উত্তর প্রদেশের আগ্রায় মোতি কাটরা বলে একটা জায়গা আছে। সেখানে এলাহাবাদ ব্যাঙ্ক মোড়ের কাছে একটি জুতো প্রস্তুতকারী সংস্থার ঠিকানা। ওয়েবসাইটটি তাদের মনোহরা। গুগল করলেই পেয়ে যাবেন। সংস্থার নাম পরে বলছি। তার আগে অন্য কথা।
ওই যে জুতো কোম্পানি, আসলে সেটি ইন্ডিয়ায় অবস্থিত। যোগী রাজ্যে, ইন্ডিয়া যেমন রয়েছে, তেমন রয়েছে হিন্দুস্তানও। যাকে আমরা গোবলয় বলে চিনি, সে কথা মুখে বলি বা না বলি।
আমাদের আলোচ্য এই হিন্দুস্তানটি বুলন্দশহরে অবস্থিত। বুলন্দশহর হিন্দুস্তান থেকে আগ্রা ইন্ডিয়ার দূরত্ব ২০০ কিলোমিটারের কম। মূলত আখ চাষের জন্য পরিচিত পশ্চিম উত্তর প্রদেশের এই জনস্থানটি বছর বছর খানেকের সামান্য সময় আগেও ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে সংবাদ শিরোনামে উঠে এসেছিল। ২০২০-র শুরুতে ফের।
এবারের কারণ ঠাকুর। হিন্দু বাঙালিরা অনেকেই ঈশ্বরকে, নিত্য পূজার ঈশ্বরকে ঠাকুর বলে ডাকেন। ঠাকুর-দেবতা।
উত্তর প্রদেশ সহ গোবলয়ে ঠাকুররা আক্ষরিক অর্থেই দেবতা। অর্থাৎ ঠাকুর সম্প্রদায়ভুক্তরা। ঠাকুররা উচ্চবর্ণীয়, ফলে হিন্দি বলয়ের হিন্দুস্তানে, ঠাকুররা দেবতার আসনে বিরাজ করেন। এ হেন বুলন্দশহরে অহিন্দু এক দোকানি, নিজের দোকানে বিক্রি করছিলেন ঠাকুর লেখা জুতো। শুধু লেখা নয়, জুতোর সোলে খোদাই করে লেখা ছিল ঠাকুর।
অহিন্দু এই দোকানির নাম নাসির। ফলে প্রতিক্রিয়া যে সর্ব তরফে অতিরিক্ত হবে, সে নিয়ে কোনও বিস্ময়ের অবকাশ নেই। তেমন অবকাশ না দিয়েই বুলন্দশহরের গুলহোটি টাউনের বজরং দলের কর্মী বিশাল চৌহান নাসিরের বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেন। সংবাদ মাধ্যমের কাছে বিশাল জানান, আমরা ওর দোকানে গিয়ে ওকে পুলিশের হাতে তুলে দিই।
হিন্দুস্তান বুলন্দশহরের পুলিশ এ পরিস্থিতিতে কর্তব্যবিচ্যুত হয়নি। নাসিরের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির তিনটি ধারায় অভিযোগ আনা হয়। এর মধ্যে রয়েছে সম্প্রদায়গত বিভাজন সৃষ্টির প্রয়াস, ইচ্ছাকৃতভাবে আঘাত করা এবং শান্তি বিঘ্নিত করতে ইচ্ছাকৃতভাবে মানহানি করা।
নাসিরকে আটক করা হয়। নাসির পুলিশের কাছে বলার চেষ্টা করেন যে তিনি নিজে এর জন্য দায়ী নন, জুতো প্রস্তুতকারক সংস্থা যে জুতো পাঠিয়েছে, সেগুলিই দোকানে রেখেছিলেন তিনি। বুলন্দশহর পুলিশ তাঁকে পরে ছেড়ে দেয়।
আমাদের লেখার শুরুতে যে জুতো প্রস্তুতকারী সংস্থার কথা বলা হয়েছে, সেই সংস্থার জুতোই ছিল নাসিরের দোকানে। নাম - ঠাকুর ফুটওয়্যার কোম্পানি। ঠাকুর কোম্পানি, প্রচারের উদ্দেশ্যে জুতোর সোলে নিজেদের নাম খোদাই করেছিল।
