এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ধারাবাহিক  উপন্যাস

  • প্রেম দেহ মন - পর্ব ১৪

    Sukdeb Chatterjee লেখকের গ্রাহক হোন
    ধারাবাহিক | উপন্যাস | ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৩১৩ বার পঠিত
  • প্রেম দেহ মন - পর্ব ১৪

    বিদিশা

    ছেলের বিছানা ছাড়ার কোন লক্ষণই নেই। ছুটির মেজাজে নিশ্চিন্তে  গড়াগড়ি খাচ্ছে।   যত চিন্তা যেন আমার।
    --হ্যাঁরে এবার ওঠ, মুখ ধো, স্নানটান করে রেডি হ। বেরোতে হবে তো না কি! 
    --তুমি দেখছি ভোর বেলা থেকে তাড়া লাগাতে শুরু করেছ, এখনো অনেক দেরী।
    --বেলা আটটা বাজে, এখন তোর ভোর! এগারটায় লিস্ট টাঙাবে। আর কত সময় বাকি আছে শুনি? ওঠ ওঠ তাড়াতাড়ি উঠে পড়, আমি চা নিয়ে আসছি।
    --শোন মা শুধু আমি রেডি হলেই হবে না, তোমাকেও রেডি হতে হবে।
    --আমি কেন রেডি হব?
    --তুমিও আমার সাথে যাবে তাই।
    --আমি আবার কি করতে যাব?
    --আমার ইচ্ছে তাই যাবে। চান্স পেলে সেলিব্রেট করব।
    --পরীক্ষার সময় তো সঙ্গে যাওয়ার কথা বললে আপত্তি করে বলিস, “এখন কি আর বাচ্চা আছি যে সঙ্গে যাবে?” আজ সঙ্গে যাওয়ার জন্যে জোর করছিস যে বড়! তার মানে ভেতরে ভেতরে একটু টেনশন হচ্ছে, তাই ত!
    অয়ন কোন উত্তর না দিয়ে মুচকি হেসে টয়লেটে ঢুকে গেল। আমিও চা, জলখাবার করতে রান্নাঘরের দিকে এগোলাম। আমাকে দেখতে পেয়ে বিশু এগিয়ে এসে বলল, “মাসি, আজ দাদার ডাক্তারির নাম টাঙাবে, তাই না?” আমি সম্মতি জানিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, “তুই কি করে জানলি?”
    --দাদা বলেছে। আমাদের এখানে তাহলে দু দুজন ডাক্তার বল। অমিত কাকু আর দাদা।
    --দাদা আগে সুযোগ পাক, তারপর পড়াশোনা করে পাশ করুক, তবে তো ডাক্তার হবে। সে এখন অনেক দেরী।   
    ‘আমার বাড়ি’তে এখন  যে ক’জন আবাসিক  আছে বিশু তাদেরই একজন। ক্লাস সিক্সে পড়ে। ‘অমিত কাকু’ ওদের খুব আপনার লোক, আন্তরিক ভাবে  দেখাশোনা করে। তন্ময়ও শুনেছি ওদের জন্য পিসিকে নিয়মিত টাকা পয়সা দেয়।  শিশুকাল থেকেই ওখানকার ছেলেদের সাথে অয়নের খুব ভাব। ওর একেবারে ছোটবেলায় যে ছেলেগুলো থাকত তারা বড় হতে চলে গেছে, এখানে ওখানে  কাজকর্ম করে। ভালবাসার টানে এখনো মাঝে মাঝেই আসে, খোঁজ খবর নেয়।   এখনকার  ছেলেগুলো ওদের পরের ব্যাচ। অয়নকে সকলেই খুব ভালবাসে। যাওয়ার আগে বিশু বলে গেল, “মাসি, লিস্টে দাদার নাম উঠলে সবাই মিলে একদিন জোর খাওয়া দাওয়া হবে।”
    পিসির আশ্রয়ে এসে আমার স্কুল  আর  এখানের বাচ্চাগুলোকে আঁকড়ে ধরে ভুলে থাকতে  চেষ্টা করেছি ভয়ানক মানসিক যন্ত্রণাকে। ভুলতে না পারলেও এদের সাহচর্যের প্রলেপে দহনের তীব্রতা স্তিমিত হয়েছিল। একসময় পিসির মত কখন যেন এই বাচ্চাগুলোও আমার দৈনন্দিন জীবনের অঙ্গ হয়ে গেছে।
    যখন এখানে প্রথম এসেছিলাম তখন আমি প্রকৃত অর্থেই সর্বহারা। জীবনে যা কিছু সুন্দর, যা কিছু আপন, সবই খুইয়েছি।  সব বললে অবশ্য ভুল বলা হবে, ওই দুঃসময়েও আমার বাল্যবন্ধু অর্চনা সব সময় আমাকে আগলে রেখেছিল। ও না থাকলে জানি না আমার কি পরিণতি হত।

    এখানে আসার পর থেকেই তন্ময় নানাভাবে আমার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা শুরু করল। সেই সময় আমার কাছে ওই লোকটা পৃথিবীর সব থেকে নোংরা মানুষ। কথা বলা দূরে থাক ওকে দেখতেও ঘেন্না করত। অর্চনা আর অমিতকে যখন পাশাপাশি দেখতাম তন্ময়ের প্রতি বিদ্বেষ  তখন আরো বেড়ে যেত। কি সুন্দর ওদের সম্পর্ক, আমাদেরও তো এমনটাই  হতে পারত। একটা  লোভী, কাপুরুষ, আমার জীবনটা একেবারে তছনছ  করে দেওয়ার পর  আসছে কিনা  করুণা ভিক্ষা করতে। যার জন্য আমি নিজেই ভিখারি হয়েছি তাকে কি কখনো ভিক্ষা দেওয়া যায়, যায় না। লুণ্ঠিত, বঞ্চিত, শূন্য এ হৃদয়ে ওর জন্য করুণার একটা কণাও অবশিষ্ট ছিল না। অত্যন্ত নির্দয়ভাবে ওকে বারে বারে প্রত্যাখ্যান করেছি। তার পর থেকে সাহস করে আর সামনে  আসত না।  অন্ধকার প্রান্তরে শরীরে একটা ছোট্ট আশাদীপ নিয়ে তখন এলোমেলো ভাবে এগিয়ে চলেছি অনির্দিষ্টের পথে। হোঁচট খেলে ধরার জন্য কয়েকটা হাত পাশে ছিল ওইটুকুই যা ভরসা। ওই সময় আমার মনের থেকে কোন রকম ভাল লাগার বোধটাই  হারিয়ে গিয়েছিল।
