। অনেক আগে গ্যাংগ্রীনের ভয়ে কেটে ফেলতে হয়েছিল।
             উনি ঘরে বসেই টিউশ্যন করেন, মাধ্যমিক পর্য্যন্ত সব বিষয়, মায় বায়োলজি , ম্যাথস্‌ পর্য্যন্ত। ছাত্রের দল ফিসফিস করে বাদল স্যার স্বদেশি করতেন, একবার পায়ে পুলিশের গুলি লেগেছিল।
     
             বাদল স্যার ওর মধ্যে কী দেখলেন জানি না। একদিন মাথায় হাত রেখে বললেন—ভয় পাস না। এত কুঁকড়ে থাকিস কেন? রবীন্দ্রনাথ শোনঃ
            ‘যার ভয়ে  তুমি ভীত, সে অন্যায় ভীরু তোমা চেয়ে,
             যখনই জাগিবে তুমি, তখনি সে পলাইবে ধেয়ে,
             পদাহত কুক্কুরের মত’।
     
             ওর নবজন্ম হল। আরও অনেকের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলেন। ও স্কোয়াডের সদস্য হল।
           
            ওর প্রথম অ্যাকশন।
    একদিন বাংলা বন্ধের সময় রাস্তাঘাট ফাঁকা, তবু পুলিশ পাহারায় দু’একটা বাস বেরিয়েছিল ডিপো থেকে। ও গেল অ্যাকশন করতে। পূর্ণ সিনেমার পাশের গলি থেকে বেরিয়ে এসে সোজা বাসের সামনে ইঞ্জিনের উপর পেটো চার্জ করল। লাল-সাদার কম্বিনেশন । কড়-কড়াৎ শব্দ গলির মুখে হাওয়ায় ঢেউ তুলল। ও দেখল বাসের বনেট খুলে গিয়ে ধড়াস ধড়াস করছে, চেসিস গিয়েছে বেঁকে।
         
           ড্রাইভার প্রাণপণে স্টিয়ারিং ঘুরিয়ে টাল সামলানোর চেষ্টায় ফুটপাথের পাশের ল্যাম্পপোস্টে ধাক্কা মারল। ও দৌড়ে যখন গলির মধ্যে স্যারের বাড়ির দরজায় প্রায় আছড়ে পড়ল তখন ওর বুক ধড়ফড় করছে, কানে তালা লেগে একটা কুকারের মত সিঁই সিঁই আওয়াজ।
          
              স্যার কোন কথা না বলে ওকে ভেতরে টেনে নিয়ে দরজায় শেকল তুলে দিলেন। পাশে বসিয়ে বুক, হাত-পা যত্ন করে মালিশ করে দিলেন। ওর দীক্ষা হল। ওকে আর পালাতে হবে না।
    ও বাসে ওঠে বুক ফুলিয়ে। সবসময় বয়স্ক এবং মহিলাদের সীট ছেড়ে দেয়। সারা রাস্তা রড ধরে দাঁড়িয়ে যেতে কেমন একটা গর্ববোধ হয়।
     
     
                 কিন্তু একদিন সন্ধ্যে নাগাদ পাঁচ নম্বর বাস ঢাকুরিয়া স্টপেজে থামলে ও দেখল একজন অফিস ফেরতা বয়স্ক মানুষ অভিযোগ করছেন যে একটি যুবক অনেকক্ষণ ধরে একজন মহিলাকে উত্যক্ত করছে। যুবকটি অভিযোগ অস্বীকার করে জড়ানো গলায় মহিলাটিকে বলছে –বৌদি, আপনি বলুন তো! আমি কি আপনাকে বিরক্ত করেছি?
    মহিলা স্টপেজে নেমে যাবার মুখে তেতো মুখ করে বললেন—হ্যাঁ, করেছেন।
                বয়স্ক মানুষটির গলা চড়ল। কিন্তু যুবকটি ভদ্রলোকের গলার টাই ধরে টেনে নামিয়ে মারতে শুরু করল। ও অবাক হয়ে দেখল  কেউ কিছু বলছে না। চোখ নামিয়ে সুড়সুড় করে কেটে পড়ছে। ও গিয়ে যুবকের হাত ধরে টানাটানি করতে লাগল—ছেড়ে দিন বলছি! বাপের বয়েসি লোকের গায়ে হাত তুলছেন, লজ্জা করে না?
             
