এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  ইস্পেশাল  পুজো ২০১০

  • একটি গরু, একটি গ্রাম

    শ্রাবণী
    ইস্পেশাল | পুজো ২০১০ | ০১ অক্টোবর ২০১০ | ৭০৯ বার পঠিত
  • কথাটা কখনও কাউকে বলিনি, কেমন একটু অদ্ভুত লাগত। এরকমটা মনে হওয়ার কোনো কারণ নেই, মনে হলে যেন লজ্জাই পেতাম, তবু মনে হত। গরু, বিশেষ করে গাভীর চোখের দিকে তাকালেই মনে হত মায়ের চোখের দিকে তাকিয়ে আছি, এখনও মনে হয়। শান্ত সজল কাজল আঁখি, দৃষ্টিতে অপত্য স্নেহ, ঠিক আমার মায়ের মত। এদিকে গরুদের নাম করে চারিদিকে যা হ্যাটা দেওয়া হয়। সেই গরুর চোখ দেখে মায়ের চোখের কথা মনে হওয়া, লোকে শুনলে কি ভাববে!

    এই যে আমার এক বান্ধবী আছে, সে অকাতরে তার চারপাশের লোককে "ওটা তো গরু", "ছাগলটা আজ অফিসে আসেনি" এসব বিশেষনে ভুষিত করে থাকে, শুনে শুনে তার কন্যা যখন দুবছরের তখন পাবলিকে একদিন বলে উঠল, "পাপাটা একটা গরু"। তার মায়ের মাথায় হাত, বাপের মুখমন্ডলে রক্তিম আভা, যুগপৎ রাগ ও লজ্জার। এরপরে মহিলা কিছুদিন "গরু","ছাগল" বলাটা একটু কম করেছিল, তবে মেয়ে বড় হতে আবার চালু। একদিন তার এক শান্ত বিচক্ষণ সহকর্মী অনেকদিন শুনে শুনে আর থাকতে না পেরে বলে উঠল "তুমি যে এসব অখাদ্য বেকার যাতা লোকজনকে গরু ছাগল বলে ডাকো, তাতে গরু ছাগলের কত অপমান হচ্ছে সে খেয়াল রাখো?" সত্যিই, ভেবে দেখার মত কথা, গরু ছাগলের মতো সুখাদ্য আর উপকারী জীব হয় নাকি! তাদের সঙ্গে অখাদ্য মানুষজাতির তুলনা!

    গরুদের খুব কাছে থেকে দেখা গ্রামে, অবশ্যই ছোটবেলায়। আজকাল গ্রামেগঞ্জেও শহরের হাওয়া লেগেছে। ঘরে ঘরে আর গরু দেখা যায়না। আগে পাড়াগাঁয়ে মোটামুটি সব গেরস্ত বাড়ীতেই গরু পালার চল ছিল। গয়লা বা দুধ ছানার ব্যবসাদারদের মত গোয়ালভরা গরু না হলেও একটি দুটি গরু অবস্থাবিশেষে প্রত্যেক বাড়ীতেই দেখা যেত। সেজন্য গোয়ালঘরও থাকত প্রতি বাড়ীতেই, একটু বার ঘেঁষে, যাকে বলে খিড়কী দিকে। আমাদের বাড়ীতে দেখিনি কারণ আমরা ছিলাম পরিযায়ী, গ্রামের ঠিক নিয়মিত বাসিন্দা নই। আমাদের মতন এরকম দু চারটি ছেড়ে পাড়ার অন্যান্য সব বাড়ীতেই গোয়াল ছিল। অপেক্ষাকৃত অবস্থাপন্ন বাড়ীতে একজন রাখালও থাকত, যে গরুদের দেখাশোনা করত, গরুকে মাঠে নিয়ে যেত ও গরু,গোয়াল সম্বন্ধিত নানা কাজ করত। সাধারণ বাড়ীতে অবশ্য এসব কাজ বাড়ীর লোকেরা নিজেরাই করত। গরুর দুধ যা হত তা অনেকসময় বাড়ির সদস্যদেরই দিতে কুলোতো না, তবু কেন এত ঝামেলা পোহানো?

    আসলে আগেকার দিনে গোলায় ধান, গোয়ালে গরু, পুকুরে মাছ এসমস্তই গ্রামের এক সচ্ছল পরিবারের নিদর্শন মানা হত। সেই যাকে বলে "সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে"। তাই লোকে ক্ষমতায় কুলোলে গরু পুষত, পুকুর চাষ করত। পয়সা হলে টিভি ফ্রিজ কেনা, ফ্ল্যাট/বাড়ী কিনে রাখা এসব গ্রামে তখনও তেমন চালু হয়নি। "আমার বাড়ির গরুর খাঁটি দুধ",এ কথা বলতে গিয়ে আত্মপ্রসাদের আনন্দ সেকালের গৃহকর্তার চোখে মুখে ফুটে উঠত।

    গয়লা না হলেও, কোনো কোনো বাড়ীতে একটি দুটি গরুর দুধ বেচে সংসারে সাশ্রয় করা হত, অতিরিক্ত আয়। আমাদের পাড়ায় এরকম দুই বাড়ী ছিল স্বীকৃত দুধবিক্রেতা। অনেক বাড়ীতে আবার গিন্নীরা কর্তাকে লুকিয়ে উদবৃত্ত দুধ গোপনে বেচে রোজগার করত, সে হিসেব অবশ্য আলাদা। তাতে কোনো মন্দ ব্যাপার ছিলনা, সংসারের ও গিন্নীর নিজের শৌখীন খরচে কাজে লাগত। যে গিন্নী কিনছে সেও এই গোপনীয়তায় সানন্দে ভাগ নিত। দেখা যেত যেভাবেই হোক লোকে নিজের পাড়ার বা চেনা বাড়ীর দুধ নিতেই বেশী পছন্দ করে, কারণ ভেজাল কম। যে দু এক পরিবার দুধ বিক্রি করত তাদের নিজেদের মধ্যে সুন্দর বোঝাপড়া ছিল। কার কোন গরু কখন দুধ দিচ্ছে, কে কোন বাড়িতে দুধ দেবে, তা তারা নিজেরাই ঠিক করে নিত পরস্পর আলোচনার মাধ্যমে। ক্রেতাকে এ নিয়ে ভাবতে হত না,বাড়ীতে দুধ এসে যেত। অন্যদিকে গয়লারা দুধের মাপে কারচুপি করত, জল বেশী মেশাত বলে বদনাম ছিল। তাই রোজের দুধের থেকে ছানা ক্ষীর দই এসব বিশেষ দ্রব্যর জন্যই গয়লাপাড়ায় যাওয়া হত বেশী। অবশ্য কাজেকম্মে, পুজো পাব্বণে বা রোজের বড় সংসারে যখন পরিমাণে বেশী দুধ দরকার তখন সেই গয়লাদের দ্বারস্থ হওয়া ছাড়া উপায় থাকত না গেরস্তর!

