এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  আলোচনা  ইতিহাস

  • বহু জাতি, বহু ভাষা, এক রাষ্ট্র  - স্বাধীনতার পরের কিছু বিস্মৃত টুকরো (৬)

    সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায় লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | ইতিহাস | ০৫ অক্টোবর ২০২৩ | ১৬০৫ বার পঠিত | রেটিং ৪.৫ (২ জন)
  • ৬। ক্রুশ্চেভ 
     
    কিন্তু খেলাটা দড়ি-টানাটানির। ফলে সোভিয়েতকে ভুলে যাওয়া একেবারেই ঠিক না। সেখানেও এর মধ্যে নানা ঘটনা ঘটতে থাকে। 'বিনাকা গীতমালা' যে বছর, সেই ৫৩ সালেই মারা যান স্তালিন, যা দিয়ে এই লেখার শুরু। এবং ক্ষমতায় আসেন ক্রুশ্চেভ-মালেনকভ। মালেনকভকে হঠিয়ে ক্রুশ্চেভের নিরঙ্কুশ ক্ষমতা পেতে কয়েকবছর লাগে। কিন্তু সোভিয়েত নীতি বদলাতে থাকে প্রথম থেকেই। স্তালিনের সময়  ভারতের প্রতি সোভিয়েতের নীতি ছিল, সমর্থন এবং বিরোধিতার। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সমর্থন, আভ্যন্তরীন সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে একদিকে 'শ্রমিক-কৃষক-পন্থী' বোম্বে সিনেমার পিছনে থাকা, অন্যদিকে নেহরুর উল্টোদিকে গিয়ে বহুজাতিক ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে থাকা। শক্তপোক্ত এক সোভিয়েত ব্লক তৈরি করতে গিয়ে গোড়া থেকেই ক্রুশ্চেভ বিরোধিতার জায়গাটা উড়িয়ে দেন। ঠান্ডা যুদ্ধ চলছে, ফলে ভারতের সঙ্গে তাঁর সুসম্পর্ক দরকার ছিল, সেটা ঐক্যবদ্ধ ভারত হলেই ভালো হয়। ফলে বহুজাতিকতা এবং যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো নিয়ে সোভিয়েতের বক্তব্যটা নাটকীয়ভাবে বদলে যায়। ক্রুশ্চেভের নিজের বক্তব্যের চেয়েও এই পরিবর্তনটা নাটকীয়ভাবে দেখা যায় কমিউনিস্ট পার্টির নথিতে। স্তালিনের মৃত্যুর ছমাসের মধ্যে মাদুরাই পার্টিকংগ্রেসের প্রাক্কালে অজয় ঘোষ একটি দলিলে পার্টির অবস্থান ব্যাখ্যা করেন। সেটা ছাপা হয়ে বেরোয় পরের বছর। তাতে যা লেখা হয়, তার হুবহু উদ্ধৃতি এরকমঃ "মনে রাখতে হবে, কমিউনিস্ট পার্টি ভারতের একতার পক্ষে... বিভিন্ন প্রদেশে সরকার এবং জনগণের মধ্যে যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে হিন্দিকে উৎসাহ দিতে হবে... যেখানে অন্য ভাষা বলা হয়, সেখানে পার্টি সেই জাতির ভাষার অধিকারের পক্ষে দাঁড়ালেও একই সঙ্গে অতি অবশ্যই হিন্দিকে উৎসাহ দেবে এবং জনপ্রিয় করবে"।(১) 

    দেখাই যাচ্ছে অবস্থানে বদলটা অত্যন্ত দ্রুত এবং চমকে দেবার মতো। পার্টি কংগ্রেস হয় ৫৩ সালের ডিসেম্বর মাসে, এটা তার আগে লেখা। প্রসঙ্গত স্তালিন মারা গিয়েছিলেন আগস্ট মাসে। কোনো প্রত্যক্ষ প্রমাণ নেই, তবে কমাসের মধ্যেই এই পুরো উল্টোদিকে যাত্রা সোভিয়েতের প্রভাব ছাড়া অসম্ভব। চমক দিয়ে শুরু করে, কয়েক বছরের মধ্যেই বৃত্তটা আস্তেসুস্থে  সম্পূর্ণ হয়। ক্রমশঃ মারোয়াড়ি আগ্রাসন 'মিথ' এ পরিণত হয়। এবং পরবর্তী কংগ্রেস থেকেই কমিউনিস্ট পার্টি বেনিয়াদের পুরো বাদ দিয়ে একচেটিয়া বনাম ছোটো পুঁজিপতিদের দ্বন্দ্ব নিয়ে মাথা ঘামাতে শুরু করে।

