নির্বাচন শেষ। ফলাফল সবাই শুধু জেনে যাননি, বিশ্লেষণের একেবারে হদ্দমুদ্দ করে ফেলেছেন। কেন তৃণমূল আদৌ জিতল, কেন এত্ত ভোট পেল, কেন বিজেপি এত খরচ করেও পারল না, কেন মোর্চা মাত্র এক পেল, কেন সিপিএম-কংগ্রেস শুন্য হয়ে গেল - এসব প্রধান বিশ্লেষণ তো বটেই, সূক্ষ্মতর স্তরে ঠিক কবে থেকে সিপিএম এর পতন শুরু, কী করলে তারা ঘুরে দাঁড়াতে পারে, তারা না পারলে বিকল্প বাম শক্তি কিভাবে উঠে আসতে পারে, তৃণমূলের কী করা উচিৎ, কী উচিৎ নয়, বিজেপির কী সমস্যা, কী ইন্টেনশন, তারা ইচ্ছে করে হেরেছে কি না - ইত্যাদি সব কিছুরই ব্যাখ্যা চলে এসেছে। খুঁটে খেলে সবই পাবেন। চয়েসও।
তাহলে আমি এখন ঠিক কী লিখতে বসলাম? আরও একটা বিশ্লেষণ অথবা সুচিন্তিত মতামত নিশ্চই নয়। এই লেখা আসলে একজন পরাজিত অকিঞ্চিৎকর সিপিএম সমর্থকের নিজের মত করে ফিরে দেখা - মনোলগ। যে পার্টির রাজনীতির সঙ্গে সামান্য হলেও জড়িত আছি, ব্যক্তিগতভাবে সেখানে কোন কোন বিচ্যুতি দেখেছি, তার চর্বিতচর্বন। কোন কোন সিদ্ধান্ত এই দুঃসময়েও সমর্থন করছি, সেই আলোচনা পরবর্তীতে উঠে আসতে পারে, আপাততঃ আত্মসমালোচনাই উদ্দেশ্য। পাঠক এই মনোলগ স্বচ্ছন্দে এড়িয়ে যেতে পারেন। তবুও এটা সামাজিক মাধ্যমে একটি পাবলিক পোস্ট হিসাবেই থাকল - কেউ যদি আড্ডায় যোগ দিতে চান, দিতেই পারেন।
এর আগে একাধিক জায়গায় বলেছি, পার্টির সিঙ্গুর লাইনকে আমি ভুল মনে করি। শুধু ভুল নয়, তা কমিউনিস্ট পার্টির পক্ষে বিচ্যুতি বলেই মনে করি। "কৃষি আমাদের ভিত্তি, শিল্প আমাদের ভবিষ্যৎ" - উর্বর, কৃষিনির্ভর বাংলার প্রেক্ষিতে এই স্লোগানকে ভুল মনে করি। কারণ বৃহৎ শিল্প আদৌ কর্মসংস্থান বাড়ায় না। উলটে তা ধ্বংস করে বহুভাবে। জমি যতক্ষণ জমি থাকে, তা শুধু কৃষকের নয়, আরও অনেকের জীবিকার সংস্থান করে। ওই চাষের জমিতেই কারো মুরগি চরে, জমির একপাশে কেউ তোলে ছোট তাঁতঘর, গোয়ালঘর, ছুতোর কারখানা - আরও কত কী। জমির মধ্যের ছোট্ট পুকুরটির মাছ, চুনোমাছই কারো রোজকার বাজারে নিয়ে গিয়ে বসবার কাঁচামাল। একটা কারখানা হলে সংশ্লিষ্ট কৃষকদের সঙ্গে এই সমস্ত মানুষও রুজি হারান। এঁরা হিসাবেও থাকেন না, তাই কমপেনসেশনও পান না। এবং তারপরে সেখানে যে কারখানা গজিয়ে ওঠে, সেখানে এঁদের কেউ কেউ হয়তো মজুরের কাজ পান, অধিকাংশই পান না। যাঁরা পেলেন, তাঁরাও সবাই খুব সুখে থাকেন কি? আর্থিকভাবে দৈনিক মজুরির হিসাবে যদি না ও যাই, চিরদিনের অভ্যস্ত পেশা ছেড়ে একমাত্র চয়েস হিসাবে মজদুরির পেশায় কজন মানিয়ে নিতে পারেন?
কারখানার ফলে প্রকৃতির ধ্বংস নিয়ে নতুন কিছু বলারই নেই। প্রকৃতির ধ্বংসকে চিরদিন আমরা উন্নয়নের কোল্যাটারাল ড্যামেজ হিসাবে জাস্টিফাই করে এসেছি। অথচ অধিকাংশ মানুষের জীবিকা ধ্বংস করে অল্প কিছু মানুষের বাড়তি মুনাফার ব্যবস্থার মাধ্যমে যে উন্নয়ন, তাকে জাস্টিফাই করে আদতে কার লাভ হচ্ছে, সে প্রশ্ন আমরা তুলি না। "শিল্প আমাদের ভবিষ্যৎ" হলে ধ্বংসও মানবজাতির অনিবার্য ভবিষ্যৎ।
কিন্তু প্রশ্ন হল, তাহলে কর্মসংস্থান কিভাবে হবে? বেকার সমস্যার সমাধান কিভাবে হবে? এর সমাধানের আলোচনায় যাবার আগে প্রশ্নটার আয়রনিটা একটু দেখে নেব। এক প্যারা আগেই লিখেছি, আমি না লিখলেও এই হিসেব সবারই জানা, যে বৃহৎ শিল্প, বিশেষ করে আজকের দিনের ক্রমশঃ আরো অটোমেটেড হতে থাকা শিল্প আদৌ বাড়তি কর্মসংস্থান করে না, কারণ ম্যানপাওয়ারের বদলে মেশিন পাওয়ার ব্যবহার করলে মালিকের মুনাফা বেশী। স্বভাবতই, শিল্পস্থাপনে যত মানুষ কাজ হারান, তত মানুষ কাজ পাননা, এবং পেশার চরিত্র পালটে যাওয়ায় কর্মদক্ষতাও কমে যায়। তা সত্ত্বেও কর্মসংস্থানের প্রশ্নে "শিল্প না হলে কী করে হবে" এটাই মুখ্য প্রশ্ন হয়ে দাঁড়ায়। এই আয়রনির মধ্যেই আসলে লুকিয়ে রয়েছে আমাদের বিচ্যুতির বীজ।
একটা ইন্ডাস্ট্রি গড়ে উঠলে যারা কাজ হারান, আর যারা কাজ পান, তাদের মধ্যে শ্রেণীগত বৈষম্য রয়েছে। কাজ হারান কৃষি এবং জমিনির্ভর অন্যান্য পেশার মানুষ, যার একটা ক্ষুদ্র অংশ মজদুর হিসাবে পুনর্বহাল হন। অন্যদিকে কর্মসংস্থান হয় তথাকথিত "শিক্ষিত" মধ্যবিত্ত ছেলেমেয়েদের (যদিও অটোমেশনের দৌলতে সেই সংস্থানও ক্রমশঃ কমের দিকে)। এদের অল্প কয়েকজন হয়তো ওই ভূমিনির্ভর পরিবারের, কিন্তু অধিকাংশই শহর বা শহরতলির মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলেমেয়ে। ফলতঃ কোন কমিউনিস্ট পার্টি যখন "কর্মসংস্থান" এর উদ্দেশে "শিল্প আমাদের ভবিষ্যৎ" স্লোগান তোলে, তখন স্বভাবতই বোঝা যায়, তাদের অভিমুখ এই মধ্যবিত্ত "শিক্ষিত" সমাজ, যারা মনে করেন দু টাকার চাল বা কন্যাশ্রী আদতে ভিক্ষা, যারা মনে করেন, "পিএইচডি প্রার্থী" বলেই তার জেতা উচিৎ ছিল। ভূমিনির্ভর মানুষ, যারা সংখ্যাগরিষ্ঠও বটেন, তাদের প্রতি আমাদের কোন দায় নেই। তাদের সাথে আমাদের যোগাযোগ নেই। তাদের প্রতি আমাদের অভিমান, আমাদের নেতা তাদের সর্বাগ্রে আমফানের ত্রাণ পৌঁছে দিলেন, তবুও তাঁকে ভোটে হারতে হল।
এখন মূল প্রশ্নে ফিরে আসা যাক। তাহলে আমরা, ভারতের মার্কসবাদী কমিউনিস্ট পার্টি, কর্মসংস্থান বিষয়ে কী ভাবব। ঘুরতে ঘুরতে যদি কখনো সত্যিই দাঁড়াতে পারি, সেই দিন খুব দূরে নয় বলেও আমার ধারণা, তাহলে আমাদের কর্মসংস্থান নীতি কী হতে পারে, যা শিল্পায়ণ নামক ভ্রান্ত উন্নয়ণের ধারণার কমিউনিস্ট বিকল্প হতে পারে?
