“৪-১৩ আর ৪-২২ এর পোস্টের পরিপ্রেক্ষিতে বলছি -- শুধু ফিল্টার করা প্রশংসামূলক মন্তব্যই আসবে সেটাই বা কেমন কথা? যদিও প্রচুর লেখার ক্ষেত্রে সেটাই হয় দেখেছি। তবু আমার মনে হয় ভালোলাগা, মোটামুটি লাগা, খারাপ লাগা সব রকমই না জানলে লেখকের তো স্ট্যাগনেশন অবশ্যম্ভাবী। অবশ্য "খ্যাঁক" ও দেখেছি কম না। টইয়ে 'মত' যেমন লিখেছেন, খোলাপাতার সব রকম সমালোচনা নিতে না পারলে খোলা পাতায় লেখা কেন? সেটা আমারও মনে হয়। খ্যাঁক, রাগ ইত্যাদি প্রসঙ্গে এটাই মনে হয় যে মানুষের ধৈর্য্য আরেকটু বেশি হলে, জাজ করার প্রবণতা আরেকটু কম হলে বড় ভালো হতো।”
প্রসঙ্গটি ভাবালো তাই সেই প্রেক্ষিতে কিছু ভাবনা এখানে রাখছি। ভাটে লিখলে অবিরল বিভিন্ন মন্তব্যের সুনামিতে হারিয়ে যাবে। এখানে রাখলে এ নিয়ে কেউ কিছু বললে এক জায়গায় থাকবে।
মানুষ লেখে কেন?
লেখার ওপর পাঠকের মন্তব্য প্রসঙ্গে আসার আগে প্রথমে দেখা যাক মানুষ লেখে কেন। সন্দীপন তাঁর একটি লেখার মুখবন্ধের লিখেছেন:
"আপনি লেখেন কেন? এর উত্তরে লেখকরা নানা উত্তর দিয়েছেন। বঙ্কিমচন্দ্র বলেছেন, যশ বা অর্থের জন্য লিখি না। দেনায় জর্জরিত দস্তয়েভস্কি বলেছেন ‘আমি টাকার জন্যে লিখি’। আনাই নিন বলেছেন, আমি একটা নিজের জগৎ তৈরি করি আমার লেখা দিয়ে, যেখানে ছাড়া আমি নিঃশ্বাস নিতে পারি না।
আসলে, সবিশেষ কারণ ছাড়াই যে কার্যগুলি সম্পন্ন হয়, তার মধ্যে একটা নিশ্চয়ই সাহিত্য — অন্তত লেখকের দিক থেকে। 'হােয়াই ডাজ ওয়ান রাইট’ নিবন্ধে প্রাইমাে লেভি লেখার যে ১১ টি কারণ দেখিয়েছেন, যথা : বিখ্যাত হবার ইচ্ছা, অন্যকে আনন্দ দেওয়া, অন্যকে শিক্ষিততর করা, ব্যক্তিগত ব্যথা বেদনা থেকে মুক্তি ইত্যাদি - তার সবকটাই মামুলি। বরং বলা যেতে পারে, এগুলি এমন সব কারণ, যার জন্যে লেখকরা লেখেন না। এগুলাে সবই লেখকের দ্বিতীয় চিন্তা।"
এখানে “মানুষ” বলতে প্রকৃত পণ্ডিত যারা তাঁদের অর্জিত জ্ঞান ভাবীকালের জন্য রেখে যেতে চান বা প্রতিষ্ঠিত লেখকদের কথা বলছি না যাঁদের পিছনে গ্ৰন্থস্বত্ত্ব কেনার জন্য অর্থের থলি নিয়ে ঘোরেন প্রকাশক। নিজের পয়সায় বই ছাপানো মানুষের কথাও না। বলতে চাইছি সাধারণ মানুষের শখের লেখালেখির তাগিদ প্রসঙ্গে।
আমার এক অতীত বন্ধু প্রদীপের সাথে আমার বর্তমান সম্পর্ক কোমায়। আমার থেকে সিকি শতাব্দী ছোট ওর পুত্র তপুকে তিন বছর বয়স থেকে চিনি। দুবার ডিভোর্স হয়ে তপুর কম্পাস ঘেঁটে গেছে। ও আমায় আঁকড়ায়। আমার সাথে সম্পর্ক সাবলীল। দুজনে কিছু বড় ভ্রমণে গেছি। আরো যাবো। ও আছে IT তে। সেদিন ও কেজো দিনে আমার সাথে হোয়া চ্যাট করছিল। একটু পরে লিখলাম - 'আচ্ছা তুই কাজ কর। আমি কিছু লিখি।' ও প্রতিপ্রশ্ন করে, 'তোমার কাছে লেখা কি অবশেসন? কতদিন কিছু না লিখে থাকতে পারবে?'
