এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  গপ্পো

  • অসুখের সুখ।

    Sukdeb Chatterjee লেখকের গ্রাহক হোন
    গপ্পো | ২৯ অক্টোবর ২০২৪ | ১৫৩ বার পঠিত
  • অসুখের সুখ।
    শুকদেব চট্টোপাধ্যায়।
    নব পল্লির নন্দ মিত্তিরকে অনেকেই চেনে। চেনার কারণটা অবশ্য ভাল কিছু নয়। আসলে অমন কিপটে আর দুর্মুখ চট করে দেখা যায় না। পাড়ার চাঁদা হোক বা অন্য কোন রকম সাহায্য, নন্দর কাছ থেকে টাকা পাওয়া গেছে এমন ঘটনা খুব কমই ঘটেছে। প্রতিশোধের বশে পাড়ার ছেলেরা বাড়ির সামনে মরা কুকুর বেড়াল ফেলেছে, কখনও বা প্রাতঃকৃত্য সেরেছে, তবু নন্দকে বাগে আনা যায়নি। গাল পাড়তে পাড়তে নিজেই সেগুলো পরিষ্কার করেছে। আড়াল আবডাল থেকে ভেসে আসা ব্যাঙ্গ বিদ্রূপকে কোন রকম পাত্তাই দেয়নি।
    একে পাড়ার ছেলেদের উৎপাত তার ওপর বাড়িতে দু দুটো সমত্ত মেয়ে, তাই মিত্তিরের বৌএর দুশ্চিন্তার শেষ নেই।স্বামীর স্বভাবই এ সবের জন্য দায়ী এটা সে জানে । এও ভালমতই জানে যে তা পাল্টাবার নয়। তাই নন্দর অজান্তে মাঝে সাঝে অল্প চাঁদা পত্র দিয়ে অবস্থা সামাল দেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু সে আর কদিন ! আবার কিছু একটা গোলমাল করে নন্দ সব বিগড়ে দেয়।

    একদিন বিকেলবেলা দু তিনটে অল্পবয়সী ছেলে গল্প করতে করতে নন্দর বাড়ির সামনে দিয়ে যাচ্ছে। ক্ষণিকের জন্য তাদের নজর নন্দর বাড়ির ছাদের দিকে গেছে। কপাল গুণে নন্দও ওই সময় বাড়িতে ঢুকছে। ব্যাস আর যায় কোথায়।
    --অ্যাই! অমন ড্যাবড্যাব করে বাড়ির দিকে তাকিয়ে কি দেখছিলি রে ?
    আচমকা প্রশ্নে থতমত খেয়ে ছেলেগুলো বলল—একটা ঘুড়ি কেটে পড়ছিল তাই দেখছিলাম।
    ---জানোয়ারের দল, ভেবেছিস আমি কিছু বুঝি না। কোথায় ঘুড়ি দেখা আমায়।
    ঘুড়ি কখন পড়ে গেছে কি দেখাবে। ছেলেগুলো একেবারেই বদ ছিল না। কিন্তু অকারনে গালাগাল খেয়ে ওদের মেজাজ বিগড়ে গেল। ওরাও দুকথা শোনাল। এর মধ্যে মজা দেখতে আরো কটা বখাটে ছোঁড়া জড় হয়ে গেছে। চারিদিক থেকে টিপ্পুনি আসা শুরু হল। একা অতগুলোর সাথে যুঝতে যুঝতে নন্দর আক্ষেপ শোনা গেল—চারিদিকে এত মায়ের কোল খালি হয়, তোদের মায়েদের কোল কবে খালি হবে রে ?
    আড়াল থেকে সঙ্গে সঙ্গে উত্তর এল—আমরা মরলে তোর মেয়েদের জন্য বর কোথায় পাবি রে ?
    তরজায় ছেলেগুলোর সাথে এঁটে উঠতে না পেরে গালমন্দ করতে করতে বাড়িতে ঢুকে ঝালটা গিন্নির ওপর মেটাল—বলি তোমার ও দুটোকে আর কত আড়াল করবে ? শিগগিরি আমার সামনে বার কর।
    রাগের ঠেলায় মানুষটা বোধহয় পাগল হয়ে গেছে। নাহলে লজ্জার মাথা খেয়ে চিৎকার করে ওসবকথা কেউ বলে। যোগমায়া ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে।
    ---অমন হাঁ করে দেখছ কি ? তোমার দুই নবাব নন্দিনী জুঁই আর শিউলি কোথায়?
