এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  আলোচনা  ইতিহাস

  • বহু জাতি, বহু ভাষা, এক রাষ্ট্র  - স্বাধীনতার পরের কিছু বিস্মৃত টুকরো (৫)

    সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায় লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | ইতিহাস | ০১ অক্টোবর ২০২৩ | ১৮৫৯ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)
  • ৫। আমেরিকা

    কেশকর তো রেডিও থেকে হিন্দি সিনেমাকে বহিষ্কার করলেন, কিন্তু গ্ল্যামার-শিল্পপতিরা কি ছেড়ে দেবার লোক? খোদ কংগ্রেসেই উল্টোদিকের জোরালো মত ছিল। তার পুরোধা ছিলেন সদাশিব পাতিল। তিনিও মারাঠি, খাস বোম্বের লোক, এবং আমেরিকা-ঘনিষ্ঠ। পাতিলকে নিয়ে গুচ্ছের কথা শোনা যায়, যেমন, ভারতে 'ব্রিফকেস রাজনীতি'র জনক, বা সিআইএর সরাসরি এজেন্ট। কিছু পরোক্ষ সাক্ষ্যও আছে, কিন্তু প্রমাণিত সত্য বলা কঠিন। সত্য হলেও ব্রিফকেসওয়ালারা তো লিখে রেখে যাবেনা, বা সিআইএ সেইসব নথি খুলেও দেবেনা। যেগুলো মোটামুটি সর্বজনগ্রাহ্য, তা হল, তিনি বোম্বের উচ্চকোটি মহল এবং ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখতেন। এবং তৎকালীন বোম্বে কংগ্রেসের সর্বেসর্বা। খোদ সিআইএর খুলে দেওয়া নথিতেই একাধিকবার পাতিলকে বোম্বে কংগ্রেসের বস, বা বোম্বের পার্টি বস, বলে উল্লেখ করা হয়েছে। খোলা অর্থনীতি নিয়ে আমেরিকার সঙ্গে তাঁর মতের মিল ছিল, এও কার্যপ্রণালী থেকে দেখতেই পাওয়া যায়।

    কিন্তু সেখানে ঢোকার আগে, ৫২-৫৪ সালে আমেরিকার অবস্থাটা কী ছিল একবার দেখে নেওয়া দরকার। তখন কোরিয়াযুদ্ধ শেষ করে ঠান্ডাযুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। সোভিয়েত পারমানবিক বোমা ফাটিয়ে ফেলেছে ১৯৪৯ সালে। ১৯৫০ এ ম্যাকার্থি আমেরিকায় কমিউনিস্ট চরদের তালিকার কথা ঘোষণা করে বিখ্যাত হয়ে গেছেন। আমেরিকায় বুদ্ধিজীবী, বিশেষ করে হলিউড শিল্পীদের কালো-তালিকাভুক্ত করা শুরু হয়ে গেছে, বা হতে চলেছে। কমিউনিস্ট জুজুর ভয় সর্বত্র। আরেক খ্যাতনামা ব্যক্তিত্ব অ্যালেন ডালেস তখন সিআইএর অন্যতম শীর্ষপদে। এশিয়ায় তারা খুবই সক্রিয়। ৫৩ সালেই ইরানে কু ঘটিয়ে দেওয়া হবে। আর এসবের সঙ্গেই দেশে-দেশে চলছে 'মুক্ত বেতার' কার্যক্রম। অর্থাৎ, বাম-ঘরানার দেশগুলোকে রেডিও সম্প্রচার করে, 'মুক্ত দুনিয়া'র ভাবধারা ছড়িয়ে দেওয়া। এশিয়ায় এর মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত হল তাইওয়ানের রেডিও।

