"আমি বাঙালী হচ্ছি"
না রে বাবা না, এ কমলকুমারের গদ্য নয় - "ইহা হয় এক ঘোড়া", সেরকম কিছু নয়। তাহলে তো সাহিত্যবাজারে হুলুস্থুলু পড়ে যেতো। এটা নেহাৎই উত্তর ভারতের প্রবাসী বা দো আঁশলা বাঙালীর বাক্যগঠন। নিতান্ত খিল্লিযোগ্য।
তা দেখুন প্রথমেই প্রশ্ন উঠবে বাঙালীটা কে? মানে কোনো মাপযন্ত্র আছে?
কী ভাবে ডিফাইন করবেন, বলুন তো? ভূগোল দিয়ে তো আর সম্ভব নয়। সবাই ছড়িয়ে গেছে - বোস্টন থেকে ব্যাংগালুরু - সব খানে। । কর্মসূত্রে প্রবাসী বাঙালী তো সেই কবের থেকেই আছে, আর ৭০'র দশকের পর ঝাঁকে ঝাঁকে ভারতীয়রা বিদেশে যেতে লাগলেন। অবশ্যই বাঙালীরাও। আর ৯০ দশক থেকে শুরু হলো পশ্চিম বংগ থেকে দল বেঁধে প্রবাস যাত্রা।আইটির রমরমার ফলে আরো হলো। তো সেই প্রথম দিকে অভিবাসীদের দ্বিতীয় এমন কি তৃতীয় প্রজন্মও তো বড় হয়ে গেলো, বাংলার বাইরে। শাকান্ন খেয়েও স্বদেশে থেকে কেই বা সুখী?
কে যে কোথায় জন্মাচ্ছে, তার পরে কোথায় পড়াশুনা, চাকরীতে কোথায়, কাকে যে বিয়ে করলো রে বাবা আর কোথায় কোথায় গিয়ে আস্তানা গাড়লো - সব মিলিয়ে এক আদিগন্ত খিচুড়ি। সংজ্ঞা মিলিয়ে খপ করে ধরতে পারবেন? ইমপসিবল।
আমি আমার লাইফের কিছু ঘটনা বলি। জয় মানে জয়রামন ঘোর তামিল ব্রাহ্মণ কিন্তু তিন পুরুষ ধরে হাওড়াবাসী। জিজ্ঞেশ করলে আমাকে বলে ,শুধু বাঙালীই নয়, আমি হচ্ছি খাস ঘটি। আর তোরা তো এই সেদিন উড়ে এসে বসেছিস। বা কলকাতায় আমার সহকর্মী রামচন্দ্রন কী একটা কথা বলায় বাপীদা কটমট করে তাকিয়ে বলেন ,তুই কোথাকার বাঙাল রে ? রামও বুক ফুলিয়ে বলে ,আমি পালঘাটের বাঙাল। আপনি? বাপিদা বিড়বিড় করে ,'ঐ বরিশালের ,কিন্তু ঠাকুদ্দাই তো যুদ্ধের আগে ভাটপাড়ায় এসে .....'। বা প্রদীপ শেঠী। পাঞ্জাবী। বিয়ে করলো তামিলকে। দুই পক্ষই দুই প্রজন্মের কলকাতাবাসী। ছা পোষা ঘরের। পাড়ার বাংলা স্কুলেই পড়া।একে অন্যের মাতৃভাষা এক বিন্দুও বোঝে না, যেটুকু ইংরাজী জানে তাতে কোনোক্রমে আপিসে কাজ চালানো যায়, তবে তার বেশী না। প্রেম ও ঝগড়া তাই দুজনেরই বাংলায় চলে। মধ্য সত্তরে যখন চাকরী করতে ঢুকি তখনো কলকাতায় চীনা প্রচুর। আফিসেও গিজগিজ করে। জানলাম যে বাড়ীতে চীনা ভাষার চল প্রায় উঠে গেছে, নিজেদের মধ্যে বাংলাতেই কথা বলে। এদেরকে কী বলবেন?
