এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  গপ্পো

  • কর্তৃত্ব

    Sukdeb Chatterjee লেখকের গ্রাহক হোন
    গপ্পো | ২৬ অক্টোবর ২০২৪ | ১৯৪ বার পঠিত
  • কর্তৃত্ব
    শুকদেব চট্টোপাধ্যায়

    বেশ কিছুকাল আগের কথা। হাওড়া জেলার এক প্রত্যন্ত গ্রাম “পাতিহাল”। গ্রামে কিছু যায়গায় বিদ্যুৎ এলেও অনেকটাই তখনও লণ্ঠনের কবলে। রাস্তাঘাট প্রায় সবই কাঁচা। মণ্ডলদের মত কিছু ভূস্বামী বাদ দিলে বাকিরা অধিকাংশই গরিব চাষি। শহরের বিভিন্ন অফিসে কাজ করেন এমন মানুষও কিছু আছেন। পাতিহালের ক্ষেত্রে তাঁরা একপ্রকার অনাবাসী। শহরের মেসে থাকেন আর সপ্তাহান্তে একবার পরিবার দর্শনে আসেন। মার্টিন রেল উঠে গেছে। কোলকাতা যাতায়াত করার জন্য কেবলমাত্র কিছু বাসই ভরসা। এখনকার মত এত বাসও তখন ছিল না। তাই রোজ যাতায়াত করা একপ্রকার অসম্ভব ছিল।

    অমূল্য এই গ্রামেরই বাসিন্দা। বছর চব্বিশ পঁচিশ বয়স, রং ফরসা, সুপুরুষ। উপরোক্ত কোন পেশাই তার নয়। সে পাশের গ্রামে একটা স্কুলে মাস্টারি করে। কিছু জমি জমাও আছে। স্কুলে যা পায় আর চাষের আয় মিলিয়ে সংসার মোটামুটি চলে যায়। সংসার বলতে তারা স্বামী-স্ত্রী আর মা-বাবা। বোনের বিয়ে হয়েছে মেদিনীপুরের এক গ্রামে। যাতায়াত কষ্টকর হলেও বাড়ির টানে মাঝে মাঝে আসে।

    কিছু উচ্চবিত্ত পরিবার ছাড়া তখন গ্রামের বউ বা জামাই সাধারণতঃ আর একটা গ্রাম থেকেই আসত। আসলে অপেক্ষাকৃত সুখ স্বাচ্ছন্দে জীবন যাপন করা শহুরে মানুষেরা সচরাচর গ্রামেতে ছেলে বা মেয়ের বিয়ে দিতেন না। কিছু ব্যতিক্রম অবশ্যই ছিল। অমূল্যর স্ত্রী বিমালাই এমন এক ব্যতিক্রম।

    অমূল্যর পিশেমশাই রমাকান্ত আর বিমলার বাবা ব্রজেন কোলকাতায় একই অফিসে চাকরি করতেন। দুজনের মধ্যে খুব বন্ধুত্ব ছিল। সেই সুবাদে ব্রজেন বারকয়েক পাতিহালে এসেছেন। কিন্তু প্রতিবারই একা, সপরিবারে কখনো আসেননি। পিসিমার অনুরোধে একবার শীতকালে স্ত্রী আর তিন মেয়েকে নিয়ে বন্ধুর বাড়িতে এলেন। রমাকান্তর বাড়ির পাশেই একটা বড় বাগান ছিল। ওই বাগানে সেদিন পারিবারিক চড়ুইভাতির আয়োজন করা হয়েছিল। অমূল্যরাও ওখানে নিমন্ত্রিত ছিল। পিসিমার বাড়ি খুব একটা দূরে নয়, পাশের গ্রামেই।