                   লোকটি এবার ওর বাপ-মার শ্রাদ্ধ করতে করতে এগিয়ে এল, কিন্তু ও আগে হাত চালাল। মদ খেয়ে টল্লি লোকটা ওঁক শব্দ করে রাস্তায় বসে পড়ল।
    অমনই রে -রে করে তেড়ে এল পাঁচ -ছটি ছেলে। ওকে ঘিরে ধরে বলল—আমাদের পাড়ার এসে কোকাদার গায়ে হাত তুলবে?
     
                  না, ওর সাহায্যে কেউ এগিয়ে এল না। জেগে ওঠা জনগণ কোকা মাস্তানের নাম শুনেই দূরে দাঁড়িয়ে পড়ল। অসম লড়াইয়ের পরিণতি বুঝতে বেশিক্ষণ লাগল না। ও জানে ওর কোন অভিমন্যু হওয়ার শখ নেই। ফলে আবার সে দৌড়তে লাগল। এঁকে বেঁকে, যোধপুর পার্কের বাজারের দিকে। একসময় টের পেল, অনেকদূর চলে এসেছে, পেছনে কেউ আর আসছে না।
     
                   দু’বছরের চেষ্টায় ভাল রেজাল্ট করে মেডিকেল  কলেজে ভর্তি হল। আত্মবিশ্বাসে জোয়ার এসেছে। স্বপ্ন দেখে-- নরম্যান বেথুনের মত সার্জন হবে, যিনি কানাডার নাগরিক হয়েও এশিয়ার মুক্তিযুদ্ধে চিনের ইয়েনান ঘাঁটিতে লালফৌজের ডাক্তার হয়ে যুদ্ধক্ষেত্রে ছিলেন। ও কল্পনা করে অন্ধ্রে জনযুদ্ধ দলের লিবারেশন আর্মির ডাক্তার হবে। অনেকের প্রাণ বাঁচাবে। আর ঘটনাচক্রে ওর মৃত্যু হলে তা হবে হিমালয়ের চেয়েও ভারি।
     
                      লোকে ওকে এভাবেই মনে রাখবে।
     
                      কিন্তু কোলকাতার হাওয়া দ্রুত বদলাতে লাগল। কারমাইকেল ও ইডেন হোস্টেল অনেকের অসময়ের শেল্টার ছিল। সেসব বন্ধ হয়ে গেছে। এ’পাড়ার ছেলে ও’পাড়ায় যেতে দশ বার ভাবে। বেকায়দায় পড়লে প্রাণপণে ছোটে, ছুটতেই থাকে যতক্ষণ না নিরাপদ এলাকায় পা রাখছে।
                    মুষল পর্বের ভ্রাতৃঘাতী হানাহানি ওকে বিচলিত করে, কিন্তু ও  ভেসে চলে জোয়ারের গুয়ের মত, হাবুডুবু খেতে খেতে।
     
     
                     আবার একটা ঘটনা, যা ওর জীবনকে বদল দেবে।
                    ওর ঘনিষ্ঠ সাথী , এক বছরের সিনিয়র নবারুণদাকে একটি উপদল শ্রেণীশত্রু লেবেল মেরে তুলে নিয়ে যায়। হাত-পা বেঁধে মুখে রুমাল গুঁজে ট্যাক্সির ডিকিতে করে বেলেঘাটায় রেল লাইনে ফেলে দিয়ে যায় , যাতে নবারুণদার দু’তিন ঘন্টার মধ্যে চলন্ত মালগাড়িতে কাটা পড়া একটি লাশ হয়ে যাওয়া প্রায় নিশ্চিত হয়ে যায়।
    ওর কাছে নির্দেশ আসে—পালটা আঘাত হানতে হবে!
     
                     ও রেকি করতে থাকে। বেলেঘাটা পাড়ায় সবাই জানে যে ও ভদ্র ছেলে, ডাক্তারি পড়ে, কেউ ওকে সন্দেহ করে না। এটাও জানে যে ও আই ডি হাসপাতালের ইন্টার্ন বিদিশার বাড়িতে প্রায়ই যাতায়াত করে।
                    দেখা গেল, আততায়ী দলটির সবাই পাড়া ছেড়ে দিয়েছে, কিন্তু দলের পান্ডা ঘোঁতনা ওখানেই রয়ে গেছে। ওর আত্মবিশ্বাস মাত্রাছাড়া। কারণ ওই পাড়ায় অন্যদলের সংগঠন বলার মত নয়।

                        ও দায়িত্ব পায় ঘোঁতনাকে খতম করার। ওর ভেতরে একটা কাঁপুনি শুরু হয়, কিন্তু না করতে পারে না। অন্যেরা বোঝায়, এত ভাবার কী আছে? তুই তো মেডিকেল কলেজে অনেক মড়া কেটেছিস, লাশ ঘেঁটেছিস। দুয়েক বছর পরে সার্জন হবি, তোর সংকোচ কিসের?
     
