এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  আলোচনা  দর্শন

  • পশ্চিমা দর্শনের গপ্পোগাছা — মাইলেশীয় ঘরানা

    প্যালারাম লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | দর্শন | ০৩ নভেম্বর ২০২৪ | ২৭২ বার পঠিত | রেটিং ৫ (৪ জন)
  • The Death of Socrates - Jacques-Louis David , সূত্র


    সক্রেটিসের আগে

    মাইলেশীয় ঘরানা


    ছাত্রদের জন্যে দর্শনের যত ইতিহাস লেখা হয়, সর্বত্রই উল্লেখ থাকে, যে, থেলিজ়-এর থেকেই দর্শনের শুরু। সেই থেলিজ়, যিনি বলেছিলেন – সবকিছু নাকি জল দিয়ে তৈরি। দর্শনের যেসব নতুন পড়ুয়া পাঠ্যক্রমকে যথাযথ শ্রদ্ধা করার চেষ্টা করছে (খুব বেশি চেষ্টা করছে না হয়তো), এ ধরনের বক্তব্য তাদের পক্ষে খুব একটা উৎসাহব্যঞ্জক নয়। তবে থেলিজ়কে সম্মান করার যথেষ্ট কারণ আছে—‘দার্শনিক’ শব্দটির আধুনিক অর্থে না হলেও, বিজ্ঞানের লোক হিসেবে তো বটেই!

    থেলিজ়ের নিবাস ছিল আদি এশিয়া মাইনরের মাইলেটাস নগরে; এ শহরের বাসিন্দাদের এক বড় অংশ ছিল ক্রীতদাস আর বাদবাকি স্বাধীন জনগোষ্ঠীর দু-ভাগ – ধনী ও গরিবদের মধ্যে তিক্ত শ্রেণীসংগ্রাম লেগেই থাকতো। “মাইলেটাস শহরের সংগ্রামে প্রথমে জেতে সাধারণ মানুষ, জিতে তারা অভিজাতদের স্ত্রী-সন্তানদের হত্যা করে। এরপর অভিজাতরা বিজয়ী হয়ে শত্রুদের জীবন্ত দাহ করে; শহরের উন্মুক্ত অঞ্চলগুলিতে তখন আলো দিত জ্যান্ত মশাল।” [ক] থেলিজ়ের সমসাময়িক অধিকাংশ এশিয়া মাইনরের শহরেই তখন মোটামুটি একই অবস্থা ছিল।

    আয়োনিয়ার অন্যান্য বাণিজ্য-নগরীর মতোই, খ্রি.পূ. সপ্তম আর দশম শতকে মাইলেটাসে কিছু গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক ও রাজনৈতিক উন্নয়ন হয়েছিল। শুরুতে এক অভিজাত জমিদারগোষ্ঠীর হাতে রাজনৈতিক ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত থাকলেও, ধীরে ধীরে তা ধনতান্ত্রিক বণিকগোষ্ঠীর হাতে চলে যায়। অবশেষে তা যায় গণতান্ত্রিক দলের সমর্থনে উঠে আসা এক একনায়কের হাতে (এমনটা সে সময়ে আকছার হতো)। গ্রিসের উপকূলের শহরগুলির পূর্বের প্রতিবেশী ছিল লিডিয়া; ৬০৬ খ্রি.পূ.-তে নিনাভা শহরের পতন অবধি এদের সঙ্গে লিডিয়ার সম্পর্ক বন্ধুত্বপূর্ণই ছিল। নিনাভার পতনের ফলে লিডিয়া নিজের পশ্চিমের শহরগুলির দিকে মনোযোগ দেওয়ার অবকাশ পায়, যদিও মাইলেটাস অধিকাংশ সময়েই লিডিয়ার সঙ্গে, বিশেষ করে লিডিয়ার শেষ রাজা ক্রিসাস-এর (Croesus, ৫৪৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দে সাইরাস এঁকে পরাজিত করেন) সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্ক বজায় রাখতে পেরেছিল।

    মিশরের রাজা গ্রিক ভাড়াটে সৈন্যদের ওপর নির্ভর করতেন, কিছু শহরের সঙ্গে গ্রিক বাণিজ্যের রাস্তাও খুলে দিয়েছিলেন, তাই মিশরের সঙ্গেও মাইলেটাসের এক গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। মিশরের প্রথম গ্রিক উপনিবেশ ছিল মাইলেশীয় সৈন্যদল-অধিকৃত এক দুর্গ; তবে ৬১০ থেকে ৫৬০ খ্রি.পূ. পর্যন্ত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পত্তনি ছিল ডাফনি (Daphnae, হিব্রু/ফিনিশীয় Tahpanhes/তাহপেনেস)। নেবুকাদনেজ়ার-এর (রাসেলের বানান Nebuchadrezzar) থেকে পালিয়ে জেরেমায়া ও অন্য ইহুদি উদ্বাস্তুরা এখানে আশ্রয় নিয়েছিলেন [খ], কিন্তু মিশর যেভাবে গ্রিকদের প্রাভাবিত করেছিল, ইহুদিরা সেভাবে করেনি, আর অবিশ্বাসী আয়োনীয়দের দেখে জেরেমায়া আতঙ্ক ব্যতীত আর কিছু বোধ করেছিলেন – এমন ভাবার কোনো কারণ নেই।

    আমরা দেখেছি, থেলিজ়-এর জীবৎকালের সময় নিরূপণে সবথেকে ভালো প্রমাণ হল, ৫৮৫ খ্রি.পূ.-এর (জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের মতে) এক সূর্যগ্রহণ, থেলিজ় যার ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন। অন্যান্য প্রমাণ যা পাওয়া গেছে, সেগুলিও একই সময়কালকে নির্দেশ করে। সূর্যগ্রহণের ভবিষ্যদ্বাণী থেকে যে তাঁর অসামান্য ধীশক্তির পরিচয় পাওয়া যায়—এমন কিন্তু নয়। মাইলেটাসের কূটনৈতিক মিত্র ছিল লিডিয়া আর লিডিয়ার সঙ্গে সাংস্কৃতিক বিনিময় ছিল ব্যাবিলনিয়ার; ব্যাবিলনের জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা অনেক আগেই আবিষ্কার করেছিলেন, যে, প্রায় উনিশ বছর দীর্ঘ এক কালচক্র-পরপর গ্রহণ হয়। তাঁরা প্রায় নিখুঁতভাবে চন্দ্রগ্রহণের আন্দাজ দিতে পারলেও, সূর্যগ্রহণের ক্ষেত্রে সমস্যায় পড়েছিলেন, কারণ কোনো কোনো জায়গা থেকে গ্রহণ দেখা যায়, অন্য জায়গাগুলি থেকে যায় না। স্বভাবতই, তাঁরা শুধু এটুকুই বলতে পারতেন, যে, কোন কোন দিনে গ্রহণের সন্ধানে আকাশে চোখ রাখা লাভজনক, আর সম্ভবত থেলিজ়ও সেটুকুই জানতেন। তিনি বা ব্যাবিলনীয় জ্যোতির্বিদ – কেউই জানতেন না, যে এই চক্রের কারণ ঠিক কী।

    কথিত আছে, যে, থেলিজ় মিশর ভ্রমণ করেছিলেন আর সেখান থেকে এনে তিনিই গ্রিকদের সঙ্গে প্রথম জ্যামিতির পরিচয় করান। মিশরীয়রা জ্যামিতি বলতে যা বুঝতো, তা আসলে কিছু চলতি পদ্ধতি (Rule of thumb)-র সংগ্রহ। পরবর্তীকালের গ্রিকদের আবিষ্কার করা অবরোহী যুক্তির (deductive logic) মাধ্যমে জ্যামিতির ধারণা থেলিজ়ের ছিল – এমন ভাবার কোনো কারণ নেই। সম্ভবত তিনি সমুদ্রে স্থিত কোনো জাহাজের দূরত্ব মাপার জন্যে কীভাবে ডাঙার দুই জায়গা থেকে পর্যবেক্ষণের ওপর নির্ভর করতে হয় আর কীভাবে ছায়ার দৈর্ঘ্য থেকে পিরামিডের উচ্চতার ধারণা পাওয়া যায় – আবিষ্কার করেছিলেন। আরও অনেক জ্যামিতিক উপপাদ্যের জনক হিসেবে তাঁর নাম করা হয়, সম্ভবত ভুল করেই।



    বেইরুটের জাতীয় সংরক্ষণাগারে গ্রিক সপ্তর্ষির মোজ়াইক। পশ্চিমে, অর্থাৎ ঠিক ঘড়ির যেখানে ৯, সেখানে থেলিজ়। (সূত্র: উইকি)


    গ্রিক সপ্তর্ষির (Seven Wise Men) একজন হলেন থেলিজ়। সেই সপ্তর্ষি, যাঁদের প্রত্যেকে এক-একটি গভীর আপ্তবাক্যের জন্যে বিখ্যাত। থেলিজ়ের কপালে যে বাক্যটি জুটেছে, তা হল, ‘জলই সেরা’ – যা আসলে সত্য নয়। অ্যারিস্টটলের মতে, থেলিজ়ের ধারণা ছিল জলই সেই আদি বস্তু, যা থেকে বাকি সব তৈরি, আর ওঁর বদ্ধমূল ধারণা ছিল, যে পৃথিবী জলের ওপরেই ভাসছে। অ্যারিস্টটল আরও বলেছেন, যে, থেলিজ় নাকি মনে করতেন চুম্বকের আত্মা থাকে, যার সাহায্যে সে লোহাকে নড়াতে পারে; অতএব, প্রতিটি বস্তুর মধ্যেই কোনো না কোনো দেবতা বর্তমান [গ]

    সবকিছু জল দিয়ে তৈরি – এই বক্তব্যটিকে একটি বৈজ্ঞানিক প্রকল্প বা অনুমান (Hypothesis) হিসেবে দেখা উচিত, আর প্রকল্প হিসেবে এটি মোটেই হেলাফেলার নয়। মাত্র কুড়ি বছর আগেও চলতি মত ছিল, যে, সবকিছু নাকি হাইড্রোজেন দিয়ে তৈরি, যা কিনা জলের দুই-তৃতীয়াংশ [১]। গ্রিকরা তাদের প্রকল্পগুলির নির্মাণে তাড়াহুড়ো করতো ঠিকই, কিন্তু মাইলেশীয় ঘরানা অন্তত প্রকল্পগুলির পরীক্ষামূলক সত্যতা বিচারে আগ্রহী ছিল। সন্তোষজনক কোনো ধারণা তৈরি করতে যা দরকার, থেলিজ়ের সম্পর্কে জানা তথ্য সেই তুলনায় খুবই কম, কিন্তু মাইলেটাস-এ তাঁর উত্তরসূরীদের সম্পর্কে আমরা অনেকটাই জানি—তাই ধরে নেওয়া যেতেই পারে, তাঁদের জগতবীক্ষার কিছুটা অন্তত থেলিজ়ের উত্তরাধিকার। তাঁর বিজ্ঞান আর দর্শন – দুই-ই অপরিণত হলেও, তা নিঃসন্দেহে ভবিষ্যত চিন্তন তথা পর্যবেক্ষণের অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছিল।



    রোমান গ্রামের ধ্বংসাবশেষে অলিভ-ঘানি। (সূত্র: উইকি)


    থেলিজ়কে নিয়ে কিংবদন্তীর অভাব না থাকলেও, এখানে উল্লিখিত তথ্যগুলির বাইরে আর কিছু তাঁর সম্পর্কে নিশ্চিত জানা আছে বলে আমার মনে হয় না। এর মধ্যে কিছু গল্প বেশ উপাদেয়, যেমন ধরুন অ্যারিস্টটল তাঁর ‘রাজনীতি’ বইয়ে (Book 1, 1259a) যার উল্লেখ করেছেন: “তাঁর দারিদ্র্যের কারণে তিনি সমাজে নিন্দার মুখে পড়েছিলেন, কারণ, তাঁর দারিদ্র্যই নাকি প্রমাণ করতো যে দর্শন কোনো কাজের জিনিস নয়। কথিত আছে, নিজের জ্যোতির্বিদ্যার জ্ঞান কাজে লাগিয়ে কোনো এক শীতকালে তিনি নাকি বুঝতে পেরেছিলেন যে পরের বছর অলিভের ফলন খুব ভালো হবে। অতএব, নিজের সামান্য জমা টাকাপয়সা অগ্রিম জমা দিয়ে তিনি খিওস (Chios) ও মাইলেটাস-এর সমস্ত অলিভ-ঘানি ভাড়া নিয়ে রাখলেন। শীতের অসময়ে তাঁর প্রতিপক্ষ হিসেবে কেউ তেমন নিলামেও দাঁড়ালো না, তাই বেশ কম দামেই ভাড়া পেলেন থেলিজ়। পরবর্তী ফলনের সময় যখন এল, একসঙ্গে সব ঘানির চাহিদা তৈরি হল, থেলিজ় নিজের ইচ্ছেমতো দামে সেগুলি অন্যদের ব্যবহার করতে দিলেন, আর এভাবে বেশ অনেক অর্থই উপার্জন করলেন। এইভাবে দুনিয়াকে দেখালেন, যে দার্শনিকরা চাইলেই ধনবান হতে পারেন, নেহাত তাঁদের উচ্চাশার বিষয় একেবারেই অন্য গোত্রের।”

