আহা! রতনের আসলে শেষ নাই। বাংলাদেশ নিঃসন্দেহে মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ের মধ্যে সবচেয়ে ক্রান্তিলগ্ন পারছে করছে। আর ক্রান্তিকালীন সময় যেন দীর্ঘই হচ্ছে শুধু। মানুষ স্বস্তি খুঁজে, সাধারণ মানুষের স্বভাব হচ্ছে আমার প্রিয়জন যেন ভালো থাকে, ডাল ভাত জুটে, লেখাপড়া করতে পারে, কামাই রোজগারের একটা ব্যবস্থা যেন হয়। এরচেয়ে বেশিদূর ভাবতে রাজি না। সরকার গঠন কে করল, দেশ কে চালাইল এইটা খুব একটা প্রভাব ফেলে না সাধারণ মানুষের জীবনে। গত আওয়ামীলীগ সরকারের আমল এই রকম এক কারণেই দীর্ঘদিন টিকে গেছে। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ছিল না। সবাই কাজ করে গেছে, দেশ যেমন হোক একটা গতিতে এগিয়ে গেছে। কিন্তু বর্তমানে সেই কথা বলার উপায় নাই। কারণ আড়াই মাস হয়ে যাওয়ার পরেও ইউনুস সাহেবের সরকার কার্যত অকার্যকর এক প্রশাসন চালাচ্ছেন যাদেরকে কোন কাজেই দেখা যাচ্ছে না। উল্টো প্রতিষ্ঠিত সত্য ইতিহাস নিয়ে ছেলেখেলা করার একটা প্রচেষ্টা দেখা যাচ্ছে যা আবার সাধারণ মানুষ যারা রাজনীতি নিয়ে অত ভাবে না বললাম তারাও ভালো ভাবে নেয় নাই। রিসেট বাটন, কট্টর ইসলামিক দল গুলোর উত্থান কোনটাই সাধারণ মানুষের পছন্দের কাজ না। কিন্তু এর প্রভাব তো আর দেখা যাবে না সরাসরি, কারণ সাধারণ মানুষ এগুলা দেখলেও এখন ব্যস্ত আবার ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায়, কাঁচামরিচ চারশ টাকা কেজি কিংবা ৫০-৬০ টাকা হালি ডিম তাঁদেরকে ভিন্ন দিকে ভাবতে দিচ্ছে কম। আর এইটার ফায়দাই নেওয়ার চেষ্টা করছে এই অদ্ভুত সরকার।
ভেজাল লাগছিল অনেক আগেই। শেখ হাসিনার জীবন নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার পরেই সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন তার মা পদত্যাগ করেন নাই। প্রাণের সংশয় থাকায় বাধ্য হয়ে ভারতে চলে যেতে হয়েছে। তখন এইটা নিয়ে সবাই হাসিঠাট্টা করেছে। আমি লিখেছিলাম যে পদত্যাগ পত্র না থাকলে বিপদ আছে বর্তমান সরকারের। এমন কি পদত্যাগ পত্র থাকলেও বিপদ আছে এই সরকারের। কারণ বাংলাদেশের বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী পদত্যাগ পত্র থাকলেই হবে না, তা রাষ্ট্রপতির কাছে জমা দিতে হবে, সংসদ থেকে পরবর্তী নেতা নির্বাচন করতে হবে। কিন্তু পদত্যাগ পত্রই না থাকলে বিষয়টা বেশ জটিল হয়ে পরে। তখন একটা ভুয়া পদত্যাগপত্র দেখানোও হয়। রাষ্ট্রপতি তখন ভাষণে পদত্যাগ পত্র পেয়েছেন এমন বলেছিলেন। কিন্তু রহস্যের শেষ তখন হয়নি। অনেকেই বলছিল তখন যে পদত্যাগ পত্র থাকলে দেখায় দিলেই তো জয়কে মিথ্যাবাদী প্রমাণ করা যায়। কিন্তু দেখা গেল সরকারের পক্ষ থেকে কেউ কোন পদত্যাগ পত্র দেখাইতে পারেন নাই। নানা ঘটনা প্রভাবে পদত্যাগ পত্র জটিলতা মানুষের মন থেকে হারিয়ে গেছিল। বিপদ শুরু হল মানবজমিন পত্রিকার সম্পাদক যখন একটা প্রতিবেদন প্রকাশ করে!