    গরুদের গোয়ালে ঢোকানো হত সন্ধ্যেয়,মাঠ থেকে ফেরার পরে। গোধূলি তো বহুচর্চিত বিষয়, তবে সেসব কাব্যকথা না মনে করেও বলা যায় বেলা পড়লে গরুদের মাঠ থেকে গোঠে ফিরতে দেখা সত্যিই একটা সুন্দর দৃশ্য। সন্ধ্যের সময় নানা দিক থেকে আওয়াজ ভেসে আসত, "আঁধার হয়ে এল, গোয়ালে ধোঁয়া দিসনি যে এখনও" অথবা "গোয়ালে ধোঁয়া দিয়ে দে/দাও"। গোয়ালঘর আসলে মশার আর ডাঁশপোকার আড়ত হয়। এদের তাড়ানোর জন্যে ধোঁয়া দিতে হত রোজ, নাহলে ঐ অবলা জীবেদের রক্ত খেয়ে শেষ করে দেবে না! আর হবেনাই বা কেন মশামাছিদের আড়ত, গোয়ালঘরের মত নোংরা ঘর বাড়িতে আমি দুটি দেখিনি। নীচু চালা, ছিটেবেড়ার ঘর, বর্ষায় এদিক ওদিক দিয়ে বৃষ্টির জল চুঁয়ে পড়ছে। মেঝেটাও নিকোনো হতনা, এবড়োখেবড়ো জমি। গরুর গোবর আর গোময়ে সবসময়ই ভিজে কাদা কাদা হয়ে থাকে। মাঝে মাঝে অবিশ্যি মেঝেতে ছাই আর বালি ফেলা হত কিম্বা ইঁটের টুকরো, একটু শুকনো করতে। কোথাও কোথাও একটা দুয়ার থাকত, সেটা অপেক্ষাকৃত পরিস্কার, তার মেঝেও নিকোনো, মোটামুটি সমান। বৃষ্টির দিনে যখন গরুদের মাঠে বাঁধা যেতনা তখন গোয়াল দুয়ারের খোঁটায় বেঁধে রাখা হত। বর্ষায় গরুকে বাইরে বাঁধলেই অবধারিত ভাবে জোঁক ধরত গায়ে। মাছি মশা তবু লেজের বাড়িতে তাড়ানো যায়, কিন্তু জোঁক বাবাজী হয় ভয়ানক নাছোড়বান্দা, লেজের নাজুক ঘায়ের পরোয়া করে থোড়াই!
    সাদা ধলো গরুর (কালো বা বাদামীদের ক্ষেত্রে বোঝা যায়না অত!) গায়ে এখানে সেখানে রক্ত খেয়ে ফুলে গুটি পাকিয়ে বসে আছে কালো কালো জোঁক, এ দৃশ্য বর্ষাদিনে আকছার দেখা যেত!
    এমনি টেনে ছাড়ানো যায়না, নুন দিলে জোঁক কিন্তু টুপ করে খসে পড়ে যায়। গায়ে রক্তের দাগ, ব্যাথা লাগছে নির্ঘাত, মানুষকে জোঁক এভাবে ধরলে সে চিৎকার করে কাঁদত। কিন্তু গরুগুলোর কোনো হেলদোল নেই, শান্ত ভাবে জাবর কেটেই যায়। ওদের কি এতটাই সহ্যশক্তি নাকি কষ্টের প্রকাশ নেই, খুব অবাক লাগত ভেবে।

    জাবনা দেওয়ার ডাবা রাখা থাকত গোয়ালদুয়ারে। যতগুলো গরু, ততগুলো ডাবা, মাটি আর ইঁট দিয়ে পিপের আকারে গড়া ধারির সাথে জুড়ে স্থায়ী বন্দোবস্ত। যেসব বাড়ীতে স্থানাভাবে দুয়ার রাখা সম্ভব হয় নি সেখানে গোয়ালের দেওয়াল লাগোয়া ফাঁকা জায়গায় একটু চালা তুলে ব্যবস্থা করা থাকত। গাই দোয়াও হত বাইরে দুয়ারে বা গোয়ালের সামনে ফাঁকায়। রোজ সকালে অবশ্য গোয়ালের পাট করা বা গোয়ালঘর পরিস্কার করা হত। পাট বলতে মেঝেতে জল ছড়িয়ে তারপর ঐ খড়খড়ে ঝাঁটা দিয়ে ঝাড়ু মারা আর গোবর তুলে নিয়ে বাইরে গোবর রাখার জায়গায় জড়ো করা। কিছুটা গোবর জমা হলে ঘুঁটে দেওয়ার জন্যে নিয়ে যাওয়া হত। এছাড়া সব বাড়িতেই একটু গোবর সংগ্রহ করে রাখা থাকত, গোবরজলের ছড়া দিতে, মাটির মেঝে বা দেওয়াল নিকোতে। এছাড়াও সাত সতেরো নিয়ম আচ্চায় (তাও তো গোবর মুখে দিয়ে শুদ্ধি হওয়া বা প্রায়শ্‌চিত্ত করার রেওয়াজ তখন অত আর নেই), গোবরের কাজ কি আর গাঁয়ে ঘরে একটা!
    গয়লাদের অনেকের গোয়াল সাধারণ গেরস্ত বাড়ীর গোয়ালের থেকে আলাদা হত, অনেক ভালো,খানিক পরিচ্ছন্নও। গরু বেশী তাই ব্যবস্থাও অন্যরকম। গোয়ালঘরের মেঝে সিমেন্টের, চালও টালির অথবা পোক্ত খড়ের। অনেকেরই জাবনার ডাবা সিমেন্টের তৈরী মজবুত। তাদের তো আসলে এটা জাত ব্যবসা, ভাত কাপড়ের সংস্থান, তাই বিনিয়োগও অধিক। তবে এত করেও গোবরের গন্ধটা সব গোয়ালেই সমান ভাবে থাকত!

    প্রত্যেকদিন বিকেলবেলায় রাখাল থাকলে রাখাল কিম্বা বাড়ীর কর্তা গিন্নী বা পরিবারের কোনো বড় গরুর জাবনার জন্য খড় কাটতে বসত। উঠোনে একদিকে মাদুর পেতে ছেলেমেয়েরা পড়তে বসেছে, একদিকে একদল গল্প করছে বা অন্য কাজ করছে,রান্নাঘরে ছ্যাঁকছোঁক, ফোড়নের গন্ধ আর তার সঙ্গে খ্যাসখ্যাস খড় কাটার আওয়াজ। খড়কাটা বঁটি হত ইয়াব্বড় বড়, প্রথমে যখন দেখি ভয়ে বুকের মধ্যেটা কেমন ধক করে উঠেছিল। পরে দেখেছি ওরকম বিশাল হলেও ও বঁটিতে তরকারী কাটা বঁটির মত অত ধার থাকেনা, খুদে খুদে দাঁতকাটা থাকে।