    এবার ব্যাপারটা যোগমায়ার কাছে পরিষ্কার হল। মেয়েরা কাছাকাছিই ছিল। বাবার স্বভাব তাদের জানা। সামনে না এলে চট করে থামবে না। তাই গুটি গুটি পায়ে তারা বাবার সামনে এসে দাঁড়াল।
    --তোরা নিশ্চয় দোতলায় রাস্তার দিকের জানলার সামনে দাঁড়িয়েছিলি?
    --নাতো।
    --তাহলে নচ্ছারগুলো বাড়ির দিকে অমন হাঁ করে তাকিয়েছিল কেন ?
    এ প্রশ্নের আর কি উত্তর দেবে, মেয়েরা তাই চুপ করে দাঁড়িয়ে রইল।
    --আস্কারা পেলে ওগুলো সব মাথায় উঠবে বুঝেছিস! রাস্তার দিকের জানলা সব সময় খুলে রাখবি না। আর খুললেও পরদা টেনে দিবি।
    বাবা বাইরে তান্ডব করে এসেছে আর তার ফলেই যে এই সতর্কবার্তা তা মেয়েরা জানে না। কিন্তু অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে তারা এটা বিলক্ষণ জানে যে এই সময় কথা যত কম বলা যায় ততই ভাল। তাই ‘আচ্ছা’ বলেই তারা বাবার সামনে থেকে কেটে পড়ল।

    একই বছরে বড় মেয়েটা উচ্চ মাধ্যমিক আর ছোটটা মাধ্যমিক পরীক্ষায় উৎরে গেল। মেয়েদের লেখাপড়ায় একদমই মাথা নেই, তাই পাশ করাটাই বিরাট ব্যাপার। মেয়েদের এ হেন সাফল্যের জন্য যোগমায়া বাড়িতে সত্যনারায়ণ পুজো করার বাসনা স্বামীকে জানাল। পুজো মানেই তো সেই খরচের ব্যাপার, তাই নন্দর খুব একটা ইচ্ছে ছিল না। কিন্তু ঠাকুর দেবতার ব্যাপার বলে নাও করতে পারল না। একতলায় রাস্তার ধারের ঘরে পুজো হল। খরচের মধ্যে যৎসামান্য ফল, মিস্টি আর পুরোহিতের দক্ষিণা। যদিও সেটাও নন্দর কাছে বেশ কষ্টের ব্যাপার। অনেক চিন্তা করে সে এক ফন্দি আঁটল। পুজোর শেষে ঠাকুরের ছবির সামনে একটা থালা রেখে তাতে কিছু পয়সা ছড়িয়ে দিল। পাশে একটা কাঠের বারকোশে সামান্য কটা কাটা ফল আর দু চারটে বাতাসা রেখে বাইরের দরজাটা খুলে দিল যাতে রাস্তা থেকে দেখা যায়। যদি দু চারজন ধর্ম প্রাণ মানুষ সংস্কার বশে থালায় কিছু দেয় তাহলে পুজোর খরচ কিছুটা উঠে আসবে। অনেকটা শনি পুজোর থিমে সত্যনারায়ণ পুজো। নিজে দরজার পাল্লার আড়ালে এমনভাবে ঘাপটি মেরে বসে রইল যাতে বাইরে থেকে তাকে দেখা না যায়। ঠিক যেন চার ছড়িয়ে ছিপ ফেলে অধির আগ্রহে বসে থাকার মত—কখন ফাতনাটা একটু নড়বে। ঘণ্টা খানেকের মধ্যেই ফল পাওয়া গেল। আটআনা একটাকা তো আছেই একটা পাঁচ টাকার কয়েনও থালায় পড়ল। খুশিতে ডগমগ হয়ে নন্দ ভাবল একবেলা দরজাটা খোলা রাখতে পারলে আরো পয়সা পড়বে। কিন্তু সমস্যা হল এই বসে থাকাটা। ঘণ্টার পর ঘণ্টা হাঁটু মুড়ে