                        মনে কর, ঘোঁতনা একটা লাশ। ওরা যেদিন তোর সিনিয়র নবারুণদাকে মেরেছে, ধরে নে সেদিন থেকেই ও লাশ হয়ে গেছে। তুই খালি  সার্জারি করবি, একটা পুঁজে ভরা টাটিয়ে ওঠা ফোঁড়া কাটবি।
                       একটি মেয়ে বলে ওঠে—আমাদের মহান নেতা তো বলেছেন, ‘শ্রেণীশত্রুর রক্তে যে হাত রাঙায় নি, সে সাচ্চা কম্যুনিস্ট নয়’।  এবার আপনার সুযোগ।
    না, ও আর পিছিয়ে আসতে পারল না।
     
                         এক সন্ধ্যেবেলায় তখনও রাস্তার আলোগুলো জ্বলে ওঠে নি। ও একা পেয়ে গেল ওর শিকারকে , সি আই টি বিল্ডিং একটি  দোতলা কোয়ার্টারের সিঁড়ির তলায়। নাম ধরে ডাক শুনে ঘোঁতনা পেছন ফিরে তাকিয়ে একটু অবাক হল। এই পড়ুয়া ডাক্তারকে অনেকের মত ও চেনে বটে, কিন্তু আলাপ-টালাপ হ্য়নি।
    --শুনুন, একটা কথা ছিল।
    ঘোঁতনার চোখে প্রশ্ন, কী কথা?
                      কিন্তু সতর্ক হবার সময় পেল না ঘোঁতনা। অন্ধকারে ওর হাতের সার্জিকাল নাইফ ব্যাটা দেখতেই পায়নি, হয়ত আশাও করেনি।
                      খুব কাছ থেকে ওর গলার নলিটা সার্জনের ছুরিতে নিপুণ ভাবে চিরে গেল।  অবাক ঘোঁতনা ফিনকি দিয়ে রক্তের ধার দেখতে দেখতে গলা থেকে গ্লাক গ্লাক শব্দ করে ওকে জড়িয়ে ধরল। ভয়ে আতংকে দিশেহারা হয়ে ও ঘোঁতনাকে প্রাণপণে দেয়ালের দিকে ঠেলে মাটিতে ফেলে দিল। তারপর  অন্ধকারে মাঠ দিয়ে ছুটে পৌঁছে গেল বিদিশার কোয়ার্টারে।
     
                    বিদিশা ওকে দেখে আঁতকে উঠল।   কিন্তু ভেতরে নিয়ে গিয়ে প্রথমে আঁতিপাতি করে দেখল ও জখম হয়েছে কিনা। তারপর নিশ্চিন্ত হয়ে বলল-শীগগির বাথরুমে গিয়ে জামাকাপড় পাল্টাও।
                   বিদিশার আলমারিতে ছেলেটার দু’জোড়া জামাকাপড়, গেঞ্জি আন্ডারওয়ার রাখা থাকত। ও স্নান করে কাপড় বদলে নিল। বিদিশা দায়িত্ব নিল রক্তলাগা জামাকাপড়গুলো পুড়িয়ে ফেলার।
                   পরের দিন ও ক্লাসে গেল, যেন কিছুই হয় নি। তারপর সন্ধ্যের মুখে বিদিশার কোয়ার্টারে গিয়ে বেল টিপতেই দরজা খুললেন বিদিশার মা। ওকে দেখে ভুত দেখার মত আঁতকে উঠে বললেন—শিগগির যাও এখান থেকে, তোমাকে পুলিশ খুঁজছে।
                     পার্টির ঠেকে গিয়ে খারাপ খবরটা জানতে পারা গেল।
                     
                        ঘোঁতনা মরে নি। গুরুতর আহত, হাসপাতালে আই সি ইউতে রয়েছে। আপাতত বেঁচে উঠেছে।
    হ্যাঁ, সার্জন হিসেবে আমি ব্যর্থ। ঠান্ডা মাথায় গলার বাঁদিকে জুগুলার ভেইনটা বোধহয় ঠিকমত কাটতে পারি নি। আজও অন্ধকার গাঢ় হলে যেন ঘোঁতনাকে দেখতে পাই।
     