    বিরাট বাগান। আম, জাম, কাঁঠাল, নারকেল গাছের ফাঁকে বেশ খানিকটা জায়গা রান্না আর খাওয়ার জন্য পরিষ্কার করা হয়েছে। পাশেই বড় পুকুর। এগুলো সব রমাকান্তর নিজের। এছাড়া শরিকি জমিজমাও কিছু আছে। জেলেরা পুকুর থেকে ধরে দুটো বড় কাৎলা মাছ দিয়ে গেছে। কয়েক কাঁদি ডাবও গাছ থেকে পাড়িয়ে মাথা কেটে রাখা আছে। যার যত ইচ্ছে খাও। নামে চড়ুইভাতি হলেও রান্নার জন্য লোক রাখা হয়েছে। কারণ, রান্নায় সকলে ব্যস্ত হয়ে পড়লে আড্ডাটা জমবে না। বাড়ির মেয়েরা প্রয়োজনমত ঠাকুরকে টুকটাক সাহায্য করবে। অমূল্যর পিসিমার একটাই মেয়ে। বছর চোদ্দ পনের বয়স। বিমলার মেজো বোনের বয়সী। কোলকাতায় অল্প যায়গায় থেকে অভ্যাস তাই এখানে এত ফাঁকা জায়গা, পুকুর, বাগান পেয়ে বিমলার বোনেরা আনন্দে চারিদিকে ছুটে বেড়াচ্ছে। সঙ্গে রয়েছে পিসিমার মেয়ে। বিমলা আঠেরোয় পা দিয়েছে। ফ্রক ছেড়ে অনেকদিনই শাড়ি পরছে। মনে ইচ্ছে থাকলেও বাচ্চাদের সাথে হুড়োহুড়ি তার সাজেনা, তাই মায়েদের পাশে বসে গল্প করতে করতে রান্নায় টুকটাক সাহায্য করছে। রমাকান্ত চড়ুইভাতির সব যোগাড় যন্তর সেরে বন্ধু ব্রজেনের সাথে বসে গুছিয়ে আড্ডা মারছেন আর মাঝে মাঝে গিন্নিদের উদ্দেশ্যে রঙ্গ করে টিপ্পুনি কাটছেন। প্রত্যুত্তরে ওপাশ থেকেও ব্যাঙ্গ বিদ্রুপ ভেসে আসছে।

    সকাল নটা নাগাৎ অমূল্যরা বাগানে পৌঁছল। জলখাবারের আলুরদম তৈরি। লুচি ভাজা হচ্ছে। শালপাতার থালায় করে গরম লুচি তরকারি বিমলা এক এক করে সকলের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে। তারই মধ্যে মায়ের ইশারায় এক ফাঁকে অমূল্যর বাবা-মাকে নমস্কার করে গেল। বাচ্চারাও খেলায় একটু বিরতি দিয়ে মা-কাকিদের পাশে বসে আয়েশ করে জলখাবার খাচ্ছে। আসলে ভিন্ন পরিবেশে ভিন্ন পাচকের হাতে তৈরি একই পদ অনেক সুস্বাদু লাগে। অমূল্যর মা মলিনা মহিলা মহলের কলেবর স্ফিত করলেন। আর তার বাবা সত্যেনও জলখাবার খেয়ে রমাকান্ত আর ব্রজেনের সাথে আড্ডায় যোগ দিলেন। অমূল্য পড়ে গেল একা। সে খুবই শান্ত আর লাজুক স্বভাবের। অপরিচিত লোকজনের সামনে পড়ে আরো গুটিয়ে গেল। পিসিমা ব্যাপারটা বুঝতে পেরে ওকে ডেকে এনে সকলের সাথে আলাপ করিয়ে দিয়ে একটু স্বাভাবিক করে দিলেন। লাজুক হলেও এর মধ্যেই আড়চোখে বেশ কয়েকবার বিমলাকে তার মাপা হয়ে গেছে। কাছ থেকে আবার দেখল। ডানাকাটা পরী না হলেও বিমলা বেশ সুশ্রী। বারে বারেই চোখ চলে যাচ্ছে। গুরুজনদের দৃষ্টি বাঁচিয়ে বিমলাও কয়েকবার সদ্য পরিচিত ছেলেটাকে দেখেছে। ভাল যে লাগেনি তা নয়। উভয়ের অগোচরে আরো কয়েক জোড়া চোখ তাদের লক্ষ্য করেছে।

    পিসিমাই প্রথম কথাটা পাড়লেন—বৌদি, আমাদের অমূল্যর সাথে বিমলাকে বেশ মানাবে। পালটি ঘর। মেয়ে লেখাপড়াও জানে, ম্যাট্রিক পাশ।
    অমূল্যর মায়েরও বিমলাকে বেশ পছন্দ হয়েছে। ননদের প্রস্তাবে সম্মতি জানিয়ে বিমলার মাকে দেখিয়ে বললেন—আগে ওনাদের মতটা জান।
    গ্রামেতে মেয়ের বিয়ে দিতে ব্রজেনের মনটা খুঁত খুঁত করছিল। কিন্তু তার রোজগার তেমন কিছু নয়। তিন তিনটে মেয়ের বিয়ে দিতে হবে। ছেলেটা স্বভাব চরিত্রে আর দেখতে শুনতে ভালই। আর সব থেকে বড় কথা কোন দাবি দাওয়া নেই। ফলে এ সুযোগ তিনি হাতছাড়া করলেন না।
    বিমলাকে ভাল লাগলেও একটা ব্যাপার সেদিন অমূল্যর চোখে পড়েছিল। তা হল কারণে অকারণে নিজের ছোট বোনেদের শাসন করা। এমনকি একবার কি একটা কথায় মাকেও ইশারায় ধমক দিল। তার শান্ত সুন্দর চেহারার সাথে যা একেবারেই বেমানান। এইসব ছোটখাট ব্যাপার অন্যদের চোখ এড়ালেও অমূল্যর এড়ায়নি কারণ, ওর নজর যে ঘুরে ফিরে বিমলার দিকেই ছিল।

    বছর খানেক পর কোলকাতার মেয়ে বিমলা অমূল্যর বউ হয়ে পাতিহাল গ্রামে এল। বিমলার সান্নিধ্য পেয়ে অমূল্যর মনে হল তার জীবনে বোধহয় আর কিছু পাওয়া বাকি নেই। তার বাবা-মাও বৌমার সেবা যত্নে তৃপ্ত। আত্মীয় পরিজনেরাও নতুন বৌ এর নম্র মধুর ব্যবহারে খুশি। রেখা তো বাড়ি ফিরে যাওয়ার জন্য তৈরি হয়েও বৌদির পিড়াপীড়িতে আরো কদিন থেকে গেল। সত্যি, এই কদিনেই বৌদি বাড়ির সকলকে বড় আপন করে নিয়েছে। শ্বশুর বাড়ি ফিরে যাওয়ার সময় রেখা বাবা-মার থেকে বৌদিকে জড়িয়ে ধরে বেশি কাঁদল। নতুন বৌ, অমূল্যর তো ভাল লাগবেই, কিন্তু পাঁচ জনের প্রশংসা শুনে তার বুকটা ভরে গেল।

    স্কুলে না গেলেই নয় তাই যেতে হয়। কোনরকমে ক্লাসগুলো নিয়েই অমূল্য বাড়ি পালিয়ে আসে। টিউশনিতেও প্রায়ই ফাঁকি পড়ছে।
    মলিনা থাকতে না পেরে একদিন ছেলেকে জিজ্ঞেস করলেন—হ্যাঁরে, আজকাল আর টিউশনি করিস না?
    কোনরকমে হুঁ হাঁ করে অমূল্য পাশ কাটিয়েছিল। মাকে কি করে বোঝাবে যে বিমলার সান্নিধ্যের চেয়ে তার কাছে আর কোন কিছুই বড় নয়। শরীর খারাপের অছিলায় দু এক দিন স্কুলও কামাই করল।
    বিমলা কপট ধমকের সুরে একদিন বলল—যা শুরু করেছ তাতে এবার লোকে তোমায় বৌ পাগলা বলবে।
    আদর করতে করতে অমূল্য বলেছিল—বলুগ গে।

    একটা জিনিস অমূল্যকে মাঝে মাঝে হজম করতে হয়। তা হল বিমলার শাসন। সকালে দেরী করে ঘুম থেকে ওঠার উপায় নেই। তারপর সারাদিন কত যে এটা কোরোনা ওটা কোরোনা শুনতে হয় তার শেষ নেই। মাস্টারি তার নয় বিমলারই করা উচিৎ ছিল। বিমলার এই মাতব্বরি অবশ্য সে উপভোগই করে কারণ, তাতে থাকে অনুরাগের ছোঁয়া। সে দেখেছে বিমলা তাকে অযৌক্তিক কিছু বলে না। তা ছাড়া স্বামীর ওপর জোর খাটাবেনাতো খাটাবে কোথায়! বেশ কটা দিন ঘোরের মধ্যে কাটল।

    প্রথম ছন্দ পতন হল অমূল্য যেদিন স্কুলের মাইনে নিয়ে ঘরে এল। মার কাছে সংসার খরচের টাকাটা দিয়ে ঘরে এসে সোহাগ করে বউএর হাতে একশ টাকা দিয়ে বলল—এটা তোমার হাত খরচের জন্য। ইচ্ছেমত খরচ কোরো।