তিনি লিখেন তিনি পদত্যাগ পত্র নাই এইটা শুনে তখন থেকে বিভিন্ন জায়গায় পদত্যাগ পত্রটা খোঁজার চেষ্টা করেছেন কিন্তু কোথাও কেউ তাঁকে পদত্যাগপত্রটা দেখাইতে পারেন নাই। তিনি নানা জায়গায় খুঁজে না পেয়ে শেষ ভরসা হিসেবে রাষ্ট্রপতির সাথে দেখা করার জন্য চেষ্টা করেন। সফল হলে তিনি যান বঙ্গভবনে। সেখানে তিনি রাষ্ট্রপতির সাথে বেশ খোলামেলা আলোচনা করেন। রাষ্ট্রপতির তিনি পূর্ব পরিচিত। এক সাথে এক সময় সাংবাদিকতা করেছেন। সেই সূত্রে আলাপ আলোচনা বেশ প্রাণবন্ত হয়েছিল এমনটা তার লেখা পড়ে মনে হয়েছে। তিনি এক সময় সাবেক প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ পত্রের আলাপ তোলেন। রাষ্ট্রপতি তাঁকে জানান এই জিনিস তিনিও খুঁজেছেন কিন্তু পাওয়া যায় নাই। কিছুদিন আগে মন্ত্রী পরিষদ সচিবও তার কাছে আসছিল পদত্যাগ পত্র নেওয়ার জন্য। তাঁকেও তিনি একই কথা বলেছেন যে তার কাছে কোন পদত্যাগ পত্র নাই। ৫ আগস্ট আর সবার মতো তিনিও ধোঁয়াশার মধ্যেই ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি সেনাপ্রধানকে বলেছিলেন যে প্রধানমন্ত্রী চলে গেলেন এমন করে আমাকে তো কিছু জানায়ও গেলেন না!
এই হল বারুদের ঘরে আগুন লাগা! আইন উপদেষ্টা এই খবর পড়ে রাষ্ট্রপতিকে মিথ্যাবাদী বলেছেন, বলেছেন তিনি শপথ ভঙ্গ করেছেন এমন মিথ্যাচার করে! কথিত ছাত্র - জনতা ফুঁসে (!) উঠছে! এই রাষ্ট্রপতিকে পদত্যাগ করতে হবে। এমন মিথ্যা বলা রাষ্ট্রপতিকে তারা চায় না! এক্ষণ, এখনই পদত্যাগ করতে হবে! গতকাল ( ২২/১০/২০২৪) বঙ্গভবন ঘেরাও কর্মসূচি দেওয়া হয়েছিল। আগের জোস নাই আর। মেরেকেটে ১৫০/২০০ জন হবে মানুষ জমায়েত হয়েছিল। এরাই বিরাট গণ্ডগোল করার চেষ্টা করেছে। পুলিশের গুলি খেয়ে দুইজন হাসপাতালে! এই লেখা যখন লিখছি তখনও টানটান অবস্থা বিরাজ করছে সব জায়গায়। ইউনুস সাহেবের ডান হাত মাহফুজ আলম গেছেন প্রধান বিচারপতির সাথে মিটিং করতে। এই সময় কী করনীয় তাই জানার চেষ্টা। মানে রাষ্ট্রপতিকে কীভাবে অপসরণ করানো যায়।
আমি সংবিধান তো বিশেষজ্ঞদের মতো করে বুঝি না। তবে যতখানি বুঝি তাতে এইটা পরিষ্কার রাষ্ট্রপতিকে পদত্যাগ করানোর কোন সুযোগ নাই। সংবিধান অনুযায়ী তিনি রাষ্ট্রের প্রধান। এমন কী তিনি পদত্যাগ করতে চাইলেও করতে পারবেন না, তাঁর পদত্যাগ পত্র যে গ্রহণ করবে এমন কেউও নাই দেশে। যারা আছে তারা তাঁর নিচে সবাই। সংসদের স্পিকার নিতে পারতেন পদত্যাগ পত্র। কিন্তু সেই রাস্তাও বন্ধ, কারণ স্পিকার কয়েকদিন আগেই পদত্যাগ করেছেন তাঁর পদ থেকে। ভাইস স্পিকারকে জেলে ঢুকায় রাখছেন!
