মূল ছবিঃ ডেভিড ম্যাকাচেন, পেক্সেলস
[ পাঁচ ]
স্বর্ণালীর কথা
ওফ, মা আবার সেই অফুল গ্রিন সালোয়ার কামিজটা পড়েছে।
“বোস না… দাঁড়িয়ে কেন?”
অ্যাজ ইফ বসলেই অল দ্য প্রবলেমস উইল বি সলভড। এনি ওয়ে, বসা যাক। মা-ও তো বসলো চেয়ারে। আমি ডিভানে বসি।
“বল…”
হোয়াট ডু ইউ মিন বাই বল! কবে থেকে জিজ্ঞেস করছি তুমি বাঙুরে কি করছ অ্যান্ড ইউ ডিডন্ট টেল মি এনিথিং।… ওক্কে, লেটস স্টার্ট সামথিং।
"আজ এই বিশ্রী সালোয়ার কামিজটা না পড়লে চলছিলো না?"
“সকালে বৃষ্টি পড়ছিল না? তাই পরলাম। এটা তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যায়। দেখিসনি তখন?”
আই ডিডন্ট নোটিশ মা কী পরে অফিস গেছিল। আমার তেমন কোনও ইন্টার্যাকশনই নেই মার সাথে। আই অ্যাম মাচ মোর কমফোর্টেবল ইন দ্য কোম্পানি অফ বাবা, অ্যান্ড শি ডাজন্ট লাইক ইট।
“সন্ধ্যেবেলার ওষুধটা খেয়েছিলি বেরনোর আগে?”
দু দিন আগে বাজে একটা ঠান্ডা লেগেছিল বলে ওষুধ চলছে আমার। আই জাস্ট ফরগট। “না, ভুলে গেছি।”
“ভুলে গেলি! ফোন করে মনে করিয়ে দিলাম, তার পরেও ভুলে গেলি?”
“আমি কি ইচ্ছে করে ভুলে গেছি নাকি?” আমার গলা চড়ে গেল।
“চেঁচিও না, এটা অন্য লোকের বাড়ি। কেমন ঠাণ্ডা লেগেছিল তুমি নিজেই জানো। আজ জন্মদিন না হলে তোমায় বেরোতে দিতাম না।”
“ও, এটা অন্য লোকের বাড়ি! তা নিয়ে আমার কিছু জানা চলবে না। কিন্তু তুমি আসতে পারবে… অ্যান্ড রেগুলারলি। আর সেই বাড়িতেই তুমি কেক নিয়ে এসেছো টু সেলিব্রেট মাই বার্থডে। আর আমার বন্ধুরা… দে অলসো…"
আমার চোখে জল এসে গেল। আমি অন্যদিকে তাকালাম। ঠোঁট কামড়ে চেষ্টা করলাম কান্না আটকাতে, পারলাম না। মা এসে আমার কাঁধে হাত রাখল, আমি এক ঝটকায় সরে গেলাম।
“তোর বন্ধুরা নিজে থেকে কিছু করেনি। আমরাই বলেছিলাম এবার জন্মদিনটা এখানে হোক, একটু --”
“আমরা কারা? আমার জন্মদিন কোথায় হবে সেটা অন্য কেউ ডিসাইড করবে না কি?”
“তোর অনেক প্রশ্ন রে... আনন্যাচরাল নয়। আমি কেন বাঙুরে আসি, কী করি…। অনেক বার তোকে বলব বলব করেও বলতে পারিনি। আসলে তোর বাবা--”
“বাবাকে এর মধ্যে টানছো কেন? হি ইজ নট অ্যাসোসিয়েটেড উইথ এনিথিং ইউ আর ডুইং। নর ডাজ হি ওয়ান্ট টু।”
মা একটা বড় নিঃশ্বাস ফেলল। ফিরে গেল চেয়ারে। “মামা তোকে ছোটবেলায় পুজোয় জামা দিত মনে আছে?”
আমার একজনই মামা, বেলঘরিয়ায় থাকে। ছোটবেলায় জামা দিত পুজোতে, হঠাৎই দেওয়া বন্ধ করে দিল। “হ্যাঁ, মনে আছে। কেন?”
“মামা তোকে জামা দেওয়া বন্ধ করল কেন?”
“হাউ ডু আই নো? মে বি ফিনান্সিয়াল প্রবলেম ছিল। কিন্তু এখন এসব কথার কী মানে?”
“কোনও ফিনান্সিয়াল প্রবলেম ছিল না। আমি বারণ করেছিলাম।”
“হোয়াট?”
“হ্যাঁ, কারণ আমি দীপুকে কিছু দিতে পারছিলাম না।”
দীপু আমার মামাতো দাদা। বললাম, “আমি কিছু বুঝতে পারছি না।”
“মামা তোকে জামা দেয়। আমি দীপুকে দিতাম। সেটা তোর বাবা পছন্দ করত না। সাংঘাতিক অশান্তি করত। তাই আমি দেওয়া বন্ধ করলাম, দাদাকেও না করলাম তোকে দিতে। দাদা শোনেনি, পরের বারেও যখন দিল, আমি ফেরত দিয়ে এসেছিলাম। তার পর আর দেয়নি।”
আমি একটা ধাক্কা খেলাম। বিশ্বাস হচ্ছিল না। দীপুদাকে জামা দিলে বাবা আপত্তি করবে কেন! একটু ভেবে বললাম, “তুমি কি বাবার টাকা থেকে দিতে?”
