এই লেখাগুলি একবার ভেবেছিলাম ধারাবাহিক ভাবে লিখব। মূলত নিজের জন্যই। কিন্তু কোনো কিছুই তো আমি একটানা করে যেতে পারি না, ধৈর্যচ্যুতি ঘটে। স্বভাবতই কয়েকটা লেখার পর, বন্ধ হয়ে গিয়েছিল লেখা। আবারও মনে হল দু'একটি লিখি। এই মোড-টা থাকতে থাকতে আবারও তাই গোটা কয়েক লিখে ফেলব আশা করি। আজ যার কথা লিখছি, তিনি একজন বিজ্ঞানী। নাম ফ্রিটজ্ হেবার। তা হেবার যা করেছিলেন, একজন 'দেশভক্ত' নাৎসি বিজ্ঞানীর তাই-ই করবার কথা ছিল। 'দেশভক্ত' লিখলাম ইচ্ছে করেই। কেননা একজন 'ভক্ত'ই পারে তার সকল প্রকার বৌদ্ধিক-সামর্থ্য দিয়ে সামরিক শাসক/ ফ্যাসিস্ট শাসককে দ্বিধাহীন সাহায্য বা প্রশ্নহীন আনুগত্য প্রদর্শন করতে। কিন্তু তিনি যেমন 'দেশভক্ত' জার্মান ছিলেন, তেমনই ছিলেন ইহুদীও। গণ্ডগোলটা হল এখানে। এখানে উল্লেখ থাক, হেবার ছিলেন বিজ্ঞানী হিসেবে অসম্ভব মেধাবী। কিন্তু ভুলভাল-'দেশপ্রেম' হল সেই আফিম যা সমান ঐন্দ্রজালিক নেশা তৈরি করে মেধাবী-মননের ক্ষেত্রেও। যারা এ দেশেও দু, দশটা ডিটেনশন ক্যাম্প তৈরিতে প্রত্যক্ষ মদত বা শ্রম দিতে হয়ত অপারগ কিন্তু অমন কিছু হলে মাইন্ড করবেন না, এই লেখাটা লিখতে গিয়ে বড্ড তাদের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে, বিশেষত সেই সব বাঙ্গালীকে। যাইহোক ফ্রিটজ হেবার কেমিক্যাল ওয়ারফেয়ারের একজন পুরোধা পুরুষ। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ সংঘটিত হবার সময়ই হেবার একজন মোটামুটি বিখ্যাত ব্যক্তি ছিলেন। বিশিষ্ট জার্মানদের একটি পিটিশনে তিনি যুদ্ধের আহ্বান জানিয়ে স্বাক্ষরও করেছিলেন। সেতো আর কোনো ফেসবুক-যুগ নয়, যে একটি গুরুত্বপূর্ণ পিটিশনে কতিপয় গুণী পুরোধা মানুষের স্বাক্ষরের তলায় নিজেও স্বাক্ষর করে, 'আম্মোও থাকলাম' বলে সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করে দিলাম! হ্যাঁ তো যা বলছিলাম, তিনি যথেষ্টই প্রভাবশালী ছিলেন এবং তাঁর হস্তাক্ষর ওই আবেদনপত্রটির কিছুটা হলেও ধারভার বাড়িয়েছিল। বলাই বাহুল্য এ ছিল নাৎসিদের ক্ষমতা দখলের একদম প্রথমদিককার কথা। এবং ফ্রিটজ হেবারের মতো মানুষেরা, যুদ্ধবাজ বুদ্ধিজীবীরাই নাৎসিদের ‘কালো-হাত’ শক্ত করতে সাহায্য করেছিল, না হলে হিটলারের একার পক্ষে এত বড় জেনোসাইডটি সংগঠিত করা সম্ভবপর হত না। তারপরে, যখন পরিকল্পনা-মাফিক সব এগুচ্ছিল না, তখন হেবার বিপক্ষের ট্রেঞ্চগুলিতে যাতে বিষাক্ত গ্যাস ব্যবহার করে একদম অমানবিক আঘাত হানা যায়, সে ব্যাপারে সরকারকে উৎসাহিত করতে খুবই সচেষ্ট হয়ে উঠলেন। তিনি শুধু বিষ-গ্যাস উৎপাদন