প্রশ্নটা খুব সহজ নয় - তবে উত্তরটা বেশ সহজই মনে হয়। প্রথমতঃ, কমিউনিস্ট কর্মসংস্থানের অভিমুখ অবশ্যই হওয়া প্রয়োজন, যেখানে বেশী মানুষ, ভূমিনির্ভর গরীব মানুষ বেশী কাজের সুযোগ এবং চয়েস পাবেন। চয়েস থাকাটা জরুরী, কারণ কাজের মাধ্যমে উপার্জনের প্রশ্নে দক্ষতার একটা বড় ভূমিকা থাকে, এবং দক্ষতার প্রশ্নে স্বাধীন চয়েসের।
১৯৭৭ সালে বামফ্রন্ট সরকার ক্ষমতায় আসার পরপরই হয়েছিল ভূমিসংস্কার এবং অপারেশন বর্গা। যে দুটি কাজের ডিভিডেন্ড বামফ্রন্ট এবং বিশেষ করে সিপিএম পরবর্তী ৩৪ বছর ধরে পেয়েছে। কিন্তু অদ্ভুত হল, অপারেশন বর্গার পরের ধাপগুলি আমরা আর করে উঠিনি। যা তৈরী করতে পারত সত্যিকারের ভূমিভিত্তিক কর্মসংস্থান। বৃহৎ জমির একজন মালিক জোতদার প্রথার জন্ম দেয়, অপারেশান বর্গা যে প্রথার মূলে কুঠারাঘাত করতে পেরেছিল। কিন্তু চাষের প্রশ্নে এক লপ্তে বড় জমির বেশ কিছু সুবিধাও আছে, অপারেশান বর্গার ফলে যা আমরা অনেকাংশেই হারিয়েছিলাম। এই সমস্যার সমাধান হতে পারত বর্গার পরবর্তী ধাপ হিসাবে বর্গাদার এবং ভূমিহীন কৃষকদের নিয়ে সমবায় তৈরী করে যৌথ কৃষিব্যবস্থা গড়ে তোলা - কিন্তু সে পথে আমরা হাঁটিনি। ফলতঃ পশ্চিমবঙ্গের কৃষি ব্যবস্থা ক্রমশঃ পালটে গেছে এবং বহু ক্ষেত্রেই উৎপাদন কমেছে। কৃষক, বিশেষ করে হিন্দু কৃষক পরিবারগুলি ক্রমশঃ শহরমুখী হয়েছে, মধ্যবিত্ত চাকুরিজীবি শ্রেণীতে প্রবেশ করেছে। এদের লিগ্যাসি হিসাবে আছে একটি করে গ্রামের বাড়ি, যেখানে শহর থেকে পুজো বা অন্য উৎসবে ছেলেমেয়েরা যায়, দুদিন হইহই করে, পরিবেশের চরম ক্ষতি করে, গ্রামের মানুষকে শহুরে প্রযুক্তি ও বৈভবের আখের খেত দেখায় এবং চলে আসে। ফলশ্রুতিতে এদের দ্বারা প্রভাবিত আরো কিছু গ্রামবাসী শহরে এসে ভীড় জমায়।
এই ভিশিয়াস সাইকেল ভাঙতে হলে কমিউনিস্ট পার্টিকে, ভারতের মার্কসবাদী কমিউনিস্ট পার্টিকে, আমাদেরকে, কয়েকটি ব্যপারে আন্তরিক হতেই হবে। কৃষকদের মধ্যে ফিরে গিয়ে তাদের একজন হয়ে, তাদের সমবায় ব্যবস্থার, যৌথ চাষের সুফল বোঝানোর কাজ তার মধ্যে প্রথম। এজন্য কৃষক পরিবারের, জমি এবং কৃষি সম্বন্ধে যাদের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা আছে,সেরকম পার্টি কমরেডদেরই অগ্রণী ভূমিকা নিতে হবে। পাশাপাশি আন্দোলন গড়ে তোলা দরকার সর্বত্র মাতৃভাষার মাধ্যমে সরকারী শিক্ষাব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে তোলার দাবীতে, যাতে "শিক্ষিত" তকমাটা শহুরে মধ্যবিত্তের একচেটিয়া না হয়ে যায়। কৃষি ছাড়াও অন্যান্য গ্রামীন ক্ষুদ্রশিল্প, কামার, কুমোর, ছুতার, ঘরামী, তাঁতি, হস্তশিল্পী, মৎস্যজীবি, আচার/ খাদ্য সংরক্ষণ শিল্পী, সুতাশিল্পী, সূচিশিল্পী, মুরগি / ছাগল / গো পালক, কলের মিস্ত্রী - এদের পাশে যত বেশী সম্ভব দাঁড়ানোটাও একইরকম গুরুত্বপূর্ণ, এটা উপলব্ধি করতে হবে। একশো দিনের কাজ নিশ্চিত করার জন্য লড়তে হবে। কন্যাশ্রী বা মিষ্টি হাব অথবা দু টাকার চালের মত জনমুখী প্রকল্পের বিরোধিতা না করে সেগুলি প্রয়োগের দুর্নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। পরম্পরার শিল্পকে বাঁচিয়ে তোলার আন্দোলনে আন্তরিকভাবে সামিল হতে হবে। "কৃষি আমাদের ভিত্তি, গ্রাম আমাদের ভবিষ্যৎ" স্লোগানে বিশ্বাস রাখতে হবে।
শিক্ষিত মধ্যবিত্তের তাহলে কী হবে? অ্যাবানডানড? যারা এই দুঃসময়েও পার্টিকে ভোট দিল, পাশে দাঁড়াল, তারা অপাংক্তেয়? তা অবশ্যই নয়। কমিউনিস্ট পার্টির প্রাথমিক অভিমুখ অবশ্যই গরীব, মেহনতি মানুষ - কৃষক, শ্রমশিল্পী - কিন্তু মধ্যবিত্ত মানুষ তার বাইরে পড়ে না। বহু মধ্যবিত্ত পরিবার আসলে নামেই মধ্যবিত্ত, শ্রেণীগতভাবে তাদের অবস্থান নিম্নবিত্তের থেকে খুব একটা ভাল নয় - এটা ভুললে চলবে না। কিন্তু "শিল্প আমাদের ভবিষ্যৎ" না হলে এই মধ্যবিত্তদের ভবিষ্যৎ কোথায়? এই প্রশ্নটাও, আবারও, প্রশ্নটা যত কঠিন, উত্তরটা তত নয়। বৃহৎ শিল্প মধ্যবিত্তের কর্মসংস্থান বাড়ায় বলে যে মিথ প্রচলিত আছে, সেই মিথ বার্স্টিং করার সদিচ্ছের মধ্যেই লুকিয়ে আছে এই প্রশ্নের সহজ উত্তর।
