১. ঘরে ফেরা বর্ষার মতন
গরমের ছুটিতে পাহাড়ে ঘুরে বাড়ি ফিরেছি।
ভরদুপুর। বাইরে মাঝ-গ্রীষ্মের রোদ। সব ঘরের পর্দা টানা, বিছানা চাদর দিয়ে ঢাকা।
বহুদিন ব্যবহার হয়নি বলে বাথরুম খটখটে শুকনো। জলের কল খুলতেই মেঝে-ভেজা সোঁদা গন্ধ পেলাম।
২. পাহাড়ে দুপুরের টেন্ট
দুপুরবেলা নেপালি ছেলে দু'টো ভরাল ধরতে চলে গেল। কেন ভরাল ধরবে, তা জিজ্ঞেস করাতে বলল - আগে কখনো ভরাল ধরেনি, তাই।
আমার কোথাও যেতে ইচ্ছে করছিল না। ঘামে ভিজে যাওয়া মোজা দু'টো টেন্টের চৌকাঠে শুকোতে দিলাম। খানিকক্ষণের মধ্যেই শুকিয়ে মড়মড়ে হয়ে গেল।
বাইরে একটা কনকনে হাওয়া ছেড়েছে। টেন্টের ভেতর হাওয়া ঢোকে না, বরং রোদে তেতে ওঠে - আরাম লাগে খুব।
একবারও বাড়ির কথা মনে পড়ছে না আমার।
৩. পিরামিডও একধরনের বাড়ি
আমাদের ওখানে একটা ফ্যাক্টরি ছিল। সব ফ্যাক্টরির মতন ওটাও একদিন বন্ধ হয়ে গেল। কলোনির কোয়ার্টারগুলো এখন খাঁ-খাঁ করে।
কোয়ার্টারের দেয়ালে বাচ্ছাদের আঁকা হিয়েরোগ্লিফিক্স। দেরাজের পাল্লার পেছনে টিপ, বাঙ্কের কোণে লুকিয়ে রাখা রামের বোতল।
ঠাকুরের ছবি দেওয়া ক্যালেন্ডার ঝুলছে। যে মাসের পাতা খোলা - সেই মাস থেকে এই কোয়ার্টারটা বাড়ি হওয়া বন্ধ করে দিয়েছে।
৪. ভাড়াবাড়িতে থাকার সুবিধে-অসুবিধে
ভাড়াবাড়িতে থাকার সুবিধে-অসুবিধে দুই-ই আছে। অসুবিধে, যেমন - পাম্প চালানোর সময়, গরমকালে মশা, এইসব।
তাছাড়া ভাড়াবাড়ির জানলার গরাদের প্যাটার্ন ভাড়াটের পছন্দমতো হয় না। রাতে, স্ট্রীটলাইটের আলো এসে সিলিং-য়ে অদ্ভুত সব ছায়া ফেলে।
গ্রীষ্মকাল, একদিন রাতে জানলা খুলে শুয়ে সিলিং-য়ের ছায়া দেখছি। হাওয়ায় গাছের পাতা নড়ছে, ছায়াও কাঁপছে সেই সঙ্গে।
চারতলায় থাকি। জানলার একদম বাইরেই গাছটার ঝাঁকড়া মাথাটা।
আমি যেন একটা ঘাসের বনের মধ্যে শুয়ে আছি। মানুষের মাথা ছাড়িয়ে উঠে গেছে, এমন একটা ঘাসের বন। দূরে হয়তো একটা বাওবাব গাছ। যেমনটা আফ্রিকায় বা চাঁদের পাহাড়ে পাওয়া যায়, তেমন।
আমার নিজের বাড়িতে এসি আছে। গরমকালে তাই জানলা খুলে শোবার প্রয়োজন পড়ে না। ভাড়াবাড়িতে না থাকলে এরকম একটা রাত পেতাম-ই না হয়তো!
আমার তাই মাঝে মাঝে মনে হয়, যে সকলের উচিত নিজের নিজের বাড়িগুলো ভাড়া দিয়ে ভাড়াবাড়িতে গিয়ে থাকা। আর কিছু না হোক, এতে অন্তত শেষপর্যন্ত কোথাও একটা ফেরার তাগিদ-টা বেঁচে থাকে।
৫. বাড়ি-গাড়ি
কালো মেঘের মধ্যে দিয়ে সেবার শান্তিনিকেতন থেকে ফিরছি। দু'পাশে যতদূর দেখা যায় খালি ধানমাঠ আর ধানমাঠ, এমন সময় বৃষ্টি নামল।
গাড়ির জানলা জলের ফোঁটায় ভিজে যাচ্ছে। ড্রাইভার ওয়াইপার চালিয়ে দিলেন। কয়েক মিনিটের মধ্যে চারপাশটা জলরঙ হয়ে গেল।
এরকম বৃষ্টির মধ্যে শুকনো হাত-পা নিয়ে গাড়ির মধ্যে বসে থাকতে খুব আরাম। এরকম একটা গাড়ির মধ্যে যদি কারোর বাড়ি হয়?
বাড়ির প্রায় কাছে এসে এক জায়গায় গাড়ি থামিয়ে তেলেভাজা কেনা হলো। পৌঁছে মুড়ি দিয়ে খাওয়া হবে।
তবে এতে গাড়ির মতন আরাম লাগবে না, তা আমি জানি।
পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।