    মাইলেশীয় ঘরানার দ্বিতীয় দার্শনিক, আনাক্সিমান্ডর (Anaximander), থেলিজ়ের থেকে অনেক বেশি আকর্ষণীয়। তাঁর সময়কালের সন-তারিখ ভালো জানা না থাকলেও, ৫৪৬ খ্রি.পূ.-তে তাঁর বয়স নাকি চৌষট্টি বছর ছিল [২] – যদিও এই তথ্যটিকে সত্য ভাবার কোনো কারণ নেই। তাঁর ধারণা ছিল, সকল বস্তুই একটিই আদি উপাদান দিয়ে তৈরি, যদিও তা জল (যেমন থেলিজ় ভাবতেন) বা আমাদের জানা অন্য কোনো পদার্থ নয়। পদার্থটি অনাদি, অনন্ত ও অক্ষয়, এবং তা “সমস্ত জগতগুলিকে ঘিরে রেখেছে”—কারণ তাঁর মতে আমাদের এই জগত আসলে অনেক জগতের একটি। এই আদি পদার্থই অন্য সকল চেনাজানা পদার্থে আর সেগুলি আবার, একে অন্যতে পরিবর্তিত হয়। এই সম্পর্কে তাঁর এক উল্লেখযোগ্য মন্তব্য:
    “যা থেকে বস্তুর উদ্ভব, তাতেই তার অনিবার্য লয়, কারণ, সময়ের নির্ধারিত ক্রমানুসারে, তারা পরস্পরের প্রতি কৃত অন্যায়ের যথাক্রমে প্রতিশোধ ও প্রায়শ্চিত্ত (ন্যায়বিচার) সাধন করে।”

    ‘ন্যায়বিচার’, তা সে মানবিকই হোক বা মহাজাগতিক, গ্রিক ধর্ম ও দর্শনের ঠিক কত বড় অংশ ছিল, তার ধারণা করা এক আধুনিক মানুষের পক্ষে মোটেই সহজ নয়; ‘ন্যায়বিচার’ শব্দটি মূল শব্দের অর্থ প্রায় কিছুই প্রকাশ করতে পারে না, কিন্তু এর থেকে ভালো অন্য কোনো শব্দ পাওয়াও মুশকিল। আনাক্সিমান্ডর সম্ভবত যা বোঝাতে চাইছেন, তা এরকম: দুনিয়ায় তেজ (আগুন), ক্ষিতি (মাটি) আর অপ (জল)-এর এক বিশেষ অনুপাত পূর্বনির্ধারিত, কিন্তু প্রতিটি মৌল (যাদের প্রত্যেকটিকে আবার দেবতা হিসেবেও ভাবা হচ্ছে) অবিরত নিজ-সাম্রাজ্য আরও বাড়াতে ব্যস্ত। কিন্তু কোনো এক প্রাকৃতিক নিয়ম ক্রমাগত এই অসাম্য দূর করে চলেছে; যেখানে কিছুক্ষণ আগেই আগুন জ্বলেছে, সেখানে পড়ে থাকে ছাই, অর্থাৎ ক্ষিতি। এই চিরন্তন, নির্ধারিত সীমা লঙ্ঘন না করার ‘ন্যায়’-এর ধারণা গ্রিক বিশ্বাসের এক অন্যতম প্রধান স্তম্ভ। মানবের ওপর ন্যস্ত এই ‘ন্যায়’, দেবতাদের ওপরেও সমানভাবে প্রযোজ্য, অথচ এই সর্বোচ্চ শক্তিটি নিরাকার, অর্থাৎ কোনো চেতনাযুক্ত, সর্বোচ্চ পদাধিকারী দেবতা নন।

    এই আদি বস্তুটি যে জল বা অন্য কোনো জানা জিনিস নয়, তার প্রমাণ হিসেবে আনাক্সিমান্ডরের একখানা যুক্তি ছিল। এটি যদি কোনো জানা বস্তু হত, তবে তা বাকিদের হারিয়ে বিজয় অর্জন করতো। অ্যারিস্টটলের থেকে জানা যায়, তিনি নাকি বলতেন যে এই জানা বস্তুগুলি একে অপরের বিরোধী। বাতাস – ঠান্ডা, জল – ভেজা আর আগুন – গরম। “অতএব, এদের একজনও যদি অসীম হয়, বাকিগুলির এতদিনে আর কোনো অস্তিত্ব থাকতো না”। সুতরাং, এই মহাজাগতিক যুদ্ধে আদি-বস্তুটি নিশ্চয়ই নিরপেক্ষ।