এই যে পরিস্থিতি এইটা আমার ধারনা সুকৌশলে তৈরি করা। তারা কেউ কাঁচা কুমলা না। তারা জানে আমি এতক্ষণ যা বললাম সব। তাহলে কেন হুট করেই পদতেগপ পত্র নাই বলে খবর বের হল আর হুট করেই কেন সবাই ঝাঁপিয়ে পড়ল রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের জন্য? এইটা সম্ভবত 'মেটিকুলাসলি ডিজাইন' - এর অংশ। রাষ্ট্রপতির পরেই চাপ আসবে সেনাপ্রধানের পদত্যাগের জন্য! এই দুইজনকে সরে যেতে হবে মেটিকুলাসলি ডিজাইন পুরোপুরি বাস্তবায়নের জন্য। এইটা এই দুইজন থাকলে সম্ভব না। সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি যে কোন সময় এই সরকারকে ভেঙ্গে দিতে পারেন। যে উপদেষ্টা, যে ইঁচড়ে পাকা সমন্বয়করা না বুঝে চিল্লাফাল্লা করছে তারা হয় এগুলা বুঝেই না, আর নয় জেনে বুঝেই করছে, কারণ? মেটিকুলাসলি ডিজাইন! তো যার হাতে এমন ক্ষমতা, যিনি যখন তখন এই সরকারকে বাতিল করতে পারেন, সেই ব্যক্তিকে নিজেদের লোক না হলে চলবে? না। সেই ব্যক্তি যদি এই সরকারকে বাতিল করে তাহলে কীভাবে করবে? মানে তাঁকে কে সমর্থন করবে? তাঁর কথা কে শুনবে? শুনবে সেনাবাহিনী! এই জন্য সেনাপ্রধানকেও সরতে হবে। সেনাপ্রধানকেও কেউ সরাতে পারবে না, একমাত্র রাষ্ট্রপতি ছাড়া! এই কয়দিন এই দুইজন একে অন্যকে বাঁচিয়ে চলছিল। এখন কী হয়ে গেল যে ঝাঁপিয়ে পড়ল সবাই?
সেনাপ্রধান দেশে নাই, এইটাই হচ্ছে একটা শূন্যতা। তিনি গেছেন জাতিসংঘের এক কনফারেন্সে যোগ দিতে আমেরিকা। যদিও অনেকেই মনে করছেন সেখানে শুধু জাতিসংঘের মিটিং করেই তিনি হয়ত আসবেন না। আরও নানা জায়গায় হয়ত মিটিং করেই আসবেন। সেখান থেকে কানাডা যাওয়ার কথা। সেটাও কোন পরিকল্পনার অংশ কি না আমরা জানি না। তবে এখানে যে শূন্যতা তৈরি হয়েছে আর সেই শূন্যতা থেকে যে সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে তা বড় অশনি সংকেত। ২৫ তারিখ ফেরার কথা সেনাপ্রধান। আগামী দুই একদিনের মধ্যেই বুঝা যাবে বাংলাদেশের ভাগ্যে কী আছে। অনেক অনেক কিছুই হয়ে যেতে পারে এই দুই একদিনে। রাষ্ট্রপতি যদি সেনাবাহিনীর সমর্থন পেয়ে এই সরকারকে বাতিল করতে পারেন। তার সেই ক্ষমতা আছে, তিনি তা প্রয়োগ করতেই পারেন। আর এই আড়াই মাসে যে চমৎকার (!) দেশ তারা চালিয়েছেন তাতে কেউ খুব একটা আপত্তিও করবে বলে মনে হয় না আমার। সেক্ষেত্রে আমরা সেনাবাহিনীর শাসনে ঢুকে যাব। রাষ্ট্রপতি যদি সংবিধান স্থগিত করেন তাহলে সেনাবাহিনীর রাষ্ট্র ক্ষমতা নেওয়ার অপরাধে অপরাধীও হবেন না। এই ক্ষেত্রে বিএনপি কী করবে সেটাই হচ্ছে বড় প্রশ্ন। বিএনপি কী বুঝতে পারছে যে এক্সট্রিমিস্টরা তাদেরকেও ছাড়বে না? যারা বর্তমানে সরকারে বসে আছেন তারা যে বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছে সেখানে বিএনপিরও কোন জায়গা নাই। এইটা যদি বিএনপি বুঝতে দেড়ি করে তাহলে বিপদ।