যতদিন কোন চাকরিতে না ঢুকছি, ততদিন আমাদের শহুরে মধ্যবিত্তদের মনে হতে থাকে, একটা চাকরি পাওয়াই জীবনের মোক্ষ। সেজন্যই এত পড়াশুনা করা, ছোটাছুটি করে ফর্ম ফিল আপ, পরীক্ষা দেওয়া, ধরা করা। ভুলটা ভাঙে কোন একটা চাকরিতে ঢুকে পড়ার পর, যদি কোনভাবে ঢুকে পড়তে পারে আর কি। কিন্তু তখন অনেক দেরী হয়ে যায়। তারপর ক্রমশঃ অভ্যেসে জড়িয়ে পড়া। অথচ স্বাধীন পেশার অভাব শহরেও নেই, অনেকেই করে খান এবং এখনো স্কোপ রয়ে গেছে যথেষ্টই। প্লাম্বিং, ইলেক্ট্রিকাল, সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, ডিটিপি, ডকুমেন্টেশন, ড্রাইভিং, ছোট কারখানা, মোবাইল / ল্যাপটপ / ডেস্কটপ সারাই ও রক্ষণাবেক্ষণ, খাদ্য সংরক্ষণ, লজিস্টিক্স, গ্রাম থেকে শহরে উৎপাদন আনা, বিক্রী করা, ফুটপাথ হকারি, এমনকি চপশিল্প, রোলশিল্প, হস্তশিল্প - সবই স্বাধীন পেশা এবং যথেষ্ট চাহিদা আছে। এগুলির প্রায় কোনটার জন্যই ব্যাঙ্ক থেকে বড় অঙ্কের লোন নিতে হয় না। শুধু এগুলি যে "ছোট কাজ", " ছোটোলোকের কাজ" এই ভাবনাপরম্পরা থেকে বেরোতে পারাটাই শর্ত। এই বের করে আনার কাজটা কমিউনিস্টদেরই কাজ - তাদের থেকে ভাল করে আর কে করতে পারে? এবং তারপরেও যারা শুধু চাকরিই করতে চান, চয়েস হিসাবেই চান, তাদের জন্যও গ্রাম এবং শহরের একটা বড় অংশ স্বনির্ভর হওয়ার অর্থ, প্রতিযোগিতা কমা, চয়েস বাড়া, দর কষাকষির ক্ষমতা বাড়া।
এসব করে ভোট পাওয়া যাবে কি না, সে প্রশ্নের উত্তর আমার জানা নেই। কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি আমি যে কমিউনিস্ট পার্টির সমর্থক, তাদের এই পথেই এগনো উচিৎ। আমাদের এভাবেই এগনো উচিৎ। আগেই লিখেছি, এটা মূলতঃ মনোলগ। আমার এই ভাবনার সঙ্গে আমার পার্টি কমরেডরা একমত হতে পারেন, না-ও পারেন। তাতে পার্টির কাজে আমি যেটুকু নিজেকে জড়াতে পারি বা জড়িয়ে থাকি, তার কোন পরিবর্তন হবে না, আমার ভোটও অন্য কোথাও যাবে না। কোন "নতুন বামদল" এর অলীক জল্পনাও এটা নয়, একজন সাধারণ সিপিএম সমর্থকের মনোলগের বেশী গুরুত্ব এই লেখার নেই। তৃণমূলের এবং কংগ্রেসের কিছু নীতি, যা জনদরদী বলে আমার মনে হয়েছে, তার সমর্থন এই লেখায় আছে। বিজেপির যদি একটাও সেরকম কোন নীতি থাকত, তাহকে সেটাও উল্লেখিত হত - কিন্তু বিজেপি ক্ষমতায় আসা ইস্তক এমন একটা পলিসিও আমি মনে করতে পারছি না যেটা ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস্ট নয়, সাধারণ মানুষের পক্ষে, তাই উল্লেখ করা গেল না। কিন্তু তাই বলে এইসব উল্লেখ তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতি আমার মনোভাব পালটে দেবে এমন কোন সম্ভাবনা নেই। তাদের এখনো আমি বিজেপির কাছাকাছিই মনে করি, যারা যথেষ্ট ক্ষমতা এবং টাকার জোর পেলে বিজেপিতেই পরিণত হবে। কিন্তু এখনো যে হতে পারেনি, সেটুকুও আমার খেয়াল আছে, এইটুকুই বলার।
সহমত।
বহুকাল আগে পান্নালাল দাশগুপ্ত মশাই COMPREHENSIVE AREA DEVELOPMENT PROJECT নাম দিয়ে একটা গ্রামোন্নয়নের পরিকল্পনা পেশ করেন সিদ্ধার্থ রায়ের কাছে। সেটি গৃহিত হয়। খুব উৎসাহ নিয়ে নয়, তবে সরকার সামান্য কিছু কাজ করতে শুরু করে। এটি, এক একটি গ্রাম ভিত্তিক পরিকল্পনা। এরপর বাম সরকার, সিদ্ধার্থের আমলের প্রোজেক্ট বলে কার্যত এটিকে ঠান্ডা ঘরে পাঠায়। যদিও ততোদিনে কিছু ইনফ্রাস্ট্রাকচার গড়ে উঠেছে। সেগুলি ঐ অবস্থায় থেকে যায়। মমতাও এনিয়ে আজ অবধি কিছু করে নি। এখন সিএডিপি কার্যত গেস্ট হাউস ভাড়া দেয়। সুবোধ মল্লিক স্কোয়ারের উত্তরে একটি বাড়ির ৫ তলায় এর অপিস।
https://wbcadc.com/ এখানে কিছু তথ্য আছে।
তুই যা লিখেছিস প্রায় তেমনই। তবে আজ বেশ কঠিন কাজ। সরকারী সাহায্য না পেলে একাজ করা প্রায় অসম্ভব। জমি যৌথ চাষের আওতায় আনতে গেলে, জমির মালিক ও বর্গাদার সবাইকে রাজি করাতে হবে, আল ভেঙ্গে দেওয়ার জন্য। এটা ৭৯-৮০তে যতটা সহজ ছিলো, আজ ততোটাই অসম্ভব। তার উপর বর্গা প্রতি ভাগীদার বেড়ে গেছে অনেক। তবু সরকারকে রাজি করাতে পারলে হয়তো কিছু করা সম্ভব। সেটা কে করবে কে জানে ?
