৷৷ ২ ৷৷
চোখ থেকে চশমাটা খুলে, বাঁহাতে স্টেপল করা কয়েকটি পাতার গোছা ধরে প্রমোদ রায় কিছুক্ষণ ভাবলেশহীন মুখে তাকিয়ে রইলেন সামনে সোফায় বসা সলিলের দিকে।
সলিলও উদগ্ৰীব হয়ে তাকিয়ে আছে তাঁর দিকে। একটা ভিতু খরগোশের মতো লাগছে ওকে। একবার ঢোঁক গিললো। সারা শরীরে মাখা ডুবন্ত মানুষের আর্তি।
একটু পরে তিনি সপ্রশংস দৃষ্টিতে কোনাকুনি মুখ ঘোরালেন ডানদিকে সোফায় বসা সুদীপের দিকে। সহাস্যে বললেন, তোমার বন্ধুতো বাজী মেরে দিল হে ভাগ্নে !
সুদীপ প্রবল উৎসাহে একটা বিরাশি সিক্কার থাপ্পড় কষালো সমকোনে পাশে বসা সলিলের হাঁটুতে - কী, বলেছিলাম না?
সলিল সুদীপের স্কুলের বন্ধু। কলেজেও ওরা একসাথে পড়েছিল। বিএ পাশ করে সুদীপ ওর মামা প্রমোদ রায়ের টেলিভিশন সিরিয়াল প্রোডাকশন কোম্পানিতে ঢুকেছে। সলিলের ছিল লেখালেখি, গ্ৰুপ থিয়েটারের শখ। তাই দশটা পাঁচটার চাকরি বাকরির চেষ্টা করেনি। নিম্নবিত্ত পরিবারে বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান সলিল। উত্তর কলকাতার শ্যামপুকুর লেনের ছোট্ট একটা ভাড়াবাড়িতে আজন্ম আছে। সলিল ভাবুক প্রকৃতির, লাজুক, নির্বিরোধী ছেলে। তাই সবাই ওকে পছন্দ করে। ওর জীবনে কোনো উচ্চাশা নেই। লেখালেখি, লিটল ম্যাগাজিন, কবি সম্মেলন, নাট্য উৎসব এসব নিয়েই মজে ছিল সলিল। ওর বাবা মাও কোনোদিন আশা করেননি ছেলে বড় হয়ে ভালো চাকরি করে সংসারে সাচ্ছল্য আনবে। ও যে ওর ইচ্ছা মতো জীবনযাপন করে আনন্দে আছে এতেই তাঁরা খুশী ছিলেন। এমন বাবা মা সচরাচর দেখা যায় না। বেশিরভাগ পিতামাতাই তাঁদের ব্যর্থতার গ্লানি, তুচ্ছতার দুঃখ সন্তানের সাফল্যে ভুলতে চান।
সলিলের বাবা নরেনবাবু ছিলেন একটা ছোট কোম্পানির কেরানী। যা মাইনে পেতেন তিনজনের মোটামুটি চলে যেতো। সলিলের কোনো শখ বা নেশা ছিল না। দুটো ট্যূইশন করতো। লেখালেখি করে এখান ওখান থেকে কিছু সামান্য সাম্মানিক পেতো। তাতেই ওর হাত খরচা চলে যেতো। সংসারে আর্থিক সাহায্য করতে পারতো না বলে বড় হয়ে বাড়িতে দুবেলা দুমুঠো খাওয়া ছাড়া কখনো আর কিছু চাইতো না সলিল। ভবিষ্যতের কথাও সেভাবে কখনো ভাবে নি ভাবুক সলিল।
প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে না পেরে কোম্পানিটা বন্ধ হয়ে গেল। সঞ্চয় বিশেষ ছিল না নরেনবাবুর। ঐ বয়সে নতুন চাকরি পাওয়াও মুশকিল। সলিলকে রাতারাতি লেখালেখির কাল্পনিক জগৎ থেকে বাস্তবের কঠিন মাটিতে নেমে আসতে হোলো। এবং সে মাটিও পায়ের তলা থেকে আচমকাই সরে গেল। নরেনবাবু হঠাৎ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেন। হয়তো দুশ্চিন্তায়। হন্যে হয়ে একটা চাকরির জন্য যখন সলিল ঘুরে বেড়াচ্ছে তখন একদিন রাস্তায় দেখা হয়ে গেল সুদীপের সাথে।
সলিলের কথা শুনে সুদীপ বললো, শোন তুই একটা জিনিসই ভালো পারিস, লেখালেখি। চল একদিন আমার সাথে মামার কাছে। উনি টিভি সিরিয়ালের জন্য এপিসোড রাইটার খুঁজছেন। মামা কোনো প্রথিতযশা লেখকদের গল্প উপন্যাস থেকে সিরিয়াল বানান না। ওনার ফর্মুলা আলাদা। তোর লেখা মামার পছন্দ হলে যা পাবি তোদের মায়ে পোয়ে ভালোই চলে যাবে। তাছাড়া তোর তো চাকরির কোনো অভিজ্ঞতাও নেই, কে দেবে তোকে এই বাজারে চাকরি?