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে রাষ্ট্রপতি কি সাহস করবে? না বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম ভিতু রাষ্ট্রপতি হিসেবে থেকে যাবে? সামনের সময় কি তাকে মোস্তাক আহমেদের সাথে তুলনা করবে? সাত্তারের সাথে তুলনীয় রাষ্ট্রপতি হিসেবে তিনি থেকে যাবে? না মুক্তিযুদ্ধকে ধুলোয় মিশিয়ে ফেলা, বঙ্গবন্ধুকে ধূলিসাৎ করে দেওয়া এই সরকারের বিরুদ্ধে তিনি সোচ্চার হবেন? না আমি কোন ভেজালে নাই বলে পদত্যাগ পত্র কাওকে না দেওয়ার পেয়ে নিজের গদিতে রেখে চলে যাবেন? এই উত্তর সময়ই দিবে।
ভিন্ন আর কী হতে পারে আগামী দুই তিনদিনের মধ্যে? ইউনুস সরকারে হাতে কী আছে? আসিফ নজরুল ইতোমধ্যে বলে ফেলেছে যে রাষ্ট্রপতি মিথ্যাচার করেছেন, তিনি শপথ ভঙ্গ করেছেন। পরে সরকারের পক্ষ থেকেও বলা হয়েছে যে তারাও আসিফ নজরুলের সাথে একমত! তো এখন? আগেই বলছি যে রাষ্ট্রপতির কোন উপায় নাই পদত্যাগের। এখন এরা যা করতে পারে, এবং আমার ধারণা এইটার জন্যই এত কিছু, এইটাই মেটিকুলাসলি ডিজাইনের অংশ যে এই সংবিধানকে ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া! সংবিধানই নাই তার আবার বাধ্যবাধকতা কী? তখন রাষ্ট্রপতিই নাই, তাই সব ভেজাল শেষ। এইটাই হয়ত তাদের পরিকল্পনা। এইটা বাস্তবায়নের জন্যই এত তোরজোড়। এইটা যদি মেটিকুলাসলি ডিজাইনে না থাকে তাহলে বলতেই হবে তাদের এই মহান পরিকল্পনায় বড় গলদ থেকে গেছে। তাদের হিসাবে সাহাবুদ্দিন ছিল না! এখন পর্যন্ত এই সুচারু পরিকল্পনাকে নিছিদ্র বলেই মনে হয়েছে। পরিকল্পিত ভাবে মুক্তিযুদ্ধের ওপরে আক্রমণ, বঙ্গবন্ধুর ওপরে আক্রমণ সবই একদিকেই নির্দেশ করে। নতুন সংবিধানের কথা ফরহাদ মজহার শুরু থেকেই বলে আসছিলেন। তারা কেন তখনই এই সংবিধান ছুঁড়ে ফেলে নাই এইটা আমারও প্রশ্ন। হয়ত ওই মুহূর্তে ভয় পেয়েছে বা এইটাই পরিকল্পনা ছিল যে এইটাতে একটু সময় নিয়ে হাত দিবে। কারণ মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত সেই সংবিধানকে ছুঁড়ে ফেলতে সাহস শক্তি সবই লাগবে। তারা হয়ত মনে করছে এখন সময় হয়েছে ছুঁড়ে ফেলার।
আরও একটা দিক দিয়ে আলাপ করি। এমন কী হতে পারে ইউনুস গং এমন কোন ইঙ্গিত পেয়েছেন যে রাষ্ট্রপতি এমন কিছু করতে চাচ্ছেন মানে সরকার ভেঙ্গে দিচ্ছেন? তাই উঠেপড়ে লেগেছেন তাকে সরিয়ে দিতে। সেনাপ্রধান রাষ্ট্রপতিকে সাহস দিতে পারেন যে ভেঙ্গে দিলে তার সেনাবাহিনী রাষ্ট্রপতির সাথে থাকবে। দ্বিতীয় সাহস দিতে পারে ভিন্ন কোন রাষ্ট্র! অতি কল্পনা মনে হচ্ছে? আমার কাছে মনে হচ্ছে না। এমন যদি না হয়েও থাকে তাহলে যে পরিস্থিতি এখন তৈরি হয়েছে তাতেও তো কেউ এই সুযোগ নিতে পারে, পারে না? কিংবা দেশের চরম বিশৃঙ্খলা চলছে দেশে জুড়ে, সুস্থ বুদ্ধির বুদ্ধিজীবীরাও তো যেতে পারে রাষ্ট্রপতির কাছে, বলতে পারে এই ছাতার সরকারের চেয়ে আপনিই দায়িত্ব নিন! ( এইটা আবার আমার কাছেই অতি সিনেমেটিক মনে হচ্ছে!)