বাস চলে গেছে ৪০ বছরেরও আগে।
খুবই ভালো লিখেছেন। Cpim বা সিপিআই কে মানুষের জন্যই ফিরে আসতে হবে, হবেই।
1. শ্রেণী সংগ্রামকে শক্তিশালী করতে হবে। অসংগঠিত ক্ষেত্রের দাবি দাওয়া নিয়ে গণ আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। তাতে বেশি বেশি সংখ্যায় সাধারণ মানুষকে টেনে আনার উপায় ভাবতে হবে।
2. শুধু মধ্যবিত্তের জন্য চাকরির কথা ভাবলে হবে না গরীব মানুষের দাবী তুলতে হবে, আন্দোলনে যেতে হবে। গরীব মানুষ এখন যথেষ্ট বুদ্ধিমান, তাদের স্বার্থ রক্ষা যে পার্টি করবে তারা সেই পার্টি কেই ভোট দেবে। ইস্যুর অভাব নেই, যেমন পানীয় জল, মাথার ওপর ছাদ এই basic প্রয়োজনটাই মেটেনি মানুষের।
4. সিঙ্গুর নন্দীগ্রাম এর ভুল স্বীকার করে নিতে হবে এবং কৃষক শ্রেণীকে শক্তিশালী করার আন্দোলনে যেতে হবে। কৃষি জমিতে শিল্পায়ন নীতি ত্যাগ করতে হবে। শিল্প হোক পুরনো শিল্পাঞ্চলে ফাঁকা পড়ে থাকা জমিতে, তাতে শিল্প না হলে না হোক। সিঙ্গুর নন্দীগ্রাম নীতি না পাল্টালে ওই 5 শতাংশ ভোট ও পরের নির্বাচনে হারাতে হবে। Neoliberal চীনপন্থী উন্নয়নের ভাবনা বর্জন করতেই হবে।
5. টুকরো টুকরো পার্টি গুলোকে নিয়ে একটাই কমিউনিস্ট পার্টি হোক। তাহলে রণনীতি তৈরিতে সময় বাঁচবে। পরস্পরকে সমালোচনা ও troll করার এনার্জি টা বাঁচবে।
6. সরকারি শিক্ষা ব্যবস্থার মান খুব খারাপ ( মুড়ি মিছরির একই দর, যেটা সিস্টেম এর degeneration এর লক্ষণ)। পারলে পার্টির পক্ষ থেকে সস্তায় ভালো মানের tuition পড়ানোর ব্যবস্থা করা যেতে পারে। সাধারণ মানুষ উচ্চ মানের শিক্ষা লাভ করুক এটা শাসক শ্রেণী চায় না। কমিউনিস্ট পার্টি এই দায়িত্ব নিক। ফ্রী তে দিতে হবে না, planning টা করুক, সাধারণ মানুষ নিশ্চিত পাশে থাকবে।
7. সর্বোপরি বিপ্লবী মতাদর্শের যে চর্চা তা ফিরিয়ে আনতে হবে। তত্ব কথা একেবারেই রাজনীতি থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে, এই চর্চাটা থাকলে বাম ভোট রাম এ যেত না (শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণীর ভদ্রলোক রা সব বিজেপি হয়েছে আগে এরা সিপিআইএম ছিলো। আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞ্যতা)। এই দেউলেপনা বন্ধ করে তত্ব ও প্রয়োগের সামঞ্জস্য আনতে হবে।
তত্ত্ব
ব্যতিক্রমী লেখা - রৌহিনের কাছেই একমাত্র আশা করা যায়। ভোটের পরে ক্যাডারকুলের ঔদ্ধত্য চরমে পৌঁছেছে। কথা বলা দায়।
ফোকাস হোক গ্রাম ভিত্তিক পরিকল্পনা - জীববৈচিত্রের আঁতুড়ঘর বাংলায় গ্রাম ভিত্তিক পরিকল্পনা হলে সম্পদ উথলে পড়বে - যেমন ছিল উপনিবেশের আগে। বড় কারখানা দরকার আছে,কিন্তু সেটাই যেন ধ্যানজ্ঞান না হয়। আর দয়া করে কন্যাশ্রী ইত্যাদিকে ভিক্ষে বলবেন না। মিডডে মিল নিয়ে ৬৪ থেকে আন্দোলন চলছে আমরা বহু পরে শুরু করেছি। এগুলো জনগণের পাওনা হোক।
শেষে তেতো কথা ভূমিসংস্কারের ব্যর্থতার কারন বাংলায় ৭৭এর পর কৃষিতে কৃষি কর্পোরেটদের রমরমা - অথচ বাম অর্থনীতিবিদেরা উত্তর ভারতের সবুজ বিপ্লব নিয়ে খড়গহস্ত - কিন্তু বাংলা নিয়ে চুপ। বাংলা সরকারের কৃষির জেলার দপ্তরগুলো হয়ে উঠেছিল কর্পোরেট স্বার্থান্বেষীদের আখড়া - এক্সটেন্সন কাউন্টার। কর্পোরেট দালাল এবং কংগ্রেস আর অবাম পার্টিগুলো থেকে আসা জোদ্দারেরা মিলে সংস্কারকে কাজে লাগতে দিল না। এখন বর্ধমান হুগলীর নির্বাচনের ফল দেখলেই পরিষ্কার হবে সেদিন পার্টির অভিমুখ ঘোরানোর জন্যে তারাই দায়ি ছিল। আজ তারাই তিনু আর বিজেপিতে রাজ করছে। ৯০এর পরে মনোমোহনী অর্থনীতিতে ভারসাম্য বজায় রাখতে পারল না নেতৃত্ব।দলের ফোকাসটাই বদলে দিল ঐ নেতারা। আপনারা মুখে বললেন সাম্রাজ্যবাদ নিপাত যাক কিন্তু কাজে নিওলিবারালদের অগ্রপথিক হলেন। কর্পোরেটবাদ জাঁকিয়ে বসল।
৯৭-৯৯ হকার আন্দোলন যখন তুঙ্গে খালপাড় খাটাল ইত্যাদি নিয়ে শ্যামল চক্রবর্তীর সঙ্গে কথা বলতে গিয়েছিলাম। যাওয়ার আরেকটা উদ্দেশ্য ছিল ট্রেড ইউনিয়ন নেতাদের পুজো ছাড় দেওয়া নিয়ে একটা আবেদন সই করানো যেটা বুদ্ধবাবুকে দেওয়া হবে ডেপুটেশন হিসেবে। পুজোর আগে বেআইনি হকার ফুটে বসলে একটা ইনফরমাল ছাড়ের ব্যবস্থা করা হয়েছিল সুভাষবাবু বিরোধী লবি বুদ্ধবাবুকে দিয়ে। সেই আলোচনায় শ্যামলবাবু আমাদের বলেছিলেন আমি সব বুঝতে পারছি কিন্তু পার্টিকে বোঝাতে পারছি না। একই কথা কলকাতা জেলার নেতারা বলেছিলেন।
এই সমস্যা থেকে উত্তরণ দরকার - তাত্ত্বিক লড়াই দরকার। কিন্তু সমস্যা শাইনিং নতুন প্রজন্ম কী বুঝবে?