    গৃহস্থ বাড়ীতে তখনকারদিনে গরুদের খাতির ছিল খুব, গোমাতা বলে কথা। খাওয়াদাওয়ার কত তরিবৎ, জাবনাতে কত কিছু মেশানো হত। ভাতের ফ্যান, তরকারীর খোসা,খোল,খড়কুচো,ভেলিগুড়। আমার তো গন্ধ শুঁকে খুব উপাদেয় মনে হত, এক আধবার যে চেখে দেখার লোভ হয়নি, তাও নয়। মনের কথা প্রকাশ হতে মা আশ্বাস দিয়েছিল, মোটামুটি পড়াশুনা যে হারে হচ্ছে তাতে ফেলটেল করে গ্রামে জেঠুদের গরুর গোয়ালে ঢুকতে বা নিদেনপক্ষে গরু চরানোর কাজ পেতে অসুবিধে হবেনা। তখন ভাতটাত না খেয়ে গোরুর জাবনা খেলেই হবে। গোয়ালটা বিচ্ছিরি অন্ধকার দুর্গন্ধে ভরা হলেও গরু চরানো কাজটা তেমন খারাপ হবে বলে মনে হতনা। গোপাল রাখালরা তো গল্পের হীরো হয়ে থাকে। কৃষ্ণ বলরাম, তারপর সেই পালে বাঘ পড়া রাখাল। মাঝে মাঝেই বাড়ীর পিছনের রাস্তা দিয়ে গরু নিয়ে যেত ছোট ছোট ছেলেরা, খালি গা, পরণে ছেঁড়া প্যান্টের ওপর গামছা জড়ানো। তবে ভালো করে দেখেও তাদের হাতে বাঁশি নজরে পড়েনি, বেশীরভাগেরই হাতে গাছের ডালভাঙা লাঠি!
    যাদের বাড়ীতে বেশী গরু অথচ লোক কম যেমন পাড়ার দুধ ব্যবসায়ী কাকীমার বাড়ীতে, তাদের গরুর খাবার জন্য বাড়ীর ভাতের মাড় বা ফ্যানে কুলোতো না। কাকীমা চানটান করে সংসারের কাজ মিটিয়ে একটা বালতি হাতে করে আমাদের বাড়ীর মত যেসব বাড়ীতে গরু ছিলনা, সেখান থেকে ফ্যান সংগ্রহে বেরিয়ে পড়ত। আনাজের খোসা, আটার ভূষি জাতীয় বাড়ীর জিনিসপত্র যা কিছু গরুর খাদ্য হতে পারে তা ফেলা হতনা। ভাতের ফ্যানের সাথে ঢালা হত কাকীমার বালতিতে। এই বালতি নিয়ে ঘুরতে ঘুরতে সারা পাড়ার খবর দেওয়া নেওয়াও হয়ে যেত। পরে অনেক খবরের উৎপত্তির প্রশ্নে উত্তর পাওয়া যেত, "ঐ যে অমুক বউ ফ্যান নিতে এসে বলে গেল"। ছোটরা যারা একটু পাকা, তারাও কাকীমাকে বালতি হাতে ঢুকতে দেখলেই রান্না দুয়ারের আশেপাশে পজিশন নিয়ে নিত খবর সংগ্রহের উদ্দেশ্যে!

    আমাদের আশেপাশের গরুগুলোর স্বাস্থ্য তেমন ভালো ছিলনা, গয়লাপাড়ার গরুদের মতো। ওদের গরুর খাবারে শুনতাম ভিটামিনও মেশানো হত যাতে বেশী দুধ দেয়। শোনা যেত নাকি ইঞ্জেকশনও দেওয়া হয়, তাতে গরুর শরীরের রক্ত দুধ হয়ে যায় আর গরু কমজোরী। এসব নানা গল্প চালু ছিল গরুর ব্যবসায়ীদের সম্বন্ধে। কোনোদিন ওপাড়ায় ছানা বা ক্ষীর কিনতে গেলে ওদের গরুগুলো চোখে পড়ত। কোনো কোনো গোয়ালে দিশী গরুদের দলে থাকত বিদেশী গরু, মূলতানী গাই, হরিয়ানী গরু। সে তাদের যেমন বিশাল চেহারা তেমনি চলন। তাদের পাশে দেশী গরুগুলোকে বেচারা লাগত। চেহারা যেমনই হোক শিং ছিল অনেকেরই বেশ দেখার মতো চকচকে। গরুর মেজাজ বিগড়োলে কাউকে গুঁতিয়ে ফেলে দিয়েছে বা শিং বাগিয়ে তেড়ে গেছে এরকম ঘটনা বিরল ছিলনা। তবে সাধারণ ভাবে বাড়ির গরুরা শান্ত নির্বিবাদী টাইপেরই হত।

    নিজেদের বাড়িতে গরু না থাকার আফশোষ আমার সারা ছেলেবেলা জুড়ে ছিল। মায়ের কাছে প্রায়ই আবদার জুড়তাম, বন্ধুদের বাড়ির মত আমাদেরও অন্ততপক্ষে একটা গোরু কিনতে। কিন্তু আমার শহুরে মা গোয়াল আর গরুর কারবারের থেকে শতহস্ত দুরে থাকত। কারণ হিসেবে বলত অনেক ঝামেলা, আমরা যখন থাকিনা গ্রামে তখন গরু কে দেখবে ইত্যাদি! আসলে সবই বাহানা সেটা ছোটতেও বুঝেছি। মহেন্দ্র দা আমাদের বাড়ি দেখাশোনা করতে পারলে আর গরু দেখতে পারতনা! মা গরুটরুর ব্যাপারে খুব একটা থাকতনা বা থাকতে পছন্দ করতনা। যখন কারো বাড়িতে গরুর বাছুর হত, চারিদিকে সাড়া পড়ে যেত, সবাই গিয়ে জুটত সেখানে। মা নিজেও যেতনা, আমাদেরও যেতে দিতনা। গরুর বাছুর হওয়া উপলক্ষ্যে নানা অনুষ্ঠানের রেওয়াজ ছিল। সেসব অত মনে না থাকলেও আটকড়াইটা মনে আছে, ছোটদের ব্যাপার তো!

    বারণ সত্ত্বেও লুকিয়ে দুধ দোয়ানোর সময় জেঠীর সাথে ওদের গোয়ালে চলে যেতাম মাঝে মাঝে। সকাল বিকেল দুবেলা দুধ দোয়ানো হত। সবাই দুধ দোয়াতে পারতনা, কেউ কেউ পারত। আগেকার দিনের গল্পে শুনেছি ছেলের জন্য পাত্রী দেখতে গিয়ে লোকে জিজ্ঞেস করত, "মেয়ে গাই দুইতে জানে কিনা, ধান সেদ্ধ করতে জানে কিনা"। এসব অবশ্য গাঁয়ে শহুরে হাওয়া আসার আগের কথা। পরে সেসব গিয়ে "মেয়ে সেলাই, গান, পড়া জানে কিনা" জিজ্ঞেস করার চল হল!

