খুব খুব ভাল লাগল। আশা করি, নতুন নোবেল লরিয়েটকে পরিচিত করানোর পাশাপাশি অনেকেরই চোখ খুলে দেবে যারা এখনো 'যে রাঁধে সে চুলও বাঁধে' - এর অর্থ খুঁজতে বই দেখেন প্রাত্যহিক জীবনে একটুও তাকান না। আমাদের প্রধানমন্ত্রী এই কিছুদিন আগেও বলছিলেন যে একই সাথে অফিস থেকে বাসায় ফিরেছেন স্বামী-স্ত্রী; অথচ কর্তাবাবু গা এলিয়ে দিলেন টিভির সামনের সোফায়,আর হুকুম জারি করলেন চা করে নিয়ে আসতে। রাতের রান্নাবান্না ও ঘরকন্না তো আরো পরে হবে।
" এই ব্যবস্থায় পরিবারের মহিলা সদস্যরাও অনেক শ্রম দিতে পারেন, ঘরকন্নার কাজ সামলানোর সাথে সাথে চাষের জমিতে, ধানের গোলাতে আর সংশ্লিষ্ট কাজকর্মে।"
আচ্ছা এই যে ঘরকন্নার কাজ তাকে ক্লডিয়া গোল্ডিন শ্রমে অন্তর্ভূক্ত করেননি?
" প্রচলিত সমাজব্যবস্থায় সন্তানের জন্মদান আর প্রতিপালন মূলত মহিলাদের দায়িত্ব বলেই মনে করা হয়।"
সন্তান জন্মদান খুব শ্রমসাধ্য ব্যাপার। একেও শ্রমের অন্তর্ভূক্ত করা প্রয়োজন আমার মতে। এছাড়া প্রতিপালন অবশ্যই শ্রমের অন্তর্ভূক্ত হওয়া উচিৎ।
''এক, শিল্প কারখানার কাজে শারীরিক শক্তি লাগে বেশি, কাজগুলি হয় কঠোর, পরিবেশ হয় প্রায়শই দূষণযুক্ত ও নোংরা। সমাজ তখন মহিলাদের কোমলতা পেলবতা রক্ষা করতে তাদের কারখানা থেকে দূরে থাকতে প্ররোচিত করে। দুই, মহিলারা মজুরি উপার্জন করলে যে অর্থনৈতিক স্বাধীনতা আসে, তা পুরুষতান্ত্রিক সমাজে পুরুষের আত্মগরিমাকে আঘাত করে। তাই আবারো স্ত্রীদের সরিয়ে রাখা।"
এ ব্যাপারটি আমাদের দেশেও দেখা যায়। অনেক পুরুষই তাদের বউকে পটের বিবি সাজিয়ে রেখে সৌন্দর্য উপভোগ করতে চান। পেলবতা নষ্ট হবে ভেবে বউকে কাজ থেকে বিরত রাখেন। এছাড়া পুরুষতান্ত্রিকতায় আঘাত লাগার বিষয়টিও রয়েছে। সে পুরুষ সে আয় করবে সে নিয়ন্ত্রণ করবে সব কিছু। সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং হল,কিছু নারীও এই পটের বিবি হয়ে থাকাটাকে তাদের জন্য সন্মানজনক ভেবে থাকেন। এ যে এক প্রকার দাসত্ব এ বোধটিই তাদের নেই।
"তিরিশের দশকের বিশ্বব্যাপী মন্দা। জীবন ও জীবিকার প্রয়োজনেই মেয়েরা তখন বাইরে আসেন।"
লকডাউনে যখন অনেক পরিবার কপর্দকশূন্য হয়ে পড়েছে নিঃশেষ হয়ে গেছে সব সম্পদ,তখন বাঁচার তাগিদে আমাদের দেশেও ইদানিং কোথাও কোথাও মহিলাদের দোকানদারি করতে দেখা যাচ্ছে।
"এককালে যেমন অবিবাহিত মহিলারাই বেশি চাকরি করতেন, তেমন এই যুগেও দেখা গেছে যে প্রথম সন্তানের জন্মের পরে মহিলাদের কাজ ছেড়ে দেওয়ার হার খুব বেশি। "
এও ঘটে আমাদের দেশে। আমার বোনকেই তো চাকরি ছাড়ার ঘোষনা দিতে দেখছি। মা হয়ে চাকরি করতে যে সমস্যার পাহাড় ছিল,তার কিছুটা দূর হয়েছে মাতৃত্বজনিত ছুটি বাড়ানোতে যা এখন ক্ষেত্রবিশেষে নয় মাস আগে ছিল মাত্র তিন মাস। এছাড়া ডে কেয়ারও হয়েছে কোথাও কোথাও। কিন্তু এ খুবই খন্ডিত এক উন্নয়ন। মায়েদের চাকরি এখনো খাড়া পাহাড় বেয়ে উঠার মত দুঃসাধ্য কাজ। এই জন্যই মনে হয়, কোন ফিমেইল কলিগের সাথে যদি এক সাথে প্রমোশান হয় আমার তাহলে ঐ ফিমেইল কলিগের ত্যাগটা আমার থেকে অবশ্যই বেশি।
পরিশেষে লেখককে ধন্যবাদ এমন একটি মহৎ লেখা আমাদের উপহার দেয়ার জন্য।