তখনও ব্রুনাই দেশে কেউ পটল তুলত না! মানে, খেত থেকে! মানে বাঙালির এই প্রিয় সবজিটি সেখানে চাষও হত না, পাওয়াও যেত না। তারপরে এ দেশ যে দ্বিপে সেই দ্বিপেও একদিন শুরু হল পটল তোলা। এক বাঙালির কেরামতিতে, গভীর জঙ্গলের মাঝে। সে এক গোপন রোমহর্ষক ব্যাপার!
বিদেশে বসে পটল পাওয়া যে কি আনন্দের ব্যাপার হয়ে উঠতে পারে তা অনেক সময় বলে বোঝানো যেত না। বাঙালিদের মতো পটল প্রীতি আমি ভারতের অন্য রাজ্যের বাসিন্দাদের মধ্যে দেখিনি। বিদেশিদের মধ্যে তো নয়ই। ফলত, ব্রুনাই দেশে পটল ব্যাবসা মূলত গড়ে উঠেছিল বাঙালিদের উপরে ভরসা করেই। যে প্রথম বাজারের পটলটি তোলার সৌভাগ্য প্রাপ্ত হয়, তার যে কী ঘ্যাম জন্মায় সে আর কী বলব! আর সে কী সিক্রেসি—যেন কাউকে ড্রাগস্ সংগ্রহের তথ্য দিচ্ছে!!
এমনই পরিবেশে জুয়েল ভাই একদিন জিজ্ঞেস করল, “দাদা, পটল লাগবে নাকি?”
জুয়েল ভাই বাঙলাদেশি। পটলের লতা ব্রুনাই-এ কে প্রথম আমদানি করেছিল সেই বিষয়ে কিছু জানা নেই। একবার কোনো এক বাংলাদেশের ছেলে মার্কেটটা বুঝে নিয়ে, এশিয়ার বৃহত্তম দ্বীপ বোর্নিওর গভীর জঙ্গলের ভিতর গাছ ইত্যাদি পরিষ্কার করে পটলের চাষ শুরু করল। এই বোর্নিও দ্বীপের উত্তর উপকূলে পুটকি দেশ ব্রুনাই, দ্বীপের বাকি অংশ মালয়েশিয়া আর ইন্দোনেশিয়ার অংশ। তারপরে সেই পটলের মার্কেট বিশাল হিট করে যাওয়াতে পটল চাষের প্রসার হয় আরও। সব বাঙালিই জুয়েল ভাইকে বলতে শুরু করল, “মার্কেটে পটল উঠলে আমিই যেন প্রথম খবর পাই”। আর জুয়েল ভাই সবাইকেই বলতে লাগল, “দাদা, আপনাকে ছাড়া আর কাকে প্রথম বলব!” প্রথম প্রথম বেশ ভালো দাম ছিল—প্রায় বারো ডলার (৬০০ টাকা) প্রতি কিলো। সেই লাভ দেখে আরও অনেকে চাষ করতে শুরু করল। ফলে পটল মার্কেটে বেশি আসতে শুরু করল। গত সপ্তাহে শুনলাম ২০০ টাকা কিলোতে বিক্রি হচ্ছে।
প্রথম প্রথম যখন ব্রুনাই-এ গেছি, দেখি শুক্রবার একটু বিকেল হতেই অনেকের মুখে ‘তামু’ যেতে হবে বলে উল্লিখিত হচ্ছে। আমি এদিকে বুঝতে পারছি না ব্যাপারটা কী! ‘তামু’ কী আর সবাই সেখানে যাবে কেন! কয়দিন পরে বুঝতে পারলাম যে ‘তামু’ মানে হচ্ছে ওই হাট—শুক্রবারে যেটা বসেছে। অনেকে অফিস থেকে বাড়ি ফেরার পথে তামু হয়ে বাজার করে যেত। আমিও পরে সেটা শুরু করেছিলাম।
