এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  আলোচনা  বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

  • রাসায়নিক যুদ্ধাস্ত্র, ফ্রিটজ হেবার ও নাইট্রোজেন

    সুকান্ত ঘোষ লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি | ১৫ মার্চ ২০২০ | ৩৩০৬ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)
  • [পর্ব ১ – নাইট্রোজেন]
    -----------------------------------------

    ১৯১৫ সালের মে মাসের প্রথম দিন – মাত্র কিছুদিন আগেই বার্লিনে ফিরেছেন বেলজিয়ামের যুদ্ধক্ষেত্রের অফিস থেকে। সেই দিন আর উত্তপ্ত তর্ক-বিতর্ক এড়ানো গেল না স্ত্রী ক্লারার সাথে। ক্লারা ছিলেন মনে প্রাণে যুদ্ধবিদ্বেষী – তিনি মেনে নিতে পারছিলেন না ইপ্রিস যুদ্ধপ্রাঙ্গণে জার্মানদের কার্যকলাপ। তার উপর আবার ইপ্রিস-এ ঘটে যাওয়া সেই অভূতপূর্ব ঘটনার পিছনে নাকি সবচেয়ে বড় ‘অবদান’ তাঁর নিজের স্বামীর! ক্লারা নিজে ছিলেন কৃতী রসায়নবিদ এবং গবেষক, ফিজিক্যাল কেমেষ্ট্রিতে ব্রেসলাউ ইউনিভার্সিটি থেকে প্রথম মহিলা হিসাবে ১৯০০ সালে ডক্টরেট লাভ করেছিলেন। কিন্তু সেই সময়ে যা হত আর কি, কেবলমাত্র মহিলা বলে তাঁকে আর বিজ্ঞান গবেষণায় কাজ করে এগিয়ে যেতে দেওয়া হল না। বরং জোর করে স্ত্রী এবং মায়ের ‘কর্তব্যে’ তাঁকে নিয়োজিত হতে বাধ্য করা হল। এর ফলে ক্লারা ব্যক্তিগত জীবনে ইতিমধ্যেই হতাশাগ্রস্ত ছিলেন – সেই হতাশা আরো বেড়ে যায় ইপ্রিস-এর যুদ্ধে রাসায়নিক অস্ত্রের ব্যবহার দেখে। খুব আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন – এবং বিজ্ঞানের এমন অপব্যবহার তাঁকে প্রায় শোকস্তব্ধ করে দিয়েছিল।

    বাড়ি ফেরার পর তাই স্বাভাবিক ভাবেই স্বামীর কাছে জবাবদিহি চাইতে বসলেন। স্বামীও কিছু তর্কের পর মেজাজ হারিয়ে রেগে গেলেন – তর্ক রূপ নিল তিক্ততার। ক্লারা মনে মনে বিশ্বাস করেছিলেন যে তিনি যুক্তির দ্বারা স্বামীকে বোঝাতে পারবেন এর ভয়াবহতা এবং ভবিষ্যতে এমন রাসায়নিক অস্ত্র বানাতে তিনি যেন আর উদ্যোগী না হন সেটার প্রতিশ্রুতিও দাবী করবেন। কিন্তু স্বামীকে রাজি করাতে না পেরে এবং তিক্ত তর্কে ব্যর্থ হয়ে সেই দিনই গভীর রাতে প্রবল হতাশা থেকে আত্মহত্যা করলেন ক্লারা – স্বামীর আর্মি পিস্তলটা ব্যবহার করেই!

    এইভাবেই ফ্রিটজ হেবার, বিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কারের জনক – জার্মান জাতির সেই সময়ের জাতীয় বীর, নিজের পারিবারিক জীবনে স্ত্রীর হারিয়ে মূল্য চোকালেন তাঁর কৃতকর্মের। তবে ‘মূল্য চোকালেন’ বললাম বটে – কিন্তু ক্লারা মারা যাবার পরেও হেবারের কাজ কর্ম দেখলে মনে হয় না, যে আদর্শগত কারণে স্ত্রী আত্মহত্যা করেছিলেন, সেই আদর্শ নিয়ে তিনি আদৌ মাথা ঘামিয়ে ছিলেন! আর তাই রাসায়নিক অস্ত্র উদ্ভাবনে আর কাজ না করে স্ত্রীর চাওয়াকে মর্যাদা দেবারও প্রশ্ন ওঠে না!

    হেবার জন্মগ্রহণ করেছিলেন জার্মানির ব্রেসলাউ শহরে ১৮৬৮ সালে। জন্মসূত্রে তিনি ছিলেন হিহুদি কিন্তু ধর্ম পরিবর্তন করে খ্রীষ্টান হয়ে যান তেইশ বছর বয়েসে। ১৯৮৬ থেকে ১৯৯১ সাল পর্যত তিনি কেমেষ্ট্রিতে পড়াশুনা করেন হাইডেলবার্গ ইউনিভার্সিটি, বার্লিন ইউনিভার্সিটি এবং চারলটেন্‌বার্গ টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটিতে। তারপর কিছুদিন বাপের কেমিক্যাল ব্যবসায় কাজ করে জুরিখে যান কেমিক্যাল টেকনোলজি বিভাগে কাজ করতে। এরপর ১৮৯৪ সালে এক অ্যাসিটেন্টশিপ পেয়ে তিনি আসেন কার্লশ্রু ইউনিভার্সিটিতে গবেষণা করতে, ক্রমে এখানে ১৯০৬ সালে তিনি ফিজিক্যাল কেমেষ্ট্রি এবং ইলেকট্রোকেমেষ্ট্রি বিভাগের প্রোফেসর হন। বার্লিন-ডাহলেম ইউনিভার্সিটির ফিজিক্যাল এবং ইলেকট্রোকেমেষ্ট্রি বিভাগের ডাইরেক্টর হয়ে হেবার ১৯১১ সালে যান এবং সেখানে ১৯৩৩ সাল পর্যন্ত কাজ করেন। তারপরে তো দেশ থেকে নাৎসী জনিত ব্যাপারে চলে যাওয়া – এই প্রসঙ্গে পরে আসছি।