    থেলিজ় মনে করতেন পৃথিবী এক মহা-সাগরে ভাসমান, আনাক্সিমান্ডরের মতে পৃথিবী অসীমে ভাসমান। থেলিজ় ভাবতেন যেকোনো বস্তু পৃথিবীর দিকে ‘উপর থেকে পড়ে’ (এই উপর বা নীচ নিশ্চিত করতো সেই সমুদ্র-তল), আনাক্সিমান্ডর পৃথিবীকে ব্রহ্মাণ্ডের কেন্দ্র হিসেবে দেখতেন এবং বস্তু যেকোনো দিক থেকেই পড়তে পারে বলে মনে করতেন। সৃষ্টিতত্ত্ব বা মহাবিশ্বের চর্চায় (Cosmology, কসমোলজি) এ এক যুগান্তকারী ধারণা ছিল সে সময়ে। (সূত্র: উইকি)


    এছাড়াও, এক আদি গতিময়তাও ছিল, যার থেকে সমস্ত জগতগুলির সৃষ্টি। খ্রিস্টান বা ইহুদি ধর্মের মতো জগতগুলিকে তৈরি করা হয়নি, তারা বিবর্তিত হয়েছিল। প্রাণীজগতেও এই বিবর্তনের অস্তিত্ব ছিল। ভেজা পদার্থ সূর্যের তাপে শুকিয়ে তার থেকেই প্রাণীদের উৎপত্তি। অন্য সব প্রাণীর মতো মানুষও জলচরদের থেকে বিবর্তিত। তবে অন্যরা যে ধরনের মাছ থেকে এসেছে, মানুষের পূর্বসুরীরা নিশ্চয়ই তার থেকে আলাদা, কারণ, মানব-শৈশব অন্যদের থেকে দীর্ঘতর, তাই জলের মধ্যে তার পক্ষে বর্তমানের মতো বেঁচে থাকা সম্ভব ছিল না [৩]

    আনাক্সিমান্ডরের বৈজ্ঞানিক কৌতূহলের অভাব ছিল না। তিনিই নাকি প্রথম মানচিত্র বানিয়েছিলেন। তাঁর ধারণা ছিল পৃথিবীর আকৃতি নল বা চোঙ-এর মতো। তাঁকে নাকি অনেকসময় বলতে শোনা গেছে, যে সূর্য আকারে পৃথিবীর সমান বা ২৭-২৮ গুণ বড়ো।
    যখনই তিনি কোনো নিজস্ব মত প্রকাশ করেছেন, তখন তিনি বিজ্ঞানমনস্ক ও যুক্তিবাদী।



    আনাক্সিমান্ডরের আঁকা পৃথিবীর মানচিত্রের সম্ভাব্য চেহারা। (সূত্র: উইকি)


    মাইলেশীয় ত্রিমূর্তির শেষজন, আনাক্সিমেনিস (Anaximenes), আনাক্সিমান্ডরের মতো আকর্ষণীয় চরিত্র না হলেও, বেশ গুরুত্বপূর্ণ কিছু অগ্রগতির জন্যে দায়ী। তাঁর সময়কাল সম্পর্কে আমাদের ধারণা বেশ অস্বচ্ছ। যা আমরা নিশ্চিত জানি – তাঁর উত্থান আনাক্সিমান্ডর-এর পরে, আর অবশ্যই ৪৯৪ খ্রি.পূ.-এর আগে, কারণ সেই বছর আয়োনীয় বিদ্রোহ দমন করতে গিয়ে পারসিকরা মাইলেটাস ধ্বংস করে।

    তাঁর মতে, তাঁর পূর্বসূরী-বর্ণিত আদি বস্তুটি আসলে বায়ু [৪]। আত্মা, আগুন – দুই-ই আসলে বায়ু। বাতাস সংকুচিত হয়ে প্রথমে জল, তারপর আরও সংকোচনের মাধ্যমে মাটি আর তারপর পাথর তৈরি করে। এই তত্ত্বটি প্রথম সকল পদার্থের মধ্যে পার্থক্যের এক পরিমাণগত ব্যাখ্যা দেয়, একটিই মাত্র মাপকাঠির সাহায্যে – সংকোচনের মাত্রা।

    তাঁর ধারণা ছিল পৃথিবীর আকৃতি এক গোল-টেবিলের মতো, যার চারপাশে ঘিরে রয়েছে বাতাস: “আমাদের আত্মা, যা আসলে বায়ু, যেমন আমাদের শরীরকে ধরে রাখে, তেমনই শ্বাস ও বায়ু গোটা জগতকে ঘিরে রেখেছে”। যেন এই জগতও শ্বসনকার্যে লিপ্ত।

