মূল গল্প: Henri J. W. Nouwen
প্রচলিত রূপ: Pablo Molinero
মাতৃগর্ভে দুটি শিশুর কথোপকথন।
একজন, অপরজনকে বলল, এখান থেকে নিষ্ক্রান্ত হবার পরেও জীবন আছে, তুমি মনে করো? অবশ্যই, অপরজন উত্তর করল। "ভূমিষ্ঠ হবার পরে কিছু তো একটা থাকবেই! হয়তো আমাদের এই জীবন সেই জীবনের জন্যই এক প্রস্তুতিপর্ব।" "অবাস্তব" প্রথম জন বলল, "ভূমিষ্ঠ হবার পর জীবন থাকতেই পারে না। থাকলেও সে জীবন, কেমন জীবন?"
দ্বিতীয় জন বলল, আমি জানি না, হয়তো আরও বেশি আলো থাকবে সে জীবনে...হয়তো আমরা আমাদের পা দু’টো ব্যবহার করে অনেক দূর হেঁটে যেতে পারব, মুখ ব্যবহার করে খেতে পারব।...হতে পারে আমাদের আরও অনুভব, নতুন নতুন ইন্দ্রিয়বোধ তৈরি হবে, যা আমরা এখনও ভাবতেও পারি না।
প্রথম জন উত্তর দিল, "এটা অসম্ভব। হাঁটব! কী করে? আর মুখ দিয়ে খাওয়া, তাও কী সম্ভব? এ-তো হাস্যকর। আমাদের যতটুকু পুষ্টি প্রয়োজন নাভিরজ্জু দিয়ে ততটাই আমরা পেয়ে যাই। নাভিরজ্জু দিয়ে তো আমরা বাঁধা! নাড়ি কাটবার পর জীবন! নাহ্, এর কোনো যৌক্তিকতা নেই!
দ্বিতীয় উত্তরে বলল, "হুম, কিন্তু আমার ধারণা, কিছু একটা আছে...যা এখান থেকে সম্পূর্ণ অন্যরকম...হতে পারে সেখানে এই ছোট শারীরিক নাভিরজ্জুর আর কোনো প্রয়োজনই থাকল না।
প্রথম জন, "এটা আরেকটা অসার কল্পনা। সবচেয়ে বড় কথা, যদি জীবনই থাকবে সেখানে, কেন সেখান থেকে কেউ আজ পর্যন্ত ফিরে এল না!"
"আমি জানি না", দ্বিতীয় বলল, "কিন্তু নিশ্চিত করেই সেখানে মায়ের সঙ্গে দেখা হবে, সে-ই করবে আমাদের দেখাশোনা, সব দায়িত্ব নেবে আমাদের"
প্রথম জন, "মা! তুমি তাহলে মায়ের ধারণায় বিশ্বাস করো!? এ-তো আরও হাস্যকর! যদি মা থেকেই থাকে, এখন সে কোথায়?"
দ্বিতীয় জন বলল, "আমরা মা-র ভিতরেই আছি এখন। মা আমাদের ঘিরে আছে সবসময়। আমরা তার শরীর থেকেই উদ্ভূত। তাকে ছাড়া এই জগত সম্ভব নয়, এ বিশ্ব অবাস্তব।"
প্রথম জন বলল, "হ্যাঁ, কিন্তু আমি তাকে দেখছি না, তাঁর অস্তিত্ব আমাদের যুক্তিগ্রাহ্যতার বাইরে"
"অনেক সময় যখন শান্ত, নীরব, ধ্যানস্থ তুমি, অস্পষ্ট হলেও বুঝতে পারবে তাঁর উপস্থিতি, তাঁর ভালোবাসা। শুনতে পারবে তাঁর দয়ার্দ্র স্বর, ওই ওখান থেকে আসছে, এক 'গভীর নির্জন পথে'!
আমার যদি কিছু বিস্ময়কর মনে হয়, তা হল এই, আজও বহু মানুষ, ঈশ্বর বলতে, মহাবিশ্ব বলতে, ঈশ্বরের ধারণা বলতে অন্য কিছু বোঝেন, আজও।
পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।