সবাইকে ধন্যবাদ এবং ঈদের শুভেচ্ছা। লেখাটার বিপরীত মুখি একটা চিন্তাও আমার আছে। আমি জানি না আমি যেটাকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করছি, গ্রহণযোগ্য বলে মনে করছি তা সবার কাছে মনে হবে কি না। কুরবানি ঈদ নিয়ে এই দ্বিতীয় চিন্তাটাই মূলত আমার প্রথম চিন্তা। এবারই আমি পুরো বিষয়টাকে ভিন্ন দিক থেকে দেখার চেষ্টা করছি। ঘটনাটা বলি, হয়ত বুঝতে সহজ হবে সবার জন্য।
ঈদের দিন বাসা থেকে বের হচ্ছি, গেটের কাছে দেখি কে জানি বাহির থেকে ভিতরে ঢোকার চেষ্টা করছে। আমি গেট খুলে বাহিরে গেলাম, দেখি পিচ্চি একটা মেয়ে! তেল দেওয়া চুল টানটান করে বাঁধা লাল ফিতা দিয়ে, ঠোঁটে লাল লিপস্টিক। দুই হাতে মাংস ভর্তি পলিথিনের ব্যাগ। দেখেই বুঝলাম মাংস নিতে আসছে। বললাম, আমাদের তো এবার কুরবানি দেয় নাই! থমকে দাঁড়িয়ে গেল একটু, চোখে মুখে একটু দ্বিধা, বাচ্চা পেয়ে ওকে ঠকিয়েই দিচ্ছি কি না ও নিশ্চিত না, আমার দিকে তাকিয়ে নিশ্চিত হতে চাচ্ছে। পরে বললাম আর নিবা কেমনে? তোমার হাতে তো আর জায়গাই নাই, এগুলাই তো নিতে পারছ না! এবার লাজুক একটা হাসি দিয়ে বলল, মায়ে পিছে আইতাছে। বললাম তাইলে ঠিক আছে, কিন্তু এবার তো আমরা দেই নাই, এখন? ওই সমাধান দিল, তাইলে আরেক বাড়িত যাই।
এরা সাধারণত এক পাড়া থেকে কয়েকজন মিলে আসে, মা মেয়ে মিলে আসছে কুরবানির মাংস নিতে। বাজারের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে অনুমান করে বলাই যায় এই পিচ্চি গত এক বছরে খুব বেশিদিন মাংস খেতে পারছে বলে মনে হয় না। সম্প্রীতির জন্য গরু কুরবানির বিরুদ্ধে আমি বলছি, আবার এদের কথা যখন ভাবি তখন মনে হয় এরচেয়ে বড় উপকার ধর্ম আর কবে কোথায় করছে?
বিকালে বাড়ি ফেরার সময় দেখি পুলপাড়ে পা ছড়িয়ে বসে আছে ওই পিচ্চি, মুখে ঘাম, পায়ের কাছে ব্যাগ রাখা, সাথে কয়েকজন মহিলা। ওর চোখে মুখে ক্লান্তি নাই, উল্টো খলবল করছে ফুর্তি! কলকল করে সম্ভবত ওর মাকেই কিছু একটা বুঝাচ্ছে! গোল্লায় যাক বাকি সব,আমি মনে হয় ঈদের সেরা দৃশ্যটাই দেখলাম!
আমার কাছে ক্ষুধার চেয়ে বড় কোন ধর্ম নাই। তাই যখন যেভাবে যেখানেই মানুষের খাবারের ব্যবস্থা থাকবে তখন আমি সেই পক্ষে থাকব। আমরা যেদিন ক্ষুধা মুক্ত হতে পারব, উন্নত বিশ্বের মতো খাবারের চিন্তা হবে শেষ চিন্তা, যেখানে আরও নানা বিষয় থাকবে চিন্তা করার। তখন আশা করি একটু আমিষের জন্য কুরবানিতে গরুর পক্ষে আর আমাকে বলতে হবে না। যতদিন ওই পিচ্চির মতো মানুষ হাত পাতবে দুই টুকরা মাংসের জন্য ততদিন সম্ভবত রেহাই নাই আমাদের।