    পাড়ায় গুটিকয়েকই মহিলা ও পুরুষ ছিল যারা গাই দুইতে পারত। গাই দোয়া খুব সোজা কাজ নয়। একটু অসাবধান হলেই গাইগরু পিছনের পা তুলে চাঁট মেরে দেবে, আর এই মার বেশ মারাত্মক হয়, সময়বিশেষে রক্তাক্তও। ঠিকমত পিছনের পা দুটোকে বেঁধে কায়দা না করলে দুধ দুইতেই পারা যাবেনা। গরুর বাছুরকে তার সামনে রাখতে হবে কিন্তু ধরে রাখতে হবে। ছেড়ে দিলে বাছুর মুহুর্তের মধ্যে সব দুধ খেয়ে নেবে। অবশ্য প্রথমেই বাছুরকে একটু দুধ খাইয়ে সরিয়ে নেওয়া হত, যাতে গাইয়ের বাঁটে দুধ আসে। তবে বাছুরকে একেবারে আড়ালে সরানো যাবেনা কারণ তাহলে গরুর মর্জি নাও হতে পারে, মেজাজ বিগড়ে গিয়ে দুধ নাও দিতে পারে। হ্যাঁ, বাড়ির গরু এরকম মর্জিমাফিক কমবেশী দুধ দেয় বটে। তাই দুধেল গাইকে প্রচুর তোয়াজ করা হত।
    জেঠুর বাড়িতে জেঠীর কাজ ছিল দুধ দোয়া, সঙ্গে অন্য আর একজন যেত বাছুরকে ধরতে। সেইসময় দেখেছি জেঠী দুধ দোয়ানোর প্রারম্ভ হিসেবে গরুর গায়ে গলায় হাত বুলিয়ে নানা আদরের সম্বোধন করত। বুধি গাইও তাতে বেশ তৃপ্ত হয়ে ঘন ঘন লেজ নাড়াত। তবুও সেই চরম মূহুর্তটায় একটা বেশ চাপা উত্তেজনার আবহাওয়া মালুম হত। সবাই চুপচাপ, শুধু জেঠী চাপা গলায় গুনগুন করে কত কি বলে যাচ্ছে বুধি গাই কে। এত কান্ড করেও কোনো কোনো দিন মেজাজ খারাপ থাকত বুধির। চেষ্টা করত পা ছোঁড়ার, নড়াচড়াও করত অনেক। সেরকম অবস্থায়, জেঠীর ডাকে আরো এক আধজন এসে দাঁড়াত অকুস্থলে, এমারজেন্সী হ্যান্ডল করতে। তবে বেশীরভাগ দিনই নির্বিঘ্নেই সারা হত দুধ দোয়া পর্ব।

    দুধ দোয়ার পরে জেঠী আমাকে হাঁ করতে বলে ঘটি থেকে একটু দুধ ঢেলে দিত মুখে। আমি ছোট বলে আমার হাঁ টাও তখন ছোট ছিল। মুখের ভেতর অল্প পড়ত, এদিক ওদিক গড়িয়ে যেত, জেঠীও হাসত আমার খিলখিল হাসির সঙ্গে। কি মিষ্টি আর গাঢ় সেই দুধ! তবে মা কেমন করে যেন গন্ধ শুঁকে ধরে ফেলত, আমি কাঁচা দুধ খেয়েছি। সারাদিন গজগজ করত, কাঁচা দুধ খেলে পেটখারাপ হয়, কি হবে পাড়াগাঁয়ে শরীর খারাপ হলে ইত্যাদি! কিন্তু আমার মনে হয়না কখনো কিছু হয়েছে, বকুনি খেয়ে দুচারদিন চুপ থেকে আবার গুটিগুটি যেতাম দুধ দোয়ানো দেখতে। চাঁইচোঁই দুধ দোয়ানোর শব্দে মজা পেলেও সবথেকে ভালো লাগত যখন দুধ দোয়ানোর শেষে বাছুরটাকে ছেড়ে দিত আর ও দৌড়ে গিয়ে মায়ের দুধ খেত। ওর মা ওকে চোখ দিয়ে, লেজ দিয়ে কেমন আদর করত। তখন আমারও ইচ্ছে করত মায়ের কোলে পড়ে আদর খেতে, চোখের আদর।

    গরুদের আপাতদৃষ্টিতে বেশ শান্তশিষ্ট জানোয়ার মনে হলেও সব সময়ই যে তারা ওরকম এ ভাবার কারণ নেই। "ছাড়া গরু" কথাটা বাংলায় চলতি কথার একটা মাত্রা এমনি এমনি হয়নি। গরুকে ভালো করে না বাঁধলে সে কিন্তু খোঁটা উপড়ে ফেলে সহজেই। আর তখন তার এক নতুন রূপ দেখা যায়। আমাদের বাড়ী পাড়ার শেষপ্রান্তে, মাঠ আর বাড়ীর মাঝখানে একটি বাগানের দুরত্ব। পেছনের বারান্দায় খেলতে বসে অনেকদিনই এরকম খুঁটো উপড়ানো গরু দেখার সৌভাগ্য হয়েছে। ফসলের সময়ে মাঠে জমির ধারে ধারে একটু দুরত্বে গরু বাঁধা থাকত, যাতে তারা অদরকারী ঘাসপাতা মুড়িয়ে খায় কিন্তু জমির ফসলে মুখ দিতে না পারে। ইমোশন্যাল অত্যাচারটা ভাবুন একবার, সারা মাঠে সুন্দর সবুজ সুখাদ্য ঢেউ খেলছে অথচ গরুরা খোঁটার সংকীর্ণ বাঁধনে বদ্ধ, দূর থেকে দেখেই নয়নসুখ করতে হয় তাদের মানুষ গুলোর ষড়যন্ত্রে!

    তাই মাঝে মাঝে কেউ কেউ বিদ্রোহ জানাত খোঁটা উপড়ে ফেলে। মুক্ত হয়েই এরা যে দৌড়টা দিত তাতে সে যুগের পি টি উষা ধারেপাশে আসেনা। হঠাৎ চোখে পড়ত একটা সাদা মত কিছু মাঠের এ প্রান্ত থেকে ওপ্রান্তে চলে গেল এক নিমেষে, আর তার সাথে চাদ্দিক থেকে "গেল গেল" রব। আশেপাশের রাখালরা বা অন্যরা দেখতে পেয়ে ধরার আগে মোটামুটি বেশ কিছুটা ফসল মুড়িয়ে ফাঁক ও বেশ কিছুজন গুঁতোয় ঘায়েল। চেনা জানা হলে লোকে ধরে মালিকের হাতে তুলে দিত বা মালিককে খবর দিত। বেপাড়ার গরু অনেকসময় শত্রুপক্ষের হাতে পড়লে বা অচেনা হলে খোঁয়াড়ে দেওয়ার ঘটনাও শোনা গেছে। তবে এরকম ঘটনা খুবই কম ছিল, সত্যি বলতে কি খোঁয়াড় জিনিসটা ঠিক কি সেব্যাপারে দেখেছি অনেকেরই ঠিক সম্যক জ্ঞান ছিলনা। তবে খোঁয়াড় থেকে গরু পয়সা দিয়ে ছাড়িয়ে আনতে হত।

    গোরুর সাধারণ অসুখে গ্রামের ওষুধ জানা লোক আসত দেখতে, জড়িবুটি হাবিজাবি দিত, তারা হল গোবদ্যি। বেশী অসুখ করলে গরুর ডাক্তার ডাকা হত শহর থেকে। একবার দেখেছিলাম এরকম এক ডাক্তার এক গরুকে ইঞ্জেকশন দিয়েছিল, বড় সিরিঞ্জ, বড় মোটা ছুঁচ, নীল ওষুধ। এরপর থেকে অসুখ করলে ওষুধ খেতে না চাইলে মা বলত গরুর ডাক্তার ডেকে ইঞ্জেকশন দেওয়াবে।

