এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  ধারাবাহিক  উপন্যাস  শনিবারবেলা

  • দক্ষিণ দামোদর জনপদ

    কৃষ্ণা মালিক
    ধারাবাহিক | উপন্যাস | ১৬ জুলাই ২০২২ | ১৫৭৬ বার পঠিত | রেটিং ৪.৭ (৩ জন)
  • ছবিঃ ঈপ্সিতা পাল ভৌমিক


    তিন


    রাতে খাওয়ার পর মনীষাদের ছাদে হাঁটছিল দুই বন্ধু। দূরে নদীজল যেন কালোর স্রোত। খুব বুক পাতলে দীর্ঘশ্বাসের মত উঠে আসে তার শব্দ, কারণ গতিবান ঘোড়ার প্রাণশক্তি শুষে নিয়েছে কারও ভুল। ক্লান্ত, রোগাক্রান্ত, বেতো রুগির মত টেনে টেনে চলেছে। আকাশে এখনও ঝুম নামেনি। মধ্যরাতের উৎসব শুরু হয়নি এখনও। ওরই ভেতর মা, কোথাও সত্যি হয়তো নেই – তবু ভাবতে ভাল লাগে একটি তারা হয়ে মা তারই দিকে এখন তাকিয়ে আছে। হয়তো বাবাও রয়েছে কোথাও। এরকম সব সময়ে অবধারিতভাবে সায়নদীপ উঁকি দেবেনই চিলেকোঠা থেকে। বুকের ভেতর ঘামজল গড়িয়ে নামে। এ সময় না পালিয়ে তার উপায় থাকে না। সে পালানো নিজের কাছ থেকেই। মনীষাকে তাড়া লাগাল, ছাদ থেকে নেমে এল ওরা।

    দাদুর ঘরে যাওয়া যাবে কি? বুড়ো মানুষ, হয়তো ঘুমিয়ে পড়াই এখন দস্তুর। ও প্রশ্নসূচক চোখে মনীষার দিকে তাকাল। ও বলল, “চল না, দাদু এত তাড়াতাড়ি ঘুমোয় না। বই পড়ে এখন।”
    ওদেরকে ঘরে ঢুকতে দেখে দাদু হাসলেন। ডাকলেন, “আয় দিদিভায়েরা! বোস –”

    তিনি একটা ইজিচেয়ারে আধশোয়া হয়ে বই পড়ছিলেন। উপুড় করে রেখে দিতে নামটা দেখা গেল। রাঢ়বঙ্গের সংস্কৃতি বিষয়ে একটা পত্রিকা। তাঁর অনুমতি নিয়ে সেটা হাতে তুলে নিয়ে দাদুর পড়া পাতাটা মার্ক করে ওল্টাতে ওল্টাতে বলল, “আচ্ছা দাদু, মঙ্গলকাব্যের কবিরা তাঁদের কাব্যে সামাজিক ছবি এঁকেছিলেন। তাতে তো চরম দারিদ্রের ছবিও আঁকলেন। তবে কি এই অঞ্চলে এমনই দারিদ্র্য ছিল?”
    “হতেই পারে! ধানের গোলা তো কী? প্রদীপের নিচেই তো অন্ধকার বেশি রে!” পার্থপ্রতিম বললেন।

    চণ্ডীমঙ্গলের আখেটিক খণ্ডের নায়িকা ফুল্লরা। বোঝো কাণ্ড! এ’হেন নায়িকা, সে কিনা গরিবস্য গরিব! ঘরের তৈজসপত্র বলতে আমানি খাবার একটা “পাথরা”! সেটা আবার তার বিয়েতে তার মায়ের দেওয়া একমাত্র যৌতুক। সেই পাথরাও বন্ধক রাখতে বাধ্য হলে মাটিতে গর্ত করে আমানি খেতে হত।
    “আজকের একবিংশ শতকের প্রথম দশকে এখানে কাউকে আমানি খেয়ে পেটের জ্বালা জুড়োতে হয় না বলে বিশ্বাস করতে ইচ্ছা করে। আমি ঠিক জানিও না। তবে কিনা মঙ্গলকাব্যের যুগ এটা নয়।” দাদুর মুখে হাসি।
    মনীষা হঠাৎ বলে উঠল, “এই দক্ষিণ দামোদরের লোকজন কেমন নির্বিকার, না দাদু? যেন সবেতেই সন্তুষ্ট, কোনও অভিযোগ নেই।”

