গত লেখায় লিখিছিলাম প্রশাসনিক দুর্বলতা বন্যার ক্ষয় ক্ষতির অন্যতম বড় কারণ। তখন মাথায় যা এসেছিল তাই লিখেছিলাম, ওইটার পিছনে অত যুক্তি, বুদ্ধি ছিল না। কিন্তু এখন, যখন আরও লম্বা সময় পার হয়ে গেছে, চরম অব্যবস্থাপনার তুঙ্গে সমস্ত আয়োজন তখন আমি নিশ্চিত যে প্রশাসনিক দুর্বলতা এই অবস্থার জন্য বেশ বড় একটা কারণ।
দোষ ধরার জন্য না। প্রশাসন তো দুর্বল এখন এইটা জানা কথাই। সেই দুর্বলতাকে আরও দুর্বল করা হচ্ছে, হয়েছে দুশ্চিন্তা সেটা নিয়েই। এবং যেটা মেনে নেওয়া কষ্টকর তা হচ্ছে এই ব্যর্থতা ঢাকার জন্য অনবরত ভারতকে দোষ দিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সব দোষ ভারতের, কেন বাঁধ খুলে দিল, কেন জানালো না, কেন বাঁধ দিল! এগুলা যৌক্তিক হয়ত কিন্তু এই সময়ে না। এইটা কে কাকে বুঝাবে? এখন এই সব দোষ আরেকজনের ঘাড়ে দেওয়ার সময় না। এখন কাজের সময়। লাখ লাখ মানুষ পানির নিচে। ত্রাণ তৎপরতা নেই বললেই চলে। মানুষ ঝাঁপিয়ে পড়েছে। এইটা বাংলাদেশের মানুষ সব সময়ই করে। এমন বিপদে এক সাথে বিপদ মোকাবেলা করে। এর আগে যতগুলা এমন পরিস্থিতি দেখেছি সব প্রতিবারই মুগ্ধ হয়েছি। কিন্তু এইটা তো সমাধান না। সরকারি তৎপরতা কই? তীব্র স্রোতে সাধারণ নৌকা নিয়ে যাওয়া যাচ্ছে না মানুষ উদ্ধারের কাজে, স্পিডবোট দরকার, নৌ বাহিনীর জাহাজ দরকার। কেন দুইদিন পার হয়ে যাওয়ার পরেও মানুষ পানির নিচে বাস করছে? উত্তর নাই, সমন্বয়কদের দেখছি নতুন গাড়ির শোরুমে ছবি তোলায় ব্যস্ত!
এমন পরিস্থিতিতে সবাই ঝাঁপিয়ে পড়ে সাহায্য করার জন্য। আজকে টিএসসিতে লম্বা মানুষের লাইন হয়েছে সাহায্য দেওয়ার জন্য। অভাবনীয় দৃশ্য, কোন সন্দেহ নাই। আবার এইটাও সত্য যে এমন সময়েই কেউ কেউ ঝোপ বুঝে কোপ মারে। ফেনি থেকে একজন লিখেছে যে সারাদিনে অন্তত এক হাজার বোট আসছে, যে নৌকার ধারণ ক্ষমতা বিশজনের সেখানে স্বেচ্ছাসেবক আসছে ১৮ জন! এরা কেন আসছে? যিনি লিখেছেন তিনি বলছেন কড়া মেকআপ দেওয়া আপুরা আছেন, সানগ্লাস পরা ভাইয়ারা আছেন! তামশার নতুন জায়গা ফেনি কুমিল্লা এখন! এদের থেকে রক্ষা করবে কে?