ব্রুনাই দেশে সপ্তাহের সরকারি ছুটির দিন একটু অদ্ভুত—শুক্রবার এবং রবিবার। কেবল আমাদের মতো মাল্টিন্যাশনাল কিছু কোম্পানির ছুটির দিন ছিল শনিবার এবং রবিবার। আমরা যেখানে থাকতাম সেই ছোট্ট জায়গাটার নাম সিরিয়া! আর সেখান থেকে ১৬ কিলোমিটার দূরে আর-একটা একটু বড়ো শহর ছিল যার নাম কুয়ালাবেলাইত। শহর মানে ভারতের নিরিখে ছোঠোখাটো মফস্সল, গোটা গোটা ব্রুনাই দেশের লোকসংখ্যাই তো ৪৫ লক্ষ ১০ হাজার, মানে বৃহত্তর কলকাতার মোটামুটি ১০ ভাগের এক ভাগ। তার অর্ধেক! যাই হোক, এদের সরকারি ছুটি যেহেতু শুক্রবার, তাই আমাদের সিরিয়া শহরে হাট বসত প্রতি শুক্রবার সারাদিন, আর কুয়ালাবেলাইতে বসত প্রতি শনিবার সারাদিন এবং রবিবার সকাল।
একদিন তামু গেছি, দেখি আমাদের অফিসের এক প্রোজেক্ট ইঞ্জিনিয়ার বসে বসে ঢ্যাঁড়শ বেচছে! আমি জিজ্ঞেস করলাম তুমি কেন দোকানে বসে? বলল এটা তো ওদের ফ্যামিলির দোকান, তাই অফিস থেকে ফেরার পথে একটু হাত লাগাচ্ছি। ওর মা—আর বাড়ির অন্য কয়েকজন লোকও আছে। এটা দেখে ভালো লাগল—ব্রুনাইয়ে স্থানীয় লোকেদের মধ্যে এই ‘স্টেটাস’-এর ফালতু ধারণাগুলো নেই। প্রসঙ্গত, ছেলেটি লন্ডনের ইম্পিরিয়াল কলেজে পড়াশোনা করা। কিছুদিন কাটাবার পর বুঝতে শুরু করলাম স্থানীয় সংস্কৃতি—এদের পারিবারিক বন্ধন খুব দৃঢ়। এখনও একান্নবর্তী পরিবারে বাস করাটাই পরম্পরা। পরে আরও একটা জিনিস দেখে ভালো লেগেছিল খুব—একদিন হাসপাতালে গেছি ডাক্তার দেখাতে। দেখি বিকেলে ভিজিটিং আওয়ার্সে কী প্রচুর ভিড়। আপনি বলতে পারেন ভিড় কি আর ভালো জিনিস! কিন্তু দেখলাম প্রায় ৯০ বছরের এক বৃদ্ধা ভরতি আছেন হাসপাতালে, এবং যাতে ওই ভদ্রমহিলা একাকী অনুভব না করেন তাই পরিবারের এবং দূরের আত্মীয়রাও দেখতে আসছে প্রতিদিন! খুব ভালো লাগল।
আর একটা কথা জানিয়ে রাখি—ব্রুনাইয়ে বারো ক্লাসের পর রেজাল্টের উপর ভিত্তি করে ভালো ছেলেদের (এবং সংখ্যাটা কম নয়!) বাইরের কলেজে পড়তে যাবার সব খরচা বহন করে সরকার। এই কিছুদিন আগে পর্যন্ত (তেলের দাম কমে যাওয়াতে এখন এটা একটু কম হয়েছে) বছরে একবার যে ছেলে/মেয়ে বাইরে পড়তে গেছে তার বাবা-মাকে বিজনেস ক্লাসের প্লেন ভাড়া এবং বিদেশে একমাস থাকার হোটেল খরচা দেওয়া হত যাতে করে তাঁরা গিয়ে দেখা করে আসতে পারেন! আর এখনও যদি কারও এমন চিকিৎসার দরকার হয় যার সুবিধা ব্রুনাইতে হয়তো নেই, তাহলে সেই রুগিকে সিঙ্গাপুরে পাঠিয়ে চিকিৎসার সমস্ত খরচা সরকারের এবং তার সাথে একজনের সঙ্গীর সব খরচাও সরকার দেয়!
