এতদিন যা যা লিখেছি তা ভয়ংকর মনে হয়েছে সবার। কিন্তু আমি মনে মনে জানতাম এইটা আসল পরিস্থিতি না। বিপদ দানা বাধছে কেবল। আসল ভয় কোনটা? আসল ভয় জঙ্গি উত্থান। ম্যালা দোষ ঘাড়ে নিয়ে, ম্যালা ভুল ত্রুটি করে শেষ পর্যন্ত জঙ্গিদের তৎপরতাকে একটা পর্যায় নিয়ে আসছিল আওয়ামীলীগ সরকার। এখন তো কোন কৃতিত্বই দেওয়া যায় না শেখ হাসিনা সরকারকে। কিন্তু এইটা সত্য যে এদেরকে গলায় পা দিয়ে চেপে রাখছিল আওয়ামীলীগ।
যে ভয়টা পাচ্ছিলাম এখন সেই ভয়টা বাস্তবে রূপ নিয়েছে। খুলনায় যা হয়েছে তা বা তেমন ঘটনার সাথে আমাদের বহুদিন ধরে কোন যোগাযোগ ছিল না। সেই আগের মতোই, হিন্দু এক ছেলে মহানবীকে গালিগালাজ করেছে ফেসবুকে। খুব স্পর্শকাতর অনুভূতি সম্পন্ন মানুষজনের অনুভূতিতে আঘাত লেগে গেছে! এবার কী? যে দেশে কোন আইন শৃঙ্খলার নাম নিশানা নাই, যেই দেশে মব জাস্টিস হচ্ছে যখন তখন, সেখানে এমন পরিস্থিতিতে কী হতে পারে? যা হওয়ার তাই হইছে। কিন্তু এমন ভাবে হয়েছে যা মেনে নেওয়ার মতো না।
ভুল করেছে বুঝতে পেরে ওই ছেলেকে, ওর নাম হচ্ছে উৎসব মণ্ডল, উৎসব মণ্ডলকে নিয়ে ওর মা থানায় এসেছে। বাঁচার জন্য এসেছে। মানুষ ভেঙ্গে পড়েছে থানায়। তাদের অদ্ভুত দাবি, ছেলেকে কিছুক্ষণের জন্য এই বিক্ষুদ্ধ জনতার হাতে ছেড়ে দিতে হবে! একটা ভিডিও দেখলাম উৎসব মণ্ডল বসে আছে, পাশেই ওর মা বসে আছে। থানায় বহু পুলাপান, সম্ভবত এসপি বা ওসি, তিনি কোথায় জানি ফোন দিচ্ছেন। পুলাপান তাদের মতো করে কথা বলছে। একজন ওই অফিসারকে ডেকে বাহিরে নিয়ে গেল। এরপরে আর ভিডিও নাই। এরপরের যে ভিডিও দেখলাম থানার ওই মেঝেতেই নিথর রক্তাক্ত উৎসব মণ্ডল! আর্মি পুলিশ কিছুতেই কোন কাজ হয়নি। মেরে ফেলছে ছেলেটাকে! এখন আর্মি থেকে বলছে ও তাদের তত্ত্বাবধায়নে চিকিৎসায় আছে। কিন্তু ওই পর্যন্তই। কেউ জানে না সত্য মিথ্যা। সবাই দাবি করছে উৎসব মণ্ডল আর বেঁচে নাই।
বেঁচে নাইয়ের পিছনে আরও বড় প্রমাণ বা যুক্তি তা হচ্ছে খুনিদের উল্লাস! একেকজন প্রকাশ্যে ফেসবুকে পোস্ট করছে কত নেকির কাজ করেছে একটা! বুনো উল্লাস! ম্যান পড়ছে? ঠিক এমন উল্লাস করত কারা? অভিজিত রায় মারার যাওয়ার সময় এমন দৃশ্য দেখিছি আমরা, রাজীব হায়দার মারা যাওয়ার সময় দেখছি। যখন নিয়ম করে ব্লগার কোপানো হত তখন দেখছি নিয়মিত এই উল্লাস! সরকার পতন, অর্থনীতির কী হবে, দেশের ভবিষ্যৎ কোন দিকে যাবে এগুলা এক ধরনের চিন্তা আর এইটা হচ্ছে সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের চিন্তা। এইটা হচ্ছে আপনি শেষ! এইটা হচ্ছে এখন আর কেউ দেখার নাই আপনাকে সেই দুশ্চিন্তা।