এমন না যে কাজ হচ্ছে না। নৌ বাহিনী, বিমান বাহিনী, সেনা বাহিনী কাজ করছে। হেলিকপ্টারে করে লোকজন উদ্ধার করছে। আমার এক বন্ধু থাকে ফেনি, ওকে ফোন দিলাম, ও কুমিল্লা আছে। বলল ওদের বাড়ি পুরোটা পানির নিচে। ওদের বাড়ির লোকজন ফেনিতে অল্প যেটুকু জায়গা পানিতে নাক উঁচিয়ে বেঁচে আছে, সেখানে আছে। আর ও কুমিল্লায় ঠিক আছে, পানি ওদের এখানে উঠেনি। ওর কথা শুনতে শুনতে গা শিউরে উঠল। আমি ভাবলাম আমার বাড়িতে এমন পানি উঠেছে! কই যাব? কোথায় গিয়ে উঠব? সাথে কী নিব? বই গুলার কী হবে? এমন ভাবনা নিশ্চয়ই ওইখানের মানুষেরও এসেছে। অথচ কিচ্ছু করার নাই, সব রেখে চলে যেতে হয়েছে।
এই পরিস্থিতির মতো গল্প শুনলাম আজকে আরেকটা। কয়েকদিন আগের ঘটনা। সেই কুৎসিত রাতের গল্প। যখন সমস্ত বাংলাদেশ এক সাথে কালি গোলা অন্ধকারে ডুবে গেছিল। তিনি নিজের মা বোনকে অন্য বাড়িতে পাঠিয়ে নিজের বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছেন। এলাকার বিএনপির নেতারা এসে অভয় দিচ্ছেন, কে কইছে আগুন দিব তোমাদের বাড়িতে? ডরাইতেছ কেন? যত এগুলা বলে তত ভয় আরও বাড়ে! কী অদ্ভুত সময়! এদিকে উনাদের নিচ তালায় ভাড়াটিয়া থাকে, তারা এসে জিজ্ঞাস করছে, এখন কী করব? আমরা বের হয়ে যাব? কই যাব? কী উত্তর দিবেন তিনি? উনি আমাকে বললেন, একটা শব্দও মুখ দিয়ে বের হল না। আমি হেঁটে হেঁটে চলে গেলাম ওইখান থেকে। ঘরে ঢুকলেন। আমার মতোই তিনিও ভাবলেন বই গুলার কথা। একটা একটা করে বই স্পর্শ করছেন আর ভাবছেন এইটা সরায় রাখব? এইটা নিয়ে রাখব? বইয়ের মাঝে টাকা রাখছেন কি মনে করে কে জানে। ওগুলা হাতে নিলেন। টাকা পকেটে রাখব? বই পুড়লে, বাড়ি পুড়লে এই টাকার কথা ভেবে লাভ আছে? অল্প কিছু টাকা, ওইটা আবার রেখে দিলেন বইয়ের মধ্যেই। জিনিসপত্র দেখলেন, হাতালেন। কী করবেন তখন? অথচ একটা হিড়িক উঠলেই এই বাড়ি যে পুড়া হবে তা নিশ্চিত! কী করার আছে একজনের এই সময়ে? উনার পরিচিত যে কয়জন আছে তারা সাথে আসলেন। কিন্তু তাদের চোখ মুখও শুকিয়ে গেছে। সাহস দেওয়ার সাহসও নাই কারও। এর মধ্যে উনার বাবা বাসায় আসলেন। তিনি তার বাবাকে বললেন, তুমি ওদের সাথে চলে যাইতা? উনার বাবা বললেন, না, আমি বাড়িতেই থাকব, যদি আগুন দেয় তাইলে এইখানেই মরমু! বলে কোরান শরিফ নিয়ে পড়তে লাগলেন! টানা ছয় সাতদিন তাদের এমন করেই গেছে। ঘুম নাই, রাতের পর রাত জেগে জেগে পাহারা দিয়ে পার করেছেন তারা। অথচ এরা রাজনৈতিক পরিবারের কেউ না। শহরের মধ্যে অর্থ সম্পদ আছে, সচ্ছল একটা পরিবার। এবং এইটাই বড় অপরাধ!