করাতেই তাঁর দায়িত্ব শেষ, এমনটা ভাবেননি। সেই গ্যাস কীভাবে দক্ষতার সঙ্গে ব্যাবহার করা যায় এ-ব্যাপারে জার্মান আর্মি জেনারেলদের রীতিমতো ক্লাস নিতেন মিঃ হেবার। এমনকি এ সময় ইপ্রাতে ব্যক্তিগতভাবে বিষাক্ত গ্যাস ব্যাবহারের তদারকিতেও গেছিলেন তিনি। হেবারের স্ত্রী, তিনিও একজন রসায়নবিদ এবং রাজনীতিবিদ, পুরো বিষয়টি জেনেবুঝে এতটাই আতঙ্কগ্রস্ত ও অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন যে তিনি তাঁদের ব্যক্তিগত বাগানের লনে বসে নিজের মাথায় নিজে গুলি চালান। তাঁদের ১২ বছরের ছেলে হারমান গুলির শব্দ শুনে বেরিয়ে এসে দ্যাখে মা সুইসাইড অ্যাটেম্পট করেছে এবং সফলও হয়েছে। কিন্তু ঠিক ওই সময়েই অ্যাসহোল হেবারের বিষাক্ত-গ্যাস উৎপাদন ও ব্যাবহার বা এই সংক্রান্ত একটা প্রজেক্টে যাবার কথা ছিল, ফলে তিনি দেশভক্তি দেখাবার এরকম একটা চূড়ান্ত সুযোগ এই সামান্য ব্যাপারে হাতছাড়া করতে চাইলেন না। সবার আগে 'দেশসেবা' এবং 'ডিউটি', এটা ভেবে তিনি মা-মরা ছেলে এবং এই রক্তাক্ত দৃশ্যপটের সমস্ত দায়িত্ব চাকরবাকরদের উপর দিয়ে, রাশিয়ানদের উপর গ্যাস প্রয়োগ করে তাদেরকে কত দ্রুত পোকামাকড়ের মতো মেরে ফেলা যায়, সেই পরিকল্পনায় নেতৃত্ব দিতে সিন ছেড়ে চলে যান। পরবর্তীকালে অবশ্য হেবারের এই ছেলেও আত্মহত্যা করেন। তাঁকে দোষ দেওয়া যায় না।
প্রথম এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মাঝামাঝি সময়েই নাৎসিরা পুরোপুরি ক্ষমতা দখল করে বসে। কিন্তু এটা ফ্রিটজ হেবারকে একটা সাঙ্ঘাতিক কঠিন অবস্থায় ফেলে দেয়। কারণ তিনি যতটা জার্মান ছিলেন ততটাই তিনি তার আশেপাশের লোকজনকে দেখাতে চাইতেন যে তিনি তার দেশের জন্য তিনি কতখানি ইম্পরট্যান্ট। ফ্রিটজ হেবার শুধুমাত্র একজন নিষ্ক্রিয় ম্যাদামারা ইহুদিই ছিলেন না, তিনি ছিলেন একজন উচ্চকিত জার্মান 'দেশভক্ত' পরিচিত বিজ্ঞানী। ফলে গোপনে তাকে তার দেশ ছাড়তে হয়েছিল। এমনকি এটা বলাও বাহুল্য হবে না যে এই দেশত্যাগই তার মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
প্যালেস্টাইনে এ সময় সেইম ওয়েসমান (Chaim Weizmann) নামে একজন ইহুদি বিজ্ঞানী (রাশিয়ায় জন্ম, পরে ইজরায়েলের প্রথম প্রেসিডেন্ট) এই উন্মাদ জার্মানটির মেধার সত্যিকারের মূল্য বুঝতে পেরেছিলেন। তিনি আন্তরিক ভাবে চেয়েছিলেন যে হেবার যেন ফিলিস্তিনিদের সাহায্য করতে আসেন। ভগ্নহৃদয় হেবার নিজেও এটা বিবেচনা করেছিলেন। কিন্তু এরকম কিছু ঘটবার আগেই তিনি ১৯৩৪ সালে ব্যাসল শহরে মারা যান। তাঁর নিজের পিতৃভূমিই যে তাকে প্রত্যাখ্যান করেছিল, এটা হাবের কিছুতেই মেনে নিতে পারেননি। নিজেকে তিনি সর্বদাই প্রথমে জার্মান, পরে ইহুদি বিবেচনা করেছিলেন। তিনি কিছুতেই এটা মেনে নিতে পারেননি যে তিনি এখনো 'যথেষ্ট জার্মান' নন।