কেউ দেখার নাই কেন বললাম? কারণ আসলেই কেউ দেখার নাই। এমন একটা বর্বর কাজ হল, সরকারের তরফ থেকে কোন একটা বিবৃতি নাই। থানা থেকে তুলে নিয়ে বা থানাতেই ছেলেটাকে মেরে ফেলেছে! মায়ের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে মেরে ফেলেছে! বাচ্চা একটা ছেলে ভাই! কচি মুখ ছেলেটার! না বুঝে, কারও প্ররোচনায় পড়ে হয়ত কিছু লিখছিল। থানায় এসে মাফ চেয়েছে। প্রথম ভিডিওতে ওর মা বলছে আমরা জানি না যে ও এই কাজ করেছে। মায়ের মুখটা যদি দেখতেন! অসহায় হয়ে থানায় বসে আছে ছেলেকে নিয়ে। বাঁচায় নিয়ে যেতে পারে নাই! আহ! এ কিসের মধ্যে যাচ্ছি আমরা? ( যদি ছেলেটা বেঁচে থাকে তাহলে ভালো, আমি মনে প্রাণে চাই আর্মি যা বলছে তাই সত্য হোক, তাদের কাছেই চিকিৎসা নিচ্ছে বেঁচে আছে এইটাই সত্য হোক।)
এই শক্তিটাকে ভয় পাই আমি। এখন এদেরকে ফেরাবে কে? শুধু একজনকে ধরে মেরে ফেলছে এমন না। তিনারা শক্তি দেখানো শুরু করেছে পাকাপাকি ভাবেই। গতকাল শুক্রবারে কয়েকটা মাজারে আক্রমণ হয়েছে! দেওয়ানবাগের মাজার গুড়িয়ে দিয়েছে। সিলেটে শাহ পরানের মাজারে হাজার হাজার জনতা গিয়ে হাজির। সেখানকার খাদেম মাইকে বলছে তারা আর কখনও ওরসের সময় গান বাজনা করবে না! কয়েকদিন আগেও একটা মাজার ভাঙা হয়েছে। সিলেটের এবং ঢাকার ঘটনায় যেটা সবচেয়ে বেশি লক্ষণীয় তা হচ্ছে দুই জায়গায়ই কালো পতাকায় সাদা রঙ্গে কলেমা লেখা ছিল! মনে পড়ে এমন পতাকা কই দেখছেন? কারা এমন পতাকা নিয়ে ঘুরাফেরা করে? চিন্তা করতে থাকেন!
মাজার ভাঙার আরেকটা বিষয় হচ্ছে আপামর জনতার অকুণ্ঠ সমর্থন! এক আজব দেশ আমাদের। এরা ভুলে যাচ্ছে যে আজকে আপনে গায়ের জোরে অনেক কিছুই পারবেন। কিন্তু যে মাটি তাকে কেমনে শেষ করবেন? মাটির সাথে মিশে থাকা সংস্কৃতি কীভাবে ধ্বংস করবেন? এখানে, এই বাংলায় কত আউল বাউল পীর ফকির সন্ন্যাসী জন্ম নিছে। কতজনের ভাবাদর্শে ধর্ম বর্ণ মিশে গেছে। সুফিবাদ নতুন চেহারা নিয়েছে, বাউল হয়েছে ধর্ম। এখানে জন্মগ্রহণ করেছেন রাধারমন, দুরবীনশাহ, শ্রী চৈতন্য, হাসন রাজা, ভাটি বাংলার চারণ কবি বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিম, কিংবদন্তি লালন শাহ! এখানেই সাহসী উচ্চারণ করে কেউ - 'একদিন এই পৃথিবীটা বাউলের পৃথিবী হবে।' সব খেয়ে দিবেন? এখানে যার নাম চিত্তরঞ্জন সাহ সে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নাম রাখে এস কে এন্টারপ্রাইজ, এস কে মানে শাহ কামাল! এখানে মাজারে সিন্নি দেয় শাঁখা সিদুর পরা নারী, বিশ্বকর্মা পূজায় বন্ধ থাকে মুসলিম কারখানা! এই পলিমাটির ইতিহাস কঠিন। যত সহজ ভাবছেন তত সহজ না!