    তা, এই অবস্থায়, আমেরিকা-ঘনিষ্ঠ একজন রাজনীতিক এবং এবং 'বোম্বের বস'এর যা করণীয়, পাতিল তাই করেছিলেন। অর্থাৎ সরকারের উপর চাপ তৈরি। তিনি তখনও মন্ত্রী নন, ৫২-৫৩ সালের জনসমক্ষে বলা মতামত খুঁজে পাওয়া কঠিন। কিন্তু  ৫৭ সালে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হবার পর, বোম্বে রেডিও মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের এক সভায়, পাতিল খোলাখুলি বেতারে "বিজ্ঞাপনদাতা প্রযোজিত অনুষ্ঠান"এর পক্ষে বলেন, এবং মন্ত্রীসভায় না বলে বাইরে কথা বলার জন্য নেহরুর কাছে তিরস্কৃতও হন। পরবর্তীতে মন্ত্রীসভার বৈঠকেও ফিল্মি সঙ্গীতের জন্য আলাদা একটা বেতারকেন্দ্র তৈরির প্রস্তাব পাড়েন।(১)

    কিন্তু এগুলো ৫৭ সালের কথা। ৫৩ সালে, অর্থাৎ, যে বছর স্তালিন মারা যান, অন্ধ্রপ্রদেশ গঠিত হয়, এবং কেশকরও তাঁর বেতারনীতি তৈরি করেন, তখনও পাতিল অনেকটাই বাইরে, কিছুটা সহযোগীর ভূমিকায়। সে বছর নামভূমিকায় ছিলেন এক আমেরিকান নাগরিক, যাঁর নাম ডেভিড মলিনা। মলিনাও বোম্বের পুরোনো খেলোয়াড়। এর দুবছর আগে, ১৯৫১ সালে, যে বছর যখন বামপন্থী শিল্পীরা কলকাতা এবং অন্য জায়গা থেকে দলে-দলে বোম্বে আসছেন, যাঁদের একটা অংশ, এর পরে 'সোভিয়েতমুখী' চলচ্চিত্রনির্মাণে জড়িয়ে যাবেন, সেই মহানিষ্ক্রমণের গোলমালের মধ্যেই মলিনা বোম্বেয় তৈরি করেন খানদুই রেডিওসংক্রান্ত কোম্পানি। একটা বিজ্ঞাপনের (RAS), আরেকটা প্রোডাকশনের (REPL)। মনে রাখতে হবে, ওই সময়েই 'মুক্ত রেডিও'র উপর জোর দিচ্ছে আমেরিকা। এই দুয়ের মধ্যে সরাসরি সম্পর্ক আবিষ্কার করা যাবেনা। কিন্তু মিলটা একেবারে কাকতালীয় হওয়া খুবই মুশকিল। বিশেষ করে এই সেই সময়, যখন সদ্যস্বাধীন ভারতবর্ষ আমেরিকা এবং সোভিয়েত, দুই বিশ্বশক্তির দড়ি-টানাটানি খেলার মঞ্চ।

    যাহোক, এরপর যা ঘটে, তা ভারতীয় সংস্কৃতির ইতিহাসটাই পুরোপুরি বদলে দেয়। ৫৩ সাল থেকেই রেডিওয় সিনেমাসঙ্গীত কমতে থাকে। কিছুদিন পরে একেবারেই বন্ধ হয়ে যায়। এটাকেই সুযোগে পরিণত করেন মলিনা। তাঁর প্রোডাকশন কোম্পানির জন্য ভাড়া করে ফেলেন বোম্বের সরকারি রেডিওর জনপ্রিয় প্রচারক হামিদ সায়ানিকে। সঙ্গে আসে তাঁর একটা টিমও। মলিনার উদ্দেশ্য খুবই সোজা ছিল। যেহেতু সিনেমার গান সরকারি রেডিওয় আর শোনা যাচ্ছেনা, তিনিই সেগুলো সম্প্রচারের ব্যবস্থা করবেন। এবং ব্যবসায়িকভাবে।