সলিল সব শুনে চিন্তিত মুখে বলে, কিন্তু সিরিয়ালের কাহিনী লেখার অভিজ্ঞতাও তো আমার নেই। আমি কি পারবো? সুদীপ খুব উৎসাহ নিয়ে বলে, আমার বিশ্বাস তুই পারবি। একদিন চলতো তুই আমার সাথে। আমি তোর কথা মামাকে বলে একটা এ্যাপয়েন্টমেন্ট নিচ্ছি শিগ্গির। তুই না করিস না। অবশ্য না করার মতো অবস্থায় তখন ছিলও না সলিল।
প্রমোদ রায় সফল প্রযোজক। দু তিনটে চ্যানেলে ওনার সিরিয়াল চলে। সিরিয়াল দর্শকের নাড়িটা উনি ভালোই বোঝেন। পরিচালক ওনার খোঁটায় বাঁধা গরু। উনি যেমন চান তেমনই হয়। সুদীপ ওর মামার পেয়ারের ভাগ্নে। নয়তো সলিলের মতো এলেবেলে লেখকের সাথে দেখা করতে বয়েই গেছে ওনার। তিন দিন আগে এই এলাহি বসার ঘরেই সুদীপের সাথে খুব সংকোচের সাথে এসে বসেছিল সলিল।
প্রমোদবাবু ব্যস্ত মানুষ। কথাও বলেন চাঁচাছোলা। তাই কোনো খেঁজুরে না করে সরাসরি সলিলকে বললেন, শোনো তোমার কথা আমি শুনেছি সুদীপের মুখে। তোমরা অনেক দিনের বন্ধু। শুনলাম সম্প্রতি তোমার বাবা মারা গেছেন বলে খুব অসুবিধার মধ্যে আছো। আমার তরফ থেকে এটা রাখো, বলে একটা চেকবই বের করে চেক লিখতে উদ্যত হলেন।
সলিল ককিয়ে উঠে বলে, না, না, আমি আপনার কাছে কোনো আর্থিক সাহায্য চাইতে আসিনি। সুদীপ বললো, আপনি সিরিয়ালের জন্য রাইটার খুঁজছেন, তাই ...। কথা শেষ না করে সলিল বন্ধুর দিকে অসহায়ভাবে তাকায়। সুদীপও বিমূঢ় হয়ে গেছে। মামার সাথে তো এমন কথা হয় নি।
খোলা চেকবইটা সেন্টার টেবিলেই পড়ে রইলো। প্রমোদবাবু আবার সোফায় হেলান দিয়ে বলেন, ভেরি গুড। এটাই আমি দেখতে চাইছিলাম। দান নয়, তুমি উপার্জন করবে। তোমার কলমের জোরে। সুদীপ তোমার কথা বলেছে আমায়। তোমার কিছু লেখাও দিয়েছে। আমি পড়েছি। তোমার কলমে ধার আছে। তবে তুমি যেমন চাইবে তেমন লেখার জন্য কলমকে পোষ মানাতে হবে। এখন তুমি কলমের অধীন। যা লেখো ওসব আমার সিরিয়ালে চলবে না। তার জন্য চাই অন্য যোগ্যতা। তোমাকে প্রমাণ করতে হবে তুমি তাও পারো। কি, চ্যালেঞ্জ নিতে রাজি আছো?
