আমি ব্যক্তিগত ভাবে খুব সাংঘাতিক টনভিন্সড নই, আন্তর্জাতিকতা নিয়ে রাজনৈতিক অর্থে বোলানো খুব দুশ্চিন্তা করতেন। তাঁর আন্তর্জাতিকতাটা একদিকে পশ্চিমী সাহিত্যের সমস্ত স্বল্প পঠিত জিনিসপত্রের উপরের একটা কৌতুহল ছিল। আর পাকে চক্রে ভাষাকেই নিবাস করার একটা বাধ্যবাধকতা তাংর জীবনে এসেছে, সাহিত্যিক , কবির জীবনের এক্সাইল , নিরুদ্দেশ যাত্রা ইত্যাদি বিষয় তাঁর লেখায় এসেছে, কিন্তু কোর্তাজার এর হপ্সকচের চরিত্ররা যেরকম দেশের ভাবনার ঘোরে থাকছে বা আজকের অর্থে যেটাকে অভিবাসী সাহিত্য বলি কোনো টাই বোলানোর সেন্সিবিলিটির মধ্যে নেই। বোলানোর একটা যাপনের এবং আর্টের বিশুদ্ধতার খোঁজ আছে , সেটা তাঁকে খানিকটা তাড়িয়ে বেড়িয়েছে, এক ই সঙ্গে চিলি বা মেক্সিকো থেকে বার্সিলোনার সাবার্বে চলে আসাটা একটা গ্লানির জন্ম দিয়েছে, সে জন্যেই খুঁজে খুঁজে দক্ষিণ আমেরিকার ফ্যাসি্সট হত্যা করা প্রগতিশীল আত্মগোপনকারী আততায়ী রে কিনা আসলে আয়েন্দের আয়লের পুলিশ এরকম সব বিচিত্র চরিত্র উদ্ভাবন করতে বাধ্য করছে।রাজনৈতিক ভাবে দেখতে গেলে বোলানো চুড়ান্ত এসকেপিস্ট অথবা ব্যর্থ বিপ্লব নিয়েই বেশি স্বচ্ছন্দ। এবং শিখন্ডীটা হল ব্যক্তিগত প্রকরণের বিশুদ্ধতা র খোঁজের, যা কিনা বিশুদ্ধ স্বল্পপঠিত আর্টের খোঁজে র সঙ্গে ওভারল্যাপ করছে। :-)))) ধরুন জার্মানির মাওবাদী বাদের মেইনহফ দের যখন গ্লোরিফাই করছেন তাদের ইউরোপীয় মাওবাদ তখন মৃত , এমন কি ইংল্যান্ড বা ফ্রান্সেমর মিক্সড রেস সমসাময়িক বিপ্লব প্রচেষ্টার গুলোর সেরকম রেকগনিশন নেই। অন্য দিকে নিউ ইয়র্কে র এক কৃষ্ণাঙ্গ কমিউনিস্ট কে তার পরাজয়ের মাধ্যমে ই মহান করছেন, তিনি সেই বিচিত্র লোক যিনি এতটাই আনকম্প্রোমাইজিং যে একজনের কমিটি মিটিং নিজেই রিপোর্ট পড়ে নিজেকেই শোনাচ্ছেন। ইত্যাদি।
আসলে বোলানো , নিকানর পারা দের যে আর্বানিটির খোঁজ সেটা , ম্যাজিক রিয়ালিস্ট দের কেন্দ্র করে যে এসোটেরিক টেন্ডেন্সি নিয়ে পশ্চিমে বেশি কথা চলেছিল তার বিরুদ্ধে রেগে গিয়ে। ম্যাজিক রিয়ালিজম সেরা আর্টিস্ট রাও এই প্রকোষ্ঠীকরণে অসোয়াস্তিতে ছিলেন।
তো যেহেতু এই আর্বানিটির খোঁজ একধরণের সাতের দশকের শুরু থেকেই ,আয়েন্দের হত্যা,নেরুদার প্রতিষ্ঠান হয়ে ওঠার অভিযোগ, পিনোশের ক্ষমতা দখলের পরে, আর্জেন্টিনা , ব্রাজিল ইত্যাদিতে জুন্টারা আসার পরে তীব্র এক্সপেরিয়েন্স অফ ডিফিট এর সঙ্গে কো ইনসাইড করছে তাই ব্যক্তিগত পলায়ন, বিশুদ্ধতা র খোঁজ , ব্যক্তিগত রেজিস্টান্সের খোঁজ ইত্যাদির একটা গ্রহণযোগ্যতা তৈরি করছে বোলানো দের মনে, তার পরে সেই সেনসিবিলিটিতে এক্সাইল ও ইউরোপ , এবং নিউ ইয়র্ক আর্বানিটি জায়গা পেয়ে বসছে।