চল্লিশ পঞ্চাশ বছর আগে বাঙালী মানে রসগোল্লা,ফুটবল , 'আমি তুমায় বালোবাসি' আর 'চলছে না চলবে না'। সেই স্টিরিওটাইপ কি এখনো আছে?
এটাও প্রায় পঞ্চাশ বছর আগের ঘটনা। খড়গপুর আই আইটিতে গোটা চারেক হস্টেল। একটা হলের হকি টিম আর তৈরী হয় না। ক্রিকেট ফুটবলে দলে দলে পারদর্শী, কিন্তু হকি টিমে এগারোটা ছেলেই নেই। হঠাৎ এক সিনিয়ার দেখে নতুন ক্লাসে এক সর্দারজী ভর্তি হয়েছে। অম্নি সবাই সেথায় হাজির, "চল, আমাদের হকি টিমে নাম লিখাবি"। সে যতো বলে আমি আরে আমি তো দাবা খেলি। হকি স্টিক জীবনে ছুঁয়েও দেখি নি। সিনিয়রদের কী রাগ। তুই পাঞ্জাবি, হকি না খেলে দাবা খেলিস? কুলাংগার। নাঃ, এখন আর এ সব চলে না।
তাইলে? কি ভাবে মাপবেন আদর্শ বাঙালীকে? এ তো যেনো বিশ্বজনীন এক আই পিএল। টিমের নামেই শুধু কলকাতা বা চেন্নাই বা অন্য যে কোনো শহর। প্লেয়ার লিস্টে একেবারে ঘ্যাঁট চচ্চরীর ডালনা। তাতে নামের সাথে কোনো মিলই পাবেন না। মানুষেরাও সেরকম হয়ে যাচ্ছে। খপ করে ধরে একটা বাক্সে ফেলে লেবেল সেঁটে দেওয়ার কোনো সীনই নেই।
তবে রাগ অভিমান তো হয়ই। এদানী দেখছি সোস্যাল মিডিয়া উপছে উঠছে উত্তর ভারতের সামাজিক সাংস্কৃতিক আধিপত্য নিয়ে। কেনো হয় রামনবমী? কিসের জন্য হনুমান চালিসা ? আমাদের নিজস্ব ঘরোয়া কুসংস্কার কী কম পড়িয়াছে? ভাই দুজে? কড়েয়া চৌথ? ধনতেরাস ? এ সব কী হচ্ছে? অ্যাঁ?
কিন্তু কখন যে অসাড়ে সাহেবী প্রথা ঢুকে গেছে এবং আরো এসেই যাচ্ছে - সেদিকে কিন্তু কোনোই খেয়াল নেই। ক্রীসমাসে কেক খাই, জন্মদিনে কেকের উপর মোমবাত্তি জ্বালিয়ে 'হ্যাপি বাড্ডে' গান গাওয়া হয়। ৩১শে ডিসেম্বরের মাঝরাতে সে কী মা ভক্তি সে কী মা হর্ষ। জাপটা জাপটির একশেষ। যেনো একটা বিরাট কিছু কম্ম সারা হলো।
বুঝি না বুঝি না করে মিনমিন করে ঢুকে পড়ে জমিয়ে বসেছে ভ্যালেন্টাইন ডে। কচি কাচাদের কথা বাদ্দিন, বুড়ো হাবড়ারাও সেই তিথি মেনে কবেকার নাম ভুলে যাওয়া হাবসোল নিয়ে বিশ্রী রকমের ঘ্যানঘ্যানে পদ্দ লিখছে। ঢং। আরো দেখছি, বাড়ীতে বাচ্চা কাচ্চা থাকলে হুলিয়ে চলছে হ্যালোউইন। খবর পেয়েছি, কয়েকটি বাড়ীতে সাড়ম্বরে থ্যাংক্স গিভিংও চালু হয়েছে। তবে এই সবে অতো গা চিড়বিড়ায় না। সাহেবরা একে তো সাক্ষাত সাহেব তায় ফরসা। তাদের এট্টু আট্টু নকল করলে দোষটা কীসের বাপু?