    তখনকার বাজারে বিশাল কিছু না হলেও একশ টাকা একেবারে ফেলনা ছিল না। বিশেষতঃ অমূল্যর মাইনের অনুপাতে ওটা অনেক। বউকে ওই হাতখরচ দেওয়ার ফলে তাকে কিছুটা খরচ কমাতে হবে অথবা আরো এক আধটা টিউশনি যোগাড় করতে হবে। তবু আদরের বিমলার খুশির জন্য এটুকু কৃচ্ছসাধন এমন কিছু নয়। বিমলার মুখে যে খুশির ঝলক দেখতে পাবে তাতেই তার মন প্রাণ জুড়িয়ে যাবে। এইটুকু সময়েই অমূল্য বিমলাকে বড্ড ভালবেসে ফেলেছিল।
    টাকা হাতেই বিমলা জিজ্ঞেস করল—মাইনের বাকি টাকাটা কি করলে ?
    যা আশা করেছিল তার বিপরীত প্রতিক্রিয়া দেখে অমূল্য একটু থতমত খেয়ে গেল।
    একটু সামলে নিয়ে বলল—সংসার খরচের টাকাটা মার কাছে দিয়ে বাকি অল্প কিছু আমার হাত খরচের জন্য রেখেছি। তুমি কি খুশি হওনি ?
    উত্তরে বিমলা শুধু বলল—বিয়ের আগে সংসার খরচের টাকা বাবা আমার কাছে দিতেন। তাতে আমাদের সংসার কিন্তু কোনদিন খারাপ চলেনি।
    অমূল্য একেবারে চুপ করে গেল।
    কথাটা বলেই বিমলা বুঝতে পারে যে ভুল হয়ে গেছে। বাপের বাড়ির মত স্বামীর সংসারও নিজের মত করে চালানোর বাসনাটা ওভাবে প্রকাশ করা উচিত হয়নি। তাও এত তাড়াতাড়ি।
    অমূল্যর গলা জড়িয়ে দুঃখপ্রকাশ করে বলল—আসলে সংসার চালানোটা আমার অভ্যাসে দাঁড়িয়ে গেছে। সেই অভ্যাসের বসেই কথাগুলো বলে ফেলেছি। তোমাকে কষ্ট দিতে চাইনি।
    বিমলা আরো বলল—সংসারের টাকা মার কাছেই থাক। আমাদের রোজগার তো বেশি নয় তাই মাকে বোলো একটু হিসেব করে খরচ খরচা করতে।
    কথাগুলো শুনে অমূল্যর মনটা ঠাণ্ডা হল। সে একেবারেই সংসারী নয়। সংসারের ভালমন্দর ব্যাপারে তার জ্ঞান খুবই কম। তাই বিমলাকে কাছে টেনে আদর করে বলল--- ও সব যা বলার তুমিই বোলো।
    ওই বলা থেকেই শুরু হল যাবতীয় বিপত্তি।

    অমূল্যর বাবা অমূল্যর মতই শান্ত প্রকৃতির মানুষ। মলিনাই এতদিন ছিলেন এই পরিবারের নিয়ন্তা। দৈনন্দিন সংসার পরিচালনার ক্ষেত্রে সব সিদ্ধান্ত তিনি একাই নিতেন। এইখানেই সংঘাতের শুরু। কোন বিশেষ একটা ঘটনা হয়ত তেমন কিছু বড় নয়। কিন্তু বিমলার সাথে ছোট খাট মতপার্থক্য গুলো দিনে দিনে বাড়তে লাগল আর তার সাথে তাল মিলিয়ে বাড়তে লাগল অশান্তি।
    শাশুড়ি চাইতেন বৌমা রান্নার যোগাড় যন্তর করুক কিন্তু রান্নাটা তিনিই করবেন। প্রথম প্রথম তাই হচ্ছিল। কিন্তু বিমলা এক আধটা করে পদ রাঁধতে শুরু করল আর রান্নার প্রশংসাও পেল, বিশেষ করে শ্বশুরের। আর পায় কে। ধীরে ধীরে রান্নাঘরের পুরো দখলটাই নিয়ে নিল। এতে পরিশ্রম বাড়লেও পরোয়া নেই। মহানন্দে নিত্য নতুন রান্না করে সবাইকে খাওয়ায়। সংসার খরচের ব্যাপারেও মাঝে মাঝেই বিমলা নাক গলায়। মলিনার যেটা একেবারেই পছন্দ নয়। একবার তো খরচ কমাবার জন্য বাড়ির কাজের লোককেও ছাড়িয়ে দেবার কথা বলেছিল কিন্তু বিমলার কষ্ট হবে বলে সত্যেন রাজি হয়নি।

    সংসারের অন্যান্য দায়িত্বের সাথে সাথে শ্বশুরকে ভোরের চা থেকে আরম্ভ করে রাতের খাবার দেওয়া পর্যন্ত সমস্ত কিছু বিমলা খুব আন্তরিকতার সঙ্গে করে। এখন টুকটাক কিছু কাজ ছাড়া মলিনাকে প্রায় কিছু করতেই হয় না। সবই বৌমা করে। কাজের ভার কমলে খারাপ লাগার কথা নয়। কিন্তু সমস্যা তো অন্য যায়গায়। সারা জীবন এই সংসার একা চালিয়েছেন। যা উচিৎ মনে করছেন তাই হয়েছে। সেই সংসারেই কাজ কমার সাথে সাথে কমে যাচ্ছে কর্তৃত্ব। এখন তাঁর ইচ্ছে অনিচ্ছেটাই শেষ কথা নয়, বৌমার মতটাই বেশি প্রাধান্য পাচ্ছে। আর সব থেকে বিরক্তির ব্যাপার হল যে, এতে সত্যেনের প্রচ্ছন্ন আশকারা আছে।