অজান্তেই তপু বুলস আইতে হিট করলো। আমার অধিকাংশ লেখা শুরু হয় ছোট্ট কোনো স্ফূলিঙ্গ থেকে। শেষ হয় রাস্তার কোনে ঝাঁটিয়ে রাখা কাগজ, প্লাস্টিকের গাদায় লাগানো ছোট্ট আগুনে। কখনো তা হয়ে দাঁড়ায় বনবিভাগের লাগানো নিয়ন্ত্রিত গ্ৰাসফায়ার থেকে অনিয়ন্ত্রিত বুশফায়ার। তখন তা স্মৃতি, ভাবনার অরণ্যে ছড়ানো বৃক্ষরাজিকে গ্ৰাস করে। dc যেমন বলেছেন - Eclectic style of writing. প্রথমে টানটা আসে ভেতর থেকে, তারপর লেখাটাই টেনে নিয়ে যায়।
অনেক মহিলা মা হয়ে পড়েন বিনা আবাহনে এবং অসাবধানতায়। মাতৃত্ববোধের উদ্ভব হয় পরে। বেশ কিছু পরিচিতজনের ক্ষেত্রে এটা দেখেছি। কিন্তু যখন দীর্ঘ প্রতীক্ষার অন্তে সন্তানের জন্ম হয় নারীর একান্ত কাঙ্খায়? সে খুব সুন্দর হবে, অনেকে তারিফ করবে এমন ভাবনা কী তেমন গর্ভধারণের প্রেরণা? মনে হয় না।
আমার অধিকাংশ লেখাও তাই। কিছু লেখা কয়েকটি পত্রিকায় প্রকাশ হয়েছে। এই ঢের। অযথা বিনয় আমার স্বভাববিরুদ্ধ। আমি বুঝি আমার লেখালেখি বই প্রকাশের উপযোগী নয়। আমার লেখার মুখ্য প্রেরণা বুঁদ হয়ে নানা স্মৃতি, ভাবনা শব্দের কায়ায় গুছিয়ে ধরার নেশা - Engaging Cognitive Activity. পড়ে কেউ ভালো বললে আনন্দ হয়। সুচিন্তিত মন্তব্য পেলে ঋদ্ধ হই।
কৈশরে বন্ধুদের সাথে রোজ কয়েক ঘন্টা গঙ্গায় দাপাদাপি না করলে আশ মিটতো না। এখন ভ্রমণপথে নানাস্থানে বিচিত্ররূপিনী নর্মদা, মিস্টিক কালিসিন্ধ, থৈথৈ কুমারধারা, বেগবতী নেত্রাবতী বা জয়সমন্দ, ফয় সাগর, গোমতী সাগরের মতো বিশাল নির্জন হ্রদের তীরে চুপ করে বসে থাকলেও বেশ লাগে। জল দেখলেই স্নানের টান আর অনুভব করিনা। তার জন্য কোনো দুঃখবোধ নেই কারণ আনন্দ অনুভবের প্রকরণ বদলে গেছে। তেমনি যতদিন উদ্দেশ্যহীন লেখালেখিতে আনন্দ পাবো লিখবো। ভবিষ্যতে লিখতে ইচ্ছে না করলে - লিখবো না। নিয়মিত লিখতেন আশুতোষ, তারাশঙ্কর, সুনীল, শীর্ষেন্দু, সমরেশ বসু, নারায়ণ সান্যাল, বুদ্ধদেব গুহর মতো উৎপাদনশীল লেখকরা। আমার কাছে লেখালেখি নির্বান্ধব জীবনে মানবসঙ্গের জন্য লালায়িত না হয়ে আত্মমগ্ন থাকার আমেজী উপায়।
সেদিন আমি তপুকে এসব বলিনি, নিজের মনে নাড়াচাড়া করেছি। আনাই নিনের উক্তিটি আমার লেখার তাগিদের সাথে মেলে।
মানুষ লিখে নিজের কাছেই রাখে না কেন?
এই প্রসঙ্গে - আম লেখকদের ক্ষেত্রে - আমি সন্দীপন উল্লিখিত প্রাইমো লেভি বর্ণিত কিছু কারণসমূহের সাথে সহমত। কিছু লিখে নিজের কাছেই রেখে দেওয়া তো আত্মকথন - যেমন আ্যানা ফ্রাঙ্কের ডায়েরী। কিছু এলেমদার লেখক আবার কিছু লেখা প্রকাশ করে বাকি লেখা বাক্সবন্দী করে চলে গেছেন - যেমন জীবনানন্দ। কাফকাও তাঁর জীবদ্দশায় কয়েকটি ছোটগল্প প্রকাশ করে বাকি অপ্রকাশিত লেখা ঘনিষ্ঠ বন্ধু ম্যাক্স ব্রডের জিম্মায় রেখে অনুরোধ করেছিলেন তাঁর অবর্তমানে ওগুলি জ্বালিয়ে দিতে। ম্যাক্স বন্ধুর অনুরোধ রাখেন নি বলে দুনিয়া কাফকাকে পেয়েছে। কিন্তু কাফকা নিজে ঐ অপ্রকাশিত লেখাগুলি গোধূলিবেলায় জ্বালিয়ে দিলেন না কেন?
এখানেই লুকিয়ে আছে মোক্ষম কারণ। অসাধারন মানুষের কাছেও নিজের রচনা সন্তানসম - তাকে কারুর জিম্মায় রেখে চলে যাওয়া যায় - কিন্তু নিজে হাতে হত্যা করা শক্ত। মুকুন্দলাল ঘোষ সাধনায় পরমহংস যোগানন্দ হয়ে লিখেছেন Autobiography of a Yogi. তাঁর বিশ্বাস ক্রিয়াযোগের প্রসারকল্পে ঐ আত্মজীবনী লেখা তাঁর গুরুদেব লাহিড়ী মহাশয় কর্তৃক পূর্বনির্ধারিত ছিল।
কিছু সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রেও তাদের ভাবনা প্রকাশের তাড়না অদম্য। আমি এই গোত্রের। তাই প্রায়শই লিখে চলি হাবিজাবি - তবে নিজের পাতায়। মন্তব্য করি কারুর লেখায়। কিন্তু ওয়াইড স্পেকট্রামে সেনসাস থেকে কনশাসনেস - হেন বিষয় নেই যা আলোচনা হয় না - সেই ভাটেও দেখা যায় কিছু মানুষ অবিরল বহু বিষয়ে বিশদে মন্তব্য করে চলেছেন। তাদের আগ্ৰহের পরিসর এবং স্পেলাইজশনের গভীরতা বিষ্ময়কর। এও নিজস্ব জ্ঞান, বোধের প্রকাশের তাড়না এবং অন্যদের শিক্ষিততর করার বাসনা।
গুরুর কিছু বিদগ্ধজন - যাদের লেখা মুগ্ধ করেছে - তাদের অনেকে ভাটে নীরব বা কালেভদ্রে কিছু বলেন। মানে বাক্সবন্দী জীবনানন্দ কেস। আমি ভাটে সক্রিয় নই কিন্তু মাঝেমধ্যে স্ক্রল থ্রু করেও নানা মন্তব্য, প্রতিক্রিয়া দেখে কিছু প্যাটার্ন বোঝা যায়।
মানুষ মন্তব্য বা প্রতিক্রিয়া করে কেন?