এবার যদি আমাকে বলা হয় তোমার শিক্ষা আর স্বাস্থ্যের সব দায়িত্ব সরকারের, তাহলে তেমন টাকা জমাবার কি বিশাল প্রয়োজন আছে? আপনাদের কথা জানি না, আমি তো তাহলে ঘুরে বেড়িয়ে জীবন আরও বেশি আনন্দে ভোগ করতাম! এদেরও হয়েছে তাই—ব্রুনাইয়ে স্থানীয় লোকজন মূলত দুই প্রকারের: মালয়, এরা এখানকার আদি বাসিন্দা, বলা হয় ‘ভূমি-পুত্র’ আর আছে চিনা যারা বেশ কিছু প্রজন্ম আগে এখানে থিতু হয়ে গেছে। স্থানীয় মালয়দের বাস্তব বুদ্ধি কম এবং ব্যাবসার বুদ্ধি তো একদম নেই! ফলে ব্রুনাইয়ে যাবতীয় বড়ো বড়ো ব্যাবসা সব নিয়ন্ত্রণ করে চিনা বংশোদ্ভূত লোকেরা। এই চিনাদের মধ্যে টাকা জমানোর রেওয়াজ আছে, কিন্তু মালয়রা অনেকেই টাকা জমিয়ে রাখতে হবে ভবিষ্যতের জন্য, এই ব্যাপারটাই বোঝে না ভালো ভাবে।
আমাদের আপিসের এক পুরানো ম্যানেজার যেমন—দারুণ ভালো লোক, বিদেশে পড়াশোনা করা। এমন একটা সময় এল যখন আমাদের ডিপার্টমেন্টের আমরা চারজন সিনিয়রের ব্রুনাইয়ে থাকার পালা শেষ হয়ে এল। অবসর নেবার সময় থেকে তখনও ম্যানেজার বছর পাঁচেক দূরে। ম্যানেজারের ঘরে শেষদিকে গিয়ে দেখতাম একটা পাতায় খুটখাট করে হিসাব করার চেষ্টা করছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম কী ব্যাপার। বলল, “এই তোমরা চলে গেলে আমিও ভাবছি রিটায়ারমেন্ট নিয়ে নেব। নতুন যে লোকেরা আসবে তারা যদি তোমাদের মতো ভালো না হয়, তখন কে এত চাপ নেবে!” আমি ভাবলাম ঠাট্টা করছে! তারপর দেখি একদিন ট্রেনিং করতে গেল রিয়াটারমেন্টের পর ফাইনান্স কেমন করে ম্যানেজ করতে হয় সেই জন্য (আমাদের কোম্পানি স্থানীয় লোকেদের একটা তিন দিনের ট্রেনিং দিত)। সেই ট্রেনিং নিয়ে এসে ম্যানেজার খুব খুশি। জিজ্ঞেস করলে উত্তর দিল, “পয়সায় মনে হচ্ছে কুলিয়ে যাবে। আগে বুঝতে পারিনি যে এত টাকা জমিয়ে ফেলেছি!” আমি ভাবলাম যাক তাহলে রিয়াটার করার কথা ভালো ভাবে ভেবেছে। ও মা, কোথায় কী—পরের সপ্তাহে দেখি একটা হাই-এন্ড জাগুয়ার কিনে হাজির! বলল অনেকদিনের শখ। কথায় কথায় বলে রাখি, সেটা তাঁর পঞ্চম গাড়ি!