    হেবার বাতাসের নাইট্রোজেন থেকে অ্যামোনিয়া যৌগ বানানোর পদ্ধতি আবিষ্কার করেন ১৯০৯ সালে এবং সেই আবিষ্কারের জন্য হেবারকে ১৯১৮ সালের রসায়নবিদ্যার নোবেল প্রাপক ঘোষণা করা হয় (নোবেল দেওয়া হয় ১৯১৯ সালে)। এমনটা বলা হয়ে থাকে যে বিগত ১০০ বছরে মানব ইতিহাসে হেবারের (এবং কার্ল বস্‌) থেকে বড় প্রভাব আর কেউ ফেলতে পারেন নি – আইনষ্টাইন, হিটলার, গান্ধী-ও নন! হেবার কেমেষ্ট্রির অবিষ্মরণীয় এবং চতুর প্রয়োগ করে ল্যাবে নাইট্রোজেন থেকে বানিয়েছিলেন অ্যামোনিয়া। কিন্তু হেবারের এই ল্যাব-সফলতাকে বাণিজ্যিক সফলতায় এবং তার সাথে অ্যামোনিয়া তৈরীতে শিল্প বিপ্লব এনেছিলেন আর এক জার্মান কার্ল বস্‌। বস্‌ তখন ছিলেন বি এ এস এফ (BASF) নামক জার্মান কেমিক্যাল কোম্পানীর এর ইঞ্জিনিয়ার। হেবারের অ্যামোনিয়া রিসার্চের ফান্ডিং তখন আসত BASF কোম্পানী থেকে। ল্যাবরেটরীতে কয়েক গ্রাম অ্যামোনিয়া বানিয়ে হেবার আনন্দে আত্মহারা হয়ে গিয়ে কোম্পানীকে রিপোর্ট করলেন – ভাবলেন যে এবার প্রশংসা, অর্থে ভরে উঠবে তাঁর জীবন। কিন্তু তাঁর সেই আশাতে প্রায় জল ঢেলে দিয়ে কোম্পানীর রিসার্চ ডাইরেক্টর বললেন যে এই ল্যাব স্কেলের অ্যামোনিয়া নিয়ে তাঁরা কি ধুয়ে খাবেন! ইন্ডাষ্ট্রিয়াল ভাবে অ্যামোনিয়া বানাতে না পারলে কিস্যু হবে না – আর তিনি হেবারের কাজকর্মে ইন্ডাষ্ট্রি ব্যাপারটা দেখছেনও না। ভ্যাগিস হেবারের ইউনিভার্সিটির প্রফেসর এবং মেন্টর হাল ছাড়েন নি – তিনি নিজের দায়িত্বে BASF কোম্পানীর সর্বময় কর্তার সাথে মিটিং করে বোঝালেন এই অ্যামোনিয়া রিসার্চের গুরুত্ব। ফলে হেবার একটা চান্স পেলেন – তাঁর ল্যাব ঘুরে দেখতে এলেন কার্ল বস্‌ যাঁর উপর দায়িত্ব ছিল সেটা ঠিক করা যে এই পদ্ধতি আদৌ বাণিজ্যিক ভাবে করা যাবে কি! সব দেখেশুনে কার্ল বস্‌ জানালেন তিনি সম্ভাবনা দেখছেন এই পদ্ধতিতে – এর পরের ব্যাপার তো ইতিহাস। তাই প্রচন্ড উচ্চ চাপ এবং তাপে হাইড্রোজেন এবং বাতাসের নাইট্রোজেন বিক্রিয়া করে অ্যামোনিয়া বানানোর পদ্ধতিকে বলা হয়ে থাকে “হেবার-বস্‌” পদ্ধতি। প্রায় একশো বছরের বেশী হয়ে গেল, এখনো এই পদ্ধতি ব্যবহার করে অ্যামোনিয়া থেকে ৫০ কোটি টন কৃত্রিম সার উৎপাদন করা হয় প্রতি বছর। পৃথিবীর দরকারী শক্তির প্রায় ১% ব্যবহার করা হয় এই কাজে।



    এটা জানা কথা যে হেবার-বস্‌ পদ্ধতি ছাড়া আজকের পৃথিবীতে জনসংখ্যার এই বিস্ফোরণ সম্ভব ছিল না। অনেকে অবশ্য দার্শনিক প্রশ্ন নিক্ষেপ করতে পারেন এই মর্মে যে এতো লোক বেড়ে কি ছাতার মাথা হয়েছে! বরং চারিদিকে সমস্যাই সমস্যা! তবে যে সময়ে হেবার-বস্‌ পদ্ধতি আবিষ্কার হয় তার কিছু আগের গবেষণার ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যাবে কৃত্রিম ভাবে অ্যামোনিয়া-র প্রস্তুতির প্রয়োজনীয়তা কিভাবে অনুভুত হচ্ছিল। পৃথিবীতে প্রাকৃতিক ভাবে পাওয়া নাইট্রোজেন যৌগ যা গাছের সার হিসাবে ব্যবহার হতে পারে তা শেষ হয়ে আসছিল। আর খেতি-বাড়ি না হলে মানুষ খাবে কি! এই খাদ্য সংকট থেকে মুক্তি দিয়েছিল হেবারের বানানো অ্যামোনিয়া। হেবার সে সময় অ্যামোনিয়া প্রথম বানান, সেই সময়ের পৃথিবীর লোক সংখ্যা ছিল প্রায় ১.৬ বিলিয়ন (১৬০ কোটি) – আর এই একশো বছর বাদে সেটা বেড়ে গিয়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৮ বিলিয়ন (৮০০ কোটিতে)। জনসংখ্যার এক্সপোনেনশিয়াল বৃদ্ধি হয়েছিল হেবার-বস পদ্ধতির আবিষ্কারের পর।

    হেবারের কেসটা পুরো ঘাঁটা – এই ভদ্রলোককে আধুনিক সময়ের রাসায়নিক যুদ্ধাস্ত্র-র জনক বললে ভুল বলা হয় না। প্রথম এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ মিলিয়ে হিসেবমত প্রায় ৭ কোটি লোক মারা গিয়েছিল এবং মনে করা হয় এই মৃত্যুর বেশ ভারী রকমের ভাগের উপর হাত আছে হেবারের। হেবারের কেমেষ্ট্রি নিয়ে কাজকর্ম জার্মানীকে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ নিশ্চিত ভাবে আরো অনেকদিন টেনে নিয়ে যেতে সাহায্য করেছিল। জার্মান যুদ্ধ দপ্তরে রাসায়নিক অস্ত্র বানানোর দায়িত্বে ছিলেন হেবার। তবে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ যে জার্মানরা আরো বেশী দিন টেনে যেতে পেরেছিল তার মূলে হেবার উদ্ভাবিত রাসায়নিক অস্ত্র ছিল না বরং তলিয়ে দেখলে তার মূলে ছিল অ্যামোনিয়া যে পদ্ধতি তিনি আবিষ্কার করেছিলেন ১৯০৯ সালে। হেবার-বস্‌ পদ্ধতিতে তৈরী অ্যামোনিয়া থেকে বানানো শুরু হয়েছিল অ্যামোনিয়াম সালফেট যা কিনা ব্যবহার করা হচ্ছিল কৃষিকাজে কৃত্রিম সার হিসাবে। এবং সেই অ্যামোনিয়া দিয়ে বানানো হচ্ছিল নাইট্রিক অ্যাসিড যা আবার নাইট্রোগ্লিসারিন এবং টি এন টি নামক বিস্ফোরক তৈরীর মূল উপাদান। হেবার-বস্‌ পদ্ধতির কৃত্রিম অ্যামোনিয়া জার্মানিকে ওই চিলি দেশ থেকে জলপথ দিয়ে নাইট্রেট আমদানীর প্রয়োজনীয়তা থেকে নিস্তার দিয়েছিল। জার্মানীর চিলিয়ান নাইট্রেটের স্টক ক্রমশঃ শেষ হয়ে আসছিল কারণ ইংরেজরা ততদিনে যুদ্ধজাহাজ দিয়ে আটল্যান্টিক মহাসাগর গিরে ফেলে আমদানীর পথ বন্ধ করে দিয়েছিল। তাই যদি হেবার-বস্‌ পদ্ধতি না আবিষ্কৃত হত তা হলে খাদ্য এবং গোলা-বারুদের অভাবে জার্মানীর খুব শীঘ্র আত্মসমর্পণ ছাড়া রাস্তা ছিল না। এই ভাবেই কৃত্রিম অ্যামোনিয়া বানাবার পদ্ধতির আবিষ্কার করে হেবার জার্মানীর জাতীয় বীর হয়ে উঠেছিলেন সেই সময়।