লেখাটা খুব আন্তরিক। কিন্তু এ-ই রাজ্যের বাইরে দেশ, দেশের বাইরে পৃথিবীর যে ভুতটা সবচেয়ে বেশি ভয় দেখায়, সেটা হল নিও লিবেরালিজম। তার নেত্য শুরু হবার সঙ্গে সঙ্গেই সবকিছু পালটে গেল। একা বিচ্ছিন্ন ভাবে কী করা যাবে কে জানে।
অজিত সেনগুপ্ত একটা বই লিখেছিলেন - পশ্চিমবঙ্গের অর্থনীতি। আবার ধুলো ঝেড়ে সেটাকে বার করা হোক।
ভালো লাগলো।
রৌহিণ, খুব ভালো আর দরকারি লেখা।
বিশ্বেন্দুদাদের সঙ্গে কথা বলে, আমার ক্রমশঃ এইটা মনে হচ্ছে যে সরকারের উদ্যোগে অর্থনীতির বিকাশ একভাবে কর্পোরেট, বড়শিল্প, রাষ্ট্রীয় পুঁজিমুখীই থেমে যাবে। দরকার সামাজিক উদ্যোগ, সামাজিক নির্মাণ। সামাজিক নির্মাণ নিয়ে এই দেশে অসম্ভব ভালো কাজ হয়েছিল স্বাধীনতা সংগ্রামের শুরুর দিকটায়। তারপর সেই উদ্যোগ বর্জিত হয়, সম্ভবতঃ বিশ্বযুদ্ধ এবং সোভিয়েতের উত্থান নেতাদের মাথা ঘুরিয়ে দিয়েছিল।
খুব ভাল লেখা। আরো বেশি করে লোক এই নিয়ে ভাবলে ভাল হত।
আর শিল্পের উপর জোর দিতে হবেনা বা একটার সঙ্গে অন্যটার বিরোধ আছে, তাও মনে করিনা।৷
পতিত, বন্ধ্যা জমি, বন্ধ কারখানাগুলোয় নতুন ভাবে শিল্প, যতটা সম্ভব শ্রমনিবিড় শিল্প গড়ে তোলার সেরকম উদ্যোগ নেওয়া কেন যাবেনা? শিল্প মানেই বহুফসলী কৃষিজমির দখল নিয়েই কেন। এগুলোর কাছে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত, পরিকাঠামো বেশি আছে, এ কোন যুক্তি হতে পারেনা, কারণ তার কাউন্টার হয়, শিল্পের কাজ এগুলোকেও ডেভেলপ করা।
রাজ্যের ল্যান্ড ব্যানক এর খবর কেউ জানেন?
দুজায়গায় আমার দ্বিমত আছে। আশাকরি রৌহিন রেগে যাবেন না :-)
১। বৃহৎ শিল্প আদৌ কর্মসংস্থান বাড়ায় না। উলটে তা ধ্বংস করে বহুভাবে
আমার মনে হয় বৃহত শিল্প যতো বেশী কর্মসংস্থান করে, আজকের অটোমেশানের যুগেও, অন্য কোন সেক্টরেই অতোটা কর্মসংস্থান হয়না। কৃষি তে তো অবশ্যই হয়না।
রৌহিন যে হিসেবটা দিয়েছেন, সেটা এরকমঃ "ওই চাষের জমিতেই কারো মুরগি চরে, জমির একপাশে কেউ তোলে ছোট তাঁতঘর, গোয়ালঘর, ছুতোর কারখানা - আরও কত কী। জমির মধ্যের ছোট্ট পুকুরটির মাছ, চুনোমাছই কারো রোজকার বাজারে নিয়ে গিয়ে বসবার কাঁচামাল"
ধরা যাক, এক একর জমিতে এইভাবে দশজনের কর্মসংস্থান হলো। তাহলে পাঁচশো একর জমিতে কর্মসংস্থান হবে পাঁচ হাজার জনের। এর উল্টো দিকে পাঁচশো একর জমিতে ধরুন একটা লার্জ স্কেল কারখানা তৈরি হলো। শ্রীপেরুমবুদুরে হিউন্ডাই প্ল্যান্ট সাড়ে পাঁচশো একরে তৈরি, এখানে ন হাজারের বেশী লোক কাজ করেন। কিন্তু এঁরা ঐ প্ল্যান্টের ডাইরেক্ট এমপ্লয়ি, এই প্ল্যান্ট ঘিরে অজস্র সার্ভিস দোকান তৈরি হয়েছে। ছোট ছোট চায়ের দোকান থেকে শুরু করে রেস্টুরেন্ট, প্রভিশান স্টোর, অন্যান্য দোকান ইত্যাদি। কিন্তু এর থেকেও বেশী কর্মসংস্থান হয় এই প্ল্যান্টের আপস্ট্রিম আর ডাউনস্ট্রিম সেক্টরে। এই কারখানার কাঁচামাল আসে চেন্নাই বন্দর থেকে আর ফিনিশড গুডস, অর্থাত গাড়িও যায় বন্দরে (তার জন্য ডেডিকেটেড ফ্রেট করিডর বানানো হচ্ছে। এছাড়াও অন্তত পঞ্চাশটি ছোটবড়ো কারখানা এই প্ল্যান্টে বিভিন্ন পার্টস সাপ্লাই করে। তাদের প্রতিটিতে ২৫ জন কর্মী ধরলেও অন্তত এক হাজার জন চাকরি করছেন (সেই কারখানাগুলো ঘিরেও দুয়েকটা চায়ের দোকান ইত্যাদি আছে)। অর্থাত পাঁচশো একর জমিতে লার্জ ইন্ডাস্ট্রি তৈরি হলে খুব কম করে দশ থেকে পনেরো হাজার জন লোক কাজ পাচ্ছেন। এছাড়াও মাল্টিপ্লায়ার এফেক্ট তো আছেই, যেটা কৃষির থেকে বড়ো ইন্ডাস্ট্রিতে অনেক অনেক বেশী।
অবশ্যই, আপনি যেটা বলেছেন, যখন এই কারখানার জন্য জমি নেওয়া হয়েছিল, তখন সেই সব কৃষকরা বা অন্য যাঁরা জীবিকা চালাতেন তাঁদের বেশীর ভাগ এই কারখানায় চাকরি পান নি। এটা প্রায় কখনোই হয়না। ধরুন একটা নদীতে আগে নৌকো করে পারাপার করা হতো, তারপর সেই নদীর ওপর ব্রিজ তৈরি হয়ে গেল, রেলপথ বসানো হলো, তো নৌকোর মাঝিরা প্রায় কেউই বাসে বা রেলে কাজ পাননা।
"স্বভাবতই, শিল্পস্থাপনে যত মানুষ কাজ হারান, তত মানুষ কাজ পাননা, এবং পেশার চরিত্র পালটে যাওয়ায় কর্মদক্ষতাও কমে যায়"
আমি যদ্দুর জানি, কৃষি থেকে বড়ো ইন্ডাস্ট্রিতে গেলে লেবার প্রোডাকটিভিটি বাড়ে, কমে না।
"অথচ স্বাধীন পেশার অভাব শহরেও নেই, অনেকেই করে খান এবং এখনো স্কোপ রয়ে গেছে যথেষ্টই। প্লাম্বিং, ইলেক্ট্রিকাল, সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, ডিটিপি, ডকুমেন্টেশন, ড্রাইভিং, ছোট কারখানা, মোবাইল / ল্যাপটপ / ডেস্কটপ সারাই ও রক্ষণাবেক্ষণ, খাদ্য সংরক্ষণ, লজিস্টিক্স, গ্রাম থেকে শহরে উৎপাদন আনা, বিক্রী করা, ফুটপাথ হকারি, এমনকি চপশিল্প, রোলশিল্প, হস্তশিল্প - সবই স্বাধীন পেশা এবং যথেষ্ট চাহিদা আছে"