তো এইভাবেই ভালো চলছিল। শুক্রবারে বিকেলে বাজার করতে যাবার মূল অসুবিধা ছিল এই যে ‘ফ্রেশ’ জিনিসপত্র ফুরিয়ে আসত, কারণ সেই সকাল থেকে বিক্রি হচ্ছে। ওই জন্য অনেকে সকালে বাজার করে অফিস আসত। আর সেই ‘তামু’-র দোকানগুলি লক্ষ করলে দেখা যাবে দুই ধরনের দোকান—একটা ব্রুনাইয়ে উৎপন্ন জিনিস, লোকাল প্রোডিউস যাকে বলে। আর বাকি দোকান বাইরে থেকে আমদানি করা—সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, ফিলিপিন্স, অস্ট্রেলিয়া এই সব দেশ থেকে। স্থানীয় জিনিসপত্র বেশিরভাগ বিক্রি করত মালয় লোকজন। আর বাইরের থেকে আমদানি করে বিক্রি বেশি জটিল বলে সেটা করত চিনা বংশোদ্ভূত ব্যবসায়ীরা। ব্রুনাই-এ চাষবাস তেমন কিছু নেই। বলতে গেলে সব কিছুই আমদানি করা—আলু, চাল থেকে শুরু করে দুধ, মাংস পর্যন্ত। দেশে চাষ বলতে ওই একটু পাতিলেবু, টুকটাক ফল, সবজি ইত্যাদি।
প্রথম দিকে একদিন গেছি তামু, তখনও সব খুঁটিনাটি জানি না। একটা দোকানে আলু, পেঁয়াজ, টম্যাটো বিক্রি করছে— দেখি দুটো ফিলিপিনো মেয়ে হাঁক ডাক দিয়ে আলু বিক্রি করছে—“আলু একটাকা কিলো” (এখানে টাকা মানে ডলার, সিঙ্গাপুর ডলার, মানে প্রায় ৫০ টাকার কাছাকাছি এখন)। আমি ভাবছি এরা বাংলা জানল কী করে! আসলে হয়েছে কী, ব্রুনাইয়ে একেবারে নীচু তলার শ্রমিকরা বেশিরভাগই বাংলাদেশের। আর দিনের শেষে কাজ করে এরা অনেকেই বাজার করে ফিরবে, সপ্তাহের বাজার। রেগুলার খদ্দের, তাই মেয়েগুলো বেশ ভালো বাংলা শিখে নিয়েছে। আর তা ছাড়া এদের অনেকের মধ্যেই ভাব-ভালোবাসা হয়ে যেত, সেই থেকেও শেখা। একদিন আমাদের ক্রিকেট টিমের ওপেনার দেখি সাথে করে বাড়ির কাজ করার ফিলিপিনো মেয়েটাকে মাঠে নিয়ে চলে এসেছে। তার বউ নাকি বাড়ি নেই, তাই বাড়িতে তেমন কাজও নেই তেমন—ফলে মাঠে এনেছে আমাদের জলটল এগিয়ে দেবে বলে! বললাম, “এই ফিলিপিনো মেয়ে তো পুরো বোর হয়ে যাবে রে!” আমাকে বলল, “তুই দেখ না, কেমন ক্রিকেট খেলা শিখিয়েছি।” ওমা, খেলা শুরু হতে দেখি সে মেয়ে সত্যই খেলা জানে—আমাদের টিম ছয়-চার মারলে আমরা যা হাততালি দিই, তার থেকে দশ গুণ বেশি লাফায় সেই মেয়ে!
