
প্রায় অননুকরণীয় বাঙাল ভাষায় কৃষ্ণদা বলেছিলেন, “তোরা ল্যাওড়া কপিতে লিখস সময় চলে গেছে। সময় বাল কোথাও যায়-টায় না। সময় একটা ডাইমেনশন। আমরা এগোই, সময় স্থির।”
কৃষ্ণদার খিস্তি ভুবনবিখ্যাত। যে পেয়েছে, সে জানে। যার জ্ঞাত নেই, সে একে কেবল খিস্তি ধরবে, লব্জ নয়। কৃষ্ণদাকে দিয়ে এ লেখার সূচনার কোনও মহৎ অর্থ নেই। ওই সময় প্রসঙ্গটুকু ছাড়া। সময় চলে যায়নি। আমাদের বয়স বেড়ে গেছে। অনেকবার কথা উঠেছে, লিখে রাখার। পরে বলে ফেলে রেখেছি। লক ডাউনের সময়ে দেখলাম, অনেক কিছু ভুলে গেছি।
একটা ছোট্ট লিফলেট এসেছিল হাতে, ১৮ মদন বড়াল লেন থেকে প্রকাশিত। সুপ্রিম কোর্ট রায় দিয়েছে, অর্চনা গুহ মামলার শুনানি করতে হবে ডেলি বেসিসে। লিফলেটে ডাক দেওয়া হয়েছিল ঠিক কিসের, মনে নেই। সে সালটাও, কাগজপত্র ঘাঁটলে বা মনে হয় গুগল ঘাঁটলেও বেরিয়ে যাবে। কিন্তু সে অ্যানেকডোট এখন থাক। পরে হবে। পুরনো কাগজে বড় ধুলো হয়। হাঁচি ও কাশি।
সেই প্রথম দিন থেকে ব্যাঙ্কশাল কোর্ট আর সিটি সিভিল, প্রতিদিন যেতে যেতে, প্রতিটি দিন যেতে যেতে কত মুখ আর কত হারিয়ে যাওয়া মুখের স্মৃতিকথা লিখে রাখা জরুরি যেমন, তার চেয়ে বেশি জরুরি এই মামলার ইতিহাস লিখে রাখা। না হলে, এর পর অনধিকারীদের, ও মিথ্যাবাদীদের হাতে চলে যাবে ইতিহাস।
পার্থদাকে বললাম, চলুন লিখে ফেলি। পার্থদা মানে পার্থপ্রতিম মৈত্র। আমার সঙ্গে অর্চনা মামলার শুনানিতে আর কালধ্বনি পত্রিকার দফতরে যাঁর মুখ দেখাদেখি, ক্রম পরিচয়। পার্থদাই আমাকে সৌমেনদার সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিয়েছিল। তার আগে পর্যন্ত প্রতিদিন কোর্টে যাবার সুবাদে সৌমেনদা-লতিকাদির সঙ্গে মুখ চেনা, চেনা মুখের হাসি- এই ছিল। আর ছিল হরেনদার চায়ের দোকান। সেভেন্থ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের ঘরের দরজার ঠিক উল্টোদিকে।
বিজয়া, বিজয়া চন্দ, তখনও ছাত্রী। সুভাষ(গাঙ্গুলি)দা-ভারতীদি, রবীন চক্রবর্তী(তখন বিওবি করতেন, এখন ফ্রন্টিয়ার অনলাইন)দা-সুরশ্রীদি, রবীন ব্যানার্জি, দেবাশিস মৈত্র- এঁরা। এঁরা অধিকারী। অর্চনা গুহ মামলা সম্পর্কে লেখার, বলার।
অর্চনা গুহ মামলা একটি পারিবারিক মামলা। এই মামলা একটি পরিবারকে জাগ্রত রেখেছে, মৃত্যুসম বা তার চেয়েও বেশি কষ্ট দিয়েছে, ভাঙন ধরিয়েছে ও মিলন, দারিদ্র্য দিয়েছে ভয়াবহ, এক একটা গোটা গোটা জীবনের খাত বদলে দিয়েছে।
অর্চনা গুহ মামলা সারা দেশে বহুবার আদালতে রেফারড হবে, বিভিন্ন কারণে। কোনও অর্ধশিক্ষিত, চার আনার মিথ্যাবাদীরা তাকে আটকাতে পারবে না। কারণ ইতিহাস রচিত হয়ে গিয়েছে। এখন তাদের উৎসাহ হবে, সে ইতিহাস বিকৃতির। ফলে অর্চনা মামলার ইতিহাস লিখে রাখা দরকার।