এখানে একমত। কিন্তু দেখুন, আপনি যে এই নানান ধরনের সার্ভিস সেক্টরের কথা বললেন, সেই সার্ভিস ইন্ডাস্ট্রিতে কর্মসংস্থান আরও বেশী হয় যখন ইন্ডাস্ট্রি আরও বেশী করে তৈরি হয়। কয়েকটা বড়ো কারখানা তৈরি হলে আরও বেশী করে সার্ভিসের চাহিদা বাড়ে, সেল্ফ-েমপ্লয়মেন্টেরও সুযোগ আসে। শ্রীপেরুমবুদুর চেন্নাইয়ের বড়ো ইনডাস্ট্রিয়াল পার্ক, অনেকগুলো ইন্ডাস্ট্রি এখানে লোকেটেড। এর আশেপাশের জায়গাগুলোয় কতো যে সার্ভিস জবের চাহিদা তৈরি হয়েছে, তা না দেখলে বিশ্বাস করতে পারবেন না। সেরকম আরেকটা ইনডাস্ট্রিয়াল পার্ক হলো সিপকট। সবচেয়ে অবাক হলো, এই সব ইনডাস্ট্রিয়াল এরিয়াগুলোতে পব আর বাংলাদেশ থেকে অন্তত এক লাখ লোক এসে কাজ করছেন। বলতে গেলে যেকো রেস্টুরেন্ট বা চায়ের দোকানে গেলে আপনি বাংলা ভাষায় অর্ডার দিতে পারবেন (বিশ্বাস না হলে কখনো চেন্নাইতে আসবেন, আপনাকে আমি ঘুরিয়ে দেখাবো :-))
২। কৃষি আমাদের ভিত্তি, গ্রাম আমাদের ভবিষ্যৎ
এটা আমার দ্বিতীয় দ্বিমতের জায়গা। আমার মনে হয় সভ্যতা যে পথে এগোচ্ছে, তাতে গ্রাম নয়, শহরই আমাদের ভবিষ্যত। এর বহু বহু কারন আছে, সেসব পুরো লিখতে গেলে বোধায় একটা বই হয়ে যাবে। তবে আমার মনে হয়না আমরা পেছন দিকে হাঁটতে পারবো, শহর থেকে গ্রামে ফিরে যেতে পারবো।
আরেক ধরনের মাল্টিপ্লায়ার এফেক্ট হলো, কয়েকটা ইন্ডাস্ট্রি তৈরি হলেই আরও অন্যান্য ইন্ডাস্ট্রি আসতে শুরু করে। আগের পোস্টে শ্রীপেরুমবুদুর (চেন্নাইয়ের পশ্চিমে) এর কথা বলেছি। এটা চেন্নাইয়ের সবথেকে পুরনো এসইজেড, এখন আরও কয়েকটা শুরু হয়ে গেছে, যেমন সিরুসেরি আর ওরগরম। আরও একটা শুরু হয়েছে, হোসুর, এটা চেন্নাই থেকে কিছুটা দূরে। এখানে টাটা পাঁচ হাজার কোটি টাকার ফোন তৈরির প্ল্যান্ট খুলছে। আরও বেশ কিছু প্রস্তাব এসেছে। তো ইনডাস্ট্রিয়ালাইজেশান প্রসেস একবার সফলভাবে শুরু করতে পারলে সেটা চলতেই থাকে। তখন আর এই প্রশ্নটা ওঠে না, যে যাঁদের জমি নেওয়া হচ্ছে আর যাঁরা সেই জমি ঘিরে জীবিকা নির্বাহ করছেন, তাঁরা কোথায় কাজ পাবেন। একটা রাজ্য বা দেশ যতো বেশী ইনডাস্ট্রিয়ালাইজড হয়, তার সার্ভিস সেক্টরে ততো বেশী কর্মসংস্থান হয়।
এমন আলোচনায় অংশগ্রহন করতে ইসস্তত করি - কারণ বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই বাস্তবতার থেকে ত্বাত্তিকতা প্রধান্য পায়। ইদানিং দেখেছি 'গ্রাম' সংক্রান্ত একটা রোমান্টিকতা জুড়ে তাকে এমন মডেল হিসাবে দেখা হচ্ছে যেটা নাকি আমাদের ভবিষ্যত হওয়া উচিত।
"কৃষি আমাদের ভিত্তি, গ্রাম আমাদের ভবিষ্যৎ" - এমনটা যদি হত, আমি জানি না গুরুর পাতায় আমার থেকে বেশী খুশী আর কে হবে! কিন্তু আমার একটা প্রশ্ন আছে, এখানে যাঁরা আলোচনা করছেন তাঁদের কি কারো ফার্ষ্ট হ্যান্ড চাষবাসের অভিজ্ঞতা আছে বর্তমান পরিস্থিতিতে? কে আমেরিকা থেকে ফিরে গ্রামের বাড়িতে হাঁসের ডিম, পুকুরে মাছের চাষ করছে - সেগুলোর সাথে তুলনা করবেন না প্লীজ।
কেউ যদি গ্রামে গিয়ে চাষ করতে চান, অভিজ্ঞতা পেতে চান, আমি বিঘে দশেক জমির ব্যবস্থা করে দিতে পারি এক্ষুণি। একবছর চাষ করে দেখুন গ্রামে থেকে (ব্যাঙ্কে এককোটি বিদেশ থেকে জমা করা টাকা দিয়ে শুরু নয়) - তারপরে পরের বার গুরুতে একটা রচনা লেখা হোক।
আমি ব্যাক্তিগতভাবে শহরে ছাড়া থাকতে পারিনা। গ্রামে ঘুরতে যেতে অবশ্যই ভাল্লাগে, সবুজ মাঠ ইত্যাদিও এক সপ্তাহের জন্য দেখতে খুব ভাল্লাগে। কিন্তু তারপরেই শহরের ভিড় রাস্তা, লোকজনের আওয়াজ ইত্যাদি মিস করতে থাকি। (শুধু মনে হয় গাড়ির হর্নের আওয়াজ যদি কমানো যেত)।
এক কোটি টাকা মানে প্রায় ১৫০ হাজার ইউ এস ডলার। সেই টাকা নিমো গ্রামে চাষের জন্যে কে দেবে সুকি? :)
আমাকে বিঘে দশেক জমি দেওয়া হোক। দশও চাই না, চারেক হলেই চলবে (প্রস্থে ও দীঘে সমান হইবে টানা)। আমি অবশ্য চাষ করবো না, উপকন্ঠের বাগানবাড়ি বানাবো। মানে একটু তো আনন্দ ফুর্তিরও দরকার, নাকি।
তবে সিরিয়াস ইয়েতে, গ্রামকেন্দ্রিক রোমান্টিকতার অন্ত:সারশূন্যতার ব্যাপারটা মানলেও, গ্রামে এসে চাষ করে দেখান এই কথাটার মানে হয়না। একজন কৃষক যদি বলেন ইঞ্জিনিয়ারিং খুব ভালো জিনিস, তাঁকে তো বলা যায় না কালই একটা হাওড়া ব্রীজ বানিয়ে দেখান দেখি। তাঁকে প্রস্তুত হতে হবে। সেরকমই শহুরে লোক চাষবাস ভালো বললেও তাকে গ্রামে পাঠাতে গেলে আগে গড়েপিটে নিতে হবে। চাষবাস ভয়ানক কঠিন কাজ এবং আমার খুব ধারনা ওই বিদ্যাটা প্রজন্ম ধরে অর্জন করতে হয়।
ডিসির শিল্প/ কৃষির ব্যাপারটায় একমত।
যদিও তার জন্যে শিল্পের জন্যে চাষের জমি নিয়ে নেওয়া সমর্থন কর না।
আমার কথা তো আর কেউ শুনতে যাচ্ছে না, তাই আরেকটু ফিউচারিস্টিক হওয়াই যায়। মানুষের বেঁচে থাকার জন্য কর্মসংস্থান করতে হবে এবং তার জন্য পরিবেশ ইত্যাদি ধ্বংস করে হাবিজাবি গাড়িঘোড়া ধুলোধোঁয়া বানাতে হবে - এই জায়গা থেকে বোধয় মানব সভ্যতা এবার আস্তে আস্তে বেরুতে পারে। মানবজাতির হাতে যথেষ্ট রিসোর্স, মানে সম্পদ জ্ঞান ও প্রযুক্তি - সবই বোধয় এসে পড়েছে।
কীভাবে হবে? আমি তার কী জানি। অনেক বাঘা বাঘা লোক আছেন যাঁরা এটা ভেবে বের করতে পারবেন।
*করি না
আমার মনে হয় আগামী দিনে ইলেকট্রিক ভেহিকেল আরও বেশী করে ব্যবহার শুরু হবে। পেট্রল বা ডিজেলের বদলে ফুয়েল সেল ইত্যাদির ব্যবহার হয়তো বাড়বে। ভারতেও তো টেসলা লঞ্চ করবে বলে অলোচনা চলছে। আশা করি চেন্নাইয়ের কাছে কারখানা খুলবে, এখানে আরও ডেভেলপমেন্ট হবে।
অভ্যুদা,
আরে আমি কাউকে তাকা দিতে বলি নি :) বলতে চেয়েছি যে বৃহৎ পুজিঁ নিয়ে নয়, বরং সাধারণ চাষাদের মত কম পুঁজি নিয়ে ময়দানে নামতে!