                        মেডিক্যাল কলেজ আর বিদিশা—বাকি জীবনের মত আমার সিলেবাসের বাইরের টপিক হয়ে গেল। আবার দৌড়ে চলা, এবার পুরোপুরি আন্ডারগ্রাউন্ড লাইফ।  মনে হল, এ’জীবনে আমার দৌড়নোর পালা শেষ হবার নয়।
     
                          তবে ভবিষ্যতে একবারও গলার নলি কাটতে হাত কাঁপে নি; সেদিন কিস্টাইয়ার অপারেশনেও না।
    অন্ধকার ফিকে হয়ে এসেছে। এবার ক্লান্ত লাগছে, ঘুম পাচ্ছে।

                         আমার কাঁধে কেউ হাত রাখায় চমকে উঠে নিজের কোমরের বেল্টে হাত দিই।
     
                         না, পরিচিত গলার স্বর। কম্যান্ডার গায়ত্রী মণ্ডাবী।
     
                        --কমরেড লাল; আমাদের ডাকেন নি তো? সারারাত জেগে একাই পাহারা দিয়েছেন? কেন?
    আমি ওর দিকে বোবা দৃষ্টিতে তাকাই। ও আমার হাতে হাত রাখে।
                       --ভাববেন না, কমরেড লাল। আমি জানি, কীভাবে পিউলিকে মারা হয়েছে। কাপুরুষের দল! জেনে রাখুক, কমরেড পিউলির আত্মদান বৃথা যাবে না। আমি বদলা নেব। মূল পালের গোদাকে তুলে আনব বীজাপুরে, আপনার সামনে পেশ করব। তারপর বিচারসভা বসবে।
    কিন্তু পিউলির অসমাপ্ত কাজ সম্পূর্ণ করতে আপনাকে আমাকে বেঁচে থাকতে হবে, কমরেড । স্বাস্থ্যের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। অহেতুক শক্তিক্ষয় করলে চলবে না। আমাদের রওনা হবার সময় হয়েছে। আমরা এখখুনি বেরিয়ে যাব।
    কমরেড লাল, আপনি যান, হাতমুখ ধুয়ে শুয়ে পড়ুন। অনেক কাজ বাকি।

                      কিন্তু আমার কপালে বোধহয় আজ আর  শোওয়ার পালা নেই। ওরা দু’জন কাঁধের ব্যাগ গুছিয়ে নিয়েছে।  রওনা হওয়ার আগে আমরা তিনজন একে অপরকে জড়িয়ে ধরে থাকি , চুপচাপ , কোন কথা না বলে। হয়ত শুষে নিই একে অপরের শরীরের উত্তাপ। খানিকক্ষণ। হয়ত এক মিনিট, জানিনা পরের বার কবে দেখা হবে, বা আদৌ হবে কিনা।
    এই সময় বুকের ভেতরটা কীরকম খালি খালি লাগে; হ্যাঁ, প্রত্যেকবার।
     
                    মাত্র হাত ছাড়িয়ে আলগা হয়ে পেছন ফিরতে যাব, পেঁচা ডেকে উঠল। এই ভোর বেলায় পেঁচা? এখনও  আকাশ গোলাপি হয়নি, কিন্তু অন্ধকার একটু ফিকে তো হয়েছে! তারপর নিঃস্তব্ধতাকে ভেঙে কোটরী হরিণের ডাক। একমিনিটের মধ্যে বর্ষার ময়ূর ডেকে উঠল।
     
                       না, এবার কোন সন্দেহ নেই, দুশমন! কীভাবে পাহারাদারদের নজর এড়িয়ে এলাকায় ঢুকেছে? এবং এগিয়ে আসছে  ভীমা ও গায়ত্রী মন্দির থেকে ছিটকে বেরিয়ে গিয়ে  একটু পিছিয়ে দুটো গাছের আড়ালে মাটিতে শুয়ে পজিশন নেয়।
     
                       একটা সমদ্বিবাহু  ত্রিভুজের দুই কৌণিক বিন্দুর অবস্থানে। ত্রিভুজের শীর্ষবিন্দুতে আমি। মন্দিরের পেছনের জানলা দিয়ে একটা পাওয়ার ফুল বাইনোকুলার দিয়ে সামনের গাছপালার আড়ালে একটু ভোরের কুয়াশা ঘেরা জায়গাটার দিকে তাকিয়ে আছি। যেদিক থেকে সিগন্যালগুলো এসেছে, সেইদিকে।
     