মনে করে দেখুন পোল্যান্ডের পর্ণোগ্রাফিয়ার লেখক উইটোল্ড গোম্বরোউইচ , শেষ জীবনটা কাটাচ্ছেন বুয়েনাস এয়ারেস এ, এমিগ্রে পলিটিক্স এ যেখুব জড়াচ্ছেন তার না। ১৯৪৫ এর আগে থেকেই রাইট উই়ং লোকেরা আর্জেন্টিনায়, বামপন্থী বিপ্লবীরা মেক্সিকোতে ইত্যাদিতে নানা কারণে গিয়ে উপস্থিত হতো, যুদ্ধ থেকে পালানো, নিজের দেশের নতুন এমার্জিং অর্ডার থেকে পালানো, ফ্যাসিস্ট দের সাদা স্বর্গের হাতছানি, আবার নতুন বিপ্লব সম্বভাবনা সব ই তার মধ্যে ছিল। গোম্বরোউইচের কথা বললাম, একটা দশক আগে ভিকটোর সার্জ অফ অল পিপল , মস্কো থেকে ব্রাসেলসে বহুদিনবাদে ফিরে আবার ট্রটস্কির পেছন পেছন মেক্সিকো গেছিলেন। অন্যদিকে বুল্গাকভদের যে মস্কোর আন্ডারগ্রাউন্ড আড্ডা সেটা কখনোই পশ্চিমের সঙ্গে যোগাযোগ হারায় নি। আপনি ওলগা গ্রুশিনের ড্রিমস অফ সুখানভ বা ভ্লাদিমির সোরোকিন দের লেখায় এর আন্দাজ পাবেন। ছয়ের দশকে পালিয়ে আসা কুন্দেরা তো সরাসরি ফরাসী কমিউনিস্ট আরাগোঁর সহায়তা পাচ্ছেন। এবং প্রবল কমিউনিস্ট বিরোধিতা র আইকন হয়েও সেটা স্বীকার করছেন। এই যোগাযোগ গুলো না থাকলে এবং তাতে প্রতিষ্ঠানের মধ্যেই ব্যক্তিগত ও সাবভার্সিভ অনুমোদন না থাকলে গ্রোসম্যান , এরেনবুর্গ, আখতামোভা, পাস্তেরনাক, ম্যান্ডেলস্টামদের টেক্সট পশ্চিমে এসে পৌছতোনা কয়েক দশক ধরে , কোল্ড ওয়ারের মধ্যে।
আসলে সোভিয়েত ইউনিয়নে স্বপ্নের মৃত্যু টা নানা ফর্ম নিচ্ছে, কোথাও কলোনি র সাংস্কৃতিক স্বাধীনতার আকাঙ্খার যে ধারা তার সঙ্গে জুড়ে গিয়ে লোকে বুঝছে সোশালিস
ট রিয়ালিজম চলবেনা আমার কল্পনার স্বাধীনতা কে ফেরাতে হবে , এ ই করতে গিয়ে কোথাও ম্যাজিক রিয়ালিজম হচ্ছে, কোথাও মর্ডানিজমেই আস্থা থাকছে ( আরবে এটাই বেশি হচ্ছে, যেটা একটু পরে লাতিন আমেরিকাতেই হচ্ছে) , আবার রাশিয়ার অভ্যন্তরে যেমন একদিকে বুল্গাটভ রা বা আর্টে অন্য নিরীক্ষাবাদীরা তারা সকলেই পোট মর্ডানিস্ট নন, অন্যদিকে সোশ্যালিস্ট রিয়ালিজমের ধারাতেই স্টালিনিজমের সবচেয়ে সাসটেইনড ক্রিটিসিজম আনছেন গ্রোসম্যান এবং এরেনবুর্গ।
ইত্যাদি।
সাতের দশকের একদিকে শান্তি আন্দোলন আর সিভিল রাইটস আন্দোলনে জয় , বিপ্লব প্রচেষ্টা গুলির পরাজয় এবং বছর কুড়ি বাদে সোভিয়েত পতনের আগেই বিকল্পের ধারণায় বড় ধাক্কা লেগে গেছে, আস্তে আস্তে সেই বৃহৎ পরাজয় রাডিকাল রাইটিং এর সমস্ত ধারাকেই ওয়েলফেয়ার স্টেটের ফাইন টিউনিং এ পর্যবসিত করছে। অন্তত ইউরোপীয় ভাষার জগতটায়। বোলানো তার ব্যতিক্রম নন, মূলতঃ কবি বলে এবং ১৮-১৯ বছর বয়সের বাচ্চাদের মত রাগটাকে আমরা একটু আহ্লাদ বেশি দেই। সেটা ঠিকই আছে। তবে বোলানো কে আমি ভিয়া মাতাসের থেকে সম্মান একটু বেশি করি , হিস্ট্রি অফ পোর্টেবল লিটারেচার এর অন্যান্য বক্তব্যের মধ্যে যেটা আকচুয়ালি আপত্তিকর এবং গদগদ বোধ করার কোনো কারণ নেই সেটা হল সরাসরি বলছেন আর মহত সাহিত্য হবার কোনো সম।ভাবনা খুব কম, হিউমর হিসেবেই বলছেন কিন্তু এটার জন্য ওনাকে আমি অন্তত সারাজীবন প্যাঁক দেবো। এগুলি বলা উচিত, এবং পাঠ অভিজ্ঞতা র রমরমার বাজারে ক্রিটিসিজমের ট্রাডিশনকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য এটুকু আমরা করতেই পারি। :--))))