আই লাভ মহম্মদ, সামান্য একটি ছোট্ট এবং ভাল কথা। কিন্তু তার জন্য র্যাফ নামতে হয় কেনো? ইন্টারনেট কেনো বন্ধ করে দিতে হয়? কিছুদিন আগে সিদ্দিকী কলকাতা অচল করার হুমকি দিল। কারণ ওয়াকফ বিল। আমার চ্যালেঞ্জ রয়েছে উনি যদি বিলটি সম্পর্কে আমাকে বোঝাতে পারেন আমি আমার নামে কুকুর পুষবো। এমনকি আই এস এফ তরুণ তুর্কি নেতাও। যাই হোক সুপ্রিম কোর্টে সামান্য সংশোধিত হয়েছে কিন্তু রদ হয় নি।
এর আগে এন আর সি নিয়ে ট্রেনে পাথর ছুঁড়ে মারা হয়েছে। যারা এসব করেছিল অতি বড় বোদ্ধা ও বলবে না, তারা এন আর সি কী জানে কিংবা বোঝে। পাথর ছুঁড়তে বলা হয়েছে ছুঁড়েছে। এক ঘটনা মুর্শিদাবাদে। যারা আগুন লাগিয়েছে, মানুষ মেরেছে তারা ওয়াকফ বিল জানে?
দিনের পর দিন এই ঘটনা ঘটে চলেছে। পাশের বাংলা দেশ দেখুন, পাকিস্তান দেখুন, আফগানিস্তান দেখুন কেমন হাল। গোঁড়া ইসলামিক মতবাদ থার্ড ওয়ার্ল্ড কান্ট্রিতে কেমন ভয়ঙ্কর সব জানে অমর্ত্য সেনের দল কিন্তু হিপোক্রেসি করবে। আবার গোঁড়া হিন্দু এলে কী সর্বনাশ তাও দেখছি। মধ্যপ্রদেশে মাছ মাংস কেনো নব রাত্রি তে খাবে হুমকি, কার ফ্রিজে গরুর মাংস আছে, দেখলেই মার, উঁচু নিচু জাতপাত সব সব নোংরামি আছে। কিন্তু তফাৎ আছে। যে কারণে ভারতবর্ষ কোন দিন বাংলাদেশ কিংবা পাকিস্তান হতে পারে না। এই দেশের তথাকথিত হিন্দু বলে এখনও যে বৃহত্তর সমাজ আছে সেই সমাজ ফ্ল্যাকসিবল, মুসলমান সমাজের মতন এত রিজিড না। যেটা সত্যি সেটা সত্যি। বামুনে বামুন মতের অমিল আছে, শূদ্রে দের মধ্যে আছে, বৌদ্ধদের মধ্যে আছে। ধর্মের ভাগ আছে, উপভাগ আছে। রাজনীতির শয়তানি আছে। আমি বাম নেতাকে আমার মুসলমান বন্ধু কে ভাড়া দিতে দেখিনি এক সময়। এই ভেদাভেদ তুলনায় অনেক কম মুসলমান সমাজে। সে বাম হোক, ডান হোক কিংবা তোলা, সবার আগে সে মুসলমান।
এটা অস্বীকার করে লাভ নেই, আজকের বাংলার যে মুসলমান তার ৯০% কনভার্টেড। বামুন আর কায়েতের প্রবল অত্যাচারে তারা একদিন সমাজের একদম অন্ত্যজ প্রান্ত থেকে মুসলমান হয়েছিল বাঁচতে। জোর করে কনভার্টেড বড় জোর ওই ১০% হবে। মুসলমান তো হলো রোজ অস্পৃশ্যতার গ্লানি হয়তো কিছুটা কমলো, কিন্তু গরিবি? শিক্ষা? বিগ জিরো। সমাজের উচ্চস্তরের মুসলমান এদের কোন দায়িত্ব কোন দিন নেয় নি। শিক্ষা তো এই সেদিন অব্দি অনিহা ছিল। যে টুকু শিক্ষা পুরোটাই ধর্মীয় শিক্ষা। ফলে এদের সমাজের থেকে বলিয়ে কইয়ে কাউকেই তেমন দেখা গেলো না। এরা হুজুরের কথায় ওঠে আর বসে। দীর্ঘদিন পাশ্চাত্য শিক্ষায় পেছাতে পেছাতে একেবারে গোঁড়া মুসলমানে পরিণত হলো। হিন্দুরা যে সময় উচ্চ শিক্ষিত সে সময় এরা অন্ধকারে। যে দু চারজন মুসলমান সমাজে উচ্চ শিক্ষিত হলো তারাও আর ফিরেও তাকালো না এদের দিকে। ধর্ম আরও আঁকড়ে ধরলো এদের। এমন একটি ধর্ম যার উৎপত্তি আরবের মরুভূমি তে। স্বাভাবিক ভাবেই সেই ধর্মের আচার বিচার সংস্কৃতি এই দেশের কিংবা বাংলা দেশের সাথে মেলে না। যুদ্ধ বিগ্রহের ভেতর দিয়ে যে ধর্ম উঠে