বাংলা কথার মাঝে "কেনো কি" কথাটা কেনো ঢুকেছে? সেই নিয়ে সে কী ফোঁসফাঁস আর ঠোঁট ফুলানো। আর এঁয়াদেরকেই বলুন তো আড্ডা দিতে, তক্কো করতে বা বক্তৃতা দিতে? ইংরেজী শব্দ ছাড়া ক' লাইন বলতে পারবেন?
কোথায় চলে গেলো পাড়ার যতো পাতানো মাসী পিসী কাকু জেঠুর দল। এখন তো এক নির্বিক্ল্প আন্টি আর আন্কেলের যুগ চলে এলো। হায়, হায়, একদিন কি তাহলে দাদা ডাকটাও উঠে যাবে বাঙালীর গলা থেকে? মা গো।
মনে হয় সাহেবেদের হনুকরনের মধ্যে একটা আহ্লাদী মোসাহেবী ভাব থাকে। আফটার অল, ওঁয়ারা সাহেব। তাবলে উড়ে,মেড়ো,খোট্টা ? পাঁইয়াদের কাছে গান শিখবো না তেঁতুলদের কাছে কবিতা? আমরা না বাঙালী? এক হাতে ছাপ্পান্নো ইঞ্চি মাসকুল্যার পাণ্ডিত্য তো অন্য হাতে ক্ষুরধার রসবোধ। তবে ?
আর ভাষা? সেও তো একটাই গোল্ড স্ট্যান্ডার্ড কিছু নয়। কোনোদিনই ছিলো না । ভানু ব্যানার্জী বাঙাল ভাষায় কথা বলতেন - আর সিনেমা হলে হুল্লোর পড়ে যেতো। এখন পোঁদ পোধান আমাদের খোরাক যোগান। শুধুই কি এ পাড় বাংলা ও পাড় বাংলা? জেলা থেকে জেলায় পাল্টে যায় ডায়ালেক্ট। রাজবংশী কি বাংলা ? বাকীদের কাছে প্রায় দুর্বোধ্য চট্টগ্রামের বাংলা। একই শহরে উত্তরে দক্ষিণে ফারাক থাকে। তফাৎ থাকে ট্যাঁকের জন্যেও। সবকটাকেই একই থলিতে পুরলে আবার সমস্যা হবে না ?
আমাদের ছেলেবলায় যখন দূর থেকে দেখতাম দুটি ছেলে আসছে তখন কথা না বলেই তাদের শিক্ষা দীক্ষা টের পাওয়ার শ্রেষ্ঠ উপায় ছিলো ছোটো ঢিল ছুঁড়ে মারলেই যে উঃ বলতো সে পাতি বাংলা মিডিয়াম, আর আউচ বললে জানতাম এ তো কোনো সেন্ট মার্কা স্কুলের ছেলে।
৭১' বাংলাদেশ থেকে প্রচুর ছেলে পিলে এসেছিলো এপাড় বাংলায়। একটা বড় গ্রুপের সাথে আলাপ হয়েছিলো। নাম বলতেই সহাস্যে ঝুঁকে পড়ে হ্যান্ড শেক করে জিগালেন 'আপনি কেমন আছেন'? আমি তার আন্তরিকতায় মুগ্ধ হই, বলি পেট কামড়াচ্ছিলো, ভুটভাট, তো এখন ভালো আছি। তার মুখের হাসি মিলিয়ে যায়। ওম্মা, দ্বিতীয় ও তৃতীয়্জনও একই কায়দায় আলাপ করার পর টের পেয়েছিলাম উটি আসলে হাঊ ড্যু উ ড্যুর বাংলা সংস্করণ।
এখন বোধহয় তাও নেই। উদাসীন হাই আওয়াজ ওঠে দু পক্ষেই। নমস্কার আর কে কবে করে?