কী ভাবে? ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞাসা করে সলিল। এমন বিচিত্র, কাঠখোট্টা লোকের পাল্লায় ও আজ অবধি পড়েনি।
প্রমোদবাবু বলেন কালকূটের কিছু লেখার মুখবন্ধ খেয়াল করে দেখেছো? ভাবগম্ভীর আত্মানুসন্ধান যেন। যেমন ধরো অমৃত কুম্ভের সন্ধানে। কীভাবে শুরু হচ্ছে তার মুখবন্ধ?
"অনেক বিচিত্রের মধ্যে মানুষের চেয়ে বিচিত্র তো আর কিছু কোনোদিন দেখিনি। সে বিচিত্রের মধ্যেই আমার অপরূপের দর্শন ঘটেছে। ভেবেছিলাম, একদিন মানুষ ছাড়িয়ে, অন্য কোনোখানে আমার সেই অপরূপের দেখা পাবো। সব মানুষই একজন নন। আর-একজন আছেন তাঁর মধ্যে। একজন, যিনি কাজ করেন বাঁচবার জন্যে, অর্থের জন্যে গলদঘর্ম দিবানিশি যিনি আহার মৈথুন-সন্তানপালনের মহৎ কর্তব্যে ব্যাপৃত প্রায় সর্বক্ষণ, এই জটিল সংসারে যাঁর অনেক সংশয়, ভয় প্রতি পদে পদে। অবিশ্বাস, সন্দেহ, বিবাদ, এইসব নিয়ে যে মানুষ, তাঁর মধ্যে আছেন আর-একজন - যিনি কবি, সাহিত্যিক, পাঠক, শিল্পী, গায়ক, ভাবুক। এক কথায় যিনি রসপিপাসু। হয়তো তিনি লেখেন না, লেখা পড়ে হাসেন, কাঁদেন, মুগ্ধ হন। গায়ক নন, গান শুনে সুরের মাঝে হারিয়ে যান। মানুষের এই অনুভূতির তীব্রক্ষণে, সে বড় একলা। এ একাকীত্বের বেদনা যত গভীর, আনন্দ তেমনি তীব্র।"
হঠাৎ চুপ করে যান প্রমোদবাবু। সলিলের দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসতে থাকেন। একটু আগে খটখটে কথা বলা মানুষটাকে সেই মুহূর্তে চেনা যায় না। বিস্ফারিত নেত্রে সলিল বলে - আপনার পুরোটা মুখস্ত !
প্রমোদবাবু মজা কাঁঠালের মতো ভুরভুরিয়ে হেসে বলেন, কতবার যে পড়েছি ভায়া ওটা !
সলিল কাতরভাবে বলে, কিন্তু অমন লেখা কী আমার পক্ষে সম্ভব?
প্রমোদবাবু বলেন, না, না, অমন ভাবগম্ভীর লেখা তোমায় লিখতে হবে না। আমি তা চাইও না। তাহলে তো আমি কালকূটের লেখা নিয়েই সিরিয়াল করতে পারতাম।
-তাহলে? সলিল অকুল পাথারে হাবুডুবু খায়।
প্রমোদবাবু বলেন, তোমায় লিখতে হবে অহিফেন। অহিফেন বোঝো তো? গোদা বাংলায় আফিম।
সলিল ভেবে পায় না মামাবাবু তার সাথে রসিকতা করছেন কিনা। কোনোরকমে বলে, মানে?
প্রমোদবাবু বলেন, মানে নিত্যদিন চারপাশে যা হয়ে চলেছে সেইসব থোড়বড়িখাড়া কূটকচালি তামাশাই রঙচঙ মাখিয়ে আকর্ষণীয় ভঙ্গিতে পরিবেশন করতে হবে। আফিমের মতো তীব্র এর নেশা। কখন যে ধরে বোঝা যায় না, ধরলে ছাড়ে না। এসব দেখতে কোনো মাথা খাটাতে হয় না, বরং বুঁদ হয়ে দেখতে দেখতে মগজই যায় ঝিমিয়ে। কোনো সারবস্তু নেই। কার কোলে কার ছেলে সেটাই এক চূড়ান্ত সাসপেন্স। তাই নিয়েই টেনে নিয়ে যাওয়া যায় ছয় সাত এপিসোড। তারপর ক্যামেরার কারসাজি তো আছেই। একজন একটা কথা বলবে - সেখানে উপস্থিত পাঁচ ছ জনের মুখের এক্সপ্রেশন ক্যামেরা খেপে খেপে সময় নিয়ে ধরবে - সাথে থাকবে ঝ্যারাং ঝ্যারাং করে ইকো দিয়ে তীব্র ব্যাকগ্ৰাউন্ড মিউজিক। সুস্থ মানুষের এসব দেখলে মাথা ধরে যাবে, তবে অনেক মানুষ এই আফিমের নেশাতেই মজে থাকতে চায়। এরাই আমার বাণিজ্যের লক্ষী। আমি নিমিত্ত মাত্র।
সলিল বলে, কীভাবে প্রমাণ করতে হবে আমার ঐসব ট্র্যাশ, সরি, ইয়ে, মানে অহিফেন লেখার যোগ্যতা আছে?