কিন্তু বললাম তো সহজ না, রাস্তাটা কই? মানুষ হলে সম্ভব। মানুষ কই? সরকার চুপ! দেশের প্রথম সারির সংবাদ মাধ্যম নিশ্চুপ! যেন এমন কিছুই ঘটেনি! আর এদিকে মাজারকে সহ্য করতে পারছে না কেউ। এরা মাজারে গান বাজনা করে! এমন গর্হিত ধর্ম বিরোধী কাজ কোনমতেই সহ্য করা যাবে না। এরা ভুলে যায় যা আমি জানি না, যা আমি মানি না তাই নিষিদ্ধ না। আমার জানার বাহিরে, বুঝার বাহিরে বিশাল বড় একটা দুনিয়া আছে। সুফিবাদের কতখানি জানি আমরা? জালালউদ্দিন রুমিকে কতখানি বুঝি? আমরা বিচার করতে বসছি কেন মাজারে গান গায়! বহু আগে থেকেই এই তর্ক চলছে, শরিয়ত আর মারেফাতের এই দ্বন্দ্ব নতুন না। কিন্তু তর্ক ছিল, দ্বন্দ্ব ছিল মানে কী আমার আজকে শক্তি হয়েছে দেখে আমি আরেকটা মতবাদকে নিঃশেষ করে দিব? ধ্বংস করে দিব? সুফিবাদের লোকজন, বাউলেরা বলছে মূল লক্ষ কী? সৃষ্টিকর্তাকে পাওয়া। আমি যদি শরিয়তের পথে না হেঁটে অন্য ভাবে সৃষ্টিকর্তার সান্নিধ্য পাই? কেউ দাবি করছে তারা পাচ্ছে সেই সান্নিধ্য। তাহলে আমি আপনে কে তাকে বাধা দেওয়ার? যদি আল্লার সন্ধান চাও গো প্রেম রাখিয়ো অন্তরের ভিতর! কই প্রেম? যে ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হল গতকাল মাজার গুলোতে। এবং সামনে আরও যে চালানো হবে তাতে অন্তরে প্রেমের কিছু দেখি না!
আমার বাপ শরিয়ত পন্থি মানুষ ছিলেন। কিন্তু উনার শেষ জীবনে আমি যখন উনার বন্ধুর মতো হয়ে উঠলাম তখন আমি প্রশ্ন করা শুরু করলাম। বললাম আব্বা, রুমি কেমন লোক ছিলেন? আব্বা পড়াশোনা করা মানুষ উনি রুমির কী কী পড়েছেন বললেন। রুমিকে কেন পড়তে হবে বললেন। আমি বললাম উনার জীবনী পড়ছেন? না, এইটা তো পড়া হয় নাই! মানে পড়া হয় নাই না, তেমন করে পড়া হয় নাই আর কি। জানেন কিন্তু পরিষ্কার না। আমি শুরু করলাম বলা। রুমি কেমন ধ্যান মগ্ন হয়ে যেতেন। কেমন রাস্তায় নাচা শুরু করে দিতেন। মসজিদেই নাচতে লাগতেন। এমন নানা ঘটনা। আব্বাকে বললাম রুমিকে কি শরিয়ত দিয়ে ব্যাখ্যা করতে পারবেন? আব্বার চোখে পানি! না, শরিয়তের হিসাবে রুমিকে হিসাব করা যাবে না। রুমিদের দরজা আলাদা! আমি আব্বার কাছ থেকে শুধু এইটুকুই শুনতে চেয়েছিলাম।
মাজারে নানা ভণ্ডামি হয়, এইটা হয়ত সত্য। কিন্তু এইটার প্রতিকার এইটা না যে আপনি মাজার ধ্বংস করে দিবেন। আব্বাকে যা বুঝাইতে পারছিলাম তা আমি আর কাওকে বুঝাইতে পারি নাই। আমার কাছের অনেকেই মাজার ভাঙায় খুশি। এরা ভুলে যাচ্ছে মাজার ভাঙ্গাই শেষ না। এরপরে শুরু হবে আহমদিয়াদের উপরে আক্রমণ, কাদিয়ানীদের উপরে আক্রমণ, শিয়া সুন্নি সব হবে! আজকে উল্লাস করছেন কালকে আপনার মসজিদ ভাঙতে আসবে এক কাঠমোল্লা, পান খেয়ে ভুরি নিয়ে নড়তে চড়তে পারে না এমন এক হুজুর দেখবেন ফতোয়া দিয়া দিছে আপনাকে কেন মেরে ফেলা সঠিক হবে ধর্মীয় দৃষ্টিতে। যে সুফিদের হাত ধরে এই অঞ্চলে ইসলামের উত্থান, যাদেরকে মাজার পূজারি বলে মেরে ফেলতে চাচ্ছেন বখতিয়ারের আগে এরাই আসছে।( প্রদোষে প্রাকৃতজন নামে শওকত আলির লেখা অসাধারণ, দুর্দান্ত একটা উপন্যাস আছে এই সময় নিয়ে লেখা।) কিন্তু ওয়াহাবিদেরকে, সালাফিদেরকে আমার মতো নাদানের পক্ষে বুঝানো সম্ভব? জীবনে না। যত মাজার আছে সব ভাঙার জন্য ইভেন্ট খোলা হচ্ছে। আধুনিক ছেলে না সব? আয়োজন করে, অনলাইনে তারিখ ঠিক করে ভাঙা হবে মাজার। গুলিস্তানের গোলাপ শাহ মাজার ভাঙার ইভেন্ট দেখে বললাম এইটা।