    অয়ন এসে আমার জীবনকে ভালবাসায় প্লাবিত করে দিল। ও আমার জীবনের সব থেকে বড় প্রাপ্তি। নতুন করে মনের কোনে ভালোলাগার অনুভূতিগুলো  আবার ফিরে এল। অসুন্দর অর্থহীন জীবনে ধীরে ধীরে অনুভব করতে শুরু করলাম আনন্দকাননের সৌরভ। অপছন্দের তালিকাটা ক্রমশ ছোট হয়ে এল। তালিকা ছোট হয়ে এলেও কিছু নাম তখনো জ্বলজ্বল করছিল, যার প্রথমেই ছিল তন্ময়। অনেক অনুনয়ের পর  একসময়  তন্ময়ের মাকে তাঁর নাতির কাছে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছিলাম। মাঝে মাঝেই আসতেন নাতির সাথে কিছুটা সময় কাটাতে। মানুষটা খারাপ নয় কিন্তু তাঁর প্রথম  অপরাধ তিনি তন্ময়ের মা আর দ্বিতীয় অপরাধ ওই অভিশপ্ত দিনে তিনি মৌন ছিলেন। তবুও কেন  জানি না ঠাকুমার কোলে নাতিকে দেখে  আমার  ভালই লাগত। 
    নার্সিংহোমে যে ক’দিন ছিলাম অনেকেই এসেছে দেখা করতে। ডেলিভারির দিন ভিড় দেখে ডাঃ ঘোষ তো বলেই ফেললেন, “বাবা কত লোক  এসেছে। তুই তো দেখছি খুব পপুলার মেয়ে।” এত মানুষকে দেখে সেদিন উপলব্ধি করেছিলাম যে আমি একেবারে অভাগা নই।  লেবার রুমে নিয়ে যাওয়ার সময় যন্ত্রণাকাতর শরীরে  ওই ভিড়ের মধ্যে সেদিন একটা মুখ খুঁজেছিলাম। নানা দিকে চোখ ঘুরিয়ে তাকে খুঁজে পেয়েছিলাম সবার শেষে একটা কোনে একটু আড়ালে। উদগ্রীব হয়ে একদৃষ্টে তাকিয়ে ছিল আমার দিকে। কেন খুঁজেছিলাম জানি না, হয়ত নারীত্বের স্বাভাবিক নিয়মে হয়ত বা অন্য কিছু প্রতিপন্ন করতে।
    আমার মা তার  সংকোচ কাটিয়ে মাঝে সাঝে আমার সাথে দেখা করতে আসত, খুশি হতাম।  বাবা আর বোন তো আগে থেকেই যাতায়াত করত। বোনের আসাটা অবশ্য কয়েক বছর বাদে বন্ধ  হয়ে গেল। কলেজে পড়তে পড়তেই একজনের সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে ঘর ছেড়ে চলে গেল। তারপর থেকে আর  কারো সাথে কোনরকম যোগাযোগ রাখেনি। আমার সাথে অনেক কথাই শেয়ার করত কিন্তু এই ব্যাপারে আমাকে কখনো সামান্যতম ইঙ্গিতও দেয়নি। ঘর ছাড়ার কয়েক মাস পর একবার আমার সাথে রাস্তায় দেখা হয়েছিল। দায়সারা ভাবে দু একটা কথা বলে চলে গিয়েছিল। তারপর আর কখনো দেখা হয়নি, এমনকি ওরা কোথায় থাকে তাও আমরা কেউ জানি না। ও কেন যে এমন আচরণ করল তা আজও আমি বুঝে উঠতে পারিনি। আমার মা বাবা বড়  অভাগা, দুই সন্তানের কাছেই পেল চরম মানসিক আঘাত। বোনের ঘটনার পর থেকে ওরা দুজনেই পারিপার্শ্বিক থেকে নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছিল। আমার কাছেও আসা একেবারেই কমে গিয়েছিল, আমিই সময় সুযোগ পেলে মাঝে মাঝে খবরাখবর নিতে যেতাম।  
    তন্ময়ের বাড়িতে আমার হেনস্থা  হওয়ার  কিছুদিনের মধ্যেই পাপবোধে দগ্ধ হয়ে ও বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে এসেছিল। বেছে নিয়েছিল এক সমস্যা সঙ্কুল জীবন। কিন্তু তার এই বিলম্বিত পদক্ষেপ  ওই সময়  আমাকে একেবারেই প্রভাবিত করতে পারেনি। যার আশ্রয়ে আছি তন্ময়ের হয়ে সেই পিসির অনুরোধও তখন সবিনয়ে ফিরিয়ে দিয়েছিলাম। পিসির অনুরোধ রাখতে পারলে আমার জীবনের চিত্রটাই আমূল পাল্টে যেতে পারত। পারি নি, মানসিকভাবে চরম বিপর্যস্ত একটা মেয়ের  পক্ষে বিপর্যয়ের কারণটাকে সহজভাবে মেনে নেওয়া সম্ভব ছিল না।  তন্ময়ের আমার সাথে পর পর করে যাওয়া অপরাধগুলো অমার্জনীয় মনে হত। তবে ওর পিতৃত্বের অনুরোধকে আমি অস্বীকার করিনি। অবশ্য স্বীকৃতিটা দিয়েছিলাম  অয়নের আগামী দিনের সুস্থ স্বাভাবিক সামাজিক জীবনের কথা চিন্তা করে। 