এই আলোচনা ভাটে চ্যাট প্রসঙ্গে নয়। সেখানে চিকের আড়াল থেকে বক্রোক্তি করা মানুষ কেউ নিকের আড়াল থেকে কটূক্তি করলে রেগে যায়। যদি বলি - Rule of the game should be same for all - তারা বলবে নিকের আড়ালে আমাদের আসল অস্তিত্ব ‘অনেকেরই’ জানা কিন্তু যারা রক্তবীজের ঝাড়ের মতো ঘনঘন নিক বদলে কটূক্তি করে তাদের ঘাড় ধরে গুরু থেকে তাড়িয়ে দেওয়া উচিত।
এই ‘অনেকেই’ মানে গুরুতে যারা শুরু থেকে আছে। কিন্তু আমার মতো যারা হালে এসেছে এবং গুরুর ক্লোজ সার্কিটের বাইরে - তারা তো বুঝবে না ¥ £ € % গোত্রের নিকরা কারা - কী তাদের প্রেক্ষাপট। বাংলালাইভে আমার দুটি ভ্রমণকাহিনী বেরিয়েছিল - একটি বাংলায় অন্যটি ইংরেজিতে। ওখানে লেখার সাথে ছবিসহ সংক্ষিপ্ত লেখকপরিচিতি দিতে হয়। আমি দিয়েছিলাম এমন:
এখানে আমার চালচিত্র নিয়ে ঢ্যাঁড়া পেটাইনি - পেটানোর মতোও কিছু নেই। সামান্য পেশাগত এবং ভ্রামণিক সত্তার পরিচয় দিয়েছি। এমন প্রথা আরো কয়েক জায়গায় দেখেছি। সোজাসাপ্টা মানুষ বলে এমন বেবাক এ্যাপ্রোচ পছন্দ। তাই গুরুতে সৈকত বন্দোপাধ্যায়, কিশোর ঘোষাল, রঞ্জন রায়, অরিন্দম বসু, শিবাংশু, ফরিদা, শুভদীপ ঘোষ প্রমূখদের স্বনামে, সপাট ছবিসহ আত্মপরিচিতি পছন্দ হয়েছে।
সবাই উত্তম কুমার বা সুচিত্রা সেনের মতো সুদর্শন বা সুদর্শনা হবেন না এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু যারা এই ফোরামের সাথে দীর্ঘদিন ধরে যুক্ত এবং বেশ এ্যাকটিভ তারা নিজের নাম এবং মুখের সপাট ছবি দেন না। অর্থাৎ গুরুর কোর ফিলজফি গোপনীয়তা। হয়তো সরকার বিরোধী বক্তব্য রাখা একটা কারণ হতে পারে। কিন্তু গুরুর অধিকাংশ সদস্য তো উবের ইন্টেলেকচুয়াল। এখানে তো স্ট্রিটলেভেলের গালিগালাজ বাঞ্ছনীয় নয়। আকাশ ব্যানার্জী, রবিশ কুমার, আরফা খানুম শেরওয়ানির মতো শালীন ভাষাতেও তো শানিত সমালোচনা করা যায়। তাতে সরকারের কিছু মনে করার নেই এবং এখনো ভারত উত্তর কোরিয়া হয়ে যায়নি।
নিকের আড়ালের উদ্দেশ্য SMA (Social Media Activism), Alter Ego সদৃশ Alternative Identity বা যাই হোক তাও সবার ক্ষেত্রে বজায় থাকে না যখন নিকেরা ভাটে নিজের বইয়ের প্রসঙ্গে লেখেন। বা অন্য কেউ যারা তাদের চেনেন তাদের বইয়ের কথা লেখেন। প্রকাশিত বইয়ের তালিকা থেকেও লেখকের আসল পরিচিতি প্রকাশ হয়ে যায়। ব্যতিক্রম দেখেছি কেকের বেলায়। তিনি ভাটে মলাটে এক। এটা ভালো লেগেছে কারণ এক্ষেত্রে দ্বৈতপরিচিতির প্রকট দ্বিচারিতার প্রদর্শন নেই।
এখানে প্রতিক্রিয়া বলতে অন্যের লেখার ওপর পাঠকের মন্তব্যের ধরণ এবং কোন প্রবণতা থেকে মানুষ এমন মন্তব্য করতে পারে তাতেই আলোচনা সীমাবদ্ধ রাখছি। আমার ধারণা ঠিক লাগলে তার পক্ষে কেউ কিছু সংযোজন, সংশোধন, পরিমার্জন করতে পারেন। ভুল মনে হলে প্রতিযুক্তি সহকারে খণ্ডন করতে পারেন। তবে শোভন আঙ্গিকে হলে রুচিশীল লাগে।
১. নিখাদ প্রশংসক - সুন্দর সকাল, মনোরম সূর্যাস্ত, ফুটফুটে শিশুর হাসি দেখে মনের মধ্যে অস্ফূটে গুঞ্জরিত হয় - আহা! কিন্তু লেখা তো এমন স্বাভাবিক ঘটনা নয় - তার জন্য লেগেছে লেখকের নিষ্ঠা, প্রয়াস। তা ভালো লাগলে মুক্তকণ্ঠে প্রশংসা করলে লেখক উৎসাহ পান। কিছু না লিখে ৪/৫ রেটিং দিলেও writer may get a quantitative idea about qualitative aspect of the write-up. আমি কোনো লেখা ভালো লাগলে বিশদে বা সংক্ষেপে মন্তব্য করি। রেটিংও দিয়ে থাকি।
২. নৈর্ব্যক্তিক সমালোচক - এরা লেখার বিষয়, শৈলী, সমাপন নিয়ে গঠনমুলক সমালোচনা করেন। নতুন দৃষ্টিভঙ্গি দেন। ভিন্নমত পোষণ করলে যুক্তি, তথ্য সহকারে পেশ করেন। এমন সমালোচনা পড়লে বোঝা যায় লেখাটি পড়ে, আত্মস্থ করে তারপর তিনি অভিমত দিচ্ছেন। এদের আঙ্গিক কর্কশ, অশালীন, তাচ্ছিল্যসূচক নয়।
৩. ছিদ্রান্বেষী - চাল বাঁশকাঠি হোক বা বাসমতী - এরা কাঁকড়ে বেশী আগ্ৰহী। লেখার মূল প্রসঙ্গ, পার্শ্বপ্রসঙ্গ সম্পর্কে বিশেষ উচ্চবাচ্য না করে বানান ভুল, বিদেশী নামের সঠিক উচ্চারণ এনাদের মন্তব্যের USP.