    কমিউনিস্ট পার্টির ইতিহাস যাঁরা জানেন, এই পরের পর্যায়ের পুরো বিতর্কটাই জানেন, যা পার্টি ভাগ হওয়া পর্যন্ত চলতে থাকে। কিন্তু এখানে সেটা আলোচ্য না, কাজেই বাদ দিয়ে যাওয়া হবে। এখানে সংস্কৃতি নিয়ে কথা হচ্ছে। বহুভাষিকতা এবং যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে প্রধান বিরোধী দল এবং সোভিয়েত দুম করে মত বদলে ফেলায়, নেহরুর উপর থেকে চাপ অনেকটাই কমে। পার্টির মধ্যের এবং বাইরের আঞ্চলিক শক্তিগুলি অবশ্য বহিজাতিকতার  প্রশ্নে তখনও সরব। নেহরুও এক-পা পিছিয়ে এসে আপোষের নীতি নেন। ভাষাভিত্তিক রাজ্যপুনর্গঠন বিবেচনা করার জন্য একটা কমিশন তৈরি করে ফেলেন। সেটাও ডিসেম্বর ৫৩ সালে, যে মাসে পার্টি কংগ্রেস, যেখানে অবস্থান বদলে ফেলবে সিপিআই। ওই একই সময় রেডিও সিলোন জনপ্রিয় হয়ে চলেছে। এই পুরো সময়সীমাটাই এত কৌতুহলোদ্দীপক, যে, এদের মধ্যে কোনো একটা সম্পর্ক আবিষ্কার করে ফেলতে ইচ্ছে করে। সেটা থাকাও খুবই স্বাভাবিক। গপ্পো লিখলে যে কোনো লেখক ওইটুকু স্বাধীনতা নিয়ে নিতেন। কিন্তু হায়, এটা গপ্পো নয়।

    কিন্তু গপ্পো না হলেও, মোটা দাগের ঘটনাবলীও কম রোমাঞ্চকর নয়। এর পরের বছর, অর্থাৎ ৫৪ সালেই ঘটে আরও এক কান্ড। সিনেমা নিয়ে নেহরুর ধারণা এবং তাতে সোভিয়েত মদতের কথা আগেই বলা হয়েছে। এর আগে থেকেই সেই ধারণা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছিল। অর্থাৎ জনপ্রিয় সিনেমা হবে, কিন্তু তাতে শ্রমিক-কৃষক সংক্রান্ত 'বাম' ধারণা গুঁজে দেওয়া হবে। ১৯৫১ সালে এই ঘরানার প্রথম দিকের একটা ছবি রিলিজ করেছিল, যার নাম আওয়ারা। এর চিত্রনাট্যকার ছিলেন, খাজা আহমেদ আব্বাস, যিনি একাধারে আইপিটিএর লোক, নেহরুর খুবই ঘনিষ্ঠ, ক্রুশ্চেভের সঙ্গে ভুল রাশিয়ানে আড্ডা দেন, গ্যাগ্যারিনে মহাকাশ থেকে ফিরলে যেকজন প্রথম দেখা করেন তাঁদের মধ্যে একজন, এবং সর্বোপরি ৪৮ সালের পার্টি-লাইনে বিরক্ত - এই প্রকল্পের পক্ষে আদর্শ। তিনি এবং রাজকাপুর দুজনেই "আওয়ারা" সিনেমাটাকে "প্রগতিশীল" বা "ভবঘুরে জন্মায়না, তৈরি করা হয়" জাতীয় আখ্যা দিয়েছিলেন সে সময়। এবং বস্তুত চিনে এক ঝটিকা-সফর সেরে এসে আব্বাস এই সিনেমায় হাত দেন। এর পরের বছরই তিনি বানান রাহি। আওয়ারা ছিল হিট এবং রাহি ফ্লপ। 