    এতো গেল প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কথা – এর পরে হিটলারের সময়ে ইহুদী-দের গ্যাস চেম্বারে ঢুকিয়ে মারতে যে গ্যাস ব্যবহার করা হত সেই ‘জাইকলন বি’ (Zyklon B) নামক বিষাক্ত গ্যাস উদ্ভাবনের পিছনেও হেবারের হাত ছিল। তো দেখা যাচ্ছে একধারে মানুষ-কে নতুন জীবনদান কৃষিকাজ ইত্যাদিতে কৃত্রিম সার ব্যবহারের দিগন্ত খুলে দিয়ে – আর অন্যদিকে বিষাক্ত গ্যাস আবিষ্কার করে মানুষ মারতে সাহায্য করা – হেবারের জীবন এই ভাবেই প্যারাডক্সে ভরে উঠেছিল। তিনি প্রায় ডঃ জেকিল এবং মিঃ হাইড হয়ে উঠেছিলেন একই সাথে।
    এবার তাহলে একটু হালকা দেখে নেওয়া যাক অ্যামোনিয়া এত জরুরী কেন কৃষি কাজে বা আরো আরো সোজা করে বলতে গেলে গাছের পুষ্টিতে। নাইট্রোজেন এত গুরুত্বপূর্ণ কারন গাছের ক্লোরোফিলের সেটা এক মূল উপাদান। এই ক্লোরোফিলের সাহায্যেই হয় সালোকসংশ্লেষ – যাতে করে সূর্যের আলো থেকে গাছেরা শর্করা এবং কার্বন ডাই অক্সাইড। এ সব আমরা ছোটবেলায় জীবন বিজ্ঞান ক্লাসে পড়েছি। নাইট্রোজেন আবার অ্যামিনো অ্যাসিড যা কিনা প্রোটিনের গঠনের ভিত্তি ব্লক, তারও এক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এছাড়া নাইট্রোজেন দরকার আছে এটিপি বা ডি এন এ গঠনের জন্যও। আর বেশী ঘাঁটাঘাঁটি করে বলা যায়, নাইট্রোজেন ছাড়া আমরা যাকে ‘জীবন’ বলে জানি সেই জিনিসটার অস্তিত্ত্ব থাকবে না।
    নাইট্রোজেন তাই হল গিয়ে আমাদের জীবনের অদৃশ্য নির্ধারক। নাইট্রোজেন একদিক দিয়ে সর্বব্যাপী, ইনার্ট, এবং দমবন্ধ করে দেওয়া এক গ্যাস – আবার অপর দিকে জীবনদায়ী, যাকে ছাড়া জীবন অচল। অনেকটা হেবারের মতই কেস আর কি! অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষের দিকে রসায়নবিদরা বাতাস কি দিয়ে তৈরী তার খোঁজপত্র লাগাতে গিয়ে নাইট্রোজেন আবিষ্কার করেন। গ্যাস হিসাবে নাইট্রোজেন স্রেফ জায়গা দখল করে থাকে বলে বিজ্ঞানীরা দেখলেন – এ জিনিস অক্সিজেনের মত জ্বলেও না আবার কার্বন-ডাই-অক্সাইডের মতন অন্য জিনিসের সাথে বিক্রিয়াও করে না! জার্মানরা তাই এর নাম দিয়েছিল, ‘স্টিকস্টফ’ – এমন জিনিস যা দমবন্ধ করে দেয়।

    যাই হোক ক্রমশঃ নাইট্রোজেনের জীবনদায়ী দিকটাও আবিষ্কৃত হল – রসায়নবিদরা খুব শীঘ্র বুঝতে পারলেন যে গমের চারাই হোক আর মানুষের বাচ্চা – কোনটাই নাইট্রোজেন ছাড়া বাঁচবে না। নাইট্রোজেন এতই গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণিত হল যে ১৮৪০ সালে বিখ্যাত জার্মান বিজ্ঞানী জাষ্টাস ভন লেইবিগ ঘোষনা দিলেন যে কৃষি-কাজের মূল লক্ষ্যই হল যে মানুষকে নাইট্রোজেন সরাবহার করা!

    এবার ব্যাপার হল গাছ জীবন এবং পুষ্টির অন্য উপাদান গুলি যেমন অক্সিজেন বা হাইড্রোজেন সহজে সংগ্রহ করতে পারলেও নাইট্রোজেন পারে না, তা সে আমাদের বায়ুমন্ডলের ৮০% যতই নাইট্রোজেন ভরে থাক না কেন! এর মূলে আছে নাইট্রোজেন পরমাণুর তিন বিস্তারিত হাত – যে হাতগুলি অন্য পরমাণুর সাথে কেমিক্যাল সংযোগ ঘটাতে পারে। একটা নাইট্রোজেন পরমাণু তিনটি অক্সিজেন পরমাণুর সাথে জোট বেঁধে বানাতে পারে নাইট্রেট, আবার তিনটে হাইড্রোজেনের সাথে জোট বেঁধে বানাতে পারে অ্যামোনিয়া। আবার দুইখানি নাইট্রোজেন পরমাণু নিজেরাও জড়াজড়ি করে অবিশাস্য রকমের মজবুত বন্ধন বানাতে পারে – যাকে ভাঙা খুবই জটিল। এই দ্বি-পারমাণবিক নাইট্রোজেনই আমাদের বায়ুমন্ডলের প্রায় আশি ভাগ দখল করে আছে। এত কাছাকাছি থাকলেও এরা বাস্তবে আমাদের কোনই কাজে লাগে না – নাইট্রোজেন পারমাণুদ্বয় নিজেদের ভিতর জড়াজড়ি করে এত সুখে থাকে যে আর বাকি কে কি করছে তাতে কোনই মাথা ঘামায় না।

    মানে দাঁড়ালো গিয়ে ওই দ্বি-পারমাণবিক নাইট্রোজেনকে আলাদা না করতে পারলে আমাদের কিস্য লাভ নেই – আর তার জন্য চাই প্রচন্ড শক্তি। অনেক সময় আকাশের বিদ্যুত চমকে উৎসারিত শক্তি সেই বন্ড ভেঙে দেয় এবং বৃষ্টির সাথে নাইট্রোজেন অক্সাইড পৃথিবীর বুকে সে গাছ পালা ইত্যাদিকে পুষ্টিদান করে। এই বিদ্যুত চমক ছাড়া আর কেবল একটাই প্রাকৃতিক পদ্ধতি আছে যাতে করে বাতাসের নাইট্রোজেন প্রাণ গঠনে কাজে লাগে। কিছু সীম জাতীয় বিশেষ গাছ, যেমন ছোলা, ক্লোভার ইত্যাদি বাতাসের নাইট্রোজেনকে সংশ্লেষ করতে পারে। এদের শিকড়ে একধরণের ব্যাকটেরিয়া থাকে যারা এই কাজে সাহায্য করে। মজার ব্যাপার হল, বিজ্ঞান না জেনেও চাষীরা শতাব্দীর পর শতাব্দী এই গাছগুলিকে জমির পুষ্টির কাজে বযবহার করে এসেছে। আমাদের ছোটবেলাতেও মাঠে চাষ করে এই গাছ গুলো মাটিতে পুঁতে দাওয়া হত জমির উর্বরতার জন্য।