    দাদু তাকিয়ে আছেন সামনে। কিন্তু অনেক দূর পর্যন্ত দেখতে পাচ্ছেন। একটু পরে বললেন, “কথাটা কী জানিস, নির্বিকারত্ব বজায় থাকতে পারে দেয়ালে পিঠ না ঠেকা পর্যন্ত। দু’-দুটো দাঙ্গা সেই নির্বিকারত্ব ছুটিয়ে দিয়েছিল একসময়।”
    ও জানত না। খানিকটা অবাক হয়। মনীষাও। শান্তা বলল, “বল, শুনি –” তারপরই কুন্ঠিত হয়ে পড়ে, “না গো, তুমি ঘুমাও। কাল সকালে শুনব।”

    শান্ত, স্থিতধী, স্নেহশীল মানুষটির মুখে সবসময় মৃদু হাসি। শান্তা ক’দিনেই তাঁকে ভালবেসে ফেলেছিল। অগাধ শ্রদ্ধা তাঁর প্রতি। সেই মৃদু হাসি নিয়ে তিনি বললেন, “ঠিক আছে রে! আমি বুড়ো মানুষ, অত ঘুম পায় না আমার। বরং যা, তোরা গিয়ে শুয়ে পড়।”
    - না দাদু, তোমার অসুবিধা না হলে তুমি বল।
    - জমিদারি আমল যখন শেষের মুখে, তখন একটা দাঙ্গা হয়েছিল। চকদীঘির জমিদারদের সাহায্য করেছিল কামারগোড়ের পালবাড়ির নায়েব গোমস্তারা। পশরা-পিপলদার চাষীরা অন্যপক্ষ। একসময় ওই অঞ্চলের অধিকাংশ জমিই পতিত ছিল, চাষাবাদ হত না। আগাছা আর ঝোপঝাড়ে ভরা থাকত মাঠগুলো। সেসব পতিত জমি হাসিল করিয়েছিলেন জমিদারমশাই, ওই চাষীদের দিয়েই। জমিদারী প্রথা বিলোপের সময় তিনি সেইসব জমির দখল নিতে গেলে চাষীদের সঙ্গে দাঙ্গা শুরু হয়। যারা পতিত জমিকে ফসলি জমিতে রূপ দিয়েছে, চাষ করেছে তারা অধিকার ছাড়তে চাইল না।

    অতীত ফিরে আসে। চুপ করে যান মনীষার দাদু, পার্থপ্রতীম বসু। বহু লোকের আহত আর্তনাদ যেন তাঁর কানে আছড়ে পড়তে লাগল। রক্ত দেখতে পান তিনি। শিউরে উঠলেন। লাল হয়ে গেছে পশরা-পিপলদার মাঠ। অভাবী মানুষের জানকবুল জমি বাঁচানোর রক্ত।
    শান্তা আলতো করে জিগ্যেস করে, “কেউ মারা যায়নি তো-?”
    - নাহ্, তবে মৃত্যুর দোরগোড়ায় পৌঁছে গিয়েছিল অনেকেই। রাতারাতি জমিদারের লোকজন তাদের সরিয়ে নেয়। দূরে কোথাও নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করায় – যাতে মরে না যায় তারা।
    - দ্বিতীয় দাঙ্গাটাও কি জমিজমা সংক্রান্ত?
    - ঠিক তাই। ওটা হয়েছিল পাষণ্ডার মাঠে। ওখানেও বয়ে গেল রক্তগঙ্গা। গুরুতর আহত হল বহু লোক। এখানেও মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি বলেই শুনেছি। প্রকৃত কী ঘটেছিল সেখানে বাম আমলের শুরুতে, তা অবশ্য বলতে পারব না। সে সময় আমি আমার গিন্নিকে নিয়ে গিরিডিতে ছিলাম।” একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে থামেন তিনি।
    মনীষা জিগ্যেস করে, “মামাদাদুর কাছে গিয়েছিলে বুঝি? তখনও মামাদাদু ওখানে থাকতেন?”
    হঠাৎ জোরে হেসে ওঠেন তিনি। বলেন, “সে আর এক গল্প, বুঝলি! তোর মামাদাদু বিয়ে করার ভয়ে সেঁধিয়েছিল ওখানে।”

    পাশে মনীষা শুতে না শুতেই বেশ ফুরফুর করে নাক ডাকতে শুরু করেছে। ওর খুব হিংসে হয়। কী সুন্দর ঘুমাচ্ছে! ওরই চোখে শুধু ঘুম নেই। ঘুম আসতে দেরি হবে বুঝতে পারে। ধুত্তেরি করে উঠে পড়ে ও। টেবিলের কাছে সাবধানে নেমে যায়, মনীষার ঘুম না ভাঙে। ডায়েরি খুলে বসে সে। যা কিছুই লেখে সামনে পাঠক হিসাবে বসিয়ে দেয় সায়নদীপকে। সে না হলে তার কিছুই সম্পূর্ণ হয় না। লেখে, পড়ে সায়নের চোখ দিয়ে। লেখার আগে ভাবনাটা গুছিয়ে নেয় সে।

    দক্ষিণ দামোদরের উর্বর মাটিতে উপ্ত হল বনস্পতির মত কয়েকটি রত্ন। মুণ্ডেশ্বরীর প্রবাহপথের কাছাকাছি দামুন্যা বা দামিন্যায় জন্ম এই অঞ্চলের মঙ্গলকবিদের মধ্যে প্রাচীনতম কবি মুকুন্দ চক্রবর্তীর। তৎকালীন সমাজজীবন সবথেকে বেশি অঙ্কিত হয়েছে তাঁরই কলমে, আর ধর্মমঙ্গলের কবি ঘনরাম লিখেছিলেন রাঢ়ের মহাকাব্য। মুকুন্দের আপন জীবন পরোক্ষে উঠে এসেছিল তাঁর কাব্যে।

    ভালমন্দের বিতর্ক বাইরে থাক। প্রাচীন সাহিত্য প্রাচীনতার ঐতিহ্যগুণেই উজ্জ্বল। দৈনন্দিনের ভাষায় তার সবটা ধরা পড়ে না। শান্তাকে এই ব্যাপারটা একটু বেশিই যেন আপ্লুত করে। ন্যাপথলিনে মোড়া তোলা কাপড়ের মত ভাষায় ডাইরির পাতায় সে লিখতে থাকে…

    “অশ্বখুরের আওয়াজে আচম্বিতে সমস্ত গ্রাম সচকিত হইয়া উঠিল। বালকেরা ধূলায় খেলিতেছিল, তাহারা খেলা ছাড়িয়া বেভুল হইয়া দেখিতেছে, পথ হইতে সরিতে ভুলিল। অশ্বের পায়ের ধাক্কায় দু-একজন ছিটকাইয়া পড়িল কি? বালকের দল তখন ছত্রভঙ্গ হইয়া, চিৎকার করিয়া কাঁদিয়া হাউমাউ জুড়িয়া দিল। সারা গ্রামে উঠিল কলরব।

    শুনা যাইতেছিল দামুন্যা ও তৎসংলগ্ন এলাকায় নতুন ডিহিদার হইয়াছে কোন্ এক পাঠান নন্দন, মামুদ শরিফ। সে খাজনা আদায় ও জমিজমা সংক্রান্ত বিষয়ে মানুষকে নির্যাতন করিতেছে।

