এই লেখাটি ২০ এপ্রিল আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত 'নাগরিকের চিন্তার উপর নিয়ন্ত্রণ' শীর্ষক লেখার পরিবর্ধিত রূপ'
শ্বেতাঙ্গ-আধিপত্যে বিশ্বাসী ট্রাম্প-ভক্তকুল যখন ক্যাপিটল হিলে তাণ্ডব চালাচ্ছেন, তাঁদের সমবেত কণ্ঠে তখন আফ্রো-ক্যারিবিয়ান সংগীত, বব মারলির গান। তিনটি পাখি ভোরবেলা কবির জানালার কাছে এসে বলছে যে চিন্তা করার কিছুই নেই, সব ঠিক হয়ে যাবে। বছর সাতেক আগে ইউকে ইনডিপেনডেন্স পার্টি, ব্রেক্সিট-এর প্রচারের জন্য একটি ক্যালিপ্সো রচনা করে। বাইরে থেকে এসে সবাই ভূমিপুত্রদের চাকরি কেড়ে নিচ্ছে একথা গায়ক বুঝিয়েছেন তাঁর মেকি ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান উচ্চারণে। এই যে উদারবাদীদের সৃষ্টিগুলি দক্ষিণপন্থীরা বিবেক বিসর্জন দিয়ে অনায়াসে আপন করে নেয়, এর কারণ কী? সমবেতভাবে গাইতে পারার জন্য জনপ্রিয় গানগুলির নিখুঁত স্বচ্ছন্দ টেম্পো? নাকি আরও কিছু? কারণ একই ব্যাপার আমরা দেখছি পশ্চিমবঙ্গেও। বঙ্গ বিজেপি তাদের প্রচারের জন্য মুষ্টিবদ্ধ হাতের চিত্র ব্যবহার করেছে, যে আজিটপ্রপ চিরকালই ছিল বামপন্থী আন্দোলনের প্রতীক। একথা সত্যি যে, সৃজনশীল হওয়ার জন্য মানুষের চিন্তাশক্তি উন্মুক্ত হতে হয়, যার সম্ভাবনা দক্ষিণপন্থী রক্ষণশীল বাতাবরণে খুবই কম। আবার ১৮টি লোকসভা আসন পেলেও, বাংলার রাজনৈতিক ভাবাদর্শে, মননে এবং দেওয়াল লিখনে বিজেপি এখনো সেই জায়গাটা করে নিতে পারেনি। আর মানুষের মনে জায়গা করে নেওয়ার সবচেয়ে সহজ উপায় হলো প্রচলিত গান বা আর্টের মাধ্যমে বা স্থানীয় আইকনদের নিজেদের বলে চালিয়ে দেওয়া। তাই শ্যামাপ্রসাদের সভা বার বার লোক পাঠিয়ে ভেস্তে দেওয়া সুভাষ বোসের উল্লেখ এখন প্রধানমন্ত্রীর প্রায় প্রত্যেক ভাষণেই আসে।
আসলে এই মানে পাল্টে দেওয়ার কাজটা বেশ ভেবেচিন্তেই করে ফ্যাসিস্ট দলগুলো। অরওয়েলের ডিস্টোপিয়ান জগতে শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব যে মন্ত্রকের ওপর ছিল তার নাম 'শান্তি মন্ত্রক'। 'সত্য' মন্ত্রকের দায়িত্বের মধ্যে ছিল সংবাদের ওপর নিয়ন্ত্রণ আর লিখিত ইতিহাস প্রয়োজনমতন পাল্টে দেওয়া। অতীতে যা ঘটেছে সেটাকে নিজেদের মতন করে সাজালে ভবিষ্যৎকেও নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। তাই ইতিহাস বইয়ে হলদিঘাটিতে রানা প্রতাপ পরাজিত করলেন আকবরকে। আবার 'ডবল থিঙ্ক'-এর কনসেপ্ট প্রয়োগ করে একই শব্দ যুগপৎভাবে পরস্পরবিরোধী অর্থে ব্যবহৃত হওয়া দরকার যাতে আসল মানেটার কথা মানুষের মন থেকে মুছে যায় চিরতরে। সেই কারণেই ধর্মনিরপেক্ষ এখন 'সিকুলার', অসুস্থ হওয়ার সামিল। যিনি ধর্মীয় গোঁড়ামির বিরোধী, আজ তিনি 'লিবটার্ড'।