    কিছু শুধু ছোলা খেলে তো আর মানব সভ্যতা চলবে না – বাকি যা কিছু প্রধান খাদ্য শস্য আছে তাদের সবাইকেই নাইট্রোজেন অন্য কোন জায়গা থেকে সংগ্রহ করতে হয়। কিন্তু বাকি যা কিছু থেকে শস্যেরা নাইট্রোজেন সংগ্রহ করত তা ক্রমশঃ শেষ হয়ে আসে। মানুষের সংখ্যা বাড়ছে, বিশেষত ইউরোপে – বাড়ছে খাদ্যের চাহিদা, আর ওদিকে ব্যবহার্য নাইট্রোজেন ভান্ডার শেষ হয়ে আসছে। মানব সভ্যতা এই ভাবে সংকটের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল।

    এখন যেমন আমি লিখছি বা পড়তে লাগছে ঘটনা প্রবাহ তো এমন ছিল না তখন। কাউকে না কাউকে কৃষিকাজ- নাইট্রোজেন-মানব সভ্যতা এই সব ব্যাপারগুলো একসূত্রে বাঁধতে হত। ঠিক এই কাজটাই ১৮৯৮ সাল থেকে শুরু করলেন উইলিয়াম ক্রুকস্‌ নামে এক আধপাগলা বিজ্ঞানী যিনি ছিলেন “বৃটিশ আস্যোশিয়েশন ফর দি অ্যাডভান্সমেন্ট অব সায়েন্স” এর তখনকার প্রেসিডেন্ট। এই ভদ্রলওকের বাপের প্রচুর পয়সা ছিল, তার পরে থ্যালিয়াম নামক পদার্থ আবিষ্কার করে বেশ নাম করেছিলেন – মোটের উপর নিজের খেয়াল খুশী মত কাজ করতেন, কাউকে তেল দিয়ে চলার মতন দরকার তাঁর হয় নি।

    ১৮৯৮ সালে বৃটিশ অ্যাসোশিয়েশনের বার্ষিক সভাতে সভাপতির ভাষণে তিনি না বললেন নিজের গবেষণার কথা, না বললেন তখনকার হট-টপিক নিয়ে কথা – বরং তুলে ধরলেন এই খাদ্য অপ্রতুলতার ভবিষ্যত সম্ভাবনার কথা। তিনি নিজের মত করে পরিষ্কার জানালেন এমন চললে আর কিছুদিন পরে আমরা খেতে পাব না। প্রতি বিঘা কৃষি জমিকে আরো অনেক অনেক বেশী ফসল উৎপাদন করতে হবে আমাদের মুখে ভাত জোগাতে হলে। কিন্তু কেমন করে?

    ক্রুকস্‌ এর মতে এর উত্তর লুকিয়ে আছে নাইট্রোজেনে। একমাত্র নাইট্রোজেন সারই পারে আরো বেশী ফসল ফলাতে প্রতি বিঘা জমিতে। প্রাকৃতিক ভাবে পাওয়া নাইট্রোজেন সার ক্রমশঃ শেষ হয়ে আসছিল – তাই ক্রুকস্‌ জানালেন মানব সভ্যতা বাঁচাতে বিজ্ঞানীদের অবিলম্বে এগিয়ে আসতে হবে কৃত্রিম ভাবে নাইট্রোজেন সার বানাতে। কিন্তু এটাও তখন জানা ছিল, বলা যত সোজা, কাজ তত সোজা নয় – নাইট্রোজেনের ওই দ্বি-পারমাণবিক বন্ধন ভাঙা সোজা ব্যাপার নয়! ক্রুকস্‌ এর মূল বক্তব্য প্রকাশের ভঙ্গি অবশ্য পুরোপুরি রেসিষ্ট ছিল আজকের দিনে দাঁড়িয়ে দেখতে গেলে। তিনি ‘মানব-সভ্যতা’ নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবার কথা বলেন নি, বলেছিলেন ‘ককেশিয়ান রেস্‌’ মুছে যাবার কথা।

    “The fixation of nitrogen is a question of the not-far-distant future. Unless we can class it among certainties to come, the great Caucasian race will cease to be foremost in the world, and will be squeezed out of existence by races to whom wheaten bread is not the staff of life.”

    ক্রুকস্‌ এর বক্তব্য বিজ্ঞান সমাজ পাগলপনা বা খামখেয়ালী বলে উড়িয়ে দিল না। বরং সবাই নড়ে চড়ে উঠল। কার্লসরুহে বসে ফ্রিটজ হেবারও শুনলেন এই সব। ব্যাপারটা হেবারের মনে বেশী করে রেখাপাত করল কারণ হেবারের নিজের মেন্টর প্রোফেসর কার্ল এঙ্গলার যিনি তখনকার কার্লসরু ইউনিভার্সিটির এক প্রধান ব্যক্তি, তিনি নিজেও ক্রুকস্‌ এর বক্তব্যের সাথে সহমত পোষণ করে অনুরূপ বক্তব্য রাখলেন ইউনিভার্সিটির এক নতুন বিল্ডিং উদ্বোধন করতে গিয়ে।

    তবে মনে রেখাপাত করলেও, অ্যামোনিয়া রিসার্চে হেবারের নিজেকে পুরোপুরি নিয়োজিত করতে তখনো আরো কিছু দেরী।

    [ক্রমশঃ]

    ---------------------------------------------------------------------------------------------------

    [পর্ব ২ – হেবার ও নার্ষ্ট ]

    অ্যামোনিয়া সংশ্লেষণ সম্পর্কিত কাজকর্ম হেবার শুরু করেছিলেন ১৯০৪ সালের গ্রীষ্মের সময় – কিন্তু তার পিছনে কোন পূর্বপরিকল্পনা বা দৃঢপ্রতিজ্ঞা, এই সব ছিল না। বরং সেই কাজ শুরুর মূলে ছিল এক অনুরোধ যা এসেছিল ভিয়েনা শহরের মারগুলিস্‌ ভাতৃদ্বয়ের কাছ থেকে যাঁরা ছিলেন “অষ্ট্রিয়ানস্‌ কেমিক্যাল ওয়ার্ক্স” কোম্পানীর মালিক। এবার ঘটনা হল এই ভাই দুজন হট্‌ করে হেবারের কাছেই এলেন কেন? এমন নয় যে হেবার তখনকার জার্মানীতে সবচেয়ে বড় কেমিষ্ট বা নিদেনপক্ষে বিশাল ফিজিক্যাল কেমিষ্ট হিসাবে পরিচিতি পেয়ে গ্যাছেন! সেই পরিচিতি পেতে আরো কিছু বছর দেরী।