                         মনের মধ্যে ঝড় । এরা কারা ? কোবরা ব্যাটালিয়ন? স্পেশাল কম্যান্ডো, নাকি সলওয়া জুড়ুমের সময় থেকে তৈরি লোক্যাল হাতিয়ারবন্দ স্কোয়াড?  কিন্তু এরা খবর পেল কী করে? আর যদি রাত্তিরে এই এলাকায় ফোর্স মুভমেন্ট হয়ে থাকে তাহলে আমাদের অ্যাডভান্সড গার্ডদের নজর এড়িয়ে গেল কী করে?
                         ওরা মহাদেব ডোংরি গাঁয়ের সরহদ বা সীমান্তে এসে যাওয়ার অন্ততঃ তিনকিলোমিটার আগেই আমাদের কাছে রেড সিগন্যাল এসে যাওয়ার কথা। এছাড়া , এরা কারা, কতজন, এবং কী কী হাতিয়ার রয়েছে তার ডিটেইলস একজন ক্যুরিয়ারের সরেজমিনে নিজে এসে জানিয়ে দেওয়ার কথা।

                        বাইনোকুলারের ফোকাসে এবার একটা মানুষের অবয়ব! আমি সতর্ক , একটু উত্তেজনা অনুভব করছি। পেটের কাছে একটা অস্বস্তি । এর পেছনে কতজনের দল আসছে?
                        লোকটা প্রায় মন্দিরের একশ মিটারের মধ্যে এসে গেছে। আমি জানি, ভীমা এবং গায়ত্রী ছাড়াও অন্ততঃ দশ জোড়া চোখ খুব কাছ থেকে  ওর দিকে বন্দুক তাক করে রয়েছে, শুধু আমার ইশারার অপেক্ষা।
                         
                           কিন্তু  আমি জানি এই আদেশ দেওয়ার দায়িত্ব কতখানি। অনেক অভিজ্ঞতা থেকে শিখেছি। তাই দূরবীন থেকে চোখ সরাই না।
    আরে, লোকটা এবার দাঁড়িয়ে পড়েছে, এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। কী ভেবে যেন মন্দিরের দিকে তাকিয়ে হাত দুটো মাথার উপরে তুলল হাতের মুঠো খোলা, কোন অস্ত্রশস্ত্র নেই। ও খালি হাত হাওয়ায় নাড়াচ্ছে, ধীরে ধীরে।
     
                            আমি ফোকাস আরও শার্প করে চমকে যাই—একে তো আমি চিনি! ও এখানে?
                                                                                                                      (চলবে)

     
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ধারাবাহিক | ১৩ জুলাই ২০২২ | ১৫৮৯ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Amit Sengupta | 142.12.***.*** | ১৪ জুলাই ২০২২ ০২:১৭509834
  • দুর্দান্ত এগোচ্ছে। পরের পর্বের প্রতীক্ষায়। 
  • Kishore Ghosal | ১৪ জুলাই ২০২২ ১১:৪৭509843
  • প্রথমদিকের অমন নিখুঁত ভৌগোলিক বিবরণ তার সঙ্গে এমন উত্তেজনা - নাঃ এমন রহস্য কাহিনী বাংলা ভাষায় কোনদিন পড়িনি। 
    উদ্গ্রীব অপেক্ষায় রইলাম।   
  • Swati Ray | 117.194.***.*** | ১৮ জুলাই ২০২২ ০৯:৫০510000
  • ১১ র অপেক্ষায় 
  • Ranjan Roy | ১৮ জুলাই ২০২২ ১২:২০510002
  • স্বাতী  ,
    কালকের মধ্যে নামিয়ে দেব  ।
     
  • বিপ্লব রহমান | ২৭ জুলাই ২০২২ ০৬:২৪510400
  • ঠিক রহস্য রোমাঞ্চ মনে হচ্ছে না! গেরিলা যুদ্ধের ডায়েরি মনে হচ্ছে। তবে খুব থ্রিল! 
     
    সিএমের উদ্ধৃতির ব্যবহার অহেতুক মনে হয়েছে।  শুভ 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। দ্বিধা না করে প্রতিক্রিয়া দিন