বিশৃঙ্খলা এখন পর্যন্ত বিদ্ধমান। যার যা ইচ্ছা তাই করে চলছে। অরাজকতার চরম সীমায় পৌঁছেছে সব। এর মধ্যে এই বন্যা। আর সাথে হচ্ছে গড় থেকেও কম আইকিউ সমৃদ্ধ বাংলাদেশের জনগণ! এরা ফেসবুকে কাঁপিয়ে দিচ্ছে ভারত যতগুলা নদিতে বাঁধ দিয়েছে সব গুলায় বাংলাদেশ পাশে আবার বাঁধ দিবে! প্রথম প্রথম ভাবছি মজা নিচ্ছে কেউ। কিন্তু ধীরে ধীরে এই বিলো এভারেজ জনগণের কাণ্ড কারখানা দেখে দেখে তব্দা মেরে গেলাম। টাকা তোলা শুরু করে দিচ্ছে, কেউ কামলা খেটে দিবে, তবু বাঁধ দিবেই! ভাটিতে বাঁধ দিয়ে যে কোন উপকার হবে না এইটা কে বুঝাবে এদের? মূল সমস্যা থেকে নজর সরিয়ে কই নিয়ে যাচ্ছে তা কেউ একবার ভাবছে না, সবাই মেতে আছে বাঁধ দিয়েই জবাব দিবে ভারতকে! ইমতিয়াজ মাহমুদ কবি মানুষ, কিন্তু তিনি মাঝে মধ্যে দুইচারটা দুর্দান্ত কথা লিখেন ফেসবুকে যা বাধাই করে রাখার মতো। এই প্রসঙ্গে তিনি একদিন লিখলেন যারা মিছিল করে সচিবালয় ঘেরাও করে এইচএসসির অটো পাস দাবি আদায় করল তাদের অর্ধেক আজকে নদী বিশেষজ্ঞ! আরকটা লিখেছেন গতকাল, নদিতে বাঁধের বদলে যদি হিমালয় পর্বত তোলা যায় তাহলে তা অনেকটা সাইন্টিফিক হবে! কিন্তু এগুলা নিরেট মাথায় ঢুকলে তো!
ভারত বিদ্বেষ এখন ইতিহাসের চরম সীমায়। কুরী বিন্দু স্পর্শ করেছে বলা চলে। বাঁধ নির্মাণ আজগুবি হলেও ক্ষতিকর না কারও জন্য। কয়দিন পরে ঝিমিয়ে যাবে। কেউ টাকা পয়সা তুললে তা লোপাট হবে, পরে হায়হুতাশ হবে, এগুলা বুঝা যায়। মুশকিল হচ্ছে আরেক পক্ষকে নিয়ে। এরা সেভেন সিস্টার্সকে পারলে আজকেই স্বাধীন করে দেয়। তারা এখন স্বাধীনতা চায় কি না তাও দেখার প্রয়োজন নাই। পারলে কব্জাই করে নিবে এমন অবস্থা। হাজার হাজার পোস্ট হচ্ছে এই সংক্রান্ত। চিকেন নেক কি এইটা এখন টক অফ দা কান্ট্রি! চিকেন নেকে কামড় দিলেই ভারত শেষ! কত সোজা। এই ব্যাপারে আরেক পক্ষ এক নায়কও পেয়ে গেছে। তিনি হচ্ছেন বিএনপির সময়ের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লুতফর জামান বাবর। বাবর না কি নায়ক। আওয়ামীলীগ ভারতের সাথে ষড়যন্ত্র করে এমন এক বীরকে জেলে পুরে রেখেছে। যথারীতি আমাকে একজন জিজ্ঞাস করল এই লোক কে? বাবর কী করছিল? বললাম যাই করুক তিনি যে অন্তত নায়ক ছিলেন না এইটা সত্য। তিনি ক্রিমিনাল ছিলেন। যারা ভাবছেন দশ ট্রাক অস্ত্র তিনিই উলফাদের হাতে দিচ্ছিলেন তারা কিছুই জানেন না। তিনি স্রেফ দালালের কাজ করেছে। আমাদের ভূখণ্ড ব্যবহার করে অস্ত্রগুলা ভারতে ঢুকছিল, তিনি মধ্য থেকে টাকা খেয়ে এগুলা না দেখার সিদ্ধান্ত নেন। আর কিছু না। সেভেন সিস্টার্স স্বাধীন হবে, এই মহান আদর্শ নিয়ে তিনি অস্ত্র যেতে দিচ্ছিলেন এমন ভাবার কোন কারণ নাই।