    শাশুড়ি বউএর মনমালিন্য নতুন কিছু নয়। হয় না এমন বাড়ি খুব কমই আছে। কিন্তু এই তরজার কিছু নিয়ম আছে। শ্বশুরের জীবিতাবস্থায় শাশুড়ি যতদিন কর্মক্ষম থাকে ততদিন এই দ্বৈরথে বিজয় তিলক তাঁর কপালেই থাকে। তারপর ধীরে ধীরে অবস্থার পরিবর্তন হয়। কিন্তু এ তো সময় দিল না। আসার কিছুদিনের মধ্যেই মলিনাকে একেবারে নক্ - আউট করে দিল। বৌমা চিৎকার চেঁচামেচি করে না। যা করবে ঠিক করে তা করে ছাড়ে। যেটা মেনে নেওয়া তাঁর পক্ষে কখনই সম্ভব নয়। তাই চেঁচামেচি তাঁকেই করতে হয়। প্রথম দিকে অল্প ছিল কিন্তু বৌমার দখলদারি বাড়ার সাথে সাথে অশান্তিও পাল্লা দিয়ে বাড়তে লাগল। সেবা যত্ন করে শ্বশুরকেও হাত করে নিয়েছে। সেবা তাঁকেও যে করেনা তা নয়। কিন্তু সেটাই তো স্বাভাবিক। যা স্বাভাবিক নয় তা হল বৌমার মাতব্বরি। স্বামীকে বলে লাভ নেই, তাই ছেলের কাছেই বিমলার নামে বেশ কয়েকবার নালিশ করেছে। অমূল্য বউকে অল্প স্বল্প বকেওছে। কিন্তু মলিনার ধারণা ওটা লোকদেখানো কারণ, বিমলার আচরণ এতটুকু পাল্টায়নি। এভাবে নরমে গরমে কয়েকমাস কাটল।

    একদিন ‘জিনিসপত্রের যা দাম বেড়েছে এই টাকায় আর সংসার চালান যাচ্ছে না’ —মলিনার এই মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে বিমলা অত্যন্ত শান্ত ভাবে বলল—মা, জিনিসপত্রের দাম আমরা কমাতে পারব না, আর আয়ও আমাদের বাঁধা। তাই সবাই মিলে চেষ্টা করে সংসার খরচটা একটু কমাতে হবে।
    ব্যাস, আগুনে ঘি পড়ল। সংসার খরচের টাকা মলিনার কাছে থাকে, তাই এ আক্রমণ সরাসরি তাঁকেই।

    ছেলে বাড়ি ফিরতেই তার কাছে কেঁদে পড়লেন—তোর বউএর কাছে আর কত অপমান সহ্য করতে হবে রে ? আমি তো এখন তোদের বাড়ির কাজের লোকের থেকেও অধম হয়ে গেছি রে।
    প্রতিদিন অভিযোগ শুনতে শুনতে অমুল্য বিরক্ত। ক্লান্ত হয়ে সবে বাড়ি ফিরেছে। বাড়ি ঢোকার সাথে সাথেই অভিযোগ শুনে মেজাজ বিগড়ে গেল। মাকে ধমক দিয়ে চুপ করতে বলে পুরো ঘটনাটা না শুনেই চেঁচিয়ে সকলের সামনে বিমলাকে বলল—এ বাড়িতে থাকতে হলে এখানকার মত করে থাকতে হবে। না পারলে থাকার দরকার নেই। যেখান থেকে এসেছ সেখানে গিয়ে থাক।