বাজারের গল্পে ফিরে আসা যাক—স্থানীয় লোকেরা ওজন ইত্যাদি করে জিনিস বিক্রি করা পছন্দ করত না। সাথের ছবিতে দেখতে পাবেন, একটা প্লেটে সামনে রাখা আছে, বা ঠোঙায় মোড়া আছে জিনিস, গায়ে দাম লেখা আছে, ব্যাস নিজের ইচ্ছে মতো উঠিয়ে নিন, দাম দিয়ে দিন। বাক্য বিনিময়ের কোনো দরকার নেই। আর অনেক বৃদ্ধ/বৃদ্ধা ইংরাজি জানত না, তাই কথা বলার প্রয়োজন না থাকলে আখেরে সবারই লাভ। প্রায় জিনিসই ১ ডলার—সেই পরিমাপটাই বেশি।
ব্রুনাইয়ে যে জিনিসটা সবচেয়ে ভালো পাওয়া যেত তা হল শাক—এত রকমের শাক আর এত ভালো তরতাজা আমি ভারতেও দেখিনি। আর তা ছাড়া ব্রুনাইয়ে স্থানীয় লোকেরা কৃত্রিম সার ইত্যাদি ব্যবহার করত না। কারণ তাতে দামে পোষাবে না—সারও বিদেশ থেকে আমদানি করা। ফলে আপনি বিষহীন শাক পেতেন।
পরিশেষে মাছের ব্যাপারটা একটু বলে নিই। এই তামুর এক পাশে মাছ বিক্রি হত। বেশিরভাগ মাছই সামুদ্রিক। কিন্তু জানা গেল এক মেছুড়ে মিঠে জলের মাছ আনে সকালে। আর এ ছাড়া সে নাকি ভালো পাবদা মাছ আর পুঁটি, মৌরলাও সকালে আনে। বাঙালি পাবদার খোঁজ পেয়ে মাথা ঘামাবে না সে তো আর হতে পারে না! শুভ সেই মেছুড়ের ফোন নাম্বার নিয়ে অগ্রিম বুকিং করা শুরু করল। আর বাঙালি সমাজে শুভ একটা হোয়াটস গ্রুপ তৈরি করল যেখানে পাবদা বুকিং করা যেত। শুক্রবার খুব ভোরে শুভ-র কাছে মেছুড়ের মেসেজ আসত কী মাছ কত উঠেছে। সেটা গ্রুপে জানাত এবার শুভ। বুকিং করত বাঙালি, কার কত চাই। সব যোগ করে শুভ জানিয়ে দিত এবং মাছ আমাদের জন্য রিজার্ভ থাকত! শুভ অনেক পুণ্য করেছে সেই দিনগুলিতে!
শুক্রবারের তামু-তে মাছ ছাড়াও মাঝে মাঝে কচ্ছপ ইত্যাদি বিক্রি হত। আইনত নিষিদ্ধ ছিল না মনে হয়, কারণ লুকিয়ে চুরিয়ে তো বিক্রি করত না। বালতিতে করে বাজারের সামনে বসেই বিক্রি করত। একদিন কাছিমের মাংসের অফার এল পলাশের কাছ থেকে—বাংলাদেশের ব্রাহ্মণবেড়িয়ার ছেলে যার কাছে আমি চুল কাটতাম আর ম্যাসাজ নিতাম। একদিন নবরত্ন তেল দিয়ে মাথা ঠান্ডা করে দেদার ম্যাসাজ নিচ্ছি—আবেশে চোখ প্রায় বুজে এসেছে, তখনি কানের কাছে মুখ এনে পলাশ জিজ্ঞেস করল, “দাদা, কাছিম খাবেন নাকি? একটা পাঁচ কিলো ওজনের পাওয়া গেছে।” ম্যাসাজের আরামের ফাঁকে কী উত্তর দিয়েছিলাম মনে নেই ঠিক।
খোঁজার চেষ্টা করেছিলাম ‘তামু’ শব্দটা এসেছে কোথা থেকে। এই শব্দের ইতিহাস ব্রুনাইয়ে কেউ জানে না—অনেকে মনে করে যে খুব সম্ভবত এই শব্দটা এসেছে মালয় ভাষার ‘তেমু’ শব্দ থেকে যার অর্থ মানুষের সাক্ষাতের জায়গা। এর থেকে ভালো প্রতিনিধিত্ব আর কিছু হতে পারে না। ব্রুনাইয়ে আজও লোকজন তামু যেতে ভালোবাসে সুপার মার্কেটের থেকে—মানুষ কথা বলে নিজেদের মধ্যে, দিন যাপন করে। ব্রুনাইয়ের তামুতে গেলে বোঝা যাবে সেখানকার মানুষ এখনও যান্ত্রিক হয়ে যায়নি!