    কাঁচা গোবরের গন্ধ বিচ্ছিরি লাগলেও গোবর দিয়ে ঘুঁটে দেওয়া দেখতেও আমার খুব ভালো লাগত। আমাদের পাড়াতেই সব বাড়ীর খিড়কী দিকের দেয়াল চিহ্নিত থাকত মহিলাদের একেকজনের ঘুঁটের এলাকা হিসেবে। নিজেদের গরুর গোবর ছাড়াও মাঠে গিয়ে ঝোড়ায় করে অতিরিক্ত গোবর কুড়িয়ে নিয়ে আসত অনেকে। "গোবর তুমি কার?" যে আগে কুড়িয়ে নিতে পারে তার। গোয়ালের বাইরে, মাঠ বনের গোবরে কোনো ব্যক্তিগত মালিকানার গল্প থাকেনা। বিধবা আশ্রিতা মাসিপিসী ঠাকুমাদিদিমাদের কাঁচা টাকা আয়ের একটা পথ ছিল এই ঘুঁটের ব্যবসা। সবাই খুশী মনেই এদের পয়সা দিয়ে জ্বালানী ঘুঁটে কিনে নিত। অনেক বাড়ীতে গরু থাকলেও, বাড়ীর মহিলারা ঘুঁটে দেওয়ার হ্যাঙ্গামে যেতনা। পাড়ার এক বিধবা পিসী জেঠুদের বাড়ির সব গোবর নিত, তার বদলে ল করে দিত তাদের। ল করা কাকে বলে?

    বন বাদাড়ে, পুকুরপাড়ে ঘুরে ঘুরে কাঠারি দিয়ে গোরুর খাদ্য একরকমের লতা কেটে আনাকে আমাদের গ্রামে বলা হত ল করা। "দিদিমনি কোথায় রে?" "দ্যাখো, দখিন মাঠের ধারে ল করতে গেছে"। এই ল করা খুবই পরিশ্রমসাধ্য কাজ ছিল। এইসব বয়স্কা মহিলারা এভাবে নানা কষ্ট করে নিজেদের খরচ চালাতেন অথবা সংসারের কাজে লাগতেন।
    গোবরের সঙ্গে মাটি বালি ও আরো কিসব মিশিয়ে মেখে হাতে গোল্লা পাকিয়ে দেওয়ালে এক থাবড়া, পাঁচ আঙুলের দাগ বসিয়ে। এপর্যন্ত আমি দুরে দুরে, কাঁচা গোবরের গন্ধ, ওয়াক থু:! রোদে শুকিয়ে গিয়ে আপনাআপনি খসতে শুরু করত। তখন আর গন্ধ নেই, পিসী ঠাকুমাদের সাথে হাত লাগিয়ে ঘুঁটে ছাড়ানো, সে এক অন্য মজা। কখনো মজুরি স্বরূপ একটা দুটো ঘুঁটে ফ্রিও পাওয়া যেত। শুকোলে ঘুঁটে বস্তায় ভরে ভরে তুলে রাখত ও খদ্দের এলে বিক্রী করত। ঘুঁটের আবার ভালো মন্দও ছিল, মা জেঠীমাদের কথায় বুঝতাম। "অমুক দিদির ঘুঁটে এবারে খুব বাজে হয়েছে, ঠিকমত জ্বলছেনা" বা "অমুক ঠাকুরঝির ঘুঁটের হাত ভালো" ইত্যাদি। এইসব মহিলারা অনেকে আবার ঘুঁটে বিক্রি করতে গিয়ে পয়সার হিসেব করতে পারতনা। বড়দের কাছে যেতে লজ্জা পেত তাই কচিকাঁচাদের দিয়ে হিসেব করিয়ে নিয়ে দশপয়সা, কুড়িপয়সা দিত মাছলজেন্স বা কাঠিভাজার জন্য।

    বাড়ীর উনুনে আঁচ সাজাতে লাগত ঘুঁটে। প্রথমে ঘুঁটের একটা বা দুটো থাক, তারপরে কয়লা দিয়ে সাজানো হত কয়লার উনুন। যত বেশী আঁচ চাই তত বেশী কয়লা দিতে হয়। কয়লার পরিমাণ বেশী হলে ঘুঁটের পরিমাণও সে অনুপাতে বেশী হত। তবে উনুনের আকারেরও এ ক্ষেত্রে একটা ভূমিকা ছিল। খুব ছোট উনুনে গাদাগুচ্ছের ঘুঁটে কয়লা দিলে, উনুন ধরতো না। আবার বড় উনুনে কম কয়লা ঘুঁটে পড়লেও একই সমস্যা। তাই গ্যাসরহিত সেসব রান্নাঘরে পাশাপাশি দুই উনুনই থাকত, ছোট ও বড়। রান্না কম বেশী অনুযায়ী গিন্নীর নির্দেশ জারি হত, "বউ, আজ ছোট উনুনটাতে আঁচ দাও' বা "আজ বড়টাতে"। বড় পরিবারে বা কুটুম সমাগমে অনেকসময় একসাথে দুটোতেই আঁচ পড়ত। অবশ্য উৎসব অনুষ্ঠানে যাকে বলে "যজ্ঞির রান্না" র জন্যে ব্যবহার হত বড় বড় কাঠের উনুন, কয়লার বা ঘুঁটের উনুনের সেখানে কোনো কাজ নেই। কাঠের ঘর বা কয়লার ঘর নামে চিহ্নিত জ্বালানীর ঘরেই কাঠ ও কয়লার সঙ্গে সহাবস্থান করত ঘুঁটে বস্তাভরে বা ঝোড়ায়। তবে রান্নাঘরের চালের বাতায় বা উনুনের পাশে দু চারটে ঘুঁটে সবসময়ই রাখা থাকত, গৃহিণীদের ব্যস্ততার সময় আঁচ কমে এলে ঠেকান দিতে। অর্থাৎ ঘুঁটে ছিল ঘরের আটপৌরে জিনিস, হেলাফেলার কিন্তু দরকারী। কয়লার মত দামী, দুর্লভ, ভেবেচিন্তে খরচ করার জিনিস নয়!
    উনুন ধরানোর সময় নীচে কাগজ পাটকাঠি এসব দিয়ে আগুন দেওয়া হত। ঘুঁটেতে আগুন ধরে গেলেই রান্নাঘরের দরজায় শেকল টেনে মোটামুটি কিছুক্ষণের জন্য নিশ্‌চিন্ত। বন্ধ দরজা জানালা দিয়ে কুলকুল ধোঁয়া বেরিয়ে সারাবাড়ি ধোঁয়াময়। এইসময়টা লোকে রাখত বাইরের কাজ সারার জন্য, পুকুরঘাটে চানে যাওয়া, বাজার যাওয়া ইত্যাদি, ধোঁয়ার ঠেলায় বাড়িতে টেকা যেত না যে!