৪. পাণ্ডিত্য জাহির - এনাদের মন্তব্যে লেখার ওপর আকর্ষণীয় আলোচনার থেকেও ঐ সূত্রে নিজের পাণ্ডিত্য ও পড়াশোনার ব্যপ্তি জাহিরের তাড়না চোখে পড়ে। এই প্রবণতা উদগ্ৰ। চেপে রাখা মুশকিল।
৫. রমতা যোগী - পাঠমন্তব্য হিসেবে বাঞ্ছনীয় সেই লেখাটির ওপর আলোচনা। এই গোত্রের মন্তব্যকারীরা তা না করে বা সামান্য বুড়ি ছুঁয়ে ঐ প্রেক্ষিতে বা দুরসম্পর্কিত প্রসঙ্গে তাদের অতীত অভিজ্ঞতা পেশ করেন। কখনো তার ফলে ট্রিগার হয়ে যায় Domino Effect. তখন আরো অনেকে Anecdotal Accounts এর ঝাঁপি খুলে বসেন। লেখাটির ওপর ফোকাসড্, বাঞ্ছিত আলোচনা মন্দির থেকে দুরে ছেড়ে রাখা চটির মতো পড়ে থাকে।
মন্তব্যকারীর যোগ্যতা
সংগীত, চিত্রকলা, চলচ্চিত্র, সাহিত্য এসবের ওপর সুচিন্তিত মন্তব্য করতে অন্য গোত্রের মানসিকতা এবং এলেম লাগে। একটা উদাহরণ দিই। বৌমণি সারেগামা সংগীত অনুষ্ঠানের নিয়মিত দর্শক। আমি অনিয়মিত। ওখানে যাঁরা বিচারক হয়ে আসেন তাদের প্রতিটি প্রতিযোগীর প্রতিটি গানের পরে মার্কিং দিতে হয়। সঞ্চালক আশা করেন বিচারকরা কিছু মন্তব্যও করবেন। পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তী, কুমার শানু, বাপ্পী লাহিড়ী গোত্রের বিচারকরা সচরাচর বিশেষ কিছু বলেন না। মার্কিং ৭ বা ১০ যাই দিন, অধিকাংশ সময় কেকে বর্ণিত কিছু প্রশংসাসূচক কথা বলেন।
কিন্তু শান্তনু মৈত্র, অভিজিৎ, সোনু নিগম মায় লারে লাপ্পা গানের জন্য বিখ্যাত দলের মেহেন্দিও একদম নিখুঁতভাবে গায়কীর কোথায়, কী বিচ্যূতি হয়েছে উল্লেখ করেন। কখনো গেয়ে দেখিয়ে দেন। এতে প্রতিযোগী নিজের ভুল বুঝতে পারেন। চেষ্টা করলে পরে সংশোধন করতেও পারেন।
গুরুতেও আমার এবং অন্যের কিছু লেখার ওপর কিছু মন্তব্যকারীর মন্তব্য মুগ্ধ করেছে। তা নিছক হাততালি নয়। তবে কমার্শিয়াল প্রোগ্রামই হোক বা উন্মুক্ত ফোরামে শখের লেখালেখি - তার ওপর এমন মন্তব্যকারীর সংখ্যা কমই হয় কারণ তা করতে এলেম, সদিচ্ছা এবং সময় লাগে।
কেকের মন্তব্যে তিনটি বাক্য প্রসঙ্গে:
১. খোলাপাতার সব রকম সমালোচনা নিতে না পারলে খোলা পাতায় লেখা কেন?
২. খ্যাঁক, রাগ প্রসঙ্গে মনে হয় মানুষের ধৈর্য্য আরেকটু বেশি হলে ভালো হতো।
৩. জাজ করার প্রবণতা আরেকটু কম হলে বড় ভালো হতো।
এক নম্বর পয়েন্টের সাথে আমি শর্তসাপেক্ষে সহমত। কী সেই শর্ত? ধরা যাক লেখাটিতে রাজনৈতিক রং আছে এবং সমালোচকের রাজনৈতিক অবস্থান ভিন্ন। সেক্ষেত্রে লেখক যদি ব্যঙ্গ, বিদ্রুপ সহকারে আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে তার বক্তব্য পেশ না করে থাকেন তাহলে বিরূদ্ধ সমালোচনার শৈলীও তেমনই হওয়া উচিত। কিন্তু তাও যদি সমালোচক চাড্ডি, তিনো, মাকু জাতীয় বিকৃত লিংগোভঙ্গিতে কুৎসিত ভাষায় লেখককে আক্রমণ করেন তাহলে লেখকের দুটি অপশন থাকে।
এক - জাস্ট উপেক্ষা। বাস্তবেও আমরা রাস্তায় পিছন এবং দুর থেকে ঘেয়ো কুকুরের ঘেউ ঘেউ উপেক্ষা করে চলে যাই। (সচরাচর সামনাসামনি এরা আসে না)।
দুই - যদি একদম পিছনে এসে বিশ্রীভাবে ঘেউঘেউ করে তাহলে হাতে ছাতা বা ওয়াকিং স্টিক থাকলে ঘা কতক কষিয়ে দেওয়া। তবে নর্দমা থেকে পাঁক মেখে উঠে আসা কুকুর ঠেঙিয়ে লাঠি, ছাতা নোংরা করতে না চাইলে কিছু না করলেও চলে। কারণ একটি চিরন্তন সত্য - Barking dogs never bite. কিছুক্ষণ ভ্যাক ভ্যাক করে থেমে যাবে।
যদি লেখাটি রাজনৈতিক বা কোনো ইজম ধর্মী না হয়ে অন্য কোনো বিষয়ে লেখকের অভিমত, ভাবনা অথবা অভিজ্ঞতা, স্মৃতিচারণমূলক হয় তাহলে লেখাটি ভালো না লাগলে সমালোচনা হতে হবে অবশ্যই শালীন।
মন্তব্যকারীর এই প্রাথমিক সৌজন্যবোধ না থাকলে খোলাপাতায় লিখেছেন বলে অশোভন মন্তব্যও লেখককে খোলামনে মেনে নিতে হবে - এমন একপেশে মতবাদে আমি বিশ্বাসী নই। তবে এক্ষেত্রেও ঋষিসূলভ প্রজ্ঞার লেখক - “ছায়ায় (নিকের) সাথে যুদ্ধ করে গাত্রে হোলো ব্যাথা” - আপ্তবাক্য স্মরণ করে তিক্ত সমালোচনা উপেক্ষা করতে পারেন। রাস্তায় সদ্য ঝরা শিউলি দেখলে কুড়োতে ইচ্ছে করে। বমি পড়ে থাকলে আমরা পাশ কাটিয়ে যাই। তেমনি।
কেকের দুই নম্বর বক্তব্য আমার কাছে তখনই গ্ৰাহ্য যখন পাঠকের শালীন, সুচিন্তিত বিরূদ্ধ সমালোচনার ক্ষেত্রেও লেখক অশোভন প্রতিক্রিয়া করেন। আমি গুরুতে এমন কমই দেখেছি। সচরাচর কিছু নিকই শুরুটা বক্রোক্তি দিয়ে করেন। সব লেখক ঋষিপ্রতিম স্থিতধী নন এবং আগেই বলেছি, লেখকের কাছে লেখা সন্তানস্বরূপ। সেক্ষেত্রে, কটূক্তিতে লেখকও অসহিষ্ণুতা প্রকাশ করে ফেলেন। এতে আমি দোষ দেখিনা।
যেদিন Specially programmed AI bot গুরুতে নিক হিসেবে লেখা পোষ্ট করবে, সেদিন হয়তো এঁড়ে পাবলিকের বক্রোক্তিতেও bot nik কোনো প্রতিক্রিয়া করবে না। ঐ special coding টা হতে হবে - only to post - not to react.
