লেখাটা লেখার পর দেখতে পাচ্ছি, অনেক শব্দ আমার নয়। রুণুর কান যে বুলডগের কানের মত, এ কথা আমাকে বলেছিল শর্মিষ্ঠা। এজলাসের মধ্যেই, প্রথম রুণুকে দেখে, কানে কানে। আমি পরে বেরিয়ে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, বুলডগের কান ওরকম বড় হয় নাকি! তাতে জেনেছিলাম, যে সত্যিই তাই।
এই মামলা সম্পর্কে মীরজাফর নামক আখ্যাটাও আমার নয়। সৌমেন গুহর। আমি আত্মীকরণ করেছি মাত্র। সৌমেনদা বহুবার বলেছিলেন মীরজাফরদের কথা। কী ভাবে তারা শেষ করেছে মামলা ও তাঁদের পরিবারকে। সৌমেনদার কথায় অতিশয়োক্তি থাকতে পারে কিনা, তা বিচারের অধিকার আমার নেই। আমি, বড় বেশি সংযুক্ত। বিচারের জন্য যে দূরত্ব দরকার, ৩০ বছরের বেশি সময় পার হয়ে যাবার পরও তা আমার অর্জিত নয়। ফলে আর তা হবে না।
কিন্তু সঔদ্ধত্যে বলার, বিভিন্ন সময়ে অজস্র, আক্ষরিক অর্থে অজস্র মানুষ এই মামলার পাশে দাঁড়িয়েছেন। এই মামলার জন্য লাঞ্ছিত হয়েছেন, রাষ্ট্রশক্তির হাতে।
অর্চনা গুহ মামলার খরচ চালানোর জন্য একটা তহবিল গঠন করা হয়েছিল এক সময়ে। সে তহবিলের দায়িত্বে ছিলেন সাংবাদিক নাজেস আফরোজ। রুণু তখন বহাল তবিয়তে চাকরি করছে। সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ কফি হাউসের সামনে রুণু গুহনিয়োগী, নাজেস আফরোজকে মেরেছিল। এ আমার প্রত্যক্ষ নয়, এ ঘটনা যখন ঘটে তখন আমি মামলার ত্রিসীমানাতেও ছিলাম না, শুনেছি। নাজেস আফরোজের সঙ্গে আমার তেমন যোগাযোগ নেই, যার ফলে এ তথ্য ভেরিফাই করা যেতে পারে, কিন্তু এ কথা অস্বীকার করেছেন, এমন কারও সঙ্গে মোলাকাৎ হয়নি।
মোলাকাৎ হয়েছে শুভাশিস মৈত্রের সঙ্গে। দু কিস্তি প্রকাশের পর, তাঁর সঙ্গে কথা হল আরেকবার।
শুভাশিসদার স্মৃতি
অর্চনা গুহ ডেনমার্ক থেকে ফিরলেন সম্ভবত ৮৭-৮৮ সালে। খুব বেশি লোক সে প্রত্যাবর্তনের খবর জানতেন না। সৌমেন গুহর বাড়িতেই ছিলেন অর্চনাদি। শুভাশিসদা অর্চনা গুহর সাক্ষাৎকার নেন। তখন শুভাশিসদা প্রতিক্ষণে চাকরি করতেন, যে প্রতিক্ষণের দেখভালের দায়িত্বে তখন দেবেশ রায়।
সে সময়ে রুণুরা হাইকোর্টে একটা আবেদন করেছিল যে আদালতের খবর যেন প্রকাশিত না হয়। সে আবেদনে আংশিক ইতিবাচক সাড়াও দিয়েছিল আদালত। শুভাশিসদা লেখা জমা দেবার অব্যবহিত পরের সংখ্যায় সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়নি। কিন্তু দেবেশ বলেছিলেন, আমরা এ লেখা ছাপব। পরবর্তী সংখ্যায় সে সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়। তখন নাজেস আফরোজ আজকালে। শুভাশিসদার কথায়, নাজেস জানান আজকালে অর্চনা নিয়ে একটা পেজ হবে। সেই পাতায় লেখেন দেবেশ রায়, ইতিহাসবিদ ও সিপিআই নেতা গৌতম চট্টোপাধ্যায়, এবং শুভাশিস মৈত্র।