    ঘুঁটে তাড়াতাড়ি জ্বলে যায় তবে তার আগে কয়লায় ছড়িয়ে দিয়ে যায় তার আগুন। মাঝে মাঝে শেকল খুলে দেখা হত আঁচ কতটা উঠল। তখন সাধারণ বাড়ীতে রোজ দুবেলা রান্না হতনা, তাই কয়লার উনুন শুধু সকালেই জ্বলত। রাতের বেলা খাবার গরম বা রুটি করতে শুধু ঘুঁটের উনুন জ্বালানো হত অনেক বাড়ীতেই। বর্ষা বাদলের দিনে ঘুঁটের উনুনের খুবই চাহিদা ছিল। এসময় দোকানীর অসাবধানে,আনা নেওয়াতে বা জায়গার অভাবে ভিজে কয়লা আসত প্রায়ই। তখন পাড়ার মহিলার যত্নে রাখা শুকনো ঘুঁটেই হত গৃহস্থের একমাত্র ভরসা। তবে কয়লার আগুন দীর্ঘস্থায়ী, ঘুঁটের আগুনের আয়ু স্বল্প। তাহলেও ধরুন কয়লা নিভে এসেছে, অথচ রান্না বাকী বা হঠাৎ দরকার আরো আঁচের। ওপর থেকে পাথুরে কয়লা দিলে সে ধরতে ধরতে অনেক সময়। তাই চটজলদি আগুন চাইলে চারটে ঘুঁটে ভেঙে ওপর থেকে ছড়িয়ে দিন। একটু চোখ নাক জ্বালানো ধোঁয়া হবে ঠিকই কিন্তু আগুন পাবেন হাতেগরম! এছাড়া যাদের পয়সা দিয়ে কয়লা বা কাঠ কেনার মত অবস্থা ছিলনা,জ্বালানী হিসেবে গোবর কুড়িয়ে ঘুঁটে ও কুড়োনো ডালপালা কাঠ তাদের একটা মস্ত ভরসা ছিল।

    দিন শেষে উনুন পরিস্কার করত আমাদের মহেন্দ্রদাদার বউ দিদি। উনুনের ভেতরে হাত ঢুকিয়ে জ্বলে ছাই হওয়া আস্ত ঘুঁটে তুলে এনে আলাদা করে একটা জায়গায় জমা করে রাখত। ঐ ঘুঁটে দিয়ে ওরা সকালে দাঁত মাজত। তবে আমি দেখেছি শুধু দাঁতই মাজত না আস্ত আস্ত ছাই কড়মড় করে চিবিয়ে খেয়ে ফেলত।
    এছাড়া উনুনের ছাই জমিয়ে রাখা হত জমিতে ফেলার জন্য অতিরিক্ত জল শুষে নিতে। পুকুরঘাটে বা পাড়ে কোথাও অথবা বাড়ির সামনের কাঁচা রাস্তায় কাদার আধিক্যতে চলাফেরায় অসুবিধে ঘটলেও সমাধান হিসেবে উনুনের ছাই ফেলা হত। অর্থাৎ গোবর থেকে শুরু করে ঘুঁটের ছাই অবধি, গরুর কোনো জিনিসই হেলাফেলার নয়!

    বাড়ীর গরু ছাড়াও চাষীদের বাড়িতে ছিল হালের বলদ। আমাদের পরিবারের সবার জমি ছিল দক্ষিণের মাঠে। হালের সময়ে মাঠ জুড়ে বলদ হাল চালাত। সেসময় চতুর্দিক থেকে হাল চালিয়েদের মুখের হ্যাট হ্যাট শব্দ, গ্রামের শান্ত বেলা ভেদ করে। এসময় মাঠে গোবর কুড়িয়ে কূল পেতনা ঘুঁটে ব্যবসায়ীরা। দুপুরবেলা যখন চাষীরা খেতো, জিরোতো, তখন গরুগুলোকে এক|টু ছাওয়ায় বেঁধে রাখা হত। ঘাস পাতার লাঞ্চ শেষে শান্ত অলস ভাবে জাবর কাটত ওরা। আমি অনেক চেষ্টা করেছিলাম গরু কেমন করে ঘুমোয় দেখব, কিন্তু পারিনি। ওরা ঠিক কিভাবে কখন ঘুমোত টের পাওয়া যেতনা।
    একবার আমার রান্না পুজোর সময় গ্রামে থাকবার সৌভাগ্য হয়েছিল। তদ্দিন জানতামই না যে রান্নাপুজোর সময় গোয়াল পুজোও হয়। ঐদিন গোরুদের বিশ্রাম দেওয়া হয়, গোয়ালকে পরিস্কার করে সুন্দর সাজিয়ে,আল্পনাটাল্পনা দিয়ে পুজো হয়। এই একদিনই বোধহয় সারা বছরে গোয়ালের মেঝে নিকিয়ে ভদ্রস্থ করা হয়। গোরুদের গলায় শালুকফুলের মালা, কপালে সিঁদুর। সেজে গুজে কচি কলাগাছ, পাকা তালটালের মত ভালো প্রসাদটসাদ চিবোতে চিবোতে গরুদের বেশ উজ্জ্বল দেখায়, খুশী খুশী। অবিশ্যি মালাটাকেও ওরা শেষমেশ চিবিয়েই খেয়ে নিত। এছাড়া বোধহয় অম্বুবাচীর সময় হালের বলদরা বিশ্রাম পেত, ওসময় জমি চষা হয়না।

    আমাদের গ্রাম একটু শহর ঘেঁষা ছিল, বাস টাস চলত। মোরামের রাস্তা, খবর দিলেই বাড়ীতে রিক্সা এসে যেত কাছে পিঠে যাওয়ার জন্য। কলকাতা বা কাছের শহর থেকে গাড়ি এসে যেত বাড়ীর দুয়ারে। আমরা গরুর গাড়ী, নৌকো পাল্কি এসবের তাই গল্পই শুনেছি, চাক্ষুষ দেখার সৌভাগ্য হয়নি, আমাদের সময় সেসব অদৃশ্য হয়ে গেছে। অথচ "কুমোরপাড়ার গরুর গাড়ী" পড়া থেকে ইস্তক আমার গরুর গাড়ীতে চড়ার শখ প্রবল। তবে ভগবান তো বাচ্চাদের জন্যে খুবই জাগ্রত, প্রার্থনাটার্থনা ঠিকমত করলে ঠিকই শুনতে পেত।