যাই হোক, সব দুই তিনদিনের মধ্যেই দেখা যাবে বলে আমার বিশ্বাস। ছাত্ররা বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সময় দিয়েছে রাষ্ট্রপতিকে পদত্যাগের জন্য। দেখা যাক।
এবার অন্য একটা আলাপ করি। আসিফ নজরুল রাষ্ট্রপতিকে শপথ ভঙ্গ করেছেন বলেছেন। খুব ভালো, রাষ্ট্রপতি আগে বলছে তিনি পদত্যাগ পত্র পেয়েছেন এখন বলছেন পান নাই। এইটা তো মিথ্যাই বলা হয়েছে। হয় তখন বলেছেন অথবা এখন বলছেন। যদিও আমার মনে হয় না তিনি ইচ্ছা করে মিথ্যা বলেছেন। প্রধানমন্ত্রী চলে যাওয়ার পরে তখন তাঁর আসলে কী করার ছিল? গোঁ ধরে বসে থাকা? না আমি পদত্যাগ পত্র না দেখে ভাষণ দিব না? তাঁর আসলে উপায় ছিল না। সেই সময় অনুযায়ী যা করার তাই তিনি করেছেন। যাই হোক, ধরেই নিলাম মিথ্যাই বলেছেন। শপথ ভঙ্গ করেছেন। মাননীয় আইন উপদেষ্টা জনাব আসিফ নজরুল কি শপথ ভঙ্গের এই একটাই উদাহরণ দেখেছেন এই কয়দিনে? আর কেউ শপথ ভাঙ্গে নাই? আর কেউ সংবিধানের বিপরীতমুখী কথা বলে নাই? জনাব নাহিদ ইসলাম যে সরাসরি জাতির জনককে অস্বীকার করল তা শপথ ভঙ্গের ভিতরে পরে নাই? আমাদের সংবিধানের চারের ক ধারায় স্পষ্ট করে বলা আছে - "জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্পীকার ও প্রধান বিচারপতির কার্যালয় এবং সকল সরকারী ও আধা-সরকারী অফিস, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, সংবিধিবদ্ধ সরকারী কর্তৃপক্ষের প্রধান ও শাখা কার্যালয়, সরকারী ও বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশের দূতাবাস ও মিশনসমূহে সংরক্ষণ ও প্রদর্শন করিতে হইবে।" নাহিদ সাহেবসহ সবাই যে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি সরিয়ে ফেলছেন তা শপথ ভঙ্গ করে নাই? আপনি মানেন না, জাতির জনককে বদলে দিবেন সব বুঝলাম। কিন্তু যতক্ষণ পর্যন্ত না করছেন ততক্ষণ পর্যন্ত এই সংবিধান মেনে চলতে আপনি বাধ্য। আইনের লোক এইটা তো না জানার কথা না! না এখানে আমরা যা করব তাই হচ্ছে সঠিক বাকি গুলো সব ভুয়া। কিংবা আমরা যা বলব তাই সত্য, আমরা যাকে মিথ্যা বলব তা মিথ্যা! আমরা যাকে অপরাধী বলব তারাই অপরাধী। ইউনুস রাজ বলে কথা, হতেও পারে! তবে আজকে আপনের ক্ষমতা আছে, যা ইচ্ছা করে গেলেন, বলে গেলেন, এইটাই শেষ না। ইতিহাসে এগুলা লেখা থাকবে। আপনারা সংবিধান ভঙ্গ করেছেন, করেছেন, করেছেন!