চমৎকার। তামুর আরও কিস্তি হোক।
দারুন হয়েছে লেখাটা যথারীতি. অনেক পুরোনো কথা মনে পড়ে গেলো। আচ্ছা , শুভ মানে কি আমাদের শুভঙ্কর ? আর ছিল চন্দন। খুঁজে খুঁজে কোত্থেকে ভালো ইলিশ মাছ কিনে আনতো।
Asadharan
দেখুন একটা ছোট্ট (আয়তনে ) দেশ।।.অথচ কি সুন্দর নিয়ম করে দেয়া হয়েছে যে ১২ ক্লাস পেরোলেই মেধাবী ছাত্র ছাত্রী দের সরকারি নিজে খরচ করে পড়তে পাঠাচ্ছে বাইরে ???ভাবা যায় !! একটা রাষ্ট্রই তো এই দায়িত্ত্ব পালন করবে !! শিক্ষণীয় ব্যাপার !!ভালো লাগলো ।..এই রকম দেশের খবর আরো পাবো আশা করছি !!
কি স্বাদু লেখা।....
সন্তোষব্যানার্জী মশাই, ব্রুনেই এর জিডিপি পার ক্যাপিটা দেখুন। ব্যাটারা তেলের ওপর ভাসছে। টাকা তো খরচ করতে হবে না কি!
আরো আছে। বাইরে থেকে ওরকম অনেক কিছু শান্তি কল্যাণ মনে হয়। কিন্তু আলোর নিচে প্রচুর অন্ধকার লুকিয়ে আছে যেগুলো সুকি লেখেনি। লেখার দরকারও নেই যদিও এখানে , ও একটা সুন্দর হাল্কা মেজাজের সুন্দর গল্প লিখছে। কিন্তু ভাবলাম অনেকেই দেশটাকে একেবারে মঙ্গলময় রাষ্ট্র ভেবে ফেলছেন। অতটা নয়। এটা খুবই সত্যি যে এমনিতে ব্রুনেই মালয়েশিয়া এসব দেশের লোকজন বাই নেচার এভারেজ মিডল ইস্টের লোকেদের মতো অতটা উগ্র একেবারেই নয়, হাল্কা চালে থাকে দিব্যি নিজের মতো আড্ডা মেরে। বাকিদেরও দিব্যি ডেকে নেয়। সুতরাং নেহাত নিজে যেচে ঝামেলা না বাধালে দিব্যি শান্তিতে সুন্দর থাকা যায় ওখানে. ট্যাক্সফ্ৰী পয়সা কামাও আর ফুর্তি করো বা জমাও।ব্যাস , মিটে গেলো.
ব্রুনেই এর রাজা বহু বছর দুনিয়ার সবথেকে বড়োলোক ছিলেন। এখনো রিয়েল অ্যাসেটস দেখলে হয়তো খুব ওপরের দিকেই থাকবেন. ওখানের পুরো তেলের বিসনেস এর আসল মালিক তিনি ও তেনার ভাই বেরাদর রাই . সে ছাড়া পুরো দুনিয়ায় ওনার রিয়েল এস্টেট- হোটেল -এয়ারলাইন্স ইত্যাদি তো প্রচুর আছেই স্বনামে এবং বেনামে। কু লোকে বলে বেআইনি আর্মস-থেকে ড্রাগস -অনেক কিছুতেই তেনার হাত ছড়ানো। লন্ডনের স্যাভয় হোটেলের আসল মালিকানা নাকি তার হাতে, পেট্রোনাস টুইন টাওয়ার্স এরও বিশাল অংশ আসলে নাকি তাঁরই। ওখানে তেলের ইন্ডাস্ট্রিতে যাবতীয় মেশিনারী থেকে স্পেয়ার পার্টস -সবই ১০০-% ইমপোর্ট হয় তেনার ভাই ভাগনাদের কোম্পানি দিয়ে , কেও অল্প কিছু বেগড়বাই করলে হালকা করে চাকরি নট এন্ড ডিপোর্টেশন। আর বেশি ত্যাঁদড়ামি করলে জেল। মিডিয়া স্বাধীনতা জিগালে ওখানে লোকে ভাবে ওটা খায় না মাথায় মাখে.