    একবার বাবা জেঠা কাকা এরকম ছ সাত জন বাড়ির কর্তা পুজোর পরে একাদশীর দিন গেল এক দিদির জন্যে পাত্র দেখতে দুরে আরেক গ্রামে। আমি কোনোদিন আমাদের গ্রাম ছাড়া অন্য গ্রাম দেখিনি, এছাড়া একটু চাকাও ছিল পায়ে। কাউকে কোথাও যেতে দেখলেই মনে হত যাই চলে, সে চেনা অচেনা যেই হোক। আর এতো নিজের বাবা জেঠুরা! বায়না বায়না বায়না, অবশেষে মা মুখ বেজার করে জামা জুতো পরিয়ে মাথায় পুজোর চায়না কাটের চুলে লাল ফিতের ফুল করে দিল। হাতে একটা স্কুলের ব্যাগে একসেট জামাও রইল যদি রাতে ফিরতে না পারি। এরকম সম্ভাবনা শুনে বুকের মধ্যে একটু চাপ, রাতে বিছানায় মা ছাড়া।
    সে একটুর জন্যই, তারপরেই খুশীতে লাফিয়ে লাফিয়ে বাবা আর জেঠুর হাত ধরে বেরিয়ে পড়ি। মন্দিরের সামনে গাড়ী দাঁড়িয়ে যে, আমরা গাড়ী করে যাব। বেলাবেলি খেয়েদেয়ে বেরিয়ে ছিলাম, বিকেল নাগাদ একটা জায়গায় পৌঁছল গাড়ী। ছোট্ট গ্রামের বাসস্ট্যান্ড, দু চারটে টিমটিমে দোকান। বাবারা চা খেয়ে নিল, আমি বিস্কুট। এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখি ওমা একী! রাস্তা থেকে নেমে একটু দুরে একটা গরুর গাড়ী দাঁড়িয়ে, অবিকল যেমন বইয়ে ছবি দেখি সেইরকম। আমি দৌড়ে ভালো করে দেখতে গেলাম, বাবা এল পিছন পিছন। ছইয়ের চারধারে ঝালর দেওয়া, বাঁশের পাটার ওপর চাটাই পাতা। গরুদুটো এখন খোলা, একধারে বাঁধা আছে, খড় খাচ্ছে। তাই গাড়ির সামনেটা মাটিতে ঠেকে আর পিছনটা শূণ্যে উঠে আছে, ঢেঁ কুচ কুচ ঢেঁকির মতো। ভালো করে আশ মিটিয়ে দেখছি, এমন সময় আমাদের দলটা সেই দিকেই এল। গাড়োয়ান তাই দেখে গাড়ীতে গরু যুতল, বাবা আমাকে কোলে করে গাড়ীর ভেতর বসিয়ে দিল। আমি হতবাক, মজায় বিস্ময়ে আনন্দে। আগে নাকি আর মোটর গাড়ীর রাস্তা নেই, তাই বাকী পথটা গোরুর গাড়ীতেই যাব আমরা। এরকম অভাবনীয় সৌভাগ্যে উত্তেজনায় আমি কিছুটা গিয়েই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম, উঠেছিলাম পাত্রের বাড়ীর মেয়েদের কোলে।
    পরে দাদা দিদিদের কাছে গরুর গাড়ীর গল্প করে বেচারাদের এত বিরক্ত করেছিলাম (পর দিন সকালে ফিরেওছিলাম তো গোরুর গাড়ীতেই, পুরো রাস্তা জেগে, গাড়োয়ান কাকার পাশে বসে), যে দাদা রেগে গিয়ে বলেছিল গরুর গাড়ী অত্যন্ত বাজে ব্যাপার। গরুদের কত কষ্ট হয়, খালি পায়ে, কাঁধে ওরকম একটা আস্ত গাড়ী আর মানুষের ভার নিয়ে। ওদের কাঁধগুলো নাকি সবসময় ক্ষতবিক্ষত হয়ে থাকে, অমানবিক। তাই দাদা কোনোদিন গরুর গাড়ীতে চড়বেনা। এরকমটা শুনে আনন্দটা কেমন শেষমেশ মাটি হয়ে গেছিল। সেই দিদির ওখানে বিয়েও হয়নি, ভাগ্যিস!

    কোনো এক শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে দেখেছিলাম খোলা মাঠে পুজোর আয়োজন, নানা উপাচারের সাথে একদিকে একটা বকনা বাছুর বাঁধা আছে। পুজো শেষে ব্রাহ্মণ সমস্ত জিনিসপত্র ঝোলায় বেঁধে নিয়ে যখন যাচ্ছে, তার সাথে একজন চলল ঐ বাছুরটা নিয়ে। অবাক কান্ড, বামুনের ছাঁদাতেও গরু! জানা গেল একে বলে বৃষোৎসর্গ শ্রাদ্ধ,নাকি খুব পুণ্যের ব্যাপারস্যাপার। ব্রাহ্মণ কে একখান আস্ত গরু দান করা হল।

    আবার গৃহপ্রবেশে নিয়ম গরুর লেজ ধরে নতুন বাড়ীতে প্রবেশ। অবশ্য এসব আচার বিচারের শাস্ত্রটাস্ত্র নিয়ে মাথা ঘামাবার মত বয়স তখন নয়, তবু দেখেশুনে মানুষের পরেই গরুকে রেখেছিলাম। রাখব নাই বা কেন! গরু ছাড়া তো কোনো অনুষ্ঠানই হয়না, মানে গরুর দুধ ছাড়া আর কি! দইমিষ্টি ছাড়া কাজের বাড়ী ভাবা যায়না, আর দুধ ছাড়া দইমিষ্টি হয় না।
    কাজ বাড়ীতে দই আসত গয়লাবাড়ি থেকে তৈরী হয়ে, মাটির হাঁড়িতে বাঁকে করে। একটা বাঁশের বাতা আর পাটের দড়ি দিয়ে বানানো বাঁক, দুদিকে পাটের বিড়ে পাকিয়ে বসানো। বিড়ের ওপর একের পর এক দইয়ের হাঁড়ি। বড় অনুষ্ঠান, বিয়েবাড়ী শ্রাদ্ধবাড়ী হলে হাঁড়ির সংখ্যাও বেশী তাই বাঁকও একাধিক, একাধিক বহনদারের কাঁধে। গ্রামের দই কিন্তু কলকাতার মত অত মিষ্টি হতনা, একটু টক টক, রঙটাও লাল নয় সাদাটে।

    তবে মিষ্টি বিশেষ করে রসগোল্লা রাজভোগ হত একেবারে ফার্স্টক্লাস! আমাদের পরিবারে একটা স্পেশ্যাল মিষ্টি ছিল কমলভোগ, রসগোল্লার মত রূপ, গন্ধ আর রঙ কমলালেবুর। যে কোনো কাজবাড়িতে ময়রা জেঠু রসগোল্লার সাথে কমলভোগ করবেই প্রধান না হলেও সাইড ডিশ হিসেবে। মিষ্টি তৈরী হত কাজবাড়িতেই ভিয়েন বসিয়ে, মিষ্টির জন্য মণ মণ ছানা আসত সেই গয়লা বাড়ি থেকে। একটা খালি বাড়ির উঠোনে ভিয়েন বসত। শাবল আর কোদাল দিয়ে বিশাল বিশাল ভিয়েনের উনুন খোঁড়া হত কদিন আগে থেকেই। একদিকে দুয়ারে জমা করা হত শুকনো চেরা কাঠ আর শুকনো ডালপালা। মাথার ওপরে দেওয়া হত তিরপলের ছাদ।

    ভিয়েনের এক একটা কড়াকে বয়ে নিয়ে আসতে দু তিনজন লোক লাগত। পুকুরঘাটে এই কড়া মাজার আওয়াজ সারা পাড়ায় শোনা যেত। গয়লাবাড়ী থেকে ছানা এসে যেত রাত্তিরেই। সারা রাত্তির ছানাতে জাঁক দেওয়া হত। পরিস্কার সাদা কাপড়ে (ধুতি বা থান কাপড়) ছানা রেখে শিল চাপা দেওয়া হত। কখনো ছানা কাপড়ে বেঁধে ঝুলিয়ে রাখতেও দেখেছি। মোটকথা জাঁক দেওয়া হল ছানা থেকে জল বার করার প্রক্রিয়া। পরদিন সেই ছানাকে বড় বড় কাঠের বারকোশে ফেলে থাসা হত যতক্ষন না ছানার তাল নরম মোলায়েম হচ্ছে। এবার সেই ছানা দিয়ে যা মিষ্টি হবে সেইমত গড়ে নেওয়া হত। রসের মিষ্টির জন্য বড় বড় কড়ায় জ্বাল দেওয়া হত চিনির রস। সন্দেশের জন্য কুচোনো হত পেস্তা কিশমিশ। হয়ত সেসব মিষ্টি রূপে শহরের নানা নামের মিষ্টির মত কেতের হত না তবে স্বাদে গন্ধে তা ছিল অতুলনীয়!