    তলিয়ে দেখতে গেলে ল্যজিক্যাল ব্যাপার ছিল যে বাতাস থেকে অ্যামোনিয়া বানিয়ে পয়সা কামাবো - এমন উদুম সব ভাবনা কোন শিল্পপতির মাথায় এলে তিনি যাবেন উইলহেলম অসোয়াল্ড এর কাছে বা নার্ষ্ট এর কাছে বা আরো বিখ্যাত সব জার্মান কেমিষ্ট-দের কাছে। অসোয়াল্ড সেই সময় লিপজিগ ইউনিভার্সিটিতে – পরে তিনি ১৯০৯ সালে নোবেল পান কেমেষ্ট্রীতে। তবে আমরা যে সময়ের কথা বলছি, তখন অসোয়াল্ড চেষ্টা করে যাচ্ছেন কেমেষ্ট্রী-তে এক নতুন বিভাগের সূত্রপাত করতে। নতুন বিভাগ শুরু করব বলে শুরু করা, সেরকম কিছু নয় – আসলে তিনি এবং তাঁর সমকালীন অনেকে ভাবছিলেন যে কোন যৌগের কেমন গঠন, কত নতুন যৌগ বানানো যায় বা নতুন কোন মৌল পদার্থ তো খুঁজে পাওয়া যায় কিনা – এসব তো অনেক হল। কিন্তু মৌল-পদার্থ গুলি ঠিক কেমন ভাবে – মানে কত জোরে বা আস্তে বিক্রিয়া করে, আদৌ বিক্রিয়া করবে কিনা, সেই বিক্রিয়া সবের সাম্য অবস্থাই বা কেমন – এই সব একটু তলিয়ে দেখলে কেমন হয়! তো সেই বিষয় নিয়ে নাড়া ঘাঁটা করতে করতে এঁরা এমন সব যুগান্তকারী জিনিসপত্র আবিষ্কার বা সূত্র/তথ্য ফরমুলেট করলেন যে সব মিলিয়ে এক নতুন বিভাগই খুলে গেল কেমেষ্ট্রী-তে। আর সেই বিভাগের নাম দেওয়া হল – “ফিজিক্যাল কেমেষ্ট্রী”।

    উইলহেলম অসোয়াল্ডকে মেনে নেওয়া হয় ফিজিক্যাল কেমেষ্ট্রি বিভাগটার এক অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা – অন্য দুজন বিখ্যাত সহ-প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন আরহেনিয়াস এবং ভ্যান হফ্‌। হেবারের অনেক দিনের ইচ্ছা ছিল এই বিষয়টায় গবেষণা করে থিসিস লেখার। বিশেষ করে ইলেক্ট্রোকেমেষ্ট্রী নিয়ে। হেবার আগে তাই অসোয়াল্ড-এর কাছে তিন তিন বার রিসার্চ প্রপোজাল পাঠিয়েছিলেন তাঁর কাছে রিসার্চ করবেন বলে – কিন্তু তিনি অসোয়াল্ড এর কাছ থেকে কিছু উত্তর পেলেন না। কতদিন আর দেরি করবেন হেবার – আরো এদিক সেদিক একটু দেখে টেখে হেবার ১৮৮৭ সালে বার্লিনের ফ্রেডরিখ উইলহেলম ইউনিভার্সিটি (আজকের হামবোল্ট ইউনিভার্সিটি) তে পি এইচ ডি করতে গেলেন এবং ১৮৯১ সালে ডিগ্রীলাভ করলেন। এবং আগের পর্বে যেমন লিখেছি, বাপের বিজনেস ইত্যাদি ভায়া তিনি ল্যান্ড করলেন অ্যাসিটেন্টশিপ পেয়ে কার্লসরুহে ইউনিভার্সিটিতে গবেষণা করতে ১৮৯৪ সালে।
    কার্লসরুহতে কাজ করতে করতে একটু বোর হয়ে গেলেন হেবার – এবং পুরানো প্রেম চেগে ওঠার মত সেই ইলেকট্রোকেমেষ্ট্রির (যা কিনা ফিজিক্যাল কেমেষ্ট্রির এক অঙ্গ বলে ধরে নিতে পারি আমরা) প্রতি ভালোবাসা আবার জেগে উঠল। এবার আর কোথায় আলাদা করে যাবেন শিখতে! তাই নিজে নিজেই বিষয়টার গভীরে প্রবেশ করার চেষ্টা করলেন – সেই সময়ে হেবারের সাথে অন্য কয়জন রিসার্চ অ্যাসিসটেন্ট এবং ছাত্র তাঁকে সাহায্য করল বিষয়টা বুঝতে। এই ইলেকট্রোকেমেষ্ট্রী তখন গরম গরম এক বিষয় ছিল রিসার্চের দিক থেকে দেখতে গেলে কারণ এর থেকেই জন্ম নিয়েছিল আরহেনিয়াসের ডিসোসিয়েশন থিওরী। আবার ওদিকে নার্ষ্ট গটিনজেন ইউনিভার্ষিটিতে তাঁর যুগান্তকারী সব কাজ কর্ম সম্পন্ন করছেন – যার মধ্যে আছে “থার্ড ল অব থার্মোডায়নামিক্স”। জার্মানিতে সে এক যুগ সন্ধিক্ষণ ফিজিক্যাল কেমেষ্ট্রীতে।



    কিন্তু যতই ইন্টারেষ্ট থাক না কেন, ফিজিক্যাল কেমেষ্ট্রি-তে সেই সময় হেবারের পক্ষে জার্মানী-তে পথপ্রদর্শক রূপে আবতীর্ণ হওয়া বেশ চাপের ছিল। কারণ সেই মুহুর্তে অসোয়াল্ড এবং নার্ষ্ট এতই বিখ্যাত ছিলেন সেই বিভাগে যে প্রায় সবাই তাঁদের সাথেই কাজ করতে চাইত। আর তার থেকেও বড় কথা হেবার এই পুরো ফিজিক্যাল কেমেষ্ট্রি জিনিসটা শিখেছিলেন নিজের চেষ্টায় – কারও গাইডেন্সে থেকে নয়।

    প্রচলিত গল্প আছে যে একদিন পাবে বসে সব ছাত্ররা ক্লাসের পরে সন্ধ্যাবেলা গুলতানি করছিল – সেই দিন কি প্রসঙ্গে যেন উত্থাপিত হয়েছে সেই সময়ের জার্মানীর দিকপাল সব ফিজিক্যাল কেমেষ্ট্রী শিক্ষকদের মধ্যে ক্লাসে সব ভালো থেকে ভালো পড়ান। এ বলে ওমুক, তো সে বলে তমুক – সবশেষে হেবারের পালা এলে তিনি বললেন যে এই ব্যাপারে তাঁর কোন মত নেই কারণ তিনি জীবনে কোনদিন ফিজিক্যাল কেমেষ্ট্রীর ক্লাস করেন নি!