হুতো,
আমি কাউকে চাষ 'করে দেখান' দাবি করি নি! বলেছি নিজে 'করে দেখুন'। নিজে করে না দেখলে সমস্যা সব সময় বোঝা যায় না। ফেসবুকে বা অনলাইন ফোরামে তর্ক করা এক জিনিস, আর যদি দাবী করা হয় 'এই পথটাই মোক্ষ' - তাহলে সেই পথটা সম্পর্কে ভালো ভাবে ধারণা থাক দরকার। তা না প্রস্তাবনার বিশ্বাসযোগ্যতা থাকে না। এটাই বলার। এর মধ্যে চ্যালেঞ্জের কোন ব্যাপার নেই।
হুম... যাঁরা অলরেডি এই পেশায় আছেন তাঁদের মতামত সবচে' গুরুত্বপূর্ণ, কারন তাঁরা প্রোজ অ্যান্ড কনস সত্যি করে জানেন - এরকম কী?
সেটা যদি হয় তাহলে তাতে পুরোপুরি একমত।
শিল্পায়ন সম্পর্কে বাংলা 2009 থেকে রায় দিয়েছে। এখন যে কারণে বামফ্রন্ট শূন্যে নেমেছে। এই টই টা তো শিল্পায়নের লাভ ক্ষতি নিয়ে নয়, বামপন্থী দলগুলো কিভাবে জন সমর্থন ফিরে পাবে সেইটা নিয়ে।
@সুকি - আমি আমার লেখায় পরিষ্কার উল্লেখ করেছি যে "এজন্য কৃষক পরিবারের, জমি এবং কৃষি সম্বন্ধে যাদের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা আছে,সেরকম পার্টি কমরেডদেরই অগ্রণী ভূমিকা নিতে হবে" - কারণ আমরা, শহরের লোকেরা চাষের কাজ জানিনা, সেটা নিয়ে বাজে তর্কও করার মানে হয় না। আমার পরিবার গত চার প্রজন্মে কেউই " ক্ষুদ্র কৃষক পরিবারের সন্তান" ছিলেন না। আমি স্পষ্টতই গ্রামে যারা ইতিমধ্যেই চাষের কাজে যুক্ত আছেন, তাঁদের পাশে গিয়ে দাঁড়ানোর কথা বলেছি। নেতৃত্ব দিতে নয়, সহমর্মী হয়ে। সঙ্গে অন্যান্য পেশায় যারা আছেন, তাদের পাশেও। গ্রাম থেকে শহরে আসার প্রবণতাটা রোধ করার উদ্দেশে। শহরে এলেই মোক্ষ, পালটে যাবে জীবন, এই মিথটা রেজিস্ট করতে।
@dc আপনি শ্রীপেরামবুদুরের যে হিসেব দিয়েছেন তাকে চ্যালেঞ্জ করার কিছু নেই। কিন্তু কৃষিক্ষেত্রে আপনার যে হিসাব, একরপিছু দশজনের কর্মসংস্থান, সেই হিসাবের কোন সোর্স আছে (লিঙ্ক দরকার নেই, শুধু আছে কি না জানতে চাইছি) নাকি আপনি আন্দাজে বললেন? আর বাকি প্রসঙ্গে এটুকুই বলার যে "গ্রাম আমাদের ভবিষ্যৎ " যখন বলি, তখন আমি জানি এই মুহুর্তে সভ্যতার গতি তার ঠিক বিপরীতেই। সেই গতির বিরুদ্ধে দাঁড়ানো একজন বামকর্মীর কর্তব্য হওয়া উচিত, এই প্রত্যয় থেকেই বলা, গ্রাম আমাদের ভবিষ্যত। এটা আধুনিকতাত দর্শনের প্যারাডাইম শিফট বলতে পারেন। গ্রামীন জীবনে ফিরে যাওয়া। এক্ষেত্রেও প্রশ্নটা উঠবে, তাই বলে রাখি, কিছুটা প্রাকটিস আমার আছে। শহুরে কায়দায় গ্রামে থাকা আর সেটাকে বিসর্জন দিয়ে থাকার মধ্যে ফারাকটাও একেবারে জানিনা, তা নয়।
সকলকেই ধন্যবাদ, এমন একটা মনোগ্রাহী বহুস্তরীয় আলোচনার জন্য
রৌহিন, উত্তরের জন্য ধন্যবাদ। "একরপিছু দশজনের কর্মসংস্থান" - আমার নিজের কোন সোর্স নেই। আপনার যে প্যারাটা কোট করেছি, সেটার থেকে একটা আন্দাজ করার চেষ্টা করছিলাম। আপনার প্রশ্ন পড়ে নেটেও খানিক খুঁজলাম, কিন্তু একর বা হেক্টারপ্রতি কতোজন মিলে চাষ করেন সেরকম কিছু পেলাম না। শুধু এটুকু পেলাম যে ওভারল চাষের সাথে যুক্ত এরকম মানুষের সংখ্যা নাকি ২০১০ এ ৫০% থেকে এখন ৪২% হয়েছে, বাকিটা ইন্ডাস্ট্রি+সার্ভিস সেকটরে শিফট করেছে। আপনি বা অন্য কেউ যদি একর প্রতি কতোজন সরাসরি বা পরোক্ষে কতোজন জড়িয়ে আছেন তার একটা হিসেব দিতে পারেন তো খুব ভালো হয়।
Aa, আমি যা লিখেছি সেটা ঠিক বাংলা বা বামপন্থী দলগুলো নিয়ে না। আমি নিজে চেন্নাইতে থাকি, তাই বাংলা নিয়ে আমার সেরকম আগ্রহ নেই। রৌহিন যেহেতু লিখলেন এটা ওনার মনোলগ, তাই আড্ডায় যোগ দিলাম :-)
ওপরের তথ্যের সোর্সঃ
১
রৌহিনের একেবারই অন্যরকম লেখা।
২
দুই বাংলাতেই বামপন্থীরা ঐতিহাসিক ভুল করতে করতে নিজেরাই ইতিহাস হতে বসেছে।
আদর্শ শুধু রক্ষা জরুরি তো বটেই, কিন্তু "বাস্তব অবস্থার বাস্তব বিশ্লেষণ" অতি জরুরি।
৩
"কৃষি আমাদের ভিত্তি, গ্রাম আমাদের ভবিষ্যৎ" - এই নীতি নিয়ে গুরুতর ভাবনার সময় এসেছে।
চলুক
একর পিছু দশজনের কর্মসংস্থান প্রসঙ্গে কয়েকটি কথা ...