তবে মানুষের তৈরী সোফিয়ার মতো সেল্ফ লার্নিং সোশ্যাল রোবটের ক্ষেত্রে এসব চলবে না। সে মানুষের সাথে ক্রমাগত মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমে মানুষের প্রবণতা স্টাডি করে - যেমন বুনো ওল তেমনি বাঘা তেঁতুল ফান্ডায় - চৌখশ উত্তর দিতে শিখছে। তাই এঁড়ে মন্তব্য দেখলে সোফিয়াও হয়তো ছেড়ে কথা বলবে না।
এ প্রসঙ্গে ছয় বছর আগে উইল স্মিথের সাথে সোফিয়ার ইন্টারভিউটা দেখা যেতে পারে। এতোদিনে সোফিয়া লান হয়তো আরো বেশী বুদ্ধিমতী হয়ে গেছেন। সেদিন রোবট সম্পর্কে জোক করতে গেছিল উইল। সোফিয়া শালীন ভাষায় তীক্ষ্ণ মন্তব্যে মজা ছুটিয়ে দিয়েছে ওর। হলেই বা যন্ত্রমানবী, সেলেব প্রিভিলেজ নিয়ে প্রথম আলাপেই সোফিয়াকে কিস করতে গেছিল উইল - তখনও সোফিয়া উইলকে উইন্ক করে মিট্টি টিজ করেছে। ভিডিওটা থাকলো নীচে।
তিন নম্বর প্রসঙ্গে কেকে লানকে কয়েকবার বিভিন্নভাবে বলতে দেখেছি। হয়তো তিনি ব্যক্তিজীবনে নানা কারণে, নানা ভাবে, নানাজনের কাছে জাজড্ হয়েছেন। তাই এটা তার কাছে বিশেষ গুরুত্ব পায়। আমার কাছে এটা আদৌ ভাবনার বিষয় নয়। কারণ আমি বুঝি ইঁট, বুলেট, লাঠির মতো অজীব বস্তুরাই জাজমেন্টাল নয়। Completely indifferent. তাই যারা তাদের যাদের ওপরেই প্রয়োগ করুক না কেন - তারা তাদের নিজস্ব বিচারবোধ প্রয়োগ না করেই তাদের ওপর বর্ষিত হবে।
সজীব প্রাণীর মগজে সামান্য ঘিলু থাকলেই তারা নিজস্ব জ্ঞান, বুদ্ধি, অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে বিচারপ্রবণ হতে বাধ্য। তবে পারিবারিক পরিমণ্ডল, জীবনে ঘাতপ্রতিঘাতের অভিজ্ঞতা, পড়াশোনা, বিশেষ মানুষের সাহচর্য, দার্শনিক প্রজ্ঞা ইত্যাদি প্রভৃতি থেকে কিছু মানুষ উপলব্ধি করে সামাজিক মেলামেশায় অনেক কিছু অনুভব করা গেলেও তার প্রকাশ বাঞ্ছনীয় নয়। সেটা তারা সজ্ঞানে অভ্যাস করে। মনে করে এতে নিজের ঋদ্ধসত্তা ইমেজ বজায় থাকে। চেষ্টা করেও এটা আয়ত্ত করা সহজ নয়। তাই এটা অবশ্যই এক ধরনের উত্তরণ। এটাকেই অনেকে সময় অনেকের Non-judgemental approach বলে ভ্রম হয়।
তবে যাঁদের স্বভাবে এ জিনিস সচেতন প্রয়াস ছাড়াই স্বাভাবিকভাবে বিরাজ করে - তিনি সাধারণের ঊর্ধ্বে - তিনি আমার কাছে প্রণম্য। তাঁদের মধ্যে - অন্য কেউ জাজমেন্টাল হলেও - কোনো ক্ষোদোক্তি দেখা যায় না।
পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
লেখার শিরোনাম দেখে খুবই ঘাবড়ে গেছিলাম! আমার বেশ একটু সোশ্যাল অ্যাংজাইটি আছে, বেশি অ্যাটেনশনে খুব অস্বস্তি হয়। পুরো লেখাটা পড়ে সে ধারণাটা কাটলো যাহোক। বেশ ইম্প্রেসড হলাম যে লেখক ঐ মন্তব্য নিয়ে প্রচুর ভেবেছেন, তারপর পয়েন্ট ধরে ধরে ডিটেলে অ্যানালিসিস করেছেন। এ করতে অনেক সময়, এফোর্ট ও চিন্তা লাগে, সন্দেহ নেই। এটা অবশ্যই অ্যাপ্রিশিয়েট করার মত ব্যপার। এর মধ্যে মন্তব্যকারীর ক্লাসিফিকেশনটা তো আমার খুবই ভালো লাগলো। খুব যথাযথ হয়েছে। বাকি লেখার সাথে কিছু জায়গায় একমত, কিছু জায়গায় নই। তা সে হতেই পারে। লেখকের ভাবনাধারা অন্যান্য লেখা বা মন্তব্য থেকে কিছুটা আন্দাজ করতাম। সেটা এখানে নিঃসন্দেহ ভাবে, স্পষ্ট করে পড়তে পারলাম। পাঠকদের ভাবনাধারাও কিছু কিছু জানতে পারলে বেশ ভালো লাগবে।
আপনার প্রস্তাবিত Gender / Age / Background neutral সম্বোধন লান আর একধাপ এগিয়ে Species neutral হিসেবে সোফিয়া লান লিখে আমার খুব মজা লেগেছে। আপনার কেমন লাগলো বলবেন।