প্রমোদবাবু প্রবল উৎসাহিত হয়ে বলেন, এ্যাই তো, লাইনে এসে গেছো ভায়া, তুমি পারবে সলিল, আমার মন বলছে তুমি ঠিক পারবে। আমার ইনটিউশন সচরাচর ভুল হয় না।
সলিল তখনও ভেবলে গিয়ে তাকিয়ে আছে।
প্রমোদবাবু বলেন, তোমার যে জঞ্জাল লেখার যোগ্যতা আছে তা প্রমাণ করতে নমুনা হিসেবে অন্তত দু হাজার শব্দের একটা ফরমায়েশী লেখা লিখতে হবে। তবে তিনটে শর্ত মেনে। প্রথম শর্ত, তাতে কোনো যুক্তিগ্ৰাহ্য প্লট থাকবে না। কোনো সুন্দরী মহিলা চরিত্র, রগরগে যৌনতা, রোমহর্ষক ঘটনা, আকর্ষণীয় পরিবেশ, নাটকীয় পরিস্থিতি কিছুই থাকবে না। দ্বিতীয় শর্ত, কোনো ভূমিকা ছাড়াই ন্যারেটিভ শুরু হবে সরাসরি এবং চলতে থাকবে কথোপকথনের ঢঙে। মাঝেও বিশদে বর্ণনা বর্জনীয়। তৃতীয় এবং প্রধান শর্ত, যাই লেখো, একবার পড়তে শুরু করলে কৌতূহলী পাঠক যেন শেষ অবধি না পড়ে ছাড়তে না পারে। আগমার্কা আঁতেল, অধৈর্য আত্মা বা আকাট মূর্খ পাঠক যদি কিছুটা পড়ে ধুত্তোর বলে রেখে দেয় - তাতে কিছু এসে যায় না। বরং সেটাই এক্ষেত্রে বিবেচিত হবে তোমার কলমের তাকত হিসেবে। তিনদিন পর বিকেল পাঁচটায় লেখা নিয়ে আসবে এখানে, ভাগ্নের সাথে। শর্ত অনুযায়ী লিখতে না পারলে বন্ধুকে জানিয়ে দিও, আসার দরকার নেই।
এসব ছিল তিনদিন আগের কথা। আজ প্রমোদবাবু সলিলের লেখা পড়ে বললেন, তো এটা কতো শব্দ হয়েছে?
-আজ্ঞে, দু হাজারের মধ্যে শেষ করতে পারিনি, তেইশশো হয়ে গেলো।
-তা হোক। তোমাকে আমিই বলেছিলাম সম্পূর্ণ অবান্তর কিছু লিখতে, তবু পড়তে শুরু করে আমিও ছাড়তে পারছিলাম না। শেষটা খাসা হয়েছে, বিশেষতঃ, শেষ লাইনটা। তবে কি জানো ভায়া, হিংয়ের কৌটো কয়েকবার ধুলেও তার গন্ধ পুরোপুরি যায় না?
তিনদিন আগেও সলিল মামাবাবুর কথাবার্তার পারম্পর্য, তাৎপর্য বুঝতে হিমশিম খেয়েছে। এখন শেষে এমন একটা বেমক্কা অপ্রাসঙ্গিক কথা শুনে কী বলবে ভেবে পায় না। বোকার মতো সম্মতিসূচক মাথা নাড়ে।
মামাবাবু বলেন, তোমারও হয়েছে সেই অবস্থা। সলিল হতভম্ব হয়ে বলে, মানে!