বুলন্দশহরের পূর্ববর্তী হিংসার উল্লেখ আমরা করেছি। সে হিংসার কথা এবার চট করে বলে নেওয়া যাক। ২০১৮ সালের ৩ ডিসেম্বরে বুলন্দশহরের মহাও গ্রামের এক মাঠে গরুর হাড়গোড় পড়ে আছে বলে অভিযোগ তোলে গোরক্ষা বাহিনীর একটি দল। তারা স্থানীয় পুলিশ ফাঁড়িতে হাড়গোড় নিয়ে চড়াও হয়। গোহত্যাকারীদের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করতে হবে, এই ছিল তাদের দাবি। কিছুক্ষণের মধ্যেই তারা পুলিশের ওপর ইটপাথর ছুড়তে শুরু করে বলে অভিযোগ। এমনকী গুলিও ছোড়া হয়। পার্শ্ববর্তী থানা থেকে বিশাল পুলিশবাহিনী চলে আসে। সংঘর্ষ তুমুল আকার নিতে মারা যান পুলিশ ইনস্পেক্টর সুবোধ কুমার সিং। মারা যান আরেক যুবকও। উল্লেখ্য সুবোধ সিং ২০১৫ সালে গোরক্ষাবাহিনীর হাতে নিহত দাদরির আখলাক হত্যাকাণ্ডের তদন্তেও যুক্ত ছিলেন। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তাঁকে হত্যা করা হয়েছিল, সে নিয়ে প্রভূত সন্দেহের অবকাশ তৈরি হয়েছে।
জুতোকাণ্ডে নাসিরের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের ও তৎপরতা প্রসঙ্গে বুলন্দশহরের সামান্য পুরনো ঘটনার উল্লেখ, কারও কারও কাছে ধান ভানতে শিবের গীত বলে মনে হতে পারে। কিন্তু বিষয়টা তেমন প্রেক্ষিত থেকে দেখা ঠিক হবে না।
২০১৪ ও ২০১৯, দুটি লোকসভা ভোটেই বুলন্দশহর কেন্দ্র থেকে জিতেছিল বিজেপি। ২০১৯ সালের ভোটে তাদের ভোট প্রাপ্তির পরিমাণ ছিল ৬০.৬৪ শতাংশ। যা তাদের আগেরবারের চেয়ে .৮১ শতাংশ বেশি। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বহুজন সমাজ পার্টির প্রার্থী পেয়েছিলেন মাত্র ৩০ শতাংশের কিছু বেশি ভোট।
২০১৭ সালের বিধানসভা ভোটেও বুলন্দশহর কেন্দ্র থেকে জেতেন বিজেপি প্রার্থী। বিধানসভার মেয়াদ থাকাকালীন তাঁর মৃত্যু ঘটায়, ২০২০ সাল সেখানে উপনির্বাচন হয়। উপনির্বাচনেও বিজেপি প্রার্থী জেতেন, ভোটশেয়ার ৪৩ শতাংশের বেশি। দ্বিতীয় স্থানে থাকা বহুজন সমাজ পার্টির প্রার্থীর ভোট শেয়ার ৩৩ শতাংশের সামান্য বেশি ছিল, এবং কংগ্রেসের ভোটভাঁড়ার শতাংশের হিসেবে ছিল ৫.১।
এই পরিসংখ্যানগুলি স্পষ্টত দেখিয়ে দিচ্ছে বুলন্দশহর এলাকায় হিন্দুত্ববাদীদের জয় প্রায় নিরঙ্কুশ। নিরঙ্কুশ ভোটজয় আর মতাদর্শের বিস্তার, ও তার আগ্রাসী জীবনচর্চা অঙ্গাঙ্গীভাবে যুক্ত। সংঘ পরিবারের ডানা যে ক্রমশ বৃহদাকার হচ্ছে, তা এই বিচ্ছিন্ন ঘটনাগুলিকে একযোগে দেখলে স্পষ্ট হবে।
বুলন্দশহর হিন্দুস্তান হয়ে উঠছে। ছোট ছোট হিন্দুস্তান গড়ে, ভারতকে বিসর্জন দেওয়ার প্রকল্প বুলন্দ হচ্ছে।
এখন প্রত্যেক শহরে ।..গ্রামে ।..অলিতে ।..গলিতে... যেটা ছড়িয়ে পড়ছে , তা হলো "হিন্দুস্তান " নামক স্থানে আমরা বাস করি ।।.ভারতবর্ষে না !! এটা হিন্দু দের দেশ ।..অন্য কারুর নয় !!!এই বিষ ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে ভীষণ পরিকল্পিত ভাবে !!প্রত্যেকটা লোক সাম্প্রদায়িক হয়ে উঠেছে মনেপ্রাণে !!এখানেই আরএসএস বা বিজেপি 'র সার্থকতা !!আমার পাশের লোক টা একটা কিছু আলোচনা 'র শুরুর কিছুক্ষণ পরেই টেনে আনছে এই হিন্দু - মুসলিম বিষয় ।...তীব্র ঘৃণা ।..বিদ্বেষ ।.যার মধ্যে কোনো যুক্তি নেই।.. লজিক নেই।.. ছড়িয়ে দেয়া হচ্চে !!ফ্যাসি বাদ এই ভাবেই আমাদের সমাজে.. আমাদের রক্তে ঢুকে যাচ্ছে !!!এ বড়ো কঠিন সময় ।..নিজেকে ঠিক রাখা !!!এর থেকে মুক্ত থাকা !!!