"স্মৃতিকে পাহারা দিতে হবে
আমরা তো ভ্রষ্ট দেবযান
এদিকে ওদিকে পুড়ে কালো
আমাদের সাজানো বাগান
আমার শৈশব ঘাড়ে করে
রোদে পোড়া জলে ভেজা কারা
জানতাম না, জিগ্যেসও করিনি
পারে কি পৌঁছেছিল, তারা?
সেই গ্রহ অবিচল, স্থির
স্বতঃসিদ্ধ, ভেবেছি যখন
চেষ্টা তো করিনি কোনমতে
তাকে ধরে রাখার তখন
আমরা তো স্বর্গচ্যুত ভীরু
পাহারায় থাকি স্মৃতিদেহ
রামরাজ্যে প্রবেশের আগে
শমীবৃক্ষে লুকবো সন্দেহ
স্মৃতিকে পাহারা দিতে হবে
আমরা তো ভ্রষ্ট দেবযান
এদিকে ওদিকে পুড়ে কালো
আমাদের সাজানো বাগান
আমাদের শৈশবের নিচে
রোদে পোড়া জলে ভেজা কারা
আরেক সময় ধরে ধরে
পৌঁছলো অন্ধকারে পারে
সেই গ্রহ অবিচল, স্থির
স্বতঃসিদ্ধ, ভেবেছি যখন
চেষ্টা তো করিনি কোনমতে
তাকে ধরে রাখার তখন
আমরা তো স্বর্গচ্যুত ভীরু
পাহারায় থাকি স্মৃতিদেহ
অজ্ঞাতবাসের কিছু আগে
শমীবৃক্ষে লুকবো সন্দেহ"
--- মদীয় কবিতা
স্মৃতিকে পাহারা দিতে হবে। এই কথাটা আমাদের সময়ে যতখানি জরুরি হয়ে উঠেছে - তেমন আর কোনও কালেই হয়তো নয়। এই স্মৃতি-পাহারা দেওয়াটা আসলে মৃত বাবা-মা-র দেহ ঘিরে বসা সন্তান-এর ওয়েক বা জাগরণের মত। তাই আমাদের নিজেদের বার বার জাগরণ দরকার। আমাদের জেগে থাকতে হবে হারিয়ে যাওয়া স্মৃতিদের পাশে। সৎকার করে ভুলে গিয়ে নিজেদের জীবন বেঁচে নেওয়া হবে অত্যন্ত অপরাধ। সব ভোলানোর সময় এসেছে যে আজ।
আমার কন্যা এখন এমএ ক্লাসে একটি পেপার পড়ছে। পেপারটি হলোকস্ট বিষয়ক, সেখানে ওদের রিডিং লিস্টে আছ অসংখ্য স্মৃতিগ্রন্থ। হলোকস্টের স্মৃতি। ইহুদীদের মধ্যে যাঁরা বেঁচে গিয়েছিলেন আউশউইৎস বা অন্য অন্য কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প থেকে, তাঁদেরও অনেকে, হয় স্মৃতি খুইয়ে বসেছিলেন, নয়তো তাঁদের স্মৃতির সঙ্গে মিশে গিয়েছিল কল্পনা ও স্বপ্ন। কারণ, যে বাস্তবতা এতটাই ভয়াবহ, যে তা স্বাভাবিক চেতনা হজম করে উঠতে পারেনা, যে ট্রমা এতটাই তীক্ষ্ণ, যে কোনও সুস্থ যুক্তি-বোধ তাকে আত্মস্থ করতে পারেনা, সেই বাস্তব ট্রমাকে মনে রাখা প্রায় অসম্ভব। সেই ইহুদি বাবা-মায়ের কথা টুকরো টুকরো করে লিখে রেখেছিলেন তাঁদের ছেলেমেয়েরা। আবার সে লেখার ভেতরেও জুড়ে গেছল ছেলেমেয়েদের নিজ-স্বপ্ন-কল্পনা-ইলিউশন ও হ্যালুসিনেশন। সব ছেঁকে সত্যি তুলে আনা, সে অনেক শতাব্দীর মনীষার কাজ।