হিসাবের মধ্যে না গিয়েও বলা যেতে পারে গ্রামীণ কৃষিব্যবস্থায় ডিসগাইস্ড আনএম্প্লয়মেন্ট বলে একটি ব্যাপার প্রায়শই থাকে। এর অর্থ প্রয়োজনের তুলনায় বেশি মানুষ জমির সাথে যুক্ত। এটি ঘটে মূলত কৃষি ব্যবস্থার পারিবারিক মালিকানা থেকে। পাঁচটি ভাইয়ের মধ্যে একটি-দুটি বিশেষ কম্মের নয়। কৃষি উৎপাদনে এদের প্রান্তিক অবদান প্রায় শূন্য হতে পারে। ফলত সেই কৃষি ব্যবস্থার উৎপাদকতা আসলে নির্ভর করছে অন্য কর্মঠ ভাইগুলির ওপর । এরকম ছদ্মবেশী বেকার কিছু সদস্য শহরে চলে গেলে বা অন্য গ্রামে কারখানায় কাজ করতে গেলেও পরিবারের মোট কৃষি উৎপাদনের ক্ষতি হয় না। অতএব বলা যেতে পারে শিল্প তৈরি হলে কৃষির উৎপাদকতা না কমিয়েও মোট কর্মসংস্থান বাড়তে পারে।
উর্বর কৃষি জমিতে নয় , পতিত অনুর্বর জমিতে শিল্প স্থাপন একটা ভালো উপায়।
শিল্পের কর্মসংস্থান করার ক্ষমতা বিষয়ে ডিসির সঙ্গে সহমত।
কৃষি উন্নয়ন ও শিল্প বিস্তার একসাথে করা যায় , প্রয়োজন সঠিক নীতি প্রণয়ন। এ দুটি ক্ষেত্র একে ওপরের পরিপূরক , প্রতিযোগী নয়। গ্রাম থেকে শহরে যাবার ঢল আটকাতেও এটাই প্রয়োজন।
উৎসাহী পাঠক পড়তে পারেন -উন্নয়নের অর্থনীতির গোড়ার তত্ত্ব - লুইস মডেল , ফেই-রানিস মডেল , টোডারো মডেল।
রৌহিনের লেখা পড়ে চমকে গেলাম। একেবারে "আমারও মনে ছিল , কেমনে বেটা পেরেছে তাহা জানতে ' কেস। সবচে ভাল লাগল ওর টোন এবং অ্যাটিচুড। আলোচনায় আন্তরিকতার ছোঁয়া।
"এই সমস্যার সমাধান হতে পারত বর্গার পরবর্তী ধাপ হিসাবে বর্গাদার এবং ভূমিহীন কৃষকদের নিয়ে সমবায় তৈরী করে যৌথ কৃষিব্যবস্থা গড়ে তোলা"
হতে পারতো , কিন্তু হতো না। সোভিয়েত ঐক্যতন্ত্রে হয়নি , গণপ্রজাতন্ত্রী চীনেও হয়নি। সমবায়ভিত্তিক কৃষির অকার্যকরতা বারংবার দুই দেশেই দেখা গেছে , যার ফলস্বরূপ কিছু বার দূর্ভিক্ষ পর্যন্ত হয়েছিল। সোভিয়েত ঐক্যকে বেশ কয়েক বার জাতীয় কোষাগার থেকে সোনা ওর হীরে বিক্রয় করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে খাদ্য়শস্য কিনতে হয়েছিল। বেশ মনে পড়ে ৭০-৮০ এর দশকে ওদেশের কৃষিজীবিরা কুটিরসংলগ্ন ক্ষুদ্র জমিখণ্ডে তরিতরকারি চাষ ও হাঁস-মুরগী শূকর ইত্যাদি পালন করে সমান্তরাল বেসরকারী বাজারে বিক্রী করে উপার্জন বাড়াতেন ,যা রাষ্ট্রশক্তি দেখেও মুখ ঘুরিয়ে থাকতো। সমবায়ভিত্তিক কৃষির কার্যকারিতা সম্পর্কে বহু আলোচনা সমালোচনা দশকের পর দশক ধরে হয়ে গেছে। কার্যক্ষেত্রে ফলপ্রসূ বলে প্রমাণিত হয়নি।
যথা , যন্ত্র ছাড়া সমবায়িক একইকরণের ফলে সৃষ্ট বৃহৎ কৃষিজমির কর্ষণ , রোপণ , জলসেচন ,ফসল সংগ্রহণ ইত্যাদি সম্ভব নয়। যন্ত্রদ্বারা এই সকল কাজ সম্পন্ন করলে লোকবলের প্রয়োজন অনেক কমে যায়। যেসকল ক্ষুদ্র চাষির জমি একত্রিত করে সমবায়ের বৃহৎ কৃষিজমি তৈরি করা হয়েছিল , তাঁদের কর্মসংস্থান করা কঠিন হয়ে পড়ে। এদিকে যন্ত্র ব্যবহার পরিহার করলে কৃষিকাজ যথেষ্ট উৎপাদনশীল হয়না। শাঁখের করাতের মতো ব্যাপার।
@dc
আপনার দেওয়া statista পরিসংখ্যান এর stacked bar graphটিতে একটি ব্যাপার লক্ষণীয়। দেখা যাচ্ছে কৃষিজীবীর শতকরা অংশ যতটা কমছে , services কর্মীদের শতকরা অংশ ততোটাই বাড়ছে। বলা যেতে পারে গ্রামের কৃষিজীবীরা অধিক উপার্জনহেতু শহরে service কর্মে সরে আসছেন।
কিন্তু কারখানাজাত উৎপাদন শিল্পে নিযুক্ত কর্মীদের শতকরা অংশ মোটামুটি এক দশক ধরে সমানই রয়েছে। অনুমান করা যেতে পারে যে উৎপাদন শিল্পের সংখ্যা ও বৈচিত্র তেমন বাড়েনি। যেমন মোটরগাড়ি উৎপাদন শিল্প বাদে মাদ্রাজ শহরে আর কোনো ডাকসাইটে শিল্পের নাম করা মুশ্কিল। সমগ্র ভারতে চেহারাটা স্বাভাবিকভাবেই আরো করুণ। কারণ অবশ্যই উৎপাদনশিল্পে দক্ষতা ও পরিকাঠামোর অভাব যা দূর হওয়া সুদূরপরাহত মনে হয়।
এমতাবস্থায় যথা দেশবাসী উৎপাদনবিদ্যা বিস্মৃত বা মূঢ় তথা আধিকাধিক শিল্পায়ন কীরূপে সম্ভবে? Tesla CNC যন্ত্র এবং robot বাহিনী ব্যবহার করে ৭০ লক্ষ টাকার EV তৈরী করলেই দেশে রাতারাতি Karl Benz, Henry Ford, Walter Chrysler বা Elon Musk ভূমিষ্ঠ হবেনা।
আর ফোন তৈরির কারখানা গুলোর কথা যত কম বলা যায় তত ভালো। সে বিষয়ে পরে আলোচনা করা যাবে.
এই ইকনমিক্সের সাথে মমতা বন্দোপাধ্যায়ের ইকনমিক্সের তফাত কি?