    পৃথিবীতে কিছু হিট সিনেমা হয়, কিছু ফ্লপ। ওই সময় আরও কিছু হিট সিনেমা ছিল, যেমন বাজি, আরপার, লোকে সেসবের নাম মনে রাখেনি। কিন্তু ১৯৫৪ সালে ক্রুশ্চেভের সোভিয়েত এমন এক কান্ড ঘটায়, যাতে এই দুটি সিনেমা ভারতের সিনেমার ইতিহাসে অক্ষয় হয়ে যায়। সোভিয়েত, আমেরিকার বেতার-কান্ডের জবাবেই হোক, বা স্বতঃপ্রণোদিত হয়েই হোক, হঠাৎই লৌহ-যবনিকা তুলে নিয়ে এই দুটো সিনেমাকে (সঙ্গে আরও কয়েকটা ছিল) প্রদর্শনের জন্য ডাকে। সঙ্গে ডাকে নায়ক-নায়িকা এবং কিছু "প্রগতিশীল" ব্যক্তিত্বকেও। প্রসঙ্গত এর আগে একটাই ভারতীয় সিনেমা সোভিয়েতে দেখানো হয়েছিল, সেটাও স্বয়ং পুডভকিনের অনেক কাঠ-খড় পোড়ানোর পর। সেটা একটা বাংলা সিনেমা, যার নাম ছিন্নমূল। কিন্তু এবারের আয়োজন সম্পূর্ণ অন্য ছিল। এবার সবই হিন্দি সিনেমা এবং সরকারি প্রচারযন্ত্র তাদের সঙ্গে। বস্তুত এটা সেই সূচনা, যখন বাছাই হিন্দি সিনেমাকে, শুধু সোভিয়েত নয়, সোভিয়েত-প্রভাবিত অর্ধেক বিশ্বে প্রোমোট করতে শুরু করে দ্বিমেরু বিশ্বের এক বিশ্বশক্তি। নেহরু স্বয়ং বিপননের দায়িত্ব নিয়ে নেন। দেব আনন্দ এবং রাজ কাপুর ও নার্গিসকে সঙ্গে করে একাধিক সফর করেন বিদেশে, যার একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল হিন্দি সিনেমার প্রচার ও প্রসার।

    অবিলম্বে এত উদ্যোগের ফল ফলে। পৃথিবীর নানা প্রান্ত নতুন এক ঘরানার সঙ্গে পরিচিত হয়। আমেরিকা এবং হলিউডের মুখে ঝামা ঘষে, 'ম্যায় আওয়ারা হুঁ' শোনা যেতে শুরু করে চিন থেকে আফ্রিকা অবধি। সোভিয়েত এবং রাশিয়ার যৌথ প্রকল্প দুই মহানায়কের জন্ম দেয়। রাজ কাপুর এবং দেব আনন্দ। বোম্বের সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি এমন এক জায়গায় পৌঁছয়, যেখানে বোম্বেই ভারত। ভারতের আর কোনো সিনেমাকেন্দ্রের সেখানে পৌঁছনো সম্ভব ছিলনা। কারণ রাষ্ট্রশক্তি ও বিশ্বশক্তিরা তাদের তুলে ধরেনি। অনেকেই ভাবেন, তারকারা জন্মায় ক্যারিশমায়। কথাটা এমনিই ঠিক নয়, কিন্তু এই বিশেষ ক্ষেত্রে, রাজ কাপুরকে নকল করেই বলা যায়, ভবঘুরের মতোই তারকারাও জন্মায়না, তাদের তৈরি করা হয়। পঞ্চাশের অন্য হিট সিনেমাগুলোকে আমরা ভুলেই গেছি। এই দুটো থেকে গেছে, এদের নায়করা মহানক্ষত্র হয়েছেন, কারণ এক্ষেত্রে ভারত রাষ্ট্র এবং বিশ্বরাজনীতির সমীকরণ এঁদের নক্ষত্র বানিয়েছে। ক্রোনি ক্যাপিটালিজম কথাটা পঞ্চাশে চালু হয়নি, কিন্তু তার প্রত্যক্ষ উদাহরণ, এর চেয়ে বেশি আর কিছু নেই। এই সময় বা এর পরে, যে ছেলেরা নায়কদের হাবভাব নকল করেছে, যে মেয়েরা পাগল হয়েছে, সেটা ক্রোনি ক্যাপিটালিজমের ঘাড়ে ধরে করানো, ফুকো যাকে বলেছেন, উদ্দীপনার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ।  

