এক লোক হাটে যাচ্ছিল। রাস্তায় ছেলের শ্বশুর বাড়ি পড়ায় সেখানে একটু ঢুকছে। খালি মুখে আলাপ চলল কিছুক্ষণ। পরে বেয়াই যখন উঠতে যাচ্ছে বেয়াইন তখন বলছে যদি পান থাকতো, নাহয় সুপাড়িটা অন্য কারো থেইকা আইনা দিতাম। কিন্তু চুন-ই তো নাই! সব দোষ হচ্ছে চুনের! আসলে কিন্তু কিছুই নাই। করোনা মোকাবেলা বাংলাদেশের অবস্থা এখন অনেকটাই এমন। কোন পরিকল্পনা খুঁজে পাওয়া যায়নি, নিরাপত্তা সরঞ্জামের তীব্র অভাব, চিকিৎসা সরঞ্জামের অভাব। কিন্তু দোষ সব গিয়ে পরছে চুনের ওপরে মানে ডাক্তারদের ঘাড়ে! আসলে আমাদের পান সুপারি ও চুন কোনটাই নাই!
আমরা সময় মত গার্মেন্টস বন্ধ করতে পারিনি। আমরা সময় মত গাড়ি বন্ধ করতে পারিনি। আমরা সব ব্যবস্থা আছে বলে বলে সময় পার করছি কিন্তু আসলে কোন ব্যবস্থাই করিনি। ডাক্তারদের বাধ্য করছি নিরাপত্তা মূলক পোশাক ছাড়াই কাজ করতে, যারা কাজ করবে না তাদের এখন হুমকি দেওয়া হচ্ছে চাকরি করতে পারবে কিনা তা নিয়ে। বলা হয়েছে প্রচুর চিকিৎসা সরঞ্জাম আছে আমাদের। কেমন সরঞ্জাম আছে, বলছি, শুনুন, সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপককে ভেন্টিলেটর দেওয়া যায়নি, কারন সিলেটে যে হাসপাতালে করোনা রোগীদের রাখা হয়েছে সেখানে যে দুইটা ( হ্যাঁ, মাত্র দুইটা!) ভেন্টিলেটর আছে সেই দুইটা নষ্ট! সুনামগঞ্জের এমপি আক্ষেপ করে ফেসবুকে পোষ্ট দিয়েছে যে মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপকের চিকিৎসা দিতে যদি এই অবস্থা হয় তাহলে সাধারণ মানুষ কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে? তিনি সকলকে প্রধানমন্ত্রীকে সত্যটা জানাতে বলছেন। সেই সহযোগী অধ্যাপক গতকাল মারা গেছেন।
আমাদের পূর্ব প্রস্তুতি থাকার ফলে আমাদের এখানে পরিস্থিতি ভাল, এমন আলাপ প্রতিদিন শুনছি। কেমন পূর্ব প্রস্তুতি ছিল আমাদের? পুরো দেশে ভেন্টিলেটর আছে মাত্র ৪৫ টা! নিশ্চিত থাকেন, সব গুলোই ঠিক ঠাক কাজ করার মত অবস্থায় নাই, বেশ কিছু নষ্ট থাকতেই পারে।যেই প্রবাসীদের আটকে রাখতে পারলেই একমাত্র বাঁচার উপায় ছিল সেই প্রবাসীদের বিনা বাধায় পুরো দেশে ছড়িয়ে দিয়েছি। অল্প কয়েকজন প্রবাসীকে আটকালেই যেখানে কাজ হত সেখানে এখন পুরো দেশেকে বন্ধ করা হয়েছে। প্রচুর পরিকল্পনা করে দেশ লকডাউন করা হয়েছে। মুখস্ত বলে যাচ্ছে কেউ ঘর থেকে বের হবেন না। যেন আমার দেশ ইউরোপ আমেরিকার মত হয়ে গেছে, বলল আর সবাই ঘরে বসে রইল। মহা পরিকল্পনাকারীরা কেউ একবার ভাবল না কত মানুষ আছে যারা এক জায়গায় গাদাগাদি করে থাকে। একটা বাথরুম, রান্নাঘর, গোসলখানা ব্যবহার করে ১০০/২০০ বা তারচেয়ে বেশী লোক। এরা কোথায় যাবে? এদেরকে ঘরে বন্ধ করে রাখবেন, লাভটা হবে কী? ঘরের থেকে বাহিরে, রাস্তায়ই ও ভাল থাকবে। এদের কথা কেউ ভাবল না। ঘরহীনদের কথা কেউ বলল না। ঘর নামে যে ইয়ার্কি আছে অনেকের তাদের কথাও হিসেব করা হল না। অথচ এদের কথা প্রথমে ভাবলে এই বিপদে পড়ত না তারা। তাদের জন্য সুষ্ঠ একটা পরিকল্পনা খুব জরুরি ছিল। এখন যখন সামাজিক ভাবে ছড়ানো শুরু হয়েছে ভাইরাস তখন এই শ্রেণীর মানুষ আসলে পোকামাকড়ের মত মারা যাওয়ার কথা। যদি তা না হয় তাহলে দেশের জন্য এরচেয়ে মঙ্গলজনক আর কছু হতে পারে না।
এসব দেখার দরকার নেই। ডাক্তার তার নিরাপত্তার জন্য পোশাক চেয়েছে, সরঞ্জাম চেয়েছে, বলেছে না দিলে কাজে যোগ দিবে না। তাই সব দোষ ডাক্তার নার্সদের। ওই যে বললাম আগে, সব দোষ চুনের। চুন থাকলেই ভেন্টিলেটরের সমস্যা মিটে যেত, ঘরহীনদের চিন্তা থাকত না, দিন আনি দিন খাই মানুষের কোন বিপদ হত না, নিরাপত্তা সরঞ্জামের কোন অভাব থাকত না। গার্মেন্টস শ্রমিকরা বেতনের জন্য আন্দোলন করছে, সেই সমস্যাও থাকত না। চুন থাকলেই হত শুধু।
আমি আপনাকে নিশ্চয়তা দিয়ে বলতে পারি এর সব গুলোই ঠিক নাই। বেশ কিছুই আছে যেগুলা নষ্ট! আমরা জাস্ট পাইকারি হারে মরার জন্য অপেক্ষা করছি!
বাংলাদেশের লেখা হলেই এগুলো কোন ধরণের অসভ্যতা? কেউ তো আপনার সমর্থনেও লেখেনা, এখানে কোন পাত্তাই পান না, উল্টে ছ্যা ছ্যা করে বা ইগনোর, তাও একাবোকা অসভ্যতা চালিয়ে যাওয়ার এন্থু আসে?
ঠিক বলেছেন
ক্রিকেট আমাদের অহংকার
সেটাকে তামাসা বানায়ে দিসে