একভাবে বসে থাকা কি কম কষ্টের! বাড়ির লোকের এ ব্যাপারে কোন সাহায্য পাবে না। অবশ্য ও তা চায়ও না। টাকা পয়সার ব্যাপারে নন্দ কাউকে বিশ্বাস করে না, তা সে যত আপন জনই হোক না কেন। বসে থাকতে থাকতে চোখটা একটু লেগে গিয়েছিল। পয়সা পড়ার আওয়াজে ঘুমের চটকাটা ভেঙ্গে গেল। নিশ্চয় আবার কেউ পয়সা ফেলল। প্রফুল্ল মনে কত পড়েছে তা দেখার জন্য আড়াল থেকে মুখটা একটু বার করতেই চোখে পড়ল এক ভয়ানক কান্ড। বছর বারো তেরোর একটা ছেলে ঘরে কেউ নেই ভেবে চুপি চুপি ঢুকে প্রণামীর পয়সা গুলো কুড়িয়ে পকেটে পুরছে। তার থেকে একটা পয়সা মাটিতে পড়াতেই নন্দর ঝিমুনিটা ভেঙ্গে গেছে। বসা অবস্থা থেকেই কোলা ব্যাঙের মত একটা লাফ দিয়ে নন্দ ছেলেটাকে জাপটে ধরল। চ্যাঁচামেচি আর ধস্তধস্তির আওয়াজ পেয়ে বৌ আর মেয়েরাও ছুটে এসেছে। যোগমায়া দেখে যে তার ঠাকুরের ছবি আর পুজোর অন্য সব সরঞ্জাম ঘরের চারদিকে গড়াগড়ি খাচ্ছে। আর কত্তা কাবাডি খেলার ঢঙে এক অল্প বয়সী ছেলের একটা পা পেঁচিয়ে ধরেছে। এক হাতে পাটা জাপটে ধরা আর অন্য হাতে ছেলেটার প্যান্টের একটা পকেট মুঠো করে ধরা।
    ব্যাপারটার আগামাথা কিছু বুঝতে না পেরে যোগমায়া একটু চেঁচিয়েই স্বামীকে বলল—বলি হচ্ছেটা কি?
    নন্দ হাঁপাতে হাঁপাতে উত্তর দিল—দেখতে পাচ্ছ না? শালা এত কষ্টের পয়সাগুলো চোট করতে এসেছিল।
    এতক্ষণে যোগমায়া নন্দর এক হাতে ছেলেটার পকেট খামচে ধরার কারণটা বুঝতে পারল।
    ছেলেটার পকেট থেকে পয়সা বার করতে করতে নন্দ ধমক দিয়ে জিজ্ঞেস করল—নাম কি বল, নইলে পুলিশে দেব।
    ছেলেটা নিজের নাম, বাবার নাম, ঠিকানা সব এক এক করে বলল।
    --তুই অবনি চাটুজ্যের ব্যাটা। ছিঃ! ওরকম নামী একজনের ছেলে হয়ে চোর হলি।
    কথা বলতে বলতে কোনভাবে নন্দর প্যাঁচটা একটু ঢিলে হতেই এক ঝটকা মেরে ছেলেটা দে ছুট। নন্দর ধরা ছোঁয়ার একেবারে বাইরে।
    --শালা সব পয়সা পকেট থেকে বার করার আগেই পালাল। অবশ্য পালিয়ে আর যাবে কোথায়? ওর বাপের কাছে গিয়ে আদায় করব। ছেলেটা পাকা চোর এখনও হতে পারেনি। ধরা পড়লে নিজের নামই কেউ বলতে চায় না আর এ ব্যাটাকে পুলিশের ভয় দেখাতেই গড়্গড় করে সব বলে দিল।

    অবনি চাটুজ্যের বাড়ি মিনিট দশেকের পথ। সুকান্ত নগরে থাকেন। টানা দুবার মিউনিসিপ্যালিটির কাউন্সিলার। এলাকায় মান, খাতির ও প্রতিপত্তি আছে। এইসব লোকের কাছে তারই ছেলের নামে নালিশ করাটা একটু শক্ত কাজ। কিন্তু হাতে অকাট্য প্রমাণ রয়েছে, ছেলে তো নিজেই সব বলেছে। ফলে মনের দ্বিধা দ্বন্দ কাটিয়ে অবনিবাবুর সাথে সামনা সামনি মোকাবিলা করার জন্য সন্ধ্যের সময় নন্দ রওনা হল।