সেদিন দুরে নয় যেদিন সোফিয়া লানের সাথে চ্যাট বা মুখোমুখি আলোচনা গুরুর কিছু বিশেষ প্রজাতির নিকের সাথে আলোচনার থেকে অনেক বেশী Engaging, Rewarding and Refreshing মনে হবে।
dc | 2402:e280:2141:1e8:8df5:dad0:1621:***:*** | ১৯ মে ২০২৪ ২২:৩৭531998
"অসাধারন মানুষের কাছেও নিজের রচনা সন্তানসম "
এই লাইনটা ভালো লাগলো। গুরুতে কতো লেখা পড়েছি, কিন্তু ঠিক এইটা আগে পড়িনি বা বোধায় এই কথাটা মনে আসেনি। এইজন্য গুরুতে আসি - মাঝে মাঝেই নতুন কিছু শেখা যায় :-) সমরেশবাবুকে ধন্যবাদ।
"কিন্তু যারা এই ফোরামের সাথে দীর্ঘদিন ধরে যুক্ত এবং বেশ এ্যাকটিভ তারা নিজের নাম এবং মুখের সপাট ছবি দেন না। অর্থাৎ গুরুর কোর ফিলজফি গোপনীয়তা। হয়তো সরকার বিরোধী বক্তব্য রাখা একটা কারণ হতে পারে।"
ঠিক তা নয়, অন্তত আমার ক্ষেত্রে নয় বা আমার মতো আরো দুয়েকজন যারা এখনো লগইন না করে এমনি নিক নিয়ে লেখেন, তাঁদের ক্ষেত্রেও বোধায় নয়। আসলে এটা হলো বহু পুরনো একটা ফিলোজফি। ইন্টারনেটের আদিযুগে ইউজাররা অ্যানোনিমিটি, প্রাইভেসি ইত্যাদি নিয়ে মাথা ঘামাতো, সেসব নিয়ে এক সময়ে বহু তর্ক হয়েছে, প্রবন্ধও লেখা হয়েছে। অ্যানোনিমিটি মানে এই না যে আমি সরকারের সমালোচনা করতে চাই বা নিজেকে গোপন করে কিছু করতে চাই - বরং মনে করা হতো প্রতিটা সিটিজেনের রাইট হলো অ্যানোনিমিটি আর প্রাইভেসি। আমি আমার নাম বা ছবি প্রকাশ না করেও অনলাইন হতে পারি, আর অন্যরা আমার সেই চয়েজকে মেনে নেবে, এমন দাবী করতে পারি। প্রাচীনকালের নেটিকেট এর অংশ বলতে পারেন। সেই অভ্যাস এখনো কিছুটা রয়ে গেছে :-)
kk | 172.56.***.*** | ২০ মে ২০২৪ ২০:২৩532026
"আপনার প্রস্তাবিত Gender / Age / Background neutral সম্বোধন লান আর একধাপ এগিয়ে Species neutral হিসেবে সোফিয়া লান লিখে আমার খুব মজা লেগেছে। আপনার কেমন লাগলো বলবেন।"
দিব্যি লেগেছে :-)
নিজের নাম সম্বলিত টই টেনে তোলা আমার উদ্দেশ্য নয়। আপনার প্রশ্নের উত্তর দিতেই এলাম।
১. ভাটে কেকের একটা মন্তব্য প্রসঙ্গে কেন আমি ব্লগে আমার ভাবনা বিশদে লিখেছি তা শুরুতেই অকপটে লিখেছিলাম। সেটা হচ্ছে ভাটে কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ে আলোচনায় ফোকাসড্ কন্টিনিউটি থাকে না। মাঝে চা, মিন্ট, লেমন গ্ৰাস, মব্যা, রাকৃব, মো-শা, মশা, পান্তা, পাস্তা ইপ্র ঢুকে পড়ে আলোচনা-সুতো সাড়ে তিন কিমি লম্বা সুপার বাসুকি মালগাড়ির মতো হয়ে যায়। মাঝে দেশমাতৃকা ঢুকে পড়লে - সুপার বাসুকি ইনটু ইনফিনিটি।
২. ভাটচরিত্র যতটা বুঝেছি - তার উদ্ভব সেই জন্যই - এলিফ্যান্ট টু এরোপ্লেন, হিগিনবথাম টু হিগস বোসন এহেন বহুবিধ বিষয়ে একসাথে আলোচনার সাথে ও খেউড়ে ট্রোলের টপিংস।
৩. শ্লেষ, বক্রোক্তি, অনুপ্রাস, উপমা, রূপক ইত্যাদি সাহিত্যের অলংকার। উপযুক্ত ব্যবহারে অনবদ্য এফেক্ট হয়। ‘কলিকাতা আছে কলিকাতাতেই’ তাই দারুণ লেগেছিল। ফোরামে আলোচনা, মন্তব্যের ক্ষেত্রেও সঠিক জায়গায়, শালীন আঙ্গিকে, পর্যাপ্ত মাত্রায় ঐসব অলংকারের অব্যর্থ প্রয়োগ অতীব স্বাদবর্ধ্বক। না হলে নিরন্তর সিরিয়াস আলোচনা সুশীল ভঙ্গিতে হয়ে চললে তার স্বাদ হব্যিষির মতো আলুনী লাগে। সরস প্রকাশভঙ্গি রম্যরসময় সৃজনশীলতার পরিচায়ক। প্রকাশের প্রয়োগভঙ্গি মন্তব্যকারীর জাত নির্ধারক। তাই কটূক্তি বস্তি কালচার। তা কোনোভাবেই অলংকার গোত্রে পড়ে না। গুরুতেই একটা মন্তব্যের উদাহরণ দিই - “গু-কে গু না বলে বিষ্ঠা বললে পোঁদে আরাম হয় মনে হচ্ছে, আজব মাল!” (#)
৪. যে বিষয়ে ফোকাসড্ আলোচনার জন্য হপাতে লেখাটি রেখেছিলাম সেটা ছিল - লেখার ওপর পাঠকের মন্তব্যের প্রচলিত ধরণ, প্রত্যাশিত ধরণ, লেখকের প্রতিমন্তব্য, প্রতিক্রিয়া ইত্যাদি।