খাওয়া দাওয়া আর সাজ পোষাকের কথা তো বলাই উচিৎ নয়। কোথার থেকে উঠে এসেছে শেরওয়ানি, লেহেঙ্গা, চুরিদার হ্যান ত্যান। আরে, নাম জানলে তো আরো বলতে পারতাম। সেই আমার চাকরীর প্রথম যুগে এক কেরানীর পোষাক ছিলো একেবারে ছাঁচে ফেলা- ধুতি,তার উপর হাতা গুটানো ফুলশার্ট। বুক পকেটে একটা নোট বুক এবং অবশ্যই কালির দাগ। বগলে ছাতাটা ছিলো সীজনাল। সন্ধ্যা হলে ডালহৌসি থেকে ঐ মানুষের মিছিল আস্তে হেঁটে চলে যেতো শ্যালদায়। সেই মিছিলকে বলতাম কেরানী কারেন্ট। জন অরণ্য সিনেমাতেও এই নিয়ে একটা ঠাট্টা ছিলো। অধিক কি, উত্তমকুমারও এই পোষাকে বাংলার হৃদয় সম্রাট হয়ে গেলেন। আর এখন আবার সব বদলে গেছে। আর ফিলিম স্টারদের তো ক্থাই নেই। বড় সাহেবও পারতপক্ষে স্যুট বুট পরে না, কেরানীরাও সবার মতন শার্ট প্যান্টেই অভ্যস্ত। এই রকমই হবার কথা।
আরে ধুর। বয়স হলে এই হয়েছে মুশকিল। প্রবন্ধ লিখতে বসলেও ঠিক একটা নস্টালজিয়া এসে পড়ে। যত্তো সব আল ফাল গপ্পো গুজব। যুক্তি, তথ্য, কোটেশন, লিংক, মোটাসোটা বইএর লেখক সব সাহেব মেমের নাম... এইসব কোথায়?
মোটকথা সবাই খতরে মে হ্যাঁয়। হিন্দুস্তানে হিন্দুরা। আবার বিশ্বজুড়েই তো শুনতেই পাচ্ছেন ইসলাম বিপন্ন। ওদিকে দেখুন নিজভূমে সাদা আমেরিকানরা , ইমিগ্রান্টদের ঠ্যালায়,কেঁদে টেঁদে ট্রাম্পকে ভোট দিয়ে অস্থির। কাশ্মীরেও ব্যবস্থা হচ্ছে লাখ খানেক লোককে সেখানে "বসানো"র। ঐ প্যালেস্টাইনের মতন। অসমে বিপন্ন অহমিয়ারা - বাঙালী আলি কুলিদের চাপে।। বোড়োরা। ত্রিপুরায় উপজাতিরা। মিজো এবং কুকিরা। নাগারা। উত্তরবংগে রাজবংশীরা, আর গোর্খারা। রাঢ়্ভূমিতে সাঁওতালেরা।
ওহ, কী ভাবছেন, সাউথে ব্যাপারটা অন্য? না, কর্ণাটকে ব্যাপক ক্ষোভ তাদের রুটি এবং রুচি মানে চাকরী আর সংস্কৃতিতে থাবা বসাচ্ছে তামিলেরা। প্রায় সিভিল ওয়ারে লাগে আর কি। অন্ধ্র প্রদেশকে তো দুই টুকরো করতে হলোই।
কে নেই বলুন তো এই আইডেনটিটি ক্রাইসিসে?