আমি একজনকে বললাম সরকারে উচ্চ পর্যায় থেকে যে এইভাবে সেভেন সিস্টার্স নিয়ে খুল্লামখুল্লা কথা বলছে এইটা কী ভালো কিছু হচ্ছে? একটা রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব নিয়ে কেউ এমন কথা বলতে পারে? আমরা জাতিগত ভাবে কি নিশ্চিত আমরা আমাদের পূর্ব পাশে সেভেন সিস্টার্সের মতো কোন রাষ্ট্র চাই? যদি এমন কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয় তাহলে তার পরবর্তী যে ধাপ গুলো তা সামাল দেওয়ার ক্ষমতা আছে আমাদের? চিন বলেছে আমাদের যে তোমরা সেভেন সিস্টার্স আলদা করে দেও, আমরা তোমাদেরকে সাহায্য করব? মানে কোথাও কোন আলোচনা হয়েছে? পাগল জনগণ কথা বলা এক জিনিস আর সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে বলা আরেক জিনিস। সামাল দিতে পারবেন? কোন লেবেলের গাঞ্জা খেলে ভারতের সাথে যুদ্ধাবস্থা চাইবে কেউ? সেভেন সিস্টার্স এখন বলছে তারা স্বাধীন হতে চায়? উলফাদের আগের দিন আছে? ত্রিপুরা, মনিপুর স্বাধীন হতে চায়? বিশ বছর আগের পরিস্থিতি আছে? অনুপ চেটিয়া ধরা পড়ছে কবে?মুক্তি পেয়ে কই আছে? এরপরে কোথাকার পানি কোথায়, কতদূর গড়িয়েছে আমরা জানি? কে এই সব উস্কে দিচ্ছে? আরেক দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে এমন করে যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি করা কতখানি বুদ্ধিমানের কাজ? এই চলছে এখন দেশে। চায়ের দোকানের সবার পছন্দের আলাপ হচ্ছে সাত বোন আর মুরগির গলা! কত সহস্র গুজব চালু আছে দেশে তার কোন হিসাব নাই। এগুলা কেন কেউ দেখছে না?
দেখছে না কারণ এতে উপকারই হচ্ছে, নজর সরে থাকছে অন্য দিকে। জরুরি সমস্যা এখন আর সমস্যা না। কেউ প্রশ্ন তুলছে না, কেউ যোগ্যতা নিয়ে জিজ্ঞাস করছে না। এইটা ভালো না?
লোকজন নিয়ে একটা হট্টগোল করতে পারলেই যে যে কোন দাবি আদায় করা সম্ভব তার একটা দুর্দান্ত উদাহরণ গতকালই শুনলাম। কিছুদিন আগে ভিকারুন্নেসা স্কুলের ভর্তি নিয়ে লিখেছিলাম। তখন আদালত ভর্তি বাতিল করে একটা রায় দিয়েছিল। মাধ্যমিক উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডকে এই ব্যাপারটাকে নিষ্পত্তি করতে বলেছিল আদালত। মাউশি ভর্তি বাতিল করে সমাধান করেছিল। এখন তো দিন পাল্টে গেছে। যাদের বাচ্চাদের ভর্তি বাতিল হয়েছিল তারা এই অরাজক সময়ের সুযোগ নিয়েছে। সব স্কুলের মতো ভিকারুন্নেসার প্রধান শিক্ষক পদত্যাগ করেছেন। এই অভিভাবকরা প্রথমে স্কুলের সামনে মানব বন্ধন করেছেন। এরপরে গেছেন ইউনুস সাহেবের বর্তমান সরকারি বাস ভবনের সামনে। সেখানে দাঁড়িয়ে থেকে স্মরকলিপি দিয়ে এসেছেন। এরপরে সারজিস আলমের সাথে দেখা করেছেন। তাকে দিয়ে নতুন প্রধান শিক্ষকে ফোন করিয়েছেন। এরপরে তারা শেষ চাল দিয়েছেন। মাউশির অফিসে গেছেন সবাই মিলে। সবাই মিলে স্লোগান দিয়ে বাধ্য করেছেন তাদের বাচ্চাদের ভর্তি বাতিল অর্ডার বাতিল করতে। আমি জিজ্ঞাস করেছিলাম এই ক্ষেত্রে স্লোগান কী দিয়েছ তোমরা? আমার বন্ধু এইটার অন্যতম কারিগর। ও বলল ভার্সিটিতে থাকতে ছাত্রলীগের সাথে থেকে থেকে স্লোগান দিতে হইছে, ওগুলাই দিছি! কী স্লোগান? দিয়েছি তো রক্ত, আরও দিব রক্ত!