    প্রাচীন পৃথিবীতে আনাক্সিমেনিস অপেক্ষাকৃত বেশি প্রশংসিত ছিলেন, যদিও যেকোনো বর্তমান মূল্যায়নের ফলাফল আসলে উলটো। পিথাগোরাস ও তার পরবর্তী বহু জল্পনায় তাঁর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ছিল। পিথাগোরীয়রা পৃথিবীর গোলাকৃতি আবিষ্কার করেন, কিন্তু পরমাণুবাদীরা আনাক্সিমেনিসের অনুগামী ছিলেন এবং ভাবতেন যে পৃথিবীর আকৃতি চাকতির মতো।

    মাইলেশীয় ঘরানার গুরুত্ব – তাদের অর্জন নয়, তাদের প্রচেষ্টা। গ্রিক চিন্তনের সঙ্গে ব্যবিলোনিয়া এবং মিশরের যোগাযোগের ফলে এই ঘরানার উৎপত্তি। মাইলেটাস ছিল এক ধনী বাণিজ্যনগরী, যেখানে বহু দেশের সঙ্গে সহবাসের ফলে আদিম কুসংস্কার আর অন্ধবিশ্বাসের প্রভাব অনেক কমে আসে। পঞ্চম শতকের শুরুতে দারিয়ুসের হাতে পরাজিত হওয়ার আগে পর্যন্ত আয়োনিয়া ছিল হেলেনীয় জগতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। দিওনিসুস ও অর্ফিয়ুসের ধর্মীয় আন্দোলনের ছোঁয়া তার গায়ে প্রায় লাগেনি বললেই চলে; যদিও মাইলেটাসের ধর্ম অলিম্পিয়া-সম্পৃক্ত, তবু এই ধর্মকে বিশেষ পাত্তা দেওয়া হত না বলেই মনে হয়। থেলিজ়, আনাক্সিমান্ডর আর আনাক্সিমেনিস-এর ধারণাগুলিকে বৈজ্ঞানিক প্রকল্প/ অনুমান হিসেবে ভাবাই যায়, যার ওপর নীতিবোধ আর মানবিক চাহিদার প্রভাব খুব কমই চোখে পড়ে। তাঁরা খুব ভালো প্রশ্ন করতেন, আর তাঁদের উৎসাহ ভবিষ্যতের অনুসন্ধিৎসুদের সাহায্য করেছিল।

    দক্ষিণ ইতালির গ্রিক নগরীগুলির সঙ্গে যুক্ত গ্রিক দর্শনের পরের পর্যায়টি অপেক্ষাকৃত বেশি ধর্মমুখী—বিশেষ করে অর্ফীয়—ছিল, কিছুক্ষেত্রে বেশি আকর্ষণীয় এবং অর্জনে প্রশংসনীয় হলেও, তাদের দর্শনের ভিত্তি মাইলেশীয়দের থেকে অনেক কম বিজ্ঞানমনস্ক ছিল।


    চলবে... (এর পরের পর্ব: পিথাগোরাস)


    বার্ট্রান্ড রাসেল
    A History of Western Philosophy বইটির দ্বিতীয় পরিচ্ছেদের প্যালারাম-কৃত অনুবাদ



    টীকা-টিপ্পনীর ব্র্যাকেটের মধ্যে অক্ষর থাকলে তা রাসেলের আসল ফুটনোট, সংখ্যা থাকলে তা অনুবাদকের পাকামো। ফুটনোট কণ্টকিত লেখাটির জন্যে ক্ষমাপ্রার্থী, তবে ছবি-ছাবা দিয়ে সেই দোষ স্খালনের একটা চেষ্টা করা হয়েছে।




    [ক] Rostovtzev-এর History of the Ancient World বইটির প্রথম খণ্ডের ২০৪ পৃষ্ঠা দেখুন।
    [খ] ওল্ড টেস্টামেন্ট, বুক অব জেরেমায়া, ৪৩:৫
    [গ] Burnet (Early Greek Philosophy, পৃষ্ঠা ৫১) এর সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।