প্রবাসে বা বিদেশে বড়ো হওয়া বাঙালীদের দ্বিতীয় প্রজন্মকে নিয়ে খামোখাই - ও কেনো লীলা মজুমদার ছেড়ে হ্যারী পটার পড়ে - বলে রাগারাগি করলে চলবে? দুই প্রজন্ম ও তার আগে যখন কলকাতার রমরমা , হাজারে হাজারে ভিন প্রদেশীরা কলকাতায় এসে চাকরী করে এবং বাড়ী কিনে স্থায়ী থাকতে শুরু করেছিলো তখন তাদের নতুন প্রজন্ম হুলিয়ে বর্ন এগেইন বেঙ্গলি হয়ে গেছিলো। আমরা যারা জন্মসূত্রে বাঙালি - তাঁদের খুব গর্বই ছিলো। কলকাতা সেই যাদুগরীদের দ্বীপ, এইখানে একবার আসলে আর রক্ষা নেই, সাড়ে বা অসাড়ে, ঠিক বাঙালীআনা ঢুকে যাবে মজ্জায় মজ্জায়।এমন কি হেঁসেলেও ঢুকে যাবে বাংলা রান্না।
আর আজকের পশ্চিমবংগের কেসটাতো খুবই ক্রিটিকাল। ভেন্টিলেটরে চলছে। প্রচণ্ড ভাবে কলকাতা নির্ভর আমাদের সাধের পচ্চিম বংগ দুই প্রজন্ম ধরে গড়াতে গড়াতে গড়াতে গড়াতে, একটি ওল্ড এজ হোম হয়ে দাঁড়িয়েছে। যারাই পেরেছে পালিয়েছে। যারা রয়ে গেছে তাদের পরের প্রজন্মও ওখানেই টিঁকে থাকবে ভাবা কঠিন।
এখন হে কলকাতা, তোমার দিন গিয়াছে। অন্য প্রদেশ থেকে আর সেই দলে দলে মানুষেরা আসে না চাকরী,ব্যব্সা বা গান বাজনা বা আর কোনোই কারণে। আর স্থানীয়রাও বাধ্য হয়ে আস্তানা খোঁজে হেথা নয় হেথা নয়, অন্য কোনোখানে।
তা এরকম ভাঙাচোরা নৌকায় আর নিজেদের সত্তা নিয়ে কতোদিন হাল টানবেন?
বাঙালী ও তাদের আ মরি বাংলা ভাষার ভরসা এবং একমাত্র ভরসা হচ্ছে বাংলাদেশ। ঐ ভাষা ভিত্তিক দেশ যতোদিন থাকবে, বাংলাও থাকবে। আর ভরসা ইলেকট্রনিক মিডিয়া। বাংলা ভাষার শেষ ফ্রন্টিয়ার। ছত্রখান ভারতীয় বাঙালীর ভাষা নিয়ে টিঁকে থাকার শেষ আশ্রয়।দুই বাংলাকে মিলিয়ে দেওয়ার এক আশ্চর্য্য কল।
টের পাচ্ছেন গুরুচন্ডালীও কেমন বাঙালাভাষীদের একটা ইসে মানে সামাজিক সংঘটন হয়ে উঠেছে ?
এস উসুয়াল অসাধারণ , টিপিকাল ডিডি দা।
"* ডিডির বানানবিধি অপরিবর্তিত"
অনবদ্য!
প্রবাসী বিশেষ করে উত্তর ভারতীয় প্রবাসী বাঙালি সংস্কৃতির সঙ্গে ছোটবেলায় তো সেরকম যোগাযোগ ছিল না, প্রথম বার কারুর এক বিয়েতে আমার মায়ের এক দেরাদুন প্রবাসী দিদি আর তাঁর ছেলেমেয়েরা এসেছে । আমরা গল্প করছিলাম, ভাঙা ভাঙা বাংলায় ওরাও গল্প করছিলো, সে এক রকম চলছিল, এমন সময় ঘরে আমাদের এক মামা এলেন, তাঁকে দেখিয়ে আমাকে মাসতুতো ভাই বলে কি , "উনি আমাদের মামা হচ্ছেন"; আমরা অন্য ভাইবোনেরা অবাক হয়ে বললাম, "হচ্ছেন কি রে, হয়ে গেছেন বল" । সে ধরুন আজ থেকে কিছু না হলেও বছর চল্লিশ আগের কথা । আজকাল কলকাতায় গেলে দেখি ঐরকম ভাঙা বাংলা হিন্দি মিশিয়ে বহু নির্ভেজাল বাঙালি বলে যাদের জানতাম তারাও ঐরকম করে কথা বলে ।
আমার এক শ্যালক, ভদ্রলোক দিল্লিতে থাকেন, আদতে কলকাতার শ্যামবাজারের আদি বনেদি পরিবারের অবতংস, তিনি নাকি কলকাতায় তাদের পারিবারিক পুজোয় আসবেন, কলকাতার তাঁদের শরিকি ঘর বন্ধ থাকে, কাকাকে বলছেন ওই ঘর খুলে একটু পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে দেয়ার জন্যে । তিনি নাকি তাঁর কাকাকে বলেছিলেন, "আমার কামরা টা একটু সাফ করে রেখো তো ", শুনে কাকাবাবু অগ্নিশর্মা, বললেন, "তুই যায় হারামজাদা, দেখাচ্ছি মজা, কামরা আবার কি?" নিজের কানে শোনা বছর পনেরো আগে ।
এই জিনিসটা জাস্ট একটা পজিশনের ব্যাপার। "এটা আমাদের স্কুল হচ্ছে", আরে হচ্ছে কী, এ তো রীতিমতন হয়ে গ্যাছে। অথচ দেখুন পরে না বসে যদি আগে বসতো, "এটা হচ্ছে আমাদের স্কুল" তাহলে আর কোনো ঝামেলাই থাকতো না! ঃ-)
সেটাই । মনে হয় হিন্দির আক্ষরিক বাংলা অনুবাদ করতে গিয়ে অমন হয়ে গেছে । কে জানে ।
সেটাই। বাংলায় আমরা যে হচ্ছে জিনিসটা ব্যবহার করিনা, তা তো নয়। "ইনি হচ্ছেন আমাদের মামা", এইটা শুনলে কি কোনো বাঙালি অবাক হবে?