---------------++-------------+--------+++
সৌমেনদার অসুস্থতা, পার্থদার অসুস্থতা, আমার নিজের অসুস্থতা- এই ত্র্যহস্পর্শ ডিঙিয়ে ডকুমেন্টেশনের কাজ শুরুই করা গেল না। এখন মনে হয়, যে অথেন্টিক ডকুমেন্টেশন আমরা চাইছিলাম, তার জন্য প্রয়োজনীয় ইনফ্রাস্ট্রাকচারটুকুও আমরা জড়ো করে উঠতে পারব না। জড়ো করার কাজে সৌমেনদার কিছু করার নেই অবশ্য। সেটা অন্য দুজনের দায়িত্ব। কিন্তু এ তো ৯-এর দশকের প্রথম ভাগ নয় যে ৭ ৪৬-এর দত্তপুকুর লোকাল ধরে আমি রওয়ানা দিতে পারব, মায়ের করে দেওয়া তিনটে রুটি পেঁদিয়ে। তারপর শিয়ালদায় নেমে মৌলালি অবধি গিয়ে বন্ডেল গেটের বাস- তারপর অটো। কুষ্টিয়া হাউজিংয়ের দূরত্ব বেড়ে গিয়েছে, এখন। যে কোনও সময়ে ডায়াল করার মতই আজও অবশ্য মনে রয়ে গেছে দেখছি ৪৩৮৩৭৪। তার পর এর আগে ২ লাগবে, তার আগে আবার কী যেন!
সৌমেনদা বলেছিলেন, “শোন হে- রটনে রটন চেনে!” ৩০ বছর পেরিয়ে যেতে চলল, কত রটন যে রটন চেনে, মিথ্যের দৌলতে বেরিয়ে পড়ে তাদের পচা-সড়া দুর্গন্ধগুলো- সে আর কহতব্য নয়।
গৌরীদি মারা যাবার পর, ফেসবুক পোস্টে অতি নকশালিদের উৎপাত দেখেছি, সৌমেনদার ইন্ডিভিজুয়ালিজমের বিরোধিতায়। ঘোর বামপনা- কোনও কালে, কোনও দেশে মানুষের অ্যাসপিরেশন বোঝার চেষ্টা করে না, ব্যক্তি মানুষকে কেবল অধীন ভাবতে থাকে।
অর্চনা গুহ মামলা হরতোষ চক্রবর্তী কমিশনে না-পাঠানোর সিদ্ধান্ত সৌমেন গুহর ছিল। সৌমেনদা বলেছিলেন, আমি কমিশনকে বিশ্বাস করি না। স্বল্প নকশাল, সিপিএম ঘেঁষা নকশাল, সিপিএম- সকলে বলেছিল, সৌমেন গুহ ইন্ডিভিজুয়ালিস্ট। ও শাস্তি চায় না, নিজে বিখ্যাত হতে চায়, তাই মামলা পাঠাল না। হরতোষ চক্রবর্তী কমিশনে পাঠানো মামলার ভবিষ্যৎ কী হয়েছে, তা সকলে জানেন। ৭৭ সালে পালা বদলের অব্যবহিত পরে, যখন জেল থেকে ছাড়া হচ্ছে বন্দিদের, তখন এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য যে দূরদর্শিতা লাগে, তার সামনে নতজানু হওয়ার অভ্যাস অনুপস্থিত।
সৌমেনদা বা সৌমেন গুহ মানে- জেলে অত্যাচারিত অর্চনা গুহর ভাই, যিনি এই মামলা পরিচালনার নেপথ্যে, যিনি এই মামলার শেষভাগে বিশেষ অনুমতিক্রমে নিজেই মামলার সওয়াল করেছিলেন। লতিকাদি, লতিকা গুহ, সৌমেন গুহর স্ত্রী, যিনি অর্চনার সঙ্গে গ্রেফতার হয়েছিলেন, অত্যাচারিতা হয়েছিলেন। গৌরীদি, গৌরী চট্টোপাধ্যায়ও একই সময়ে গ্রেফতার ও অত্যাচারিতা হয়েছিলেন। সৌমেনদাকে খুঁজতে পুলিশ গিয়ে ওঁদের গ্রেফতার করেছিল।
উরিবাবা! | 2402:3a80:a1e:967c:0:6d:d111:***:*** | ২২ মার্চ ২০২১ ২৩:১৫103964গুরুচণ্ডালি কি এখন হুমকি দেওয়ার জায়গা?