    দামুন্যা নিবাসী হৃদয় মিশ্রের (চক্রবর্তী) পরিবারেও নির্য়াতন নামিয়া আসিল। এ যে অকারণ উৎপাত! চক্রবর্তী পরিবার এযাবৎকাল সেলিমাবাদে বসবাসরত জমিদার গোপীনাথ নন্দী নিয়োগীর জমিজমার রক্ষক হইয়া, চাষাবাদ করিয়া সুখে জীবনধারণ করিতেছিল। মামুদ শরিফ আসিয়া তাহাদের জীবিকা ও জীবন ছিনাইয়া লইতে প্রস্তুত হইয়াছে। গ্রামে গ্রামে ঢোল সহরত করিয়া ঢ্যাড়া দিয়াছে যে এক্ষণ হইতে ইলাকার ডিহিদার হইলেন মামুদ শরিফ। তিনিই সর্বেসর্বা। প্রাক্তন জমিদার গোপীনাথ নিয়োগীর কথা আর খাটিবে না।

    নিজের সুখের নিকট ভোগবাদী মানুষের গণজীবনের প্রতি কোনো স্বীকৃতি বা দায়িত্ববোধ থাকে না। আপনার লাগিয়া সামাজিক অকল্যাণ সৃষ্টিতে তাহাদের বিবেকবোধ জাগ্রত হয় না। শাসক কদাচিৎ প্রজাপালক। ভবিষ্যতে তাই চণ্ডীমঙ্গল রচয়িতা মুকুন্দ স্বয়ং কাব্যে বলিবেন, ‘উইচারা খাই আমি নামেতে ভালুক।/‌নেউগি চৌধুরি নহি না করি তালুক‌॥’

    ডিহির মানুষেরা সকলেই তাহার অত্যাচারে বিপর্যস্ত। তবে হৃদয় মিশ্রের পরিবারের প্রতি তাহার কিছু জাতক্রোধ জন্মিয়া থাকিবে। তাহাদের যেন সে বিনাশ করিয়া ক্ষান্ত হইতে চায়। অবস্থা এমন দাঁড়াইল, হৃদয়ের জ্যেষ্ঠ সন্তান মুকুন্দ গ্রামে থাকিতে সক্ষম হইলেন না। নিজ স্ত্রী সন্তান ও এক ভ্রাতাকে সঙ্গে লইয়া অপরাপর গুটিকয় গ্রামবাসীর সহিত তিনি জন্মভূমি ত্যাগ করিলেন।

    ১৫৪০ সালের কোনো এক সুদিনে হৃদয় মিশ্রের ঘরে শঙ্খধ্বনি উঠিয়াছিল। প্রতিবেশী রমণীরা ভিড় করিয়া প্রসব ঘরের বাহিরে দণ্ডায়মান। হৃদয় মিশ্র প্রথমবার পিতা হইলেন। সন্তান ভূমিষ্ঠ হইবার পূর্ব হইতে উৎকন্ঠায় তাঁহার মুখ ছিল শুষ্ক। স্থির হইতে পারিতেছিলেন না।
    এখন পাড়ার ঠানদি বলিলেন, “ও হিদে! তোর খোকা হয়েছে।”
    শুনিয়া তাঁহার মুখ লজ্জায় রাঙা হইল। অথচ তাঁহার একান্ত ইচ্ছা একবার দৌড়িয়া গিয়া পুত্র ও স্ত্রীর মুখদর্শন করিয়া আসেন। রমণীরা তখন হাসিয়া উঠিয়াছে। তাহাতে তাঁহার লজ্জা অধিক বৃদ্ধি পাইল। সরিয়া যাইতে চাহিলেন। কিন্তু বাদ সাধিলেন তাঁহার মা। তিনি প্রসব-পরবর্তী নিয়ম ও কর্মগুলি সমাধা করিতে ব্যস্ত ছিলেন। পুত্রকে ডাকিলেন, “হৃদয়, পরিষ্কার হাতে একটা তাজা বাঁশের গা থেকে চোঁচ কেটে নিয়ে আয়। বাচ্ছার নাড়ি কাটতে হবে।”