    কথাগুলো এক নিঃশ্বাসে বলে ফেলেই অমূল্য বুঝতে পারে যে রাগের মাথায় সে বাড়াবাড়ি করে ফেলেছে। বিমলা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে। দুচোখ বেয়ে নেমে আসে জলের ধারা।
    নিজের ব্যবহারের জন্য অনুতপ্ত অমূল্য রাতে বিমলার কাছে বারে বারে দুঃখপ্রকাশ করে। বিমলা কোন উত্তর দেয়নি। বালিশে মুখ গুঁজে চুপ করে শুয়ে ছিল। পরের দিন সকালে বাড়ির যাবতীয় কাজকর্ম সেরে অমূল্য স্কুলে চলে যাওয়ার পর শ্বশুর-শাশুড়িকে প্রণাম করে বিমলা কোলকাতায় তার বাড়িতে যাওয়ার জন্য অনুমতি চাইল। মলিনা মুখ ঘুরিয়ে চুপ করে রইলেন। সত্যেন প্রথমে বৌমাকে খানিক বোঝালেন। তারপর কটা দিন বাপের বাড়ি থেকে ঘুরে এলে মনটা ঠাণ্ডা হবে এই ভেবে এক ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশীকে ডেকে বিমলাকে কোলকাতায় পোঁছে দিয়ে আসতে বললেন।
    সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে বিমলাকে দেখতে না পেয়ে অমূল্য মাকে জিজ্ঞেস করল। মলিনা প্রথমে পাশ কাটিয়ে গেলেও পরে আসল ঘটনাটা জানাতেই হল। এতটা অমূল্য ভাবেনি। মেয়েটা খুবই কষ্ট পেয়েছে। মনের দুঃখে ঘরে গিয়ে চুপচাপ বসে রইল। হঠাৎ চেয়ারের ওপর কয়েকটা চাবি আর একটা খাম চোখে পড়ল। খামটা খুলে দেখে বিমলার লেখা কয়েক লাইনের একটা চিঠি—
    “ আমি এই বাড়িকে নিজের বাড়ির মতই ভাবি। বাপের বাড়ির লোকেদের থেকে তোমাদের কক্ষনো আলাদা চোখে দেখিনি। তাই সংসারের মঙ্গলের জন্য যা উচিৎ মনে হয়েছে তা করার পুরনো অভ্যাসটাও ছাড়তে পারিনি। পারলে ক্ষমা কোরো।“--- বিমলা।

    চিঠিতে কাউকে সম্বোধন করা না থাকলেও বোঝাই যাচ্ছে এ চিঠি তাকেই লেখা। মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল। এ সবের জন্য সেই দায়ি। সামনে পূজো। এ সময় লোকে বাড়ির কুকুর বেড়ালকেও তাড়ায়না আর সে কিনা নিজের বউকেই তাড়িয়ে দিল। কেন যে মার কথায় মাথাটা গরম করল। এই কয়েক মাসে বিমলাকে সে বড্ড ভালবেসে ফেলেছিল। স্বাবলম্বী সে কখনই ছিল না, কিন্তু বিয়ের পর থেকে তার জীবনটা পুরপুরি বৌ নির্ভর হয়ে গিয়েছে। মাঝে মাঝে একটু শাসন করে এই যা। তা তার মত আনাড়ির ওটা দরকার।

    রাতে মায়ের শত অনুরোধ সত্ত্বেও অমূল্য কিছু না খেয়েই শুয়ে পড়ল। সত্যেনও খেতে বসে প্রায় কিছুই না খেয়ে উঠে গেলেন। স্বামী, সন্তান যখন অভুক্ত তখন মলিনাই বা খান কি করে। রাতে শোয়ার পরেও দুচোখের পাতা এক করতে পারলেন না। সারাদিনের ঘটনা মাথায় ঘুরপাক খেতে লাগল। ছেলের কাছে বৌমার হেনস্থায় তিনি খুশি হয়েছিলেন ঠিকই কিন্তু বিমলা যে বাড়ি ছেড়ে চলে যাবে তা ভাবতে পারেননি। যাওয়ার সময় যখন কাছে এল তখন রাগের মাথায় কথা না বলাটা ঠিক হয়নি। মেয়েটাকে আটকান উচিৎ ছিল।

    সকালে উঠেও গতকালের ঘটনা অমূল্যর মনকে আচ্ছন্ন করে রাখল। স্কুলে যেতে ভাল লাগছে না। টেবিলের ওপর আলমারির চাবিগুলো পড়ে রয়েছে। কতদিন সে নিজে আলমারি খোলেনি। দরকারই পড়ত না। সব বিমলাই হাতে হাতে যোগান দিত। ধীরে ধীরে উঠে আলমারিটা খুলল। জামাকাপড় সব পরিপাটি করে সাজান রয়েছে। শাড়ী গুলোয় হাত বুলিয়ে বিমলাকে অনুভব করার চেষ্টা করল। হঠাৎ চোখে পড়ল কয়েকটা খাম। এক একটা খামে এক এক জনের নাম লেখা আর তার পাশে লেখা “পূজোর জন্যে।“ প্রত্যেকটার ভেতরে অল্প কিছু টাকা রাখা আছে। এই কয়েক মাসের হাত খরচের টাকা থেকে তিল তিল করে জমিয়ে বাড়ির প্রত্যেকের পূজোর কেনাকাটার জন্য আলাদা করে রাখা। কেবল নিজের জন্য কিছু নেই। পূজোর সময় স্বামীর কষ্ট যাতে কিছুটা লাঘব হয় তার জন্যই এই সঞ্চয়। অমূল্য নিজেকে সংবরণ করতে না পেরে চোখের জলে ভেজা খামগুলো মায়ের সামনে রেখে বলল—মা, বিমলা কি খুবই খারাপ ছিল ?