    কিন্তু সম্প্রচার করব বললেই তো হলনা, ভারতবর্ষের রেডিও সম্প্রচারব্যবস্থা সম্পূর্ণ সরকারি। কিন্তু অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে তারও ব্যবস্থা হয়ে যায়। ভারতবর্ষের মাটিতে না, অনেকটা তাইওয়ান মুক্ত রেডিওর ধাঁচে, ভারতের মূল ভূখন্ডের বাইরে, কিন্তু খুব কাছাকাছি একটা দ্বীপরাষ্ট্র থেকে, যার নাম শ্রীলঙ্কা। সেখানে একটা শক্তিশালী বেতারকেন্দ্র ইতিমধ্যেই ছিল, যার নাম রেডিও সিলোন। ব্রিটিশদের রেখে যাওয়া ট্রান্সমিটারের দৌলতে ওই একটা কেন্দ্র থেকেই, সারা ভারতে শর্টওয়েভ সম্প্রচার করা যেত। মলিনা এটাকেই কাজে লাগাবেন ঠিক করেন। 

    রেডিও সিলোন এই প্রস্তাবে রাজি হয়ে যায়। হামিদ সায়ানি হিন্দি অনুষ্ঠানের দায়িত্ব পান। অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে অনুষ্ঠান এবং বিজ্ঞাপনের প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায়। এবং একই সঙ্গে ঘটে আরও একটা 'কাকতালীয়' ব্যাপার। সিবাকা নামক এক বহুজাতিক কোম্পানি ভারতে ব্যবসা করবে বলে মনস্থ করে। তারা রেডিও সিলোনে 'বিনাকা গীতমালা' নামক একটা অনুষ্ঠানের প্রযোজনা করবে বলে ঠিক করে। ব্যস, সমস্ত বাধা কেটে যায়, হামিদের ভাই আমিনের সঞ্চালনায় শুরু হয়ে যায় ভারতে সম্প্রচারিত একান্তভাবেই ফিল্মি সঙ্গীতের বেতার অনুষ্ঠান (বস্তুত বিনাকা আসার আগে ৫২ সালেই সম্প্রচার শুরু হয়েছিল, কিন্তু জনপ্রিয় হয় ৫৩ সালেই)। এরপর হুড়হুড় করে বিজ্ঞাপন আসতে থাকে। কোলগেট, ওভালটিন, লাক্স। জনপ্রিয় গানের সম্প্রচারের ফলে ভারতীয় শ্রোতাদের সংখ্যাও বাড়তে থাকে রকেটের গতিতে।

    কেশকরের সাংস্কৃতিক পরিকল্পনায় এ ছিল এক পরিকল্পিত এবং সাফল্যমন্ডিত অন্তর্ঘাত। পরিকল্পিত, কারণ, এত বড় আন্তর্জাতিক 'ব্যবসায়িক প্রকল্প' পরিকল্পনা ছাড়া অসম্ভব। আর সাফল্যমন্ডিত, কারণ, 'সর্বভারতীয় সংস্কৃতি' নির্মাণের পুরো প্রকল্পটাই এতে ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়। ভারতীয় শ্রোতারা সরকারি বেতার ছেড়ে বিপুল পরিমানে রেডিও সিলোনের অনুষ্ঠান শুনতে থাকে। একটা সমীক্ষায় নাকি বেরোয়, ১০ জন রেডিওধারীর মধ্যে ৯ জনই সে সময় রেডিও সিলোন শুনতেন। ১ জন শুনতেননা, কারণ, রেডিওটা খারাপ। এটাকে সমীক্ষা না বলে জনপ্রিয় গল্প হিসেবে নেওয়াই ভালো, কারণ, সমীক্ষার পদ্ধতি ইত্যাদি কিছু খুঁজে পাওয়া মুশকিল। তবে মোটের উপর চিত্রটা এর কাছাকাছিই ছিল, নইলে গল্প হিসেবেও জিনিসটা চালু হওয়া সম্ভব না। এবং মোটের উপর কেশকর বনাম বোম্বের যুদ্ধে বোম্বের জয় হয়। সরকারি রেডিওর আত্মসমর্পণ, এবং সর্বভারতীয় সংস্কৃতি হিসেবে হিন্দি সিনেমার পুনঃপ্রতিষ্ঠা হয়ে দাঁড়ায় কেবলমাত্র সময়ের অপেক্ষা।