দারুণ interesting , এই যে প্রেসেন্ট পার্টিসিপল আর প্রেসেন্ট কন্টিনিউয়াস টেনসের সূক্ষ্ম তারতম্য শুধু শব্দটির অবস্থানের জন্যে হলো, দেখবার মতন ।
দুর্দান্ত ডিডি দা!
হা হা হা হা
এই লেখাটা পোষালো না। জাস্ট কিছুই হয়নি। ডিডিদার স্ট্যান্ডার্ডে তো নয়ই।
খুব মজা আসল। পুজার দিনে আমাদের পাড়ায় বড় ধামাকাদার হাঙ্গামা আছে - উখানে পড়া যাবে?
বেড়ে লিখেছেন তো ! উঃ বলব, নাকি আউচ !
কোনো নতুন কথাই তো পাওয়া গেল না, এমনকি উদাহরণগুলো পর্যন্ত বস্তাপচা।
কলকাতার বাঙালীদের মধ্যেও ভাষার যে অবক্ষয় দেখা যাচ্ছে , তা দুর্ভাগ্যজনক। বিখ্যাত নাট্যব্যক্তিত্বকে টিভির পর্দায় বলতে শুনেছি ”কান খুলে শুনে নাও আমার থেকে খারাপ আর কেউ হবে না।”
মধ্যবয়সী ,বাংলা মাধ্যমে পড়া ,অ-প্রবাসী বাঙালীর আত্মসমীক্ষার আশু প্রয়োজন ।
পড়তে খুব ভালো লাগলো, গতি ও রস অনবদ্য কিন্তু নতুন কোনো পয়েন্ট বা নতুন কোনো দিক থেকে বিষয় টির ওপর আলোকপাত করলে আরো ভালো লাগত
ডিডির প্রকৃত নাম হয়ত গুরুচণ্ডা৯ কার্টলের লোকেরা জানেন । আমি চাকুরিসূত্রে প্রায় সারা ভারতের গ্রামগঞ্জ চষে বেড়িয়েছি । দেশভাগের সময়ে যে বাঙালিরা এসেছিলেন আর বাংলার বাইরে ঘরজমি দেয়া হয়েছে, বলা বাহুল্য যে সবাই নিম্নবর্ণের, তাঁদের জীবনের সঙ্গে পরিচিত হয়েছি । অনেক জায়গায় স্ত্রীকেও নিয়ে যেতুম তাদের বাড়ির মহিলাদের সঙ্গে কথা বলতে আর রান্নাঘরের হাল জানতে । হিমালয়ের তরাইতে, মোতিহারিতে, মধ্যপ্রদেশে, ওড়িষায়, মহারাষ্ট্রে যাঁদের জমিজমা দেয়া হয়েছিল তাঁদের জীবনে ও ভাষায় বিপুল পরিবর্তন ঘটে গেছে । তাঁদের ছেলে-মেয়েরা স্হানীয় স্কুলে পড়ে, সেই রাজ্যের ভাষায় খিচুড়ি কথা বলে, এমনকি এই ব্যাপারটা পরের প্রজন্মে পৌঁছে প্রবেশ করে গেছে পারিবারিক কথাবার্তায় । তাদের জীবন থেকে বাংলা ভাষা হারিয়ে গেছে । পশ্চিমবাংলায় তাদের কেউই নেই । তারা কখনও ফিরবে বলে মনে হয় না, যেমন আন্দামান থেকে ভুলিয়ে-ভালিয়ে কিছু বাঙালিকে ফেরত আনা হয়েছিল । ব্যাপারটা ঠাট্টা-ইয়ার্কির নয় । ব্যাপারটা, যা আমার স্ত্রীর ক্ষেত্রে ঘটেছিল, কেঁদে ফেলার ।