    সেই নাড়িকাটা ধনের নামকরণ হইল মুকুন্দ। বাল্য ও শৈশবে দামোদর মুণ্ডেশ্বরীর পলিসমৃদ্ধ মৃত্তিকা মাখিয়া, পুষ্করিণীর জল তোলপাড় করিয়া, গ্রামের সোদরপ্রতীম বালক দিগের সহিত ডাংগুলি খেলিয়া – লাফাইয়া ঝাঁপাইয়া পর্যাপ্ত আলো আর বাতাসে ডালপালা বিস্তার করিয়া নভোস্পর্শী বৃক্ষের ন্যায় বাড়িয়া উঠিয়াছিলেন। সেখান হইতে শাসকের অত্যাচারে তাহাকে আজ অনির্দেশ্যের পথে চলিতে হইতেছে।

    হৃদয় গত পূর্বাহ্নে তাঁহাকে বলিলেন - তাঁহার মুখ বেদনার্ত ও চিন্তান্বিত, বলিলেন, “তুই এখেনে আর থাকিস না, বাবা! কবে কী বিপদ ঘটে তার ঠিক নেই। তুই চলে যা, কোনো নিরাপদ আশ্রয় জোগাড় করে নে।”

    মুকুন্দ পিতার পরামর্শ মানিয়া লইলেন। অতি প্রয়োজনীয় অল্প কয়েকখানি সামগ্রী পুঁটুলিতে বাঁধিয়া গুরুজনদিগের চরণধূলি মাথায় লইয়া, প্রতিবেশীদিগের প্রতি নীরবে করুণ নয়নে চাহিয়া চহিয়া তাঁহারা বাহির হইলেন। উদ্গত অশ্রুতে হয়তো পথ ঝাপসা হইল। মুকুন্দ শেষবারের মত পিছু ফিরিয়া তাকাইয়া দেখিয়া লইলেন আপন বসতভূমি ও দণ্ডায়মান আপনজনদিগকে।
    তাকাইয়া দেখিলেন বৃক্ষসকল, নভোমণ্ডল, বারিনিচয়। তাহারা যে তাঁহার সখাসম! দেখিয়া লইলেন চোখের সীমানায় থাকা সকল কিছু। দেখিতে দেখিতে গ্রামসীমা পার হইলেন। কাহারও মুখে কোনো কথা নাই। মুকুন্দ কি আপনাকে স্বার্থপর ভাবিলেন? পিতামাতা, অন্যান্য ভ্রাতা ও আত্মীয়বর্গকে পরিত্যাগ করিয়া একাকী কেন বাহির হইলেন নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে? তিনিই গোপীনাথের জমির রক্ষক ছিলেন, তাঁহার কিছু খ্যাতি হইয়াছে, তাই কি মামুদ শরিফের আক্রোশ তাঁহার প্রতিই অধিক ছিল?

    অনেক দুঃখ ও ক্লেশ সহিয়া অবশেষে আশ্রয় পাইলেন মেদিনীপুরের আড়রা গ্রামের জমিদার বাঁকুড়া রায়ের নিকট। সঙ্গীসাথীরা নিজনিজ ব্যবস্থা করিয়া লইয়াছে।
    বাঁকুড়া রায় তাঁহাকে বলিলেন, “আপনি ব্রাহ্মণ ও পণ্ডিত ব্যক্তি। পূজার্চনা, পুঁথিপাঠ নিয়ে থাকেন। সরস্বতী আপনার রসনায় বাস করেন, আপনাকে অন্য কোনো কাজে কি নিযুক্ত করা উচিত? আপনি বরং আমার পুত্র রগুনাথের শিক্ষার ভার নিন।”

    তাহাই হইল, রঘুনাথ রায়ের গৃহ শিক্ষক নিযুক্ত হইলেন তিনি। আশ্রয়স্থলে পৌঁছিবার পূর্বেই তাঁহার ভবিষ্যত দিকদর্শন ঘটিয়াছিল স্বপ্নে। পথিমধ্যে পুস্করিণীর তীরে ভূমিশয্যায় নিদ্রিত অবস্থায় স্বপ্নে দেবী চণ্ডিকার সাক্ষাৎ লাভ করিয়াছিলেন। চণ্ডীর মহিমা কীর্তন করিয়া গ্রন্থ রচিতে আদিষ্টও হইয়াছিলেন। ইহা কি স্বপ্ন, নাকি কবিত্ব শক্তিধর কবির অন্তর্গত সুপ্ত ভাবনা স্বপ্ন হইয়া উঠিয়া আসিয়াছিল?

    পরবর্তীকালে ছাত্র রঘুনাথ ও আত্মীয়বর্গের দ্বারা বারংবার অনুরুদ্ধ হইয়া আনুমানিক ১৫৭৫-’৭৬ সালে রচনাকার্য শুরু হইবে তাঁহার কাব্য ‘অভয়ামঙ্গল’এর। কবি ইহাকে কখনও বা ‘অম্বিকামঙ্গল’ বলিয়াও ভনিতায় উল্লেখ করিবেন। দক্ষিণ রাঢ়ের সমাজজীবন উঠিয়া আসিল দূরদৃষ্টিসম্পন্ন কবির কলমে। তিনি খুঁড়িয়া তুলিলেন তাঁহার সমকালের চলমান জীবনধারা। দেবতা-মানব, উচ্চ-নীচ ভেদে আর্থ-রাজনৈতিক-সামাজিক ইতিহাস কাব্যের ছলে ভাবীকালের জন্য রচনা করিলেন।”

    সন্দীপনকে সাহিত্য বোঝাত শান্তা। এই এলাকার সাহিত্যভাণ্ডার সম্বন্ধে সে অজ্ঞ। ওর কাছে শুনে বলত, “আরিব্বাস! এ তো ঘ্যাম ব্যাপার!”
    রাষ্ট্র লেখক-কবিদের গলায় উত্তরীয় পরায়। চিরকালই হয় পকেটে থাক, আমার গুণকীর্তন কর, শেরশায়েরি বানিয়ে খুশ করে দাও। নয়তো ভাগো সামনে থেকে। চোখ বন্ধ করে থাকতে পার, কিন্তু লেজে পা দিও না। যে লেজে পা দেবে, তাকে উৎখাত হতে হবে। পৃথিবীতে কত তাবড় তাবড় সাহিত্যিক কাঁটাতার ডিঙোলেন! এ অঞ্চলে প্রাচীনতম মঙ্গলকবি কবিকঙ্কণ মুকুন্দ চক্রবর্তীও উদ্বাস্তু কবি। তৎকালীন সমাজজীবন সবথেকে বেশি অঙ্কিত হয়েছে তাঁরই কলমে। তাঁর আপন জীবনও কখনও প্রত্যক্ষ, কখনও পরোক্ষে উঠে এসেছে তাঁর চণ্ডীমঙ্গলে।

    ডায়েরির লেখাটা ক’দিন পর ক্যাম্পাসে বসে সন্দীপনকে পড়াল। আগের-পরের পাতাগুলো ও আটকে রেখেছিল যাতে সন্দীপন ওল্টাতে না পারে, সবটাতে ওর এক্তিয়ার নেই। পড়া শেষ হলে ডায়েরি বন্ধ করল সন্দীপন। ডাইরির উপর টোকা দিতে দিতে বলল, “হুঁ! বুঝলাম। কিন্তু মঙ্গলকাব্য নিয়ে কেন এত মাথা ঘামাচ্ছিস? এই সময়ে দাঁড়িয়ে এর গ্রহণযোগ্যতা কোথায়?”
    - না রে, ভুল করছিস। প্রতিদিনের জীবনের ঘটনাগুলোর দিকে তাকিয়ে দ্যাখ, আজও সমান প্রাসঙ্গিক।
    - তুই হঠাৎ এসব নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছিস কেন? এ তো গবেষকদের কাজ।
    - হতে পারে। অন্য কেউ লিখলে অসুবিধা কোথায়? আমার তো মনে হয় এটা সবারই দায়িত্ব। এই মাটি থেকে উঠে আসা মূল্যবান রত্নগুলোকে কালের গর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করতে সংরক্ষণ জরুরি।

    বলতে বলতে কেমন অস্থিরতার ভেতর উঠে দাঁড়ায় শান্তা। সন্দীপনও, ওর দেখাদেখি। বিকেল পার হয়ে সন্ধ্যা নেমেছে। ওরা হাঁটতে থাকে ক্যাম্পাসের গেটের দিকে। “তুই মন্দিরাকে চিনিস?” শান্তা জিগ্যেস করে।
    “ইংরেজি রক না পপ গায় ওই মেয়েটি? ল’ পড়ে-?”, জিজ্ঞাসু চোখে তাকায় ও।
    - হ্যাঁ। জানিস, ও বাংলা গানের নামে নাক সিঁটকায়। গুনগুন করেও ও কখনও বাংলা গান করে না। একজন গায়কের পক্ষে এটা একটা সীমাবদ্ধতা, প্রথম কথা। তা বাদ দিয়েও বলব, বিশ্বচেতনা ভাল, তবে নিজের শেকড় ভুলে গিয়ে নয়।
    সন্দীপন তর্ক জুড়ে দেয়, “হীনমন্যতা আমাদের সবার মধ্যেই কিছু কিছু আছে। এমনকি তোর মধ্যেও। অস্বীকার করতে পারিস?”
    - হয়তো তাইই। কিন্তু নিজের ঘরের মধ্যে যা আছে, তা খুঁজে বের করা উচিত নয় কি?