    সূত্রঃ 
    ১। https://www.tandfonline.com/doi/pdf/10.1080/14736489.2023.2201541
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • আলোচনা | ০১ অক্টোবর ২০২৩ | ১৮৫৯ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • পাতা :
  • r2h | 192.139.***.*** | ০৫ অক্টোবর ২০২৩ ০০:০১524286
  • অপরাধজগতে জড়িয়ে পড়া এবং তার পর ইনএভিটেবল - এসবের শুরুর দিকের দুটো বড় সিনেমা শিবা আর পরিন্দা।

    কেসিদা, থ্যাংকিউ। আমি জুবিলি শুরু করে কিন্তু কেমন একটু বোর হয়ে গেছিলাম, আবার দেখবো তাহলে, কোন একটা শুক্রবার রাত থেকে বিঞ্জ।

    প্রসঙ্গত, সরকারী নিয়ন্ত্রন ও কাছাখোলা ব্যক্তিগত পুঁজির কথা ভাবলে আজকের ভারতের মিডিয়ার করুণ অবস্থা মনে হয়। ইন্দিরা ইমার্জেন্সির সময় সরকার নিয়ন্ত্রিত মিডিয়াতেও বোধহয় আজকের অঘোষিত ইমার্জেন্সিতে (নিউজক্লিক, সাংবাদিকদের গ্রেপ্তারি, যা আবার ইন্টারেস্টিংলি ইন্ডিয়া জোটের কিছু মিডিয়াকে বয়কটের পরপর) ব্যক্তিগত পুঁজিপোষিত তথা স্বাধীন মিডিয়ার থেকে বেশি ডিসেন্ট শোনা গেছিল ইতিউতি।
  • সিএস | 2405:201:802c:7838:9813:2cbe:ba01:***:*** | ০৫ অক্টোবর ২০২৩ ০০:০৭524287
  • ++ কে বলার যে হ্যাঁ, অমিতাভের রাগী হিরো পর্বের সিনেমা নিয়ে তো বিবিধ মন্তব্য আছে। পপুলার সিনেমা ইচ্ছাপূরণের সিনেমা যেহেতু, ঐ পর্বেও দেখবেন সেটাও ঘটেছিল। ঐ। দিওয়ার ইত্যাদি সিনেমার আগে পরে জুড়ে কিন্তু নকশাল আন্দোলন যা ব্যর্থ, বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ - ভাঙচুর, এমার্জেন্সি ইত্যাদি। একই সাথে সিস্টেমের নিগড় আর তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ। আবার অর্থনীতির মধ্যেও স্মাগলিং কালো টাকা ইত্যাদি। তো অমিতাভের ঐসব সিনেমায় সিস্টেমের বিরুদ্ধে বিভিন্ন রকমের প্রতিবাদ ছিল, হেরে যাওয়া থেকে জিতে যাওয়াও ছিল, হেরে গিয়েও জিতে যাওয়া ছিল। বাস্তব জীবনে যা ঘটছে না বা অনেক কষ্ট করে অল্প ঘটছে, সিনেমাকরিয়েরা সমস্যার জায়গাগুলো ধরে ব্যক্তিমানুষকে জিতিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন। সিনেমাকে তো স্বপ্নের সাথে তুলনা করা হয়েছে, ফলে স্বপ্নে ইচ্ছাপূরণের মতই এইসব সিনেমাগুলো। পপুলার এইজন্যই পপুলার, সমস্যাগুলোকে ধরবে, সমাধানটা স্বপ্নের লেভেলে ঘটবে।

