সবার ওপরে মানুষ
মানুষের কোন অতিলৌকিক প্রতিপালক নেই। রক্ষাকারী নেই।মনে রাখা ভালো, এই করাল করোনাকালে সব ধর্মের উপাসনাগৃহেই তালা ঝুলছিল !
খোলা ছিল কেবল হাসপাতাল !
এই বিপদের দিনে পাশে পেয়েছি কোনো ধর্মগুরুকে নয়, রক্ষাকর্তা হিসেবে আমাদের সঙ্গে ছিলেন আছেন কেবল সাদা পোষাক পরা চিকিৎসক আর চিকিৎসকর্মীদেরই !
অতিমারী থেকে বাঁচানোর ভ্যাকসিন আসছে গবেষণাগার থেকে, ধর্মস্থান থেকে নয় !
ভ্যাটিকান ছিল জনশূন্য !
মক্কা-মদিনার তীর্থস্থানে পড়েছিল তালা !
বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো সিদ্ধিবিনায়কের দরজা !
সভ্যতার এমন সঙ্কটকালে কোথায় ছিলেন স্বয়ং সঙ্কটমোচন ?
আল্লা ?
গড ?
এই অভূতপূর্ব, ঘনায়মান মহাবিপর্যয়ে কোন ধর্ম মানুষকে দিয়েছিলো নির্ভরতা, আশ্রয়, নিরাপত্তা ?
না ! কোনো মন্দির, গির্জা, মসজিদ থেকে সুখবর আসে নি ।
কোন পুরোহিত, মোল্লা, ফাদার, গুরুজী, বাবাজী মানবসভ্যতার ত্রাতা হয়ে দাঁড়ান নি ।
প্রতিষেধক এসেছে বিজ্ঞানের গবেষণাগার থেকে।
গত ১০ মাস সারা পৃথিবী র চোখ ছিল টিভির পর্দায় চোখ, রেডিও সম্প্রচারে, কান, সংবাদপত্রে, আন্তর্জালে প্রাণমন সমর্পিত সমগ্র মানবজাতি।
কোনো ধর্মগুরুর বাণী বা রাষ্ট্রনেতার বক্তৃতা শোনার জন্য নয় !
চিকিৎসকের পরামর্শ শোনার জন্য !
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উপদেশ অনুধাবন করার জন্য !
ভাইরাসের অবাধ যাতায়াত মানুষের কল্পিত পবিত্র সংরক্ষিত জায়গার দম্ভকে চূর্ণ করেছে।
তা সে ঈশ্বর হোক অথবা বিত্ত !
ভেঙ্গে, ধ্বসে, গলে চুরমার হয়ে গিয়েছিলো বিশ্বজোড়া শেয়ার মার্কেট !
ভয়ঙ্কর ভাবে উলঙ্গ হয়ে গিয়েছে যুগযুগ ধরে গড়ে তোলা একটা পেল্লায় মিথ্যা !
প্রমাণ হয়ে যাচ্ছে 'সর্বশক্তিমান' ঈশ্বরের শক্তিহীন অনস্তিত্ব!
সব ধর্মের অসাড়তা আর অপ্রাসঙ্গিকতা !
কখনো কখনো সঙ্কট, দুঃসময় মানুষকে আয়নার সামনে এনে দাঁড় করায়।
বোধ জাগার এই তো সময়!
কী অসহায় সবচেয়ে বুদ্ধিমান প্রজাতিটি !
একটা ভাইরাস গোটা বিশ্বকে দ্রুত একটি পরিবারে বেঁধে ফেলেছে !
কিসের হিন্দু-মুসলিম-ক্রিশ্চান-বৌদ্ধ-কম্যুনিস্ট-রিপাব্লিক্যান-কংগ্রেস-বিজেপি ?
কিসের চাড্ডি-দেশদ্রোহী-ভক্ত-সিকুলার-সাদা-কালো-শিয়া-সুন্নী-দলিত-ব্রাহ্মণ-বাঙালি-গুজরাটি-কোরিয়ান-ইরানি-জাপানি?
কিসের এত কল্পিত ভাগাভাগি ?
অপ্রাসঙ্গিক আজ সমস্ত জাতি-ধর্ম-বর্ণ-বংশ পরিচয় !
যাবতীয় শংসাপত্র!
আমাদের একটাই পরিচয় আমরা মানুষ !
প্রাণী জগতের কর্ডাটা পর্বের, স্তন্যপায়ী শ্রেণীর, প্রাইমেট বর্গের, হোমিনিডি পরিবার আর হোমিনিনি উপপরিবারের, হোমিনিনি গোত্রের, হোমো গণভুক্ত, হোমো স্যাপিয়েন্স প্রজাতি !
আমরা একই ডিএনএ বহন করে চলেছি।
আমাদের মিছে জাত ধর্ম পরিচয় আজ মুখ থুবড়ে পড়েছে।
আজ আর কেউ কারোর শত্রুও নয়।
হাস্যকর আজ যাবতীয় রাজনৈতিক রণহুংকার !
কোরিয়ার অভিজ্ঞতা থেকে শিখে নিচ্ছে জাপান, ইরানের পাশে এসে দাঁড়াচ্ছে ফ্রান্স , আমিরশাহীর পাশে ইসরায়েল, সারা ইউরোপ এককাট্টা !
একটি ভয়াবহ ভাইরাস দ্রুত তার রূপ বদলে আরো ভয়ংকর হয়ে ওঠা বিবর্তনের চাক্ষুষ প্রমাণ আজ মানবজাতির সামনে।
আমাদের কোন অতিলৌকিক প্রতিপালক নেই। রক্ষাকারী নেই।
মানুষের বিপদের দিনে মানুষ তাই নিজেই তার বিধাতা।
এই যুদ্ধে মানুষের বিজয় হবে, ভাইরাসের নয় !
কি লাভ আর একে অন্যেকে মারার জন্য পারমাণবিক বোমা বানিয়ে?
সামান্য একটি ভাইরাস আজ মানবজাতির নিয়তি হয়ে উঠেছে।
কোরোনা যেন যাত্রাপালার বিবেক সেই যে বলছে তোমরা সবাই এক গ্রহবাসী বিনিসুতার মালায় গাঁথা।
সহযাত্রী একই তরণীর !
আমাদের শরীর পিঞ্জিরা যে একই ডিজাইনে গড়া তা কোরোনার আঘাত ছাড়া যেন ভুলতেই বসেছিলাম।
কে কাফের, কে ম্লেচ্ছ আর কে মালাউন আজ?
এই তো বোধ জাগার সময় !
কল্পিত ঈশ্বর মৃত।অপ্রাসঙ্গিক ।
মানুষই তার নিজের ভাগ্য নিয়ন্ত্রক।
সবার ওপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই !