আজকাল সব ব্যাপারস্যাপার দেখে এতো ফান হয় যে সবকিছুই বেশ ছড়ার ছন্দে বলতে ইচ্ছে করে। এদিকে হয়েছে কি, কবিতা আমার তেমন আসেনা।আমার জীবন চিরকালই বড্ড ... উইদাউট পদ্য।
তাও মাঝে মাঝে ইচ্ছে তো হয়। সবাই আজকাল ভুল বানানে এতকিচু লেকে। আমিই বা বাদ যাই কেন?
তা, বোরখা হিজাব নিয়ে কী পদ্য লিখব? মনে হলো লিখি, বোরখা হিজাব সংঘী গুজাব। হিজাবের সঙ্গে গুজাব দিয়ে মেলানোর চেষ্টা । গুজাব মানে গুজব। কেন হবেনা? বেড়ালের তালব্য শ যদি হতে পারে, তারপর ধরুন, rumour যদি এই হ্যামেরিকায় rumor হয়ে যেতে পারে, তাহলে গুজব গুজাব হলেই দোষ? মামদোবাজি?
এখন যে গুজবের খেলা শুরু হয়েছে -- শাহরুখ নাকি লতাজীর চিতার সামনে ... ছি ছি ছি একী কাণ্ড করেছি -- তা দেখে বলতে ইচ্ছে করে, এমন গুজব কোতাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি, সব গুজবের রাজা হলেন হোয়াটস্যাপের জমি।
হেহে ।আমার ছন্দের দৌড় ওই পর্যন্তই ।একটু খ্যামাঘেন্না করে নেবেন দাদারা ও দিদিরা, ভাইরা ও বোনেরা, হনুমতী ও হনুমানেরা।
___________
এবারে এট্টু আসল কতায় আসি। এই বোরখা হিজাব নিয়ে নতুন তাণ্ডব ঠিক এখনই কেন? তিনমাস আগে হলোনা কেন? দুবছর আগেও তো হতে পারতো? মুসলিম মেয়েরা তো সেই কবে থেকেই বোরখা পরছে -- নতুন কিছু তো নয়। এখন খেলা শুরু হয়েছে, কারণ একটাই। কারণ, শিরে সংক্রান্তি ভোট। হাওয়া সুবিধের নয়। ঠিক এক্ষুণি নতুন এক হিন্দু মুসলমান মেরুকরণ দরকার। নতুন ঘৃণা দরকার, নতুন হিংসা দরকার। ট্রাম্পের স্টাইলে নতুন করে মেজরিটি-অর্ধশিক্ষিত ক্ষেপিয়ে দেওয়া এক্ষুণি ইমিডিয়েটলি আর্জেন্টলি এসওএস মে-ডে দরকার।
আচ্ছা, শিখরা কি পাগড়ি পরবেনা ইউনিফর্ম ড্রেস কোডে?
হাসাবেন না কর্তা। এমন কী ওই অর্ধশিক্ষিতরাও বুঝে ফেলেছে আমার চাকরি নেই কাজ নেই, স্বাস্থ্য নেই, শিক্ষা নেই, চিকিৎসা ও জিনিষপত্রের দাম ধরাছোঁয়ার বাইরে। আমার বাড়ির মেয়েদের নিরাপত্তা নেই। হাথরাস উন্নাও বড্ড বেশি রিসেন্ট। আমার জল কেড়ে নিয়ে ব্যবসা করছে ওরা। আমার গাছ কেটে নিয়ে যাচ্ছে, আমার জমি পুকুর দখল করে প্রোমোটার বাড়ি তুলছে। আমার পরিবারে তিনজন কোভিডে মারা গেছে। দেশটাকে আম্বানি আদানি বিল গেটস মনস্যান্টো বেজোস আমাজন আমেরিকার হাতে তুলে দিচ্ছে এরা।
আদানি এখন আম্বানির থেকেও বেশি ধনী -- এশিয়ার মধ্যে ধনীতম। গুজরাট বন্দরে ড্রাগ -- কী যেন একটা হয়েছিল না এই সেদিন? যাচ্চলে ভুলেই গেছি অলরেডি। নীতিপুলিশ আরএসএস মৌনীবাবা।
আর এক আরএসএস সন্ন্যাসী সেজে বসে আছে, তার বিশাল সম্পত্তি, বাড়িতে বন্দুক পিস্তল গোলাগুলি। সে শাসক। জঙ্গলের রাজত্ব উত্তরপ্রদেশ নিয়ে অর্ণব আর কঙ্গনা ছাড়া সবাই কলরব করছে। হাওয়া সুবিধের নয়। এসব থেকে দৃষ্টি ঘোরানোর নতুন খেলা হচ্ছে এই হিজাব নিয়ে ভায়োলেন্স। আজকে কর্ণাটক, কালকে উত্তরপ্রদেশ, পরশু বাংলা। নতুন ভায়োলেন্স দরকার। নতুন অস্ত্র।
তা এসব পড়ে টড়ে এক বন্ধু বললেন, "একদমই ঠিক বলেছ, পার্থ। এগুলো যত তাড়াতাড়ি মানুষ বুঝবে ততই তাড়াতাড়ি এরা বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে এবং আসল সমস্যা, দাবির জন্য আন্দোলন গড়ে উঠবে।"
দুঃখের বিষয়, তা হবেনা, কারণ মুসলমানদের একটা বিরাট অংশ ধর্মান্ধ, এবং তারা হনুমানবাদীদের ফাঁদে পা দিয়েই বসে আছে। হিজাবের থেকেও যে সংসারের খাতার হিসাব বেশি আর্জেন্ট এখন, তা এদের বোঝানো অসম্ভব। ভারত এখন ধর্মান্ধতার আগ্নেয়গিরি। সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া দেশের সমস্ত রোগের সিম্পটম বসন্তের গুটির মতো ভারতবর্ষ নামক এক প্রাচীন পবিত্র দেশের সারা গায়ে।
বন্ধু অপ্টিমিস্ট। লিখলেন, "আমি কিন্ত আশা রাখি কারণ সবকিছুর একঠা অন্তিম চুড়া আছে, তারপর দ্রুত সেটাই নামতে শুরু করে, মোদীর বোধহয় সেই সময়ের আর দেরি নেই।" বন্ধু বড্ড আশাবাদী। কিন্তু আমি নই। আমি ওদের সঙ্গে দু দশক ছিলাম কিনা। মোডাস অপারেনডাই আমি একটু জানি।
মোদীর দরকার নেই। মোদী না থাকলেও ভারতে ফ্যাসিজম আসবে। কারণ, আরএসএস তার একশো বছর পূর্তির মধ্যেই থার্ড রাইখ সংবিধান আনছে। ১৯২৫ থেকে ২০২৫। আর তিনটে বছর। আমার কথা মিলিয়ে নিও। গেস্টাপোরা রেডি হচ্ছে।
আজ কর্ণাটক, কাল উত্তরপ্রদেশ, পরশু বাঙ্গাল।
আমার সেই ভুল ছড়ায় বলতে পারতাম, আমরা হতে চলেছি হতভাগ্য সর্বস্বান্ত কাঙ্গাল।
আজকের হিজাব দিয়েই সেই হেট-জব শুরু। কোনো রাজপরিবারের সাধ্য নেই আজকের এই গেস্টাপোবাহিনিকে রোখে।
যদি না ... যাক সে কতা। আর একদিন বলা যাবে অকোন।
_____
পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।