মামাবাবু মুচকি মুচকি হাসতে হাসতে বলেন, তুমি একটা “অনবদ্য অবান্তর” লেখা লিখেছো। কী কথাটা অক্সিমোরোনিক লাগছে তো? ভেবোনা, মানে আমি ঠিক যেমন চেয়েছিলাম তুমি তেমনই কিছু লিখেছো। তবে সেখানেও কয়েক জায়গায় দেখা যাচ্ছে কিছু ইংগিতময় প্রতীকী ঝলক। লিটল ম্যাগাজিনে কাব্য করার স্বভাব যাবে কোথায়।
সলিল ব্যাকুল হয়ে বলে, তাহলে কী আমার দ্বারা আপনার কাজ হবে না?
মামাবাবু বলেন, না, না, তা নয়, তবে ঐ যে বলেছিলাম, কলমকে পোষ মানাতে হবে। এখানেও তোমার কলম কিছু জায়গায় তোমার অজান্তেই লেখায় ছাপ ফেলেছে। সিরিয়ালের এপিসোড রাইটার হিসেবে এটা তোমায় বর্জন করতে হবে। তোমার নিজস্ব ভাবনা প্রতিফলনের জায়গা এটা নয়। লিখতে হবে তাই যা পাবলিক খাবে। তুমি সিরিয়ালে লিখে যা পয়সা পাবে তাতে তোমার আর্থিক দুশ্চিন্তা থাকবে না। তখন ফাঁকা সময়ে কলম থেকে লাগাম খুলে ইচ্ছে মতো লিখবে, যেমন তোমার প্রাণ চায়। ঐটে কিন্তু কখনো ছেড়ো না ভায়া।
যে বিষয়ে সিরিয়াল করতে চাই কেবল তার রূপরেখাটা আমি তোমায় বলে দেবো। তার ওপর খেলিয়ে লিখবে তুমি। সে ক্ষমতা তোমার আছে। ভালো না লাগলেও আমার তৈরী কিছু সিরিয়াল দেখে নিও, তাহলে আফিমের ধরণটা বুঝতে পারবে। ভাগ্নে তেমন কিছু নমুনা তোমাকে একটা ল্যাপটপে ভরে দেবে। আউটলাইন আমার, তার ওপর তোমার ফেনিয়ে লেখা কাহিনী থেকে চিত্রনাট্য বানানোর সময় জায়গামতো মনোরঞ্জনের বস্তু ঢুকিয়ে দেবেন চিত্রনাট্যকার, - হয়ে গেল সিরিয়ালের বিষয়বস্তু। ডাইরেক্টর সেটাই ঠিক মতো পরিবেশন করবেন।
পাবলিক খেলে ছাব্বিশ থেকে টেনে বাহান্ন এপিসোড বাড়াতে আবার প্রয়োজন হবে তোমার কলমের কেরামতি। মাঝে কোনো অভিনেতা, অভিনেত্রী মারা গেলে বা চুক্তিভঙ্গ করে চলে গেলে কাহিনীতে সেই অনুযায়ী আচমকা মোচড় আনার দায়িত্বও তোমার। এ সবের জন্যই পয়সা পাবে তুমি। তোমার কলম দু নৌকায় পা রেখে চলবে। একটার জন্য পাবে পয়সা, অন্যটা তোমার সৃজনশীলতার তরণী। ভাসাও সেই মনপানসি তোমার ইচ্ছা মতো। একটার সাথে অন্যটার কোনো বিরোধ থাকবে না।
সুদীপের বিরাশি সিক্কার উল্লাসের থাপ্পড় খেয়ে, মামাবাবুর ভরসা পেয়েও একটা অজানা আশাংকায় শিরশিরিয়ে ওঠে সলিল। একটা তরণীতে পা রেখে সাচ্ছন্দ্যে সাড়া দিতে গিয়ে অন্য তরণীটার ভরাডুবি হবে না তো? তিনদিন আগের আলাপচারিতার রেশ তখনও কাটেনি। এখনকার কথাবার্তায় আরো ঘাবড়ে যায় সলিল। বুঝে উঠতে পারে না সামনে যিনি বসে আছেন তিনি আসলে কার প্রতিরূপ - মাতুল কংস না সখা কৃষ্ণ?
- সমাপ্ত -
পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।