৫. তাও দেখলাম &/ ঐ লেখাটির প্রসঙ্গে ভাটেই কিছু কথা লিখলেন। বাঞ্ছনীয় ছিল ওখানেই লেখা। তাহলে সব আলোচনা এক জায়গায় থাকতো।
৬. ভাটে ১৭৩৪০ পাতায় ১৯.৫/১৯:৩৪ জনৈক নিক লিখলেন - টইয়ের আলোচনা ভাটে টেনে আনা বেশ বিরক্তিকর। উত্তর চাইলে লেখককেই বললে হয়। এই আলোচনা হয়তো লেখক দেখতেও পাচ্ছেন না, দেখলে তাঁর কোন উত্তরও হয়তো দেওয়ার থাকত। পাঠক হিসেবে আমরা একটা দিকই পাচ্ছি।
৭. ঐ মন্তব্যের স্বপক্ষে আমি ২১:২২ এ লিখলাম - (ক). একদম সহমত। এ জিনিস বেশ কয়েকবার এখানে দেখেছি। (খ). আবার ফেবু টেবু থেকেও টপিক হিঁচড়ে এনে ভাটে আলোচনা হতে দেখেছি। কনটেকস্ট না বুঝে মনে হয়েছে UFO থেকে ভাটে খসে পড়া বল্টু।
৮. ১৭৩৪১-২৩:২৪এ &/ লিখলেন : - ভাটিয়ালি তো ফ্রীলি ইন্টারয়াক্ট করার জন্যই। … … সোশাল মিডিয়া থেকে কোনো আলোচনার সূত্র আনলে তা যদি বারণযোগ্য হয়, তাহলে খবরের কাগজের খবর সূত্রে আলোচনাও তো সেই একই কারণে বারণযোগ্য হবার কথা।
৯. এই প্রেক্ষিতে ভাটে আমার মন্তব্যের ৭খ অংশটি উইথড্র করছি কারণ তা এই পোষ্টে আমার ২ নম্বর পয়েন্টের স্ববিরোধী। ফেবু, X, কাগজ, বই, টিভি, সিনেমা এমন বহুসোর্স থেকে টপিক টেনে আলোচনা না করলে ভাটচরিত্র বজায় থাকে না। আমি তার ধরতাই না পেলে কিছু এসে যায় না। সংশ্লিষ্ট আলোচকরা বুঝলেই যথেষ্ট।
১০. ১৭৩৪১-২৩:৩১-&/ লিখলেন :- আগে এও জানতাম যে টইয়ের আলোচনা ভাটিয়ালিতে আসে, ভাটিয়ালির আলোচনার সূত্রে টই খোলা হয় — এগুলো একদম স্বীকৃত ব্যাপার। অর্থাৎ টই থেকে ভাট আবার ভাট থেকে টই একেবারে খোলামেলা যাওয়া আসা করে কথাসূত্র। সাম্প্রতিক আলোচনার সূত্রে এইখানেও কনফিউশন হল। এই ব্যাপারটা যদি বারণ করা হয়, তাহলে সেটাও জানা দরকার। কোর কমিটির কেউ ক্লারিফাই করুন অনুগ্রহ করে।
১১. ১৭৩৪২-২৩:৪৬-পাইয়ের বক্তব্যের সার কথা :- ভাট থেকে টই আর উল্টোটা আমার এক মনে হয় না। টই/ব্লগ/বুবুভার কোন লেখা নিয়ে ভাটে লেখকের অনুপস্থিতিতে দল বেঁধে নেগেটিভ সমালোচনা চালিয়ে যাওয়ার প্রবণতা ভাল লাগেনা।
১২. ১৭৩৪১-২৩:২৪এ &/ আরো লিখলেন : - অ্যানোনিমিটির একটা বড় কারণ অনেকেই দেখছি বিস্মৃত হচ্ছেন। সেটা হল জাতিধর্মবর্ণগোত্র-অর্থকৌলীন্য- সামাজিক অবস্থান ইত্যাদি নির্বিশেষে সমানে সমানে বক্তব্য রাখার ব্যাপারটা।
১৩. এক্ষেত্রে &/ অ্যানোনিমিটির সুবিধার সাথে অসুবিধার ব্যাপারটা ভুলে গেলেন যার জন্য ইনি এবং যোষিতা জর্জরিত। ঐ অ্যানোনিমিটির সুবাদেই কিছু লোক কটূ ট্রোল করছেন এনাদের। এনারাও ছেড়ে কথা বলছেন না। এনারা ট্রোলের ভাষা ও শৈলী দেখে বুঝতেও পারছেন পরিবর্তশীল নিকের আড়াল থেকে কারা এসব করছেন - তবু বারবার গুরুর এ্যাডমিনের কাছে আবেদেন করছেন - ক. এদের মুখোশ খুলে দেওয়া হোক। খ. ট্রোলগুলি মুছে দেয়া হোক।
১৪. আমার মনে হয় (ক) নম্বর কার্যটি এনারাও তো করতে পারেন। (খ) নম্বর এ্যাকশন কেন করা হচ্ছে আমার জানা নেই। তবে নীতিগতভাবে আমি উপরে ৩ নম্বর পয়েন্টের শেষে (#) জাতীয় মন্তব্য মুছে দেওয়ার পক্ষপাতী। কিন্তু মুছলে যদি তারা একই বা আরো কটূ মন্তব্য করে তাহলে? গুরুর মতো ভলান্টিয়ার বেসড ফোরামে কে সারাক্ষণ এসব মোছামুছি করবে?
১৫. এখানেই আসছে ১২ নং পয়েন্টে &/ গুরুর যে শুরুয়াতি ফিলোজফি মনে করিয়ে দিতে চেয়েছেন তার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার প্রতিফল। If familiarity breeds contempt - anonymity gives licence to abuse.