    তো যাই হোক, মূল প্রশ্নে ফিরে আসা যাক – ওই মারগুলিস্‌ ভাতৃদ্বয় গেলেন না কেন আসোয়াল্ড এর কাছে? একটা কারণ, কিছুদিন আগে অ্যামোনিয়া সংশ্লেষণের ব্যাপারে অসোয়াল্ড বেশ ভালো রকম ছড়িয়েছেন। ১৯০০ সালে অসোয়াল্ড ঘোষণা করেন যে উচ্চ চাপে এবং তাপে, আয়রন কেটালিষ্টের উপস্থিতিতে হাইড্রোজেন এবং নাইট্রোজেনের বিক্রিয়া ধটিয়ে তিনি অ্যামোনিয়া প্রস্তুত করতে সক্ষম হয়েছেন। অসোয়াল্ড পেটেন্ট ফাইল করলেন এবং সাথে সাথে জানালেন তখনকার বিখ্যাত কেমিক্যাল কোম্পানী Hoechst আর BASF কে এই অ্যামোনিয়া আবিষ্কারের কথা। BASF তো প্রচন্ড আগ্রহ দেখালো সঙ্গেসঙ্গে। অসোয়াল্ডের সাথে নেগোশিয়েশন করে টাকা পয়সার বন্দোবস্ত করল এবং কোম্পানীর নিজের দিক থেকে তারা অসোয়াল্ডের পদ্ধতি তলিয়ে দেখতে নিযুক্ত করল চাব্বিশ বছর বয়েসী এক তরুন ইঞ্জিনিয়ারকে। তো সেই তরুণ ইঞ্জিনিয়ার অসোয়াল্ডের অ্যামোনিয়া তৈরী দেখেশুনে ফাটালেন বোমা – জানালেন অসোয়াল্ড যে অ্যামোনিয়া ল্যাবে বানিয়েছেন তার নাইট্রোজেন বাতাসের নাইট্রোজেন থেকে আসে নি, এসেছে আয়রন ক্যাটালিষ্টের ইমপিউরিটি থেকে। সেই ছোকরার সিদ্ধান্ত শুনে আসোয়াল্ড ক্ষেপে লাল! BASF কে তুড়ন্ত লিখে পাঠালেন, “যদি তোমরা এত গুরুত্বপূর্ণ কাজের ভার দাও একজন নবাগত, অনঅভিজ্ঞ তরুণের কেমিষ্টের হাতে যে কিছুই জানে না, তাহলে স্বাভাবিক ভাবেই তার পর্যবেক্ষণ থেকেও কিছুই বেরুবে না!” কিন্তু অসোয়াল্ড ক্রমে বুঝতে পারলেন যে সেই তরুণ ইঞ্জিনিয়ারই ঠিক – তিনি বাতাসের নাইট্রোজেন ব্যবহার করে অ্যামোনিয়া তৈরী করেন নি। অসোয়াল্ড পেটেন্ট অ্যাপ্লিকেশন প্রত্যাহার করে নিলেন প্রচন্ড লজ্জিত হয়ে এবং অ্যামোনিয়ে রিসার্চের ইতি টানলেন সেখানেই।

    BASF কোম্পানীতে কাজ করা সেই তরুন ইঞ্জিনিয়ার কে অনুমান করা যাচ্ছে? সেদিনের সেই তরুণ ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন কার্ল বশ্‌। যিনি কিনা পরে হেবারের সাথে কাজ করে অ্যামোনিয়া সংশ্লেষকে বাণিজ্যিক ভাবে সাফল্যমন্ডিত করেন – ফলস্বরূপ ১৯৩১ সালে প্রথম কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে নোবেল প্রাইজ পান কেমেষ্ট্রিতে।
    আসোয়াল্ডের কেসটা না হয় বোঝা গেল। কিন্তু আর তো বিজ্ঞানী ছিল মার্কেটে, সবাইকে ছেড়ে মারগুলিস্‌ ভাতৃদ্বয় হেবারের কাছেই এলেন কেন? এই প্রশ্নের উত্তর সঠিক ভাবে কেউই জানে না, এ এক রহস্যই থেকে গেছে। এটা অনুমান করা হয় যে, হয়তো এর পিছেনে হেবারের বাপ সিগফ্রেড, যার নিজের কেমিক্যাল বিজনেস ছিল, তাঁর হয়ত হাত থেকে থাকবে। সিগফ্রেড ব্যবসার কাজে এদিক সেদিক ঘুরে বেড়াতেন এবং তিনিই হয়ত মারগুলিস্‌ ভাতৃদ্বয়কে হেবারের কথা বলেছিলেন। নিজের বাপের সাথে হেবারের সম্পর্ক খুব মধুর ছিল না – তাই অনেকেই মনে করেন যে প্রথম দুই বার মারগুলিস্‌ ভাতৃদ্বয়ের প্রস্তাব যে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন হেবার তার পিছনে বাপের প্রতি রাগ একটা কারণ হতে পারে। কিন্তু মারগুলিস্‌ ব্রো নাছোড়বান্দা – হেবারকে দেওয়া প্রস্তাব ক্রমশঃ অর্থকারী দিক থেকে লোভনীয় করে তুললেন। ফলতঃ হেবার একসময় ঝেড়েমেরে বললেন, দে তাহলে দেখি কি করা যায়।

    কেবল অসোয়াল্ড নয়, ১৯০১ সাল নাগাদ প্রখ্যাত কেমিষ্ট শ্যাতেলিয়ার-ও চেষ্টা করেছিলেন অ্যামোনিয়া তৈরী করার। কিন্তু আসোয়াল্ডের মত লজ্জায় নয়, অ্যামোনিয়ার খোঁজে শ্যাতেলিয়ার রণে ভঙ্গ দেন প্রাণের ভয়ে। একদিন তাঁর ল্যাবে উচ্চ চাপে যন্ত্রপাতি ফেটে গিয়ে প্রাণ যায় যায় অবস্থা। অ্যামোনিয়ার থেকে নিজের প্রাণ বেশী দামী বলে শ্যাতেলিয়ার ইতি টানলেন। হেবার শ্যাতেলিয়ারের ব্যাপার নিয়ে বেশী মাথা ঘামান নি – কিন্তু অসোয়াল্ডের কাজ সম্পর্কে ভেবেছিলেন এবং ভুল থেকে শেখার ব্যাপারে নজর দিয়েছিলেন।
    সহজ ভাবে বলতে গেলে, ধরে নেওয়া যাক নাইট্রোজেন এবং হাইড্রোজেন নিজেদের মধ্যে বিক্রিয়া করে অ্যামোনিয়ায় পরিণত হবে। এবার ভাবতে বসলেন হেবার যে সত্যি সত্যি এই নাইট্রোজেন আর হাইড্রোজেন নিজেরা জড়াজড়ি করে অ্যামোনিয়া হতে কতটা প্রস্তুত! নাকি নাইট্রোজেন এবং হাইড্রোজেন নিজেরা আলাদা আলাদা ভাবে থাকতেই ভালোবাসবে বেশী তা সে যতই প্রেসার দেওয়া হোক না কেন! ভারতীয় সমাজের অ্যারেজ্ঞ ম্যারেজের মতন কেস – বাড়ির লোকেরা বিয়ে দেবার চেষ্টা করবে ঠিক আছে, কিন্তু পাত্র-পাত্রীর অন্য কোন জায়গায় ভালোবাসা রয়ে থাকলে তো মুশকিল! মন অন্য জায়গায় থেকে থাকলে যতই জোর দাও, জিনিস জোড়া লাগবে কি!