আমাদের সাতচল্লিশের দেশভাগ ও তৎপরবর্তী ট্রমার যে এত কম ব্যক্তি-বয়ান বা ব্যক্তি-স্তরীয় ইতিহাস আমাদের হাতে এসে পৌঁছয়, তা কি আসলেই এই কারণেই নয়? লেখাই যায়না কিছু ট্রমাকে। লিখলেও তা হয়ে যায় অন্যরকম। বয়ান হুবহু ছেঁকে রাখা হয়না। রোমান্স ও নস্টালজিয়ার পরতে তা ঢেকে যায়। তবু কেউ কেউ চেষ্টা চালিয়ে যান। তাঁদেরই একজন দময়ন্তী।
না, আমি এখানে বড়, বহু আলোচিত কিছু বই-এর কথা বলছি না। সেমন্তী ঘোষ সম্পাদিত দেশভাগ সংক্রান্ত প্রবন্ধের বইটি অবশ্যই পড়েছি, পড়েছি আগুনপাখি, নীলকণ্ঠ পাখির খোঁজে, বিষাদবৃক্ষ, কেয়াপাতার নৌকা।
সিজনস অফ বিট্রেয়াল বইটির শুরুতেই উৎসর্গপত্রে লেখা হয়েছে:
ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের সেই সকল পূর্বজা ও পূর্বজদের, যাঁরা ১৯৪৭–১৯৫০-এর মধ্যে নিজেদের পরিচয়, বাসস্থান, স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি সবকিছু খুইয়ে, নিজ পিতৃপুরুষের দেশকে ‘বিদেশ’ জেনে স্রোতের মুখে কুটোর মত ভেসে যেতে বাধ্য হয়েছেন।
ভূমিকাতে বলছেন লেখক:
বাঙাল-বাড়ির দ্বিতীয় প্রজন্মের মেয়ে হিসেবে ‘পার্টিশন’ শব্দের সাথে পরিচয় সেই বাল্যকাল থেকেই। ‘দেশভাগ’ একটু কেতাবি, পরিচয় আর একটু বড় হয়ে। আর ‘বাঁটোয়ারা’ তো জানলাম এই সেদিন - মানে ২০১৬ কি ১৭, অঞ্চল মালহোত্রা বা ইয়াসমিন খানদের বই পড়তে গিয়ে। তো এই দেশভাগ বা পার্টিশন নিয়ে আমি সত্যি আগ্রহী হয়ে উঠি ২০০৬ কি ০৭-এ, উর্বশী বুটালিয়ার ‘দ্য আদার সাইড অব সাইলেন্স’ পড়তে গিয়ে।
তারপরেই তিনি বলছেন,
একটা তাগিদ অনুভব করি এই বিষয়ে আরও পড়াশোনা করার, পারিবারিক স্মৃতি ও বইয়ে পড়া ব্যাপ্তি নিয়ে কিছু লিখে রাখার। দুঃখের ও আফসোসের ব্যাপার হল, দেশভাগের সরাসরি ফলভোগী পরিবারের প্রথম প্রজন্মের অধিকাংশ সদস্যই ততদিনে হয় গত হয়েছেন, নয় স্মৃতি আর তাঁদের সঙ্গ দেয় না। মায়ের আচমকা দেশত্যাগে বাধ্য হওয়া, নতুন দেশে এসে প্রায় অপরিচিত আত্মীয়-বাড়িতে থাকতে বাধ্য হওয়া, মাসের পর মাস গড়িয়ে যাওয়ার পরও নিজের মা বাবার প্রায় কোনও খবর না পাওয়া - পূর্ববাংলার একটা চোদ্দ-পনেরো বছরের মেয়ের জন্য ঠিক কতটা দুরূহ ছিল, এই ভাবনা থেকেই প্রথম ও দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ লিখে ফেলি।
আশ্চর্য স্বচ্ছতায় এই ভাবে লেখক নিজের বইয়ের পর্ব বিভাগ গুলি বোঝান।