যুক্তির বিরুদ্ধ যুক্তি প্রয়োগ করে বাস্তবকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, পরস্পরবিরোধী সত্যে বিশ্বাস করতে হবে। অনেকসময় আবার সত্যিটাকে শুধু উহ্য রাখলেই কাজ হয়ে যায়। সেদিন প্রধানমন্ত্রী বললেন যে ব্যবসা করা দেশের নির্বাচিত সরকারের কাজ না। একদম ঠিক কথা বলেছেন। কিন্তু সেই জন্যই নাকি রাষ্ট্রায়ত্ব সংস্থাগুলিকে বেচে দেওয়া ভীষণভাবে প্রয়োজন - এই কথাটিও জুড়ে দিলেন তিনি। মুনাফার জন্য যে সরকারি সংস্থা তৈরী হয়নি, তৈরী হয়েছিল জনসেবা করার জন্য সে কথা তিনি বললেন না। ভারতীয় রেলের উদ্দেশ্য ছিল বিপুল সংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থান করিয়ে রেলপথে যাতায়াত গরিব মানুষের কাছে সুলভ করা। বিএসএনএল-এর কাজ নয় জিওর মতন কোনো বেসরকারি কোম্পানির সাথে প্রতিযোগিতা করা।
ফ্যাসিবাদের ভারতীয় সংস্করণ হিন্দুত্ববাদের নাটকটি মূলত তিনটি স্তরে অভিনীত হচ্ছে। অনেকটা পিরামিডের আকারে সাজানো প্রতিটি স্তরেই আমরা দেখি 'ডবল থিঙ্ক' নামক এই ভয়ঙ্কর অস্ত্রের প্রয়োগ। ফ্যাসিবাদকে টিকিয়ে রাখতে হলে আবশ্যিকভাবে প্রয়োজন এক শত্রুপক্ষের, এ দেশে যে ভূমিকাটি মুসলিম সমাজ পালন করে চলেছে বহু দিন ধরে। তাঁদের প্রতি ঘৃণাই হলো পিরামিডের ভিত, যে ঘৃণা নিয়ে প্রতিনিয়ত পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে দিলীপ ঘোষ, কপিল মিশ্রদের রসায়নাগারে। একটা জাতিকে সম্পূর্ণভাবে ডিহিউম্যানাইজ করা সম্ভব। কারণ তখনই ধর্ষিতা শিশুটি মুসলমান হলে, ধর্ষকদের বিনা শাস্তিতে মুক্তির দাবিতে মিছিল করা যায়। বারবার বলা হচ্ছে যে মুসলিম পরিবারগুলোতে জন্মের হার এতটাই বেশি যে বছর ত্রিশ পর নাকি দেশে আর কোনো হিন্দু মুখমন্ত্রী হবেন না। সাধারণ অংক করেই কিন্তু দেখানো যায় যে ২০০১ সালের জন্মের হার বজায় থাকলেও ভারতের মুসলিম জনসংখ্যা হিন্দুদের সমান হতে কম করে ২২০ বছর লাগবে - যেটাও কোনোদিনই সম্ভব নয় কারণ জন্মের হার সময়ের সাথে কমতে বাধ্য। জনসংখ্যাবৃদ্ধির মালথুসিয়ান তত্ব আজকাল তার প্রাসঙ্গিকতা হারিয়ে ফেলেছে।
পিরামিডের দ্বিতীয় স্তরে রয়েছে সংঘের ছত্রছায়ায় থাকা বিভিন্ন সংগঠন, যেগুলোর মাধ্যমে হিন্দুত্ববাদ পৌঁছে গেছে শুধুমাত্র ভারতের প্রতিটি প্রান্তেই নয়, সমাজের উপর থেকে নিচের প্রতিটি ধাপেও। সেখানে একদিকে যেমন গৌরক্ষা বাহিনী মুসলমান মেও দুগ্ধব্যবসায়ীকেও পিটিয়ে মেরে ফেলে গরু পাচারকারী হওয়ার অভিযোগে, তেমনি আবার বনবাসী কল্যাণ আশ্রম লেগে থাকে কোনো প্রকার সংগঠিত ধর্মে বিশ্বাস-না-করা আদিবাসীদের হিন্দু 'বানাতে'। ডাইকোটমি হলো যে আরএসএস-এরই মজদুর সংঘ প্রতিবাদে সোচ্চার হয় যখন বিজেপি-শাসিত উত্তর প্রদেশ বা গুজরাটে শ্রমআইন লঘু করে দিয়ে ন্যূনতম কাজের সময়সীমা ৮ থেকে বাড়িয়ে ১২ ঘন্টা করে দেওয়া হয়। আরএসএস-এর ক্যাডারবাহিনী শুধু লাঠি হাতে হাফপ্যান্ট পরে কুচকাওয়াজই করেননা! পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য চলন্ত স্পেশাল ট্রেনে দৌড়ে দৌড়ে তাঁদের জলের বোতল পৌঁছে দেওয়ার ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল বিভিন্ন হোয়াটস্যাপ গ্রুপে। সামাজিক পরিসরে আরএসএস-এর নিত্য উপস্থিতি তাঁদেরকে গ্রহণযোগ্য করে তুলেছে সমাজের চোখে। গত কয়েক বছরে তাদের গ্রহণযোগ্যতা এতটাই বেড়ে গেছে যে দেশের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতিও সংঘের নিমন্ত্রণ উপেক্ষা করতে পারেন না।
পিরামিডের সবচেয়ে ওপরে রয়েছে নরেন্দ্র মোদীর পার্সোনালিটি কাল্ট। ওঁর ক্যারিশমা এমনই যে উনি হুকুম দিলে জনগণ নির্দিষ্ট সময় বারান্দায় সমবেত হয়ে থালা পেটাতেও রাজি। চার ঘন্টার নোটিশ জারি করে নোট বাতিল করে দিলে, মানুষ ঘন্টার পর ঘন্টা, দিনের পর দিন চুপ করে ব্যাঙ্কের লাইনে দাঁড়িয়ে নিজেকে সিয়াচেনের সৈন্য ভাবেন। যে জনতা, অন্য সরকারের রাজত্বে রান্নার সিলিন্ডারের দাম ৫ টাকা বাড়লেও বিক্ষোভে ফেটে পড়তো, এখন ১০০ টাকা বেড়ে গেলেও ভ্রুক্ষেপ করে না। তাঁদের বোঝানো হচ্ছে যে মোদীজির অনেক বড় কিছুর পরিকল্পনায় তাঁরা অংশীদার হচ্ছেন এই সামান্য কিছু বলিদান স্বীকার করে। আবার সেই 'ডবল থিঙ্ক'। এই যে প্রধানমন্ত্রীর ক্রমাগত ভুল পদক্ষেপে সকলকে ভুগতে হচ্ছে, অথচ মানুষ রাগে ফেটে পড়ছেন না, গণতন্ত্রের জন্য এর থেকে বিপজ্জনক আর কিছু হয়না।
আর পিরামিডের ভিত যে ঘৃণা, সেটিকে বজায় রাখার জন্য শত্রুপক্ষকে চিহ্নিত করার অ-রাজনীতি কিন্তু নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে একেবারে পিরামিডের ওপর থেকে, মোদীর হাত ধরেই। প্রজাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে মাঝেমাঝেই তিনি চিনিয়ে দেন কাদের থেকে সাবধানে থাকতে হবে - দাড়ি-টুপিওয়ালা লুঙ্গি পরিহিত মুসলমানদের থেকে, নাকি সেই 'আন্দোলনজীবী' যাঁরা সরকারের নীতির প্রতিবাদ করতে চান, তাঁদের থেকে। মাঝেমাঝে এই 'গণশত্রুদের' চিনিয়ে দেওয়ার অজুহাতে মানুষের দৃষ্টি অন্যদিকে ঘুরিয়ে দিলে, আরেক দিক দিয়ে সকলের দৃষ্টি এড়িয়ে আদানি, আম্বানি প্রমুখ সাঙাতদের বিরাট পুঁজির ভাণ্ডার নিয়ে বাজার দখল করে নিতে বেশ সুবিধাই হয়। 'ডবল থিঙ্ক'।