ব্রুনেই এর নিজের পপুলেশন হয়ত তিন লাখের মতো হবে। এক্সপাট সব ধরে সাড়ে চার লাখ পপুলেশন এখন। ওখানের এভারেজ ট্রাইবাল লোকজন অল্পতেই খুশি , নিজের পরিবার , ট্রাইবের মধ্যে দিব্যি আছে। রাজার এতো কোটি কোটি টাকা একটু আধটু ছড়িয়ে নিজের লোকেদের খুশি করে রাখেন, ওনার ও সুবিধা। যারা ভালো পড়াশোনা শিখে ফেরত আসে , ওদেরকে দিয়েই মেজর অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ কাজসব সামলানো যায় , সেটা বাইরে থেকে এক্সপাট আনার থেকে সস্তা আর রেলিয়াবল, আফটার অল নিজের ই লোক। এটুকু নাহলে লোকে তো খচে গিয়ে কালকে কেজরিওয়াল হয়ে যাবে। লোকে যে মোটের ওপর যে খুশি সেটা অবশ্য বলাই যায়। কিন্তু কেও বেসুরো গাইলে বা রাজার বদলে ডেমোক্র্যাসি চাই বলে মিছিলে হাঁটলে তাদেরকে হাপিস করে দেওয়ার অনেক গল্পই শোনা যায় আড়ালে আবডালে। এবার সেই গল্প যে শোনাচ্ছে জানা গেলে কালকেই সেও গল্প হয়ে যাবে.
ব্রুনেই একটা পুচকে দেশ একদিকে সমুদ্র বাকি দিকে মালয়েশিয়া। মালয়েশিয়া আগে দুবার চেষ্টা করেছে ব্রুনেই দখল করার। লাস্টবার ব্রিটিশ মিলিটারি গিয়ে আটকেছে। ব্রুনেই শেল পেট্রোলিয়াম এর সমস্ত এসেট রক্ষা করার জন্যে ব্রিটিশ মিলিটারির একটা বড়োসড়ো গুর্খা ব্যাটালিয়ন ওখানে সর্বক্ষণ পোস্ট থাকে। এই যুগে আর কোন স্বাধীন দেশে এটা দেখেছেন যে ব্রিটিশ আর্মি র একটা গোটা ব্যাটালিয়ন একটা দেশ পাহারা দিচ্ছে ? ফকল্যান্ডের সাথে গোলাবেন না। ওটা ব্রিটিশ টেরিটরি।
ব্রুনেই গোড়া ইসলামিক দেশ। যদিও আগেই লিখলাম লোকজন এমনিতে মিডল ঈস্টের মতো উগ্র নয় ইন জেনারেল , তাই সব উৎসবই সেলিব্রেট করা যায় মোটামুটি কিন্তু মন্দির টন্দির বানানোর পারমিশন দেয়না অফিসিয়ালি। কিন্তু গুর্খা ব্যাটালিয়ন এর জন্যেই আলাদা করে একটা মন্দির বানানোর অফিসিয়াল পারমিশন দেওয়া হয়েছিল. গোঁড়া ইসলামিক দেশে সেটা খুবই ব্যতিক্রম. এটা নিয়ে কিছু গোঁড়া মৌলভী নাকি খুব আপত্তি জানিয়েছিলেন এক সময়। যথারীতি তাদেরকেও গল্প বানিয়ে দেওয়া হয়েছিল শোনা যায়. আমার যেটুকু দেখা রাজা ভালো ব্যালান্স করে চলতে পারেন সবদিকে. অবশ্য এটা অবভিয়াস , দুনিয়ার সবথেকে বড়োলোক কি আর উনি এমনি এমনি হয়েছিলেন ?