“ছোটবেলায় শোনা একটা ঘটনা মনে পড়ে। এক বৃদ্ধা একগোছা চাবি আর পান থেঁতো করার পিতলের একটা ছোট্ট হামানদিস্তা সঙ্গে নিয়ে ঘুরতেন, চাবিগুলি নাকি রাজশাহী চাঁপাইনবাবগঞ্জ এলাকায় তাঁর বাড়ির। সেই বৃদ্ধা কে, কী বৃত্তান্ত কিছুই আর মনেও পড়ে না, বলার মত কেউ জীবিতও নেই। ‘ওরাল হিস্ট্রি’র ধারণা আর সেটা লিখে রাখার কথা তখন জানা ছিল না। সপ্তম পরিচ্ছেদ তাঁরই কথা মনে করে লেখা। অষ্টম পরিচ্ছেদও এরকম কিছু শোনা গল্প, যার সত্যতা প্রমাণ করা অথবা ঘটনা বা ব্যক্তিদের সম্পর্কে আরেকটু বেশী তথ্য সংগ্রহ করা এখন একেবারেই অসম্ভব, (?) ভিত্তি করে লেখা।”
এভাবেই এগিয়েছেন তিনি। আন্দাজ পাই কী থাকবে বইটিতে। আর উৎসুক হয়ে উঠি। এর পর বইটি পড়তে পড়তে আচ্ছন্ন লাগে, প্রচণ্ডভাবে আক্রান্ত হই। একেবারে তরতরে সাহিত্যিক বাচনে গল্পচ্ছলে যেন লেখা হয়েছে বিবরণগুলি। ফলত ইতিহাস হয়ে উঠেছে জীবন্ত, সজীব, নড়ে চড়ে বেড়ানো। আমাদের পড়া যাবতীয় পুরনো সাহিত্যকর্ম, নানা গল্প উপন্যাসে যে বিন্দু বিন্দু পার্টিশন-যাপন, তার যাবতীয় ফাঁক-ফোকর পূর্ণ করার দায় নিয়ে এসেছে এই বই। এই বই আসলে চেয়েছে নিজের শর্তে কথা বলতে, নিজের মত করে চলতে চেয়েছে গদ্যের ভেতর দিয়ে। কোন নস্টালজিয়াকে প্রশ্রয় দেয়নি, একপেশে গল্পও বলতে চায়নি - যেখানে কোনও একটি ধর্মের মানুষই উৎপীড়িত...। এখানে হিন্দু, মুসলিম ও শিখ এই তিন গোষ্ঠীর মানুষের অবর্ণনীয় দুঃখের গল্প থেকে যায়। এই গল্পগুলো জুড়ে জুড়ে একটা ছিন্নভিন্ন সময় ও ছিন্ন জনজাতির কথা চলে আসে।
একরকম শারীরিক বেদনাবোধ জাগে, ভেতরে ভেতরে ক্ষত বিক্ষত লাগে - কেননা আমার পরিবারও পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষ উচ্ছিন্ন পরিবার।
রফুজিওয়ালে ট্রেন দেখার অভিজ্ঞতা আছে জামু নামে এক ছেলের। যে অস্বাভাবিক হয়ে গিয়েছে একেবারে। সে ট্রেন ভারতের পাঞ্জাব থেকে পাকিস্তানে যায় পাঞ্জাবের রহিস মুসলিমদের নিয়ে ... আবার পাকিস্তানের দিক থেকে শিখেদের নিয়ে আসে ... যখন এসে দাঁড়াত স্টেশনে, সে বিবরণ পড়ে হাত-পা আবার নতুন করে শীতল হয়ে ওঠে আমাদের -
“লাশ, শুধু লাশ, মুণ্ডহীন লাশ, অঙ্গপ্রত্যঙ্গ-হীন লাশ আর রক্ত, মাংস চটচটে হয়ে কামরার দেয়ালে-সিটে আটকে থাকা টুকরো টুকরো হাত, পা, স্তন, নাক, কান কিম্বা আঙুল --- দিল্লী স্টেশনে সবসময় জল ঢেলে সাফ করার লোকও থাকত না। অনেক পরে লোক এসে সেসব সাফ করার পরই সেইসব কামরায় লোককে উঠতে দেওয়া হত। সে কি গন্ধ গোটা ট্রেনে --- আঁশটে পচা গন্ধ ধুলেও যায় না, ‘সাফ করনেওয়ালে সাবুন ফিনাইল’ কিচ্ছু দিয়ে তাড়ানো যায় না সেই গন্ধ। বলতে বলতে উঠে দৌড়ে বাথরুমে ঢুকে যায় জামু আর হড়হড়িয়ে বমি করে দেয় এতক্ষণ যা যা খেয়েছে। সব বেরিয়ে যাবার পরও ওয়াক তুলতে থাকে --- তুলতেই থাকে --- আর কিছু বেরোয় না শুধু একটা সরু লালার ধারা মুখ থেকে ঝুলে থাকে।"