এবার প্রশ্ন হলো চতুর্দিকের এই 'ডবল থিঙ্ক'-এর প্রকোপে, আজকের দিনে ভারতে কি আদৌ গণতন্ত্র আছে? নেই। যে দেশে লোকসভায় একাধিপত্য থাকার জন্য সরকার তোয়াক্কাই করে না বিপক্ষ কী বলছে বা প্রতিবাদী কৃষকদের আটকানোর জন্য রাজধানীর চারপাশে পরিখা কাটা হয়, সে দেশে আর যাই থাক, গণতন্ত্র নেই। বিহারের পুলিশ তাদের অলৌকিক ক্ষমতায় যদি টের পায় কেউ কিছু 'অনিষ্ট' করতে চলেছে, কোনোরকম প্রমাণ ছাড়া বিনা ওয়ারেন্টে তাঁকে গ্রেফতার করতে পারবে। ভোট দিয়ে কি এদের হারানো যায়? হয়তো যায় - মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তা সম্ভব হয়েছে কারণ নির্বাচনের আগেই এমনি কোনী ব্যারেটের মতন রক্ষণশীল বিচারক নিযুক্ত হওয়া সত্ত্বেও ওই দেশের সুপ্রিম কোর্ট নিরপেক্ষ থাকতে পেরেছে। রিপাবলিকান পার্টি শাসিত রাজ্যগুলিও ট্রাম্পের চোখ রাঙানি উপেক্ষা করে নির্বাচনের ফলাফল পাল্টায়নি। কোনো একটি রাজনৈতিক দলের হাতে বিপুল পরিমাণ অর্থ এসে গেলে গণতান্ত্রিক কাঠামো ভেঙে পড়তে বাধ্য। কোনো রাজ্যে বিজেপি ভোটে হারলেও ঠিক যতজন এমএলএ দল পরিবর্তন করলে সরকারের পতন হবে, ঠিক ততজনই সময়মতন বিজেপিতে নাম লেখান বিরোধী দল থেকে। গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচনে কেজরিওয়ালকে হারানো সম্ভব হয়নি। তাই তাঁকে গদি থেকে নামানোর জন্য অন্য উপায় অবলম্বন করতে হয়েছে - ঘোষণা হয়ে গেলো যে বিজেপি-নিযুক্ত লেফটেন্যান্ট-গভর্নর এখন একাই দিল্লির 'সরকার', জনগণের ভোটে জিতে ক্ষমতায় আসা আম আদমি পার্টিকে কাজ করতে হবে তাঁর হুকুম মাফিক। আর তাছাড়া যে সমস্ত রাজ্যে বিজেপি সরকার নেই, সেই প্রত্যেকটি রাজ্যের রাজ্যপাল আর তাঁদের ওপরে থাকা দেশের রাষ্ট্রপতির ধমনীতেও তো বয়ে চলেছে গোলওয়ালকারেরই রক্ত। কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলির উপাচার্যরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই একএকজন আরএসএস প্রাক্তন। তাই কানহাইয়া বা উমার খালিদের মতন অপ্রিয় প্রশ্ন করা ছাত্র-ছাত্রী আর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণে দেখা যাবে না আজ থেকে দশ বছর পর। ভারতে গণতন্ত্রের যতটুকু অবশিষ্ট আছে ততটুকুও বাঁচিয়ে রাখার একমাত্র উপায় হলো যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোটাকে বাঁচিয়ে রাখা। আর এই ফেডেরালিজমকে রক্ষা করার শেষ লড়াইটা চালিয়ে যাচ্ছে তিনটি রাজ্য - পাঞ্জাব, কেরল, বাংলা। সেই কারণেই বিজেপির আপ্রাণ চেষ্টা লোকসভা-বিধানসভার নির্বাচন একই সাথে করার সারা দেশ জুড়ে, কারণ তাঁরা জানেন যে কেন্দ্র আর রাজ্যের নির্বাচন একসাথে হলে, তাঁদের নির্বাচন মেশিনারি আর অগাধ টাকার জোরের সামনে, তৃণমূলের মতন আঞ্চলিক দলগুলো টিকতে পারবে না। এবং এই জন্যই বাংলায় এই সদ্যসমাপ্ত বিধানসভা নির্বাচনে এতটা জরুরি ছিল গেরুয়া বাহিনীর পরাজয়। একথা তাঁরা জানে যে কোনোদিন যদি কেরল, পাঞ্জাবের পতন হয়, বা যদি কখনো বাংলা দখল করতে পারে তাঁরা, তাহলে আক্ষরিক অর্থেই গেরুয়া পতাকা উড়বে সারা দেশ জুড়ে আর হাস্যকৌতুক শিল্পীদের জায়গা হবে কারাগারে। দুই আর দুইয়ে কত হয় জিজ্ঞেস করলে তখন সত্যি সত্যি উত্তর পাবেন পাঁচ।