    প্রথম দিকে আমার অনুপস্থিতিতে অয়নের কাছে তন্ময়ের মাঝে মাঝে আসাটা ভাল না লাগলেও মেনে নিয়েছিলাম। কারণ ছেলেকে বাবার সঙ্গ সুখ থেকে একেবারে বঞ্চিত করতে চাইনি। অয়নকে স্কুলে ভর্তি করার সময় থেকে যোগাযোগটা বাড়ল, বাপ ব্যাটায়  তো বটেই কিছুটা আমার সাথেও। সুখী দম্পতীর অভিনয় করতে করতে স্কুলে ঢুকতাম। কিছুটা সময় পরে  অভিনয়ের সংলাপের বাইরেও অল্পস্বল্প কথাবার্তা হত, যদিও তা নেহাতই সাদামাটা,  তেমন একটা  ব্যক্তিগত নয়। এইরকম গতানুগতিক ভাবে দীর্ঘদিন চলতে চলতে একসময় অনুভব করলাম তন্ময়ের সান্নিধ্য আর অসহ্য লাগছে না বরং কিছুটা উপভোগই করছি। আচার আচরণে নম্র, যত্নশীল, আদ্যন্ত ভদ্রলোক। সত্যি কথা বলতে কি ওই অধ্যায়টুকু বাদ দিলে মানুষটাকে না পছন্দ করার কোন কারণ নেই। পরিচিত জনেরা সকলেই ওকে ভালবাসত আর আমাদের  দীর্ঘদিন এই বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকাটা ওদের খারাপ লাগত। একটা সময় পরে আমারও অন্য রকম কিছু ভাবতে ইচ্ছে করত কিন্তু নিজের তৈরি চক্রব্যূহ থেকে তখন আর বেরোবার পথ খুঁজে পাইনি। তারপর তো ও বাইরে চলে যাওয়ায় দেখা সাক্ষাৎ একেবারেই কমে গেল। ছেলে বাবাকে খুবই মিস করত, মিথ্যে বলব না আমিও করতাম। তবু  মনের কথা মনেই রেখেছি, হাবে ভাবে কখনো তা প্রকাশ করিনি। তন্ময়ও আমার সাথে খুব সহজ স্বাভাবিক ভাবে মিশলেও পরবর্তী সময়ে  আর কখনও ব্যক্তিগত কোন অনুরোধ আমাকে করেনি। হয়ত যেটুকু  পেয়েছে সেটাই ওর প্রাপ্য বলে ধরে নিয়েছিল।
    আপনজনেরা বিভিন্ন সময়ে নানাভাবে চেষ্টা করেছে আমার কক্ষচ্যুত বিক্ষিপ্ত মনকে জীবনের  সঠিক  ট্র্যাকে পুনঃস্থাপন করতে, কিন্তু  ধীরে ধীরে ভাবনায় পরিবর্তন এলেও বাস্তবে তার কোন প্রতিফলন হয়নি। প্রথমদিকে চাইনি আর পরে চেয়েও পারিনি। বাধ সেধেছে চক্ষুলজ্জা।
    পিসি তো প্রথম থেকেই আমাদের মিলমিশ চাইত, কিন্তু তখন ক্ষতটা  যে একেবারে টাটকা তাই পিসির ভাবনায় নিজেকে সামিল করতে পারিনি। অবশ্য পরেও  চেষ্টা চালিয়ে গেছে  কারণ বুঝতে পারতাম তন্ময়কে পিসি খুব ভালবাসে। 
    অর্চনারা যখন সপরিবারে আমার কাছে আসত তখন  অলিকে ওর বাবার কোলে দেখে অয়ন কেমন যেন গুটিয়ে যেত। এটা লক্ষ করার পর অমিত আর কখনো মেয়েকে নিয়ে আমার কাছে আসেনি, একাই এসেছে। ছেলের এই অভাব বোধে আমিও খুব ব্যাথা পেয়েছি, কিন্তু প্রতিকার করতে পারিনি।  অমিত নানাভাবে আমাকে বোঝাতে চেষ্টা করত। বলত, “তুমি নিজে যাই কর না কেন ছেলেকে বঞ্চিত করার তোমার কোন অধিকার নেই।”
    অর্চনার সাথে তন্ময়কে নিয়ে আমার কোন কথা হত না। মাঝে মাঝেই মেয়েকে নিয়ে আসত, দুই বন্ধুতে অনেক গল্প গুজব হত।  তবে দুজনেই খুব সতর্কভাবে তন্ময়ের  ব্যাপারটা এড়িয়ে যেতাম। অনেক পরের কথা, অয়ন তখন নাইনে পড়ে। অর্চনা সেদিন একাই এসেছিল, মেয়েকে সাথে আনেনি। দু এক কথার পর আমাকে একটু  একান্তে নিয়ে গিয়ে বলল, “তোর সাথে একটু দরকারি কথা আছে।”
    আমি ঘাবড়ে গিয়ে বললাম—সিরিয়াস কিছু?
    --হ্যাঁ।
    আমি আরো ঘাবড়ে গেলাম। না জানি আবার নতুন কি সমস্যা হল।
    আমার অবস্থা দেখে হেসে বলল—এত ঘাবড়াবার মত কিছু নয়, আমার পাশে এসে বস।
    আমি সিরিয়াস কিছু শোনার জন্য বন্ধুর একেবারে পাশটিতে গিয়ে বসলাম।
    --বলছি অনেকদিন তো হল এবার তন্ময়কে নিয়ে একটু অন্যরকম ভাবার চেষ্টা কর না। অন্তত ছেলেটার কথা ভেবে। অমিত অনেক দিন আগেই আমাকে অনুরোধ করেছিল তন্ময়ের ব্যাপারে তোর সাথে কথা বলতে, বোঝাতে। কিন্তু নিজের মনস্থির করতেই অনেক সময় পার হয়ে গেল।  ঘটনা তোর জীবনের হলেও ব্যাপারটার সাথে আমি ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে ছিলাম। তাই আমার ভাই হলেও  তন্ময় বা ওর বাড়ির সাথে আমিও অনেকদিন  কোনরকম সম্পর্ক রাখিনি। মামি অনেক কান্নাকাটি করে যেতে বলায় বিয়ের পর অমিতকে নিয়ে মামার বাড়িতে গেলাম। তারপর থেকে মামির সাথে অল্পস্বল্প যোগাযোগ থাকলেও তন্ময়ের সাথে তেমন একটা যোগাযোগ নেই বললেই  চলে। ফলে  ওকে নিয়ে নতুন কিছু সিরিয়াসলি কখনো  ভাবিনি। কিন্তু তোর তো তা নয়। তন্ময় যখন দেশে থাকে তখন উপলক্ষ  ছেলের স্কুলই হোক বা অন্য কিছু তোর