হেবারের দ্বিতীয় স্ত্রী সন্তান ও নাতি-নাতনিরা, জার্মানিতে তাঁর বিজ্ঞানী বন্ধুদের সহায়তায়, সময়মতো জার্মানি থেকে বেরিয়ে যেতে পেরেছিলেন। তাঁর বোন এবং তাঁর দুই সন্তান কিন্তু এত ভাগ্যবান ছিল না। ১৯৪২ সালে তাঁরা নাৎসিদের দ্বারা প্রদত্ত হেবারের আবিষ্কৃত বিষাক্ত-গ্যাস প্রয়োগের ফলেই মারা যান।
২
কিন্তু শুধুই নাগপুর-আদর্শে আদর্শায়িত বাঙালি কারিয়াকর্তাদের আঁতে ঘা মারার উদ্দেশ্যে এই লেখাটা লিখিনি। বিজ্ঞানী হেবারের সবচেয়ে বড় অবদানের কথা লেখাও আরেকটি উদ্দেশ্য। বাংলাবাজারে একটা কিচিরমিচির প্রায়ই শোনা যায়, বাংলা-সাহিত্যে কার কতটকু অবদান। নিজেদের নাম না বললেও (অবশ্যই অনেককে তাও বলতে শুনেছি) নিজের পছন্দের কবি-সাহিত্যিকদের গুরুত্বের কথা তুলে আনাই এইসব আলোচনার মূল উদ্দেশ্য কখনো কখনো মনে হয়। মূলত কবিতা নিয়ে, সম্প্রতি কবি স্বর্ণেন্দু সেনগুপ্ত ও কৌশিক বাজারির এক চমৎকার কথোপকথন পড়বার সুযোগ হল। সেখানে কৌশিক বললেন "প্রকৃত অর্থে কবি, তথা সাধক, এক শতাব্দীতে অল্পই জন্মান। মাইকেল, রবীন্দ্রনাথ, জীবনানন্দ, বিনয় এরকম যারা, পথ প্রদর্শক। যারা একটা ভিন্ন মার্গ দেখান ভিন্ন ভিন্ন সময় কালে। বাকি রইলাম আমরা, যারা সেই সেতু বন্ধনের কাঠবেড়ালি। অল্প সাধ্য অল্প শক্তি নিয়ে বয়ে চলেছি বাংলা কবিতার ধুলো। যা কিন্তু কম নয়! আবার বেশিও নয়। কিন্তু বড্ড প্রাণের কাজ। একজন কৃত্তিবাস থেকে একজন মাইকেলের মাঝে রয়ে গেছে অসংখ্য গৌণ কবি। তারাই ধারক, যারা না থাকলে, ভাষা প্রকৃত অর্থে মৃত্যুর দিকে যায়।" আবার তারও একটু আগেই স্বর্ণেন্দু চমৎকার বলেছেন যে "আজীবন যে কাজটার জন্য আমরা নিজেদের উৎসর্গ করি, বা যে কাজটা নিয়ে থাকি, তার আদৌ কোনো তাৎপর্য থেকে যাচ্ছে কিনা, এমন একটি সংশয়, মনের অবচেতনে হলেও ক্রিয়াশীল থাকে।" কিন্তু এ তো গেল সাহিত্যের কথা, সংস্কৃতির কথা। কিন্তু বৃহত্তর সামাজিক দিক থেকে আরও একটি আলোচনাও সম্ভব যে মানুষের সভ্যতায় ব্যক্তি-মানুষের অবদান বা তাৎপর্য কী। না বললেও চলে, অন্তত এই একটা বিষয়ে আমার কোনো সংশয়ই নেই যে ব্যক্তিগত ভাবে আমি সম্পূর্ণত একজন সামাজিক অবদানহীন মানুষ। কিন্তু এই যারা আমার মতন, কোনো কিছুতেই কোনো অবদান নেই, রিসোর্স ধ্বংস করা ছাড়া, তারা ছাড়াও, সংখ্যায় কম হলেও একধরণের মানুষ থাকেন যাদের সাহায্য ছাড়া