    আর শারুখ কাজলের বিয়ে নিয়ে, হ্যাঁ সেটাই আগের পোস্টে লিখলাম, পিছুটানসুদ্ধ ভারতীয়দের প্রগ্রেশনের গল্প। আরো একটু লাফ দিয়ে এগিয়ে ভাবতে পারেন এই যে পিছুটান রয়ে গেল ভারতীয় রীতিনীতি, পরিবারবোধ ইত্যাদির প্রতি তারই একটা সিম্পটম হয়ত আজকে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ভারতীয়দের অনেকের মধ্যে ডানপন্থী রাজনীতির প্রতি আগ্রহ ও সমর্থন তৈরী হওয়া।
  • r2h | 192.139.***.*** | ০৫ অক্টোবর ২০২৩ ০০:১৬524288
  • সাসবহুর কালেক্টিভ সাবকনশাস - সেটা যৌথ পরিবারের ভাঙনের সঙ্গে সঙ্গে সঙ্গে সঙ্গে অপসৃয়মান পিতৃতান্ত্রিক সনাতন রক্ষণশীলতা, এইসবও হতে পারে। হামলোগের ছুটকি মঝলি, মেঘে ঢাকা তারার নীতার থেকে তুলসী অনেক বেশি কমফর্টেবল, এতে তো সন্দেহ নেই।
  • r2h | 192.139.***.*** | ০৫ অক্টোবর ২০২৩ ০০:১৬524289
    • dc | ০৪ অক্টোবর ২০২৩ ২২:০৬
    • ...হতে পারে যে ইন্ডিয়ায় চিরকালই রামায়ন মহাভারত পপুলার, ইন্ডিয়ানরা চিরকালই ধর্মের দিকে ঝুঁকে থেকেছে...
     
    হ্যাঁ, তা তো বটেই, তাছাড়া রামায়ন মহাভারত অতি উপাদেয় মহাকাব্য, আজকের রিক রায়োর্ডান আদি গ্রিক নর্স পুরাণ ভাঙিয়ে লিখছেন, বা লর্ড অফ দ্য রিংস, গেম অফ থ্রোনস -ঐসবে আবেদন বিশ্বজোড়া। রামায়ন মহাভারত তো ওসবের থেকে কম উত্তেজক না, রাক্ষস খোক্কস রূপকথা, রাজনীতি। সাংস্কৃতিক উপাদান। 
    তবে এক রামায়ন হিট হয়ে ফর্মুলা তৈরি হয়ে গেল, তারপর কাছাখোলা ফ্যান্টাসি, তারপর আবার সাসবহু হিট হয়ে কাছাখোলা সাসবহুঃ)

    তাই হবে নিশ্চয়, যে ফর্মুলায় পয়সা লাগালে ফেরত আসবেই...
  • dc | 2401:4900:1f2b:6322:28a8:9f18:8845:***:*** | ০৫ অক্টোবর ২০২৩ ০০:৪১524290
  • পরিন্দা!! ভুলেই গেছিলাম। এই সিনেমাটা খুব ভালো লেগেছিল, মনে করিয়ে দেবার জন্য ধন্যবাদ। 
  • সিএস | 2405:201:802c:7838:9813:2cbe:ba01:***:*** | ০৫ অক্টোবর ২০২৩ ০০:৫০524291
  • ডিসির বক্তব্য ছিল ভারত এক খোঁজ বা সুরভির পরে রামায়ণ - মহাভারত পপুলার হয় কী করে ? সার্চ করে দেখলাম 'এক খোঁজ'্দেখানো হয়েছিল ১৯৮৭ তে, রামায়ন ১৯৮৮ -৮৯ জুড়ে, সুরভি ১৯৯০ তে। রামায়ণ পরে নয়, মোটামুটি তিনটি সিরিয়ালই একই সময়ে !
    প্রশ্নটা তাহলে কী সরল হয় না জটিল হয় ?