    সূত্রঃ
    ১। https://www.revolutionarydemocracy.org/archive/ThirdCongressCPIndiaAGorig.pdf 

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • আলোচনা | ০৫ অক্টোবর ২০২৩ | ১৬০৫ বার পঠিত
  • আরও পড়ুন
    কবিতা  - Suvankar Gain
    আরও পড়ুন
    লাল রঙ - Nirmalya Nag
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • guru | 103.175.***.*** | ০৫ অক্টোবর ২০২৩ ১২:৪০524303
  • অসাধারণ লিখছেন সৈকতবাবু। ইতিহাসের ভুলে যাওয়া অনেক অধ্যায়কে তুলে আনছেন সামনে।
     
    কিন্তু ক্রুশ্চেভ শুধুমাত্র জিয়ো পলিটিক্সের জন্যই কি ভারত নিয়ে একেবারে এতো রেডিকাল শিফট নিয়ে এলেন? আর কোনো কিছু কারণ নেই? কোনো অন্য কিছু স্বার্থ ছিল কি?
     
    আরেকটা ব্যাপার এই নতুন ভারত নীতির ফলে ক্রুশ্চভ সোভিয়েতের জন্য কি আনতে পেরেছিলেন নেহরুর থেকে? ক্রুশ্চেভের পরে যারা সোভিয়েতের ক্ষমতায় এসেছিলেন যেমন ব্রেজনেভ তারা কেন ক্রুশ্চেভের ভারত নীতির বিরোধিতা করেননি? 
     
    ইতিহাসে ক্রুশ্চেভের সঙ্গে মাও এর বিরোধকে সিনো সোভিয়েত স্প্লিট (sino-soveit split) বলে। ক্রুশ্চেভের এই পরিবর্তিত ভারত নীতিটার কতটা অবদান এই সিনো সোভিয়েত স্প্লিট এর জন্য?
  • সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায় | ০৫ অক্টোবর ২০২৩ ২২:৫৯524321
  • ক্রুশ্চেভের নীতিবদল নিয়ে অনেক আলোচনা আছে তো।  খুব সম্ভবত (একটু চেক করে নেবেন) বিংশতি পার্টিকংগ্রেসে, ৫৬ সালে ক্রুশ্চেভ ব্যাপরটাকে তত্ত্বায়িত করেন। তত্ত্বের মূল খুঁটি ছিলঃ শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান, শান্তিপূর্ণ প্রতিযোগিতা এবং শান্তিপূর্ণ উত্তরণ। 
    সহাবস্থান এবং প্রতিযোগিতা মানে পুঁজিবাদ আর সমাজতন্ত্র পাশাপাশি শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান করতে পারে। মানবকল্যাণে প্রতিযোগিতা করতে পারে। সেই দিয়েই নির্ধারিত হবে কোনটা উন্নত, ইত্যাদি। 
    শান্তিপূর্ণ উত্তরণ মানে, বিপ্লব করেই সমাজতন্ত্র আনতে হবে এমন না। শান্তিপূর্ণ ভাবে অন্য ব্যবস্থা থেকে সমাজতন্ত্র বা জনগণতন্ত্রে  উত্তরণও হতে পারে। এইটা ভারতের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য ছিল। ভারত এমন একটা কেস স্টাডি, যেখানে কংগ্রেস সরাসরিই নিজেকে সমাজতন্ত্রী বলে দাবী করে, কিন্তু দেশটা সমাজতান্ত্রিক না। এখানে শান্তিপূর্ণ উত্তরণ হয়তো সম্ভব। ফলে ওই সময় থেকেই কংগ্রেসের মধ্যে 'প্রগতিশীল' অংশ খুঁজে বার করার চেষ্টা শুরু হয়। 
    এই নীতিপরিবর্তন পুরোটাই কি জিওপলিটিক্সের কারণে? হতে পারে। অন্য কিছুও থাকতে পারে। অনেকেই নানা নাটকীয় তত্ত্বের অবতারণা করেছেন। ত্রৎস্কি এবং স্তালিনপন্থীরা। উৎপল দত্তের একটা বই আছে, প্রতিবিপ্লব। খুব সুখপাঠ্য। তাতে এইসব ধারণা বিশদে বলা আছে, উৎপল দত্ত সুলভ নাটকীয়তা সমেত। পড়ে দেখতে পারেন।
     