এর পরে বিচারপতি উমেশ বন্দ্যোপাধ্যায় এই প্রকাশের বিরুদ্ধে সুয়ো মোটো মামলা করেন।পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। দেবেশ রায়, গৌতম চট্টোপাধ্যায়, শুভাশিস মৈত্র, আজকালের সম্পাদক অশোক দাশগুপ্ত ও আজকালের কর্তৃপক্ষস্থানীয় প্রতাপ রায়। সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়, অরুণাভ ঘোষ প্রমুখ এই মামলায় দেবেশ-শুভাশিসদের হয়ে লড়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত এই পাঁচজনকে কিঞ্চিৎ সাবধানবাণীর পর আদালত রেহাই দেয় বটে, কিন্তু সশরীরে হাজিরা থেকে মুক্তি দেয়নি। যতদিন মামলা চলেছে, মামলার তারিখ পড়েছে, এঁদের আদালতে হাজিরা দিতে হয়েছে।
সৌমেন গুহ একটা বই সম্পাদনা করেছিলেন, লোয়ার কোর্টে রুণুর বিরুদ্ধে রায় বেরোনোর পর। পাবলিশিং ইয়ার- ১৯৯৭। Battle of Archana Guha Case - Against Torture in Police Custody: Arguments, Counter-arguments and Judgement at the Trial Court। এখন বইটা অমিল। কোনওদিনই খুব বিক্রি হয়েনিছে, বিক্রির ব্যাপারে আগ্রহও কোনও তরফ থেকে দেখা গিয়েছে এরকম নয়। সৌমেনদা কাউকে খুব বিশ্বাস করে দায়িত্ব ছেড়ে দিতে চান নি। সেটাই তাঁর পক্ষে স্বাভাবিক। কেন স্বাভাবিক, তা বইটার Prefatory Remarks অংশটা পড়লে বোঝা যায়। ৭৭পরবর্তী সময় থেকে এই মামলা চলার সময়কাল পর্যন্ত তাঁকে যে যে ঘটনাবলীর সম্মুখীন হতে হয়েছে, তার একটা বিবরণ রয়েছে। সে বিবরণ পুষ্ট হয়েছে বহু সংখ্যক হেফাজতে অত্যাচার, পুলিশি জুলুম, এবং সেসবের বিরুদ্ধে আইনি লড়াইয়ের অনুপস্থিতি বা আইনি লড়াইয়ের হারিয়ে যাওয়া, অতীব সন্দেহজনকভাবে হারিয়ে যাওয়ার ঘটনাক্রমে।
অরুণপ্রকাশ চ্যাটার্জি, খুবই সেলিব্রেটেড আইনজীবী হিসেবে পরিচিত ছিল। (সচেতন ভাবে, এবং একটু কষ্ট করেই অরুণপ্রকাশ সম্পর্কে আপনি সম্বোধন ব্যবহার করব না, কারণ লোকটা তার যোগ্য নয়, আমার কাছে।) ১৯৯৬ সালে সৌমেন গুহ বার কাউন্সিলে অরুণপ্রকাশের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন(কেস নং ১৫, ১৯৯৬)। উদ্ধৃতি- We were shocked to see in 1992 Cr. L (SC) 110, Para 25- : 1992 SCC (Cri) 116, Para 34: 1992 (1) Crimes 210, para-25, etc., that Arun Prokas Chatterjee appeared for the accused-torturer Santosh De (in C.A No 3811/90) before the Supreme Court taking airfare, pocket money and lodging expenses from us!
বাকি লেখায় মাঝেমধ্যেই আদালতের কিছু নথি থেকে উদ্ধৃতি বা উদ্ধতির অনুবাদকণ্টকিত হতে পারে। সেটা ক্রমশ জরুরি মনে হচ্ছে, কারণ, সে সব ছাড়া এ নিয়ে লেখা অসম্পূর্ণ হবে। আদালতের বয়ান অনুবাদের কাজটা অনেকটা কঠিন, যদি তা কিছুটা হলেও বোধগম্য করতে হয়। সেটাতে সময় লাগে, শ্রম লাগে, ক্লান্তি এসে যায়। সৌমেনদার সঙ্গের স্মৃতি শ্রমের ক্লান্তিকে কাটিয়ে ফেলবে, এমনটাই ভাবা উচিত। কিন্তু সে আর হয় কই!
একজন, এই সেদিন, সৌমেনদা সম্পর্কে বলছিলেন, জিনিয়াস পাগল। সম্ভবত, সেটাই সর্বোত্তম উপায়, সৌমেন গুহকে বোঝার। পাগল না হলে এই ফাইটটা কেউ করে না, জিনিয়াস না হলে এই ফাইটটা কেউ চালাতে পারে না।
কিহলো ??কোনো সুবিচার হয়েছিল কি ??না !!!!
পড়ছি
বাকরুদ্ধ। রাগ, ভীষণ রাগ হচ্ছে।