    সুরভিকে আপাতত বাদ রাখি।

    রামায়ণ নিয়ে তো বলাই হয়েছে যে এই সিরিয়াল চালু করা রাজীব গান্ধীর রাজনীতির অংশ ছিল। একই সাথে অযোধ্যায় তালা খোলা, উল্টোদিকে শাহবানু মামলা নিয়ে অন্যপক্ষাকে খুশী রাখা, দুই দিক রেখে চলার সাথে রামায়ণ টিভিতে চালু করা যুক্ত ছিল। হিন্দুপক্ষকে খুশী রাখার এই রাজনীতিটা অবশ্য ১৯৮০ - ৮৪ ইন্দিরা পর্বেও ছিল, আর এস এসের সাথে যোগাযোগ করা হচ্ছিল, ভেতরে ভেতরে। এবং এও ঘটেছিল যে প্রায় পুরো ১৯৮০ র দশক জুড়েই ইউপিতে বিভিন্ন জায়গায় দাঙ্গা, এসবই কংগ্রেসের রাজনীতির সঙ্গে মিলিয়ে দেখা যায়। আবার এই ১৯৮০ র দশক জুড়েই কিন্তু কংগ্রেসের ক্রমশঃ দুর্বল হওয়া, ক্রমশঃ ভাঙণ পরিস্থিতি তৈরী হওয়া, সেই দিক সামলাবার জন্যই ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করে ভেসে থাকার চেষ্টা। কিন্তু আজ হয়ত বোঝা যায়, ক্রমশঃ উত্তর ভারত জুড়ে বিজেপির শক্তিবৃদ্ধির পরে, যে কং যে লাভ করবে ভেবেছিল সেসব বিজেপির আর তাদের সংগঠনরা নিয়ে বেরিয়ে গেছিল, কংগ্রেসের মাটি হারিয়ে ফেলা হয়ত তখনই ঘটে গেছিল। এখন কথা হল, লোকে কেন দেখে তারও আগে এটা ঘটে যে যারা রামায়ণ চালু করতে দিয়েছিল তারা বুঝতে পেরেছিল যে লোকে এটা দেখবে। মিথলজি আর ধর্মনির্ভর দৃশ্য টিভির পর্দা জুড়ে দেখার জন্য রাস্তা ফাঁকা করে লোকজনের টিভির সামনে বসে পড়া এ শুধু ভাল সিরিয়াল দেখার লোভে নয়, সেই সময়ের রাজনীতি আর সমাজ পরিস্থিতির সাথে যুক্ত করে বোঝা যায়। এটা ঠিক এসথেটিকের ব্যাপার নয়, রাজনৈতিক ফর্মেশন যা বিজেপি ক্রমশঃ টেনে নেবে তার সাথে যুক্ত করে দেখা যায়।

    মোটামুটি একই সাথে ভারত এক খোঁজ, তাকে মিলিয়ে দেখতে পারেন কংগ্রেসের ভেতরের নেহেরুপন্থীদের চিন্তার সাথে যুক্ত করে, সেই পন্থীদের মত যারা কংগ্রেসের বাইরে ছিল, সাধারণ লোক তাদের ইচ্ছর সাথে যুক্ত করে। দুটোই আবার কিন্তু কংগ্রেসের আর একদিকের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত যা সমদৃষ্টিতে ভারতের অতীত ও ইতিহাসকে বোঝার চেষ্টা করে, ধর্মের দৃষ্টিতে নয়।
  • dc | 2401:4900:1f2b:6322:5d18:edd1:1223:***:*** | ০৫ অক্টোবর ২০২৩ ০১:০৬524293
  • আচ্ছা, বছরগুলো মনে ছিল না, সেই কোন ছোটবেলার ঘটনা সব :-)
     
    রাজীব গান্ধীর সফট হিন্দুত্ব ব্যাপারটার সাথে একমত। সুরভি বা ভারত এক খোঁজ, এমনকি সেই সময়ে দূরদর্শনে যে দেখানো হতো স্টার ট্রেক বা কসমস, সেসব হয়তো সেকুলার ভারত তৈরি করার একটা দুর্বল প্রচেষ্টা ছিল। রামায়ন মহাভারতের তোড়ে সেসব ভেসে যায়, তার ফায়দা ওঠায় আরেসেস-বিজেপি। 
  • পাতা :
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লাজুক না হয়ে মতামত দিন