তা না চাইলে সবাইকে ওপেন হতে হবে। গাছেরও খাবো, তলারও কুড়োবো - মানে দু নৌকায় পা রেখে যার যেটা সুবিধা কেবল সেটুকুই নেবো - তা সবসময় সম্ভব হয়না।
ফলে কাছাখোলা ওপেন ফোরামের বদলে ক্লোজড্ কমিউনিটি হতে হবে যেখানে Verified Login credential ছাড়া কেউ interact করতে পারবে না। তা টেকনিক্যালি পসিবল না হলে এবং গুরুর ঘোষিত লিবারেল ফিলোজফিক্যাল স্ট্যান্ডপয়েন্ট থেকে উচিত না মনে হলে Unsolicited Telemarketing Nuisance (UTN) এর মতো অবাঞ্ছিত ট্রোল ঝেলতে হবে বা উপেক্ষা করতে হবে। গুরুর নিকের মতো UTN ও রক্তবীজের ঝাড়। একই বিষয়ে ২৩ টা UT নম্বর ব্লক করলে পরের বার ২৪তম নাম্বার থেকে কল আসবে।
১৬. এটা যেহেতু একটা জেনারেল টপিক - তাই যারা এই লেখাটি পড়েননি, কেবল ভাটের আলোচনা দেখেছেন - তাদের অবগতির জন্যও এই মন্তব্যটি ভাটেও রাখলাম।
বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে,
মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা,
কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
আমাদের কথা
আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের
কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি
জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
বুলবুলভাজা
এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ।
দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও
লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
হরিদাস পালেরা
এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে
পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান
নিজের চোখে...... আরও ...
টইপত্তর
নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান।
এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর।
... আরও ...
ভাটিয়া৯
যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই,
সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক
আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
টইপত্তর, ভাটিয়া৯, হরিদাস পাল(ব্লগ) এবং খেরোর খাতার লেখার বক্তব্য লেখকের নিজস্ব, গুরুচণ্ডা৯র কোন দায়িত্ব নেই। | ♦ :
পঠিত সংখ্যাটি ১৩ই জানুয়ারি ২০২০ থেকে, লেখাটি যদি তার আগে লেখা হয়ে থাকে তাহলে এই সংখ্যাটি সঠিক পরিমাপ নয়। এই বিভ্রান্তির জন্য আমরা দুঃখিত।
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক।
অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি।
যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।
মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি
বার পঠিত
সকলকে জানান
উপরে যে কোনো বোতাম টিপে পরিচিতদের সঙ্গে ভাগ করে নিন
গুরুচন্ডা৯ বার্তা
গুরুতে নতুন?
এত নামধাম দেখে গুলিয়ে যাচ্ছে? আসলে আপনি এতদিন ইংরিজিতে সামাজিক মাধ্যম দেখে এসেছেন। এবার টুক করে বাংলায়ও সড়গড় হয়ে নিন। কটা তো মাত্র নাম।
গুরুর বিভাগ সমূহ, যা মাথার উপরে অথবা বাঁদিকের ভোজনতালিকায় পাবেনঃ
হরিদাসের বুলবুলভাজা : গুরুর সম্পাদিত বিভাগ। টাটকা তাজা হাতেগরম প্রবন্ধ, লেখালিখি, সম্ভব ও অসম্ভব সকল বিষয় এবং বস্তু নিয়ে। এর ভিতরে আছে অনেক কিছু। তার মধ্যে কয়েকটি বিভাগ নিচে।
শনিবারের বারবেলা : চিত্ররূপ ও অক্ষরে বাঙ্ময় কিছু ধারাবাহিক, যাদের টানে আপনাকে চলে আসতে হবে গুরুর পাতায়, ঠিক শনিবারের বারবেলায়।
রবিবারের পড়াবই : পড়া বই নিয়ে কাটাছেঁড়া সমালোচনা, পাঠপ্রতিক্রিয়া, খবরাখবর, বই নিয়ে হইচই,বই আমরা পড়াবই।
বুধবারের সিরিয়াস৯ : নির্দিষ্ট বিষয় ধরে সাপ্তাহিক বিভাগ। ততটা সিরিয়াসও নয় বলে শেষে রয়ে গেছে ৯।
কূটকচা৯ : গুরু কিন্তু গম্ভীর নয়, তাই গুরুগম্ভীর বিষয়াশয় নিয়ে ইয়ার্কি ফুক্কুড়ি ভরা লেখাপত্তর নিয়েই যতরাজ্যের কূটকচা৯। কবে কখন বেরোয় তার কোনো ঠিক ঠিকানা নেই।
হরিদাস পাল : চলতি কথায় যাদের বলে ব্লগার, আমরা বলি হরিদাস পাল। অসম্পাদিত ব্লগের লেখালিখি।
খেরোর খাতা : গুরুর সমস্ত ব্যবহারকারী, হরিদাস পাল দের নিজের দেয়াল। আঁকিবুঁকি, লেখালিখির জায়গা।
টইপত্তর : বিষয়ভিত্তিক আলোচনা। বাংলায় যাকে বলে মেসেজবোর্ড।
ভাটিয়া৯ : নিখাদ ভাট। নিষ্পাপ ও নিখাদ গলা ছাড়ার জায়গা। কথার পিঠে কথা চালাচালির জায়গা। সুতো খুঁজে পাওয়ার দায়িত্ব, যিনি যাচ্ছেন তাঁর। কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।
লগিন করে থাকলে ডানদিকের ভোজনতালিকায় যা পাবেনঃ
আমার গুরুঃ আপনার নিজস্ব গুরুর পাতা। কোথায় কী ঘটছে, কে কী লিখছে, তার মোটামুটি বিবরণ পেয়ে যাবেন এখানেই।
খাতা বা খেরোর খাতাঃ আপনার নিজস্ব খেরোর খাতা। আঁকিবুকি ও লেখালিখির জায়গা।
এটা-সেটাঃ এদিক সেদিক যা মন্তব্য করেছেন, সেসব গুরুতে হারিয়ে যায়না। সব পাবেন এই পাতায়।
গ্রাহকরাঃ আপনার গ্রাহক তালিকা। আপনি লিখলেই সঙ্গে সঙ্গে গ্রাহকরা পাবেন নোটিফিকেশন।
নোটিঃ আপনার নোটিফিকেশন পাবার জায়গা। আপনাকে কেউ উল্লেখ করুক, আপনি যাদের গ্রাহক, তাঁরা কিছু লিখুন, বা উল্লেখযোগ্য কিছু ঘটুক, জলদি পেয়ে যাবেন নোটিফিকেশন।
বুকমার্কঃ আপনার জমিয়ে রাখা লেখা। যা আপনি ফিরে এসে বারবার পড়বেন।
প্রিয় লেখকঃ আপনি যাদের গ্রাহক হয়েছেন, তাদের তালিকা।