সাথে প্রায়ই  যোগাযোগ হয়। যতদূর জানি মোলাকাত হলে  তোরা স্বাভাবিক ভাবেই কথাবার্তা বলিস। তাহলে বাকিটুকুই বা কেন বাকি থাকে ফ্রেন্ড। বনবাসের সময় তো পার হয়ে গেছে, এবার ফেরার কথাটা একটু ভেবে দেখ না। তুই বলতে পারিস যে আমি আগে তো কখনো তোকে এসব কথা বলিনি। ওই যে বললাম, আগে কখনো সে ভাবে ভাবিনি। অমিত তোদেরকে নিয়ে ভাবে, বেশিরকমই ভাবে। ও তোদের ব্যাপারে আমাকে বারে বারে বুঝিয়েছে, কেবল আবেগ নয় যুক্তি দিয়ে। প্রথম দিকে অতটা গা করিনি কিন্তু পরের দিকে মনে হয়েছে যে কথাগুলো ও ভুল কিছু বলছে না।
    সেদিন অনেকক্ষণ  অনেক গল্প, অনেক কথা হল। আমরা দুই বন্ধু একসাথে হলে প্রতিবারই গল্পে মশগুল  হয়ে যাই, কিন্তু তফাৎ একটাই, সেদিন গল্পের মাঝে তন্ময় অনেকটা জায়গা জুড়ে ছিল।
    অর্চনার অনুরোধ  আমাকে অনেকটা ভারমুক্ত করল। ওকে উপেক্ষা করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়, তন্ময়ের  ব্যাপারে তো কোনমতেই নয়। জেনে আশ্বস্ত হলাম যে ওর ইচ্ছে অনিচ্ছেগুলো আমার মনের চোরা স্রোতের অভিমুখেই বইছে। আমার চক্ষুলজ্জার একটা পুরু আবরণ সরে গেল।
    এর পরেও তন্ময়কে নিয়ে অর্চনার সাথে আমার অনেক কথা হয়েছে। আমার মনোভাবের কিছুটা ইঙ্গিত নিজের অজান্তেই ওকে দিয়ে ফেলেছি। তবে তন্ময় দ্বিতীয় দফায় আবার বিদেশে যাওয়ায় বাস্তব একই জায়গায় রয়ে গেল। 
    অয়ন ছোটবেলা থেকেই বাবাকে খুব ভালবাসে। আমাদের একসাথে না থাকা নিয়ে ওর অনেক অভিমান আর ক্ষোভ ছিল। ছিল বলা ভুল হল এখনো আছে। ও যখন ছোট ছিল তখন আমরা   কেন একসাথে থাকি না তার কারণ জানাতে গিয়ে  অনেক  মিথ্যের  আশ্রয় নিতে হত। শিশু অয়ন তার  কিছুটা বিশ্বাস  করলেও এই দূরত্বটা একেবারেই মেনে নিতে পারত না। যত বড় হয়েছে পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি থেকে ওর মনে এসেছে আরো অনেক অনেক প্রশ্ন, যার উত্তর দিতে গিয়ে হিমসিম খেয়ে গেছি। অয়ন খানিকটা বড় হওয়ার পরে একটা সময় মিথ্যের জঙ্গল থেকে বেরিয়ে এসে ওকে বলতে চেষ্টা করেছি আমাদের আলাদা থাকার আসল কারণ, তবে অবশ্যই  অনেকটা শোধিত করে। ততদিনে দীর্ঘ সময়ের প্রলেপে আমার মনেও এসেছে পরিবর্তন। ফলে  সেদিন অয়নকে যে ভাবে বিচ্ছেদের কারণটা বলেছিলাম তাতে  প্রকৃত ঘটনার ঝাঁজ  অনেকটাই উবে গিয়েছিল। তাই তা কিশোর অয়নের কাছে খুব একটা যুক্তিগ্রাহ্য কারণ মনে হয়নি।  তার মত করে সে সমস্যার সমাধানের চেষ্টা চালাতে থাকে। জানি না বাবার সাথে এনিয়ে ওর  কোন কথা হয় কি না। সেদিন আমাকে মিষ্টি করে একটু বকাবকিও করেছিল। ছেলের বকা খেতে  মন্দ লাগেনি।
    আমার কাছের মানুষেরা এতদিন যা চেয়ে এসেছে এখন আমিও মনে মনে  তাই চাই। একান্ত ভাবে চাই, কিন্তু এই চাওয়াটা এতদিন পরে প্রকাশ করতে বড় সংকোচ হয় যে। একদিন যাকে ঘৃণাভরে বর্জন  করেছি আজ সেই মানুষকে বরণের বার্তা দেওয়া যে বড় কঠিন।
    --আরে মা, গালে হাত দিয়ে বসে কি এত ভাবছ?
    ঘোর কেটে গেল, তাকিয়ে দেখি ছেলে আমার দিকে চেয়ে মিটিমিটি হাসছে।
    --আমি প্রায় পাঁচ মিনিট ধরে এখানে দাঁড়িয়ে রয়েছি, তুমি টেরই পাওনি।
    --চুপ করে দাঁড়িয়ে আছিস, ডাকবি তো!
    --তোমার রকম সকম দেখছিলাম। একবার গম্ভীর তো একবার হাসি হাসি মুখে, ভেবেই  যাচ্ছ,  ভেবেই যাচ্ছ। আচ্ছা মা তোমার ভাবনার চিত্রনাট্যে আমার আর বাবার কি একটু জায়গা ছিল?
    ওকে কাছে টেনে আদর করে  বললাম, “তুই তো আমার সবটা জুড়ে আছিস।”
    --আর বাবা? একটু জায়গা কি বাবার জন্য খালি নেই?
    --দুষ্টু ছেলে, পাকামো না করে তাড়াতাড়ি খেয়েদেয়ে রেডি হয়ে নে।
    --আর তুমি? তোমার তো এখনো কিছুই হয়নি ।
    --আমাকে নিয়ে আবার কেন টানাটানি করছিস বলত?
    --ওই যে বললাম, আমি চাই আজ তুমি আমার সাথে যাবে। আর কোন কথা নয়, শিগগিরি গিয়ে তৈরি হয়ে নাও। আর শোন, একটু ভাল করে সাজুগুজু কোর।
    --ভাল করে সাজুগুজু করতে হবে কেন? বিয়ে বাড়ি যাচ্ছি নাকি?