    সন্ধ্যের সময়টা স্তাবক পরিবৃত হয়ে বাড়ির বৈঠকখানায় অবনি অনেকটা সময় কাটান। মিউনিসিপ্যালিটির কাউন্সিলার হওয়ার সুবাদে ওই সময়টা অনেকটা দরবারের মত পরিবেশ থাকে। ব্যক্তিগত চাওয়া পাওয়া, ওয়ার্ডের সমস্যা, তার সমাধান, সবকিছু নিয়েই আলোচনা চলে। সেদিনও অবনি হাতে নোটবুক আর পেন নিয়ে চেয়ারে বসে পাড়ার একটা প্রাইমারী স্কুল বাড়ী সংস্কারের ব্যাপারে আলোচনা করছেন, এমন সময় হন্তদন্ত হয়ে নন্দ ঘরে ঢুকল। ঘর ভর্তি লোক দেখে প্রথমে একটু থতমত খেয়ে গেলেও নিজেকে সামলে নিয়ে একটু নিচু স্বরে বলল—অবনিবাবু, আমার একটা অভিযোগ আছে।
    অবনি ওকে না চিনলেও ঘরে উপস্থিত কয়েকজন চিনতে পারল। তাদেরই একজন বলল—আপনার তো ২২ নং ওয়ার্ড, আপনি আপনার কাউন্সিলার অমল সাহার সাথে কথা বলুন না।
    --আমার অভিযোগ মিউনিসিপ্যালিটির ব্যাপারে নয়, একেবারেই ব্যক্তিগত।
    আলোচনার মাঝে হঠাত করে ঘরে ঢুকে পড়ায় অবনি নন্দর ওপর বিরক্ত হলেও ভাবে তা প্রকাশ করলেন না। আপদ তাড়াতাড়ি বিদায় করার জন্য অন্যদের ইশারায় থামিয়ে দিয়ে নন্দকে বলতে বললেন।
    --আমি ভাবতে পারছিনা আপনার মত একজন মানি লোকের ছেলে কি করে চোর হল।
    এরপর সংক্ষেপে সকালের ঘটনাটা বলল।
    সব কিছু শোনার পর অবনি নন্দকে বললেন—আপনি কি নিশ্চিত যে ওটি আমারই ছেলে ?
    --হ্যাঁ, ও নিজের মুখে আমার কাছে সব স্বীকার করেছে।
    নন্দর কথা শুনে ঘরের সকলে হো হো করে হেসে উঠল।
    অবনিবাবু নন্দর উদ্দেশ্যে বললেন—আমার একটি মাত্র সন্তান, আর সেটি মেয়ে। আমার ছেলে কোথায় পেলেন ভাই?
    ঘরে আবার হাসির রোল উঠল। কানে এল “এসব কারবার কবে থেকে করছ” জাতীয় বিদ্রুপ।
    নন্দ বোকার মত ফ্যালফ্যাল করে খানিক চেয়ে রইল। অপমানবোধ কম হলেও সকলের সামনে এই হেনস্থায় সে খুবই কষ্ট পেল। সারাদিনের ঘটনাটা মাথায় ঘুরছে। পয়সা চুরি করতে এসে ধরা পড়েও অবলীলাক্রমে কিরকম ভুলভাল সব বলে গেল। এ ছেলে তো বড় হলে দাগী আসামী হবে। শালা সব জানোয়ারের দল।

    রাতে বাড়ী ফিরে দেখে যোগমায়ার শরীর খারাপ। গায়ে জ্বর, চুপচাপ শুয়ে আছে। মুখঝামটা যতই দিক বৌকে নন্দ যথেষ্ট ভালবাসে। ডাক্তার ডাকা মানেই এখনি কয়েকশ টাকা খসবে, তা সত্ত্বেও জিজ্ঞেস করল—হ্যাঁগো, বিপিন ডাক্তারকে একটা খবর দিই?