    মানে পাতি কথায় হেবার খুঁজছিলেন অ্যামোনিয়া যে বিক্রিয়ায় বানানো হচ্ছে তার সাম্য অবস্থা। যদি নাইট্রোজেন এবং হাইড্রোজেন মিলে গিয়ে অনেকটা অ্যামোনিয়া বানায় তো ঠিক আছে – উৎসাহব্যঞ্জক ব্যাপার। কিন্তু যদি সেই তৈরী হওয়া অ্যামোনিয়ার পরিমাণ খুব কম হয় তাহলে তারা আবার ভাঙে গিয়ে তুরন্ত নাইট্রোজেনে এবং হাইড্রোজেনে চলে আসবে। এমন ব্যাপার হলে হেবার জানতেন যে তাঁকে দাঁড়ি টানতে হবে সেই গবেষণায় – কারণ মাদার নেচার-কে হারাবার ক্ষমতা তো কারো নেই!
    কিন্তু বলা যতটা সহজ, জিনিস ততো সহজ নয়। সেই সাম্য অবস্থা খুঁজে বের করা বেশ বেশ চাপের ব্যাপার। নাইট্রোজেনের এবং হাইড্রোজেনের পরমাণু কেউ তাদের সঙ্গীকে ছেড়ে অন্যকে ধরতে খুব একটা উৎসুক হয় না। তার মানে কি? তার মানে, ওই পরমাণুদের ইনসেনটিভ দিতে হবে নতুন ভাবে জোর বাঁধার জন্য। আসোয়াল্ডের মতই হেবারও ১০০০ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় আয়রনের উপস্থিতিতে নাইট্রোজেন এবং হাইড্রোজেনের ইক্যুলিব্রিয়াম নিয়ে পরীক্ষা শুরু করলেন প্ল্যাটিনাম পাইপে বিক্রিয়া ঘটিয়ে। এই পরীক্ষায় হেবারের সাথী ছিলেন গ্যাব্রিয়াল ভ্যান ওর্ডট।

    তাঁরা প্রথমে বিশুদ্ধ অ্যামোনিয়া পাঠালেন আয়রন ক্যাটালিষ্টের উপর দিয়ে, বেশ কিছু পরিমাণ অ্যামোনিয়া ভেঙ্গে নাইট্রোজেন এবং হাইড্রোজেন-এ পরিণত হল। যে অ্যামোনিয়া ভাঙলো না, সেটা তাঁরা পৃথক করে নিলেন গ্যাস মিশ্রণ থেকে – এবার সেই বাকি নাইট্রোজেন এবং হাইড্রোজেন তাঁরা পাঠালেন সংলগ্ন দ্বিতীয় পাত্রে যেখানেও উচ্চ তাপমাত্রায় আয়রণ ক্যাটালিষ্ট রাখা ছিল। তাঁরা প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই দেখলেন যে দ্বিতীয় পাত্রে যে অ্যামোনিয়া তৈরী হল তার পরিমান প্রথম পাত্র থেকে নির্গত অপরিবর্তিত অ্যামোনিয়া গ্যাসের সমান।

    এই ভাবে অ্যামোনিয়ার তৈরীর সাম্য অবস্থা নির্ধারিত করলেন হেবার – কিন্তু এত করেও হেবার খুব খুব কম অ্যামোনিয়া বানাতে সক্ষম হলেন – মাত্র ০.০০৫ থেকে ০.০১২৫% এর মধ্যে। আয়রণের বদলে নিকেল ক্যাটালিষ্ট ব্যবহার করে হেবার একই ফল পেলেন – আবার ক্যালসিয়াম এবং ম্যাঙ্গানিজ ক্যাটালিষ্ট ব্যবহার করে দেখলেন যে নাইট্রোজেন এবং হাইড্রোজেন গ্যাস আরো কম তাপমাত্রায় বিক্রিয়া করছে। হেবার আরো দেখলেন যে ৬০০ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রা পেরিয়ে গেলে স্বাভাবিক চাপে কোন ক্যাটালিষ্টই নাইট্রোজেন-হাইড্রোজেন এর মিলন ঘটিয়ে খুব বেশি অ্যামোনিয়া দেবে না। স্বাভাবিক চাপে যদি কোন ক্যাটালিষ্ট-কে কাজ করাতে হয় তাহলে তাপমাত্রা ৬০০ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড এর বেশী হওয়াই যাবে না।

    আমাদের ভারতের আই আই টি বা আই আই এস সি বা আরো তাবৎ বড় বড় গবেষণাগার বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গবেষকদের মত ইন্ডাষ্ট্রী সম্পর্কিত জ্ঞানশূন্য ছিলেন না হেবার। বরং তিনি বুঝতে পেরেছিলেন বাণিজ্যিক ভাবে অ্যামোনিয়া তৈরীতে সাফল্য পেতে হলে সেই জিনিস বানাতে হবে উচ্চ চাপে কিন্তু কম তাপমাত্রায় – যার মানে হচ্ছে আয়রনের পরিবর্তে আরো ভালো কেটালিষ্ট (অনুঘটক) খুঁজে পেতে হবে। সেই সময়ে হেবার কম তাপমাত্রায়-উচ্চ চাপে কাজ করার মতন সফল ক্যাটালিষ্ট আবিষ্কার অসম্ভব ধরে নিয়েছিলেন। তাই সেইখানেই আপাত ইতি। এই সব এক রিপোর্টে লিখে বেশ হতাশ জনক সেই রিপোর্ট হেবার দিলেন মারগুলিস্‌ ভাতৃদ্বয়কে, এবং ১৯০৫ সালে হেবার তাঁর এই পরীক্ষার ফল প্রকাশ করলেন জার্ণালে।

    হেবারের অ্যামোনিয়ার সন্ধানের ইতি সেই পেপার প্রকাশের সাথে সাথেই শেষ হয়ে যেত – কারণ হেবারের বিষয়টা টেনে বড় করার কোন ইচ্ছা ছিল না, তিনি অন্য জিনিস নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন। ব্যাপার এই ভাবেই থেমে রইল তিন বছরের মতন।

    কিন্তু বিধির বিধান খন্ডাবে কে! বিখ্যাত জার্মান কেমিষ্ট ওয়াল্টার নার্ষ্ট এবং হেবারের মধ্যে খিটিমিটি আবার খুলে দিলে প্যান্ডোরার বক্স। ১৯০৭ সালে গেলে গেল ঝামেলা নার্ষ্ট এবং হেবারের মধ্যে। নার্ষ্ট বয়সে মাত্র চার বছরের বড় ছিলেন হেবারের থেকে। কিন্তু যে সময়ের কথা হচ্ছে তখন হেবারের থেকে অনেক বেশী প্রতিষ্ঠিত এবং পরিচিত ছিলেন নার্ষ্ট বিজ্ঞান সমাজে। নার্ষ্ট ছিলেন লিপজিগ ইউনিভার্সিটিতে অসোয়াল্ড এর ছাত্র এবং ১৮৯৪ সালে গটিনজেন ইউনিভার্সিটিতে ফিজিক্যাল কেমেষ্ট্রির প্রথ্ম প্রফেসর নিযুক্ত হন। ততদিনে নার্ষ্ট বেশ কিছু নামকরা জিনিসপত্র আবিষ্কার করে ফেলেছেন – কিন্তু দূর্ভাগ্যবশতঃ সেগুলোর কোনটাই বাণিজ্যিক সফলতার মুখ দেখে নি। উদাহরন স্বরূপ বলা যেতে পারে ইলেক্ট্রিক্যাল পিয়ানো এবং ল্যাম্প। তবে এর থেকেও বেশী নাম ছিল তাঁর হেটারোজিনিয়াস রিয়্যাকশেনের উপর কাজ কর্মের জন্য।