আরও এক-দু’টি অংশ উদ্ধৃতি দিলাম:
“একতলার ছাদে অমরিন্দর প্রথমে বসে প্রার্থনা করলেন - নিজ পরিবারের সম্মান, একজন শিখ কুলপতির সম্মান, ‘শিখখি’ রাখতেই তিনি এতগুলি প্রাণ নিবেদন করতে যাচ্ছেন তাঁর ভগবানকে, ভগবান যেন এই নিবেদন নিয়ে তাঁর কুলের সম্মান বজায় রাখেন। কমলজিৎ এগিয়ে এসে হাঁটু-মুড়ে বসে - এগিয়ে দেয় মাথা - ঘাড় নিচু করে, অমরিন্দরের কৃপাণ ওঠে –পড়ে - কিন্তু নাহ, আটকে গেছে মেয়ের মস্ত বিনুনি আর মাথা ঢাকা ওড়নায়- ঘাড় উঁচু করে তাকায় মেয়ে- বাবার হাত থেকে টেনে নেয় কৃপাণখানা, সেও শিখ-কন্যা। এক ঝটকায় ওড়না ফেলে কোমরে জড়ায় - বিনুনিখানা সামনে টেনে এনে কাঁধ বরাবর এক কোপে কেটে ফেলে দেয় পাশে। আবার ঘাড় নিচু করে বসে- এবার অমরিন্দরের কৃপাণ নির্ভুল নামে - কমলকলির মত মুখটি ছিন্ন হয়ে গড়িয়ে আসে করণবীরের পায়ের কাছে - আঠেরো পূর্ণ হয়ে যাওয়ায় যার প্রাণ যাবে না বলে স্থির হয়েছে পারিবারিক সভায়...”
“সুখোদি কান্না-মাখা গলায় বলে “বাড়ি ছাড়নের আগে নিজের আতে সবডি টেরাঙ্কে তালা দিসি, সবডি ঘর বন্দো কইরা তালা দিসি, সদর দরজাত অ্যাত্ত বড় তালা লাগাইসি, না থাহোনের সুমায় য্যান চুর ডাকাইতে আইস্যা সব লইয়্যা না যায়। এইখানে বাবুগো থাল মাজনের সুমায় তেঁতুল দিয়া সরতাটা মাইজ্যা নিসি আর এই অ্যাত্তটুকু সরিষার তেল দিয়া চাবিগুলো ঘইষ্যা নিসি।”
“ব্লাউজটিতে কোনও বোতাম নেই, একটি সেফটিপিন মাঝখানে আটকানো, তাতেই যেটুকু আব্রু রক্ষা হয়। স্তন-দুটি উন্মুক্ত করে টিংচার আয়োডিন-মাখা তুলোর দিকে হাত বাড়াতেই সুপার ঢুকলেন ঘরে আর “ওহ মাই গড!” বলে স্থাণু হয়ে গেলেন। মেয়েটির দু’টি স্তনে অজস্র দাঁতের পাটির দাগ। কেউ যেন রবারের বল বলে কামড়ে গেছে। অন্তত পঞ্চাশ-বাহান্নটি ক্ষত তো হবেই। গভীর দাগগুলির ভিতরে কালচে সাদা পুঁজের মত কিছু জমা হয়েছে। সোনার পুতুল ভাইঝির মুখ মনে পড়ে বুক ধড়াস ধড়াস করে রমেশের। এ মেয়েকে কি বর্ডার পেরোনোর আগেই - নাকি বর্ডারে - ... ঠিক তখনই মেয়েটি টিংচার আয়োডিনের স্পর্শে একবারে আমূল কেঁপে উঠে অস্ফুটে বলে ওঠে “অ্যায় খোদা।”
হ্যাঁ, আমাদের স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তি শুধু তো স্বাধীনতা নামক স্বপ্ন-কল্পনাটিরই নয়, তার সঙ্গে সঙ্গে পার্টিশন বা দেশভাগ বা “বাঁটোয়ারা”র ও ৭৫ পূর্তি।
আরিব্বাস! আমি আপ্লুত!