    ক্রুশ্চভের এই নীতিপরিবর্তনের ফলে গোটা পৃথিবীর কমিউনিস্ট আন্দোলনেই নাড়াচাড়া পড়ে যায়। চৈনিক পার্টি অবিলম্বে 'সংশোধনবাদী বিচ্যুতি' বলে-টলে নিন্দে করে। চিন-সোভিয়েত বিভাজনের অবশ্যই এটাই কারণ। চিন আরও পরে আরও চরম অবস্থান নেয়। সোভিয়েতকে 'সামাজিক সাম্রাজ্যবাদ' আখ্যা দেয়। ভারতেও বিতর্ক হয়। বিশেষ করে কংগ্রেসের মধ্যে 'প্রগতিশীল' খুঁজে বার করার চেষ্টা এবং রাষ্ট্রের শ্রেণীচরিত্র নিয়ে কমিউনিস্ট পার্টি মোটামুটি দুইভাগই হয়ে যায়। রাষ্ট্রের চরিত্র মানে বেনিয়া-পুঁজি থেকে সরে গিয়ে 'জাতীয় পুঁজি' আবিষ্কার করার প্রবণতা নিয়ে। ভাগ বাড়তে বাড়তে পার্টি দু-টুকরো হয় ষাটের দশকের গোড়ায়। 
     
    খুবই সংক্ষেপে বললাম। কিন্তু এই নিয়ে গুচ্ছের লেখা আছে। ফলে এইটা কভার করবনা। যেটা নিয়ে লিখছি, সেটার মালমশলা সবই থাকলেও লেখা কিছু নেই।  
  • রবি রায় | 2402:3a80:1968:37b0:578:5634:1232:***:*** | ০৬ অক্টোবর ২০২৩ ০৭:৫৭524328
  • এই লেখাটির আকর্ষণেই গুরুতে এলাম। ভালো লেখা হলে খুঁজেপেতে পড়ি। এটা তেমনই একটি লেখা।
  • হাইট অফ ভাবা প্রাকটিস | 117.199.***.*** | ৩১ মার্চ ২০২৫ ২২:২১542032
  • আওয়ারা রিলিজ করে ১৯৫১ ডিসেম্বরে, ১৯৫৩ তে কান ফিল্ম ফেস্টিভাল -এ এটি Grand Prize of the Festival (Palme d'Or) এর নমিনেশন পায়। ইতিমধ্যে, In India, the film grossed a record of 2.1 crore in 1951,[25] making it the highest-grossing film in India up until that time.[38] 
    ১৪ ডিসেম্বরে রিলিজ করে তখনও সেবছরের সর্বকালের এই হায়েস্ট গ্রোসিং তাহলে মাত্র তিন সপ্তাহে। ভাবা যায়!
    রাশিয়ায় সিনেমাটি রিলিজ করবে আরও তিন বছর বাদে, ১৯৫৪ তে যখন এটি অলরেডি কাল্ট এবং তুমুল হিট। অর্থাৎ সোভিয়েত এবং তার প্রোমোটিং এর প্রশ্ন আসছে সিনেমা রিলিজের এবং রেকর্ড হিট হওয়ার তিন বছর বাদে।
    সুতরাং সোভিয়েত ষড়যন্ত্রেই সিনেমাটি মহানক্ষত্রের জন্ম দিল গোছের কনস্পিরেসি থিয়োরি না খুঁজে এভাবেও ভাবা যায় যে অলরেডি হিট সিনেমাটি সোভিয়েত ও তুর্কিতে রিলিজ ও রি-রিলিজের সময়ও বিপুল হিট হয়, সেভাবে নানা সমাজতান্ত্রিক দেশেই, কারণ একটি হিট সিনেমায় যা থাকা দরকার, তার সবই এতে ছিল বিশেষত অপ্রেসন এর অ্যঙ্গেল, যা সমাজতান্ত্রিক দুনিয়ার মানুষের পছন্দের। 
  • . | ৩১ মার্চ ২০২৫ ২২:২৫542033
  • সকলে তো সন তারিখ ক্রস চেক করে পড়েন না। অতএব মনের মাধুরী দিয়ে ভুল তথ্য যত বেশি বেশি প্রচার করা হবে ততই তা ক্রমশ সত‍্য হয়ে উঠবে।
  • সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায় | ০২ এপ্রিল ২০২৫ ০৩:৪৯542051
  • কী মুশকিল,  তথ্যগুলো তো আমার লেখাতেই দেওয়া আছে। ৫১ সালে আওয়ারা রিলিজ করেছিল, হিট করেছিল, এবং ৫৪ সালে রাশিয়াসহ বিশ্ববিজয় করে। যেটা নেই, সেটা হল অঙ্ক। ৫১ সালে আওয়ারা ভারতে  ২.৩ কোটি আয় করেছিল। ওই বছরই বাজি আয় করেছিল ১.৮ কোটি। আলবেলা ১.৬৫ কোটি। সে বছর আওয়ারা সবচেয়ে বেশি, সেই সময় পর্যন্ত সর্বোচ্চ। কিন্তু পরের বছরই একই অঙ্কে পৌঁছয় বৈজু বাওরা। ২.৩ কোটি। তাকেও টপকে যায় আন। আয় ২.৮ কোটি। 
     