পুলিশি অত্যাচার, অবিচার সংক্রান্ত সব বক্তব্য সঠিক হতেই পারে, অন্যদের মিথ্যাচার নিয়েও কিন্তু এই কানের গোড়ায় দেব, এও তো পুলিশি ভাষাই। কিম্বা মাস্তানি। পুলিশ তো মাস্তানিই করে।
আবার আক্ষরিক ভাবে বলা হল, সেটিও হাইলাইটেড!
তবে লেখাটি অসম্পূর্ণ লাগল। মামলার ইতিহাসের মুখবন্ধ কি? তাহলে অপেক্ষা রইল।
PT | 203.***.*** | ২২ মার্চ ২০২১ ২৩:৪৯103965যাঁরা আইন বোঝেন তাঁরা এই লিং এ প্রকাশিত লম্বা ধারাবিবরণীর মর্মার্থ বুঝিয়ে দেবেন দয়া করে?
Smt. Archana Guha vs Ranjit Alias Runu Guha Neogi And ... on 5 March, 1990
https://indiankanoon.org/doc/1229348/
হ্যাঁ, মুখবন্ধ৷
গুরুচণ্ডা৯ কিসের জায়গা সে কর্তৃপক্ষ জানবেন। এই লেখার এই শিরোনামই থাকবে। গুরু কর্তৃপক্ষ আপত্তি জানালে ব্লগ তুলে নেওয়া হবে।
তাপস
আপনি তথ্য ও যুক্তি দিয়ে সত্যিটা বলুন, সেটাই যথেষ্ট। তাতেই মিথ্যের কান গরম হয়। ফিজিক্যাল কিছু করার ধমক ছেলেমানুষি এবং বিরক্তিকর।
রঞ্জন রায়
আপনার এবং অন্যদের বিরক্তি সম্পর্কে আমি অবহিত হচ্ছি। তাতে অবিশ্যি কিছু বদলাচ্ছে না। আপনারা এখানের, গুচ র প্রেক্ষিতে সবই দেখেন, দেখছেন। এই লেখা গুচ তে লেখা হচ্ছে, তার মানে এই নয় যে গুচ র প্রেক্ষিতেই সব কথা বলা হচ্ছে বা হবে। মায় শিরোনাম পর্যন্ত। অর্চনা মামলা নিয়ে মিথ্যে তথ্য বহুদিন ধরে বাজারে আছে। সে সব হবার সময়ে গুরু ছিলই না। লেখার শিরোনাম সেই প্রসঙ্গে। গুরুর পোষ্য আইয়াইটি সেল বা তস্য উমেদাররা গায়ে মাখতে পারেন, চর্চা করতে পারেন, তাতে কিছু বদলায় না। ইল ইনফর্মড, মিস ইনফর্মড, গুগল বেসড মিথ্যাবাদীরাই কেবল কানগরম যোগ্য নয়, নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন। এ নিয়ে আর কথা বাড়াব না। এ লেখা এখানে লিখব, বহু বছর ধরে প্রতিশ্রুত ছিলাম, তাই লিখছি৷ যেদিন মনে হবে না, লিখব না। আপনাদের বিরক্তি উৎপাদন করতে পেরে, যৎপরোনাস্তি ভাল লাগছে।
তাপস
অর্চনা গুহ মামলার সঠিক তথ্য জানানোর উদ্যোগ প্রশংসনীয়, অপেক্ষায় আছি।
গুচ'র প্রেক্ষিত? সেটা কী? এখানে সবার আলাদা প্রেক্ষিত।
আমি এবং অনেকেই সত্যিটা জানতে আগ্রহী, এইটুকুই। এই মামলার সঙ্গে আপনি যুক্ত, কাজেই আপনি সবার চেয়ে বেশি জানবেন এটাই স্বাভাবিক। কিন্ত অনেক বিষয় আছে যার জন্য আপনাকেও নিশ্চয় গুগলের সাহায্য নিতে হয়।
যাকগে, আপনি লিখুন।
ররা
গুগল বেসড কথাটা, আরেকবার পড়লে দেখবেন, মিথ্যাবাদীর বিশেষণ হিসেবে ব্যবহৃত।
aranya | 2601:84:4600:5410:c5a0:413f:fde7:***:*** | ২৪ মার্চ ২০২১ ২২:২১104012তাপস, এটা জরুরী বিষয়। লেখ
কমলিণী সুদেষ্ণা দাশগুপ্ত। | 103.216.***.*** | ২০ মে ২০২১ ২১:৫২106210এমন আচরণ প্রত্যাশিত হয় না কখনোই।
সুদীপ মৈত্র | 103.242.***.*** | ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২১ ২০:৫৭498263