একেবারে মোক্ষম জায়গাগুলোই কোট করেছেন যশোধরা, ঠিক যে যে জায়গাগুলো লেখার সময় এবং পরেও তীব্র কষ্ট হত ঠিক ঠিক সেইগুলোই তুলে এনেছেন। কালকেই মেয়েদের উপরে দেশভাগের অভিঘাত নিয়ে একটা আলোচনা শুনছিলাম, সেখানে একজন জানালেন ত্রিপুরায় ৭১ নাগাদ এরকম একটি মেয়ে যার যোনীতে অজস্র দাঁতের দাগ, ইউটেরাস সম্পূর্ণ ছেঁড়া, এক বিশাল গর্ত পুঁজ ও জমাটবাঁধা রক্তে ভর্তি , মেয়েটি প্রায় মাসখানেক শুধু টানা চীৎকার করে গেছে তীব্র যন্ত্রণায়, তিনমাস পরে তাকে মোটামুটি সুস্থ করে তোলেন ডাক্তার ও নার্সেরা। শরীর তো নাহয় সুস্থ হল, কিন্তু তার ট্রমা কি আর সেরেছে? আর এরকম আরো কত হয়েছে যা কেউ কোত্থাও লিখে রাখার প্রয়োজন বোধ করেন নি।
সেই আলোচনাতেই প্রফেসার প্রবাল ব্যনার্জি জানালেন পশ্চিমপ্রান্তে যে গোরি ভায়োলেন্স দেখা গেছে সেরকমটা পূর্বপ্রান্তে তত নয়, আর বাংলা সাহিত্য ভূবনেও মোটামুটি দেশভাগের মানসিক অভিঘাত নিয়েই আলোচনা হয়।
তো, এই ঘটনাগুলো সামনে আসা দরকার।
বইটা পড়ার সময় যেমন আচ্ছন্ন হয়েছিলাম, আলোচনা পড়ার সময়ও আবার সেই অনুভূতি ফিরে এল।দেশভাগে ধ্বস্ত পরিবারের মেয়ে আমি। পার্টিশন লিটারেচারও পড়েছি কিছু।সবমিলিয়ে একটা জ্বালাপোড়ার ক্ষত খোঁচানোর মতো কষ্ট হয়।আর সেইজন্যই হয়ত স্মৃতিকে পাহারা দেওয়া জরুরি।
হিংসার ইতিহাস সামনে আসা দরকার . সম্প্রতি একটি বই বেরিয়েছে এ রিডিং অফ ভায়োলেন্স ইন পার্টিশন স্টোরিজ ফ্রম বেঙ্গল নামের . সেটা পড়ে দেখতে হবে .
আলোচনাটা এমন সময় পড়লাম যখন টিভির পর্দায় দেখি অসংখ্য আফগান গৃহহীন হয়ে ছুটছে , রাস্তায় ছেঁড়া চটি আর জুতোর সারি , সাত মাসের শিশু এয়ারপোর্টে বাস্কেটে পড়ে আছে। পৃথিবীর তাবৎ বাস্তুহারার সাথে একাত্ম বোধ করি দ্বিতীয় প্রজন্মের উদ্বাস্তু আমি।
আমরা যারা পঞ্চাশে , তাদের মনে এই হারানোর যন্ত্রনা নিত্য বর্ধমান। আগে তো মনে হত পনেরই আগস্ট আমার ভারতের স্বাধীনতা দিবস , আজ তা আমার কাছে মন খারাপের উৎসব।
বাংলায় দেশভাগের বর্ণনায় মান্টো-র মতো গল্প কম । এখানেও উদ্ধৃত পাঠ্যাংশগুলির অনেকটাই পশ্চিম প্রান্তের। বাংলার ভিজে মাটির ছোঁওয়ায় নরম হয়ে যাওয়া সত্যিকারের গল্পগুলো জানা দরকার।