    এগুলো সবই বিপুল অঙ্ক। এর পিছনে সরকারি উদ্যোগের একটা ব্যাপার ছিল। সে তো লিখেইছি। তার কাছাকাছি কম এবং বেশি আয়ও নানা সিনেমাই করে। কিন্তু তার পরেও আওয়ারা  হল আওয়ারা। কারণ, তিন বছর পরে আওয়ারা বিশ্ববিজয় করে ফেলে। এবং যে বিপুল অঙ্কটা আয় করে, তা অকল্পনীয়। আওয়ারার ভারতে আয় হয়েছিল ২.৩ কোটি। সোভিয়েত রাশিয়ায় হয় তার চারগুণ। টাকার অঙ্কে মোটামুটি ৯-১০ কোটি টাকা। চিনে হয় দুগুণ মতো। ধরুন ৪  কোটি টাকা। মোটামুটি পুরোটাই তখনও সোভিয়েত ব্লক। সোভিয়েত ভাবাপন্ন পৃথিবীতে সব মিলিয়ে সিনেমাটা আয় করে, ১৪ কোটি টাকা মতো। তাও সব জায়গার হিসেব পাওয়া যায়নি। এখনকার হিসেবে সংখ্যাটা মোটামুটি ১৪০০ কোটি টাকা, যেখানে দেশে এসেছিল ২৩০ কোটি টাকা। 
     
    এইটাই আওয়ারাকে কাল্ট বানিয়েছিল। বিদেশে যাবার আগে আওয়ারা শুধুই একটা হিট সিনেমা ছিল। যেমন ছিল আন।  কিন্তু আন দেশে আওয়ারার চেয়ে বেশি টাকা তুলেও সেই জায়গায় পৌঁছয়নি। যেটা আওয়ারা পৌঁছেছিল। তার পিছনে নেহরুর বিদেশ নীতির ভূমিকা, সোভিয়েতের ভূমিকা কী ছিল? সে আর নাই বা বললাম। 
     
    আমার ধারণা, এগুলো আপনারা সবাই জানেন। ফালতুই লেখাচ্ছেন। কারণ, জেনেও বিশ্বাস করতে পারেন না। অন্ধবিশ্বাস তো এমনি এমনি বলেনা। 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভ্যাবাচ্যাকা না খেয়ে মতামত দিন