এছাড়া আরেকটা কথা বলি । রবীন্দ্র গুহ অনেককাল মধ্যপ্রদেশ আর গুরগাঁওতে ছিলেন । উনি ঔপন্যাসিক । উনি "ডায়াসপোরিক" বাংলায় উপন্যাস লিখেছেন । মানে, পশ্চিমবাংলার বাইরের বাঙালিরা যেভাবে খিচুড়ি বাংলা বলেন, সেই বুলিতে । কিন্তু ওনার বইগুলো আলোচনা হয় না ।
বাংলা মানেই কলকাতার মধ্যবিত্তের বা বাংলা সিরিয়ালের ভাষা নয় ।
ডিডির লেখা পড়ে আমার দু'পয়সা।.
১
লক্ষ্ণৌয়ের এক আড্ডায় নাবার্ডের অশোকদা ( উনি উত্তরপাড়ার পাশে কোতরং নিবাসী) নতুন পরিচয়ের পর আমায় জিজ্ঞেস করলেন-- আপনি কি 'হচ্ছে বাঙালি'?
--মানে?
--ওই যারা বলে 'ইনি আমার স্ত্রী হচ্ছেন,উনি আমার শাসুমা হচ্ছেন, আর আমি উনার দামাদ হচ্ছি'।
২
সালটা ১৯৭৭। এমার্জেন্সি উঠে গিয়ে নির্বাচন হবে। বাজার এলাকায় ইন্দিরা গান্ধীর ডানহাত বিদ্যাচরণ শুক্লা ভোটপ্রচারে বেরিয়ে দুদিকের দোকানের বারান্দায় দাঁড়ানো জনতাকে নমস্কার করত করোতে পদব্রজে চলেছেন।
ছত্তিসগড়ের রায়পুরে এক প্রজন্ম আগে হুগলি থেকে আসা মান্না পরিবারের ছোট মেয়েটিকে আমি গল্পটা বলায় ও জানতে চাইল " বিদ্যাচরণ কি রাস্তায় 'চোলে চোলে ' যাচ্ছিলেন?
মানে বলতে চাইল 'হেঁটে হেঁটে'?
এটা মনে হয় কিছুটা বাঙ্গালী কালচারের মধ্যে। তৃতীয় প্রজন্মের গুজরাটি দক্ষিন আফ্রিকায় তার ঘরানা ধরেই রাখে, তৃতীয় প্রজন্মের বাঙ্গালী? সাধারনতঃ নয়।
একদিকে দেখতে গেলে বাঙ্গালীর এজিলিটি বেশি, হয়ত। অন্যদিকে, বাঙ্গালীর বাঙ্গালী গর্ব তত ডীপ রুটেড নয়, হয়ত।
সত্যি এটা ডিডির লেখা!!! বিশ্বাস হয় না।
ডিডির এই লেখাটা আগের মত জমেনি।
"তৃতীয় প্রজন্মের গুজরাটি দক্ষিন আফ্রিকায় তার ঘরানা ধরেই রাখে, তৃতীয় প্রজন্মের বাঙ্গালী? সাধারনতঃ নয়। "
যারা বাধ্য হয়ে দেশান্তরী হয়েছেন তাদের কথা আলাদা। তাদের হয়তো কোনো চয়েস ছিলোনা . কিন্তু স্বেচ্ছায় ইমিগ্র্যান্ট হয়ে যারা অন্য দেশে আসেন , সেখানে লোকাল কালচার আর আইনকানুন এর প্রতি যদি কোনো রেসপেক্ট-ই না থাকে , নিজেদের ১০০-% ইনসুলেট করে রাখতে চান সবকিছু থেকে , তাহলে এসব লোকের বাইরে না আসাই ভালো। এধরণের লোকেদের জন্যেই এভারেজ ইন্ডিয়ান দের বদনাম হয় যে তারা সোসাইটিতে এস্সিমিলেট করেনা একদম।