    বিমলা চলে যাওয়ার পর সংসার আবার মলিনার একার হাতে ফিরে এসেছে। এখন তাঁর ইচ্ছে অনিচ্ছেটাই শেষ কথা। প্রশ্ন করার কেউ নেই। কিন্তু কয়েকদিনের মধ্যেই মলিনা বুঝতে পারলেন যে তাঁর সাধের সংসারের স্বাভাবিক ছন্দটাই কোথায় যেন হারিয়ে গেছে। বাড়িতে তিনটে মানুষ, কিন্তু কেউ কাউকে যেন চেনে না। সারাদিন সংসারের জন্য পরিশ্রম করেও কারো মন পান না। ছেলে শুধু বাড়িতে খেতে আর শুতে আসে। তাও অর্ধেক দিন শরীর খারাপের অছিলায় রাতে খায় না। দিনের যতটা সময় পারে বাইরে কাটায়। স্বামী এমনিতেই কম কথার মানুষ, এখন একেবারেই কথা বলেন না। যে সংসার একদিন তাঁকে ছাড়া অচল ছিল এখন সেখানে নিজেকেই অবাঞ্ছিত মনে হচ্ছে। সমস্যার এখানেই শেষ নয়। বয়স অনুপাতে তাঁর শরীর স্বাস্থ্য যথেষ্ট ভাল। তাই বাড়ির কাজ করতে তাঁর কোনদিন কষ্ট হত না। কিন্তু মেয়েটা আসার পর থেকে সব কাজ নিজে করতে শুরু করে মলিনার কাজ করার অভ্যাসটাই নষ্ট করে দিয়েছে। এখন সামান্য কাজ করতেও আর শরীর চলে না।

    এই কদিনে আর একটা উপলব্ধি মলিনার হয়েছে। যেখান থেকে যাবতীয় বিবাদের সূত্রপাত, সেই সংসারের খুঁটিনাটি ব্যাপারে বিমলার নজরদারিতে আখেরে লাভই হয়েছে। খরচ এখন বেশ কম হয়। আগে মাসের শেষে প্রায়ই ছেলের কাছে টাকা চাইতে হত। এখন দু পাঁচ টাকা বরং বেঁচে যাচ্ছে। প্রকাশ্যে স্বীকার করা সম্ভব না হলেও এটাই বাস্তব।
    দুপুরবেলা একা বসে মলিনা ভাবেন... মেয়েটা বাড়ির সকলকে সেবা যত্ন করত। কোন কাজে কক্ষনো না করেনি। একমাত্র সমস্যা, সংসারে কোথাও কোন কিছু ঠিক হচ্ছে না মনে হলেই বলত বা নিজেই তা শুধরোবার চেষ্টা করত। ওইটুকু মেয়ে তাঁর মত গিন্নিকে সংসার চালানোয় জ্ঞান দিলে রাগ হবে না ? তবে তিনি যতই চেঁচামেচি করুন না কেন বৌমা কিন্তু কক্ষনো ঝগড়া করেনি।
    কিছুটা অনুতাপ আর কিছুটা বিমলা চলে যাওয়ার পর বাড়ির অস্বস্তিকর পরিবেশ, এই দুটো কারণে মলিনা মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পড়েছিলেন।
    দিন দশেক বাদে এক রবিবার বিমলার বাবা পূজোর তত্ত্ব নিয়ে পাতিহাল এলেন। ব্রজেনকে দেখেই সত্যেন আর মলিনা খুবই লজ্জিত হয়ে পড়লেন।
    প্রথমেই ব্রজেন মেয়ের জন্য বেয়াই বেয়ানের কাছে ক্ষমা চেয়ে বললেন—আমাদের জন্য মন কেমন করছে বলে বিমলা মার অমন করে হঠাৎ করে চলে যাওয়াটা উচিৎ হয়নি। আপনারা খুব ভাল বলে ওকে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছেন। আমি আজই ওকে সঙ্গে করে নিয়ে আসতাম কিন্তু ও আর কটা দিন থাকতে চাইল।
    যারা চরম অপমান করে তাকে বাড়ি ছাড়তে বাধ্য করল, নিজের বাবার কাছে সে কিন্তু তাদের ছোট হতে দেয়নি। কত ভালবাসা থাকলে তবেই এটা সম্ভব। মলিনার এখন নিজেকে খুব ছোট মনে হচ্ছে।
    সত্যেন বললেন—বৌমার যে কদিন মন চায় আপনাদের কাছে থাকুক। শুধু বলবেন যে এই বুড়োটার মায়ের জন্য বড্ড মন কেমন করছে।