    [১] Prout’s hypothesis: বর্তমান বইটি বেরিয়েছে ১৯৪৬ সালে। অতএব রাসেল ১৯০০-১৯২০ সনের কথা বলছেন। ১৯১৭-য় রাদারফোর্ড যখন তাঁর বিখ্যাত পরীক্ষায় নাইট্রোজেন অণুর দিকে আলফা-কণা ছুঁড়ে দিয়ে হাইড্রোজেন-এর নিউক্লিয়াস (পরে যার নাম হবে প্রোটন) বের করে আনছেন, তখন তাঁর অন্যতম একটি অনুপ্রেরণা ঊনবিংশ শতকের শুরুর দিকের এই প্রকল্পটিও, যার বক্তব্য – মৌলের আণবিক গুরুত্বগুলি মোটামুটি হাইড্রোজেন-এর আণবিক গুরুত্বের পূর্ণসংখ্যার গুণিতক। এই হিসেবে যা গোলমাল ছিল, তা বর্তমান বইটি লেখার আগেই নিউট্রন আবিষ্কারের মাধ্যমে সমাধান হয়।
    [২] খ্রি.পূ. দ্বিতীয় শতকের এথেন্সের ব্যাকরণবিদ আপোলোদরুস-এর লেখা থেকে জানা যায়, তিনি নাকি ৫৪৬-৫৪৭ খ্রি.পূ.-এর ৫৮-তম অলিম্পিয়াডের দ্বিতীয় বছরে বেঁচে ছিলেন, এবং এর কিছু পরেই মারা যান।
    [৩] রাসেলের এই বাক্যদুটি একটু অস্পষ্ট। আমরা বরং তৃতীয় শতকের রোমান লেখক সেনসোরিয়াস-এর লেখার অনুবাদ একবার দেখি: “মাইলেটাস নগরের আনাক্সিমান্ডর মনে করতেন, যে, উষ্ণ জল আর মাটি থেকে মাছ বা মাছের মতো কিছু প্রাণীর উদ্ভব হয়েছিল, যাদের ভিতরে যৌবনোদ্গমের আগে পর্যন্ত মানব-ভ্রূণ বড়ো হত। তারপর এই প্রাণীগুলি ফেটে গিয়ে পূর্ণবয়স্ক মানুষ বেরিয়ে আসতো, যারা নিজেদের প্রাণরক্ষার্থে খাদ্যসংগ্রহ করতে সক্ষম।”
    [৪] গ্রিক দর্শনে অবরোহী যুক্তির রমরমা। এতে এক বা একগুচ্ছ প্রাথমিক নিয়ম ধরে নিয়ে, তা থেকে পরেরগুলো তৈরি করা হয়। উদাহরণ – আমাদের ছোটবেলার ইউক্লিডের জ্যামিতি। কিছুক্ষেত্রে এর উপযোগিতা ভালো বলেই হয়তো সব বিষয়েই এই ‘আদি নিয়ম’ (First Principle) বা ‘আদি বস্তু’-র (archē, আর্খে) ধারণার প্রয়োগ বড়ো বেশি। মজার কথা, গ্রিক বাইবেল (ওল্ড টেস্টামেন্ট) শুরুই হচ্ছে ‘Ἐν ἀρχῇ ἦν ὁ λόγος…’ (‘আদি-তে ছিল শব্দ…’) দিয়ে।


    চলবে... (এর পরের পর্ব: পিথাগোরাস)
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • আলোচনা | ০৩ নভেম্বর ২০২৪ | ২৭২ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Ranjan Roy | ০৩ নভেম্বর ২০২৪ ১৫:৩৩539076
  • অনেকদিন অপেক্ষায় ছিলাম।
  • . | ০৩ নভেম্বর ২০২৪ ২১:০৮539084
  • সাংঘাতিক মনোজ্ঞ রচনা। অ সা ধা র ণ।
  • যদুবাবু | ০৪ নভেম্বর ২০২৪ ০৭:২৭539091
  • অসাধারণ অনুবাদ, যথারীতি। সত্যিই এই সিরিজের অপেক্ষায় থাকি। 

    থেলিজ়ের কথা হিস্ট্রি অফ ম্যাথেমেটিক্সের বইতে পড়েছি। গ্রিক ম্যাথেমটিক্সের, বিশেষ করে জ্যামিতির একেবারে শুরুর দিকের মানুষ হিসেবে। আমরাও অল্প বয়সে যে সব সম্পাদ্য-উপপাদ্য গাঁতিয়ে বড়ো হই, তার কতগুলো থেলিজ়কেই অ্যাট্রিবিউট করা হয় বা হ'ত। যেমন, দুটি সরল রেখা পরস্পর ছেদ করলে বিপ্রতীপ কোণ দুটি সমান হবে। লক্ষণীয় যে, ঐ গ্রিক সপ্তর্ষির মধ্যে একমাত্র গণিতজ্ঞ-দার্শনিক থেলিজ়। বার্টন বলছেন, 'Thales is supposed to have coined the maxim “Know thyself,” and when asked what was the strangest thing he had ever seen, he answered “An aged tyrant.”'