    ১৯০৬ সালে নার্ষ্ট প্রকাশ করেন ‘হিট থিওরেম’ বিষয়ক তাঁর বিখ্যাত কাজ – খুব শিগগিরি যা বিজ্ঞান জগতে ‘থার্ড ল অব থার্মোডায়নামিক্স’ বলে পরিচিত হবে এবং তা এনে দেবে ১৯২০ সালে নার্ষ্ট-কে নোবেল প্রাইজ। হেবারের নোবেল পাবার ঠিক দু বছর পরে। তো ১৯০৭ সালে নার্ষ্ট নিজেকে হেবারের থেকে উঁচুতে ভাবতেন এবং চালে চলনে সেটা প্রকাশও করেছিলেন। তাই সেই অর্থে দেখতে গেলে এই দুই জনের মধ্যে ১৯০৭ সালের প্রতিযোগীতা বেশ অসম-ই ছিল, নার্ষ্ট এগিয়ে ছিলেন অনেকটা। অন্যদিকে হেবার মনে মনে নার্ষ্টকে বেশ হিংসা করতেন।

    ১৯০৬ সালে হেবার এক চিঠি পেলেন নার্ষ্ট এর কাছ থেকে যার সারমর্ম হচ্ছে যে, হেবারের প্রকাশিত অ্যামোনিয়া ইক্যুলিব্রিয়াম সংক্রান্ত ফলাফল নিয়ে নার্ষ্ট এর মনে সন্দেহ রয়েছে কারণ তা নার্ষ্টের সদ্য প্রকাশিত ‘হিট থিওরেম’-এর উপর ভিত্তি করে কষা আঁক পূর্বাভাসের সাথে মিলছে না! নার্ষ্ট এটাও জানালেন হেবার-কে যে তিনি এক ছাত্র নিযুক্ত করেছিলেন হেবারের পরীক্ষা নিজের ল্যাবে পুনরাবৃত্তি করতে – কিন্তু এবার উচ্চ চাপের উপস্থিতিতে। সেই ছাত্রের পরীক্ষা হেবারের থেকে বেশ অনেকটা আলাদা ইক্যুলিব্রিয়াম পয়েন্ট দেখিয়েছে এবং বের হয়েছে কম বিক্রিয়াজাত অ্যামোনিয়া। নার্ষ্ট সেই সব পরীক্ষার ফল পরের বছরের সব চেয়ে বড় কেমেষ্ট্রি কনফারেন্সে প্রকাশ করবেন জানালেন।
    এই চিঠি পড়ে তো হেবার রেগে লাল! নার্ষ্ট কিনা সবার সামনে হেবারের পরীক্ষার ফলাফল নিয়ে কাটাছেঁড়া করবে! এবং কে জানে হয়ত হেবারকে ভুল প্রমাণ করেই দেবে! রাতের ঘুম চলে গেল হেবারের। অ্যামোনিয়া বানানোর যে রিসার্চ তিনি তিন বছর আগে করে রেখেছিলেন, বাক্স প্যাঁটরা নামিয়ে আবার সেই নিয়ে আবার মেতে উঠলেন!
    নার্ষ্ট ব্যাটার মুখে ঝামা ঘষতেই হবে মালটাকে ভুল প্রমাণ করে!

    [ক্রমশঃ]
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • আলোচনা | ১৫ মার্চ ২০২০ | ৩৩০৬ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • avi | 162.158.***.*** | ১৫ মার্চ ২০২০ ২০:৩৭91473
  • বাহ। চলুক এটা।
  • অশনি | 14.***.*** | ১৫ মার্চ ২০২০ ২১:২৯91474
  • টপোটুপাই | ১৫ মার্চ ২০২০ ২১:৫৬91475
  • হ্যাঁ চলুক। খাসা।
  • b | 162.158.***.*** | ১৫ মার্চ ২০২০ ২৩:১৩91476
  • চলুক।
  • রমিত | 162.158.***.*** | ১৫ মার্চ ২০২০ ২৩:৪৫91477
  • অসাধারণ লেখা। চলতে থাকুক।
  • ;-0 | 108.162.***.*** | ১৬ মার্চ ২০২০ ০৬:৩৪91484
  • সাতশো কোটি মানুষের জীবনের কারণ ভার্সেস সাত কোটির মৃত্যুর — লোকটা একশো গুণই ভালো। অঙ্ক কষে বুঝলুম।
  • সে | 162.158.***.*** | ১৬ মার্চ ২০২০ ০৭:৫১91485
  • “ ১৯৮৬ থেকে ১৯৯১ সাল পর্যত তিনি কেমেষ্ট্রিতে পড়াশুনা করেন হাইডেলবার্গ ইউনিভার্সিটি, বার্লিন ইউনিভার্সিটি এবং চারলটেন্‌বার্গ টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটিতে।” এগুলো ১৮৮৬, ১৮৯১ হবে।
  • সে | 162.158.***.*** | ১৬ মার্চ ২০২০ ০৭:৫৩91486
  • কার্লশ্রু টা কার্লসরুহে হবে।
    লেখাটা ব্যাপক হচ্ছে।
  • সে | 162.158.***.*** | ১৬ মার্চ ২০২০ ০৭:৫৬91487
  • কার্ল বশ
  • সে | 162.158.***.*** | ১৬ মার্চ ২০২০ ০৮:০১91488
  • টিএনটি তৈরি কি এঁরই? শিওর?
    আলফ্রেড ও মানফ্রেড দুই নোবেল ভায়ের গল্পও আসুক। ডিনামাইট এর আসল গল্প। বাজারে যেটা তালু আচে সেটা না।
  • সুকি | 172.69.***.*** | ১৬ মার্চ ২০২০ ০৮:১০91489
  • সবাইকে ধন্যবাদ

    প্রচুর বানান ভুল এবং টাইপো আছে, কাল তাড়াতাড়িতে চেক করা হয় নি - ঠিক করে নিচ্ছি পরে

    সে-দি, কাল লেখার সময় সিরিয়াসলি ভাবছিলাম কিছু জার্মান বানান কেমন লিখব সেটা তোমাকে জিজ্ঞেস করব! ভালোই হল লিখে দিলে।
  • সুকি | 162.158.***.*** | ১৬ মার্চ ২০২০ ০৮:১৩91490
  • না না, টি এন টি হেবারের তৈরী নয়। মনে হয় গুছিয়ে লিখতে পারি নি, কি কি কাজে যুদ্ধের সময় নাইট্রোজেন কাজে লাগত সেটা বলতে চেয়েছিলাম
  • সুকি | 172.68.***.*** | ২১ মার্চ ২০২০ ১৬:০৪91645
  • দ্বিতীয় পর্বটা যোগ করে দিলাম।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লড়াকু মতামত দিন