ছোটবেলা থেকেই শুনে এসেছি আমাদের দেশ নাকি স্বাধীন,গণতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, সার্বভৌম একটি রাষ্ট্র ।
তা বড় হবার সময়ে এই সব শব্দ গুলির অর্থ ই কেমন যেন গুলিয়ে যেতে লাগল।
কেউ শেখালেন ইয়ে আজাদি ঝুটা হ্যায়, তো অন্য কেউ বোঝালেন,এর চেয়ে ইংরেজরা নাকি ঢের ভালো ছিল!
স্বাধীনতা ধুয়ে কি জল খাব, ইত্যাদি।
গণতন্ত্র টা যে আদৌ ভালো জিনিস নয়, অশিক্ষিত মানুষ ভোটাধিকার পেলে যে এই রকমই হবে, সেটাও শুনলাম।
আর মিলিটারি রুল যে এইসব জনগন মার্কা
ন্যাকামির চেয়ে অনেক গুণে ভালো সেটা ও শুনলাম স্বতঃসিদ্ধ।
বাকি ছিল ওই ধর্মনিরপেক্ষ কথাটা।
এখন তো দেখছি এর চেয়ে অশালীন কথা আর হয় না।
সেকুলার মানেই চোখ সরু করে,
সিকুলার।
মানেই অসুস্থ।
আমাদের সংবিধান প্রণেতারা, মানে যাঁরা এই শব্দটি আমাদের সংবিধানে লিখে গেছেন, তাঁরাও বোধকরি জড়বুদ্ধি অথবা মানসিক অসুস্থ ছিলেন।
আর আদর করে 'সেকু' বলেও ডাকা হয় সেকুলার দের। পুরো সংবিধানটাই সেকু কি না কে জানে!
ধর্মনিরপেক্ষ শুধু বললে হয় না, চিবিয়ে চিবিয়ে বলতে হবে, ধর্মনিরপেক্ষতার ধ্বজাধারী!
(যদিও আমি কখনো ধর্মনিরপেক্ষতার ধ্বজা দেখি নি। তার কি রং জানি না। )
আর সেকুর সাথে অবিচ্ছেদ্য একটি কথা মাকু!
মানে মার্কসবাদী। মানে কম্যুনিস্ট । তারা নাকি গণতন্ত্র মানে না!
কিন্তু তারাই নাকি আবার সেকু, মানে সেকুলার।
মানে ধর্মনিরপেক্ষ!
কি গেরো!
আর যাঁরা ভয়ংকর দেশভক্ত, সেনাভক্ত, সেনা শাসনের পক্ষপাতী, তাঁরাই নাকি গণতন্ত্রের প্রকৃত পুজারী।
তা হবে। আমি কতটুকুই বা বুঝি।
আমাদের ছোটবেলায় আমরা intolerance
কথাটা সেভাবে শুনি নি।
বিতর্ক সভায় তুমুল দ্বৈরথের পর প্রতিযোগীকে নিজের সাইকেলের রডে বসিয়ে হোস্টেলে ফিরে এসেছি।
এক ভাঁড়ের চা ভাগ করে খেয়েছি।
ইদানীং ব্যাপারটা অন্যরকম।
একটা উন্মাদ মেরুকরণ।
হয় দেশভক্ত নয় দেশদ্রোহী , হয় নমো নয় রাগা, হয় তিনু নয় নাকু, হয় মাকু নয় চাড্ডি!
চ্যানেলে চ্যানেলে চিৎকৃত চর্বিত চর্বনে, লক্ষ লক্ষ টন নিউজপ্রিন্টে ছাপা বিকৃত বিসম্বাদে আমাদের ভুলে যেতে বাধ্য করা হয় যে নিষ্প্রাণ, হিমশীতল
দুই মেরুর অবস্থানের মাঝেই সবুজে,নীল, লালে, গৈরিকে, আসমানী রঙে ঝলমলে প্রাণবন্ত একটা গোটা গ্রহ!
মানুষের পৃথিবী।
এই শ্বাসরোধী অসহিষ্ণুতার মাঝে একটা প্রশ্ন ইদানীং ভারি বিব্রত করে
দলহীন, ধর্মনিরপেক্ষ(কিন্তু ধ্বজাহীন), নাস্তিক, পরমতসহিষ্ণু, গণতন্ত্রে বিশ্বাসী দেশবাসীর মতপ্রকাশের স্বাধীনতা আছে তো?
দ্বিমত হওয়ার?
সংবিধান যেমন রাষ্ট্রকে সার্বভৌমত্ব দিয়েছে, তেমনি নাগরিককেও তো দিয়েছে, ব্যক্তিস্বাধীনতা।
সেটা গুলিয়ে দেওয়া হচ্ছে না তো!
আমার রাজা ভালো,
তোমার রাজা খারাপ,
আমার দল শ্রেষ্ঠ,
তোমার দল নিকৃষ্ট,
আমার ধর্ম সেরা,
তোমার ধর্ম হেরো,
আমার বস বেস্ট,
তোমার বস ওঁচা,
এই ধরণের মাই ড্যাডি স্ট্রংগেস্ট মার্কা বাক্যবিলাস থেকে একটু উত্তরণ হলে ভালো হতো না ?
৭০ বছর হয়ে গেলো তো !