রাজনীতিতে ফিরি। এস আলম গ্রুপের নামে বেশ কিছু খুব খুব দামি গাড়ি চট্টগ্রামে এসেছিল। এর মধ্যে সরকার পতন। গাড়ি গুলোর কী হল? বিএনপির নেতারা সব ভাগাভাগি করে নিয়ে নিলো! আজকে আন্দোলনের খুব বড় সমর্থক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কামরুল হাসান মামুন হতাশ হয়ে ফেসবুকে লিখেছে এ এর জায়গায় বি, এই যদি হয় পরিবর্তন তাহলে এই পরিবর্তনে লাভ কী? সব জায়গায় দলীয় নিয়োগ দেওয়া চলছে। তাহলে এত রক্তপাত, এতগুলো মানুষের জীবনের অর্থ কী? এইটা আমারও প্রশ্ন!
আমি যদি এক দান পরের খেলাই ধরতে না পারি তাহলে আমি কেন দাবা খেলতে যাব? যেখানে আমার দাবা খেলার জিতা হারার উপরে নির্ভর করছে বহু মানুষের ভবিষ্যৎ! আমরা যারা আন্দোলনের সময় শঙ্কা প্রকাশ করছিলাম, বিকল্প নিয়ে চিন্তা করছিলাম তাদেরকে হেনস্তা করা হয়েছে। আমি লিখছিলাম চোরাবালিতে বাংলাদেশ, কৌশলে না চললে আরও ডুবতে হবে! এখান থেকে বাঁচতে হলে আওয়ামীলীগকেই বুদ্ধি বের করতে হবে। আজকে এক মাস পরে কেন মনে হচ্ছে আমি সঠিক ছিলাম। আমি তো সবার, বিপুল মানুষের আগ্রহ দেখে নিজেকেই বুঝ দিয়েছি যে আমার ধারনা ভুল। এতদিন আওয়ামীলীগ বলে আসছিল তারা ছাড়া বিকল্প নাই। সবাই হাসাহাসি করছে। আজকে এক মাস যেতেই কেন মনে হচ্ছে খুব একটা ভুল বলে নাই। কেমন সব মানুষ হলে আওয়ামীলীগের এত এত অন্যায়, লুটপাটের পরেও মনে হয় যে তাও তো শান্তি ছিল! গত পরশু একজন ব্যবসায়ীর সাথে কথা হল। উনি হিন্দু মানুষ, জামালপুর সদরে চারটা গার্মেন্টসের দোকান, সরিষাবাড়িতে আরেকটা দোকান। শেরপুরে একটা দোকান দিয়েছেন, আরেকটা দিবেন, সেই ব্যাপারে কথা বলতে গিয়েছিলাম। তিনি সোজা সহজ একটা কথা বললেন, বললেন, ভাই আমি স্বৈরাচার না কি তা জানি না। লম্বা সময় ছিল, আমাদের স্বর্ণযুগ ছিল। আমরা আমাদের স্বর্ণযুগ পার করছি! আমি আজকে থেকে ব্যবসা করি না। সবই দেখছি, দেখেই বলছি যে যা গেছে তা আর পাওয়ার নয়। বাংলাদেশ স্থিতিশীল হতে বহু বছর লাগবে। কতদিন কেউ জানে না। এইটাই হচ্ছে সত্য। আমরা কৌশলে আগাই নাই। চোরাবালিতে জোর চলে না। এই বেসিক জ্ঞানটা ভুলে গেছি বা আমরা মনে করতে চাই নাই। এই চোরাবালি থেকে কবে উঠতে পারব আমরা জানি না।
সবার জন্য অবশ্য এই সব সত্য না। বসুন্ধরা গ্রুপের মালিকের ছেলে বিএনপির আমলে এক খুন করে বাবর আর তারেক রহমানকে হাজার কোটি টাকা দিয়ে মুক্তি পেয়েছিল বলে শোনা গেছে। আওয়ামীলীগের আমলেও বিরাট টাকা খরচ করে আরেক ছেলে নিজের কুকীর্তি লুকিয়েছিল। এখন দেখা যাচ্ছে জামাতের আমির বসুন্ধারার হেলিকপ্টার দিয়ে ঘুরাফিরা করছে! তাহলে? সবার জন্য এক হিসাব? জীবনে না!
এইসবের মাঝেই সীমান্তে আবার এক কিশোরীর লাশ! ফেলানি থেকে স্বর্ণা দাস! অষ্টম শ্রেণিতে পড়া একটা মেয়ে। কত দুর্ধর্ষ চোরাকারবারি ছিল স্বর্ণা দাস? গুলি করে মেরে ফেলল বিএসেফ। ত্রিপুরায় ওর ভাই থাকে, দালালের মধ্যমে সীমান্ত পার হচ্ছিল মায়ের সাথে। গুলি খেয়ে মরল স্বর্ণা দাস। বিএসএফ বরাবরই বলে আসছে সব অপরাধী। সব চোরাকারবারি! চোরাকারবারি সব বাংলাদেশের? এখান থেকে এমনে এমনেই চোরাকারবারি করা যায়? ওই পাশের কারও সাহায্য লাগে না? গুলি খায় শুধু আমাদের লোকজন? এমন একটা পরিস্থিতি যে বিশ্বের সবচেয়ে প্রাণঘাতী সীমান্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ ভারত সীমান্ত! ভাইরে কী একেবারে চলছে এইখানে যে এত মানুষ মরছে এখানে? আরে ভারতের নিজের দেশের আইনেই গুলি মারার আইন নাই, তবুও চলছে হত্যা! প্রথম আলো থেকে উদ্ধৃতি দিচ্ছি, "জয়েন্ট ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ গাইডলাইনস ফর বর্ডার অথোরিটিজ অব দ্য টু কান্ট্রিজ প্রটোকলের ধারা ৮(আই) অনুসারে, এক দেশের নাগরিক যদি বেআইনিভাবে অন্য দেশে প্রবেশ করার চেষ্টা করে বা কোনো অপরাধে লিপ্ত হয়, তাহলে সংশ্লিষ্ট দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী আত্মরক্ষায় যেকোনো ধরনের পদক্ষেপ নিতে পারবে, তবে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার না করাটাই বাঞ্ছনীয়।"
এখানে আত্মরক্ষা কোনটা? স্বর্ণা দাস কত বড় অস্ত্র নিয়ে সীমান্ত পার হচ্ছিল যে তাকে গুলি করে মেরে ফেলা হল? স্রেফ টিগার হেবিট, আর কিছু না। কিছুই হয় না মারলে, দেই গুলি মেরে একটা!
তবে এখন আমার দেখার বিষয় অন্যটা। এতদিন বলা হয়েছে আওয়ামীলীগ সরকার ভারতের পুতুল হয়ে বসে আছে, কিছুই করে না। এবার দেখা যাক নোবেল সাহেব কী করেন এই ব্যাপারে। অপরাধীর শাস্তি নিশ্চিত করতে পারবেন? ওই জোয়ানকে আইনের আওতায় আনতে পারবেন? না কি এইটাও ২৬ লক্ষ ভারতীয় বাংলাদেশে চাকরি করে এমন একটা বিষয় হয়ে থেকে যাবে? হাঁকডাক হবে কিন্তু বর্ষণ হবে না! তৌহিদই জনতা গতকাল রোড মার্চ করেছে ত্রিপুরার ডাম্বুর বাঁধ অভিমুখে। কী অর্জন হয় এই লং মার্চ থেকে এইটাও দেখায় অপেক্ষায় রইছি।
https://www.facebook.com/reel/929955668961018
পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।