ঘরানা ধরে রাখা মানে যদি নিজেদের সমাজের চূড়ান্ত রক্ষণশীলতা , জাতপাত এর নোংরামো, ছেলে মেয়েদের জোর করে নিজের জাতেই বিয়ে দেওয়া, পণপ্রথা ইত্যাদি সব চালানো হয় , তাহলে বাঙালিরা বেশ ভালো কাজ করেছে বলতে হবে।
লেখাটা আমারো পোষালো না, কিন্তু শেষটা খুবই ঠিক বলে মনে হয়। বাঙালী ও তাদের আ মরি বাংলা ভাষার ভরসা এবং একমাত্র ভরসা হচ্ছে বাংলাদেশ। পশ্চিমবঙ্গেও যে কারো মাথাব্যথা নেই তা নয়, কিন্তু বাচ্চদের পাঠ্যবইগুলো যদি একটু উল্টে দেখেন তাহলে সত্যি বুঝবেন যে দিলীপ ঘোষই আমাদের ভবিষ্যৎ। কি ভাগ্য যে বাংলাদেশ ছিল। যদিও সেখানেও এখন খোদা হাফিজের থেকে আল্লা হাফিজ বেশি চলে শুনেছি, ঠিক জানি না।
মনে পড়ল সেই একটা মেয়ে বলেছিল - মাকে ভেজে দিয়েছি।
আমার তো লেখটা দিব্যি লাগল। মজার ছলে সত্যি কথা।
"তৃতীয় প্রজন্মের গুজরাটি দক্ষিন আফ্রিকায় তার ঘরানা ধরেই রাখে"-
দক্ষিণ আফ্রিকায় ধরে রাখে, ইউরোপ আমেরিকায় ধরে রাখে কি?
Amit:"কিন্তু স্বেচ্ছায় ইমিগ্র্যান্ট হয়ে যারা অন্য দেশে আসেন , সেখানে লোকাল কালচার আর আইনকানুন এর প্রতি যদি কোনো রেসপেক্ট-ই না থাকে , নিজেদের ১০০-% ইনসুলেট করে রাখতে চান সবকিছু থেকে , তাহলে এসব লোকের বাইরে না আসাই ভালো"
একেবারে মনের কথাটা লিখলেন!
স্বার্থমগ্ন যে জন বিমুখ বৃহৎ জগৎ হতে, সে সত্যি ই বাঁচতে জানে না।
বানানবিধি লেখকের, এই আড়ে প্রুফ দেখাও বাদ দিয়ে দিলে মুশকিল তো! স্বত্তা তো ভুল বানান। কোনও বিধিতেই আস্ব না।
আসে না*
খাড়ান ভাইবন্ধু বোনেরা ,পশ্চিম বঙ্গের জন্যে ব্যাপারটা সইত্য -- নানা জাতির উচ্চারণে বাংলা ওখানে প্যাংলা হয়ে গিয়েছে-- কিন্তু যারা বাংলাদেশ নিয়ে আশার পিদিমে ঘি ঢালছেন তারা জেনে রাখুন বাংলা ভাষা এখানেও ,কুছ কুছ চেঞ্জ হয়ে গেছে ,যাচ্ছে । না আরবী ভাষা নয় ,ইংরেজি। আমাদের উচ্চারণে বাংরেজি। আর ঢুকেছে হিন্দি। ক্যায়সে ? অজানা কি ! বিডিতে ঘর ঘর মে হিন্দি সিরিয়াল ভি বহুত পপুলার হ্যায়।
ডর না মাত ! একুশে ফেব্রুয়ারী হ্যায় না।
আমার এ লেখাটি চমৎকার লেগেছে।