সভ্যতা ঠিক এই গতিতে এগুতে পারত না, বা আজ তার রূপ হত অন্য। এখন কিছুক্ষণের জন্য ধরুন, ধরে নেওয়া যাক, যা হয়েছে সবটাই ভালোর জন্য হয়েছে। অবশ্য কেউ কেউ নিশ্চয়ই বলবেন সভ্যতায় এই যুগান্তকারী অবদান রাখা বা সভ্যতার সেইসব 'ভালো-করা' মানুষগুলি একজন যদি না জন্মাতেন, তার জায়গায় অন্য কেউ নিশ্চয়ই আসতেন। এটা সম্পূর্ণ অন্য এক প্রতর্ক। এখানে সে প্রসঙ্গে যাচ্ছি না। কথাটা হল আমরা যারা আক্ষরিক অর্থেই আমজনতা, তাদের নাটকীয় সংখ্যাবৃদ্ধি কী অবশ্যম্ভাবী ছিল? চাঁছাছোলা পরিসংখ্যান কিন্তু তা বলছে না। সম্ভবত, এই ‘ভালো’র জন্য দায়ী ফ্রিটজ হেবার আবিষ্কৃত হেবার প্রসেস।
আপনি হেবার প্রসেসের সাথে পরিচিত নাও হতে পারেন, কিন্তু বিশ্বাস করুন, আপনিও অঙ্গাঙ্গী জড়িত এই প্রসেসটির সঙ্গে। হ্যাঁ আক্ষরিক অর্থেই। আপনার শরীরের সমস্ত পুষ্টিকণার পিছনে এই হেবার প্রসেসের নিশ্চিত ভাবেই অবদান আছে। উনিশ শতকের শেষ দশকগুলিতে কৃষিক্ষেত্র হতে উৎপাদিত খাদ্যশস্য, পৃথিবীর জনসংখ্যার অনুপাতে যথেষ্ট ছিল না। দুর্ভিক্ষ ইত্যাদি লেগেই থাকত। সার হিসাবে ব্যবহার করার জন্য সবচেয়ে মূল্যবান পণ্যগুলির মধ্যে একটি ছিল পাখির বিষ্ঠা। কৃষিবিজ্ঞানীরা এবং চাষবাসের সঙ্গে জড়িত সকলেই জানতেন নাইট্রোজেন ভিত্তিক এই সারটি কৃষিক্ষেত্রে উৎপাদনশীলতায় মিরাক্যল ঘটাতে পারে। সত্যি বলতে কী নাইট্রোজেন গ্যাস বায়ুমণ্ডলে আছেও প্রচুর পরিমাণে। তবে তা প্রকৃতি থেকে নিয়ে কৃষিতে ব্যবহারযোগ্য করে তোলা ছিল অসম্ভব এনার্জি কনজিউমিং।
হেবার বাতাস থেকে নাইট্রোজেন ইনপুট করে অ্যামোনিয়াকে আউটপুট হিসেবে পাবার একটি কার্যকর প্রক্রিয়া আবিষ্কার করেছিলেন। তিনি এর জন্য নোবেল পুরষ্কারও জিতেছিলেন। তবে মানব সভ্যতায় এই পদ্ধতিটির অবদানের কথা ভাবলে পৃথিবীর সর্বোচ্চ পুরষ্কারও কিছুই না। বস্তুত হেবার প্রক্রিয়াই পৃথিবীর পক্ষে তুলনামূলক-ভাবে বিশাল একটি জনসংখ্যাকে পর্যাপ্ত খাইয়ে বাঁচিয়ে রেখেছে এবং ক্রমাগত বংশবৃদ্ধিতে সাহায্য করেছে।
হেবার এই পদ্ধতিটি আবিষ্কারের করার সময় প্রায় ১.৬ বিলিয়ন মানুষ ছিল, আর এখন পৃথিবীর জনসংখ্যা প্রায় সাত বিলিয়ন। হেবার পদ্ধতিতে উৎপাদিত নাইট্রোজেন সার ছাড়া, এই জনসংখ্যা, ১.৬ বিলিয়নের দ্বিগুণ অর্থাৎ ৩.২ বিলিয়নেও পৌঁছাত কিনা সন্দেহ আছে! কৃষি-উৎপাদনের ব্যবস্থার সেই ক্ষমতাটাই ছিল না যে ৩ বিলিয়নের উপর মানুষকে খাবারের যোগান দেবে! আর খেতে না-পেলে, বলাই বাহুল্য এই জন-বিস্ফোরণও ঘটত না। তা অবশ্য ভালো হত না খারাপ হত সে অন্য প্রশ্ন।