এই লেখাটির এবং এর যুক্তিপরম্পরার আরও চর্চা হওয়া দরকার।
লেখক যথার্থই বলেছেন | বর্তমান পরিস্থিতি বেশ ভয় ধরাচ্ছে মনে | কিন্তু এর থেকে মুক্তির কি কোনো পথ খোলা নেই ? আমি পশ্চিমবঙ্গের বাঙালি জাতির ভবিষ্যৎ নিয়ে বেশ চিন্তিত | আমাদের কি হবে ? কোনো আশার আলোয় দেখতে পারছিনা | যে ভারতের অস্তিত্ব শুধুমাত্র পাকিস্তানের প্রতি ঘৃণার উপর নির্ভরশীল সেখানে আশা থাকতে পারে কি না মনে হয় ভেবে দেখার সময় হয়েছে | লেখক কোনো পাঠের কথা বলুন |
এই লেখাটা আগে পড়েছি, ফরওয়ার্ড করেছি অনেক জায়গায় আর বলা হয়ে ওঠেনি, কিন্তু খুব ভালো লেখা।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও একেবারেই কান ঘেঁষে বেরিয়েছে, তাও সেটাও ফস্কে যাচ্ছিলো আরেকটু হলে।
আমার একটা জিনিস অনেকদিন ধরে মনে হচ্ছে। দক্ষিণপন্থীরা কলকে পাচ্ছে, তার কারণ শুধু তারা মিথ্যাচার করছে বা ঘৃণা ছড়াচ্ছে নয়। তারা একটা বড় জিনিস অ্যাড্রেস করছে বা অ্যাড্রেস করার উপক্রম দেখাচ্ছে, যা তথাকথিত বামপন্থীরা করছে না। তা হল বিশ্বায়ন এবং তৎসঞ্জাত অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আগ্রাসন। ট্রাম্প থেকে মোদি সকলের অ্যাপিল কিন্তু গ্রাম্য তুলনায় দরিদ্র মানুষের কাছে বেশি। বরং বিশ্বায়নের ফলে যে শ্রেণির হাতে দুপয়সা এসেছে তারাই লিবারেলদের সঙ্গে থাকছে।
সিপিএম যখন সিংগুর নিয়ে উদ্যম দেখাচ্ছে, আমার পাড়ার এক রিকশাওলা বলেছিল- এরা তো গরিবের পার্টি, আগে গরিবের কথা ভাবছে। ঐ যে কারখানা বানাচ্ছে তাতে কার চাকরি হবে, আমার না তোমার? ঐ যে গাড়ি বেরোবে, কে চড়বে, আমি না তুমি? তাহলে এই পার্টি সেই চক্করে পড়বে কেন?
বামপন্থীরা ক্রমশঃ মধ্যপন্থীর ভূমিকা নিচ্ছেন। কিন্তু, বামপন্থীদের, যাদের কম আছে তাদের হয়ে কথা বলার লোকের, যে বেশি খায় সে কেন বেশি খাচ্ছে প্রশ্ন করার লোকের স্পেসটা গণতন্ত্রে থাকছে। দক্ষিণপন্থীরা সেইখানে বসে পড়ছে।
বহু মানুষের মনের মধ্যে পরোমতসহিষ্ণুতা গেড়ে বসেছে। ওদের, অর্থাৎ মুসলিমদের সম্পর্কে ঘৃণা। আমরা ওরা এই বাইনারি ভাঙতে হবে। আরএসএস এই ঘৃণার চাষ করছে, মানুষের মধ্যে সুপ্ত সাম্প্রদায়িকতাকে বাড়িয়ে তুলছে। নির্বাচনের বাইরেও এঁদের বিরুদধে দীর্ঘ কঠিন লড়াই।
যে ভীত ... যে তার অস্তিত্ত্ব নিয়ে সন্দিহান ।...সেই অন্য কে ভয় দেখায় !!!জোর করে হিন্দুত্ত্ব হোক বা মুসলমানিতত্ব হোক বা খৃষ্টানত্ত্ব হোক ।...এসব চাপিয়ে দিয়ে যায় না , ইতিহাস সাক্ষী !!