    মলিনা ততক্ষনে বেয়াইয়ের জন্য চা, জলখাবার নিয়ে এসেছেন। অনেক আদর আপ্পায়ন হল। নানা অছিলায় ব্রজেন রাতে থেকে যাওয়ার অনুরোধ কোনোরকমে কাটালেন। মেয়ের বিয়ে দেওয়ার পর এই প্রথম তাঁর বেয়াই বাড়িতে আসা। এদের যত্ন আর আন্তরিকতায় ব্রজেন আপ্লুত। অনেক ভাগ্য করে এমন ঘর পাওয়া যায়। বেরোতে বেরোতে সন্ধ্যে হয়ে গেল। জামাই এসে বাসে তুলে দিয়ে গেল। বাড়ি পোঁছতে রাত দশটা বেজে গেল। বাড়ির সকলে একরাশ দুশ্চিন্তা নিয়ে ব্রজেনের অপেক্ষায় বসে ছিল। বিমলার উদ্বেগ ছিল সবথেকে বেশি। বাবার ফিরতে দেরী হচ্ছে মানে এখানে করা তার সব নাটকের ওপর যবনিকা পড়ে গেছে। শেষ হয়ে গেছে তার নিজের সংসার ঘিরে গড়ে তোলা সব সোনালী স্বপ্ন।
    ব্রজেনকে দেখতে পেয়েই বিমলা দৌড়ে বেরিয়ে এসে কাঁপা কাঁপা গলায় জিজ্ঞেস করল—বাবা এত দেরী হল ?
    -- ভেতরে চল সব বলছি।

    বিমলার উৎকণ্ঠা আরো বাড়ল। ঘরে বসে বিমলার মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে স্ত্রীকে বললেন—অনেক ভাগ্য করে অমন বাড়িতে মেয়ের বিয়ে দিয়েছ। যা আপ্যায়ন করল ভাবা যায় না। কিছুতেই ছাড়ছিল না। অনেক কষ্টে রাতে থাকাটা এড়িয়েছি।
    বেয়াই বিমলার অভাবে কতটা কাতর তাও জানালেন।

    যে বাড়ি থেকে সে একপ্রকার বিতাড়িত, সেই বাড়ির প্রশংসা নিজের বাবার মুখে শুনে বিমলার খুব আনন্দ হল। তার এখানে চলে আসার আসল কারণটা অন্তত বাড়ির সকলের কাছে গোপন রইল। না হলে বাবা,মা খুবই কষ্ট পেতেন। তা ছাড়া শ্বশুর বাড়িকে সে সত্যিই ভালবেসে ফেলেছিল। তবু তখনও সে দ্বিধাগ্রস্ত। কি করবে না করবে এইসব নিয়ে যখন তার মন তোলপাড় হচ্ছে তখনই ব্রজেন পকেট থেকে একটা ছোট খাম বার করে মেয়েকে দিয়ে বললেন—ভুলেই গিয়েছিলাম, এটা বেয়ান তোকে দিয়েছেন।
    আবার আতঙ্ক। বিমলা জানে না ওর ভেতর কিসের পরোয়ানা আছে। কোন রকমে খাম খুলে চিঠিটা বার করল। ছোট্ট দু লাইনের চিঠি। --- মা বিমলা, ফিরে এসে নিজের সংসারের হাল ধরো। এই বুড়ি যে আর সামলাতে পারছে না মা।

    চিঠিটা পড়ে বিমলার অন্তর জুড়িয়ে গেল। মনে আর কোন দ্বন্দ নেই।
    --- মা, আমি কাল সকালে পাতিহাল যাব।
    ব্রজেন বললেন—সে কিরে, এই যে বললি আরো কটা দিন থাকবি! আমি সেইমত তোর শ্বশুরবাড়িতে বলে তাঁদের মত নিয়ে এলাম।
    বিমলা বলল—না বাবা, আমাকে যেতেই হবে।
    মা ভাবলেন বরের জন্য মেয়ের মন কেমন করছে। মেয়েকে আদর করে বললেন—পাগলী ।
    বিমলার থেকে সুখী এ সংসারে এই মুহুর্তে আর কেউ নেই। শাশুড়ির দু লাইনের চিঠিতে সে পেয়ে গেছে তার ইপ্সিত স্বীকৃতি। তাই আর বিলম্ব করা সম্ভব নয়।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • গপ্পো | ২৬ অক্টোবর ২০২৪ | ১৯৪ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Mira Bijuli | ২৭ অক্টোবর ২০২৪ ১৬:৫৬538914
  • আহা অপূর্ব, বাইরে থেকে পড়ে সাধারণত ঘটে থাকা প্রতিটা বাড়ির রোজনামচা বলে মনে হচ্ছে, সেটার মানসিক দ্বন্দ, ঘাত - প্রতিঘাত সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে
  • Sukdeb Chatterjee | ২৭ অক্টোবর ২০২৪ ২০:০৭538915
  • ধন্যবাদ
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ঠিক অথবা ভুল প্রতিক্রিয়া দিন