“আমি চাকরি করি সোনা। তোর বাবার মত ইনকাম অবশ্যই করি না। কিন্তু দীপুকে কিছু দেওয়ার জন্য ওর টাকায় হাত দেব কেন? আর শুধু দীপু না, আমার বাপের বাড়ির কাউকে কিছু দিতে গেলেই তোর বাবা প্রবলেম ক্রিয়েট করত। আমার রোজগারের টাকা আমি কোথায় কিভাবে খরচ করব সেটাও ও কনট্রোল করতে চাইত।”
এজরা স্ট্রিটে বাবার ইলেকট্রিক্যাল গুডসের বড় দোকান, হোলসেলের বিজনেস। হি ডাজ নট নিড মায়ের টাকা। “বাট হোয়াই? বাবার কি তখন বিজনেস খারাপ চলছিল?”
“বিজনেসে ভাল সময় খারাপ সময় দুই-ই থাকে। তার জন্য নয়। এটা ওর স্বভাব। অনেকেই এমন থাকে। তারা ভাবে, আমি যথেষ্ট ইনকাম করি, আমার স্ত্রীর চাকরি করার দরকার নেই। কিম্বা ডিসাইড করতে চায় বৌ-এর রোজগারের টাকা কিভাবে কোথায় খরচ করা হবে।”
আমি মেলাতে পারছিলাম না। আমি যা চাই বাবা দেয়, না বলে না। আইফোনটা অবশ্য আমি একরকম জোর করেই আদায় করেছিলাম। মা পছন্দ করেনি একদম, বাট হি ডিডন্ট লিশন টু হার। আমিও মার কোনও কথাতেই পাত্তা দিই না। অবশ্য আমার ল্যাপটপটা মা কিনে দিয়েছিল।
"আ-আই হ্যাভ আ কোয়েরি।" মা তাকাল আমার দিকে। "তোমাদের… ডিভোর্স হল ফর দিস রিজন?”
"মেনলি। একবার ওকে না বলে একটা এনজিওতে ডোনেট করেছিলাম বলেও প্রচুর ঝামেলা করেছিল।... আরও কিছু খুচরো প্রবলেম ছিল। তবে সে সব কম বেশি সব ফ্যামিলিতেই থাকে। তবে ওই… সব যোগ হয়ে ব্যাপারটা ক্রমশ পয়েন্ট অফ নো রিটার্নের দিকে চলে গেল। দুজনেই বুঝতে পারছিলাম কোনও টান আর নেই আমাদের মধ্যে। মিউচুয়াল ডিভোর্স হয়ে গেল। তুই তখন ছোট, ক্লাস ফাইভ, তাই আমিই তোকে পেলাম। তোকে আঁকড়েই বাঁচতে চেয়েছিলাম, কিন্ত…."
মা চুপ করে গেল। আমিও চুপ থাকলাম। আই নো হোয়াট শি ইজ ট্রাইং টু সে। আমি গ্র্যাজুয়ালি সরে গেছি মা-র থেকে। মনে আছে মা সে সময় আমায় জড়িয়ে ধরে বসে থাকত, কাঁদত। আমার ভাল লাগতো না, উঠে চলে যেতাম। মা দেখলাম আঙুল দিয়ে চোখের কোণাটা মুছে নিল। ফর দ্য ফার্স্ট টাইম আমার মায়ের জন্য খারাপ লাগছিল। তবে আরও একটা কথা জানার আছে। "আমার খরচ বাবা দেয়। কেন?"
"আমার ইচ্ছে ছিল না। কিন্তু তখন আমাদের কোম্পানির অবস্থা খারাপ। উঠে যাওয়ার মত অবস্থা। চাকরি থাকে কি না সন্দেহ, অন্য চাকরির চেষ্টা করছিলাম। পছন্দসই পাচ্ছিলাম না। তুই খুব ভুগতিস ছোটবেলায়। সব সামলে তোকে যদি ঠিকমতো বড় করতে না পারি টাকার অভাবে, সেই ভয়টা গেড়ে বসেছিল। ও তোর পড়াশোনার খরচ দিতে চাইল। সেই থেকে…."