    --সব কথায় এত প্রশ্ন কোরো নাতো, যা বলছি লক্ষ্মী মেয়ের মত তাই কর।
    “ওরে আমার জ্যাঠা রে” বলে ওর কানটা  আস্তে করে মলে দিয়ে ঘরে এসে জামা কাপড় পাল্টে তৈরি হয়ে নিলাম। অয়নের কথায় কিনা জানি না একটু সেজেও ছিলাম। ঠাকুর ঘরে আর পিসিকে প্রণাম করে মা ব্যাটাতে বাইরে বেরিয়ে একটা ট্যাক্সিতে চেপে বসলাম। 
    মন বলছিল ভাগ্য আজ আমাকে বিমুখ করবে না। ভাল ছেলে, ভাল কিছু করেই দেখাবে।
    সময়ের বেশ খানিকটা আগেই পৌঁছে গিয়েছি, তখনো বোর্ডে লিস্ট লাগায়নি। ইতিমধ্যেই অয়নের মত আরো কিছু ছেলে মেয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে নিদান জানার জন্যে অপেক্ষা করছে। মেডিকেল কলেজের একটু ভেতরে একটা সিমেন্টের বেঞ্চে গিয়ে বসলাম। একজন বয়স্ক ডাক্তারবাবু সামনে দিয়ে গেলেন, সঙ্গে চলেছে গলায় স্টেথো ঝোলানো এক দঙ্গল কচিকাঁচা। হবু ডাক্তার, বা হয়ত সবে পাশ করা ইন্টার্ন কিংবা হাউস স্টাফ। সুযোগ পেলে আমার অয়নও ক’দিন পরে এদের মত গলায় স্টেথো ঝুলিয়ে ঘুরবে।
    --মা গরম সিঙ্গাড়া আর চা খাও।
    --রাস্তার এই ভাজাভুজি গুলো খাস না, শরীর খারাপ করবে।
    --আরে খেয়েই তো দেখো, এতে সব রকম ভিটামিন আছে।
    গরম সিঙ্গাড়া চায়ের সাথে মন্দ লাগল না। অয়ন যখন অভিভাবকের মত আচরণ করে তখন বেশ লাগে। ওর মধ্যে খুঁজতে চেষ্টা করি নিশ্চিন্ত ভবিষ্যতের ঠিকানা।
    একটু হৈ হট্টগোলের আওয়াজে পাশ ফিরে দেখি দুজন লোক কয়েকটা কাগজ নিয়ে নোটিস বোর্ডের দিকে যাচ্ছে। উপস্থিত জনগন ওদের পিছু নিয়েছে। লিস্ট দেখতে যাওয়ার জন্যে উঠলাম, এই সময় ছেলেটা আবার কোথায় গেল কে জানে।
    --মা এত ঘাবড়ে যাচ্ছ কেন? তুমি চুপটি করে এখানে বস আমি টুক করে লিস্টটা দেখে এখনই আসছি।
    উত্তরের অপেক্ষা না করে ছেলে আবার ভিড়ের মধ্যে মিলিয়ে গেল, আমি বাধ্য মেয়ের মত একরাশ  উৎকণ্ঠা নিয়ে বোর্ডের দিকে চেয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম।  ভিড়ের মধ্যে একবার মনে হল অয়নের পাশে  অমিতকে দেখলাম। হতে পারে, অয়নকে খুব ভালবাসে তো তাই খবরটা জানতে ছুটে এসেছে। তবে ওই এক ঝলক দেখার পর আর কোন দিকে ওকে দেখতে পেলাম না। অয়ন যদি বলে থাকে সাথে মা এসেছে তাহলে তো ওর এখানে একবার দেখা করতে  আসার কথা। কি জানি ক্ষ্যাপা  ছেলে হয়ত বলতে ভুলেই গেছে।
    আচমকা পেছন থেকে কেউ আমাকে তুলে ধরে ঘোরাতে শুরু করল। বেশ ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম, মাটিতে নামাতে দেখি আমার গুণধর ছেলে।
    --মা ছিয়াত্তর নম্বরে নাম আছে। যা র‍্যাঙ্ক আছে তাতে যেখানে দাঁড়িয়ে রয়েছ সেই মেডিক্যাল  কলেজেই চান্স পেয়ে যাব।
    খানিকক্ষণ ওকে জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে রইলাম, আনন্দে চোখের জল আটকাতে পারিনি।
    ছেলে পরম যত্নে আমার চোখ মুছিয়ে দিয়ে বলল, “মা কাঁদলে হবে, দেখো কারা এসেছে।”
    দেখি অর্চনা আর অমিত সামনে দাঁড়িয়ে মিটিমিটি হাসছে।
    বললাম, “অমিতদাকে একটু আগে এক ঝলক দেখলাম, তারপর আর দেখতে পেলাম না। তার মানে তোরা দুজনেই বেশ খানিকটা আগে ই এসেছিস, আড়ালে কোথাও ছিলি।”
    অয়ন বলল, “এদিকে দেখ, আরো আছে।”
    --ওমা অলি সোনা, তুইও এসেছিস?  তোরা সব এতক্ষণ আড়ালে ছিলিস কেন রে? 
    --অয়নদা বলেছিল চান্স পেলে তবেই মায়ের কাছে আসিস, আমরা তাই আগে আসিনি।
    --অয়নদা তো একটা পাগোল, তোর আর তোর মা বাবারও কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে।
    “মা, এবার একটা কাজের কথায় আসি”, আমাকে মাঝপথে থামিয়ে দিয়ে অয়ন বলতে শুরু করল—কাকু আর মাসি  শোন, আর অলি তুই যখন রয়েছিস তুইও শোন। মা আমায় একটা কথা দিয়েছিল। কথাটা হল,  মেডিক্যালে চান্স পেলে আমি যা চাইব মা তাই দেবে। কি মা, ঠিক বলছি তো? 
    বললাম, “হ্যাঁ দেব বলেছি তো, বল না তোর কি চাই?”
    --তোমরা সকলে সাক্ষী রইলে, মা  কিন্তু এখনো বলছে দেবে। অবশ্য আমার মা দেব বলে দেয়নি এমন কখনো হয়নি।
    --এত হেঁয়ালি করছিস কেন, যা চাই বল না বাবা।
    --উতলা হয়ো না মা, সময় হোক ঠিক বলব। আগে চলো কলেজের এই ভিড় ভাট্টা থেকে একটু ফাঁকা কোথাও যাই।
    একটু এগিয়ে উল্টোদিকে কলেজ স্কয়ারে  সকলে গিয়ে ঢুকল, পিছনে পিছনে আমিও ঢুকলাম। দুপুর হয়ে গেছে  ভেতরে তখন খুব একটা লোকজন নেই। এখানে কি করতে এল রে বাবা!