    বাড়ীর গোরুরা কখন যে সদস্যদের একজন হয়ে যেত। প্রত্যেকেরই আদরের নাম থাকত, বুধি, কালী, ধলা, মনা। এক আধটা গরু বুড়ো হয়ে গেছে বলে বেচে দিতে দেখেছি। তখন বুঝিনি, জানার প্রয়োজনও মনে করিনি, এখন মনে হয় হয়ত কসাইয়ের কাছেই। তবে গরু বিক্রি হয়ে গেলে সারা পাড়া বিশেষ করে সেই বাড়িতে শোকের ছায়া নেমে আসত। দুচারদিনের জন্য দেখা যেত বাচ্চারা ঠিকমত খাচ্ছেনা, মহিলারা চোখে আঁচল দিচ্ছে, বয়স্কারা বুক চাপড়াচ্ছে, কর্তারা মুখটাকে কঠিন করে ঘুরে বেড়াচ্ছে আর কারণে অকারণে ধমক দিচ্ছে। অবিশ্যি বলদ বা বাছুর বিক্রি করে এরকমটা হত না। বলদ তো চাষীবাড়ি থেকে এসে ভালো দাম দিয়ে কিনে নিয়ে যেত। ক্রেতা ও বিক্রেতা দুপক্ষেরই খোশমেজাজ এসব ক্ষেত্রে!

    বুড়ো গরুকে বেচে দেওয়ার প্রথা থাকলেও, গরুদের ব্যাপারে সামাজিক নিয়ম খুব কড়াকড়িভাবে পালন করত গ্রামের মাথারা। গরু হল সাক্ষাত ভগবতীর অংশ,নানা পুজো পাব্বনে সামাজিক কাজে গরুকে লাগে, গোময় গোবর ইত্যাদি হল শুদ্ধাচারের প্রধান উপাদান, বললে হয়! তাই গরুর সাথে অন্যায় হলে শাস্তিবিধান হত কঠোর। এ প্রসঙ্গে আমার জন্মেরও আগের এক ঘটনা বলি। দাদা তখন ছোট, বাবার কাজের জায়গা থেকে আমাদের গ্রামের বাড়ি ঘন্টাখানেকের পথ। মা তাই গ্রামের বাড়িতে থাকে ছেলে নিয়ে, সপ্তাহান্তে বাবা আসে। মায়ের দেখাশোনার জন্য আছে কেয়ারটেকার মহেন্দ্রদাদা আর তার বউ। মহেন্দ্রদাদা আসলে আমাদের সম্পর্কে দাদু, আমরা ডাকতাম দাদা বলে, ওর বউকে দিদি। গ্রামে এরকমই,সবার সঙ্গে সবার সম্পর্ক বাঁধা,সে যেই হোক না কেন। তাই সম্পর্কে দাদু ঠাকুমা কাকা জেঠা এসব থাকে অগুন্তি। মহেন্দ্রদাদারা আমাদের বাড়ীতে থাকত, বাড়ীর পাশের অল্প জমি চাষ করত। ওদের ছেলেপুলে ছিলনা, শুধু এক ভাই ছিল নিজের। দাদাদের সঙ্গে সেও আমাদের বাড়ীতেই থাকত,এর আবার মাথার একটু গন্ডগোল ছিল। তবে এমনিতে চুপচাপ থাকত, তাকে নিয়ে কখনো কোনো সমস্যা হয়নি। আমার বাবাকে এই পাগল দাদু খুব ভালোবাসত। বাবা এলে তার সঙ্গে সঙ্গে ঘুরত, কিছু কিছু হাল্কা কাজও করে দিত।
    একদিন এই দাদু মাঠে গিয়ে কোনো কারণে বা অকারণেই, পাগলের খেয়ালে একটি বাঁধা গরুকে বেদম মারধোর করে। দু একজনের চোখে পড়ে যায় এই ঘটনা। এ নিয়ে প্রচন্ড হইচই হয়, গ্রামে মাতব্বরেদের কাছে নালিশ ওঠে পাগল দাদুর বিরুদ্ধে। ওদের পুরো পরিবারকে একঘরে করা হয় গোনির্যাতনের অপরাধে। বাবা বাড়ী এলে তাকে ডেকে মাতব্বরেরা গাঁয়ের লোকের ফয়সালা জানিয়ে মহেন্দ্রদাদাদের বাড়ী থেকে তাড়িয়ে দিতে বলে। সব শুনে বাবা রাজী হয়না, যে পরিবার এতদিন আমাদের বাড়ীর দেখভাল করেছে তাদের এভাবে শাস্তি দিতে। বিশেষ করে যে কাজটা করেছে সে যখন মানসিকভাবে অসুস্থ। অনেক তর্কাতর্কি হয়, কিন্তু দুপক্ষের কেউই নিজেদের অবস্থান থেকে সরেনা।

    শুনেছি এরপরে গ্রাম থেকে আমাদের পুরো পরিবারকে একঘরে করা হয়। গ্রামের দোকান আমাদের মাল দিতনা, দুরে গিয়ে আনতে হত। ধোপা নাপিত আসত না, কোনো সামাজিক কাজে নেমন্তন্ন হতনা। দাদার সঙ্গে কোনো বাড়ীর বাচ্চারা খেলত না। খুব অসুবিধে হয় তবু বাবা জিদ ছাড়েনা। কি করে আবার সব ঠিক হয়ে যায়, কারোরই ঠিক মনে পড়েনা। বাবা মা কলকাতায় চলে যায়, সেই পাগল দাদা মরে যায়, পুরনো মাথারা বদলে গিয়ে নতুন পঞ্চায়েত হয়। যে কোনো ভাবেই হোক ধীরে ধীরে সব আবার স্বাভাবিক হয়ে যায়, সবাই সব ভুলে যায়। শুধু আমাদের পরিবারের গল্পকথায় রয়ে যায় এই ঘটনা।

    আজকের দিনে যেখানে মানুষকে মেরে খুন করে ফেললেও সময়বিশেষে কোনো শাস্তিই হয়না তখন এক গরুকে মারার জন্য এত কান্ড হয়েছিল ভাবতেই অদ্ভুত লাগে!

    ছবি- সুমেরু মুখোপাধ্যায়
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • ইস্পেশাল | ০১ অক্টোবর ২০১০ | ৭০৯ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। কল্পনাতীত প্রতিক্রিয়া দিন