সন্ধ্যের দিকে হালকা শীত-শীত লাগে, আবার সাইকেলে চড়লেই গায়ে ঘাম - এইটাই বোধহয় শরৎকাল। এ বড় dilemma-র কাল।
পাখা চালিয়ে গায়ে চাদর দিয়ে শোব, নাকি পাখাটা বন্ধ করে খালি গায়েই শোব - এইসব ঝামেলার মধ্যে দিয়ে যখন দুপুর গাঢ় হয়, আধখোলা জানলার ফাঁক গলে ঢুকে পড়ে পাড়ার মাঠে বাঁশ ঠোকার শব্দ। মুর্শিদাবাদের লোক সব ওরা, সারাটা দুপুর কাঠঠোকরার মতন ঠুক-ঠুক করে।
আমরা কয়েকজন ছেলে, যারা ফুটবল খেলতে ভালোবাসি - ভয়ে ভয়ে আছি, এই বুঝি একদিন বাবাইদা বলল - শালা সাড়ে পাঁচটার মধ্যে সন্ধ্যে নামে, ধুর, কাল থেকে পৌনে চারটেয় ব্যাট্ নিয়ে আসবি!
হয়তো dilemma-র মধ্যে দিয়েই দিন পাল্টায়। ষষ্ঠীর দিন, যখন সকাল থেকেই কি নতুন জামা পড়বো - dilemma-য় পড়ি আমরা কয়েকজন কম জামা-হওয়া ছেলেপিলে - আধখোলা জানলার ফাঁক গলে ঢুকে পড়ে কিশোরের "তোমার বাড়ির সামনে দিয়ে আমার মরণযাত্রা যে দিন যাবে"। সারা বছর ঝিমিয়ে থাকা ফ্ল্যাটবাড়ি, যার কোনো বাসিন্দার মধ্যে সারা বছর কোনো কথা নেই - সন্ধ্যেবেলা তার সিঁড়িতে পাওয়া যায় চড়া সেন্টের গন্ধ।
তারপর? ঝুপ্ করে আমকাঠের আলনা থেকে খসে পরে পাঁচটা দিন।
পাড়ার মাঠে পাঁচটাতেই ঘন হয়ে নেমে আসে রেললাইনের ওপারের ডালডা ফ্যাক্টরির ধোঁয়া। গৌর আর ওর মা, পুজোর মাঠ ছেড়ে, ফুচকার ঠেলা ঠেলে নিয়ে যায় মোড়ের মাথায়। নিতাই চাপাকল টিপে জ্যারিকেনে জল ভরে। গঙ্গার বড় ছেলে সুরজিৎ, চপে পুর ভরে বাবার কড়াইয়ে দেয়। ছোট ছেলে দেবজিৎ, পাশে বসে গালে হাত দিয়ে ভাবে - এবার মার্চে টেন্-টা পাস করতে পারলেই পিঙ্কিকে নিয়ে পালিয়ে যাবে টাটায়, জুটিয়ে নেবে একটা চাকরি।
মাঠে এখন পাঁচটাতেই অন্ধকার নামে। গুম্ হয়ে বসে থাকে আধখোলা প্যান্ডেলটা, আনাচে-কানাচে এখনো টাটকা বাঁশের গন্ধ। চারদিক কালো হয়ে এলে সেগুলোর ফাঁক গলে খেলা করে সন্ধ্যের ভূতগুলো।
পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।