    থাকতে না পেরে জিজ্ঞেস করলাম—ভর দুপুরে  তোরা সব এখানে কি করতে ঢুকলি? তোদের সব কটার মাথা গেছে। চল কাছাকাছি কোন রেস্টোরেন্টে গিয়ে একটু খাওয়া দাওয়া করা যাক।
    --সব হবে মা, বললাম না একদম উতলা হয়ো না। তুমি যা চাইবে তাও হবে আর আমি যা চাইব তাও হবে।
    আমরা কলেজ স্কয়ারে ঢোকার পর অমিতদা বলল—তোমরা এখানে একটু অপেক্ষা কর আমি এখুনি আসছি। আরে সবাই দাঁড়িয়ে রইলে কেন, বেঞ্চগুলো তো খালি রয়েছে বসনা গিয়ে।
    অর্চনাকে অমিতদা কোথায় গেল  জিজ্ঞেস করতে বলল, “কি জানি কোথায় গেল।” এদের  মতিগতি ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না।
    পাঁচ মিনিটের মধ্যে আবার অমিতদার আবির্ভাব—চলো বাইরে গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে, সকলে গিয়ে  উঠে পড়।
    কোথায় যাব, কেন যাব কিছুই জানি না। ছেলে আমার হাত ধরে টানতে টানতে বাইরে নিয়ে এল। সামনে দাঁড়ান  বড় গাড়িটা দেখে চমকে উঠলাম। ওটা তো তন্ময়ের গাড়ি, কিছুদিন আগে  কিনেছে। কেনার দিন ছেলেকে সাথে করে নিয়ে গিয়েছিল। গাড়ির মডেল, রং, সব ছেলেরই পছন্দ। কেনার পর গাড়িটা পিসিকে দেখাতে এনেছিল।  আসলে হয়ত আমাকে। ছেলের মাধ্যমে আমার মতামত জানতে চেয়েছিল, বলেছিলাম “খুব সুন্দর হয়েছে।”  কিন্তু  তন্ময় গাড়ি নিয়ে এখানে এল কেন?  আরো বিস্ময়, ভেতরে পিসি হাসিহাসি মুখে বসে রয়েছে। সবকিছু কেমন তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে।
    “মা অত ভাবার কিছু নেই, গাড়িতে ওঠ”, বলে কিছু বোঝার আগেই অয়ন ড্রাইভারের পাশের  সিটটায় আমাকে ঠেলে তুলে দিল।
    সবাই ওঠার পর তন্ময় গাড়িতে স্টার্ট দিল।  অয়ন বলল, “মা, তুমি বলেছিলে ডাক্তারিতে চান্স পেলে আমি যা চাইব তাই দেবে। আমি শুধু এইটুকুই চাই।”
    --কোনটুকু তুই চাস সেটা তো একটু খুলে বল।
    --এইভাবেই তোমাদের সারা জীবন পাশাপাশি দেখতে চাই। ব্যাস এইটুকুই, আর কিছু না। তোমার ছেলের এটুকু আবদার রাখবেনা মা!
    পিছনে তাকিয়ে দেখি অনেক প্রত্যাশা নিয়ে অয়ন আমার দিকে চেয়ে রয়েছে। আমি নিজেকে সামলাতে পারলাম না। কাঁদতে কাঁদতে বললাম— জানি এতদিন  মায়ের কারণে মনে মনে অনেক কষ্ট পেয়েছিস। তোর কষ্টে আমার বুক ফেটে যেত, কিছু করতে না পেরে বড় অসহায় লাগত। এই একটা ছাড়া তোর কোন ইচ্ছে কখনো অপূর্ণ রাখিনি। কথা দিয়েছিলাম, তুই যা চাইবি তাই দেব। কথা দিচ্ছি, তুই যা চাইছিস তাই হবে।
    অয়ন সিটের পেছন থেকে আমাকে জড়িয়ে ধরে “আমার সোনা মা, ভাল মা, বলে অনেক আদর করতে শুরু করল।
    শেষ হল ঘৃণা, অপছন্দ, বিচ্ছেদ, ঔদাসিন্য, দোদুল্যমানতা,  অপ্রাপ্তি এবং বিরহের  বিভিন্ন পর্যায়ের  এক দীর্ঘ অধ্যায়। স্বরচিত চক্রব্যূহে ঘুরপাক খেতে থাকা দিশেহারা মাকে ছেলেই সন্ধান দিল নিষ্ক্রমণের পথের।
    মনের থেকে এক বিরাট ভার নেমে গেল। কথায় আছে না ঈশ্বর যখন দেন দুহাত ভরে দেন। আজ আমার সেই পাওয়ার দিন।
    এদিকে  আমার সম্মতির পরে  গাড়িতে বাকিরা তালি দিয়ে, উলু দিয়ে, যে যার মত করে নিজের নিজের আনন্দ প্রকাশ  করছে। তার মধ্যে পিসিও যেমন আছে তেমনই আছে সেদিনের ছুঁড়ি অলি। ভেতর ভেতর একটু লজ্জা করছিল।
    অমিতদা বলে উঠল—অয়ন বাবা আমার, এবার মাকে ছাড়। এখনো কিছু  বাকি থেকে থাকলে সেটা বাড়িতে গিয়ে সারিস, কেমন।
    অয়ন লজ্জা পেয়ে সিটে বসে পড়ল।
    “শুন শুন গুণীজন, শুন দিয়া মন”, বলে অমিতদা আবার শুরু করল—তন্ময় আর বিদিশা  তোমরা বিশেষ করে শোন। তোনাদের এই বিচ্ছেদে অয়নের তো বটেই আমাদের সকলেরই খুব খারাপ লাগত। মেলাতে পেরে যে কি আনন্দ লাগছে তা বলে বোঝাতে পারব না। আমরা সকলে খুব খুব খুশি। এটা আমাদের সম্মিলিত প্রয়াসের ফল। সব শিল্পীরাই যথেষ্ট দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে তবে নায়ক কিন্তু আমাদের অয়নবাবু। আপ্রাণ চেষ্টা করেছে মা বাবাকে কাছাকাছি আনতে, অবশেষে  সাফল্য পেয়েছে হবু ডাক্তার অয়ন। অয়নের জন্য আমার ট্রিট তোলা রইল, ওটা পরে একসময় বড় করে হবে। আর এই সমস্ত ব্যাপারটার  নির্দেশনা  আর পরিচালনায় ছিলেন আমাদের সকলের গ্রেট গ্রেট পিসি।
    আমি আস্তে করে বললাম—শুধু আমার মতটা জানলেই হবে অমিতদা! আর একজনেরও তো মতামত আছে।
    --মরে যাই মরে যাই, কত ভাবে রে মেয়েটা।
    অমিতদা থামতেই  অর্চনার গলা পেলাম—ওরে পাগলি, তনুও তো আমাদের সহ শিল্পী ছিল। অমত থাকলে কি আর আমাদের দলে থাকত।