    বার্টন এও বলছেন যে একাধিক বহুল-প্রচলিত গপ্পোর নায়ক হিসেবেও থেলিজ়ের নামেই বিল কাটা হয়। এই যেমন, প্লেটো বলছেন যে থেলিজ় নাকি একদিন রাত্রে চন্দ্রালোকিত আকাশের দিকে তাকিয়ে মুগ্ধ হয়ে তারা দেখতে দেখতে গর্তে পড়ে যান। ওঁর সঙ্গে যিনি ছিলেন, তিনি নাকি হ্যাটা দেন, “How can you tell what is going on in the sky when you can’t see what is lying at your feet?” ... ভেবে দ্যাখো কী নিদারুণ সত্যি! 

    আচ্ছা, এই থেলিজ় বা ওঁর সময়ে গ্রিক দার্শনিকরা যে ঈজ়িপ্সীয় দর্শন বা অঙ্কের/জ্যামিতির ধারণা থেকে অনুপ্রাণিত হতেন, ওরা কি ঈজিপ্সীয় ক্রিয়েশন মিথের দ্বারাও অনুপ্রাণিত ছিলেন? "সবকিছুই জল থেকে তৈরি"র পেছনে হয়তো সেইসব মিথের কোনো ভূমিকা আছে?  

    যাই হোক, লিখতে থাকো। আরও বেশি করে লেখো। মাসে একটা করে চাই। :D 

     
  • &/ | 151.14.***.*** | ০৪ নভেম্বর ২০২৪ ০৭:৪৯539092
  • খুব ভালো লেখা। অপেক্ষা সার্থক।
    মিলেটাস শুনলেই বন্ধুর কবিতা মনে পড়ে যায়, বিখ্যাত বনলতায় অনুপ্রাণিত হয়ে সে লিখেছিল, "চুল তার কবেকার অন্ধকার হেলিকার ন্যাসাসের নিশা / মুখ তার মিলেটাসের কারুকার্য" ঃ-)
  • dc | 2402:e280:2141:1e8:a9f7:fa46:3a1e:***:*** | ০৪ নভেম্বর ২০২৪ ০৮:২৯539094
  • এই পর্বটা পড়লাম, আগের পর্বগুলোও চট করে চোখ বুলিয়ে নিলাম। খুব ভালো অনুবাদ হচ্ছে, রাসেলকে অনুবাদ করতেও দক্ষতা লাগে, সেজন্য প্যালারামকে হ্যাটস অফ। 
     
    থেলিজ ও অন্যান্য আর্লি ফিলোজফারদের একটা হাইপোথিসিস আছে, আপনারা জানেন হয়তো। জার্মান ফিলোজফার কার্ল জ্যাস্পার্স এর "অ্যাক্সিয়াল এজ" হাইপোথিসিস অনুযায়ীঃ  
     
    It would seem that this axis of history is to be found in the period of about 500 b.c., in the spiritual process that occurred between 800 and 200 b.c. It is there that we meet with the most deeply cut dividing line in history. Man, as we know him today, came into being. For short, we may style this the “Axial Period.”

    The most extraordinary events are concentrated in this period. Confucius and Lao-tse were living in China, and all the directions of Chinese philosophy came into being, including those of Mo-ti, Chuang-tse, Lieh-tsu, and a host of others; India produced the Upanishads and Buddha, and, like China, ran the whole gamut of philosophical possibilities down to skepticism, to materialism, sophism and nihilism; in Iran, Zarathustra taught the challenging view of the world as a struggle between good and evil; in Palestine, the prophets made their appearance, from Elijah, by way of Isaiah and Jeremiah, to Deutero-Isaiah; Greece witnessed the appearance of Homer, of the philosophers—Parmenides, Heraclitus, and Plato—of the tragedians, of Thucydides and of Archimedes. Everything that is merely intimated by these names developed during these few centuries almost simultaneously in China, India, and the Occident without any one of these knowing of the others. 

    What is new about this age, in all three of these worlds, is that man becomes aware of Being as a whole, of himself and his limitations. He experiences the terrible nature of the world and his own impotence. He asks radical questions. Face to face with the void, he strives for liberation and redemption. By consciously recognizing his limits, he sets himself the highest goals. He experiences unconditionality in the depth of selfhood and in the clarity of transcendence. This took place in reflection...
     
    Basic Philosophical Writings by Karl Jaspers
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। হাত মক্সো করতে মতামত দিন