যাই হোক, অনেক বড় বড় সম্ভবনার কথা বললাম। এর সাথে অতি সাধারণ কিন্তু অতি ব্যবহৃত একটা কারণ বলি যা সত্য হলেও হতে পারে। এই সময় পদত্যাগ পত্র নিয়ে এই সিনেমা নাটকের কারণ হতে পারে মানুষের নজর ভিন্ন দিকে সরিয়ে নেওয়া। এই কাজ আগেও আমরা দেখছি, আজাইরা বিষয় দিয়ে ব্যস্ত করে রাখার চেষ্টা জনগণকে। ইউনুস সরকার যেভাবে ব্যারাছ্যারা লাগাইছে তা থেকে আপাতত কিছুদিনের জন্য নজর অন্যদিকে সরিয়ে রাখতে এই বুদ্ধি কিন্তু খারাপ না। মানুষ কয়দিন এই নিয়েই চিন্তা ভাবনা করব। সবার মুখে মুখে আসলেই পদত্যাগ পত্র নাই? না আছে? থাকলে কী আর না থাকলে কী? চুপ্পু পদত্যাগ করব? করলে কী হবে? না করলে কি হবে? এমন টানটান চিত্রনাট্য কই পাব আর? মানুষ বুঁদ হয়ে থাকবে এই দিকে।
মানুষ, সাধারণ মানুষের কথা খুব বেশি বলার নাই। এদের ওপরে খুব একটা আস্থা আমার কোন কালেই ছিল না, এখনও নাই। না বুঝেই ভেড়ার পালের মতো চলে যায় একদিকে। একটা সুপরিকল্পিত আন্দোলন টেনে নিয়ে গেল সরকার পতনের দিকে। অথচ কারো ঘিলুতে একটুর জন্যও ঢুকল না কেন হচ্ছে? এখন পর্যন্ত, শুধু সাধারণ মানুষ না, অসাধারণ সব মানুষ পর্যন্ত বলেই যাচ্ছে এ হওয়ারই ছিল! এ হওয়ার ছিল আর এ হয়ানও এক কথা নাই ভাইয়া!
গ্রেজোন নামের আমেরিকার এক নিউজ পোর্টালের একটা প্রতিবেদন পড়লাম। ইংরেজি কম বুঝি। কষ্ট করেই পড়লাম। মাথাটা ঝিমঝিম করছে! সেখানে আমেরিকান কিছু নথি ফাঁস হয়েছে বলে দাবি করেছে। সেগুলা প্রকাশ করেছে সেখানে। সেখানে দেখা যাচ্ছে আইআরআই (International Republican Institute) নামের এক সংগঠনের মাধ্যমে বেশ লম্বা সময় ধরেই আমাদের দেশের তরুণ সমাজকে প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছে এই বিদ্রোহের জন্য! এখানে সবাই আছেন। অভিনেতারা আছেন, কণ্ঠ শিল্পীরা আছেন, র্যাপ শিল্পী আছেন, সমকামী সমর্থন সংগঠন আছেন, হিজরারা আছেন! হুট করেই আন্দোলনে বহু সুপার তারকাকে যে আমরা নেমে যেতে দেখেছি তা এমনে এমনেই না। লিংক দিচ্ছি, পড়ে দেখবেন। আরিফ জাবেতিক ওইটা নিয়া একটা মোটামুটি ভিডিও বানিয়েছেন, ওইটার লিংকও দিচ্ছি। তিনি যথেষ্ট পরিষ্কার ভাবে বুঝিয়েছেন পুরো কাণ্ডটা।
শেষ করি। শেষ করি ভিন্ন এক খবর দিয়ে। ইত্তেফাকে খবর এসেছে যে একাত্তরের অপরাধ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হলে জাতির কাছে ক্ষমা চাইবেন বলে মন্তব্য করেছেন জামায়াত আমির ডা. শফিকুর রহমান।
এই জন্যই তামশার শেষ নাই এই দেশে! ধরে ধরে ঝুলায় দিল তাদের নেতাদেরকে আর আজকে আসছে প্রমাণ খোঁজার জন্য! তবে আমি এই শফিকুর রহমানকে যত দেখছি তত মুগ্ধ হচ্ছি! এমন ধীর স্থির আমির জামাত আর ইতিহাসে পায় নাই বলে আমার ধরনা। খুব কৌশলে, খুব কুল ভঙ্গিতে এগিয়ে যাচ্ছেন অভীষ্ট লক্ষে। এখন পর্যন্ত কোন একটা উল্টাপাল্টা কথা বলেন নাই। সরকার একটু করে দড়ি খুলে, তিনি তার মধ্যেই একটু করে নানা কথা বলেন! ভালো না?
পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।