    কতদিন পর অর্চনার মুখে এত মিষ্টি করে তনু ডাক শুনলাম।
    “আমাদের ‘মিশন মিলন’ সফলভাবে শেষ হল। এই পর্যন্ত স্ক্রিপ্ট আমার জানা ছিল এবার আজকের পরবর্তী প্রোগ্রাম কি তা তোমরা  সকলে ঠিক কর”, কথাগুলো বলে উত্তরের জন্য অমিতদা সবার মুখের দিকে একবার তাকাল।     
    তন্ময় আসার পর থেকে একটা কথাও বলেনি। সবার সব মন্তব্য চুপটি করে শুনে গেছে। সারাক্ষণ ভাবলেশহীন ভাবে ছিল। কেবল আমার সম্মতিটা জানার পর মুখের অভিব্যক্তি আমূল পাল্টে গিয়েছিল। ফুটে উঠেছিল যন্ত্রণা মুক্তির আনন্দ।  
    কোথায় যাওয়া হবে সেটা নিয়ে যখন আলোচনা চলছে তখন তন্ময় গাড়ি চালাতে চালাতে আমার দিকে ফিরে  বলল- আমি একটা অনুরোধ করব? তুমি কি একবার আমার সাথে আমাদের বাড়িতে যাবে? বেশিক্ষণ থাকতে হবে না, একবার দেখা করেই চলে আসবে। বাবা অনেকদিন থেকে অসুস্থ, তুমি হয়ত জান। যত দিন যাচ্ছে বাবার শারীরিক অবস্থা আরো খারাপ হচ্ছে। আমার কাছে অনেকবার বলেছেন তোমার সাথে একবারটি দেখা করিয়ে দেওয়ার জন্যে। আমি তোমাকে কখনও বলে উঠতে পারিনি, কারণ জানতাম তুমি রাজি হবে না। দেখা করার কারণটাও বলি, উনি ওনার পুত্রবধূর কাছে মার্জনা ভিক্ষা করবেন। আর বোধহয় বেশিদিন নেই, বাবা চলে যাওয়ার আগে একবার যদি যাও।
    গাড়ির হাসিখুশি পরিবেশটা ভারী হয়ে গেল। ওর কথাগুলো শুনে আমার খুব খারাপ লাগল। ওদের ওপর আমার রাগ, দুঃখ, অভিমান, সব কিছুরই এক্সপায়ারি ডেট অনেকদিন আগেই পার হয়ে গিয়েছিল।  স্টিয়ারিং ধরা ওর হাতের ওপর হাত রেখে বললাম—যাব তন্ময় নিশ্চই যাব, তবে ক্ষমা ভিক্ষা দিতে নয়, পুত্রবধু রূপে আশীর্বাদ ভিক্ষা করতে।
    তন্ময় মুখ ঘুরিয়ে জামার হাতা দিয়ে চোখটা মুছে নিল।
    “তাহলে ওই কথাই রইল। তনু ওর বউকে নিয়ে মামা মামির কাছে যাক, আর আমরা না হয় ততক্ষণ কোন রেস্টোরেন্টে গিয়ে একটু খাওয়া দাওয়া করি। খুব খিদে পেয়েছে, পেটও ভরবে সময়ও কাটবে।  কি পিসি তাইতো?” অর্চনার প্রস্তাবে পিসি কিছু বলার আগে তন্ময় বলল—তোদের যদি আপত্তি না থাকে তাহলে সকলেই আয় না বুলি। মা বাবা তো খুশি হবেনই আমারও খুব ভাল লাগবে। না করিস না, প্লিজ চল।
    --এত করে যখন বলছিস তখন তো একবার যেতেই হয়। তবে বাড়ি ঢোকার আগে বেশি করে খাবার দাবার কিনে নে, খুব খিদে পেয়েছে কিন্তু। মামির বয়স হয়েছে, উইদাউট নোটিসে এতজনের খাবার তৈরি করা চাপের ব্যাপার হয়ে যাবে।
    অর্চনাকে আশ্বস্ত করে তন্ময় অনেক খাবার দাবার কিনল। গাড়িটা ওদের বাড়ির সামনে পৌছতেই আমার ভেতরে একটা প্যাল্পিটেশন শুরু হল। নিজেকে যতটা সম্ভব স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করলাম। তন্ময় বেল বাজাতে মধ্য তিরিশের একজন লোক বেরিয়ে এসে ওর হাত থেকে জিনিসপত্রগুলো নিয়ে একঝলক আমাদের দেখে ভেতরে গেল। শুনেছিলাম বলাইকাকু ওর ভাইপোকে এখানে বহাল করে দেশে ফিরে  গেছে, এটি বোধহয় সেই ভাইপো। 
    তন্ময়ের পিছন পিছন সকলে এক এক করে বাড়ির ভেতরে ঢুকলাম। কতকাল আগে এখানেই আমার সংসার পাতার কথা। কোথা থেকে কি যে হয়ে গেল, নষ্ট হয়ে গেল জীবনের মূল্যবান অনেকগুলো বছর। 
    ওর মা অতিথিদের দেখে বিশেষ করে তার মধ্যে আমাকে দেখতে পেয়ে আনন্দে আত্মহারা হয়ে গেলেন। একেবারেই অপ্রত্যাশিত। আমাকে জড়িয়ে ধরে অনেক আদর করতে লাগলেন।
    “মামি, ব্যাপারটায় একটু বিরতি দিয়ে আমাদের আগে খেতে দাও দিকিনি। কোন সকালে খেয়েছি, খিদেয় পেট জ্বলে যাচ্ছে। খাবারগুলো বিলিবন্টন করে তারপর বৌমাকে যতখুশি পেয়ার করো। চলো  আমিও হাত লাগাচ্ছি। আর হ্যাঁ একটু আদর নাতিটার জন্যেও রেখ, আমাদের অয়ন আজ ডাক্তারিতে চান্স পেয়েছে”, কথাগুলো শেষ করে মামির জন্য অপেক্ষা না  করে  অর্চনা নিজেই খাবারের প্যাকেটগুলো এক এক করে খুলতে শুরু করল।
    “এতো  বিরাট খবর দাদুভাই” বলে তন্ময়ের মা  দেখলেন যার উদ্দেশ্যে বলা সে তখন ঘরে নেই।
    তন্ময় জানাল যে ও দাদুর ঘরে গেছে।
    বড় হওয়ার পর অয়ন এ বাড়িতে আসে, মাঝে মাঝেই আসে। তবে লুকিয়ে চুরিয়ে নয়, আমাকে জানিয়েই আসে। ও যখন ছোট ছিল তখন এখানে আসতে দেওয়ার কথা ভাবতেই পারতাম না। অবশ্য এই বাড়িতে আসার জন্য তখন কখনো বায়না করেনি, যতটুকু বায়না করত তা বাবাকে কাছে পাওয়ার জন্য। তারপর ক্ষত যেমন যেমন শুকিয়েছে আমার  ভাবনাও ধীরে ধীরে বদলেছে।
    অয়ন তখন ক্লাস এইটে পড়ে, একদিন আমার কাছে এসে বলল, “মা একটা কথা বলব রাগ করবে না তো?”