যাইহোক, কৃষিকাজের জন্য হেবার-পদ্ধতিতে অ্যামোনিয়া উৎপাদন আজ একটি বিশাল শিল্প। প্রতিটি মানুষের দেহে যে নাইট্রোজেন, তার সবচেয়ে বড় অংশটাই এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে উৎপাদিত হয়। এটা খুবই সম্ভব যে, আমি এবং আমার মতো অধিকাংশ মানুষই জন্মাতই না, যদি না ফ্রিটজ হাবের, হেবার প্রসেস আবিষ্কার করতেন।
আমি যদি না-ই জন্মাতাম? সম্ভবত বেঁচে যেতাম।
মাননীয় মণিশঙ্কর বাবু ,
মনে হচ্ছে আপনার লেখাটিতে ঐতিহাসিক তথ্যগত কিছু অসঙ্গতি আছে। "
"তা হেবার যা করেছিলেন, একজন 'দেশভক্ত' নাৎসি বিজ্ঞানীর তাই-ই করবার কথা ছিল। 'দেশভক্ত' লিখলাম ইচ্ছে করেই। কেননা একজন 'ভক্ত'ই পারে তার সকল প্রকার বৌদ্ধিক-সামর্থ্য দিয়ে সামরিক শাসক/ ফ্যাসিস্ট শাসককে দ্বিধাহীন সাহায্য বা প্রশ্নহীন আনুগত্য প্রদর্শন করতে। "
Nazi পার্টি ১৯৩২ সালে জর্ম্মনির Weimar Republic এর সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠ দল রূপে ক্ষমতালাভ করে এবং ১৯৩৩ সালে Adolf Hitler দেশের একনায়ক রূপে Chancellor এর পদে সমাসীন হন। এর পর Nazi Party জর্ম্মনির শিল্প বাণিজ্য অর্থব্যবস্থা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও গবেষণাগার সমূহ এবং, সর্বোপরি, সামরিক বাহিনী নিজেদের প্রতক্ষ্য বা পরোক্ষ্য নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে। এর পূর্বে, অর্থাৎ ১৯২০ থেকে ১৯৩২ কালে, Sturmabteilung ও Schutzstaffel জাতীয় militia ছাড়া, আর কিছুই তাদের ক্ষমতার আওতায় ছিল না। Nazi পার্টি সংসদে ক্ষমতায় আসার পর তারা তাদের জাতিগত বিশুদ্ধতা নীতি অনুসারে উপরোক্ত সকল সংস্থা দখল করে সেখানকার ইহুদী পদাধিকারীদের বহিষ্কার করে আর্য্যরক্তবাহী জর্ম্মনদের নিযুক্ত কারতে সচেষ্ঠ হয়। Fritz Haber ইহুদীধর্ম থেকে ধর্মান্তরিত খৃষ্টান হবার কারণে কোপদৃষ্টিতে পড়েন এবং Kaiser-Wilhelm-Institut für Physikalische und Elektrochemie গবেষণাগার এর অধ্যক্ষের পদ ত্যাগ করতে বাধ্য হন। দুই বিশ্বযুদ্ধের মাঝের সময়ে জর্ম্মনির অতি ভয়ানক মুদ্রাস্ফীতির কারণে তিনি প্রায় দেউলিয়া হয়ে পড়েছিলেন। অতঃপর তিনি ইংলন্ডে আশ্রয় নেন এবং ১৯৩৪ এ switzerland এর basel শহরে তাঁর জীবনাবসান ঘটে।
লক্ষ্য করার বিষয় হচ্ছে :
অতএব ঐতিহাসিক ঘটনাবলী ও নথিপত্রের ভিত্তিতে Fritz Haber কে Nazi বিজ্ঞানী এবং Fascist সরকারের অনুগত সাহায্যকারী বলা ঐতিহাসিক সত্যের অপলাপ হবে।
Ref:
- Fritz Haber (1868-1934) - Chemiker, Nobelpreisträger, Nationalist und Opfer des Nationalsozialismus. Die Ammoniaksynthese - "Brot aus Luft" , Monnich, Michale W, Grenzüberschreitungen in der Pharmazie : die Vorträge der Pharmaziehistorischen Biennale in Meißen vom 22. bis 24. Apr 2016, ISBN: 978-3-8047-3688-7
- Dem Vaterlande – solange es dies wünscht; Fritz Habers Rucktritt 1933, Tod 1934 und Fritz-Haber-Gedachtnisfeier, Deichmann Ute, Chemie in unserer Zeit, Vol 30(3), pp 141-149, Jun 1996
আমাদের একথাও মনে রাখতে হবে যে জর্ম্মনী এবং জর্ম্মন বৈজ্ঞানিকগণই আপনার দ্বারা আখ্যায়িত পায়ুছিদ্র ছিলেন না। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ফরাসী সেনাবাহিনী ১৯১৪ সালে xylyl bromide টিয়ার গ্যাস জর্ম্মন সেনার বিরুদ্ধে ব্যবহার করে। জর্ম্মন বাহিনী Ypres দ্বিতীয় যুদ্ধে Chlorine গ্যাস ব্যবহার করে সেই আঘাত কয়েক গুণ করে ফিরিয়ে দেয়। এরপর ইংরেজ ও মার্কিন সেনাবাহিনীও পাইকারি ভাবে যুদ্ধক্ষেত্ৰে বিষাক্ত গ্যাস ব্যবহার করতে আরম্ভ করে। পরবর্তী কালের মার্কিন রাষ্ট্রপতি Harry Truman একটি বিষাক্ত গ্যাস ক্ষেপণকারী platoon এর lieutenant ছিলেন।
এ যুদ্ধ, ফুটবল ম্যাচ নয়। এখানে ঢিলটি মারলে গোলাটি খেতে হয়। গোলা ছুঁড়লে বোমা খেতে হয়। না হলে মরে যেতে হয়, মরে গেলে শৃগাল কুক্কুরে ছিঁড়ে খায়। যুদ্ধের এই সার সত্য।
Ref:
Histoire de gaz de combat durant la Premiere Guerre Mondiale - https://www.centenaire.org/sites/default/files/references-files/histoire_des_gaz_de_combat_durant_la_premiere_guerre_mondiale.pdf
Fritz Haberকে পায়ুছিদ্র আখ্যা দেবার স্বাধীনতা আপনার নিশ্চয় আছে ।
কিন্তু তাহলে Albert Einstein কে কী বলবেন যিনি মার্কিন রাষ্ট্রপতি Roosevelt কে আণবিক বোমা প্রস্তুত করার জন্য সনির্বন্ধ অনুরোধ জানিয়ে চিঠি লিখেছিলেন?
অথবা Robert Oppenheimer কে, যিনি জাপানে মার্কিনি বায়ুসেনা আণবিক বোমা ফেলার পর গীতা (১১, ৩২) থেকে উদ্ধৃত করে বলেছিলেন "कालोऽस्मि लोकक्षयकृत्प्रवृद्धो लोकान्समाहर्तुमिह प्रवृत्तः" ?
ভবদীয়
"জাপানে মার্কিনি বায়ুসেনা আণবিক বোমা ফেলার পর গীতা (১১, ৩২) থেকে উদ্ধৃত করে" - এটা মনে হয় ঠিক নয়।
ওপেনহাইমার নিজের চোখে দেখেছিলেন মেক্সিকোর Alamagordo মরুভূমিতে প্রথম আণবিক বোমা বিস্ফোরণের পরীক্ষা, যাকে ট্রিনিটি টেস্ট বলা হয়। ১৬ই জুলাই ১৯৪৫। এই পরীক্ষার ভয়াবহ চেহারা দেখে তিনি ওই শ্লোকটি উচ্চারণ করেন বলে শোনা যায়।
@গবু
ধন্যবাদ। কিন্তু লেখা সংশোধন করার উপায় নেই।