যাকগে মূল লেখায় ফিরি. এমনিতে সবই দিব্যি ভালো যেটা প্রথমেই লিখলাম। কিন্তু অতটা মঙ্গলময়, কল্যাণকর রাস্ট্র ভাবলে বোধহয় একটু বেশি বাড়াবাড়ি হয়ে যাবে।
আগে দেখা হয় নি ভালো করে, তাই উত্তর দেওয়া হয় নি। লেখাতে একটা বড়সড় টাইপো আছে - ব্রুনাই এর লোক সংখ্যা ৪৫ লক্ষ নয়, সাড়ে চার লক্ষ মাত্র। শুধরে দিন প্লীজ
ন্যাড়াদা, অমিতাভদা, রমিত, সন্তোষ, রীতা, বি-দা সবাইকে ধন্যবাদ।
অমিতাভদা, না এই শুভ আলাদা। তুমি চলে যাবার পরে এসেছিল, তাই চিনবে না। শুভঙ্কর আর নেই ওখানে, তবে চন্দনদা এখনো আছে। তুমি বাকি যে কথাগুলো বলছো বুঝতে পারছি - আমিও তাই ভাবতাম প্রথম প্রথম ব্রুনাই গিয়ে। কিন্তু পরে বহু বছর থেকে, খুব ভালোভাবে স্থানীয় লোকের সাথে মিশে নিজের ভাবনা পাল্টেছে অনেকটা। পুরো ব্যাপারটাই আপেক্ষিক - অ্যবসলিউট স্কেলে তুমি যা বলেছো সবই সত্যি, কিন্তু রেলেটিভ স্কেলে? সুলতান না থাকলে এর পরিবর্তটা কি? গণতন্ত্র ইত্যাদি এসে এদের অবস্থা কি আর খুব ভালো কিছু করবে যা এরা আছে এখন তার থেকে?
এটা এখুনি দেখলুম। থ্যাংকু সুকি। পরিবর্ত কি সত্যিই জানি না। ওখানে লোকেদের জিগালে হয়তো বেশির ভাগ রাজাকেই সাপোর্ট করবে। সেটা ভয়ে না ভক্তিতে না ভালোবাসায় সেটা বলা দুস্কর। যারা ডেমোক্রেসি কি দেখেইনি কোনোদিন তাদের পক্ষে ওটার জন্যে লড়াই করা একটু মুশকিল। আশেপাশে বহু দেশের - মালয়েশিয়া ইন্দোনেশিয়া ফিলিপিন্স বা আমাদের সোনার ভারতে -কোথাও ই ডেমোক্রেসির অবস্থা তো বিশেষ সুবিধের নয়। কোনো উত্তর নেইআমার কাছে . কিন্তু তবুও মনে হয় যাবতীয় দোষ সত্ত্বেও এই একটা সিস্টেমেই লোকে নিজের চয়েস টা একটু হলেও দেখানো সুযোগ পায়, যতই খাজা চয়েস হোকনা কেন। বাকিগুলোতে নয়। মনে হয় মোনার্কি থাকলে ব্রিটেন এর মতো সিম্বলিক থাকলেই ভালো। একটা বেশ লাইভ সার্কাসের মতো ফ্রী ট্যাবলয়েড এন্টারটেনমেন্ট।
অমিতদার মুখে ফুল চন্দন পড়ুক। পরের জন্মে আমি ঐ বংশে জন্মাতে চাই। হাই প্রোফাইল নয়, কাজিনস্য কাজিন চুনো পুঁটি হয়েই। বেশ রয়াল প্রিভি পার্সের টাকায় হাত পা তুলে বসে থাকবো।