    যোগমায়া স্বামীকে মানা করল—অত ব্যস্ত হতে হবে না। সামান্য জ্বর, একটু শুয়ে বসে থাকলেই ঠিক হয়ে যাবে।
    ভাল হওয়া দূরে থাক পরদিন বেলা বাড়ার সাথে সাথে অবস্থা আরও খারাপ হতে শুরু হল। নন্দ আর দেরী না করে বিপিন ডাক্তারকে নিয়ে এল। ডাক্তার যখন এসেছে তখন যোগমায়া প্রায় সংজ্ঞাহীন। ডাক্তার যত শীঘ্র সম্ভব হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলল। একা কিভাবে কি ব্যবস্থা করবে ভাবতে ভাবতে দিশেহারা হয়ে সাহায্যের আশায় নন্দ পাগলের মত ছুটে বাড়ির বাইরে বেরিয়ে এল। প্রথমেই নজর গেল বাড়ির থেকে কয়েক পা দূরে চায়ের দোকানের আড্ডাটায়। অনেক গুলো ছেলে ছোকরা গুলতানি করছে। এই চায়ের দোকানের আড্ডাটাকে ও কোন কালেই সহ্য করতে পারে না। কিন্তু এখন ওসব ভাবার সময় নেই। দোকানে গিয়ে কাতর ভাবে বলল—আমার বাড়িতে বড় বিপদ, একটু আসবে ভাই!
    ঘটনা শুনে নন্দকে আশ্বস্ত করে ছেলেগুলো বলল--কাকু আপনি শান্ত হোন। আমরা সকলে আছি, কোন চিন্তা করতে হবে না।
    খুব অল্প সময়ের মধ্যেই বেশ কয়েকজন নন্দর বাড়িতে পৌঁছে গেল। আর তাদের অধিকাংশই নন্দর অপছন্দের ওই জানোয়ারের দলের। সত্যিই নন্দকে কিছু করতে হয়নি। ওরাই অ্যাম্বুলেন্স ডেকে মুমূর্ষু যোগমায়াকে নিয়ে গিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করল। ভর্তির সময় প্রয়োজনীয় টাকাটাও নিজেরাই যোগাড় করে জমা দিয়েছে। যোগমায়া যে কদিন হাসপাতালে ছিল সে কদিন রাতজাগা থেকে আরম্ভ করে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ, সব ওরাই পালা করে করেছে। ডিসচার্জের দিন স্ত্রীকে বাড়িতে নিয়ে আসার জন্য হাসপাতালে পৌঁছে নন্দ দেখে যে ছেলেগুলো আগেই সব ব্যবস্থা করে রেখেছে। নন্দর দুচোখ জলে ভরে গেল। মানুষকে বোঝা, তার ভালমন্দের বিচার করা খুবই কঠিন। এতবড় একটা বিপদের আঁচও ওরা গায়ে লাগতে দেয়নি।

    মায়ের পাশে বসে মেয়েরা গল্প করছে। নন্দ ঘরে ঢুকে একটা চেয়ার টেনে নিয়ে বসল। রুগ্ন স্ত্রীর মাথায় হাত বুলোতে বুলোতে বলল—ছেলেগুলো যা করল আমার নিজের ছেলে থাকলেও বোধহয় তা করতে পারত না। ওদের জন্যই তোমায় ফিরে পেলাম। তুমি একটু সামলে গেলে ওদের একদিন বাড়িতে বসিয়ে পেটভরেখাওয়াব। খরচ হবে বলে তুমি যেন আবার আপত্তি কোরো না।
    যোগমায়া স্বপ্ন দেখছেনাতো। এতদিন শুধু টাকা টাকা করে মানুষটার মায়া, মমতা, সৌজন্যবোধ সব হারিয়ে গিয়েছিল। স্ত্রী হয়ে এটা তার কাছে ছিল চরম লজ্জা আর অপমানের ব্যাপার। সেই মানুষের আজ একি পরিবর্তন! তার জীবনে এমন ভাল লাগার দিন খুব কমই এসেছে।
    --তুমি যখন চাইছ তখন তাই হবে।
    মুচকি হেসে জিজ্ঞেস করল— আর অবনি বাবুর ওই ছেলেটাও যদি ওদের সাথে চলে আসে !
    --ওটা এদিককার ছেলে নয়, আর কোনোদিন তো চোখে পড়েনি।
    সুযোগ পেয়ে যোগমায়া আর একটু মস্করা করে—এরপর এই ছেলেগুলো যখন চাঁদা চাইতে আসবে!
    --রোজ তো আর আসে না। মাঝে সাঝে এলে দিয়ে দিলেই তো পার।

     
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • গপ্পো | ২৯ অক্টোবর ২০২৪ | ১৫৩ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Mira Bijuli | ৩০ অক্টোবর ২০২৪ ১৭:১৭538990
  • গল্পের নন্দ কৃতজ্ঞ, অনেকে তা হয় না 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। সুচিন্তিত মতামত দিন