    বললাম—কথাটা তো আগে শুনি।
    নিজের ছেলে বলে বলছি না, অয়ন খুব শান্ত ভাল ছেলে। স্কুলে বা বাইরে কখনো কোথাও ওর জন্যে আমাকে বিব্রত হতে হয়নি।  সকলে ওর  প্রশংসাই করে।
    “একদিন বাবার সাথে আমায় দাদুর কাছে যেতে দেবে। ঠাম্মা আর বাবা অনেকবার তোমায় জিজ্ঞেস করতে বলে কিন্তু তুমি যদি রাগ কর তাই বলিনি”, কথাগুলো বলে অনেক প্রত্যাশা  নিয়ে উত্তরের আশায় আমার মুখের দিকে চেয়ে রইল।
    ওকে আটকাইনি, অনুমতি দিয়েছিলাম। তারপর থেকে আসে, আগে বাবার সাথে আসত এখন একাই আসে।
    “বুলি, তুই মা খাবারগুলো বার করে রেডি  করতে থাক আমি বিদিশাকে একবার তোর মামার কাছে নিয়ে যাচ্ছি। লোকটা অনেক দিন ধরে ওর জন্যে অপেক্ষা করে রয়েছে রে”, কথাগুলো  বলে  আমাকে সঙ্গে করে নিয়ে চললেন তন্ময়ের বাবার ঘরে। আমার প্যাল্পিটেশন আরো বেড়ে গেল। পুরনো স্মৃতিগুলো মনের চারধার থেকে নতুন করে উঁকি মারতে শুরু করল। অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে ঘরে ঢুকলাম। ঘরে ঢুকে চমকে গেলাম, অস্থিচর্মসার একটা দেহ বালিশে হেলান দিয়ে কোনরকমে বসে আছে।  পাশে বসে অতি যত্নে  গায়ে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে তার নাতি অয়ন। কাকে দেখেছি আর কি দেখছি।
    --শুনছ! দেখ কাকে সঙ্গে করে এনেছি।
    স্ত্রীর কথা শুনে দরজার দিকে ফিরে আমাকে দেখতে পেয়ে অনেক চেষ্টা করে নাতির সাহায্যে একটু সোজা হয়ে বসে ক্ষীণ স্বরে বললেন—মা এসেছ! কতদিন থেকে তোমার পথ চেয়ে বসে আছি।
    আমি ওনার সামনে গিয়ে দাঁড়াতে কাঁপা কাঁপা হাতে কোনক্রমে  আমার হাতদুটো ধরে বললেন— জানি অনেক অপরাধ করেছি তবু পারলে বুড়োটাকে ক্ষমা করে দিও মা।
    কালের স্বাভাবিক নিয়মে ধীরে ধীরে নিভে গিয়েছিল বিদ্বেষের আগুন তবু তন্ময়ের বাবার প্রতি বিরূপতার অগ্নিকণা মনের  কোনে কোথাও একটা থেকে গিয়েছিল। কিন্তু দাম্ভিক, দুর্মুখ, সেই লোকটাই তো হারিয়ে গেছে। এই মুমূর্ষু মানুষটাকে দেখলে করুণা ছাড়া আর কোন অনুভূতি মনে আসবে না। খুব খারাপ লাগল।
    ওনার পা ছুঁয়ে নমস্কার করে বললাম, “আপনি আমার গুরুজন। ক্ষমা নয়, আজ আমি পুত্রবধূ রূপে  আপনার আশীর্বাদ ভিক্ষা করছি।”
    শিশুর মত কাঁদতে কাঁদতে আমার মাথায় হাত দিয়ে বললেন—আমি তোমাদের জীবন নষ্ট করেছি, আশীর্বাদ করার কোন অধিকার আমার নেই। ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি আগামী দিনগুলো তোমাদের সুখের হোক। 
    তন্ময় এসে ওর বাবাকে শান্ত করে বিছানায় শুইয়ে দিল। 
    --মামা আর মামি দুজনকেই বলছি, ফাঁকি দিলে কিন্তু চলবে না। ঘটা করে  অনুষ্ঠান করতে হবে।
    রোগে জর্জরিত জ্বরাগ্রস্ত বৃদ্ধের যন্ত্রণাক্লিষ্ট মুখে তখন এক অসীম তৃপ্তির হাসি। 
    অর্চনার আবদার কানে যেতে পিছনে  তাকিয়ে দেখি পুরো টিম ঘরে হাজির, এমনকি বলাই কাকার ভাইপোও। এমন সুন্দর পালা মিস করতে কি আর কারো মন চায়!

    (চলবে)
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ধারাবাহিক | ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৩১৩ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • বিপ্লব রহমান | ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৭:৩২537961
  • সম্পর্ক সত্যিই খুব জটিল রসায়নের ব্যাপার!  লেখাটি গল্পের মতন হলেও বাস্তবে অসম্ভব নয়। 
     
    অনলাইনে দীর্ঘ লেখায় অনেক সময় চোখ ধরে যায়,  মাঝে মাঝে কিছু সাবহেড দিলে চোখের আরাম হতো ভাই। 
     
    বিচ্ছিন্নভাবে পড়ছি। আরও লিখুন 
  • Mira Bijuli | ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৯:৪৯538050
  • খুব ভালো লাগলো দুটি প্রাণ মিলে যাওয়ায়
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। বুদ্ধি করে মতামত দিন