এসেছে সেই ধর্মে স্বাভাবিক ভাবেই আনন্দ উৎসব কম। একমাত্র ঈদ। তাতেও সেই আত্মীয় স্বজনের সাথে কুশল বিনিময় আর নামাজ। শেষে খাওয়া দাওয়া। এই দেশের সংস্কৃতির সাথে মিল কোথায়? এদিকে হিন্দু বলে যারা চিহ্নিত তাদের বারো মাসে তেরো পার্বণ। ঝামেলা লাগতে বাধ্য। হয় দুই সংস্কৃতির মধ্যে আদান প্রদান করে মিশ্র সংস্কৃতি তৈরি করতে হয়, যে দায়িত্ব কেউ নেয় নি, নইলে যে যার মত থাকো। এই যে যার মতো থাকতে গিয়েই আরও বিভেদ সৃষ্টি হলো। কবি যতই একি বৃন্তে দুটি কুসুম বলুক বাস্তবে মানুষের কাছে দুটো ধর্ম জুতো তে সোজা। একটা ধর্মের সব মানুষ যদি ক্রমশ আর্থিক উন্নতি করতে থাকে আরেকটা ধর্মের মানুষ যদি ক্রমশ পেছাতে থাকে কী হতে পারে, স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় প্রায় কোন নেতাই সেই দিকে দৃষ্টি দেয় নি, ফল স্বরূপ দেশভাগ। তারপরেও কিন্তু মুসলমান সমাজ কে ধর্মের গোঁড়ামি থেকে বাস্তবে আনার চেষ্টা করা হয় নি। স্রেফ তোষণের রাজনীতি করা হয়েছে ভোট ব্যাঙ্ক হিসেবে। আজ যখন ফাটল আরও বেড়েছে সমান তালে পল্লা দিয়েছে তোষামোদি। ফলে আজকের বিজেপির জন্ম। এর দায়িত্ব কংগ্রেস, বামে রা অস্বীকার করতে পারে? এক আগুন নিয়ে আজ তৃণমুল খেলছে। এর পরিণতি কোথায় জানি না। স্বাধীনতার পরে এতদিন কেটে গেছে কোন চেষ্টাই করা হয়নি তাদের বিজ্ঞান সম্মত ভাবে ভাবনা চিন্তা করতে। সমান তালে মাদ্রাসা শিক্ষা চালিয়ে গেছে। বাড়িতে গোঁড়া বাবা মা থাকলে বাচ্চার বিকাশ হবে কি ভাবে? শিক্ষক যদি ধর্মীয় প্রভাব মুক্ত না হয় ছাত্র কোন দিন ধর্ম ছেড়ে বের হতে পারে? তাই উচ্চ শিক্ষিত যে কজন এখন বের হচ্ছে তারাও গোঁড়া। আপনারা ৭০ এর দশকের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা আফগানিস্তান দেখুন, লাহোর দেখুন, আর আজকের অবস্থা দেখুন। তফাৎ নিজেরাই বুঝবেন। আরও গোঁড়ামি চেপে বসছে। আরও অবস্থা খারাপ মেয়েদের হচ্ছে। অবশ্য ধর্ম মাথায় উঠলে কি ছেলেরা কি মেয়েরা, বোঝেও না কোনটা ঠিক কোনটা বেঠিক।
উল্টো দিকে হিন্দুদের মধ্যে যে ফ্লেক্সিবিলিটি ছিল সেটার বারোটা বাজাচ্ছে হিন্দু দল গুলো। এরাও চাইছে গোঁড়া হিন্দু তৈরি করতে! হিন্দু ঠাকুর দেবতা নিয়ে ইয়ার্কি বহুকাল ধরে আছে। কখনও দেখিনি নবীজী মার্কা চিন্তা ভাবনা যে তাঁকে নিয়ে কোন ইয়ার্কি করা যাবে না। ইদানিং তেড়ে আসছে। শিব, কালী, নিয়ে মশকরা বাংলাদেশে ছিল, এখন করা যায় না। রাম কে নিয়ে কিছু বলাই যাবে না। এসব ছিলনা, এসে গেছে। এর কারণ ও সেই একমুখী তোষণ। ওদের কে তো কিছু বলা হয় না, তাহলে আমাদের কেনো?
আমি সত্যিই জানি না, এই সর্বনেশে হিন্দু মুসলমান বিভাজনের খেলা এই দেশ কে আবার টুকরো করবে কিনা, সত্যিই জানি না, আবার রক্তক্ষয়ী দাঙ্গা দেখতে হবে কিনা। প্রতিটি রাজনৈতিক দল ক্ষমতা দখল করতে কতটা নিচে নামতে পারে দেখে নিয়েছি। এখন দিন গুনি যেন এসব দেখার আগে চলে যাই পৃথিবী ছেড়ে। এত বেমানান জায়গা আমার জন্য না।
#ভেনোচরিতকতা