রক্ত দিয়ে দিচ্ছে বাচ্চার ভর্তির জন্য, আদেশ না দিয়ে উপায় আছে?
ও বলল আরেক মজার গল্প। আরও অনেকে মাউশির প্রধানকে ধরতে সেখানে উপস্থিত ছিল। তারা চাচ্ছিল তাকে অফিস থেকে বের করে বাহিরে আনবে আর এরা মানে ভর্তির পক্ষের লোকেরা চাচ্ছিল তাকে অফিসেই আটকে রাখতে। কারণ আদেশটা অফিস থেকেই নিতে হবে। এইটা নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে মারামারি! পরে ভর্তি পার্টির সাথে ওরা পারে নাই। এরা দাবি আদায় করে চলে আসছে। তারা কোন দাবি নিয়ে এসেছিল? তারা হচ্ছে গত সরকার বিভিন্ন সময়ে অনেক চুক্তি ভিত্তিক শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছিল। এতদিন তাদেরকে বলা হয়েছিল তাদেরকে স্থায়ী করে সরকারি শিক্ষক করে নিয়ে নেওয়া হবে। কিন্তু এত বছরেও এই কাজ হয় নাই। তারা এবার সুযোগ পেয়েছে। সবাই এসে হাজির। মাউশির অফিসের সামনে গাছের মধ্যে মাইক বেঁধে চলছে তাদের আন্দোলন!
হাসব? উচিত হবে?
সবাই আন্দোলন করতে চাচ্ছে। আনসাররাও শাহবাগ অবরোধ করে বসে ছিল। তাদের কথা হচ্ছে যখন আইন শৃঙ্খলা বলতে কিছু ছিল না। তখন আনসারদের নানা কাজে লাগানো হয়েছে। অতীতেও হয়েছে, এখনও হচ্ছে। অথচ তাদের চাকরি জাতীয়করণ করা হয় নাই। এবার জাতীয়করণ করতে হবে না হলে চলবে আন্দোলন! আনসাররা হচ্ছে একটা আধা সরকারি বাহিনী। যারা পুলিশের কাজে বয়া সরকারি কোন কাজে সাহায্যকারী হিসেবে কাজ করে। এদের নিয়ে সমস্যা অনেক পুরাতন সমস্যা। সমাধান দিবে এবার কেউ?