সত্যিই আমি খুব ভুগতাম। রিউম্যাটিক ফিভার। জয়েন্টগুলোতে খুব পেন হত আর জ্বর আসত। আই হ্যাড টেকন লটস অফ মেডিসিনস অ্যান্ড ইঞ্জেকশনস। গ্র্যাজুয়ালি ইট ওয়াজ কিওরড। এক জন আয়া ছিল, তবু মাকে প্রচুর ছুটি নিতে হত আমার জন্য।
"তোকে এ সব কথা এই ভাবে বলতে হবে কখনও ভাবিনি। তবে বড় হয়েছিস, অনেক কিছু দেখবি, শুনবি।”
"তোমরা তো সেম কলেজে পড়তে।"
"হ্যাঁ, চাকরিটা বিয়ের আগেই পেয়ে গেছিলাম... তাই। বিয়ে হয়ে গেলে হয়তো আর চাকরি করাই হত না।… অনেক কিছুই আগে থেকে বোঝা যায় না রে, এক ছাদের নিচে ২৪ ঘন্টা থাকলে তবেই একে অন্যকে চেনা যায়।"
কিন্তু বাবা তো আমায় খুব ভালবাসে। ডাজন্ট হি হ্যাভ এনি গুড কোয়ালিটি? প্রশ্নটা করেই ফেললাম।
"কেন থাকবে না? নইলে এত বড় একা ব্যাবসা চালাচ্ছে কি করে? তোর কাকা জ্যাঠারা তো এই বিজনেসে আসেনি। তোর দাদু তো অনেক দিন থেকেই আর মাথা ঘামান না। মেমারি খুব ভাল, পি-আর খুব ভাল, হইহুল্লোড় করতে পারে, রিস্ক নিতে পারে। কেবল আমার সাথে মিলল না।"
"সেটা আগে বুঝতে পারোনি?"
"না রে। সুন্দর কথা বলত। দেখতেও ভাল ছিল। বিয়ের পর যে ইস্যুগুলো বড় হয়ে উঠল সেগুলো তো আগে ছিল না।"
সো ইটস অলমোস্ট দ্য সেম কেস। তৃষা যে প্রদীপের দিদির কথা বলল তার মত। দ্য ওনলি ডিফরেন্স ইজ দ্যাট যে আমি পিকচারে এসে পড়েছি। নাও আসতে পারতাম ওই মেয়েটার মত হলে। বাট আই অ্যারাইভড অ্যান্ড ইজ সিটিং ইন দিস সিলি রুম নাও। শিট, আসল কথাটাই তো জানা হয়নি। "এই অশোক অরোরা ভদ্রলোক কে?"
"এক জন মিড-লেভেল বিজনেসম্যান। আমার বসের বন্ধু। এক সাথে ক্লাবে যাবেন বলে প্রায়ই আমাদের অফিসে আসেন।"
মা জিএম ফিনান্সের পিএ। বাবার কাছে শুনেছি মায়ের কোম্পানির অবস্থা মোটেই ভাল না। উঠে যেতে পারে।
“তোমার অফিস তো বোধ হয় বন্ধ হয়ে যাবে। তুমি মিস্টার অরোরার এখানে কি কর?”
“আমাদের কোম্পানি অনেক দিন ধরেই সিক। এবার গভর্নমেন্ট এটা তুলে নেবে বলে ডিসিশন নিয়েছে। কদিন আগে পেপারেও বেরিয়েছিল। কিছুদিন পরে আর চাকরি থাকবে না আমার।"
"আই আস্কড তুমি এখানে কী কর?"
"জিগ্যেস করলি না তো চাকরি গেলে কী ভাবে চলবে আমাদের?"
সামহাও দ্যাট ডিডন্ট কাম টু মাই মাইন্ড। "কত দিন আর চাকরি আছে তোমার?"
“আমাদের ভিআরএস দেওয়া হবে। মাস কয়েকের মধ্যেই সব মিটে যাবে।”
“ভিআরএস মানে তো একটা লাম্পসাম অ্যামাউন্ট পাবে।”
“হ্যাঁ। পি-এফ, গ্র্যাচুইটি, আর ভিআরএস মিলিয়ে একটা ভালো অ্যামাউন্ট পাওয়া যাবে। একটা পেনশন স্কিমে ইনভেস্ট করা আছে, অল্প কিছু পাওয়া যাবে।”
“সো, তুমি এখানে চাকরি করছ। তো সেটা আমায় বললেই হত। ইউ ওয়্যার সো সিক্রেটিভ।”
“আমি এখানে ঠিক চাকরি করছি না। যাতায়াত ভাড়া হিসেবে সামান্য কিছু পাচ্ছি। এখন আর সে ভাবে চাকরি পাবোও না, ইচ্ছেও নেই।”
“তাহলে এখানে আসছো কেন?”
“অশোকজী এখানে একটা হোম ডেলিভারি চালাচ্ছেন। সেটা আমি দেখাশোনা করছি।”
“মানে ডেলিভারিং কুকড ফুড টু পিপল?... তোমার বসের বন্ধু, আ মিড লেভেল বিজনেসম্যান… তিনি এই রকম একটা বিজনেস করছেন?”
“এটা বিজনেস নয়, ফিলানথ্রফি।”
আমার ভ্রূ কুঁচকে গেল। “মানে?” (পরের সংখ্যায় শেষ)
(সানন্দা, ২ আগস্ট ২০১৯ সংখ্যায় প্রকাশিত)
পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।