    গেটের সামনে গিয়ে ওরা দাঁড়িয়ে যায়। সন্দীপন বলে, “দ্যাখ, সাহিত্যের ব্যাপারে আমি অগা। তুই জানিস–”
    - তুমি যে একটি অশ্বডিম্ব, তা আর জানি না? ঠিক আছে, এখানে দাঁড়াব না, তুই আয় এবার।
    - শোন না -
    “কী বলবি বল। দেরি হচ্ছে।” শান্তা তাড়া লাগায়।
    - মঙ্গলকাব্যে সামাজিক ইতিহাস কি একা মুকুন্দেই-?
    “তাই কি হয়? শুনিসনি, সাহিত্য সমাজের দর্পণ?”, একটু থেমে বলে সে, “সব মঙ্গলকবিই এর মধ্যে দিয়ে সামাজিক ছবি এঁকেছেন। চণ্ডীমঙ্গলের কবি মুকুন্দের পর রূপরাম, ঘনরাম লিখলেন ধর্মমঙ্গল কাব্য। এঁরা কিন্তু দক্ষিণ দামোদরের কবি। রূপরাম কাইতির, ঘনরাম খণ্ডঘোষের কুকুরা-কৃষ্ণপুরের। এগুলো তো জানিস?”
    বোকা বোকা হেসে না-সূচক ঘাড় নাড়ে সন্দীপন।
    ঝাঁজিয়ে ওঠে শান্তা, “তবেই বোঝ!”
    - বল না! ডায়লগ পরে দিবি।
    - ঘনরামের আগে খণ্ডঘোষেই সপ্তদশ শতকে সীতারাম দাস। ১৭১৪-য় শাঁকারিতে “ধর্মের গীত” লিখলেন নরসিংহ বসু। তিনি কাব্যরচনার আরম্ভের দিনটি হেঁয়ালিতে লিখলেন।
    “কীরকম হেঁয়ালি?” সন্দীপন জানতে চায়। তবু কেমন যেন উশখুশ করে।
    - শ্যামসুন্দরদার সঙ্গে কথা হচ্ছিল সেদিন, উনি মনে করিয়ে দিলেন–
    - শ্যামসুন্দরদা বলতে বিশ্বভারতীর অধ্যাপক? ওনার গবেষণা শেষ হযেছে? যখনই দেখা হয় বলেন চলছে।
    “হ্যাঁ। আসলে উনি প্রচুর কাজ করেন। কত কিছু নিয়েই না ওনার উৎসাহ” শান্তা বলে।
    - কী মনে করিয়ে দিলেন উনি?
    – ‘শক শশী পিঠে ঋতু ভুবনেতে রস / কবিত্ব আরম্ভ কর্কটের দিন দশ’। বল তো মানেটা!
    - তুইই বল।
    হেসে ফেলে শান্তা। ওকে দেখে সন্দীপনও। শান্তা বলতে থাকে, “দ্যাখ, শশী হচ্ছে ১। ঋতু ৬, ভুবন ৩ – ত্রিভুবন, তাই না? রস ৬। তাহলে তারিখটা হল ১৬৩৬ শকাব্দের কর্কটমাস অর্থাৎ ভাদ্রমাসের ১০ তারিখ। শকাব্দের সঙ্গে ৭৮ যোগ করলে কত হল? ১৭১৪। ১৭১৪ খৃষ্টাব্দে নরসিংহ বসুর কাব্য রচনা শুরু।”
    - ব্যস! এবার শেষ হল-?
    - হল না, আরও আছে।
    একথা শুনে সন্দীপন বিরক্ত হয়ে হাতজোড় করে নমস্কার করে।
    মৃদু হেসে শান্তা বলে, “রায়না থানার সেহারায় ধর্মঠাকুরের মাহাত্ম্য নিয়ে কাব্য লেখা হয়েছিল – ‘বারমতির পুঁথি’। কবির নাম রামকান্ত রায়। জানতিস?”
    “সত্যি জানতাম না রে! ভাগ্যিস বললি।” মাথা নাড়ে ও। তারপর কিছুটা যেন ঘন হয়ে আসে। গভীর চোখে তাকায়। সন্ধে নেমে গেছে অনেকক্ষণ। ক্যাম্পাস থেকে বেরোনোর মুখে গেটের দু’দিকে দুটো গ্যাসের আলো। পাশে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা সমবায় ভাণ্ডার। সেখান থেকে কিছু আলো ছিটকে আসছে। আলো যতটুকু গেছে ততটুকুনিই, তার বাইরে বেশ ঘন অন্ধকার নেমে এসেছে। এ সময় এদিকে লোক চলাচল কমে যায়। মোহনবাগান মাঠের পাশ দিয়ে দু’-একটা গাড়ি বা বাইকের আলো আসছে আাসছে করেই হুশ করে বেরিয়ে যাচ্ছে। সাইকেলের ঘণ্টি ঠুংঠুং করে যেন নিজের মনে একবার বেজে ওঠে।
    সন্দীপনকে বহুদিন চেনে ও। তবু ওর অস্বস্তি হয়। অজান্তেই এক পা পিছনে চলে যায়। সন্দীপন তা লক্ষ্য করে না, তাকিয়েই আছে কোনো এক প্রত্যাশায়। তারপর যেন ঘোর ভেঙে হালকা গলায় বলে ওঠে, “এইজন্যই তোকে এত ভালবাসি।”

    শান্তা জানে সন্দীপন নিজেকে আড়াল করল। সেই বোঝাটুকু ও নিজেও বুঝতে দিতে চায় না। যেমন সায়নদীপের কথা তার থেকে সযত্নে লুকিয়ে রেখেছে সে।


    (ক্রমশঃ)
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • ধারাবাহিক | ১৬ জুলাই ২০২২ | ১৫৭৬ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Soumitra Chakraborty | ২২ জুলাই ২০২২ ১৯:৫৭510151
  • চমৎকার লিখছেন কৃষ্ণা। উপন্যাস বিভিন্ন সময়, মানুষ, জনপদ ছুঁয়ে এগিয়ে চলেছে তরতর করে। ভালো লাগছে। 
  • কৃষ্ণা মালিক | 113.2.***.*** | ২৩ জুলাই ২০২২ ০৮:০৬510173
  • মতামত জানানোর জন্য ধন্যবাদ, সৌমিত্রদা। 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লাজুক না হয়ে মতামত দিন