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার পরিচিত শিক্ষক আছে দুইজন। তাদেরক গতকাল ফোন দিয়েছিলাম। খুলনায় বন্যার পানি ঢুকছে এইটা নিয়ে তারা আতঙ্কিত। একজনকে জিজ্ঞাস করলাম খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থা কী? উনি বুঝলেন আমি কী শুনতে চাচ্ছি। মজার সব গল্প শোনালেন। আমি জিজ্ঞাস করছিলাম ভিসি পদত্যাগ করল কেন? খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা তো দেখলাম তিনি যেন পদত্যাগ না করেন তার জন্য আন্দোলন করছে। তাহলে? তিনি উত্তর দিলেন, দেখো ছাত্রদের চাওয়াই শেষ না। তাকে নানা জায়গা থেকে সরে যেতে বলছে। সরে না গেলে তাদের মন মতো কাজ করতে দিতে হবে! এইটা এই ভিসি কোনমতেই করতে দিবে না। আমি জিজ্ঞাস করলাম কী করতে চায়? বলল বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটে বিশাল বঙ্গবন্ধুর মুরাল দেখছিলা না? আমি বললাম হ্যাঁ, শুধু দেখা! আমি ওইটার শিল্পিকেও চিনি, পরিচয় আছে এই জন্য ওইটাকে শুধু দেখি নাই, হা করে গিলছি, ছবি তুলছি।রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার শিক্ষক কনকদার অসাধারণ একটা কাজ এই মুরালটা। আমার প্রয়াত বন্ধু রনি রাজশাহী চারুকলার ছাত্র ছিল, সেই সূত্রে কনকদার সাথে আমার পরিচয়। তার এমন একটা কাজ খুলনায় দেখে আমি অভিভূত হয়ে গেছিলাম। যাই হোক, উনি বললেন এইটা ভেঙ্গে ফেলবে! এইটা শুনে ভিসি বলেছেন তিনি থাকতে এইটা হবে না। এমন আরও কিছু কারণেই তিনি তার অধীনস্থ কর্মকর্তাদের নিয়ে এক সাথে ষাট জনের উপরে পদত্যাগ করেছেন!
প্রসঙ্গত বলে রাখি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় যেখানে কোন পুলিশই কার্যক্রম ছিল না। এই ভিসি বলেছিলেন তিনি থাকতে ক্যাম্পাসে কোন পুলিশ ঢুকতে পারেব না। পারেও নাই। ছাত্ররা তাই তাকে থাকতে বলছিল। কিন্তু উনার যে ব্যক্তিত্ব তাতে এমন করে যে তিনি থাকবেন না এইটা সহজেই অনুমেয়। আমি আবার জিজ্ঞাস করলাম দাদা, আপনাদের কী অবস্থা? বলল আমরা আছি, ছাত্ররা যা বলে তাই করি আমরা! বললাম কেমন? বললেন ২৫ তারিখ থেকে ক্লাস শুরু হওয়ার কথা। ছাত্ররা এসে বলল আমরা ১ তারিখ থেকে ক্লাস করব! আমরা বললাম অবশ্যই, কোন সমস্যা নাই! আমি জিজ্ঞাস করলাম এতদিন ধরে ক্লাস বন্ধ, আরও পিছাচ্ছে, এইটা সমস্যা হবে না? তিনি বললেন অবশ্যই হবে, কিন্তু এইটা ওদেরকে বলবে কে? ধর আমি বললাম যে ক্লাস পিছালে সামনে তোমরাই বিপদে পড়বা, জবাবে ওরা যদি বলে বসে আপনে কোন বাল জানেন! তখন আমার কেমন লাগবে? কাজেই জি, তোমরাই ঠিক বলছ, ক্লাস ১ তারিখ থেকেই হবে!
বাংলার ইতিহাসে রাজা শশাঙ্কের মৃত্যুর পর থেকে গোপাল রাজবংশের অভ্যুদয়ের পূর্ব পর্যন্ত সময়কালকে মাৎস্যন্যায় বলা হয়। আমরা কী আবার মাৎস্যন্যায় পার করছি না? শিক্ষককে গাছের সাথে বেঁধে ছাত্ররা পেটাচ্ছে, এইটা যদি মাৎস্যন্যায় না হয় আর কী তাহলে? হিড়িক মেরে অপদস্থ করছে যাকে ইচ্ছা তাকে, এইটা যদি মাৎস্যন্যায় না হয় আর কাকে মাৎস্যন্যায় বলব? আগুন দিতে হবে না, সাহস করে ফোন দিয়ে বলবেন শুধু, এই যে আমার মোবাইল ব্যাংক একাউন্ট নাম্বার, এখানে এত টাকা পাঠিয়ে দিতে হবে, না হলে আগুন দিব বাড়িতে। ব্যাস, কাজ শেষ। টাকা এসে গেছে আপনার মোবাইলে। মাৎস্যন্যায় কাকে বলে? সংজ্ঞা কী?
পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।